Ajker Patrika

ফরিদপুরে সাংবাদিকের বাবা-মাকে জখম: গ্রেপ্তার ব্যক্তি হামলাকারী নন, বাদী ও ভুক্তভোগীদের দাবি

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২: ১৪
ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল জলিলের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল জলিলের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের মধুখালীতে আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক সৌগত বসুর বাড়িতে ঢুকে বাবা-মাসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় করা মামলায় যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীদের দাবি। তাঁরা বলছেন, তাঁদের বাড়িতে একজনই ঢুকে হামলা করেছিল। কিন্তু পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে, তিনি হামলাকারী নন। ছবি দেখে সেই ব্যক্তি ‘হামলাকারী নন’ বলে ভুক্তভোগীরা শনাক্ত করার পরও তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বাদী সাংবাদিক সৌগত বসু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। ছবি দেখে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি অভিযুক্ত নন উল্লেখ করার পরও কেন তাঁকে আসামি করা হলো, আমি বুঝতে পারিনি।’

গত শুক্রবার রাতে উপজেলার ডুমাইন পূর্বপাড়ার বোস বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সৌগত বসুর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামলেন্দু বসু (৬৫), মা কাকলী বসু (৬০) ও প্রতিবেশী কিশোরী প্রীতি মালো (১৫) আহত হন। তাঁরা সবাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরদিন শনিবার বিকেলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে মধুখালী থানায় এজাহার দাখিল করেন। রাতে তা মামলা হিসেবে নেওয়া হয়। ওই মামলায় তাঁদেরই গ্রামের পরিমল কুমার রায়ের ছেলে পল্লব কুমারকে (১৯) গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

পুলিশের দাবি, ঘটনার রাতেই পল্লবকে আটক করা হয়। তখন বিশেষায়িত স্টিলের তৈরি লাঠি ও একটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়। এ দুটি আলামত ও আসামির স্বীকারোক্তিতে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা, সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) ইমরুল হাসান, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. নুরুজ্জামান ও তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোক্তার হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা তখন উপস্থিত ছিলেন।

রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি পুলিশের

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, ‘ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের’ এক পর্যায়ে আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। চুরির উদ্দেশ্যেই সে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

পল্লব কেন চুরি করতে গেল— এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য গিয়েছিল।’

পুলিশ সুপারের দাবি, পল্লব গাঁজা সেবন করে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন এবং সে নিজেও স্বীকার করেছে। এক সময় তাকে ফরিদপুরে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল।

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও স্টিলের লাঠি। ছবি: আজকের পত্রিকা
উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও স্টিলের লাঠি। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসামি যেভাবে শনাক্ত করে পুলিশ

পুলিশ সুপার বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা আমাদের জানায়, তাঁরা হামলাকারীকে নির্দিষ্ট করে চিনতে পারেননি, দেখলে চিনতে পারবেন। ভুক্তভোগীরা যখন অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আসেন, তখন তাঁরা একজনের নাম বলেছেন বলে অ্যাম্বুলেন্সের চালক (টুটুল) ও তাঁদের সঙ্গে আসা মজনু নামে একজন জানিয়েছেন। হাসপাতালে যাওয়ার পর পল্লবের নাম বলা হয়।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা যাকে ধরেছি, ঘটনার সঙ্গে তাঁর বক্তব্য এবং উদ্ধারকৃত আলামতের মিল আছে কি-না সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বাদী বলেছেন, তাদের বাড়ি উঁচু বাউন্ডারি ঘেরা থাকায় চোর বাড়ির পেছনের স্কুল দিয়ে প্রবেশ করতে পারে। পরে আসামিও জানায়, স্কুলের পাশে চিপাগলি দিয়ে গাছ বেয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সে।’

গ্রেপ্তারের পর ভুক্তভোগীদের সামনে আসামিকে উপস্থাপন করা হয়েছে কি না— এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসামি আমরা দেখিয়েছি, কিন্তু তাঁরা ওইভাবে বলেননি।’

তবে পল্লবকে সশরীরে ভুক্তভোগী আহতদের সামনে হাজির করা হয়নি। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে মোবাইল ফোনে ধারণ করা পল্লবের ছবি আহতদের দেখায়। ওই ছবি দেখেই তাঁরা ‘হামলাকারী পল্লব নন’ বলে শনাক্ত করেন।

আহত তিনজনকে কোপানো হয়নি, দাবি পুলিশের

পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, হামলায় আহত শ্যামলেন্দু বসু (৬৫), কাকলী বসু (৬০) ও প্রতিবেশী কিশোরী প্রীতি মালোকে (১৫) কোপানো হয়নি। তবে ‘মেডিকেল রিপোর্ট’ এলে চূড়ান্তভাবে জানা যাবে।

তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগীদের স্টিলের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। লাঠিটি পল্লব সঙ্গে করে নিয়ে আসে। শ্যামলেন্দু বসু তাকে ধরার চেষ্টা করলে পল্লব লাঠি দিয়ে তাঁকে তিনটি আঘাত করে। পরে অন্যদেরও আঘাত করে স্টিলের লাঠি ফেলেই পল্লব পালিয়ে যায়।

বিশেষ স্টিলের লাঠিটা পল্লব কোথায় পেল

আসামির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, নিজ গ্রাম ও পাশের গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় নেশা করতে গিয়ে নাকি এই লাঠি তাঁর পায়ে বাঁধে, এভাবে সে লাঠিটা পেয়ে যায়। এককথায়, এটা কুড়িয়ে পাওয়া লাঠি।

যিনি গ্রেপ্তার, তিনি হামলাকারী নন

গ্রেপ্তার আসামি নিয়ে ভুক্তভোগী ও বাদীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের বক্তব্য ভিন্ন হওয়ায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগী কাকলী বসু ও কিশোরী প্রীতি মালোর দাবি, ওই বাড়িতে পল্লব নয়, অন্য একজন প্রবেশ করেছিলেন, যিনি ওই বাড়িতে ভ্যানে করে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন। তিনি একই এলাকার রেজাউল মীরের ছেলে ইমরান মীর (১৮)।

মামলার বাদী সৌগত বসু বলেন, তাঁর মা (কাকলী বসু) ও প্রীতি মালোকে পুলিশ ঘটনার পরদিন পল্লবের ছবি দেখালে তাঁরা জানিয়েছেন, পল্লব হামলাকারী নন। বরং ইমরানের সঙ্গে হামলাকারী ব্যক্তির চেহারা, আকার-আকৃতিতে মিল রয়েছে।

কাকলী বসু বলেন, ‘ওই রাতে যে এসেছিল, সে বেশি লম্বা ছিল না। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের ও মাথায় বাটি ছাট (এক ধরনের স্টাইল) চুল ছিল। কিন্তু পুলিশ যাকে দেখিয়েছে, তাঁর মাথায় সামনের দিকে লম্বা চুল ছিল।’

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রীতি রোববার রাতে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিকে বলে, ‘পল্লবকে আমি চিনি। রাতে পল্লব আসেনি। ঠাকুমাদের বাসায় (সৌগতদের বাসায়) একটা লোক গ্যাস দিয়ে যেত, রাতে ওই লোকই এসেছিল।’

প্রীতি আরও বলে, ‘রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন আসছিলাম, তখন দাদু (শ্যামলেন্দু বসু) আহত অবস্থায় বারবার জানতে চাচ্ছিল, তাঁর সঙ্গে কী হয়েছিল। পল্লব এসেছিল কি না (পল্লব মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত)। তখন আমি বলেছিলাম, না। ওই সময় ড্রাইভার টুটুল ও যে আমাদের সঙ্গে এসেছিল, তাঁরা মনে করে, ঘটনাটি পল্লব ঘটিয়েছে। পরে তারাই পুলিশকে পল্লবের নাম জানায়। কিন্তু পল্লব চুরি করতে আসেনি।’

মামলার বাদী সাংবাদিক সৌগত বসু বলেন, ‘পুলিশ প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। গ্রেপ্তারকৃতের ছবি দেখে শনাক্ত না করার পরও কেন তাকে আসামি করা হলো, আমি বুঝতে পারিনি। পুলিশকে বলা হয়েছে আরও একজনের (ইমরান) নাম। আহতদের সবার মাথায় আঘাত থাকায় ঘটনার পর তাঁদের মধ্যে নাম ও চেহারা নিয়ে এক রকম দ্বিধা ছিল। এজন্য ঘটনার দিন আমাদের পক্ষ থেকে কেউ নাম বলেনি। পরদিন পুলিশ আমাদের জানায়, তাঁরা পল্লবকে আটক করেছেন। তখন আমরা ‘হামলাকারী পল্লব নয়’ বলেছি, ইমরানের কথাও বলেছি। আমরা পুলিশের মাধ্যমেই জেনেছি, ইমরান ফোন বন্ধ করে পলাতক আছেন।’

বাদী ও ভুক্তভোগীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তাঁরা সন্দেহ করল কি না করল, তার থেকে বড় কথা আমরা তদন্তে এবং বাস্তবতায় কী পেয়েছি। এছাড়া এজাহার দায়েরের সময় আমি বলেছিলাম, যাকে সন্দেহ করছেন, তাঁর নামটা দেন। কিন্তু তাঁরা নামটা দেননি।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘রাতে পুলিশকে তাঁরা (ভুক্তভোগীরা) এমন কিছু বলেননি। পরদিন সকালে তাঁর ছেলে (বাদী) জানায়, এখানে ইমরান নামে একজনের নাম এসেছে, তখন আমি বলেছি, আপনার মা এবং যারা সঙ্গে এসেছিল, তাঁরা পল্লবের নাম বলেছে।’

এজাহারে কারও নাম উল্লেখ না থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে সৌগত বসু বলেন, ‘আমরা চাইনি কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হোক। পুলিশ ঘটনার পর ব্যাপক তৎপরতা দেখিয়েছে। যখন যে তথ্য চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। পল্লবকে হামলাকারী নয় বলে মা (কাকলী বসু) ও প্রীতি শনাক্ত করার পর আমি নিজেও পুলিশকে জানিয়েছি। ইমরানের কথাও বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। ইমরান পলাতক সেটাও দেখছি। পুলিশ বলছে, পল্লবকে ঘুম থেকে আটক করা হয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব, যার চেহারা মা ও প্রীতি দেখে ফেলেছে, সে এমন ঘটনার পর বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকবে! আর যার প্রতি সন্দেহ, সে কিন্তু পালিয়েছে।’

সবাইকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে- পুলিশের এই বক্তব্যে সৌগত বসু বলেন, তাঁর বাবাকে প্রথমে লাঠি দিয়ে কপালের মাঝ বরাবর আঘাত করা হয়— সেটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তবে মাথায় আরও তিনটি ক্ষত আছে, যেগুলো লাঠির আঘাতের নয়, ধারালো অস্ত্রের কোপে চিড়ে যাওয়ার ক্ষত। তবে হামলাকারী তাঁর মা ও প্রীতিকে স্টিলের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। যে দা উদ্ধার করা হয়েছে, তাতেও রক্ত ছিল।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই ইমরান মীর নামে ওই যুবক পালিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ইমরানের পরিবারের অন্য সদস্যরাও বাড়িতে নেই বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জীবন বিশ্বাস নিশ্চিত করেছেন।

ইউপি সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে পুলিশ আমাকে ফোন দিয়ে পল্লবের বাড়ির ঠিকানা চায়। তখন পুলিশ এলে আমিও সঙ্গে যাই। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পল্লব ঘুমিয়ে রয়েছে। ওর বাবা জানায়, রাত ৯টায় বাড়িতে ফিরে এসেছে। এ ছাড়া সারা দিন মাঠে পেঁয়াজ লাগিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বারি লাউ-৪ চাষে সফলতা রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের

কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি 
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে মঙ্গলবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কৃষকের বাতিঘর হিসেবে পরিচিত রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র নতুন নতুন কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত গবেষণা কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে ২১টি সবজি ও ফলের জাত উদ্ভাবন করে কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি অঞ্চলে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবার ‘বারি লাউ-৪’ জাতের প্রজনন বীজ উৎপাদন ও চাষে সফলতা পেয়েছেন কেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে গবেষণা কেন্দ্রের এক একর জমিতে এই জাতের লাউ চাষ করা হয়। বীজ বপনের প্রায় ৭০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি গাছে ফলন আসে। বর্তমানে গবেষণা কেন্দ্রে সারি সারি লাউগাছে ঝুলছে লাউ।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বারি লাউ-৪ একটি তাপ সহনশীল জাত, যা সারা বছর চাষ করা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে চাষের জন্য এটি বিশেষভাবে উপযোগী। এই জাতের লাউ গাঢ় সবুজ রঙের এবং ফলের গায়ে সাদাটে দাগ থাকে। প্রতিটি গাছে ১০ থেকে ১২টি ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি ফলের গড় ওজন প্রায় ২ দশমিক ৫ কেজি। ফলের দৈর্ঘ্য ৪২ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যাস ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার।

তিনি আরও জানান, চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে লাউ সংগ্রহ করা যায়। এই জাতের জীবনকাল ১৩০ থেকে ১৫০ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ৮০ থেকে ৮৫ টন পর্যন্ত হতে পারে। তাপ সহনশীল হওয়ায় গ্রীষ্মকালেও চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হতে পারবেন।

ড. জিয়াউর রহমান বলেন, বারি লাউ-৪ দেশের সব এলাকাতেই চাষ করা সম্ভব। গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য ফাল্গুনের শেষে আগাম ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। চৈত্র মাসে বীজ বপন করে বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করা যায়।

এদিকে রাইখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক পাইদো অং মারমা বলেন, গত অক্টোবর মাসে তিনি এই গবেষণা কেন্দ্র থেকে বারি লাউ-৪-এর বীজ ও সার সংগ্রহ করেন। সেগুলো বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। এক বিঘা জমিতে তিনি লাউ চাষ করেছেন। বর্তমানে গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে। ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি: ফয়সালের বাবা-মা গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৬
ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে
ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: র‍্যাবের সৌজন্যে

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। তাঁরা হলেন হুমায়ুন কবির (৭০) ও হাসি বেগম (৬০)। একই সঙ্গে নরসিংদীর তরুয়ার বিল এলাকা থেকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ দুটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার এবং ফয়সাল নামের এক যুবককে আটক করার দাবি করেছে র‍্যাব।

র‍্যাবের মুখপাত্র উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

একই বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে র‍্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভোরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ হাউজিং এলাকা থেকে ফয়সালের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে নরসিংদীর তরুয়ার বিল এলাকা থেকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ দুটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার এবং ফয়সাল নামের এক যুবককে আটক করা হয়। তবে অস্ত্রটি সেখানে কীভাবে গেছে, বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জানায়নি র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে—গ্রেপ্তার দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে ফয়সাল করিম তৃতীয়। ফয়সাল ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় তাঁর বোন জেসমিন আক্তারের সপ্তম তলার বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন (১২ ডিসেম্বর) রাতে একটি কালো ব্যাগ নিয়ে তিনি ওই বাসায় ওঠেন। পরে ভবনের সরু জায়গায় ব্যাগটি নিচে ফেলে দেন।

র‍্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, ফয়সাল তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনের একটি ওই ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন এবং অন্যটি তার মা হাসি বেগমকে দেন। পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। অবস্থান নিরাপদ মনে না হওয়ায় তিনি আগারগাঁও থেকে মিরপুর হয়ে শাহজাদপুরে তার চাচাতো ভাই আরিফের বাসায় যান।

এ সময় ফয়সালের ব্যাগ বহনের জন্য তার বাবা হুমায়ুন কবির একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে দেন এবং কিছু অর্থও সরবরাহ করেন বলে র‍্যাবের দাবি। পরে ফয়সালের মা-বাবা তাঁদের ছোট ছেলে হাসান মাহমুদ বাবুলের কেরানীগঞ্জের বাসায় চলে যান।

এদিকে মঙ্গলবার পশ্চিম আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসার পাশের একটি ফাঁকা স্থান থেকে ১১টি গুলিভর্তি দুটি ম্যাগাজিন ও একটি চাকু উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‍্যাব-২।

র‍্যাব-২-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ফয়সাল ও তাঁর এক সহযোগী মোটরসাইকেলে করে ওই বাসা থেকে বের হন। সিসিটিভি ফুটেজে বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে ফয়সাল, তাঁর সহযোগী, মা ও ভাগনেকে দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান থেকে কিছু বের করতে দেখা যায়। পরে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ফয়সাল ও তাঁর সহযোগী একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে এলাকা ত্যাগ করেন।

গোপন তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার ভিত্তিতে ওই স্থান থেকে দুটি ম্যাগাজিন, ১১টি গুলি ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয় বলে র‍্যাব জানায়।

এ ছাড়া ফয়সালের বোনের বাসা থেকে ১৫টি চেক বই, ছয়টি পাসপোর্ট, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৮টি চেকের পাতা, দুটি মোবাইল ফোন ও একটি ট্যাব জব্দ করা হয়েছে।

হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতিতে রোববার রাতে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। মামলায় এর আগে ফয়সালের স্ত্রী, বান্ধবী, শ্যালক, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক সন্দেহে একজন, সহযোগী কবির এবং তাঁকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে সীমান্ত এলাকা থেকে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া শরিফ ওসমান বিন হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা এক আততায়ী চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। গুলিটি তাঁর মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর অবস্থা ‘অত্যন্ত আশঙ্কাজনক’। পরে সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চায়না কমলা চাষে বাজিমাত এমরানের, মাল্টাতেও মিলছে সাফল্য

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
কমলা পরিচর্যায় উদ্যোক্তা এমরান হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কমলা পরিচর্যায় উদ্যোক্তা এমরান হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর নিয়ামতপুরে চায়না কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন উদ্যোক্তা এমরান হোসেন। একই সঙ্গে মাল্টা চাষেও ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। এমরান উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের পাঁড়ইল গ্রামের আব্দুস ছামাদের ছেলে।

উদ্যোক্তা এমরান হোসেন জানান, তাঁর কমলা বাগানের গাছগুলোর বয়স প্রায় ছয় বছর। ৩৩ শতাংশ জমিতে লাগানো প্রায় ৬০টি গাছে এবার প্রচুর ফল ধরেছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব কমলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। বাগান দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে আগ্রহী মানুষ আসছেন এবং কমলা বাগান তৈরির বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন। বর্তমানে মণপ্রতি কমলা ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা থেকে ভালো মুনাফা পাচ্ছেন তিনি। আগামীতে আরও চার একর জমিতে কমলার বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথাও জানান এমরান।

এ ছাড়া তিনি দুই একর জমিতে মাল্টার বাগান গড়ে তুলেছেন। গাছভর্তি মাল্টা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হন। বাগানে আফ্রিকান মাল্টা ও সিকি মোজাম্বিক জাতের মাল্টা চাষ করা হয়েছে, যেগুলোর বাজারচাহিদা বেশ ভালো।

বাগানে কর্মরত শ্রমিক সুজন রায় জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাল্টা বাগানে কাজ করছেন। স্থানীয় পাইকারদের পাশাপাশি ঢাকার পাইকাররাও সরাসরি বাগানে এসে মাল্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিপণন নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। এই বাগানে নিয়মিত কাজ করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতে পারছেন তিনি।

কমলা বাগানের আরেক কর্মচারী রাজু বলেন, বাগান মালিকের একাধিক ফলের বাগান রয়েছে। তিনি কমলা বাগানে কাজ করেন। ডিসেম্বর মাসজুড়ে বাগানে কমলা থাকবে। ফলনের পরিমাণ দেখে ভালো লাভের আশা করা যাচ্ছে।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমরান হোসেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। পরিকল্পিতভাবে তাঁর বাগানগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষি খাতে অবদানের জন্য তিনি পুরস্কারও পেয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত তাঁর বাগান পরিদর্শন করা হচ্ছে।’

উদ্যোক্তা এমরান হোসেন বলেন, ‘কৃষির প্রতি আগ্রহ থেকেই বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে বাগান থেকে ভালো আয় হওয়ায় লিজ নেওয়া জমিতে আরও বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোটি টাকার সেতুতে উঠতে হয় মই দিয়ে

  • সেতু নির্মাণের বছর হতে চললেও সংযোগ সড়ক করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
  • যানবাহন দূরের কথা, বয়স্ক ও শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে উঠতে হয়।
রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৯
শ্রীপুরে মই বেয়ে সেতুতে উঠছেন পথচারী। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
শ্রীপুরে মই বেয়ে সেতুতে উঠছেন পথচারী। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর কোটি টাকা বরাদ্দে একটি সেতু নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে এই মইয়ের ব্যবস্থা করে।

প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোসিঙ্গা ইউনিয়নের চাওবন ও রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ডোয়াইবাড়ি গ্রামের মধ্যে সড়ক যোগাযোগের সুবিধার্থে সেরার খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে কাজ শুরু হয়ে আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়। প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়।

চাওবন গ্রামের বাসিন্দা নিজামুদ্দিন প্রতিবেদককে সেতু দেখিয়ে বলেন, ‘দেখুন তো, কত ফুট উঁচুতে সেতু। কত লম্বা মই। দেখলেই ভয় লাগে।’

স্কুলশিক্ষার্থী নাজমুল বলে, ‘এমন একটি সেতু নির্মাণ করা হলো, যে সেতুতে নিজে নিজে পার হতে পারি না। মা-বাবাকে সঙ্গে আনতে হয়। আমাদের এক সহপাঠী মই থেকে নিচে পড়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শরীরে রড ঢুকে মারাত্মক আহত হয়েছে। যে লম্বা মই বেয়ে উঠতে হয়, দেখলে ভয়ে পা কাঁপতে থাকে।’ বানু বেগম বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। সেতুটি হামাগুড়ি দিয়ে পার হতে হয়।’

প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিথুন এন্টারপ্রাইজের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। মাটির সংকটে সংযোগ সড়ক করা সম্ভব হয়নি।

শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজীব আহমেদ বলেন, ‘ঠিকাদারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ সড়কের নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত