Ajker Patrika

রাজশাহীর দুর্গাপুর: ভেজাল সার কিনে প্রতারিত কৃষক

  • জব্দ করা ২০ কেজি নকল সার ধ্বংস করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
  • মোড়কে ৩৬% দস্তা লেখা হলেও ল্যাব পরীক্ষা করে মিলেছে ১%।
দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি  
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চকচকে মোড়কে লেখা সারে জিংকের (দস্তা) মাত্রা ৩৬ শতাংশ আর সালফেট ১৭.৫ শতাংশ। মোড়কে এমন তথ্যে ভরসা করে বাজার থেকে সার কিনছেন কৃষকেরা।

তবে ল্যাব পরীক্ষায় জানা গেছে, ছোয়াদ অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি কোম্পানির ভাইটাল জিংক নামের মোড়কের এই দস্তা সার আসলে নকল। এতে দস্তা ৩৬ শতাংশ থাকার কথা বলা হলেও রয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। সালফেট রয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। নকল সার কিনে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

সম্প্রতি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা বাজারে অভিযান চালিয়ে ২০ কেজি নকল ভাইটাল জিংক সার জব্দ করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ল্যাব পরীক্ষার তথ্য আসার পর গতকাল সোমবার দুপুরে এই নকল সার ধ্বংস করা হয়।

রবি মৌসুমে আলু ও পেঁয়াজ চাষে জমিতে ব্যাপকহারে জিংক সালফেট (দস্তা) সার ব্যবহার করা হয়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান বাজারে নকল ও ভেজাল সার সরবরাহ করছে। আর এই সার কিনে কৃষকের সর্বনাশ হচ্ছে।

নকল সার বিক্রি প্রসঙ্গে দুর্গাপুর পৌর সদর বাজারের শাফায়েত এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মিলন আলী বলেন, ‘কোম্পানির লোকজন এসে দিয়ে যায়। প্যাকেটে সবকিছু লেখা থাকে। আমরাও বুঝতে পারি না।’

পৌর এলাকার সিংগা গ্রামের নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও এই কোম্পানির দস্তা কিনে গতবার প্রতারিত হয়েছি।’

সম্প্রতি দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পৌর এলাকার সিংগা বাজারে শাফায়েত এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে ২০ কেজি ভাইটাল জিংক (দস্তা) সার জব্দ করে। পরে নমুনা পরীক্ষার জন্য রাজশাহী বিভাগীয় গবেষণাগার মৃত্তিকাসম্পদ ইনস্টিটিউট পাঠায় তারা। ল্যাব পরীক্ষায় জানানো হয়, বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়া ছোয়াদ অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি কোম্পানির ভাইটাল জিংক দস্তা সার নকল। ল্যাব পরীক্ষায় কোম্পানির প্যাকেটে লেখা তথ্যের সঙ্গে সারের গুণগত মানের মিল পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা শারমিন লাবণী বলেন, ছোয়াদ অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি কোম্পানির প্যাকেটে জিংক দস্তা দেওয়া আছে ৩৬ ভাগ। কিন্তু ল্যাব পরীক্ষায় পাওয়া গেছে মাত্র ১ ভাগ। এ ছাড়াও সালফেট ১৭ দশমিক ৫ ভাগ থাকলেও সেখানে পাওয়া গেছে মাত্র ৩ দশমিক ৫ ভাগ। তার মানে এই কোম্পানির জিংক দস্তা সার নকল ও ভুয়া।

এ বিষয়ে আইনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে আজকের পত্রিকাকে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, নকল সারগুলো সবার উপস্থিতিতে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। ওই কোম্পানিকে শোকজ করা হয়েছে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

সাহারা শারমিন লাবণী বলেন, ‘কৃষক যাতে প্রতারিত না হন, সেজন্য আমাদের মনিটরিং জোরদার করা হবে। এ ছাড়াও এই কোম্পানির ভাইটাল জিংক দস্তা সার ব্যবহার না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

গতকাল দুপুরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চত্বরে জব্দ করা জিংক দস্তা স্যার ল্যাব পরীক্ষায় নকল প্রমাণিত হওয়া ছোয়াদ অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি কোম্পানির সারগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহারা শারমিন লাবণী, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জান্নাতুল ফেরদাউসসহ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ছোয়াদ অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি কোম্পানির এমডি সাজ্জাদ হোসেন মিঠু বলেন, ‘ল্যাব পরীক্ষায় এমন রেজাল্ট আসায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কৃষক যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখছি। দ্রুত বাজার থেকে ছোয়াদ অ্যাগ্রো অ্যান্ড ডেইরি কোম্পানির দস্তা সার তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

লন্ডনে চিকিৎসা যাত্রায় খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ১৪ জন, তালিকায় ছয় চিকিৎসক ও দুই এসএসএফ

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

ঢাকার তিনটিসহ আরও ২৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি থাকল

মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ