Ajker Patrika

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪৪ ভবন: ঝুঁকিতে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন

  • ৭ দিনের মধ্যে ভবনগুলো সিলগালা বা ভেঙে ফেলার নির্দেশনা ছিল মাউশির
  • দেড় বছরেও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
  • ভূম্পিকম্পের উচ্চ ঝুঁকি থাকায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা
  • বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
রাহুল শর্মা, ঢাকা 
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলার সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৪টি ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন ৭ দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা কিংবা ভেঙে ফেলতে দেড় বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। রাজউকের সুপারিশের ভিত্তিতে জারি করা নির্দেশনাটি এখনো শুধু কাগজেই রয়ে গেছে। এতে হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে—বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। গত দুই দিনে চারটি ভূমিকম্পে দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার ৪৪টি ভবন দ্রুত অচল না করলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কেউ কেউ বলছেন, মাউশি ভবন সিলগালা অথবা ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দিলেও তা করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর বিকল্প কোনো উপায় নির্ধারণ না হওয়ায় নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আবার কেউ কেউ বলছেন, এমন নির্দেশনার বিষয়টি তাঁরা এখনো জানেন না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাউশির এ-সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয় ২০২৪ সালের ৩ এপ্রিল। এতে বলা হয়, রাজউকের তালিকায় থাকা বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো মজবুত করতে হবে। ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ৪৪টি ভবন ৭ দিনের মধ্যে খালি করে সিলগালা করতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে।

মাউশির সূত্র বলছে, ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প: রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঢাকা মহানগর উন্নয়ন প্রকল্প (ডিএমডিপি) এলাকার সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে। এর মধ্যে রাজউকের তালিকায় মাউশির আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন রয়েছে ৪৪টি।

মাউশির সাধারণ প্রশাসন শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত দেড় বছরে অসংখ্যবার চিঠি দেওয়া হলেও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসব ভবনেই চলছে পাঠদান, দাপ্তরিক কাজ।

নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল শনিবার মাউশির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। কেন নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন হয়নি, এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’

রাজধানীতে গত শুক্রবার সকালে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এবং গতকাল সকালে এক দফা ও সন্ধ্যায় দুই দফা মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। শুক্রবারের ভূমিকম্পে প্রাণ গেছে ১০ জনের। আহত হয়েছেন ৬ শতাধিক মানুষ। রাজধানীর বহু ভবনে ফাটল ধরেছে, অনেক ভবন হেলে পড়েছে।

মাউশির নির্দেশনার বিষয়ে গত দুই দিনে (শুক্র ও শনিবার) অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকা ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। অধিক ঝুঁকিপূর্ণের ওই তালিকায় রাজধানীর খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের একটি দোতলা ভবন রয়েছে। মাউশির নির্দেশনার বিষয়ে গতকাল দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে ভবন সিলগালা বা খালি করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব হবে না বলে নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করা যায়নি।

একই রকম কথা জানান গোড়ানের আলী আহমেদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাসিমা পারভীন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের একটি পাঁচতলা ভবন ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন ভবন বা শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা না করে এমন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা কঠিন। ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান বলেন, কিছুদিন হলো তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। কলেজের কোন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, তা তাঁর জানা নেই।

নারায়ণগঞ্জের দেলপাড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফজলুল কবীর জানালেন, ‘অফিশিয়ালি কোনো নির্দেশনা আসেনি। আপনার কাছ থেকেই এমন নির্দেশনার কথা শুনলাম।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪৪টি ভবনে কয়েক হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী দিনের বেশ কয়েক ঘণ্টা থাকছেন। মাউশির নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাঁরা ঝুঁকিতে রয়েছেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘দেড় বছর আগের নির্দেশনাটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? জবাবদিহি না থাকার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। একটা ঘটনা ঘটার পর আমরা তৎপর হই। কিছুদিন পরই সে তৎপরতা থেমে যায়।’ তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট শিক্ষার্থীকে আমরা ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারি না। কারা এ নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের (অব.) অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আমি মনে করি, দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো মুহূর্তে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।’

‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ভবন রয়েছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজধানীর বাড্ডার আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সায়েদাবাদের করাতিটোলা সিএমএস উচ্চবিদ্যালয়, যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডেমরার হায়দার আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর ১৩ নম্বরের হাজী আলী হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কদমতলীর এ কে উচ্চবিদ্যালয় ও ব্রাইট কলেজ, কদমতলীর কে এম মাইনুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় (মিঠাব), তেজগাঁও মডেল উচ্চবিদ্যালয়, বাড্ডার এ কে এম রহমতুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আজিমপুরের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোতোয়ালির আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি, পল্টনের আরামবাগ উচ্চবিদ্যালয়, লালবাগের আনন্দময়ী বালিকা বিদ্যালয়, সাভারের ভাকুর্তা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও শ্যামনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কেরানীগঞ্জ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নারায়ণগঞ্জের সরকারি কদম রসুল কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, গাজীপুরের সরকারি কালিগঞ্জ শ্রমিক কলেজ ও কালিগঞ্জ আর আর এন পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়।

নির্দেশনার দেড় বছর পরও অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সিলগালা না করা অথবা ভেঙে না ফেলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) বেগম বদরুন নাহার। গতকাল তিনি বলেন, কেন দেড় বছর আগের নির্দেশনা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: তহবিলের হিসাব না পেয়ে দৃশ্যত স্থবির রাকসু

  • ১৯৯০-২০১৩ পর্যন্ত তহবিলের হিসাব দিতে পারছে না প্রশাসন।
  • বিতর্ক উৎসব ও অনলাইন সেবার মতো নানা কাজ হয়েছে: ভিপি জাহিদ
দীন ইসলাম, রাবি
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের দুই মাস পার হলেও ইশতেহার বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাকসু প্রতিশ্রুত সংস্কারের বদলে জাতীয় রাজনীতি ও প্রতীকী কর্মকাণ্ডে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে প্রতিনিধিদের দাবি, প্রশাসন রাকসুর তহবিলের সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা যথাযথভাবে অগ্রসর হতে পারছেন না।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর গত ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ অক্টোবর শপথগ্রহণ করেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তবে দুই মাস পার হয়ে গেলে এখনো রাকসু তহবিলের হিসাব দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০১৩ সালের পর থেকে হিসাব দিতে পারলেও ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ের তহবিলের কোনো হিসাব দিতে পারছে না প্রশাসন। এ বিষয়ে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর দেখি কোনো ফাইল, কোনো হিসাবই ছিল না। শূন্য থেকে পুরো ভিত্তি গড়ে তুলতে হয়েছে।’

রাকসুর ভিপি ও এজিএসসহ ২৩ পদের মধ্যে ২০ জনই শিবিরসমর্থিত প্যানেলের। এই প্যানেলের ইশতেহারে ১২ মাসে ২৪টি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তহবিলের যথাযথ হিসাব দিতে না পারায় কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন রাকসু প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পরই তাঁরা প্রশাসনকে তহবিলের হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রশাসন ১৫ দিনের সময় নিয়ে পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেওয়ার কথা জানালেও শেষ পর্যন্ত তা দিতে পারেনি।

রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই বিতর্ক উৎসব, মাঠ সংস্কার, পানির ফিল্টার স্থাপন ও অনলাইন সেবাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। হয়তো অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজের গতি আশানুরূপ নয়। তবে রাকসুর কাজ বাদ দিচ্ছি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে এগুলো নিয়ে কেউ কাজ করেনি। এখন কাজ হচ্ছে এবং সবকিছু আস্তে আস্তে সামনে আসবে। ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্টগুলো জমা করতে আরও সময় লাগবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জমি অধিগ্রহণ: ক্ষতিপূরণ মেলেনি ছয় বছরেও

  • কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।
  • সড়কের দুই পাশ অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৯ সালে।
  • অন্তত ৫০০ জমির মালিক এ ঘটনায় ভুক্তভোগী।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দ্রুত দেওয়ার দাবিতে গতকাল কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দ্রুত দেওয়ার দাবিতে গতকাল কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছয় বছর আগে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের সাকুয়া বাজার থেকে চামটাঘাট পর্যন্ত উত্তর গণেশপুর মৌজা, বয়রা মৌজা, সাকুয়া মৌজা, রৌহা মৌজার মোট চার কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ অধিগ্রহণ করা হয়। বসতবাড়ি, দোকানঘর ও জমি অধিগ্রহণ করার ছয় বছর পার হলেও ক্ষতিপূরণের ১২৩ কোটি টাকা পাননি জমির মালিকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত ৫০০ জন এ ঘটনায় ভুক্তভোগী।

জেলা প্রশাসন বলছে, প্রাক্কলিত অর্থ না পাওয়ায় এখনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে রাস্তার দুপাশে বসবাসরত অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।

ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দ্রুত দেওয়ার দাবিতে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন জমির মালিকেরা। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভুক্তভোগী জমির মালিক করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. রেনু মিয়া, ভুক্তভোগী কবির উদ্দিন ভূইয়া, চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু, মো. নাজমুল মিয়া, মো. জুয়েল মিয়া, হেলিম মিয়া প্রমুখ। মানববন্ধনে প্রায় ৫০০ ভুক্তভোগী জমির মালিক অংশ নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামটাঘাট সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ও তদারকির দায়িত্ব পায় কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদপ্তর। সড়কের দুই পাশ অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৯ সালে। এ প্রকল্পের অনেক জায়গায় রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন কেস বা ভূমি অধিগ্রহণ মামলা (এলএ কেস) নম্বর ০৯/২০১৯-২০ অধীন থাকা মৌজাগুলোর অধিগ্রহণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। অধিগ্রহণের কাজ ৭ ধারা নোটিশ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়ে এখন মুখথুবড়ে পড়ে আছে। যে কারণে চামটাঘাট বন্দর এলাকার ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকান নতুন করে সংস্কার ও মেরামত করতে পারছে না। চামটাঘাট বন্দর জনবহুল ব্যবসাকেন্দ্র এবং বহু জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হওয়ার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাটি কোনো জায়গায় সম্প্রসারিত আবার কোনো জায়গায় খানাখন্দ, ভাঙা। এ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহন বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাস্তার দুপাশে বসবাসরত অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না। কারণ তারা অধিগ্রহণের টাকা কবে পাবে, সেটা অনিশ্চিত।

জমির মালিক করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রেনু মিয়া বলেন, ‘৬ শতাংশ জায়গা গেছে। ২০০ ফুটের একটা ঘর গেছে। এই পর্যন্ত টাকা পাইতাছি না। আমরা রাস্তা ক্লিয়ার করে দিয়েছি। অধিগ্রহণের টাকা না দিয়েই ওরা রাস্তা করে ফেলতে চাচ্ছে। শুধু বাইল দিয়া রাস্তা করে ফেলতে চাচ্ছে।’

চামটাঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, ‘টাকার জন্য আমরা ঘরবাড়ি ভেঙে দিছি। এখন পর্যন্ত সরকার অধিগ্রহণের টাকা আমাদের দেয় না। ৭ ধারা নোটিশ দিয়ে বলছে আমাদের টাকা-পয়সা দিয়ে দেবে, কিন্তু কোনো টাকা-পয়সা দেয় না। ১৫ শতাংশ জায়গা গেছে আমার।’

ভুক্তভোগী কবির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে সাকুয়া বাজার থেকে চামটাঘাট পর্যন্ত আমাদের যে কাজ হচ্ছে, তার এলএ কেস নং হচ্ছে ৯। আমরা ঘরবাড়ি ভেঙে রাস্তা দিয়ে দিছি। কিন্তু আমাদের অধিগ্রহণের টাকা এখনো পাচ্ছি না। আমরা যারা ভুক্তভোগী আছি তাদের দাবি অতিসত্বর আমাদের টাকা দিয়ে দিক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘অধিগ্রহণের একটা প্রক্রিয়া আছে। আমরা প্রাক্কলন প্রস্তুতক্রমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গত মে মাসে পাঠিয়ে দিয়েছি। ডিসেম্বর মাস চলছে এখনো আমরা প্রাক্কলিত অর্থ পাইনি। যে কারণে আমরা অধিগ্রহণের টাকা ডেসপাচ করতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খুবই চিন্তিত। আমরাও চাচ্ছি টাকা এলে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন দিয়ে দিতে পারি।’

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের এ প্রকল্পের ৫টি এলএ মামলা ছিল। আমরা ইতিমধ্যে ৪টির টাকা দিয়ে দিয়েছি। শুধু একটি রয়েছে। এটার প্রাক্কলিত মূল্য ১২৩ কোটি টাকা। আমার ডিপিটিতে টাকা বাকি আছে ৬০ কোটির মতো। আরও ৬৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত লাগতেছে। এই ডিপিটিটা সংশোধন করা প্রয়োজন। আমরা সংশোধন করে সংশোধিত ডিপিটিটা আমাদের মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে সংশোধিত ডিপিটিটা অনুমোদন হয়ে গেলে টাকাটার ছাড় আসলে আমরা ডিসি অফিসকে দিয়ে দিতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দখল-দূষণে বিলীন আত্রাই: নদ ভরাট করে ক্লিনিক মার্কেট ভবন

  • প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নদের জমির জাল কাগজ তৈরি।
  • একসময় স্রোতস্বিনী আত্রাইয়ের আয়তন দ্রুত সংকুচিত হয়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে।
আবুল কাশেম, সাঁথিয়া (পাবনা)
নদ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে আত্রাই নদ। সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব সংকটে আত্রাই নদ। সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দখল ও দূষণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদ। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে নদের সিকস্তি ও পয়স্তি জমির জাল কাগজ তৈরির পর এটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কেট ও অসংখ্য আধা পাকা দোকান। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নদের তলদেশ ভরাট করে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে একসময় স্রোতস্বিনী আত্রাইয়ের আয়তন দ্রুত সংকুচিত হয়ে নিঃশেষ হওয়ার পথে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, নব্বইয়ের দশকেও আত্রাইয়ে পালতোলা পণ্যবোঝাই সারি সারি নৌকা চলাচল করত। এটি তখন ছিল এলাকার যোগাযোগ ও জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিন্তু এখন সেটি পরিণত হয়েছে প্রায় মরা খালে।

সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতী নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া আত্রাই নদ সাঁথিয়া, বেড়া ও সুজানগর উপজেলা অতিক্রম করে মাসুমদিয়া ইউনিয়নের বাদাই নদের সঙ্গে মিলিত হয়ে যমুনায় গিয়ে পড়ে। তবে সাঁথিয়া উপজেলার অংশে এর বড় একটি অংশই দখল হয়ে গেছে। পাবনা-ঢাকা ও কাজিরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশের জেলার অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা কাশিনাথপুরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা আত্রাইয়ের জায়গা দখল করে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রতিনিয়ত নদের বুক চিরে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাশিনাথপুর ট্রাফিক মোড় থেকে কাশিনাথপুর হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদের কোনো দৃশ্যমান অস্তিত্ব নেই। হাট এলাকার একাংশে নদের মাঝখানে নির্মিত একটি সেতুর দুই পাশে নদের দুই তীর ভরাট করে তৈরি হয়েছে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মার্কেট, আবাসিক ভবন এবং ৪০-৪৫টি দোকান। এগুলোর বেশ কিছুর নির্মাণকাজ এখনো চলছে। অন্যদিকে নদের অবশিষ্ট জলাশয়টি হাটবাজার ও আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, ২০০০ সালের পর থেকে আত্রাই দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সময় সুজানগর উপজেলার আহাম্মদপুর ইউনিয়নে সরকারি অর্থায়নে আত্রাইয়ের ওপর একটি সেতু ও সড়ক নির্মাণ করা হয়। সেতু ও সড়ক নির্মাণের পরপরই রাস্তার দুই পাশে নদের জমি দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এসব স্থাপনার মালিকদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

স্থানীয়দের আরও দাবি, একসময় বাঘুলপুর, বাদাই, ভাটিকয়া, সাগতা, রানীনগর, মাসুমদিয়া, আমিনপুরসহ আশপাশের বহু এলাকার মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনের প্রধান পথ ছিল আত্রাই নদ। বর্তমানে এর বড় অংশে পানির অস্তিত্ব নেই। বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসনের কার্যকর নজরদারির অভাবে নদটি এভাবে দখল-দূষণের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। সচেতন মহলের মতে, একসময় প্রশস্ত ও খরস্রোতা আত্রাই এখন অনেক স্থানে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এটি রক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন কবির বলেন, ‘একসময় এই নদে নৌকা ও লঞ্চ চলত, নানা প্রজাতির মাছ ছিল। জলাধার সংরক্ষণ আইন থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের দুর্বল নজরদারি ও আইন প্রয়োগের অভাবে প্রভাবশালীরা এর বুকে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন গড়ে তুলেছে। কোথাও কোথাও নদের জমি দখল করে ফসলও আবাদ করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসিফ রায়হান বলেন, ‘নদটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন। তারা সহযোগিতা চাইলে উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।’ এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার কাশিনাথপুরে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টাঙ্গাইল: আট আসনে লড়াইয়ে বিএনপিরই ২৪ জন

  • জামায়াত, এনসিপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট প্রার্থী ৪১ জন।
  • দীর্ঘদিন ধরে নেই বিএনপির পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি।
  • কেন্দ্রীয় দুই নেতার দ্বন্দ্বে আটকে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
  • এক যুগ ধরে জেলা বিএনপির নিজস্ব কার্যালয় নেই।
আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২: ০১
আবদুস সালাম পিন্টু, আহমেদ আযম খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বেনজির আহমেদ টিটু, ওবায়দুল হক নাসির, রবিউল আউয়াল লাভলু, ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, লুৎফর রহমান মতিন ও আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী।ছবি: সংগৃহীত
আবদুস সালাম পিন্টু, আহমেদ আযম খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বেনজির আহমেদ টিটু, ওবায়দুল হক নাসির, রবিউল আউয়াল লাভলু, ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, লুৎফর রহমান মতিন ও আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী।ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলে এক যুগ ধরে জেলা বিএনপির অফিস নেই। তিন বছরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। উপজেলা পর্যায়েও পকেট কমিটির অভিযোগে নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। এমন পরিস্থিতিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার আটটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। তবে এর বাইরে আরও ১৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

২০২২ সালের ১ নভেম্বর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে হাসানুজ্জামিল শাহীন জেলা সভাপতি ও ফরহাদ ইকবাল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সভাপতি পদে জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু ও সাবেক সহসভাপতি আলী ইমাম তপন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মাহমুদুল হক সানু।

নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের দুজনই দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের সমর্থিত। অন্যদিকে পরাজিতরা ছিলেন প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সমর্থিত। কেন্দ্রীয় এই দুই নেতার দ্বন্দ্বে প্রায় তিন বছরেও জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

দ্বিধাবিভক্ত কমিটির কারণে দিন দিন সাংগঠনিক শৃঙ্খলা দুর্বল হয়ে পড়ছে। উপজেলা পর্যায়ে পকেট কমিটির অভিযোগ এনে নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে দলীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই বিভক্তি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। আট আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলের ২৪ জন নেতা। আর বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে বিভিন্ন দল থেকে মোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন অন্তত ৪১ জন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি তা অনুমোদন দেয়নি। ফলে তিন বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই কর্মকাণ্ড চালাতে হচ্ছে। সংসদ নির্বাচন ঘিরে অনেক আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। দু-একটি আসনে অন্য এলাকার নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় সমস্যা জটিল হয়েছে। পুনর্বিবেচনা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। তবে এর বাইরে আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী ও সাবেক এমপি আশিকা আকবরের ছেলে আফিফ আহমেদ। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আসাদুল ইসলাম আজাদও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর–গোপালপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু। এখানে দলের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম ওবায়দুল হক নাসির। তবে তাঁর জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ও তিনবারের সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান খান আজাদ এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. লুৎফর রহমান মতিন। পৃথকভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো।

টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আওয়াল। তবে তাঁর মনোনয়নে ক্ষুব্ধ দলের অন্য অংশ। এই আসনে পৃথকভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. ইকবাল হোসেন খান, ছাত্রদল নেতা আতিকুর রহমান ও মো. জুয়েল সরকার।

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় সহসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ সোরহাব, বহিষ্কৃত নেতা ফিরোজ হায়দার খান ও কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপু হায়দার খান।

টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন শিল্পপতি সালাউদ্দিন আলমগীর রাসেল, হাবিবুর রহমান কামাল ও বহিষ্কৃত সখীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমান। তবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সালাউদ্দিন আলমগীর রাসেল ও হাবিবুর রহমান কামালের কোনো দলীয় পদবি নেই।

জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু বলেন, দীর্ঘদিনেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় এবং জেলা বিএনপির কোনো সাংগঠনিক অফিস না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন দোকান, হোটেল ও ফুটপাতে বসে দলীয় কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জেলায় পকেট রাজনীতি শুরু হওয়ায় অধিকাংশ নেতা-কর্মী অন্য নেতার পকেটের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। কেউ কারও কমান্ড শুনছে না। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন আসনে একাধিক নেতা মনোনয়নপত্র কিনছেন। সেগুলোও দেখার কেউ নেই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে খেসারত দিতে হবে।

জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জিয়াউল হক শাহীন বলেন, বড় দলে একাধিক প্রার্থী থাকে, আবার সমঝোতাও হয়। নির্দিষ্ট কার্যালয় ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় হযবরল অবস্থা। স্থানীয়ভাবে সমঝোতার উদ্যোগ না থাকায় কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, ‘আমরা সমঝোতার চেষ্টায় রয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতারাও বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছেন। আগামী নির্বাচনে সব কটি আসনে বিজয় নিশ্চিতের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। যাঁরা সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন তাঁদের বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে বিবেচনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত