Ajker Patrika

রাজশাহীর ১৭ কেন্দ্রে কোনো ভোট বাতিল হয়নি, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাবি ভোট সুষ্ঠু হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ২১: ৩৯
রাজশাহীর ১৭ কেন্দ্রে কোনো ভোট বাতিল হয়নি, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দাবি ভোট সুষ্ঠু হয়নি

রাজশাহীতে এবার একটি ভোটও বাতিল হয়নি—এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭। জেলার ছয়টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে শুধু রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে একটি ভোটও বাতিল হয়নি এমন ভোটকেন্দ্র নেই। অন্য পাঁচ আসনেই তিন থেকে পাঁচটি করে ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও বাতিল হয়নি। রাজশাহী-১ আসনে সর্বনিম্ন একটি ভোট বাতিল হয়েছে—এ রকম ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারাই রুমের দরজা বন্ধ করে নৌকায় সিল মেরেছেন। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে একটি ভোটও বাতিল না করে নৌকার হিসাবে ধরা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি তাই এমন হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা কেন্দ্রভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি পাঁচটি ভোটকেন্দ্রে একটিও ভোট বাতিল হয়নি রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে।

সামান্য ব্যবধানে এ আসনে পরাজিত হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান বলেছেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ভোটের ফল পাল্টে দিয়েছেন। এ জন্য কোনো কোনো কেন্দ্রে একটি ভোটও বাতিল হয়নি। এক ভোটও বাতিল না হওয়া অবিশ্বাস্য। 

ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজশাহী-১ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ১৫৮টি। এসব কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১০০টি পর্যন্ত ভোট বাতিল হয়েছে। তবে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর নিজ এলাকা তানোরের কিসমত বিল্লি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে মাত্র একটি ভোট বাতিল হয়েছে। এ কেন্দ্রে মোট ১ হাজার ২১০ জন ভোটার ভোট দেন। গোদাগাড়ীর দিয়াড় মানিকচক নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাতিল হয়েছে ৭টি ভোট। এ কেন্দ্রে ভোট দেন ২৬১ জন ভোটার। 

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের ১১৩টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রের একটি ভোটও বাতিল হয়নি। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে হাতেমখাঁ আজিজর রহমান খলিফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ মিশন একাডেমি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬৩২টি, মসজিদ মিশনে ৭২৯ ও আজিজর রহমান স্কুলে ৪২৭টি ভোট পড়েছে। সদরের অন্য সব কেন্দ্রে কিছু না কিছু ভোট বাতিল হয়েছে। এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মোট কেন্দ্র ছিল ১২৯টি। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে একটি ভোটও বাতিল হয়নি। কেন্দ্র তিনটি হলো—জাহানাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্র, মাটিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর উচ্চবিদ্যালয়। মাটিকাটায় ভোট পড়েছে ১ হাজার ১৭৫টি। বসন্তপুরে ভোট পড়েছে ১ হাজার ৬৯৯ টি। জাহানাবাদে ভোট পড়েছে ১ হাজার ২৭২টি। এখানে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ একাই পেয়েছেন ১ হাজার ১৯২টি ভোট। বসন্তপুর কেন্দ্রের ১ হাজার ৬৯৯ ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ১ হাজার ৫৭৮টি। এ ছাড়া মাটিকাটার ১ হাজার ১৭৫টি ভোটের মধ্যে নৌকা পেয়েছে ১ হাজার ৮০টি। এ আসনে বিপুল ভোটে আসাদ বিজয়ী হয়েছেন। 

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনেও শূন্য বাতিল ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা তিন। এখানে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১২৩টি। এর মধ্যে উত্তর একডালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্র, মীরপুর উচ্চবিদ্যালয় ও গোপালপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার নারী কেন্দ্রে একটি ভোটও বাতিল হয়নি। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ৪ থেকে ১০টি করে ভোট বাতিল হয়েছে এখানে। উত্তর একডালায় ১ হাজার ৪১৪ ভোটের মধ্যে ১ হাজার ৫৭টি, মীরপুরে ১ হাজার ৭৬১ ভোটের মধ্যে ১ হাজার ৬৪টি এবং গোপালপুরে ৯৮৩টি ভোটের মধ্যে ৫৬৮টি নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ পেয়েছেন। তিনি এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। 

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১৩৩টি। এর মধ্যে পাঁচটি ভোটকেন্দ্রের কোনো ভোট বাতিল হয়নি। কেন্দ্রগুলো হলো—গোলাবাড়ী উচ্চবিদ্যালয়, হোজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাওকান্দি উচ্চবিদ্যালয় ও তেঁতুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়। 

এর মধ্যে তেঁতুলিয়ার ৮৪১ ভোটের মধ্যে ৪৮৭টি, দাওকান্দির ১ হাজার ৬২৩ ভোটের মধ্যে ৮৬১, আনুলিয়ার ১ হাজার ১০৮টি ভোটের মধ্যে ৬০৭, হোজার ১ হাজার ৩৫০টি ভোটের মধ্যে ৫৩৫টি এবং গোলাবাড়ীর ১ হাজার ৪১১টি ভোটের মধ্যে ৯৫০টি ভোট পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা। তিনি সামান্য ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। 

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১১৯টি। এর মধ্যে তিনটি ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোট বাতিল হয়নি। বেশকিছু কেন্দ্রে ১ থেকে ৭টি করে ভোট বাতিল হয়েছে। কোনো ভোট বাতিল হয়নি লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাশের চর কালীদাসখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাদপুর কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রে। এর মধ্যে দাদপুরে ৮৫৯ ভোটের মধ্যে ৬৮০টি, চর কালীদাসখালীর ৫৯৪ ভোটের মধ্যে ৪৫৭টি এবং লক্ষ্মীনগরের ৫৬৫ ভোটের মধ্যে ৪৭৩টি ভোট পেয়েছেন নৌকার বিজয়ী প্রার্থী শাহরিয়ার আলম। 

রাজশাহী-৬ আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হক বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারাই রুমের দরজা বন্ধ করে নৌকায় সিল মেরেছেন। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে একটি ভোটও বাতিল না করে নৌকার হিসাবে ধরা হয়েছে। এভাবে নৌকাকে জেতানো হয়েছে। কোনো ভোটকেন্দ্রে যে একটি ভোটও বাতিল হবে না—এটা একেবারে অবিশ্বাস্য। আগে তো দেখতাম ভোট কীভাবে দেওয়া হবে, তার ক্যাম্পেইন হতো। ভোটারদের মনে করিয়ে দেওয়া হতো। এবার সেটাও হয়নি। তাই ভোট যে একটাও বাতিল হবে না, তা অবিশ্বাস্য।’

রাজশাহী-৫ আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানেরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখেছি যে আমি বিজয়ী। কিন্তু পরে আমাকে তিন হাজার ভোটে পরাজিত দেখানো হয়েছে। এই ফলাফল সঠিক না। আমি ভোট পুনর্গণনার দাবি জানাচ্ছি। আবার ভোট গণনা করা হলে বাতিল ভোট বের হওয়ার পাশাপাশি সঠিক ফলাফল হবে।’ 

রাজশাহী-৪ আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকেরও দাবি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোট পড়ার হার ছিল খুব কম। কেন্দ্রে ভোটারই ছিল না। ৩টার পর বলা হয়েছে ভোট পড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এটা আসলে বানোয়াট। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এনামুল হক ফল বাতিল করে পুনঃতফসিলের আবেদন জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে।’ 

তবে রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। একেবারেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। সঠিক ফল প্রকাশ হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফকিরহাটে ভৈরব নদ: খননেও মেলেনি সুফল বাধা ওয়াসার পাইপ

  • ২০২০ সালে নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পাউবো।
  • পাঁচ বছরের মধ্যে নদটির বিভিন্ন অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ খননের পরও সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। উপজেলার ফকিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে নেওয়া খুলনা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে নৌচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেখা দিয়েছে মারাত্মক নাব্যতাসংকট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফকিরহাট বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের একটি সেতুর নিচে ভৈরব নদের মাঝ বরাবর বড় পানির পাইপ রয়েছে। পাইপটি রক্ষায় নদীর ভেতর আড়াআড়িভাবে লোহার খাম্বা বসিয়ে বেড়া দেওয়ায় নদীটিতে বাঁধ তৈরি হয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে নদীগর্ভে দ্রুত পলি জমছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌচলাচল।

স্থানীয়রা বলেন, ফকিরহাট, মোল্লাহাট এবং আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নৌপথ সচল রাখতে ২০২০ সালে ভৈরব নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে খননের সুফল কাজে আসেনি। মোল্লাহাটের মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় ফকিরহাট এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

ফকিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মুকুন্দ পাল বলেন, নৌচলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। নৌপথ চালু থাকলে খুলনা, মোংলা বন্দর, বাগেরহাট ও বরিশালের সঙ্গে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন সম্ভব হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, ওয়াসার পাইপটি ফকিরহাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিক বলেন, ওই স্থানে পাইপলাইনের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি চীন থেকে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যন্ত্রপাতি এলে পাইপলাইনটি নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিচার পেতে জীবনের ঝুঁকি

মো. হোসাইন আলী কাজী
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনের আশ্রয় নিতে এসে ভয় নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে আদালতে। অর্ধশত বছরের পুরোনো দুটি পরিত্যক্ত ভবনের মাঝ দিয়েই বরগুনার আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল প্রবেশপথ। জরাজীর্ণ ভবন দুটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীরা ওই পথ ব্যবহার করছেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ভবন দুটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণের জন্য দুটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করে। প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন ভবন দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেগুলো অপসারণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পরিত্যক্ত ওই ভবন দুটির মাঝখান দিয়েই আদালতের প্রধান প্রবেশদ্বার নির্মিত। প্রতিদিন বিচারকাজে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচ দিয়ে আদালতে যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের দাবি, ভবন দুটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।

গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবন দুটির বিভিন্ন অংশ থেকে ইট, পাথর ও বিম খসে পড়ছে। দেয়ালজুড়ে জন্মেছে পরগাছা। ভেতরের অবস্থা এমন যে দিনের বেলায়ও সেখানে ঢুকতে ভয় পান মানুষ। ভবন দুটি ভুতুড়ে অবস্থায় পরিণত হওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

বিচারপ্রার্থী আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আদালতের সামনে এভাবে দুটি পরিত্যক্ত ভবন থাকা যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি তা আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা প্রয়োজন।’

আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. আবুবকর বলেন, আদালতের প্রবেশপথের দুই পাশে পরিত্যক্ত দুটি ভবন পড়ে আছে। ভবন ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

জেলা বার সদস্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা জরুরি।

জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভবন দুটি বহু আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন এখনো সেগুলো অপসারণ করা হয়নি, তা আমারও বোধগম্য নয়।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মনোনয়নপত্র কিনে ভুল করেছি, জমা দেব না: কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত