Ajker Patrika

‘বুকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় ছেলেটা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল’

শাহীন রহমান, পাবনা ও তুষার ভট্টাচার্য, চাটমোহর
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৪, ২০: ৫১
‘বুকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় ছেলেটা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল’

‘ছেলেটার সঙ্গে হাসপাতালের বিছানায় বসে গল্প করেছি, খাবার খেয়েছি। মনে হয় নাই, সে বড় কোনো অসুস্থ। হঠাৎ করেই তার মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া শুরু হয়। ডাক্তার ডেকেও চিকিৎসা মেলেনি। একপর্যায়ে ভোরে আজানের সময় ছেলেটা আমার বুকের মধ্যে জড়িয়ে থাক অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।’

এভাবেই একমাত্র ছেলে এস এম সাফিউর রহমানের (১৯) মৃত্যুর বর্ণনা দেন তাঁর বাবা এস এম রেজাউল করিম পাশা। তাঁর বাড়ি পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের ছোট শালিকা মহল্লায়। কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাফিউর গত ২৫ জুলাই ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সাফিউর রহমান। হঠাৎ অসুস্থ হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা না দিয়ে তাঁর ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রেজাউল করিম পাশার।

এস এম সাফিউর রহমান চাঁদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির (আইএমটি) ২০২১-২২ সেশনের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কিছুদিন পরই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হওয়ার পর তাঁর দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তাঁর বাবা পাগলপ্রায়। মা কামরুন্নাহার বাকরুদ্ধ। ছেলে ফিরে আসবে এমন অপেক্ষায় এখনো পথ চেয়ে আছেন তিনি।

রেজাউল করিম পাশা বলেন, ১৪ জুলাই চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনে অংশ নেন তাঁর ছেলে সাফি। এ কারণে ওই দিন সন্ধ্যায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আইএমটির শিক্ষার্থী রাসেলসহ অন্যদের তুলে আনতে ক্যাম্পাসে যায়। এ সময় শেষ বর্ষের ছাত্র সাফিউর রহমানসহ তাঁর সহপাঠীরা বাধা দেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও মারামারি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চলে যান ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।

এরপর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভেতরে অবস্থান করেন। ১৫ জুলাই বেলা ১১টার দিকে আইএমটি থেকে সাফিউরকে জানানো হয়, রাতে ক্যাম্পাসের হলে আক্রমণ করবে ছাত্রলীগ। বেলা ২টার দিকে সব হলে তালা দিয়ে ছাত্ররা ফরিদপুর, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় সড়কপথে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে চলে যান।

সাফিউর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয় নেন। পরে সেখানকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নোয়াখালী চৌরাস্তা মোড়ে ও বেগমগঞ্জ উপজেলা শহরে ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ২১ জুলাই রাতে জ্বর শুরু হয় তাঁর। ২৪ জুলাই সাফিউরকে প্রথমে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেদিন সকালে সাফিউরকে ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং ওষুধ খাওয়ানো হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন তিনি নেশা করে কিনা বা কোনো সময় তিনি কোনো ড্রাগ নিয়েছেন কি না। রেজাউল করিম বলেন, ‘ওই সময় আমার ছেলের শয্যার আশপাশে অপরিচিত লোকের আনাগোনা ছিল। তারা বিভিন্নভাবে বাবা-ছেলেকে প্রশ্ন করে। মূলত আমাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করে ওই লোকজন। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ২৪ জুলাই দুপুরে আমরা একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাই। মায়ের সঙ্গে দুপুর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে তার কথা হয়েছে।’

রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাফির মুখে ফেনা ওঠা শুরু করে এবং লালা বের হতে থাকে। এর মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালে তিনি মুখে খাবার একটি ট্যাবলেট দেন এবং বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রেখে মুখের লালা পরিষ্কার করে দিতে বলেন। ২৫ জুলাই ভোরে ফজরের আজানের সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শাফি। ভোর ৬টার দিকে ছেলের লাশ নিয়ে হাসপাতাল থেকে অনেকটা পালিয়ে যেতে হয় আমাকে। তা না হলে ছেলের লাশ না পাওয়ার শঙ্কা ছিল।’

সাফিউরের বাবা রেজাউল করিম পাশা বলেন, ‘সাফির মৃত্যুসনদে লেখা হয়েছে শ্বাসনালির সংক্রমণে তার মৃত্যু হয়েছে। আমার ছেলের যদি শ্বাসনালির সংক্রমণ থাকত, তাহলে সে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারত না। সে কখনো ধূমপানও করেনি। মাদক গ্রহণের কথা তো আরও বহুদূর। ছেলে কোটা আন্দোলন করায় তাকে পরিকল্পিতভাবে পয়জনিং করে মেরে ফেলা হয়েছে। এত দিন নিরাপত্তার শঙ্কায় কারও কাছে মুখ খুলতে পারিনি। এর সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।’

সাফিউর রহমানের মা কামরুন্নাহার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৪ জুলাই রাত ১১টা পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে কথা হয়। সে বলছিল, “আম্মু, তুমি চিন্তা কইর না। আমি ভাত, স্যুপ ও কফি খাইনি। তুমি কখন আসবে?” আমি বলেছিলাম, আমি কাল সকালে আসব। আমার একটাই ছেলে। কীভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেল! আমার ছেলে যে নাই, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারি না। আমি এখনো পথ চেয়ে থাকি, আমার ছেলে ফিরে আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা, আটক ১০

কর্ণফুলী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীতে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১০ জন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার মইজ্জ্যেরটেক এলাকায় সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযানে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কর্ণফুলী ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার।

আবু সাঈদ জানান, রোববার সকাল থেকে সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি অটোরিকশা জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। এই ঘটনার জের ধরে অটোরিকশাচালকেরা ট্রাফিক পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। চালকদের এলোপাতাড়ি মারধরে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইমতিয়াজসহ দায়িত্বে থাকা কনস্টেবলরা আহত হন। পরে থানা-পুলিশের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করা হয় এবং ১০ হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি সহায়তা নয়, গণচাঁদাতেই কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংস্কার করবে উদীচী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর তোপখানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুর্বৃত্তদের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিজস্ব উদ্যোগে এবং গণচাঁদা সংগ্রহ করে সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কার্যালয় সংস্কারের জন্য তারা সরকার বা কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করবে না।

উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদীচী কখনোই সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভরশীল ছিল না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করা গণচাঁদাই সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। এবারও ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়টিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদীচীর দেশ-বিদেশের হাজারো শিল্পী ও কর্মী তাদের পরিশ্রমের উপার্জনের টাকা দিয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।

বিবৃতিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, উদীচীর নাম করে অন্য কেউ যদি আর্থিক সহায়তা চায় এবং এর ফলে কেউ প্রতারিত হন, তবে তার দায়ভার কেন্দ্রীয় সংসদ নেবে না।

উদীচী নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং ছায়ানট ভবনে হামলার পর থেকেই উদীচীর ওপর হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দেওয়া হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা প্রশাসন নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ফলে গত ১৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সন্ধ্যায় মৌলবাদী অপশক্তি বিনা বাধায় উদীচী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এতে সংগঠনের ৫৭ বছরের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, দুষ্প্রাপ্য বাদ্যযন্ত্র ও আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হামলা ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, উদীচীর এখন একটাই প্রত্যাশা—এই ন্যক্কারজনক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। বিচারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, যারা বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হস্তক্ষেপ চায়, এ দেশের মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থান পর্যন্ত সাধারণ মানুষের যে ত্যাগের ইতিহাস, তা কোনো ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না বলেও তারা অঙ্গীকার করেন। একই সঙ্গে দেশের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এই অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় উদীচী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শহীদ করপোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫১
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা
শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মরদেহের অপেক্ষায় স্বজন ও এলাকাবাসী। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা করপোরাল মাসুদ রানাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে অধীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে ড্রোন হামলায় নিহত বীর সেনানীর বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাসুদ রানার মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার তাঁর গ্রামের বাড়ি-সংলগ্ন উপজেলার করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণের কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে একটু দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। পরে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে মাসুদ রানাসহ শহীদ ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহীদ মাসুদের গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে এলাকার লোকজন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হেলিকপ্টারযোগে শহীদ মাসুদ রানার মরদেহ আনা হবে তাঁর নিজ গ্রামে। সেখানে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য করিমপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠটি ইতিমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

মাসুদ রানা উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের বড় ছেলে। ২০০৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মাসুদ রানার মেজো ভাই মনিরুল ইসলাম এবং ছোট ভাই রনি আলমও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য।

স্বজনেরা জানান, গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে শান্তি রক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান মাসুদ রানা। মিশন শুরুর মাত্র এক মাস সাত দিনের মাথায় ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় ড্রোন হামলায় তিনি শহীদ হন। শান্তিরক্ষী হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়লেও কফিনে মুড়িয়ে ফিরছেন এই বীর।

নাটোর স্টেডিয়ামের আর্মি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর বলেন, ‘শহীদ মাসুদের দাফন সম্পন্ন করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ওই হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন। তাদেরই একজন নাটোরের লালপুরের কৃতী সন্তান করপোরাল মাসুদ রানা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাবনা-৩: স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ারুলের

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৮
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে মতবিনিময় সভায় কেএম আনোয়ারুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনা-৩ আসনে (চাটমোহর–ভাঙ্গুড়া–ফরিদপুর) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে চাটমোহর পৌর সদরের পাঠানপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে তিনি এই ঘোষণা দেন।

মতবিনিময় সভায় চাটমোহর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তাইজুলের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুত্তালিব প্রামানিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস আলো মাস্টার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজির সরকার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক গোলজার হোসেন প্রমুখ।

এ ছাড়া ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা। বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলামকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

কে এম আনোরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে দুবার এমপি এবং দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখন জনগণ চাইছে আমি নির্বাচনে অংশ নিই। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। সাধারণ জনগণ বহিরাগত কোনো প্রার্থী চায় না। নির্বাচনী অনুকূল পরিবেশ থাকলে আমার জয় নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ। আমার শেষনিশ্বাস পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’

চাটমোহর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার পৌর ও ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, পাবনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। এর আগে কে এম আনোয়ারুল ইসলাম ও হাসাদুল ইসলাম হীরার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত