Ajker Patrika

‘অন্য কোনো ফ্যাসিস্টও যেন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে না পারে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী    
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ৪২
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা হয়েছে। সভায় বক্তাদের মুখে মুখে উঠে এসেছে নতুন বাংলাদেশের প্রত্যয়। ৫ আগস্টের পর কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে বক্তারা বলেছেন, ‘আগামীতে অন্য কোনো ফ্যাসিস্টও যেন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে না পারে। এ জন্য ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি, রাজশাহী। ‘রাজশাহী রাইজিং’ নামের এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজশাহীর শহীদ সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল ইসলাম। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন।

মনিরা শারমিন বলেন, ‘আমরা সে সিস্টেমটা ভাঙতে চাই, যে সিস্টেমে যে কেউ, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও যেন আমাকে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার একটা দানব না বানিয়ে ফেলে। এই পরিবারতন্ত্রের জন্য তো সাকিব আনজুম জীবন দেয়নি। আমরা দেখছি, ৫ তারিখের পর থেকে শুধু মনে হচ্ছে যে হাতবদল। কিছু কিছু গোষ্ঠী নিজেদের নির্বাচিত মনে করছে। মানসিকভাবে মনে করছে যে ক্ষমতায় চলে গিয়েছে। পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির এই নেতা বলেন, ‘একজন কৃষকের ছেলে কেন মনে করবে না যে সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবে। কেন কিছু ধান্দাবাজ-চাঁদাবাজের হাতে রাজনীতি থাকবে? আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের তরুণেরা সকল সেক্টরে নেতৃত্ব দেবে, সেই স্বপ্ন আমরা দেখতে চাই। চব্বিশের অভ্যুত্থানে আমরা পেরেছি। কারণ, আমাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি ছিল না। সেভাবেই কাজ করতে হবে।’

মনিরা শারমিন বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই ধূর্ত। তারা মানুষকে রাজনীতি সচেতন করতে চায়নি। তারা একটা বিরিয়ানির প্যাকেট কিংবা মার্কা দেখিয়ে ভোট নিতে চেয়েছে। তারা রাজনৈতিকভাবে মানুষকে অশিক্ষিতই রেখেছে। তারা আর কারও হাতে ক্ষমতা দিতে চায়নি।’

সভায় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মুস্তাফিজ বলেন, ‘বর্তমানে ইলেকশনের একটা তাড়া দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস আছে আমরা সেই জায়গাটা ফিল করি। কিন্তু এখনই যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা পুরোনো ফ্যাসিবাদের জায়গায় ফিরে যাব। আমরা সেই জায়গাটাই আসলে ফিরে যেতে চাই না।’

সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে সাইফ মুস্তাফিজ বলেন, ‘আপনারা যদি চান, জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকেও ব্যালটের রাজনীতি হবে। আপনাদের নিয়েই হবে। আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী, এমপি, মন্ত্রী আপনারাই হবেন। আপনাদের মধ্য থেকেই হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।’

রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কেন্দ্রীয় সহমুখপাত্র তাহসিন রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের কথা ছিল ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ। কিন্তু দুর্নীতি আছে? ঘাট দখল আছে? আমলাতন্ত্র আছে না? এটা কি নতুন বাংলাদেশ? এই বাংলাদেশের জন্য আবু সাঈদ রক্ত দিয়েছিল? আমরা সেই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপের কথা বলছি, যে আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা স্বৈরাচার হয়ে উঠেছিল। ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে গোড়া থেকে, যেন আর কেউ স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে।’

কেন্দ্রীয় সংগঠক সাকিব মাহাদী বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাচ্ছিলাম। এই জন্য ৫ তারিখে বিপ্লব করেছি। কিন্তু আমরা কি সেটা পেয়েছি? পাইনি। আমরা সংবিধান পুরো ফেলে দিতে চেয়েছিলাম, পেরেছি? আমরা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে চেয়েছিলাম, পেরেছি? পারিনি। আমাদের বাজার-ঘাট সবকিছু দখল হয়ে যেতে দেখেছি। এই জন্য সংস্কার দরকার। আমরা রাজনীতি করব, আমরা ভোট করব। আমাদের শত্রু আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল। তার বাইরে সবাই বন্ধু। আগামীতে নৌকা প্রতীক যেন ব্যালটে না থাকে। কিন্তু চাইলেই এটা হবে না। এটা করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

জেলা সংগঠক মোবাশ্বির আলিম বলেন, ‘সবাই বলে ফ্যাসিবাদ ছিল ১৫ বছর। আমি মনে করি স্বাধীনতার পর থেকেই এটা চলছে। এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা গত ৪০ বছরের। পাকিস্তানিরা যেভাবে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যেত, স্বাধীন বাংলাদেশেও শাসকেরা আমাদের তুলে নিয়ে গেছে। যখনই যারা শাসক হয়েছে, লুটপাট করেছে, ধর্ষণ করেছে। কেউ সেবক হতে আসেনি। ১৯৭১ সালের পরে ’৭৫-এ আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে, একটার পর একটা স্বৈরাচার এসেছে। কোনো দল দেশকে ভালোবাসেনি। আবারও যদি নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়, বাংলাদেশ আবার লড়াই করবে। আমার ভয় হয়, আমি বা আপনি ক্ষমতায় এসে ফ্যাসিস্ট হয়ে যাই কি না। লুটপাট কোথাও বন্ধ হয়নি। সব দখল হয়ে গেছে। দাসত্বের শৃঙ্খল যদি ভাঙতে না পারি, বারবার ফ্যাসিস্ট ফিরে আসবে।’

রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মোবাশ্বির আলিম আরও বলেন, ‘আমরা মনে করছি, ভোট এলে একটা দল ক্ষমতায় আসবে। আসলে তারা ক্ষমতায় চলে এসেছে। ওই রাজশাহী কোর্টে পিপি হলো, কে হলো? অ্যাটর্নি জেনারেল কে হলো? তারাই হয়েছে। এখন সমন্বয়কদের মধ্যে অনৈক্য দেখছি। কে কালো, কে ফরসা, কে দেখতে একটু সুন্দর সেগুলো দেখা হচ্ছে। সমন্বয়কদের এক কমিটি আরেক কমিটিকে সভায় ডাকছে না। এগুলো বন্ধ করেন। না করলে আরেক ফ্যাসিবাদের কাছে জিম্মি হবেন।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এক ফ্যাসিস্ট চলে গেছে। আরেক দল ফ্যাসিস্ট আচরণ নিয়ে সামনে আসছে। এমন কাউকে আমরা ক্ষমতায় আনব না যারা আমাদের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। আমরা চাই, দেশে সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। যারা ভারত নিয়ে মাতামাতি করবে, তার সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নয়।’

আরেক সংগঠক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আর কোনো ফ্যাসিস্ট যেন আসতে না পারে, এ জন্য ছাত্রসমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে হবে।’

সভা সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মহুয়া মৌ ও রোহানা হক সেতু। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মরিয়ম সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী মিশু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার, পৃষ্ঠপোষক রাশেদ রাজন, জাতীয় নাগরিক কমিটির স্থানীয় সংগঠক সাইফুল ইসলাম, আন্দোলনকর্মী নাহিদুল ইসলাম সাজু, শুভজিৎ রায় প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফকিরহাটে ভৈরব নদ: খননেও মেলেনি সুফল বাধা ওয়াসার পাইপ

  • ২০২০ সালে নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পাউবো।
  • পাঁচ বছরের মধ্যে নদটির বিভিন্ন অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ খননের পরও সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। উপজেলার ফকিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে নেওয়া খুলনা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে নৌচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেখা দিয়েছে মারাত্মক নাব্যতাসংকট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফকিরহাট বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের একটি সেতুর নিচে ভৈরব নদের মাঝ বরাবর বড় পানির পাইপ রয়েছে। পাইপটি রক্ষায় নদীর ভেতর আড়াআড়িভাবে লোহার খাম্বা বসিয়ে বেড়া দেওয়ায় নদীটিতে বাঁধ তৈরি হয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে নদীগর্ভে দ্রুত পলি জমছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌচলাচল।

স্থানীয়রা বলেন, ফকিরহাট, মোল্লাহাট এবং আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নৌপথ সচল রাখতে ২০২০ সালে ভৈরব নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে খননের সুফল কাজে আসেনি। মোল্লাহাটের মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় ফকিরহাট এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

ফকিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মুকুন্দ পাল বলেন, নৌচলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। নৌপথ চালু থাকলে খুলনা, মোংলা বন্দর, বাগেরহাট ও বরিশালের সঙ্গে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন সম্ভব হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, ওয়াসার পাইপটি ফকিরহাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিক বলেন, ওই স্থানে পাইপলাইনের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি চীন থেকে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যন্ত্রপাতি এলে পাইপলাইনটি নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিচার পেতে জীবনের ঝুঁকি

মো. হোসাইন আলী কাজী
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনের আশ্রয় নিতে এসে ভয় নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে আদালতে। অর্ধশত বছরের পুরোনো দুটি পরিত্যক্ত ভবনের মাঝ দিয়েই বরগুনার আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল প্রবেশপথ। জরাজীর্ণ ভবন দুটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীরা ওই পথ ব্যবহার করছেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ভবন দুটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণের জন্য দুটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করে। প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন ভবন দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেগুলো অপসারণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পরিত্যক্ত ওই ভবন দুটির মাঝখান দিয়েই আদালতের প্রধান প্রবেশদ্বার নির্মিত। প্রতিদিন বিচারকাজে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচ দিয়ে আদালতে যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের দাবি, ভবন দুটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।

গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবন দুটির বিভিন্ন অংশ থেকে ইট, পাথর ও বিম খসে পড়ছে। দেয়ালজুড়ে জন্মেছে পরগাছা। ভেতরের অবস্থা এমন যে দিনের বেলায়ও সেখানে ঢুকতে ভয় পান মানুষ। ভবন দুটি ভুতুড়ে অবস্থায় পরিণত হওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

বিচারপ্রার্থী আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আদালতের সামনে এভাবে দুটি পরিত্যক্ত ভবন থাকা যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি তা আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা প্রয়োজন।’

আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. আবুবকর বলেন, আদালতের প্রবেশপথের দুই পাশে পরিত্যক্ত দুটি ভবন পড়ে আছে। ভবন ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

জেলা বার সদস্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা জরুরি।

জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভবন দুটি বহু আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন এখনো সেগুলো অপসারণ করা হয়নি, তা আমারও বোধগম্য নয়।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত