Ajker Patrika

‘প্রথমেই দেখি এক শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ’, এক শিক্ষার্থীর বয়ানে মাইলস্টোনের বিভীষিকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৩৬
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি

‘জীবনে কখনো এমন বিকট শব্দ শুনিনি আমি। মনে হলো, একসঙ্গে ৩০-৪০টি বজ্রপাত হলো।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এভাবেই স্কুলভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার দুদিন পরও তার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ ছিল স্পষ্ট, ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কণ্ঠস্বর কাঁপছিল।

আহনাফ জানায়, স্কুলের মাঠের এক কোনায় ছায়ার নিচে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল সে। হঠাৎ বিকট শব্দে একটি উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ে স্কুল ভবনে। আহনাফ জানায়, পুরো ঘটনাটি তার চোখের সামনেই ঘটেছে। বিমানটি যখন আছড়ে পড়ে, তখন আহনাফ ও তার বন্ধুরা দুহাতে মাথা ঢেকে মাটিতে শুয়ে পড়ে। বিবিসিকে সে বলে, ‘চোখ খুলে দেখি, আশপাশের কিছুই আর আগের মতো নেই। চারদিকে আগুন আর ধোঁয়া। বাচ্চাদের চিৎকার, দৌড়াদৌড়িতে পুরো জায়গাটি মুহূর্তেই চরম বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ল।’

আহনাফ জানায়, উড়োজাহাজ থেকে পাইলটকেও ইজেক্ট করতে দেখেছে সে। সে বলে, ‘সাদা রঙের একটি প্যারাস্যুটে করে পাইলটকে ইজেক্ট করতে দেখেছি আমি। টিনের ছাদ ভেঙে একটি কক্ষে পড়েন তিনি। শুনেছি, তখনো জীবিত ছিলেন। পরে একটি হেলিকপ্টার এসে তাঁকে নিয়ে যায়।’

মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। ছবি: আহনাফ
মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ বিন হাসান। ছবি: আহনাফ

আহনাফ নিজেও ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। তবে গুরুতর নয়। সে বলে, ‘বিমানটি যখন আছড়ে পড়ে, তখন আমার ব্যাগেও এক টুকরো আগুনের ফুলকি এসে লাগে। আমার ট্রাউজার পুড়ে যায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ দূরে ছুড়ে ফেলি। এরপর স্কুল ভবনের দিকে ছুটে যাই। কাউকে সাহায্য করতে পারি কি না—ওই মুহূর্তে সেটিই মাথায় আসে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-সেভেন যুদ্ধবিমানটি স্কুল ভবনের মূল ফটক ভেদ করে প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুট গভীরে ঢুকে পড়ে, এরপর তির্যকভাবে প্রথম তলায় আঘাত করে বিস্ফোরিত হয়। ‘ক্লাউড’ ও ‘স্কাই’ নামের দুটি শ্রেণিকক্ষ তাৎক্ষণিক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

আহনাফ জানায়, মাঠের সঙ্গে প্রাইমারি ভবনের মাঝে যে কংক্রিটের পথ, সেদিকে ছুটে যায় সে। প্রবেশপথের কাছে আহনাফ একটি শিশুর ছিন্নভিন্ন দেহ দেখতে পায়। সে বলে, ‘মনে হচ্ছিল, বিমানটি প্রথমে ওকেই ধাক্কা মেরেছে। ও বয়সে আমার অনেক ছোট ছিল। একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পাই, এক শিশুর দেহ পুড়ে গেছে। আর তার বন্ধু তাকে আগুন থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করছে। আমাকে দেখে সে বলল, সে একা তাকে বের করতে পারছে না। পরে আমি ওই ছেলেটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে মেডিকেল রুমে নিয়ে যাই।’

আহনাফের ভাষ্যমতে, ততক্ষণে অনেকেই ভবন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসছিল। অনেকের গায়ের কাপড় পুড়ে গিয়ে প্রায় নগ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেকের গায়ের ত্বক ঝলসে গেছে, ফোসকা পড়ে গেছে। আহনাফ জানায়, এমন এক ছাত্রকে নিজের শার্ট খুলে দেয় সে। খালি গায়েই উদ্ধারকাজে লেগে পড়ে।

আহনাফ জানায়, দোতলায় বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী আটকা পড়েছিল। আহনাফ ও আরও কয়েকজন ছাত্র গিয়ে দোতলায় দেখে, তাপে নরম হয়ে গেছে কিছু গ্রিল। তেমনই নরম হয়ে যাওয়া একটি গ্রিল ভেঙে বের হওয়ার পথ তৈরি করে দেয় তারা। পরে ওই পথে অনেকে বেরিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে কিছু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী নিধি। ছবি: সংগৃহীত
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী নিধি। ছবি: সংগৃহীত

মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিশুদের একজন ১১ বছর বয়সী ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি। মাত্র পাঁচ দিনের মতো স্কুলে গিয়েছিল সে। কিন্তু কে জানত, স্কুল থেকে আর কোনো দিন বাড়ি ফেরা হবে না তার!

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্কুল ভবনে উড়োজাহাজটি যখন বিধ্বস্ত হয়, তখন মসজিদে জোহরের নামাজ পড়ছিলেন নিধির বাবা। যখনই খবরটা শুনতে পান, খালি পায়ে ছুটে যান স্কুল ক্যাম্পাসে। কিন্তু খুঁজে পাননি তাঁর চোখের মণিকে। নিধির চাচা সৈয়দ বিল্লাল হোসেন জানান, গভীর রাত পর্যন্ত উত্তরার প্রায় সব হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন তাঁরা। পরে খবর পেলেন একটি হাসপাতালে ছয়টি মরদেহ এসেছে। শেষমেশ রাত ১টা নাগাদ একটি মরদেহের দাঁতের গঠন আর চোখ দেখে নিধিকে চিনতে পারেন বাবা। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় মরদেহ হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ জানায়, এই মরদেহ একাধিক পরিবার তাদের সন্তান বলে দাবি করছে। তাই ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া হস্তান্তর সম্ভব নয়। মরদেহ পেতে প্রথমে তাঁদের জিডি করতে হয়েছে, পরে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে বাবার রক্ত। মায়ের ডিএনএর নমুনা নিয়ে পরীক্ষার পর সব ঠিক থাকলে তবেই দেওয়া হবে মরদেহ।

তিন ভাই–বোনের মধ্যে নিধি সবার ছোট। উত্তরার স্থায়ী বাসিন্দা তার বাবা। নিধির চাচা বিল্লাল হোসেন বলেন, ও ছাদে খেলত, নারকেল গাছের নিচে বসত, সব সময় কোলে বাচ্চা নিয়ে খেলত। নিধি ছোট হলেও শিশুদের খুব ভালোবাসত ও। আফসোস করে তিনি বলেন, স্কুলের পর যদি ওর কোচিং না থাকত, তাহলে আজ ও বেঁচে থাকত!

আরেক পিতার জন্য দিনটি ছিল আরও নির্মম। গুরুতর আহত হয় তাঁর দুই সন্তানই। প্রথমে তাঁর কন্যাসন্তান মারা যায়। তাকে দাফন শেষে হাসপাতালে ফিরে কিছুক্ষণের জন্য চোখ লেগে আসে তাঁর। ঘুম ভেঙে ছোট ছেলেটির মৃত্যুর খবর পান।

এই হৃদয়বিদারক প্রেক্ষাপটেই সামনে আসে একজন শিক্ষিকার অনন্য সাহসের গল্প। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ২০টি শিশুকে উদ্ধার করেন। তিনি বারবার ভবনে আগুনের ভেতর থেকে একের পর এক শিশুকে বের করে আনছিলেন। দগ্ধ হয় তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ, কিন্তু তিনি থামেননি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

বাংলার শিক্ষক শফিকুল ইসলাম তুলতুল (৪৩) বলেন, ‘আমি এখন আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারি না। স্কুল ভবনের দিকে তাকালেই বুকের ভেতর শোকের ঢেউ আছড়ে পড়ে। শরীর খারাপ লাগে, মন ভেঙে পড়ে। আমি তিনজন শিক্ষার্থীকে হারিয়েছি, যাদের একজন আমার এক সহকর্মীরই সন্তান।’

সরকারিভাবে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো সাতটি মরদেহ শনাক্ত হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা আক্তার জানিয়েছেন, অভিভাবকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা: গ্রেপ্তার আরও ৩, ডিআরইউর মানববন্ধন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালানো হয়। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

ডিএমপির হাতে সবশেষ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মো. জাকির হোসেন শান্ত (২৯), মো. স্বপন মন্ডল (৩০) ও নিয়াজ মাহমুদ ফারহান (২১)।

আজ বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ডিএমপি।

এদিকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা এবং একই সময় নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার ঘটনায় জড়িত সবাইকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সংগঠনটির নেতারা আজ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানান।

মানববন্ধনে ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে যারা হামলা করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে–তাদের উদ্দেশ্য ছিল, সেখানকার কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সাংবাদিকদের পুড়িয়ে হত্যা করা। শহীদ হাদির (ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক) হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার দৃঢ় সংকল্প ছিল তাদের।’

গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে কয়েক শ মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।

পরে হামলাকারীরা ফার্মগেটে গিয়ে ডেইলি স্টার ভবন ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০ থেকে ৪৫০ জনকে আসামি করে গত রোববার মামলা করেন প্রথম আলোর হেড অব সিকিউরিটি মেজর অবসরপ্রাপ্ত মো. সাজ্জাদুল কবির। পরদিন পত্রিকাটির হেড অব অপারেশন মিজানুর রহমানও বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন।

দুই মামলায় অভিযোগ করা হয়, হামলাকারীরা হত্যার উদ্দেশ্যে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে, ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে এবং মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট করে।

এতে প্রথম আলোর ৩২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। ডেইলি স্টারের ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা।

সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ধারা ছাড়াও উভয় মামলায় দণ্ডবিধি, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারাও যোগ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে আটক ব্যক্তিকে ছিনতাই, আহত ২

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আজ বুধবার হামলা চালিয়ে আটক এক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আজ বুধবার হামলা চালিয়ে আটক এক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে বেতনা নদীর খনন করা মাটি লুটের ঘটনায় আটক এক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর নাম কেসমত আলী। এ ঘটনায় পুলিশ ফাঁড়ির দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা হয়েছে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক মাহাবুর রহমান ও কনস্টেবল মেহেদী হাসান।

ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সোহরাব হোসেন বলেন, বেতনা নদীর খনন করা মাটি নেহালপুর ও পাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট করে আসছিল একটি মহল। সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের এক ঠিকাদার নেহালপুর এলাকার বেতনা নদীর ওই মাটি কিনেছেন বলে পুলিশ জানতে পারে। বুধবার ভোরে পুলিশ মাটি কাটতে বাধা দেয়। এ সময় এসআই সোহরাবের ওপর চড়াও হন কেসমত ও তার সহযোগীরা।

একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে তিনি ট্রলিভর্তি মাটিসহ কেসমতকে ধরে ফাঁড়িতে আটকে রাখেন। ফাঁড়িতে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে কেসমতের ভাই রহমত, স্ত্রী শাহানারা ও ভাতিজা বাবুরালীসহ ৩০-৩৫ জন ফাঁড়িতে হামলা চালান। তারা কেসমতকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সহকারী উপপরিদর্শক মাহাবুর রহমান ও সিপাহী মেহেদী হাসান বাধা দেন। হামলাকারীরা তাঁদের পিটিয়ে জখম করে কেসমতকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আহত দুই পুলিশ সদস্যকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে কেসমত হোসেন স্বীকার করেন পুলিশের নিষেধ অমান্য করে তিনি সকালে বেতনার মাটি কাটছিলেন। কেসমত বলেন, আমাকে ধরে আনার পর আর কখনো মাটি কাটবেন না বলার পরও ফাঁড়ির কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সোহরাব হোসেন আমাকে মারধর করেছেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় কেসমতসহ আটজনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত হোসেন মামলা করেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি সারোয়ারের জামিন নামঞ্জুর

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
শাহ্ শহীদ সারোয়ার। ছবি: সংগৃহীত
শাহ্ শহীদ সারোয়ার। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মামলায় ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শাহ শহীদ সারোয়ারের (৬৫) অন্তবর্তীকালীন জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ জামিন শুনানির জন‍্য আগামী ২৮ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।

দলীয় সূত্র জানা গেছে, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ডামি নির্বাচনে ঈগল প্রতীকে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন।

আদালতের পাবলিক প্রসিকিটর (পিপি) অ‍্যাডভোকেট আনোয়ারুল আজিজ টুটুল এতথ‍্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিজ্ঞ আদালত আসামির অন্তবর্তীকালীন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন‍্য ২৮ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা ও গুলি বর্ষণের অভিযোগে মো. আমীর হোসেন নামের এক ব‍্যক্তি গত ১৫ এপ্রিল ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম‍্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর চলতি বছরের ২৩ জুন আদালতের নির্দেশে ফুলপুর থানা পুলিশ মামলাটি এফআইআরভুক্ত করেন। এ ঘটনার পর থেকে মামলার আসামিরা পলাতক ছিলেন।

মামলার এজাহারে বাদী দাবি করেন- ঘটনার দিন ফুলপুর পৌর এলাকায় শাহ শহীদ সারোয়ারের নেতৃত্বে মামলার আসামিরা বিস্ফোরণ দ্রব‍্যাদি এবং আগ্নেয়াস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। এতে আমি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় টোব্যাকোসহ ২ প্রতিষ্ঠানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, টাকা ও অস্ত্র-গুলি লুট

বগুড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৬
বগুড়ায় টোব্যাকোসহ ২ প্রতিষ্ঠানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, টাকা ও অস্ত্র-গুলি লুট

বগুড়ায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোসহ দুটি প্রতিষ্ঠানে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের হাত-পা বেঁধে নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্র-গুলি, টাকা ও কয়েকটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ পিছু ধাওয়া করে কয়েকটি গুলি ছুড়লেও ডাকাতেরা পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়ে পিকআপ রেখে পালিয়ে যায়।

ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার রাতে শহরতলির বারোপুর ফ্লাইওভারের পাশে এমআর ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং একই মালিকের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির ডিসট্রিবিউশন কেন্দ্রে।

বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান ডাকাতির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহমুদুর রহমান শিপন ও ভুক্তভোগীরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ১০-১২ জনের মুখোশ পরা ডাকাত দল হলুদ রঙের একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ঢোকে। এ সময় কর্মচারীরা এগিয়ে গেলে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁদের হাত-পা বেঁধে ফেলে।

এরপর ক্যাশ কাউন্টার থেকে ৪৩ হাজার ৩৮২ টাকা ৮টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ডাকাত দল ওই প্রতিষ্ঠানের পেছনে একই মালিকের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির ডিসট্রিবিউশন কেন্দ্রে ঢোকে।

তারা প্রথমেই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী রেজাউল করিমের ওপর চড়াও হয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং তাঁর কাছে থাকা ১০টি গুলিসহ শটগান ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর ভেতরে ঢুকে মালামাল তছনছ করে পিকআপ নিয়ে বনানীর দিকে পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, ভোররাত ৪টার দিকে টহল পুলিশ মহাসড়কে পিকআপটিকে সন্দেহ করে থামানোর সংকেত দিলে দ্রুতগতিতে সেটি চলে যায়। পরে বেতার বার্তায় সংবাদ পেয়ে পুলিশ বনানী, শাকপালাসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসায়।

অপরদিকে সদর থানা-পুলিশের একটি দল পিকআপটিকে পিছু ধাওয়া করলে ডাকাত দল নাটোর রোডে যাওয়ার চেষ্টা করলে শাকপালা মোড় থেকে ঘুরিয়ে আবারও বারোপুরের দিকে যেতে থাকে। ইতিমধ্যে পুলিশের একাধিক টিম পিকআপটির পিছু ধাওয়া করলে ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।

এ সময় পুলিশ ডাকাত দলকে লক্ষ্য করে চারটি রাবার বুলেট ছোড়ে। একপর্যায় ডাকাত দল গোকুল এলাকায় একটি ফিডার রোডে পিকআপটি রেখে অন্ধকারে গ্রামের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিত্যক্ত পিকআপটি জব্দ করে এবং ট্রাকে পড়ে থাকা চারটি গুলি উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডাকাত দলের ফেলে যাওয়া পিকআপটির সূত্র ধরে জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কে এই আতাউর রহমান বিক্রমপুরী

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

ঋণখেলাপির তালিকায় নাম: রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না মান্না

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত