Ajker Patrika

কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে ‘ব্লকেড’, নেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আজ সোমবার কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আজ সোমবার কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিতে কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা।

আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে খুলনা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন না। কর্মসূচিতে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

এদিকে নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে কেএমপি।

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগরের সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘আজকের কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত আমরা কর্মসূচি পালন করছি না।’

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ ‘আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই’ বলে আন্দোলন থেকে সরে যায়।

খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আজ সোমবার কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আজ সোমবার কেএমপির সদর দপ্তরের সামনে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে ব্লকেড কর্মসূচি চলাকালে টানা বৃষ্টির মধ্যে বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এবং সড়কে প্রতিবন্ধকতা (ব্যারিকেড) দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশ কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না বলে বিভিন্ন স্লোগান দেন। যদিও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গত ২৪ জুন বিকেলে মামলার আসামি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্তকে আটক করে খানজাহান আলী থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে ছাত্র-জনতা। কিন্তু রাতে থানা থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসআই সুকান্ত খুলনা বিএনপির নেতা এস এম শফিকুল আলম মনার বাড়িতে ভাঙচুর মামলার প্রধান আসামি। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ ধরে পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করছে ছাত্র-জনতা। অবশ্য পুলিশ ওই এসআইকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

ছাত্র-জনতার ব্যানারে এরই মধ্যে কেএমপির সদর দপ্তর, রূপসা সেতুর টোল প্লাজা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ব্লকেড ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আজ ছাত্র-জনতার ব্যানারে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠন।

কেএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) খন্দকার হোসেন আহমদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কেএমপির সদর দপ্তরে মহানগরীর সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উলিপুরে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর চাপ

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাবে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় ও কনকনে ঠান্ডায় এসব রোগের প্রকোপ আরও বেড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে গত সাত দিনে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ রোগী সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিছুটা সুস্থ হলেই তাঁরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা বজরা ইউনিয়নের আমিনপাড়া এলাকার ইউনুস আলীর (৭০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। তীব্র শীতের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

এইচএসসি পরীক্ষার্থী আঞ্জু আরা বেগম বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েক দিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি।’ ধামশ্রেণী ইউনিয়নের খলিলুর রহমান (৬৯) জানান, তিন দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গুনাইগাছ ইউনিয়ন থেকে ভর্তি হওয়া ১৭ মাস বয়সী শিশু তাসিনের মা নুরে জান্নাত বলেন, তিন দিন ধরে তাঁর সন্তানের বমি ও ডায়রিয়া হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সাত মাস বয়সী শিশু সাব্বিরকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা সুমাইয়া বেগম বলেন, ঠান্ডার কারণে ছয় দিন ধরে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীই বেশি। শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে পঞ্চগড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০২
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ছে পঞ্চগড়ে। উত্তরাঞ্চলের এই জেলায় ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক। কুয়াশার কারণে দৃশ্যময়তা কমে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর প্রভাব পড়েছে জেলার হাসপাতালগুলোতেও। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। ওই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাত—দুই সময়েই শীত অনুভূত হচ্ছে প্রায় সমানভাবে।

ঘন কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালকেরা। মোটরসাইকেলচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত কুয়াশায় রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। খুব সাবধানে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যা হয়; ঘন কুয়াশায় সামনে কিছু বোঝা যায় না।’

আরেক মোটরসাইকেলচালক আব্দুল মালেক জানান, কুয়াশা এত বেশি যে হেডলাইট জ্বালিয়েও রাস্তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। সামান্য অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

টানা কুয়াশা ও কনকনে শীতে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সকালে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। অটোরিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের কারণে লোকজন বাইরে বের হয় না। যাত্রী নাই, ভাড়াও নাই। খুব কষ্টে আছি, কিন্তু বের না হয়েও পারি না; সংসার চালাতে হবে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এসব শীতবস্ত্র প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বনজীবী-রক্ষীরা চিকিৎসাবঞ্চিত

  • গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা লাগে
  • জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার সন্ধানে বনে যান
  • চিকিৎসাসেবা ও জীবনরক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এসব বনজীবী জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে মহাজনেরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি বনরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম থাকায় প্রায় বছরজুড়ে জীবিকার টানে ছুটে আসে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এ সময় বিশুদ্ধ পানি ও সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া বাঘ, কুমির, বিষধর সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হয় প্রতিনিয়ত।

সূত্র আরও জানায়, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এ স্থানে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বনজীবীদের গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যার কারণে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে বনজীবীদের পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্তু সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। কিন্তু ১৫ বছর পার হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

১৯ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে অন্তত ৩০ জেলের সঙ্গে কথা বলেন। মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে ৫-৬টি ফার্মেসি আছে। তবে কোনো চিকিৎসক নেই। জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও সচরাচর মেলে না। তাঁরা বলেন, ‘এসব জায়গায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা হাত-পা কেটে গেলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’

শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার বা বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কেউ তা বলতে পারে না।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি বা আদৌ হবে কি না, সংশ্লিষ্টরা সেই বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো কিছু বলতে পারছে না।’

সুন্দরবন রক্ষায় যাঁরা কর্মরত সেসব বনরক্ষীর চিকিৎসার জন্যও একই রকম সমস্যা দেখা যায়। করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙায় বাঘসহ বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলে বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ আহতে হলে চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের লোকালয় অথবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বনের অনেক দূরবর্তী ও দুর্গম স্থান রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারে বা নৌকা করে লোকালয়ে আসতে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। সুন্দরবনে যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে সবার জন্য খুবই উপকার হতো। একই সঙ্গে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুবই উপকৃত হতাম।’

এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয় সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ

করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। দুই বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবেন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। যদিও সেটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় এবং বনজীবী ও বনকর্মীদের সংখ্যার তুলনায় সেটা খুবই অপ্রতুল। তবে সুন্দবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থার জন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের অর্থায়নে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী: পানিনিষ্কাশন সংকট, চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা

  • ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে
  • কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন, কোথাও দূষিত পানিতে ভোগান্তি
মো. মাসুম, টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) 
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৮
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে কৃষিজমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আলু রোপণসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে পানি জমে থাকলেও তা সঠিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমি দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকে। এতে আলু, শাকসবজি ও অন্যান্য রবিশস্য চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অবনতি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং আলু চাষসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনেও বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। দ্রুত সমাধানের আশায় দিন গুনছেন এলাকার কৃষকেরা।

কৃষক মো. বিপ্লব আলম বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের অনেক জমি এখনো পানিতে ভেজা রয়েছে। ফলে আলু রোপণ সম্ভব হচ্ছে না।’

টঙ্গিবাড়ী খাল রক্ষা পরিষদের সদস্য মো. অনিক শেখ বলেন, বিভিন্ন স্থানে খালের মুখগুলো মূলত সড়ক নির্মাণ ও অবৈধ দখলের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এখানে যদি অন্তত স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়, তাহলে পানিনিষ্কাশন অনেকটা সচল হয়ে উঠবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃতীশ চন্দ্র পাল বলেন, আড়িয়ল ইউনিয়নে আবাদ অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম। বিভিন্ন স্থানে খালের মুখ বন্ধ ও দখল হয়ে থাকায় পানিনিষ্কাশনে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ওই এলাকায় চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মুন্সিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া মমতাজকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত