Ajker Patrika

ফরিদপুরে সাংবাদিকের বাবা-মাকে জখম: গ্রেপ্তার ব্যক্তি হামলাকারী নন, বাদী ও ভুক্তভোগীদের দাবি

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ১৪
ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল জলিলের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল জলিলের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের মধুখালীতে আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক সৌগত বসুর বাড়িতে ঢুকে বাবা-মাসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় করা মামলায় যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীদের দাবি। তাঁরা বলছেন, তাঁদের বাড়িতে একজনই ঢুকে হামলা করেছিল। কিন্তু পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে, তিনি হামলাকারী নন। ছবি দেখে সেই ব্যক্তি ‘হামলাকারী নন’ বলে ভুক্তভোগীরা শনাক্ত করার পরও তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বাদী সাংবাদিক সৌগত বসু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। ছবি দেখে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি অভিযুক্ত নন উল্লেখ করার পরও কেন তাঁকে আসামি করা হলো, আমি বুঝতে পারিনি।’

গত শুক্রবার রাতে উপজেলার ডুমাইন পূর্বপাড়ার বোস বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সৌগত বসুর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামলেন্দু বসু (৬৫), মা কাকলী বসু (৬০) ও প্রতিবেশী কিশোরী প্রীতি মালো (১৫) আহত হন। তাঁরা সবাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরদিন শনিবার বিকেলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে মধুখালী থানায় এজাহার দাখিল করেন। রাতে তা মামলা হিসেবে নেওয়া হয়। ওই মামলায় তাঁদেরই গ্রামের পরিমল কুমার রায়ের ছেলে পল্লব কুমারকে (১৯) গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশের দাবি, ঘটনার রাতেই পল্লবকে আটক করা হয়। তখন বিশেষায়িত স্টিলের তৈরি লাঠি ও একটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়। এ দুটি আলামত ও আসামির স্বীকারোক্তিতে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. নুরুজ্জামান ও তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোক্তার হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা তখন উপস্থিত ছিলেন।

রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি পুলিশের

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, ‘ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের’ এক পর্যায়ে আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। চুরির উদ্দেশ্যেই সে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

পল্লব কেন চুরি করতে গেল— এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য গিয়েছিল।’

পুলিশ সুপারের দাবি, পল্লব গাঁজা সেবন করে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন এবং সে নিজেও স্বীকার করেছে। এক সময় তাকে ফরিদপুরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল।

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও স্টিলের লাঠি। ছবি: আজকের পত্রিকা
উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও স্টিলের লাঠি। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসামি যেভাবে শনাক্ত করে পুলিশ

পুলিশ সুপার বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা আমাদের জানায়, তাঁরা হামলাকারীকে নির্দিষ্ট করে চিনতে পারেননি, দেখলে চিনতে পারবেন। ভুক্তভোগীরা যখন অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আসেন, তখন তাঁরা একজনের নাম বলেছেন বলে অ্যাম্বুলেন্সের চালক (টুটুল) ও তাঁদের সঙ্গে আসা মজনু নামে একজন জানিয়েছেন। হাসপাতালে যাওয়ার পর পল্লবের নাম বলা হয়।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা যাকে ধরেছি, ঘটনার সঙ্গে তাঁর বক্তব্য এবং উদ্ধারকৃত আলামতের মিল আছে কি-না সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বাদী বলেছেন, তাদের বাড়ি উঁচু বাউন্ডারি ঘেরা থাকায় চোর বাড়ির পেছনের স্কুল দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। পরে আসামিও জানায়, স্কুলের পাশে চিপাগলি দিয়ে গাছ বেয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সে।’

গ্রেপ্তারের পর ভুক্তভোগীদের সামনে আসামিকে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না— এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসামি আমরা দেখিয়েছি, কিন্তু তাঁরা ওইভাবে বলেননি।’

তবে পল্লবকে সশরীরে ভুক্তভোগী আহতদের সামনে হাজির করা হয়নি। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে মোবাইল ফোনে ধারণ করা পল্লবের ছবি আহতদের দেখায়। ওই ছবি দেখেই তাঁরা ‘হামলাকারী পল্লব নন’ বলে শনাক্ত করেন।

আহত তিনজনকে কোপানো হয়নি, দাবি পুলিশের

পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, হামলায় আহত শ্যামলেন্দু বসু (৬৫), কাকলী বসু (৬০) ও প্রতিবেশী কিশোরী প্রীতি মালোকে (১৫) কোপানো হয়নি। তবে ‘মেডিকেল রিপোর্ট’ এলে চূড়ান্তভাবে জানা যাবে।

তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীদের স্টিলের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। লাঠিটি পল্লব সঙ্গে করে নিয়ে আসে। শ্যামলেন্দু বসু তাকে ধরার চেষ্টা করলে পল্লব লাঠি দিয়ে তাঁকে তিনটি আঘাত করে। পরে অন্যদেরও আঘাত করে স্টিলের লাঠি ফেলেই পল্লব পালিয়ে যায়।

বিশেষ স্টিলের লাঠিটা পল্লব কোথায় পেল

আসামির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, নিজ গ্রাম ও পাশের গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় নেশা করতে গিয়ে নাকি এই লাঠি তাঁর পায়ে বাঁধে, এভাবে সে লাঠিটা পেয়ে যায়। এককথায়, এটা কুড়িয়ে পাওয়া লাঠি।

যিনি গ্রেপ্তার, তিনি হামলাকারী নন

গ্রেপ্তার আসামি নিয়ে ভুক্তভোগী ও বাদীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের বক্তব্য ভিন্ন হওয়ায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগী কাকলী বসু ও কিশোরী প্রীতি মালোর দাবি, ওই বাড়িতে পল্লব নয়, অন্য একজন প্রবেশ করেছিলেন, যিনি ওই বাড়িতে ভ্যানে করে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন। তিনি একই এলাকার রেজাউল মীরের ছেলে ইমরান মীর (১৮)।

মামলার বাদী সৌগত বসু বলেন, তাঁর মা (কাকলী বসু) ও প্রীতি মালোকে পুলিশ ঘটনার পরদিন পল্লবের ছবি দেখালে তাঁরা জানিয়েছেন, পল্লব হামলাকারী নন। বরং ইমরানের সঙ্গে হামলাকারী ব্যক্তির চেহারা, আকার-আকৃতিতে মিল রয়েছে।

কাকলী বসু বলেন, ‘ওই রাতে যে এসেছিল, সে বেশি লম্বা ছিল না। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের ও মাথায় বাটি ছাট (এক ধরনের স্টাইল) চুল ছিল। কিন্তু পুলিশ যাকে দেখিয়েছে, তাঁর মাথায় সামনের দিকে লম্বা চুল ছিল।’

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রীতি রোববার রাতে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিকে বলে, ‘পল্লবকে আমি চিনি। রাতে পল্লব আসেনি। ঠাকুমাদের বাসায় (সৌগতদের বাসায়) একটা লোক গ্যাস দিয়ে যেত, রাতে ওই লোকই এসেছিল।’

প্রীতি আরও বলে, ‘রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন আসছিলাম, তখন দাদু (শ্যামলেন্দু বসু) আহত অবস্থায় বারবার জানতে চাচ্ছিল, তাঁর সঙ্গে কী হয়েছিল। পল্লব এসেছিল কি না (পল্লব মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত)। তখন আমি বলেছিলাম, না। ওই সময় ড্রাইভার টুটুল ও যে আমাদের সঙ্গে এসেছিল, তাঁরা মনে করে, ঘটনাটি পল্লব ঘটিয়েছে। পরে তারাই পুলিশকে পল্লবের নাম জানায়। কিন্তু পল্লব চুরি করতে আসেনি।’

মামলার বাদী সাংবাদিক সৌগত বসু বলেন, ‘পুলিশ প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। গ্রেপ্তারকৃতের ছবি দেখে শনাক্ত না করার পরও কেন তাকে আসামি করা হলো, আমি বুঝতে পারিনি। পুলিশকে বলা হয়েছে আরও একজনের (ইমরান) নাম। আহতদের সবার মাথায় আঘাত থাকায় ঘটনার পর তাঁদের মধ্যে নাম ও চেহারা নিয়ে এক রকম দ্বিধা ছিল। এজন্য ঘটনার দিন আমাদের পক্ষ থেকে কেউ নাম বলেনি। পরদিন পুলিশ আমাদের জানায়, তাঁরা পল্লবকে আটক করেছেন। তখন আমরা ‘হামলাকারী পল্লব নয়’ বলেছি, ইমরানের কথাও বলেছি। আমরা পুলিশের মাধ্যমেই জেনেছি, ইমরান ফোন বন্ধ করে পলাতক আছেন।’

বাদী ও ভুক্তভোগীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তাঁরা সন্দেহ করল কি না করল, তার থেকে বড় কথা আমরা তদন্তে এবং বাস্তবতায় কী পেয়েছি। এছাড়া এজাহার দায়েরের সময় আমি বলেছিলাম, যাকে সন্দেহ করছেন, তাঁর নামটা দেন। কিন্তু তাঁরা নামটা দেননি।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘রাতে পুলিশকে তাঁরা (ভুক্তভোগীরা) এমন কিছু বলেননি। পরদিন সকালে তাঁর ছেলে (বাদী) জানায়, এখানে ইমরান নামে একজনের নাম এসেছে, তখন আমি বলেছি, আপনার মা এবং যারা সঙ্গে এসেছিল, তাঁরা পল্লবের নাম বলেছে।’

এজাহারে কারও নাম উল্লেখ না থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে সৌগত বসু বলেন, ‘আমরা চাইনি কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হোক। পুলিশ ঘটনার পর ব্যাপক তৎপরতা দেখিয়েছে। যখন যে তথ্য চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। পল্লবকে হামলাকারী নয় বলে মা (কাকলী বসু) ও প্রীতি শনাক্ত করার পর আমি নিজেও পুলিশকে জানিয়েছি। ইমরানের কথাও বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। ইমরান পলাতক সেটাও দেখছি। পুলিশ বলছে, পল্লবকে ঘুম থেকে আটক করা হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব, যার চেহারা মা ও প্রীতি দেখে ফেলেছে, সে এমন ঘটনার পর বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকবে! আর যার প্রতি সন্দেহ, সে কিন্তু পালিয়েছে।’

সবাইকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে- পুলিশের এই বক্তব্যে সৌগত বসু বলেন, তাঁর বাবাকে প্রথমে লাঠি দিয়ে কপালের মাঝ বরাবর আঘাত করা হয়— সেটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তবে মাথায় আরও তিনটি ক্ষত আছে, যেগুলো লাঠির আঘাতের নয়, ধারালো অস্ত্রের কোপে চিড়ে যাওয়ার ক্ষত। তবে হামলাকারী তাঁর মা ও প্রীতিকে স্টিলের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। যে দা উদ্ধার করা হয়েছে, তাতেও রক্ত ছিল।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই ইমরান মীর নামে ওই যুবক পালিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ইমরানের পরিবারের অন্য সদস্যরাও বাড়িতে নেই বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জীবন বিশ্বাস নিশ্চিত করেছেন।

ইউপি সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে পুলিশ আমাকে ফোন দিয়ে পল্লবের বাড়ির ঠিকানা চায়। তখন পুলিশ এলে আমিও সঙ্গে যাই। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পল্লব ঘুমিয়ে রয়েছে। ওর বাবা জানায়, রাত ৯টায় বাড়িতে ফিরে এসেছে। এ ছাড়া সারা দিন মাঠে পেঁয়াজ লাগিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের কালো ব্যাজ ধারণ

জাবি প্রতিনিধি 
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় জাবিতে কালো ব্যাজ ধারণ করে গভীর শোক প্রকাশ করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় জাবিতে কালো ব্যাজ ধারণ করে গভীর শোক প্রকাশ করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের উদ্যোগে কালো ব্যাজ ধারণ করে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সংগঠনটির শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শুধু একটি দলেরই নয়, বরং তিনি গোটা দেশের অভিভাবকে পরিণত হয়েছেন। তিনি যেভাবে আপসহীন নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন, সেটা তাঁকে এই দেশের মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় করে রাখবে।

কর্মসূচি চলাকালে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. শামছুল আলম বলেন, ‘আমাদের জাতির অভিভাবক হিসেবে তিনি ছিলেন মৃদুভাষী, সহনশীল ও মানবিক একজন মানুষ। গত ১৬ বছরে তাঁর ওপর বহু নির্যাতন ও অবিচার হলেও তিনি কখনো কারও প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেননি।’

শামছুল আলম আরও বলেন, ‘তিনি তাঁর প্রিয় বাসা থেকে উৎখাত হয়েও দেশ ছাড়ার কথা ভাবেননি; দেশকেই তিনি ভালোবেসেছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন এবং আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতবাসী করেন।’

এ সময় সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’

ড. মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, ‘দুঃসংবাদ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত করেছে এবং কালো ব্যাজ ধারণের মাধ্যমে শোক পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম রাশিদুল আলম, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তারসহ আরও অনেকে।

এর আগে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চন্দনাইশে অলিপুত্রের সমর্থনে সরে দাঁড়ালেন জামায়াতের প্রার্থী

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি  
মো. শাহাদাৎ হোসেন ও ওমর ফারুক। ছবি: সংগৃহীত
মো. শাহাদাৎ হোসেন ও ওমর ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন। জোটগত সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল অলি আহমদের (বীর বিক্রম) ছেলে ওমর ফারুকের পক্ষে তিনি নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের এই ঘোষণা দেন।

গতকাল সোমবার রাতে মো. শাহাদাৎ হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টের মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। দীর্ঘ ১০ মাস ১২ দিন প্রচার-প্রচারণা চালানোর পর সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ ১০ মাস ১২ দিন পর আজ এক বড় জবাবদিহিতার জিম্মাদারি থেকে মুক্তি পেলাম। জোটের বৃহৎ স্বার্থে জনগণের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা সকলেই সংগঠনের সিদ্ধান্তের প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করলাম। ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে আমরা সর্বদা একযোগে কাজ করব ইনশা আল্লাহ।’

শাহাদাৎ হোসেন জামায়াতে ইসলামীর কোনো পদ-পদবিতে না থাকলেও দলের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং মাঠপর্যায়ে ব্যাপক জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নিজের আসনটি তিনি অলি আহমদের ছেলের জন্য সহজে ছেড়ে দিতে রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক কৌতূহল ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে জোটের ঐক্য সুসংহত করার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধ ভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভপলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ফাইজুল ব্রিকস নামের অবৈধ ইটভাটা চিমনিসহ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভপলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ফাইজুল ব্রিকস নামের অবৈধ ইটভাটা চিমনিসহ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পরিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার সদর উপজেলার ভপলা এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ফাইজুল ব্রিকস নামের অবৈধ ইটভাটা চিমনিসহ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী ভাটামালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানটি পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান। প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পরিবেশ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. তামিম হাসান। অভিযানে পুলিশ, আনসার, সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সার্বিক সহযোগিতা করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া এবং নিষিদ্ধ এলাকায় গড়ে ওঠা এই ইটভাটা দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এতে ফসলি জমির ফসল ও মাটির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণ বাড়ছিল। অভিযানে ভাটার চুল্লি ভেঙে ফেলা হয় এবং কাঁচা ইট নষ্ট করে দেওয়া হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামান জানান, পরিবেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আইন অমান্যকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিনাজপুরের মেয়ে পুতুলের স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় শোকের ছায়া

দিনাজপুর প্রতিনিধি
বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বেগম খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে দিনাজপুরে। খালেদা জিয়ার পৈতৃক নিবাস দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকায়। এই বালুবাড়ি এলাকায় তৈয়বা ভিলা বাড়িতেই কেটেছে খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো। আজ সকাল থেকে তৈয়বা ভিলার সামনে জড়ো হয়েছেন শোকার্ত স্থানীয় মানুষ, দলীয় নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীরা।  

খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। বর্তমানে খালেদা জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হয়েছে।

আজ সকালে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে শহরের জেলমোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছুটে যান ।

দলীয় কার্যালয় ও বালুবাড়ির পৈতৃক নিবাসে কোরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করা হয়েছে।  

বেগম খালেদা জিয়ার আপন খালাতো ভাই আবু তাহের আবু বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) ছিলেন আমাদের অভিভাবক। নিজের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক। ১৯৯১ সালের তিনি যখন প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দিনাজপুরে এলেন, এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে পটল কেমন আছিস? তিনি আদর করে আমাকে পটল বলে ডাকতেন। তিনি বাসায় এলে সবার কথা শুনতেন। সবশেষ  ২০১২  সালের  সেপ্টেম্বরে একবার দিনাজপুর গোরে শহীদ ময়দানে এক জনসভায় এসেছিলেন তিনি। তারও আগে  ২০০৮ সালে মায়ের মৃত্যুর সময় একবার দিনাজপুরে এসেছিলেন।’

পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুর মিশন স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় খালেদা জিয়ার। এরপর  ১৯৬০ সালে ভর্তি হন দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।  

সেখান থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরবর্তীকালে ভর্তি হন দিনাজপুর সরকারি কলেজে (পূর্বের নাম সুরেন্দ্রনাথ কলেজ)।

খালেদা জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
খালেদা জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত তৈয়বা ভিলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা ইয়াসমিনবলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া দিনাজপুরের গর্ব, দেশের গর্ব। আমরা গর্ব করে বলি,  তিনি এই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। প্রথম নারী হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ আজকে একজন অভিভাবক হারাল।’

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নিজের জন্মস্থানে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ২৮ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি,  সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছিলেন। দিনাজপুর-৩ আসনে দলের 

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের কথা শুনে সব বিভেদ ভুলে একাট্টা হয়েছিলেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রিয় নেত্রীর পক্ষে প্রচারণাও চালিয়েছেন।  

তাঁর মৃত্যুতে জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, ‘বাংলাদেশের অবিসংবাদিত আপসহীন নেত্রীকে হারিয়ে দেশ আজ একজন 

অভিভাবককে হারাল। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। সবশেষ তিনি অসুস্থ হওয়ার কয়েক দিন আগে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রিয় নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। দিনাজপুরের মানুষ তাঁকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। দিনাজপুরের উন্নয়নে 

স্বাক্ষর রেখে গেলেন। জাতির বড় প্রয়োজনের সময় আমরা তাঁকে হারালাম। এই দেশ জাতির ইতিহাসে তিনি কিংবদন্তী।’

জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিভাবককে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী সবাই শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। জেলার সকল এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা তাঁর জানাজায় শরিক হওয়ার জন্য রাজধানীর পথে রওনা দিতে শুরু করেছে। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত