Ajker Patrika

‘প্রথমেই দেখি এক শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ’, এক শিক্ষার্থীর বয়ানে মাইলস্টোনের বিভীষিকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৩৬
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি

‘জীবনে কখনো এমন বিকট শব্দ শুনিনি আমি। মনে হলো, একসঙ্গে ৩০-৪০টি বজ্রপাত হলো।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এভাবেই স্কুলভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার দুদিন পরও তার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট, ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কণ্ঠস্বর কাঁপছিল।

আহনাফ জানায়, স্কুলের মাঠের এক কোনায় ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল সে। হঠাৎ বিকট শব্দে একটি উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ে স্কুল ভবনে। আহনাফ জানায়, পুরো ঘটনাটি তার চোখের সামনেই ঘটেছে। বিমানটি যখন আছড়ে পড়ে, তখন আহনাফ ও তার বন্ধুরা দুহাতে মাথা ঢেকে মাটিতে শুয়ে পড়ে। বিবিসিকে সে বলে, ‘চোখ খুলে দেখি, আশপাশের কিছুই আর আগের মতো নেই। চারদিকে আগুন আর ধোঁয়া। বাচ্চাদের চিৎকার, দৌড়াদৌড়িতে পুরো জায়গাটি মুহূর্তেই চরম বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ল।’

আহনাফ জানায়, উড়োজাহাজ থেকে পাইলটকেও ইজেক্ট করতে দেখেছে সে। সে বলে, ‘সাদা রঙের একটি প্যারাস্যুটে করে পাইলটকে ইজেক্ট করতে দেখেছি আমি। টিনের ছাদ ভেঙে একটি কক্ষে পড়েন তিনি। শুনেছি, তখনো জীবিত ছিলেন। পরে একটি হেলিকপ্টার এসে তাঁকে নিয়ে যায়।’

মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। ছবি: আহনাফ
মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। ছবি: আহনাফ

আহনাফ নিজেও ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। তবে গুরুতর নয়। সে বলে, ‘বিমানটি যখন আছড়ে পড়ে, তখন আমার ব্যাগেও এক টুকরো আগুনের ফুলকি এসে লাগে। আমার ট্রাউজার পুড়ে যায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ দূরে ছুড়ে ফেলি। এরপর স্কুল ভবনের দিকে ছুটে যাই। কাউকে সাহায্য করতে পারি কি না—ওই মুহূর্তে সেটিই মাথায় আসে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-সেভেন যুদ্ধবিমানটি স্কুল ভবনের মূল ফটক ভেদ করে প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুট গভীরে ঢুকে পড়ে, এরপর তির্যকভাবে প্রথম তলায় আঘাত করে বিস্ফোরিত হয়। ‘ক্লাউড’ ও ‘স্কাই’ নামের দুটি শ্রেণিকক্ষ তাৎক্ষণিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

আহনাফ জানায়, মাঠের সঙ্গে প্রাইমারি ভবনের মাঝে যে কংক্রিটের পথ, সেদিকে ছুটে যায় সে। প্রবেশপথের কাছে আহনাফ একটি শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ দেখতে পায়। সে বলে, ‘মনে হচ্ছিল, বিমানটি প্রথমে ওকেই ধাক্কা মেরেছে। ও বয়সে আমার অনেক ছোট ছিল। একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পাই, এক শিশুর দেহ পুড়ে গেছে। আর তার বন্ধু তাকে আগুন থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করছে। আমাকে দেখে সে বলল, সে একা তাকে বের করতে পারছে না। পরে আমি ওই ছেলেটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে মেডিকেল রুমে নিয়ে যাই।’

আহনাফের ভাষ্যমতে, ততক্ষণে অনেকেই ভবন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসছিল। অনেকের গায়ের কাপড় পুড়ে গিয়ে প্রায় নগ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেকের গায়ের ত্বক ঝলসে গেছে, ফোসকা পড়ে গেছে। আহনাফ জানায়, এমন এক ছাত্রকে নিজের শার্ট খুলে দেয় সে। খালি গায়েই উদ্ধারকাজে লেগে পড়ে।

আহনাফ জানায়, দোতলায় বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটকা পড়েছিল। আহনাফ ও আরও কয়েকজন ছাত্র গিয়ে দোতলায় দেখে, তাপে নরম হয়ে গেছে কিছু গ্রিল। তেমনই নরম হয়ে যাওয়া একটি গ্রিল ভেঙে বের হওয়ার পথ তৈরি করে দেয় তারা। পরে ওই পথে অনেকে বেরিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে কিছু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী নিধি। ছবি: সংগৃহীত
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী নিধি। ছবি: সংগৃহীত

মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিশুদের একজন ১১ বছর বয়সী ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি। মাত্র পাঁচ দিনের মতো স্কুলে গিয়েছিল সে। কিন্তু কে জানত, স্কুল থেকে আর কোনো দিন বাড়ি ফেরা হবে না তার!

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল ভবনে উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ছিলেন নিধির বাবা। যখনই খবরটা শুনতে পান, খালি পায়ে ছুটে যান স্কুল ক্যাম্পাসে। কিন্তু খুঁজে পাননি তাঁর চোখের মণিকে। নিধির চাচা সৈয়দ বিল্লাল হোসেন জানান, গভীর রাত পর্যন্ত উত্তরার প্রায় সব হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন তাঁরা। পরে খবর পেলেন একটি হাসপাতালে ছয়টি মরদেহ এসেছে। শেষমেশ রাত ১টা নাগাদ একটি মরদেহের দাঁতের গঠন আর চোখ দেখে নিধিকে চিনতে পারেন বাবা। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় মরদেহ হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ জানায়, এই মরদেহ একাধিক পরিবার তাদের সন্তান বলে দাবি করছে। তাই ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া হস্তান্তর সম্ভব নয়। মরদেহ পেতে প্রথমে তাঁদের জিডি করতে হয়েছে, পরে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে বাবার রক্ত। মায়ের ডিএনএর নমুনা নিয়ে পরীক্ষার পর সব ঠিক থাকলে তবেই দেওয়া হবে মরদেহ।

তিন ভাই–বোনের মধ্যে নিধি সবার ছোট। উত্তরার স্থায়ী বাসিন্দা তার বাবা। নিধির চাচা বিল্লাল হোসেন বলেন, ও ছাদে খেলত, নারকেল গাছের নিচে বসত, সব সময় কোলে বাচ্চা নিয়ে খেলত। নিধি ছোট হলেও শিশুদের খুব ভালোবাসত ও। আফসোস করে তিনি বলেন, স্কুলের পর যদি ওর কোচিং না থাকত, তাহলে আজ ও বেঁচে থাকত!

আরেক পিতার জন্য দিনটি ছিল আরও নির্মম। গুরুতর আহত হয় তাঁর দুই সন্তানই। প্রথমে তাঁর কন্যাসন্তান মারা যায়। তাকে দাফন শেষে হাসপাতালে ফিরে কিছুক্ষণের জন্য চোখ লেগে আসে তাঁর। ঘুম ভেঙে ছোট ছেলেটির মৃত্যুর খবর পান।

এই হৃদয়বিদারক প্রেক্ষাপটেই সামনে আসে একজন শিক্ষিকার অনন্য সাহসের গল্প। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ২০টি শিশুকে উদ্ধার করেন। তিনি বারবার ভবনে আগুনের ভেতর থেকে একের পর এক শিশুকে বের করে আনছিলেন। দগ্ধ হয় তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ, কিন্তু তিনি থামেননি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

বাংলার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম তুলতুল (৪৩) বলেন, ‘আমি এখন আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারি না। স্কুল ভবনের দিকে তাকালেই বুকের ভেতর শোকের ঢেউ আছড়ে পড়ে। শরীর খারাপ লাগে, মন ভেঙে পড়ে। আমি তিনজন শিক্ষার্থীকে হারিয়েছি, যাদের একজন আমার এক সহকর্মীরই সন্তান।’

সরকারিভাবে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো সাতটি মরদেহ শনাক্ত হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা আক্তার জানিয়েছেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে পাইলিংয়ের সময় ধসে পড়ল পাশের ভবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১০
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। এতে ভবনটিসহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভবনে অবস্থিত আরএফএল কোম্পানির বেস্ট বাই শোরুম। তবে প্রাণে বেঁচে গেছেন সেখানে কর্মরতরা। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনমালিকের অভিযোগ, নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের বলা হলেও কর্ণপাত না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

আজ শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলি স্বর্ণকারপট্টির মুজিব সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একাধিক টিম।

সরেজমিন দেখা গেছে, একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছিল। নির্মাণাধীন এই ভবনের মালিক স্থানীয় সঞ্জয় কর্মকার, অজয় কর্মকার ও সেলিম নামে আরেক ব্যক্তি। পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পার্শ্ববর্তী ভবনসংলগ্ন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা বা প্যারাসাইলিং ব্যবস্থা ছিল না। এই অবস্থায় পাইলিংয়ের (নিচের অংশ) কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্মাণশ্রমিকেরা। হঠাৎ করেই ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে দৌড়ে সরে পড়েন নির্মাণশ্রমিক ও শোরুমটির কর্মচারীরা।

বেস্ট বাইয়ের কর্মীরা জানান, তারা সকালে এসে ফ্লোরের টাইলসে ফাটল দেখতে পান। ফাটল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে ক্যাশ কাউন্টার টেবিলটা সরিয়ে ফেলেন, এর মধ্যেই ধসে পড়ে ভবনের এক পাশ।

ধসে পড়া ভবন ও বেস্ট বাই ফ্রাঞ্চাইজের মালিক মনিরা খাতুনের দাবি, এ ঘটনায় তাঁর ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং তিনি এর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘বারবার নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের সতর্ক করা হয়েছে এবং নিয়ম মেনে কাজ করতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা রাতের আঁধারে আমার ভবনের নিচের মাটি সরিয়ে ফেলেছে, যার কারণে আজকের এই দুর্ঘটনা। পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী ৩ ফুট দূরত্ব রেখে কাজ করার কথা থাকলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আজ সকালে উল্টো আমার কর্মচারীদের হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।’

একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
একটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ করার সময় পাশের আরেকটি দ্বিতল ভবনের একাংশ ধসে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘটনাস্থলে ছুটে আসা শহরের বাসিন্দা ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোজাফফর আলী মুসা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘ভবন নির্মাণ করতে হলে পৌরসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হয় এবং তা সঠিকভাবে তদারকির দায়িত্ব তাদের। যদি সঠিকভাবে তদারকি হতো তাহলে এমন দুর্ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ভবনমালিকদের একজন সঞ্জয় সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে আসা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মাসুদ আলম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তবে কোনো অভিযোগ পায়নি পুলিশ। অভিযোগ পেলে সেটা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পৌরসভার প্রশাসক ও ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. সোহরাব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত