Ajker Patrika

রাতে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের মশাল মিছিল, ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ পাঁচ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারী-শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল করেছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। মশাল মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তির আশ্বাস না বরং শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান। এমনকি শাস্তি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার অঙ্গীকার করেন নারী শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা-‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাংক দ্য র‍্যাপিস্ট’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’ -ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশ থেকে নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, নারীকে নারী হিসেবে না, মানুষ হিসেবে ভাবুন। আমরা ভয়ে থাকি কখন কে আমাদের শরীরে তার কালো হাত দিতে পারে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই। আমরা চাই না বাইরে বের হলেই আমাদের ওপর কেউ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুক। আমরা ধর্ষকদের এমন শাস্তি চাই যা দেখে অন্যদের এই কাজ করতে বারবার ভাবতে হয়। আমরা চাই, তাদের শাস্তি কার্যকর করা হোক। যত দিন এদের বিচার না হবে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। দরকার হলে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনে গিয়ে তার পদত্যাগে বাধ্য করব।

সমাবেশে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো-

১. মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা এবং ১ মাসের মধ্যে ধর্ষকের বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে শিশুটির পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

২. প্রত্যেক ধর্ষণ মামলার বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন করে সকল ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

৩. নারী ও শিশুর নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জবাবদিহি করতে হবে।

৪. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘নারী ও শিশু নিপীড়নবিরোধী সেল’ গঠন ও সেলের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করে অপরাধের স্পষ্ট ও যথাযথ সংজ্ঞায়ন করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা দেখছি ধর্ষণ বিষয়ক মামলায় আসামিরা ৪-৫ বছরের বেশি জেলা থাকে না। আমরা চাই সেলগুলো গঠন করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। বিচারে দীর্ঘসূত্রতা বর্জন করতে হবে। অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপনারা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনারা অপরাধীদের আইনের হাতে তুলে দিন এবং তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করুন। আমরা চাই এ দেশে প্রতিটি অপরাধীর শাস্তি হোক।

কর্মসূচি ঘোষণা করে উমামা বলেন, আমরা আগামী ৩ দিনের ভেতরে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি বরাবর লিখিত স্মারকলিপি পৌঁছে দেব। আমরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ৩ দিনের আলটিমেটাম দিচ্ছি। এর মাঝে যদি আমাদের দাবিগুলো না মানা হয় আমরা সর্বশক্তি দিয়ে আবার মাঠে নামব। এর মাঝে আমরা অনলাইন ও অফলাইনে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে জনমত গঠনে কাজ করে যাব।

সমাবেশে সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী সামিয়া রশিদ, শামছুন নাহার হলের সামিয়া মাসুদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের শিক্ষার্থী দিলরুবা, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাত, ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার বিচার দাবিতে আবারও শাহবাগ মোড়ে ইনকিলাব মঞ্চ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির কবর জিয়ারত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কবর জিয়ারত শেষে তারেক রহমান শাহবাগ এলাকা থেকে চলে আসার পর বেলা ১২টায় হাদি হত্যার বিচার চেয়ে আবারও শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে তারেক রহমানের শাহবাগে আসা উপলক্ষে ইনকিলাব মঞ্চ শাহবাগ মোড় থেকে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম দিকে সাময়িক অবস্থান নেয়। এরপরে তাঁর কবর জিয়ারত শেষ হলে পুনরায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শাহবাগ চত্বর।

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মুন্সি বোরহান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ১২টার সময়ে আবারও শাহবাগ মোড়ে এসেছি হাদির হত্যার বিচার চাইতে। তারেক রহমান হাদির কবর জিয়ারত করতে আসায় আমরা সাময়িক সময়ের জন্য শাহবাগের পশ্চিম দিকে একটি পাশে অবস্থান নিয়েছিলাম।’

আজ শনিবার বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে শায়িত শরিফ ওসমান বিন হাদির কবর জিয়ারত করেন তারেক রহমান। ওসমান হাদির কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া ও মোনাজাত করেন তিনি। এরপর সেখানে শায়িত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরেও শ্রদ্ধা জানান ও জিয়ারত করেন।

গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর হাদি হত্যার বিচার দাবি শাহবাগে অবস্থান নেয় ইনকিলাব মঞ্চ। রাতভর অবস্থানের পর সকাল ১১টার আগে শাহবাগ মোড় ছেড়ে একদিকে সরে যান অবস্থান কর্মসূচি পালনকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের চেয়েও কাজ না পাওয়ার কষ্ট বেশি

­­­নওগাঁ প্রতিনিধি
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁয় গত কয়েক দিনে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। শীত উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েও অনেককে কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো এলাকা। তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের কারণে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ খুব একটা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাকডাকা ভোরে কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে এসে মুক্তির মোড়, ব্রিজের মোড় ও শিবপুর ব্রিজ (বাইপাস) এলাকায় জড়ো হয়েছেন দিনমজুরেরা। জীবিকার তাগিদে আসা এসব শ্রমজীবীর সঙ্গে থাকে মাটি কাটার ঝুড়ি ও কোদাল। কিন্তু একদিকে শীতের কষ্ট, অন্যদিকে কাজ না পাওয়ার হতাশা—দুইয়ের বোঝা নিয়েই অনেককে ফিরতে হচ্ছে বাড়ি।

মুক্তির মোড়ে বসে থাকা ৭০ বছর বয়সী আবুল কাশেম বলেন, ‘কয়েক দিন শীত কম ছিল। এখন হঠাৎ খুব শীত পড়েছে, সঙ্গে বাতাস। এই শীতে ঘর থেকে বের হওয়াই কষ্ট। তারপরও পেটের দায়ে কাজে আসতে হয়। সর্দি-কাশি লেগেই থাকছে। আয় কমে যাওয়ায় খুব বিপদে আছি।’

আরেক শ্রমজীবী তছলিম বলেন, ‘ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে সাইকেল চালিয়ে কাজে এলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। গরিব মানুষ, কাজ না করলে চলবে না। শীতে যত কষ্টই হোক, বের হতে হয়। কিন্তু গত দুই দিন কোনো কাজই পাইনি।’

ব্রিজের মোড়ে কাজের অপেক্ষায় থাকা ৬৫ বছর বয়সী হাজের আলী বলেন, ‘আমাদের কাজ রোদ-বৃষ্টি সবকিছুর ওপর নির্ভর করে। শীত পড়ার পর থেকেই কাজ কমে গেছে। পারিশ্রমিক কম হলেও যা পাই তা-ই করি। কেউ কাজ পায়, কেউ পায় না। কাজ না পেলে কোদাল-ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে বসে থাকতে হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুয়াশায় যমুনায় আটকা বর-কনেসহ ৪৭ যাত্রীর নৌকা, ১৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার

জামালপুর প্রতিনিধি 
বরযাত্রীবাহী নৌকাটি আজ দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরযাত্রীবাহী নৌকাটি আজ দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ঘন কুয়াশার কারণে যমুনা নদীতে বর-কনেসহ ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা প্রায় ১৫ ঘণ্টা আটকে থাকার পর উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে বগুড়া থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মাদারগঞ্জে ফেরার পথে যমুনা নদীর মাঝখানে নৌকাটি দিক হারিয়ে আটকে পড়ে। শনিবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় নৌকাটি নিরাপদে ঘাটে পৌঁছায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারগঞ্জ উপজেলার তারতাপাড়া গ্রামের সানোয়ার হোসেনের ছেলে নিলয় হাসানের (২০) সঙ্গে বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকার এক তরুণীর বিয়ে হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনেসহ ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কালীতলা ঘাট থেকে একটি বড় নৌকা মাদারগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়।

রাত ৯টার দিকে যমুনা নদীর মাঝখানে ঘন কুয়াশার কারণে নৌকার চালক দিক হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে নৌকাটি মাঝনদীতে নোঙর করে অবস্থান নেয়। পরে রাত ১১টার দিকে যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চান।

বর-কনেসহ উদ্ধার হওয়া ৪৭ জন যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
বর-কনেসহ উদ্ধার হওয়া ৪৭ জন যাত্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

খবর পেয়ে মাদারগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা শুরু করলেও কুয়াশার তীব্রতার কারণে রাতে নদীতে নামা সম্ভব হয়নি। শনিবার সকালে কুয়াশা কিছুটা কমলে ফায়ার সার্ভিস স্থানীয় মাঝিদের সহযোগিতায় উদ্ধারকারী নৌকা পাঠায়। সকাল ৯টার দিকে আটকে পড়া নৌকার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে যাত্রীদের নিয়ে নৌকাটি দুপুর ১২টার দিকে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে নিরাপদে পৌঁছায়।

উদ্ধার হওয়া বর নিলয় হাসান বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে মাঝি কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। নারী ও শিশুসহ সবাই আতঙ্কে ছিল। সারা রাত তীব্র শীতের মধ্যে নদীর মাঝে কাটাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবাই সুস্থভাবে ফিরতে পেরেছি, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গতকাল রাত ৯টার দিকে সাংস্কৃতিক পর্ব চলাকালে হামলা চালায় বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাত ৯টার দিকে সাংস্কৃতিক পর্ব চলাকালে হামলা চালায় বহিরাগত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনীর সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বহিরাগতদের হামলায় পণ্ড হয়েছে। সেখানে দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী নগরবাউল জেমসের গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেমস মঞ্চে পৌঁছার আগেই বহিরাগতদের হামলা ও ইটবৃষ্টির মুখে শেষ পর্যন্ত কনসার্টটি বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থী ও আয়োজকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

স্কুলের পুনর্মিলনী উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকেই সাজসাজ রব ছিল ফরিদপুর শহরে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে নগরবাউল জেমস তাঁর দল নিয়ে ফরিদপুর পৌঁছান এবং স্থানীয় একটি গেস্ট হাউসে বিশ্রাম নেন।

রাত ৯টায় অনুষ্ঠানের র‍্যাফল ড্র চলাকালে জিলা স্কুলের মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নেওয়া কয়েক হাজার মানুষ ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করে।

রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ভেতরে ঢুকতে না পেরে একদল যুবক সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে স্বেচ্ছাসেবকেরা বাধা দেন। এর পরপরই মুজিব সড়ক ও স্কুলের চারপাশ থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

রাত ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হামলাকারীরা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং অনবরত ইট মারতে থাকে। এতে অনুষ্ঠানস্থলে থাকা শিক্ষার্থী ও দর্শকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আনিসুর রহমান সজল নামে একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন নিবন্ধিত সদস্য ভেতরে উৎসব করছিলাম। কিন্তু জেমস আসার খবরে বাইরে ২০-২৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়। হঠাৎ বৃষ্টির মতো বড় বড় ইট এসে আমাদের ওপর পড়তে থাকে। সাউন্ড সিস্টেমের মনিটর ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। অদ্ভুত বিষয় হলো, পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখনো পুলিশ নীরব ছিল।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে এমন সহিংসতা এড়ানো যেত। তাঁরা অভিযোগ করেন, বড় কোনো আয়োজনে যে ধরনের নিরাপত্তা বলয় থাকা প্রয়োজন ছিল, এখানে তার ছিটেফোঁটাও ছিল না।

এদিকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আয়োজক কমিটির অদূরদর্শিতাকেই দায়ী করেছেন জেমস। নগরবাউলের মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন গণমাধ্যমকে বলেন, " ‘আমরা কনসার্ট করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশৃঙ্খলা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে আয়োজকেরা আমাদের ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। এটি আয়োজকদের স্পষ্ট অব্যবস্থাপনা।’ জেমস নিজেও ব্যক্তিগতভাবে একে আয়োজকদের ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের ভেতরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বাইরে অন্তত দশগুণ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। জিলা স্কুলের ভেতরের প্রাঙ্গণে এত বিশাল জনসমুদ্র সামলানো অসম্ভব ছিল। বহিরাগতদের বাধা দিতে গেলেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

পুনর্মিলনী উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান শামীম বলেন, ‘নিরাপত্তার খাতিরেই আমরা অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। আমাদের অনেক ছোট ছোট শিক্ষার্থী ও প্রবীণ সদস্যরা আহত হয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’

বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মতে, জেমসের মতো শিল্পীর অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে শহরের প্রাণকেন্দ্রে জিলা স্কুলের মতো ছোট জায়গা বেছে নেওয়াটাই ছিল আয়োজকদের প্রথম ভুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত