Ajker Patrika

তাড়াইলে কাউন্সিলের আগে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি নেতা নিহত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ২৫
আবুল হাসান রতন। ছবি: সংগৃহীত
আবুল হাসান রতন। ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে বিএনপির উপজেলা কমিটির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁর তিন ভাতিজা গুরুতর আহত হন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ। তবে দলীয় নেতাদের দাবি, এটি পারিবারিক বিরোধ।

আজ রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের বানাইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. আবুল হাছান রতন (৫৫) বানাইল গ্রামের মৃত নুরুল হুদার ছেলে। তিনি বিএনপির রাউতি ইউনিয়ন শাখার দুইবারের সভাপতি।

আহতরা হলেন— খালিদ (২২), রাসেল (২৭) ও হৃদয় (১৮)। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত তিনজনই নিহত মো. আবুল হাছান রতনের ভাতিজা।

এ ঘটনায় পুরো উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুরে নিহত রতনের লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে রেখেই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতাকর্মী। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফার নেতৃত্বে হাসপাতাল গেইট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

বিকালে জেলা বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক ভিপি সাইফুল ইসলাম সুমন ও বিএনপি নেতা সামীর হোসেন সাকীর নেতৃত্বে বিএনপির আরেকটি গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল করে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে।

বিএনপি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, চিরকুমার আবুল হাছান রতন বিএনপির একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা ছিলেন। কর্মীবান্ধব একজন নেতা হিসেবে এলাকায় তার সুনাম রয়েছে। সম্প্রতি তাড়াইল উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল আয়োজনের জন্য আগামী ১৫ই জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফা এবং সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন লিটন তৎপরতা চালিয়ে আসছেন। এই দুই নেতাকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে দুই শিবিরে বিভক্ত তাড়াইল উপজেলা বিএনপি। এর মধ্যে রতন ছাইদুজ্জামান মোস্তফার পক্ষে তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন।

অন্যদিকে বানাইল গ্রামেরই বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন লিটনের পক্ষে সক্রিয়ভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন। গিয়াস উদ্দিন রাউতি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য। কাউন্সিলকে সামনে রেখে গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে শনিবার রাতে বানাইল গ্রামে গণসংযোগ সভা হয়। সেখানে রতন সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা হয়। আবুল হাছান রতন ও গিয়াস উদ্দিন প্রতিবেশী এবং নিকটাত্মীয়।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফার নেতৃত্বে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফার নেতৃত্বে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: আজকের পত্রিকা।

এরপর রোববার সকালে গিয়াসের সঙ্গে রাতের সভার বিষয়ে জানতে চান রতন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে গিয়াস লোকজনসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রতনের উপর হামলা চালায়। তাকে বাঁচাতে তিন ভাতিজা খালিদ, রাসেল ও হৃদয় এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা হয়। হামলার পর মুমূর্ষু অবস্থায় রতনকে উদ্ধার করে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া গুরুতর আহত তার তিন ভাতিজাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহনূর শুভ আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিহত আবুল হাছান রতনের বুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।

নিহত আবুল হাছান রতনের ভাগনে শামীম মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মামাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’

তবে সভাপতি পদপ্রত্যাশী তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সারোয়ার হোসেন লিটন দাবি করেন, গিয়াসউদ্দিন তার সমর্থক নয়।

তিনি বলেন, ‘তাঁরা (রতন ও গিয়াস) সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা, তাঁরা আত্মীয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এতোটাই কলুষিত যে সত্যি চিত্রটা সামনে আনা আসলেই কষ্টকর। এটা সম্পূর্ণই তাদের পারিবারিক ইস্যু। এটা কোনোভাবেই অন্যদিকে ঘোরানোর কোনো স্কোপ নাই৷ গিয়াসউদ্দিন আমার সমর্থক না। অনেকেই ইনটেনশনালি বলে। কিন্তু গিয়াসউদ্দিন আমার সমর্থক না।’

এ ব্যাপারে তাড়াইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ছাইদুজ্জামান মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে রাউতি ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি আবুল হাছান রতনকে নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য রাখা হয়। এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় তাঁর ওপরে হামলা করা হয়।

আর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ওদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ ছিল আগে থেকেই। এরাতো তাড়াইল বিএনপির কোনো পদে ছিলো না। পারিবারিক বিরোধ থেকেই এই ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। দলীয়ভাবে তদন্ত করে আমরা দেখব কে বা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। যদি দলীয় নেতৃবৃন্দ জড়িত থাকে তবে আমরা তো জেল ফাঁসি দিতে পারব না। আমরা তাদের দলীয় শাস্তির আওতায় আনব।’

ঘটনার বিষয়ে তাড়াইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘটনার সময় ছুরিকাঘাতে আবুল হাছান রতন গুরুতর আহত হন। তাঁকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এখনো কাউকে আটক করা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঋণের টাকা শোধ না করায় গুলি করে হত্যা করা হয় রফিককে, গ্রেপ্তার ১

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় হেলমেটধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে রফিক ইসলাম (৫৫) হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকালে মামলার পর পুলিশ ফারুক হোসেন (২৮) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ বলছে, রফিক ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আল আমিন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু একাধিকবার চাওয়ার পরও সেই টাকা পরিশোধ না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আল আমিন লোকজন নিয়ে রফিককে গুলি করে করেন।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পচাভিটা এলাকায় একটি চায়ের দোকানে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় রফিক ইসলাম গুলিতে নিহত এবং দুজন আহত হন।

রফিকুল ইসলাম উপজেলার পচাভিটা গ্রামের বাসিন্দা। আহত হয়েছেন একই গ্রামের রবজেল ফরাজি (৫২) ও ইউসুফ হোসেন (৫৫)। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ঘটনার পর রাতেই দৌলতপুর থানা-পুলিশ ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) যৌথভাবে তদন্তে নামে। আজ সকালে নিহতের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পচাভিটা গ্রামের ফুলচাঁদ আলীর ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে আল আমিন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন রফিক। তবে দীর্ঘদিনেও তিনি সেই টাকা পরিশোধ করেননি। এ নিয়ে আল আমিন ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার রফিক ও তাঁর স্ত্রী ব্যাংক থেকে ৫৪ হাজার টাকা তুলেছেন বলে খবর পান আল আমিন। পরে টাকা পরিশোধ করতে বলা নিয়ে কামালপুর বাজারে আল আমিনের সঙ্গে রফিকের কথা-কাটাকাটি হয়। এরই জেরে সন্ধ্যায় আল আমিন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। রফিক ওই দোকানে বসে চা পান করছিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মহসিন আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেলমেটধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে রফিক নিহত হওয়ার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরে আসামিকে আদালতে হাজির করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাবি পূরণে প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট হবে: ৮ দলের সমাবেশে জামায়াত আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে কোরআনের বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত আট দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের শীর্ষ এ নেতা এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আট দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্ক্ষার বিজয় হবে কোরআনের মাধ্যমে।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই ঐক্য আমাদের জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। আন্দোলনরত আট দলের পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’ প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ফ্যাসিবাদীদের উন্নয়নের বয়ান নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদীরা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাত। তারা বলত, বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ এখন কানাডায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ কানাডা হয়েছে তাদের জন্য, সিঙ্গাপুর হয়েছে তাদের জন্য। তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। কারণ, তারা বাংলাদেশের টাকা, ব্যাংকের টাকা লুট করে, ডাকাতি করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়েছে। বাংলদেশের টাকা পাচার করে কানাডায় বাড়ি করেছে।’

সমাবেশে জামায়াতের আমির আরও বলেন, এই ফ্যাসিবাদ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে আঘাত করেনি, তারা বড় আঘাত করেছে আলেম-ওলামাদের ওপর।

শফিকুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ রাসুলের বিরুদ্ধে কিছুসংখ্যক বেয়াদব কুৎসা রটিয়েছিল। সেটার প্রতিবাদ জানাতে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার রাজপথে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পালন করেছিলেন। সেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ফ্যাসিবাদীরা রাতের আঁধারে বর্বরতম হামলা চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে খুন করেছিল। এতগুলো আলেম-ওলামার খুনের পর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন—কেউ মারা যায়নি। আলেম-ওলামারা রং দিয়ে শুয়ে ছিল। এভাবে ফ্যাসিবাদীরা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল, রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না ইনশা আল্লাহ।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘এবার ইসলামি দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলার মাটিতে জেগে উঠেছে। আমরা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কবর রচনা করে আল্লাহর আইনের বাস্তবায়ন করব। সব চক্রান্ত, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয় হবে ইনশা আল্লাহ।’

আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

মামুনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ গরিব-দুঃখী, মেহনতি মানুষের রক্তে গড়া দেশ। বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। অনেক দল থেকে আসন সমঝোতার অফার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা এবার ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ‘হ্যাঁ’ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ৫ আগস্টের আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়েও মানুষ মুক্তি পায়নি। আগামী দিনে আবারও চাঁদাবাজ, জামেলদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে এই বৈষম্য থাকবে না। কেউ ১০ তলায় কেউ নিচতলায় থাকবে, সেটা আর হবে না।

মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলাম আগামী দিনে ক্ষমতায় যাবে ইনশা আল্লাহ। যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ মানবে না। হুমকি-ধমকি চলবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। আট দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারাই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না।’

সমাবেশে আট দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী ও নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম চান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অভিযোগের পাহাড় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি 
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

অর্থ কেলেঙ্কারি, প্রশাসনিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাসের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রবীন্দ্রনাথ দাস মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়ন সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ২১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী তাঁর অপসারণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে।

একই দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বানিয়াজুরী-ঘিওর সড়কের কলেজ গেটে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে শিক্ষকেরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অভিভাবকেরা আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারী আচরণ, আর্থিক অনিয়ম, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ফি আদায় এবং প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতার অভাবে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রশাসনিক কাজের জন্য সরকার অনুমোদিত ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা কোনো কাজেই ব্যয় করা হয়নি। এ ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দ ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭০০ টাকা অধ্যক্ষ নিজের নামে উত্তোলন করেছেন, যা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সরকারি পোশাকের জন্য ভাতার টাকা দীর্ঘ সময় আটকে রেখে পরে চাপের মুখে আংশিক টাকা বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া ইন্টারনেট বিল, কম্পিউটার খরচ, ভূমি উন্নয়ন কর, রাসায়নিক দ্রব্য, আসবাব, ক্রীড়াসামগ্রীসহ মোট ২১টি খাতে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে সরকারি বরাদ্দের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ জন শিক্ষক এসব অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, লাইব্রেরির বই কেনার জন্য বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বই না কেনা, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ভর্তি ফি নিয়ম অনুযায়ী ব্যয় না করে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করা, সরকারি শিক্ষকদের এসিআর উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা না দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখা, এসব অভিযোগও নথিভুক্ত করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস নিজেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে তদন্ত শুরু হতেই টানা তিন দিন প্রতিষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত দিনে রহস্যজনকভাবে কমিটি বাতিল করে নতুন পরিপত্র জারি করেন, যা নিয়ে শিক্ষকেরা আরও সন্দিহান হয়ে পড়েন।

শিক্ষক মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, নীরব থাকার কোনো উপায় নেই। তিনি মানসিকভাবে শিক্ষকদের হয়রানি করছেন এবং অভিযোগ করার পর উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, যা মানহানিকর ও লজ্জাজনক ব্যাপার।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘আমি অনেক অভিযোগ সম্পর্কে জানি না, কোথাও ভুল হয়ে থাকতে পারে। আর অধিকাংশ অভিযোগ সত্য নয়। শাস্তিযোগ্য কিছু প্রমাণিত হলে তা মেনে নেব।’

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিতা তুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে, শিক্ষা বোর্ডেও অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভৈরবে গ্যাসের লিকেজ থেকে আগুন, ১০ শিশুসহ দগ্ধ ১৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও ভৈরব সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ১০ শিশুসহ ১৫ জন দগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া চরপাড়া বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধদের উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ১২ জনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠান। বাকি তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দোকান মালিক, লুন্দিয়া টুকচানপুর গ্রামের বাসিন্দা জহির মিয়া পুরি ও রুটি ভাজি বিক্রি শেষে সকালে ১০টার দিকে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। তিনি ভুলে গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে দোকানের ভেতর গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে এক পর্যায়ে গ্যাসের বিস্ফোরণে দোকানে আগুন ধরে যায়। এসময় দোকানের সামনে থাকা পথচারী এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দগ্ধ হন।

আহতরা হলেন—হারুন মিয়া (৪০), সোহাগ মিয়া (১০), ওয়াসিবুল (১০), সামিউল (৯), আল আমিন (৮), শুভ (৮), নিরব (১৫), রাহাত (১২), ফাহিম (১০), আমিন (১০), হেকিম মিয়া (৫৫), সেরাজুল (১০), ছিদ্দিক মিয়া (৫৮), মোর্শিদ মিয়া (৫০) ও নাছির মিয়া (৪০)।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, আহতদের মধ্যে হারুন মিয়ার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাঁর অবস্থা সংকটজনক।

প্রত্যক্ষদর্শী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ রাস্তার ওপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সামনে কয়েকজন মানুষ আগুনে পুড়তে দেখি। পরে জানতে পারি গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই আগুন ছড়িয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর বলেন, ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। একজনের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং অন্যদের ২০–৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ১২ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত