Ajker Patrika

পুকুর ইজারায় সাগরচুরি

  • সরকারি হিসাবে গোদাগাড়ীতে খাসপুকুর রয়েছে ৩ হাজার ৬০টি
  • তালিকামূল্যের চেয়ে কম মূল্যে দলিল ও চালান
  • বিচারাধীন দেখিয়ে গোপনে কম মূল্যে ইজারা
  • রাজস্ব ক্ষতি ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকা
 রিমন রহমান, রাজশাহী
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজার এই পুকুর নিয়ে মামলা বিচারাধীন দেখানোর পরেও পানির দরে দেওয়া হয়েছে ইজারা। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজার এই পুকুর নিয়ে মামলা বিচারাধীন দেখানোর পরেও পানির দরে দেওয়া হয়েছে ইজারা। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা। আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর ইজারা দেওয়ার সময় রীতিমতো ‘সাগরচুরির’ ঘটনা ঘটেছে। এলাকার একটি শক্তিশালী চক্রকে ইজারার মোড়কে খাসপুকুর দেওয়া হয়েছে পানির দরে। এসব ইজারার সময় ভুয়া চালানও ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক পুকুরের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ইজারামূল্যের চেয়ে কম দরে দলিল করা কিংবা মামলার নিষেধাজ্ঞার কথা বলে তালিকাবহির্ভূত রেখে পরে গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

এতে অন্তত ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকার রাজস্ব ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইজারামূল্যের চেয়ে কম টাকার চালান জমা দিয়ে ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা, এক চালান একাধিকবার ব্যবহার করে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা, পুকুরের নামে মামলা দেখিয়ে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৬ টাকা এবং প্রকাশিত তালিকার চেয়ে অনুমোদিত মূল্য কম করে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সরকারি হিসাবে গোদাগাড়ী উপজেলায় খাসপুকুর রয়েছে ৩ হাজার ৬০টি। ১৪৩১-৩৩ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা দিতে গত ১৮ এপ্রিল ২ হাজার ৭৪৯টি পুকুরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। অভিনব এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটে তখনই। একটি বিশেষ মহল সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে এই জালিয়াতি করেছে। পুকুরের তালিকায় সই করা হয়েছে গত ৩০ মে। অনুমোদিত তালিকা প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ থাকে।

কিন্তু এবার তালিকাই প্রকাশ করা হয়েছে সই করার ২০ দিন পর, ২০ জুন। দেরিতে তালিকা প্রকাশ করে আপিল করার সুযোগ থেকে আগ্রহী দরপত্র দাখিলকারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তালিকায় ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকা থাকা পুকুর দুই লাখ টাকায়ও ইজারা দেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত তালিকা থেকে জানা গেছে, গোদাগাড়ী ইউনিয়নের রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ দাগের ১ একর ৮৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির অনুমোদিত দর ছিল ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর ১৭ হাজার ৬২৫ টাকা এই মূল্যের সঙ্গে যোগ হওয়ার কথা। সাকল্যে পুকুরটির ইজারামূল্য দাঁড়ায় ৮১ হাজার ৭৫ টাকা। সেই পুকুরের বিপরীতে মাত্র ৭ হাজার ৫০ টাকার ট্রেজারি চালান জমা দেওয়া হয়েছে। এই পুকুর থেকে সরকারি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫ টাকা। একইভাবে ১০৬টি পুকুরের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। তাতে সরকারের এক বছরের ক্ষতি হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা। তিন বছরে ক্ষতির পরিমাণ ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৫ টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একই ট্রেজারি চালান একাধিক পুকুরে ব্যবহার করেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এভাবে গোগ্রাম ইউনিয়নের তেরোপাড়া মৌজার ১৮৪ নম্বর দাগের ২ একর ২৮ শতাংশ আয়তনের খাসপুকুরের ট্রেজারি চালানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ হাজার টাকা। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকের সিলমোহর জাল করে একই চালান ব্যবহার করা হয়েছে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কোচারপাড়া মৌজার ২৪৯ নম্বর দাগের ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ আয়তনের পুকুরের জন্যও। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পুকুরের জন্য সরকারের ঘরে কোনো টাকাই জমা হয়নি। পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এভাবে ৯৬টি পুকুরের চালান জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এই পন্থায় এক বছরের জন্য মোট ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুকুরগুলো তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। সরকারের মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ১২ হাজার ৭৪৬ টাকা।

এদিকে ইজারা তালিকায় প্রকাশিত মূল্যের চেয়ে অসম্ভব কম মূল্যে ৪৯টি পুকুর ইজারা দিয়ে এক বছরের জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ১১৭ টাকা। তিন বছরের জন্য এই ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৫১ টাকা।

উপজেলার কাঁকনহাট পৌরসভার আব্দুলপুর মৌজার ১৯৭ নম্বর দাগের ৪ একর শূন্য ২ শতাংশ আয়তনের একটি ও মোহনপুর ইউনিয়নের দুধাই মৌজার ৪ একর ৯২ শতাংশ আয়তনের দুটি পুকুর ইজারার জন্য তালিকায় তোলা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে পুকুর দুটি ভোগদখল চলছে। প্রতিটি পুকুরের ইজারামূল্য ৩০ লাখ টাকার কম হওয়ার কথা নয়। দুধাই মৌজার পুকুরটি উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভোগদখল করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, বৈধভাবে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন। দ্বিতীয় পুকুরটি দুলাল নামের এক ব্যক্তি ভোগ করছেন। তিনিও একই দাবি করেছেন।

এদিকে উপজেলার ১৩টি পুকুর ইজারার জন্য অনুমোদিত তালিকায় নেই। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পুকুরগুলোর ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে ইজারামূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। গোপনে এসব পুকুর পেয়েছেন প্রভাবশালীরা।

এদিকে ইজারার জন্য প্রকাশিত পুকুরের তালিকায় তিনটি পুকুরের পাশে লিখে রাখা হয়, মামলা চলমান। অর্থাৎ, এগুলো ইজারাযোগ্য নয়। যদিও এগুলোর ইজারামূল্য লেখা হয়। মামলা চলমান লেখা দেখে আগ্রহী কেউ এগুলোর জন্য চালান জমা দেননি। তবে গোপনে এসব পুকুর ঠিকই ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর নেওয়া হয়েছে প্রকাশিত ইজারামূল্যের চেয়ে অনেক কম টাকা।

এর মধ্যে গোদাগাড়ী ইউনিয়নের সাগুয়ান মৌজার ২৯৫ দাগের ৪ একর ২৬ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৫০ টাকা। কিন্তু মামলা চলমান রয়েছে বলে এই পুকুরের বিপরীতে কেউ দরপত্রই জমা দেননি। অথচ গোপনে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে বিশাল এই পুকুর। একই মৌজার ৬ একর ৬৪ শতাংশ আয়তনের পুকুরটির প্রকাশিত ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে মাত্র দুই লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। একই মৌজার ৩৭৪ দাগের ১ একর ৪৮ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুরের প্রকাশিত ইজারামূল্য হচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুর গোপনে ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকায়। এই তিনটি পুকুরেরই ট্রেজারি জমাকারী হচ্ছেন একই ব্যক্তি।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার সাগুয়ান গ্রামের বিচারাধীন পুকুরটির খোঁজ নিতে গিয়ে হাবিব (৬২) নামের স্থানীয় এক কৃষককে পুকুরপাড়ে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ভাগে পুকুরটা খায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গোদাগাড়ীর মাদারপুরের শামীম। তিনি বলেন, সব নিয়ম মেনেই পুকুর ইজারা নিয়েছেন। কোনো অনিয়ম হয়নি।

গোদাগাড়ীতে পুকুরগুলো ইজারা দেওয়ার সময় এসি ল্যান্ড ছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি বর্তমানে রাজশাহীর পবা উপজেলার এসি ল্যান্ড। সাগুয়ান গ্রামের পুকুরের বিষয়ে তিনি বলেন, মামলা চলমান। এই পুকুর তিনি ইজারা দেননি। অবশ্য গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত নিশ্চিত করেছেন, ভূমি অফিসে ওই পুকুর ইজারা দেওয়ার দলিল পাওয়া গেছে। সেখানে এসি ল্যান্ডের স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ীর জাহানাবাদ মহল্লার শরিফুল ইসলাম ওরফে বিষু নামের এক ব্যক্তি এই জালিয়াত চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনিই বছরের পর বছর গোদাগাড়ীর পুকুর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। নানা কায়দায় পানির দরে পুকুর নিয়ে তিনি আবার পরে প্রকৃত মাছচাষিদের কাছে চড়া মূল্যে ইজারা দেন। এভাবে তিনি ফুলেফেঁপে উঠেছেন।

বিষুর সিন্ডিকেটে ছিলেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামান। বর্তমানে তিনি চারঘাট ভূমি অফিসে বদলি হয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি কিছু জানেন না। ইজারা কমিটির মাধ্যমে পুকুর ইজারা দেওয়া হয়। তিনি কিছুই দেখেন না।

পুকুর সিন্ডিকেটের হোতা শরিফুল ইসলাম বিষু একসময় বিএনপি করতেন। তবে দিনে দিনে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি আবার বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ৫ আগস্ট গোদাগাড়ী থানায় আগুন দেওয়ার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন কারাগারে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, তিনি গোদাগাড়ীতে আসার আগে এসব পুকুর ইজারা হয়েছে। তখন ইজারা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন ইউএনও আতিকুল ইসলাম। আর সদস্যসচিব ছিলেন এসি ল্যান্ড জাহিদ হাসান। যে বা যারাই জালিয়াতি করে পুকুর ইজারা দেওয়া কিংবা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল সোয়া ৭টায় আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রকিবুল হাসান।

তিনি জানান, ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় তার এক আত্মীয় বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছেন পল্টন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়া।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর সন্ধ্যার দিকে হাদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।

হামলার এ ঘটনার পর থেকে র‍্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাঁরা কেউ সরাসরি হামলাকারী নন।

গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানব পাচারে জড়িত চক্রের দুই সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবী। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

হাদির হত্যাচেষ্টাকে কেন্দ্র করে অভিযানে সর্বশেষ গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে র‍্যাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় নসিমন চালক নিহত

পিরোজপুর প্রতিনিধি
নাজিরপুর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নাজিরপুর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎পিরোজপুরের নাজিরপুরে ঢাকাগামী একটি বাসের ধাক্কায় রতন মজুমদার নামে এক নসিমন চলক নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে পিরোজপুর-নাজিরপুর-ঢাকা মহাসড়কের শাখারীকাঠী ইউনিয়নের ডাকাতিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।‎

‎নিহত রতন মজুমদার (৫০)পিরোজপুর সদর উপজেলার সিকদার মল্লিক ইউনিয়নের জুজখোলা গ্রামের মৃত রবিন্দ্র মজুমদারের ছেলে।

‎স্থানীয়রা জানান, নিহত রতন ও তার সঙ্গে থাকা একজন নসিমনে করে মাটিভাংগা থেকে নাজিরপুরের দিকে আসছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী একটি বাসের ধাক্কায় রতনের মাথায় আঘাত লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই রতন মারা যান।

‎পুলিশ জানায়, রতন ধান বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় ডাকাতিয়া নামক স্থানে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে তার মৃত্যু হয়। ‎

‎নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৩৩
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশা একরকম ছেড়েই দিচ্ছে পুলিশ। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোর অনুমান, হামলাকারীরা ইতিমধ্যে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। গত শুক্রবারের হামলার ঘটনার পর থেকে র‍্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাঁরা কেউ সরাসরি হামলাকারী নন।

গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানব পাচারে জড়িত চক্রের দুই সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবী। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

হাদির হত্যাচেষ্টাকে কেন্দ্র করে অভিযানে সর্বশেষ গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ঘন ঘন ফোনে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ফয়সাল করিম মাসুদ যে হাদির ওপর হামলা চালানো ‘শুটার’ আর আলমগীর শেখ মোটরসাইকেলচালক, তা শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ ব্যবহার করে অবস্থান লুকিয়ে রেখেছিলেন। হামলার পর এই দুজন ঢাকা থেকে বেরিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পার হয়ে ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে চলে যান। তদন্তকারীরা বলছেন, মূল সন্দেহভাজনেরা সীমান্ত পার হওয়ার আগে ধাপে ধাপে ঢাকা থেকে হালুয়াঘাট পর্যন্ত গেছেন।

গত শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে হাদিকে অনুসরণ করে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়।

গতকাল বিকেলে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি অবশ্য জানান, সন্দেহভাজনদের কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন কি না—এমন কোনো তথ্য ইমিগ্রেশন ডেটাবেইসে পাওয়া যায়নি। ফয়সালের সর্বশেষ দেশের বাইরে যাওয়ার তথ্য অনুযায়ী, তিনি জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর বৈধভাবে দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সন্দেহভাজনদের বিষয়ে অভিযান চালিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে মানব পাচার চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিককে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সীমান্ত থেকে আটক করা দুই ব্যক্তি হলেন সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসম।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আটক করা দুই ব্যক্তি মূল হামলাকারীদের সীমান্ত পার করতে সাহায্য করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে মূল সন্দেহভাজনদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় অংশ নেওয়া দুজনের মোবাইল ফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকার অদূরের একটি উপজেলা থেকে তাঁদের দুই সহযোগী মো. মিলন ও হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার দিন এই দুজনের সঙ্গে হামলাকারীদের শতাধিকবার ফোনে যোগাযোগ হয়। আর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আবদুল হান্নানকে র‍্যাব-২ গ্রেপ্তার করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করেছে।

পল্টন থানা-পুলিশ হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আবদুল হান্নান আদালতকে বলেন, মোটরসাইকেলটি তিনি একটি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। মালিকানা পরিবর্তনের জন্য দুই মাস আগে কল দেওয়া হলেও অসুস্থ থাকায় তিনি যেতে পারেননি।

ভারতের প্রতি আহ্বান

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে হাদির ওপর হামলাকারীরা ভারতে ঢুকে পড়লে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর বিপরীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে ভারতের ভূখণ্ড কখনোই ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা আশা করি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবৈধ ৫ সার কারখানা বর্জ্যে বিপাকে স্থানীয়রা

  • জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনুমোদনহীন সার কারখানা।
  • দুর্গন্ধে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

জৈব কৃষি এবং পরিবেশবান্ধব সারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুযোগ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া ইউনিয়নে গত কয়েক মাসে পাঁচটি ছোট-বড় ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ও অন্যান্য জৈবসারের কারখানা গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই উদ্যোগ গতি আনলেও, কারখানার অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং সার লাইসেন্স না থাকায় আশপাশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হওয়ায় বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়েছে, যা স্থানীয়ভাবে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হওয়া সত্ত্বেও আয়কর বা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সরকারের কোষাগারে সঠিকভাবে জমা না দেওয়ায় রাষ্ট্র বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নে কৃষি খামার, মডার্ন অ্যাগ্রো ফার্ম, চুয়াডাঙ্গা অ্যাগ্রো কম্পোস্ট, চুয়াডাঙ্গা ভার্মি কম্পোস্ট ও মা অ্যাগ্রো নামের পাঁচটি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে সার উৎপাদন করা হচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় খোলামেলা পরিবেশে বিপুল কাঁচা গোবর ও জৈব পদার্থ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফলে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে চুয়াডাঙ্গা অ্যাগ্রো কম্পোস্ট ও চুয়াডাঙ্গা ভার্মি কম্পোস্টের স্বত্বাধিকারী এরফান বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, আবেদন করেছি। তবে এখনো লাইসেন্স নেই।’ কৃষি খামার নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল বলেন, ‘এত নিয়ম আইন জানি না। এখন সরকার বন্ধ করতে বললে বন্ধ করে দেব।’

সরেজমিনে দেখা যায়, অননুমোদিত কারখানাগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড অনুসরণ করছে না। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির প্রধান উপাদান হলো গোবর এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করলে এই কাঁচামাল এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ-পরবর্তী অব্যবস্থাপিত বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে মিশে যাচ্ছে। কারখানার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সরাসরি নিকটস্থ পুকুর, খাল বা কৃষিজমিতে ফেলার কারণে ভূপৃষ্ঠের জল এবং মাটির মারাত্মক দূষণ ঘটছে। এই বর্জ্যের কারণে জলজ প্রাণীরও ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচা গোবর ও জৈব পদার্থ খোলা জায়গায় দীর্ঘ সময় স্তূপ করে রাখলে বা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা পচনের সময় তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। ফলে বায়ুর গুণমান নষ্ট এবং আশপাশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। দুর্গন্ধ ও পরিবেশদূষণের কারণে কারখানা পরিচালনাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রায়ই বিরোধ তৈরি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘অনুমোদনহীন কারখানা চালু রাখা যাবে না। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আলুকদিয়ায় কয়েকটি অবৈধ সার কারখানার বিষয়ে শুনেছি। আমরা দ্রুতই সেখানে অভিযান চালাব। ওই এলাকায় কেউ ছাড়পত্র নেননি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত