Ajker Patrika

দুই এনজিওর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি  
সম্প্রতি এনজিও দুটির চেয়ারম্যান জগন্নাথ চন্দ্র দাশকে উপজেলা পরিষদের হলরুমের সামনে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন গ্রাহকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সম্প্রতি এনজিও দুটির চেয়ারম্যান জগন্নাথ চন্দ্র দাশকে উপজেলা পরিষদের হলরুমের সামনে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন গ্রাহকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দুটি এনজিও খুলে গ্রাহকদের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, উপজেলার ‘গ্রামের আলো’ ও ‘গ্রামীণ উন্নয়ন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সমবায় সমিতি’ নামে দুটি এনজিওতে গ্রামের নারী-পুরুষেরা দীর্ঘদিন ধরে টাকা জমিয়েছে। এখন প্রায় এক বছর ধরে এনজিও দুটি বন্ধ রয়েছে। গ্রাহকেরা বারবার ঘুরেও তাঁদের অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না।

সম্প্রতি কয়েক শ ভুক্তভোগী গ্রাহক দুটি সংস্থার চেয়ারম্যান জগন্নাথ চন্দ্র দাশকে উপজেলা পরিষদের হলরুমের সামনে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন। আমানতকারীরা টাকা ফেরতের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় জগন্নাথের অন্য সহযোগীরা কৌশলে পালিয়ে যান। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে শিবালয় থানায় জগন্নাথকে হস্তান্তর করা হয়।

জানা গেছে, এনজিও দুটির নেতৃত্বে থাকা জগন্নাথ চন্দ্র দাস ও তাঁর সহযোগীরা ২০০৬ ও ২০১১ সালে জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। নানা প্রলোভন ও মুনাফার আশ্বাস দিয়ে প্রায় ৪০০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করেন তাঁরা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে আমানত ফেরত না দিয়ে টালবাহানা করতে শুরু করেন তাঁরা। এমনকি গ্রাহকদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

ভুক্তভোগী স্থানীয় শিবরামপুর গ্রামের সাহাজ উদ্দিনের ছেলে শওকত হোসেন সাকিম (৫৬) বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জগন্নাথ চন্দ্র দাস ছাড়াও আসামি করা হয়েছে গ্রামীণ উন্নয়ন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্মকর্তা মো. আলম হোসেন (৪৪), মো. রজব আলী (৪০), ফলসাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী (৪০), জগন্নাথের স্ত্রী সুমা রানী দাস (৩২), বাবা বলাই চন্দ্র দাস (৬০) ও ভাই গোপী নাথ দাসকে (৩৫)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শিবালয় থানার এসআই অসীম মণ্ডল জানান, প্রধান আসামিকে ভুক্তভোগী আমানতকারীরা পুলিশে সোপর্দ করেছেন। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার টেপড়া এলাকায় এক যুগ আগে জগন্নাথ দাস, আলম হোসেন, রজ্জব আলী, স্থানীয় ফলসাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী মাস্টারের যৌথ পরিচালনায় গ্রামের আলো ও গ্রামের উন্নয়ন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এনজিও দুটি ঋণ, সঞ্চয়পত্র, জামানতসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন। নির্দিষ্ট সময় পার হলে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করতে থাকেন তাঁরা। পরবর্তীকালে এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করে তাঁরা গা ঢাকা দেন। গ্রাহকেরা মামলা করলেও এনজিওর মালিকেরা জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরতে থাকেন।

ভুক্তভোগী আমানতকারী শওকত হোসেন সাকিম, আব্দুর রাশিদ, সামেলা, রিজিয়া বলেন, ‘আমানতের লভ্যাংশ দূরের কথা, আমাদের মূল টাকাও ফেরত দেননি। আমাদের কষ্টে অর্জিত টাকা হারিয়ে এখন সবাই সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। মামলা দিয়েও টাকা ফেরত পাইনি। মালিকেরা জামিন নিয়ে ঘুরছেন। এ কারণে এনজিওর চেয়ারম্যান জগন্নাথ দাসকে আমরা বেঁধে রাখি। এ টাকা ফেরত না পেলে আমাদের সবাইকে পথে বসতে হবে।’

আজ শনিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, সঠিক আইন প্রয়োগ ও কঠোর নজরদারি থাকলে এত বড় প্রতারণা ঘটত না। মানুষেরও সচেতনতার অভাব আছে। এই সুযোগটাই নিচ্ছে চক্রগুলো।

স্থানীয় উলাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান আনিস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার আমানত এনজিও দুটি সংগ্রহ করে। এখন মেয়াদ শেষ হলেও টাকা ফেরত দিচ্ছে না। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা প্রতিদিন আমার কাছে কান্নাকাটি করে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। স্থানীয় জগন্নাথ দাশ, আলম, রজ্জব ও মোহাম্মদ মাস্টার এনজিওগুলো পরিচালনা করত। এদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

এ ব্যাপারে আজ শনিবার শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, যাতে গ্রাহকেরা তাঁদের আমানত ফেরত পান। ঘটনার পর জেলা সমবায় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌসী।’ তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে সমবায় সংস্থার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লালমনিরহাটের ৩ আসন: জাপার দুর্গে বিভক্ত বিএনপি

  • তিন আসনের দুটিতেই দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি
  • বিএনপির বিবাদের সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
  • তৎপর জাপা, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন
খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের ৩ আসন: জাপার দুর্গে বিভক্ত বিএনপি

একসময় জাতীয় পার্টির (জাপা) দুর্গ হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাটে এবার দৃশ্যত ভোটের মাঠে বড় শক্তি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দুই দলই জাপার আধিপত্য ভাঙতে মরিয়া। তবে তিন আসনের দুটিতেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরা। বিএনপির এই বিবাদের সুবিধা পেতে পারে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি-জামায়াতের বাইরে জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসের মতো দলগুলোও ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছে।

লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতীবান্ধা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান। তিনি এই অঞ্চলের মূল ইস্যু হিসেবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়নে খুশি নয় দলের আরেক নেতা সাহেদুজ্জামান সরকার কোয়েলের অনুসারীরা। শেষ পর্যন্ত সাহেদুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তা হাসান রাজীব প্রধানের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল ইসলাম রাজু। ইতিপূর্বে করোনা ও বন্যার সময়ে মানুষের পাশে থাকায় এলাকায় তিনি পরিচিত মুখ। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বিরোধে বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হলে সেটি তাঁকে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ। এবি পার্টির মনোনয়ন পেতে পারেন আবু রাইয়ান আসআরী রচি। এ ছাড়া ভোটের মাঠে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের ফজলুল করীম শাহারীয়ার, খেলাফত মজলিসের আবুল কাশেম। নানান রকম সামাজিক কাজে জনগণের মধ্যে আলোচনায় এসেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তুরস্কপ্রবাসী শিহাব আহমেদ।

লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সহসভাপতি রোকন উদ্দিন বাবুল। তবে তাঁর প্রাথমিক মনোনয়নে ক্ষুব্ধ তাঁর চাচাতো ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলে বা জোরালোভাবে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বিএনপির জন্য সমীকরণ বদলে যেতে পারে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে পারেন দলটির সাবেক এমপি মজিবুর রহমানের ছেলে শামীম কামাল। এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন রাসেল আহমেদ। জনতার দলের চেয়ারম্যান শামীম কামাল দলটির প্রার্থী হতে পারেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তরুণ উদ্যোক্তা মমতাজ আলী শান্তর নাম শোনা যাচ্ছে। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। জেলার অন্য দুই আসনের মতো এখানে বিএনপিতে উল্লেখযোগ্য কোনো বিদ্রোহী না থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন তিনি। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে তিস্তাপারে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচিতে লাখো জনতার সমাগমের ঘটনায় তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিশমার বিষয়টি সামনে এসেছে। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহের। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মোকছেদুল ইসলাম। তিনজনই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। এলাকাজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

  • উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বহু কৃষক মাটির উর্বর অংশ বিক্রি করেছেন
  • একসময় এই সমতলভূমিতে বাদাম, ধান, সরিষাসহ বিভিন্ন শস্য ফলানো হতো
মোহাম্মদ উজ্জ্বল, মহম্মদপুর (মাগুরা) 
মাগুরার মহম্মদপুরে টপ সয়েল কেটে নেওয়া একটি আবাদি জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাগুরার মহম্মদপুরে টপ সয়েল কেটে নেওয়া একটি আবাদি জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটির ওপরের উর্বর অংশ (টপ সয়েল) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেই মাটি কাটার মহোৎসব চলছে মাঠে মাঠে। নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এ চিত্র মাগুরার মহম্মদপুরের। জানা গেছে, উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বহু কৃষক মাটির উর্বর অংশ ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, অন্যদিকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মধুমতী সেতু ও আশপাশের পরিবেশ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুমতী সেতুর পূর্ব পাশে গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরঘেঁষা এলাকায় গড়ে ওঠা ৫টি অবৈধ ইটভাটার জন্য জায়গা প্রশস্ত করা হচ্ছে। পাশেই ইট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহে অবাধে কাটা হচ্ছে আবাদি জমি। একসময় এই সমতলভূমিতে বাদাম, ধান, সরিষা, পাট ও মরিচের ব্যাপক আবাদ হলেও এখন খননযন্ত্রের আঘাতে তা পরিণত হয়েছে গর্ত-খানাখন্দপূর্ণ অনুর্বর ভূমিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮টি ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাস থেকেই উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের কৃষিজমির টপ সয়েল বিক্রি শুরু হয়। ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভাটামালিকেরা কৃষিজমির উর্বর অংশ ক্রয় করেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৪ মাস চলে আবাদি জমির টপ সয়েল কর্তনের হিড়িক। এসব কারণে দিন দিন ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি ও উৎপাদনক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পীযূষ রায় বলেন, টপ সয়েল হলো আবাদি জমির পুষ্টি-প্রাণ। এই মাটি কেটে নেওয়া হলে কমপক্ষে ১০ বছর ওই জমিতে ভালো ফলন আশা করা যাবে না। ফলে আগামীতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা থাকছে।

ইউএনও মুহ. শাহনুর জামান বলেন, ‘টপ সয়েল কাটার কোনো খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আবাদি জমি রক্ষা করতে হলে কেবল আইন প্রয়োগ করে নয়; বরং কৃষক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দরপত্র ছাড়াই ভাড়া ২৪ শতাংশ জমি

  • খাতুনগঞ্জের মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স ও মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের অনুকূলে বরাদ্দ (ভাড়া) দেওয়া হয়
  • বন্দরের ভূমিব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী দরপত্র ছাড়া জমি ইজারা কিংবা ভাড়া দেওয়া যাবে না
মো. আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নীতিমালা ভেঙে দরপত্র ছাড়াই ভাড়া দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের ২৪ শতাংশ জমি। এমনকি আমদানিকারকদের এই জমি ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে খাতুনগঞ্জের দুই ব্যবসায়ীকে। যাঁরা আমদানিকারক নন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বন্দরের বোর্ড সভার অ্যাজেন্ডার সারসংক্ষেপের নথি (নথি নম্বর ১৮.১৩.০০০০.৫০০.৩৫.০২২.২৫) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরের সুজা কাঠগড় মৌজার ২৪ শতক (১০ হাজার ৪৫৫ বর্গফুট) জমি খাতুনগঞ্জের মেসার্স পূবালী ট্রেডার্স ও মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের অনুকূলে বরাদ্দ (ভাড়া) দেওয়া হয়। বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিশেষ প্রভাবে দ্রুততার সঙ্গে এই জমি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে পাইকারি নিত্যপণ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত খাতুনগঞ্জের চাক্তাই খালের নিকটবর্তী এই জমি কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই ভাড়া দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মেসার্স পূবালী ট্রেডার্সের মালিক সুব্রত মহাজন ও মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ওই জমি বরাদ্দ পেতে আবেদন করেন। গত ৭ অক্টোবর অস্থায়ী ভিত্তিতে জমিটি ৬ মাসের জন্য বরাদ্দ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বন্দরের ১৯৬৭০ নম্বর বোর্ড সভায় দরপত্র ছাড়াই ওই ব্যবসায়ীদের এই জমি বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

৯ অক্টোবর এই জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। এরপর ১৬ নভেম্বর ওই জমিতে অস্থায়ী টিনশেড ঘর তৈরির অনুমতিও দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্রুততার সঙ্গে জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

বন্দরের ভূমিব্যবস্থাপনা নীতিমালা ১৯৯৮-এর-৬ বিধিতে দরপত্র ছাড়া কোনো ভূমি ইজারা, ভাড়া প্রদান করা যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানি পণ্য মজুতের জন্য ৬ মাসের ভাড়া দেওয়ার বিধান রাখা হয়।

এ বিষয়ে পূবালী ট্রেডার্সের মালিক সুব্রত মহাজন বলেন, ‘বন্দর থেকে এই জায়গা আমি বরাদ্দ পেয়েছি। আমার অংশ ইতিমধ্যে রহমান ট্রেডিংয়ের মালিক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান নিজের নামে বরাদ্দ ও সুব্রত মহাজনের নামে বরাদ্দ জমি কেনার কথা স্বীকার করেন।

বন্দরের সচিব ও মুখপাত্র ওমর ফারুক বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, অনিয়ম হলে তাঁদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে। তবে তাঁদের ৬ মাসের জন্য জায়গাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীর সবজি: সরবরাহ বেশি, চাষিরা বিপাকে

  • ভরা মৌসুমে দাম কম থাকায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন
  • উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক চাষির
  • এখানকার সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়
হারুনূর রশিদ, রায়পুরা (নরসিংদী)
নরসিংদীর বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে সাপ্তাহিক সবজির হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। সবজির দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা। ছবি: হারুনূর রশিদ
নরসিংদীর বারৈচা বাসস্ট্যান্ডে সাপ্তাহিক সবজির হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। সবজির দাম কমে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা। ছবি: হারুনূর রশিদ

নরসিংদী জেলা সবজির ভান্ডার নামে সারা দেশে সুপ্রসিদ্ধ। জেলায় এবার সবজির ভরা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। তবে পাইকারি হাট ও খুচরা বাজারগুলোতে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় খরচ ওঠাতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের।

গতকাল শনিবার সকালে জেলার বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর পাইকারি সবজির হাট ঘুরে দেখা যায়, তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকারেরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে সবজি সংগ্রহ করছেন। ভরা মৌসুমে দাম কম থাকায় কৃষকদের মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।

চাষিদের অভিযোগ, উৎপাদন বেশি ও চাহিদা কম থাকার সুযোগে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছেন। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।

জানা গেছে, জেলার রায়পুরা, বেলাব ও শিবপুর উপজেলার সমতল ও উঁচু জমিতে সারা বছর সবজি চাষ হয়। এখানকার উৎপাদিত সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার চাহিদা পূরণ করছে। পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। জেলায় প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাধাগঞ্জ, চরসুবুদ্ধি, পুটিয়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাহমুদাবাদ নামাপাড়া, জঙ্গি শিবপুর, গুগল নগর, বারৈচা, নারায়ণপুর, মরজালসহ বিভিন্ন স্থানে সাপ্তাহিক পাইকারি হাট বসে। এসব হাটে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণে মুখর থাকে।

পাইকারি বাজারে এ দিন দেখা যায়—আলু (প্রতি কেজি) ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৭০-৮০, শিম ১০-৪০, বেগুন ৩০-৪০, কাঁচামরিচ ৬০-৭০, পাকা টমেটো ৭০-৭৫, শসা ৪০, করলা ৬০, গাজর ৪০, পেঁপে ২০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৩৫, লাউ ১০-২০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫-১৫ (পিস), লালশাক ১৫ টাকা (আঁটি) ও ধনেপাতা ১০-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে আলু প্রতিকেজি ২৫ টাকা, বেগুন ৪০-৫০, পেঁয়াজ ৮০-৯০, শিম ২০-৫০, কাঁচামরিচ ৮০, পেঁপে ৩০, টমেটো ৮০, শসা ৪০, লাউ ২০-৪০ (পিস), শাকসবজি প্রতি আঁটি ৫-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কথা হয় কৃষক আবুল মিয়া, কামাল, মজনু মিয়া, স্বপন বিশ্বাস, আব্দুল মালেক, শ্যামল ও কাওছারের সঙ্গে। তাঁরা জানান, দুই সপ্তাহ আগে সবজির ভালো দাম ছিল। বর্তমানে একসঙ্গে বেশি সবজি বাজারে আসায় সরবরাহ বেড়ে গেছে। ফলে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারদর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতি, ডিজেল, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কৃষি উপকরণের দাম কমাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা।

উত্তর বাখরনগর গ্রামের কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ৪৬ শতক জমিতে সবজি চাষে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শিম খেতে কুয়াশায় পচন ধরেছে, যা কীটনাশক দিয়েও দূর করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। দাম কমে যাওয়ায় লাভ তো দূরের কথা, খরচ তুলতেই কষ্ট হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পাইকার আব্দুর রহিম বলেন, নরসিংদীর হাটগুলো থেকে কেনা সবজি সারা দেশে সরবরাহ হয়। এখন বাজারে সবজির জোগান বেশি।

খুচরা বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, হাটে কম দামে কিনে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, চলতি বছরে নরসিংদীতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ হাজার ৪ শ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ১০ হাজার ৫ শ হেক্টরে সবজির চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও চাষিরা বাজারে ভালো দাম পেয়েছেন। বর্তমানে ভরা মৌসুমে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর তিন এনসিপি নেত্রীর রহস্যময় পোস্ট

জামায়াতের সঙ্গে জোটে আপত্তি এনসিপির ৩০ নেতার, নাহিদকে চিঠি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত