Ajker Patrika

যশোর, শরীয়তপুর ও মেহেরপুরে এখনো জমা পড়েনি ১২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র

যশোর, শরিয়তপুর ও মেহেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২: ৫৩
যশোর, শরীয়তপুর ও মেহেরপুরে এখনো জমা পড়েনি ১২৩টি আগ্নেয়াস্ত্র

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে যশোরে ৩৬৫টি অস্ত্রের মধ্যে ২৭০টি অস্ত্র জমা পড়েছে। সে হিসাবে এখনো ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। একই সঙ্গে প্রায় ১ হাজারটি গুলিও জমা পড়েনি। 

এ ছাড়া শরীয়তপুরে লাইসেন্সকৃত ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র জেলার বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে। আটজন লাইসেন্সধারী অন্য জেলায় অবস্থান করায় সেখানেই নিকটস্থ থানায় জমা দিয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বিশেষ শাখায় নথিপত্র জমা দিয়েছে। আর লাইসেন্সধারী আট সেনাসদস্য চাকরিরত থাকায় তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি। 

অপর দিকে মেহেরপুর জেলায় লাইসেন্সকৃত ৯৩টি অস্ত্রের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত জমা পড়েছে ৭৩টি অস্ত্র। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রয়েছেন। 

যশোরে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অস্ত্র লুট হওয়া ও কিছু নেতা আত্মগোপনে থাকায় তাঁরা অস্ত্র জমা দিতে পারেননি। 

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শতভাগ জমা না দেওয়ায় সব অস্ত্রই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় যৌথ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে যশোরের জেলা প্রশাসন।

অবৈধ অস্ত্রসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ নিয়ে আজ বুধবার জরুরি বৈঠক করেছেন জেলার যৌথ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। বিকেলে জেলা প্রশাসকের কক্ষে এই সভায় যৌথ অভিযান চালানোর রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। 

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৯৫টি অস্ত্র জমা হয়নি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যশোরে যেকোনো সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ 

প্রতিটি অভিযানেই একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একজন মেজর, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন বলে জানান কমলেশ মজুমদার। 

যশোর জেলা প্রশাসকের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাখার তথ্যমতে, জেলায় লাইসেন্স ইস্যুকৃত অস্ত্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৫টি। তবে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে ৩৬৫টি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেওয়া লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোরে ৩৬৫ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত। বেশির ভাগই পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। 

শরীয়তপুরে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্সকৃত ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৯৪টি বিভিন্ন থানায় জমা পড়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিএসবি শাখার ডিআইও–১ মো. কামরুল হোসেন তালুকদার আজ বিকেল ৫টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

তিনি জানান, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ১১৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেন। লাইসেন্সপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজন অস্ত্র কেনেননি। এর মধ্যে ১৯টি লাইসেন্স পান সেনাসদস্যরা। বাকি মোট ১১০টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে বেসামরিক আটজন অন্য জেলায় অবস্থান করায় তাঁরা সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন। আটজন সেনাসদস্য কর্মরত থাকায় তাঁদের অস্ত্র জমা দিতে হয়নি। 

মেহেরপুর জেলায় লাইসেন্সকৃত ৯৩টি অস্ত্রের মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত জমা পড়েছে ৭৩টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ রয়েছেন।
 
মেহেরপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন ৯৩ জন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা ছাড়াও বিএনপি নেতা, সামরিক বাহিনীর সদস্য, আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক এবং আমলারা এর মধ্যে রয়েছেন। 

গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত ৭৩টি অস্ত্র ও লাইসেন্স তিনটি থানায় জমা পড়েছে। অস্ত্র দাখিলের আওতার বাইরে থাকা বাকি ২০টি অস্ত্র সামরিক–বেসামরিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে। 

মেহেরপুর সদর উপজেলার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং তাঁর ভগ্নিপতি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীনের ছেলে তানভির আহম্মেদ খান রানা, মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র মাহফিজুর রহমান রিটন, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ–বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস শুকুর ইমন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান মুকুল অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দিয়েছেন। 

মুজিবনগর থানায় অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দেওয়া হয়েছে ছয়টি। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু এনপিবি পিস্তল ২৩টি গুলিসহ জমা দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা মিলু অস্ত্র জমা দিয়েছেন তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে। এ থানায় জমা দেওয়া বাকি পাঁচটি অস্ত্রের মধ্যে সাবেক সেনাসদস্যর একটি শটগান এবং ৪টি দোনলা বন্দুক রয়েছে। 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গাংনী উপজেলায় অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় ৩৬টি। গতকাল রাত পর্যন্ত সব অস্ত্রই থানায় জমা পড়েছে। অবশ্য এর মধ্যে দুজন লাইসেন্সের বিপরীতে অস্ত্র কেনেনি। 

সাবেক মেয়র আশরাফুল ইসলামের ভাই আনারুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত শটগান ২০২২ সালে জব্দ করেছিল গাংনী থানা। এ ছাড়া আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূবালী ব্যাংক গাংনী শাখায় একটি শটগান এবং সেনাবাহিনীর একজন মেজর ও সার্জেন্টের নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তাঁদের নিজ নিজ হেফাজতে রয়েছে। 

এ সময়ের মধ্যে অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সাবেক এমপি ও গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, সাবেক মেয়র ও যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম ভেন্ডার, আওয়ামী লীগ নেতা ও কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানার অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দিয়েছেন। 

এ ছাড়া গাংনী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকার এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনের অস্ত্র ও লাইসেন্স জমা দেওয়া হয়েছে বলে গাংনী থানা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মাদারীপুর জেলা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়।

এর আগে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু আজ হঠাৎ অনেক কুয়াশা পড়েছে, রাস্তাও ফাঁকা। তাই আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

ডিসি ব্রিজ এলাকার মুদিদোকানি রানা বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। আজ কুয়াশা আর শীত বেশি থাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকেই দোকান বন্ধ করেছি।’

মাদারীপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় সাধারণ মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানান এবং মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চার-পাঁচ দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তাতীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। তবে শীত নিবারণের জন্য সরকারি সহায়তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় তারা কম্বল পাচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বেদপাড়া এলাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় সন্ধ্যা রানী (৫০) নামের এক নারীকে। শীতের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় হাত-পা কোঁকড়া হয়ে যাচ্ছে। আগুন পোহাইলেও ঠিকমতো কাজ হয় না। আগের বছর শীত আসার আগেই কম্বল পাইছিলাম। এবার শীত আইসা চলি যাচ্ছে, কেউ খোঁজও নিল না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এবার শীতে কি সরকার থাকি কোনো কম্বলের ব্যবস্থাই নাই, নাকি সবগুলা লোকজনে ভাগ করে খাইছে?’

এই অভিযোগ শুধু সন্ধ্যা রানীর নয়; কয়েক দিনে সরেজমিনে উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তাতীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনমজুর, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ শীত নিবারণে সরকারি সহায়তার কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাইকান এলাকায় আলুখেতে কাজ করার সময় কথা হয় দিনমজুর নুর আমিনের (৫৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা বাড়ার কারণে কোমর আর ঘাড়ের ব্যথা এমন হইছে যে ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, ঘাড়ও সোজা করতে পারি না। তবুও কাজ করা লাগে। বসে থাকলে কি আর পেট চলবে?’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর গত বুধবার গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে নির্বাচনী কিছু জটিলতার কারণে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০০টি করে কম্বল সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁদের ইউনিয়নের জন্য ১০০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। শনিবার (আজ) সেগুলো বিতরণ করা হবে।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন সচিব পিআইও অফিস থেকে ১০০টি কম্বল এনেছেন। তবে সঠিক তথ্য খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজীবুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাসিক সমন্বয় সভায় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, জরুরি অবস্থা ছাড়া কোনো কম্বল বিতরণ করা যাবে না। নির্বাচনী কিছু জটিলতাও রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কম্বলের বরাদ্দ ছিল। আমরা সেগুলো বিতরণ করে ফেলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি

একসময়ের জ্ঞানের বাতিঘর আজ নিকষ কালো অন্ধকার

মেহেদী হাসান, (দিনাজপুর) ফুলবাড়ী
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দূর থেকে তাকালেই মনে হয়, কোনো পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। লতা-পাতায় ঢাকা দেয়াল, আগাছায় ভরা চত্বর আর তালাবদ্ধ দরজার ভেতরে মাকড়সার জাল। অথচ একসময় এ জায়গাটিই ছিল পাঠকের ভিড়ে মুখর, জ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক প্রজন্মের আশ্রয়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামে শতবর্ষী ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’ আজ নীরব অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে—ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

জানা গেছে, ১৯১৬ সালে তৎকালীন জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর ছেলে ক্ষীতিশ চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে সুজাপুর গ্রামে যাত্রা শুরু করে এ পাবলিক লাইব্রেরিটি। সুজাপুর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পর দরিদ্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বইয়ের সংকট দূর করতে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়। বাবার স্মৃতি অমর করে রাখতে এর নামকরণ করা হয় ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’।

একসময় এ লাইব্রেরিতে ছিল বিপুল বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে ভরপুর ছিল তাকগুলো। পাঠকদের পদচারণে মুখর ছিল পুরো প্রাঙ্গণ। এ লাইব্রেরি থেকেই বহু মানুষ জ্ঞানের আলোয় পথচলা শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে যেমন ছোট যমুনা নদী আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, তেমনি এ লাইব্রেরিও ধীরে ধীরে হারিয়েছে তার প্রাণ। সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরির অমূল্য বই ও আসবাবপত্র।

দীর্ঘ নীরবতার পর ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর লাইব্রেরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরোনো ভবনের পাশে ১২ শতাংশ জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে পুরোনো ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয় ১ হাজার ১২০টি বই। ২০১৫ সালে আরও ২ লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত হয় অতিরিক্ত একটি ঘর। ২০১৭ সালে সেখানে চালু হয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার শিক্ষিত যুবকেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। পাঠকদের পদচারণে আবারও মুখর হয়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। গঠিত হয় পরিচালনা কমিটি। মনে হয়েছিল, আবার বুঝি ফিরবে সেই দিন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থাভাব, লাইব্রেরিয়ানের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের চাপে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কে নেবে এর দায়িত্ব—এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতের আঁধারে চুরি যায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছয়টি কম্পিউটার। এভাবেই নতুন আশার শেষ আলোটুকুও যেন নিভে যায়।

এ বিষয়ে ইউএনও আহমেদ হাছান জানান, তিনি লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করে পরিচালনা কমিটিকে আপাতত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে লাইব্রেরি খুলে বসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে জনবলসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শুরু না হওয়ায় শঙ্কায় কৃষক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষায় ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ এবং ১৫ ডিসেম্বর নির্মাণ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এখনো কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষায় ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ এবং ১৫ ডিসেম্বর নির্মাণ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এখনো কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাওরে বছরে একটি ফসলই ফলে, আর তা হলো বোরো ধান। এ ফসলের ওপর নির্ভর করে চলে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের ঘর-গেরস্থালি। আগাম বন্যার হাত থেকে বোরো রক্ষায় প্রতিবছর দেওয়া হয় অস্থায়ী বাঁধ। সেই বাঁধের কাজ শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত নেত্রকোনায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিই (পিআইসি) গঠন করা হয়নি। ফলে আগাম বন্যায় ফসল ভেসে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন জেলার হাওরপাড়ের বাসিন্দারা।

নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষায় ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের নির্মাণ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পিআইসি গঠন সম্পন্ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

পাউবো ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩৪টি হাওর রয়েছে। এসব হাওরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। বোরো রক্ষায় গত বছর জেলার ৭ উপজেলায় ১৪৯ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এ জন্য ১৯১টি পিআইসি গঠন করা হয়। বরাদ্দ ছিল ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে এবার কত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে হবে সেই জরিপই শেষ করতে পারেনি পাউবো। ফলে চূড়ান্ত হয়নি কতগুলো পিআইসি গঠন করা হবে। ফলে এর বরাদ্দের পরিমাণও জানাতে পারেনি পাউবো।

মোহনগঞ্জ উপজেলার বরান্তর গ্রামের একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা ঋণ করে বোরোর আবাদ করছেন। বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু হয়নি। এ কারণে তাঁরা আতঙ্কে আছেন। আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হলে নিজেদের সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ চান তাঁরা।

খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একটিমাত্র বোরো ফসলের ওপরে আমাদের সারা বছরের খাওয়াদাওয়া, হাটবাজার ও পোলাপানের লেখাপড়ার খরচসহ যাবতীয় খরচ নির্ভর করে। এবার সময়মতো বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়নি, ফলে যথাসময়ে শেষ করতে পারবে না। আগাম বন্যা হলে আমাদের ফসল বাঁচানো যাবে না।’

পাউবো ও জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাজে সরাসরি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নসহ তদারকিতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করে জেলা কমিটি করা হয়। একইভাবে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে সভাপতি ও পাউবোর একজন কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। মূলত উপজেলা কমিটি প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করে জেলা কমিটিতে পাঠায়। পরে জেলা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের পিআইসি থাকে।

প্রকল্পের সদস্যসচিব ও নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, জরিপ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে পিআইসি গঠন করার পাশাপাশি কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। জরিপের রিপোর্ট এখনো হাতে না পাওয়ায় এবার কতগুলো পিআইসি গঠন হবে আর বরাদ্দ কত হবে জানানো যাচ্ছে না।

কাজ শুরু করতে দেরি হলেও নির্ধারিত সময়েই শেষ করতে পারব। এ নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, চলতি সপ্তাহে পিআইসি কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে। আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করা হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু জটিলতা ছিল, পাশাপাশি হাওরের পানি নামতে দেরি হয়েছে। সব জটিলতা সমাধান করে পিআইসি গঠন শুরু হয়েছে। দেরিতে কাজ শুরু হলেও নির্ধারিত সময়েই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত