Ajker Patrika

খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ওষুধ ‍ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২ 

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১৪: ০০
খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ওষুধ ‍ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২ 

খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন বিপ্লব ফার্মেসির মালিক মাহমুদুর রহমান বিপ্লব (৩০) ও আবিদ ফার্মেসির কর্মচারী মীর বায়েজিদ (২০)। সংঘর্ষের ঘটনায় চতুর্থ দিনের মতো অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এদিকে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালের সামনের ওষুধের দোকানিরাও। এতে রোগী ও তাদের স্বজনেরা দুর্ভোগে পড়েছেন। 

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় খুলনা মেডিকেল কলেজের সচিব মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল বুধবার রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয়ে ৫০ জন ওষুধের দোকানিকে আসামি করা হয়েছে। 

সেনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমতাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলা দায়েরের পর বুধবার দিবাগত রাতে সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে খালিশপুর থানার বয়রা জংশন রোড এলাকার মৃত শেখ শাহাজাহানের ছেলে মাহমুদুর রহমান বিপ্লব এবং সোনাডাঙ্গা থানার হাসানবাগ এলাকার ছোট বয়রার মীর বাড়ির মোশারেফ মীরের ছেলে মীর বায়েজিদকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বয়রা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পরিষদের সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম অন্তর। তিনি জানান, হামলায় ১৪ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। 

অন্যদিকে সংঘর্ষের পর থেকে বন্ধ রয়েছে খুলনা মেডিকেলের সামনে ওষুধের ৯০টি দোকান। 

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম কবীর উদ্দিন বাবলু জানান, হামলায় তাঁদের ১০ থেকে ১২ জন দোকান মালিক ও কর্মচারী আহত হন। দোকানিদের ওপর হামলাকারী মেডিকেল শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে তাঁরা অনড় রয়েছেন বলে জানান তিনি। 

রোগী ও তাঁদের স্বজনরা জানান, দুই পক্ষের বিরোধে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। সোমবার রাত থেকে রোগী দেখছেন না ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। আগে দিনে দু-তিনবার রোগী দেখতেন। আর মেডিকেলের সামনের দোকান বন্ধ থাকায় রোগীর স্বজনদের ওষুধ কিনতে যেতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে। এতে অতিরিক্ত সময় লাগার পাশাপাশি ব্যয় হচ্ছে বাড়তি টাকা। 

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী শিগগিরই হাসপাতালে মডেল ফার্মেসি চালু করা হবে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও হাসপাতালের মধ্যে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। 

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাসপাতালের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

এদিকে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বুধবার রাতে হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান। তাঁরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন। 

তবে এখনো পর্যন্ত হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মকর্তা অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জোহা সজীব বলেন, ‘হামলাকারীরা গ্রেপ্তারসহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুটি মডেল ফার্মেসি এবং পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি রয়েছে। ওই দাবি এখনো পূরণ হয়নি। মডেল ফার্মেসির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে। ফাঁড়ির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমাদের কোনো পক্ষ জানায়নি।। বারোটার পর মিটিংয়ে বসে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে খুলনা মেডিকেলের সামনে বিপ্লব মেডিসিন কর্নারে ওষুধ কিনতে যান মেডিকেলের শিক্ষার্থী হাসান ফেরদৌস। দোকানি এক পাতা ওষুধের দাম ৭০ টাকা জানালে হাসান ফেরদৌস ১০ শতাংশ কমিশন বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান। এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে দোকান মালিক বিপ্লব তাঁকে অপমান করেন। এরপর ওই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে গিয়ে জানালে অন্য শিক্ষার্থীরা ওই দোকানে যান। তখন বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে ওষুধের দোকানিদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: মিশন যাত্রার ১ মাস ৮ দিনের মাথায় প্রাণ গেল শান্তিরক্ষী মাসুদের, পরিবারে মাতম

নাটোর ও লালপুর প্রতিনিধি 
মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাসুদ রানার মৃত্যুর খবরে পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন যাত্রার মাত্র এক মাস আট দিনের মাথায় সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন করপোরাল মাসুদ রানা। তাঁর মৃত্যুর খবরে নাটোরের লালপুরের বাড়িতে এখন কান্নার রোল উঠেছে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। নিহত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে মাসুদ রানাও রয়েছেন।

মাসুদ রানা নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম জনি ও রনি আহমেদও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

মাসুদের শোকে তাঁর স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই দম্পতির আট বছরের মেয়ে আছে। আঁখি বলেন, ‘আমার মেয়েকে এতিম করে সে চলে গেল। বাকি জীবন আমরা কীভাবে কাটাব? গতকালও (শনিবার) আমাদের সঙ্গে সে কথা বলেছিল। আজ সে নেই, ভাবতে পারছি না।’

ছেলের মৃত্যুর খবরে মা মর্জিনা খাতুন (৫৫) বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার তিন সন্তান সেনাবাহিনীতে। এক সন্তান দেশের জন্য প্রাণ দিল। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। সরকার যেন আমার সন্তানের বিধবা স্ত্রী ও এতিম মেয়ের কথা ভাবে। আমাদের আর কেউ নাই।’

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন শান্ত ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। পরিবারের সুখের স্বপ্ন নিয়ে তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, নিহত মাসুদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। দ্রুত এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

এদিকে আজ রোববার বিকেলে নাটোর আর্মি স্টেডিয়ামের সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর নিহত শান্তিরক্ষী মাসুদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লায় শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লায় শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়া এলাকায় বেকারি পণ্য ও শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে ওজনে কম দেওয়া, শিশুখাদ্যে নিষিদ্ধ রং ব্যবহার, পোড়া তেল দিয়ে শিশুখাদ্য ভাজা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রস্তুতের অভিযোগে ‘আরব বেকারি’কে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর বিভিন্ন ধারায় এ জরিমানা করা হয়।

অভিযানকালে দেখা গেছে, পার্টি কেকের ক্ষেত্রে প্রতি দুই পাউন্ডে প্রায় ৭০ গ্রাম কম দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শিশুখাদ্য প্রস্তুতে নিষিদ্ধ রং ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের একাধিক প্রমাণ পাওয়া যায়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নমুনা সংগ্রহকারী মো. সাকিব। অভিযানে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল সহযোগিতা করে।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. কাউছার মিয়া বলেন, অভিযানে জরিমানার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাড্ডায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সংগৃহীত
বাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বাড্ডায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ৩৫ মিনিটের দিকে অছিম পরিবহনের মিরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার মো. শাজাহান শিকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শামীম জানান, উত্তর বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালের সামনের সড়কে বাসটিতে আগুন দেওয়া হয়।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিরুল ইসলাম বলেন, কারা বাসে আগুন দিয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে এবং বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

এর আগে, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় একটি চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘চিকিৎসা না পেয়ে’ গর্ভের সন্তানের মৃত্যু: চট্টগ্রামে ৪ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫৭
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের । ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের । ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় এক নারীর গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তারের আদালতে ভুক্তভোগী নারী নাসরিন আক্তার মামলার আরজি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সিরাজুন নূর, হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নুরুল হক, পরিচালক (মেডিকেল অ্যাফেয়ার্স) এ এফ এম আশরাফুল করিম এবং ডেপুটি ডিরেক্টর (অ্যাডমিন-আইসিইউ) মো. আবু সাইদ চৌধুরী।

বাদীপক্ষের আইনজীবী রিগ্যান আচার্য্য জানান, মামলার আবেদনের পর আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং মামলাটি তদন্তের জন্য ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ দেন। আদালত আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকালে প্রসবব্যথা নিয়ে নাসরিন আক্তারকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর গর্ভকাল ছিল ৩৭ সপ্তাহ। আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভস্থ সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। ভর্তির পর রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা তাৎক্ষণিক জরুরি চিকিৎসা দেননি বলে অভিযোগ করা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে রেখে দেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। রোগীর স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলেও আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়, এমন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, দীর্ঘ সময় লেবার রুমে ফেলে রাখার কারণে রোগীর রক্তক্ষরণ বেড়ে যায় এবং অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। পরে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে জরুরি অস্ত্রোপচারের নির্দেশ দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নারী মৃত সন্তান প্রসব করেন। পরে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে মায়ের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়।

বাদীপক্ষের দাবি, সময়মতো সঠিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হলে গর্ভস্থ শিশুটিকে বাঁচানো যেত। ঘটনার পর দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি; বরং বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় রাখা হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি জানলাম। তবে ওই রোগীর কাগজপত্র না দেখে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত