Ajker Patrika

মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও কবি রফিক আজাদের বাড়ি ভাঙায় এমএসএফের নিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও কবি রফিক আজাদের বাড়ি ভাঙায় এমএসএফের নিন্দা

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ঘোষের বাজার এলাকায় চারুশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও কবি রফিক আজাদের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার সংস্থার সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পয়লা বৈশাখে ঢাকায় ‘ফ্যাসিবাদের’ মুখাকৃতি বানানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শিল্পীর (মানবেন্দ্র ঘোষ) বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও মানবেন্দ্র ঘোষ দাবি করেন, তিনি শুধু বাঘের মোটিফ তৈরি করেছেন, অন্য কোনো মুখাকৃতি নয়।

এমএসএফ মনে করে, মিথ্যা অভিযোগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এক শ্রেণি স্বার্থান্বেষীর শক্তির ইন্ধনে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এমএসএফ দেশের সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার, মানবিক মর্যাদার সুরক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মানবেন্দ্র ঘোষের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুততার সঙ্গে আইনানুগ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।

অপরদিকে কবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত রফিক আজাদের বরাদ্দ করা বাড়ির অংশবিশেষ গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ভেঙে ফেলায় এমএসএফ ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন মনে করে, কবি রফিক আজাদের বাড়ি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ না নিয়ে তা ভেঙে ফেলার চেষ্টা মানবাধিকারের পরিপন্থী। কবির স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি সংরক্ষণ করা হলে দেশের সংস্কৃতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে সংস্থাটি। পরিবারের নিরাপত্তা দেওয়াসহ কবির স্মৃতি সংরক্ষণ ও ধারণের জন্য বাড়িটির অংশবিশেষ স্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বেগমগঞ্জে গণপিটুনিতে যুবক নিহত

 নোয়াখালী প্রতিনিধি
গণপিটুনিতে নিহতের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
গণপিটুনিতে নিহতের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে ফখরুল ইসলাম মঞ্জু ওরফে বলি (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ সোমবার সকালে হাজীপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মান্দার বাড়ির দরজায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে নিহতের পরিবার বলছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পিটিয়ে ও কুপিয়ে বলিকে হত্যা করেছে।

নিহত বলি চৌমুহনী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খালাসী বাড়ির বদিউজ্জামানের ছেলে। পুলিশ জানায়, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে থানায় পাঁচ-ছয়টি মামলা রয়েছে। তিনি প্রশাসনের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী।

চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব জানান, আজ সকালে তাঁর ছেলে মিজানুর রহমান ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে চৌমুহনী বাজারের উদ্দেশে বের হয়। পথে উপজেলার মনতাজ স্যারের বাড়ির সামনে পৌঁছালে বলি ও তাঁর লোকজন মিজানকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নামিয়ে মারধর করে টাকাগুলো ছিনিয়ে নেন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন সেখানে গিয়ে বলিকে আটক করে গণপিটুনি দিলে তিনি মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে এবং নিহত বলির আড্ডাখানায় হামলা চালায়।

এদিকে নিহতের বড় বোন শাহনাজ আক্তার বলেন, আজ সোমবার সকাল ৬টার দিকে বলি তাঁর (শাহনাজ) মেয়েকে দেখতে তাঁদের বাড়িতে যান। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আবার নিজের বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মান্দার বাড়ির দরজায় পৌঁছালে আগে থেকে ওত পেতে থাকা ১৫-২০ জন কিশোর গ্যাং সদস্য তাঁকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নামিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি দাবি করেন, পূর্বশত্রুতার জেরে বলিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।  

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ বারী বলেন, অস্ত্র, বিস্ফোরকসহ নিহত বলির বিরুদ্ধে পাঁচ-ছয়টি মামলা রয়েছে। এলাকায় তাঁর বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে লোকজন তাঁকে গণপিটুনি দেয়। লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকরি দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি 
কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চবিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চবিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এক যুবকের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শংকর সাহা নামে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যুবকের দাবি, চাকরিটি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দিয়ে তাঁকে হেনস্তা করার ভয় দেখিয়েছেন।

অভিযুক্ত শংকর সাহা গোপালগঞ্জে জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

ভুক্তভোগী যুবক হলেন উপজেলার দক্ষিণ কুশলী গ্রামের ইয়ার আলী শেখের ছেলে আরিফুল শেখ (২৫)। গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরসহ কয়েকটি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন চাকরির জন্য আরিফুল স্থানীয় কয়েকজন মুরব্বিকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক শংকর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। এক দিন পর নগদ দুই লাখ টাকা দুজন সাক্ষীর মাধ্যমে গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক। তারপর নিয়োগটি স্থগিত হয়ে যায়। এরপর আরিফুল টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে নিয়োগের আশ্বাস দিতে থাকেন প্রধান শিক্ষক। কয়েক মাস পর প্রধান শিক্ষক শংকর সাহাকে টাকার জন্য চাপ দিলে তৎকালীন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপুকে দিয়ে হেনস্তা করানোর ভয় দেখান। আর এখন টাকা ফেরত চাইলে বর্তমান সভাপতি টুঙ্গিপাড়া সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দিয়ে হেনস্তা করানোর ভয় দেখান।

ভুক্তভোগী আরিফুল শেখ বলেন, ‘২০২৩ সালে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য প্রধান শিক্ষক শংকর সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন চাকরির জন্য পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ চান। পরে স্থানীয় দুজন সাক্ষীর মাধ্যমে দুই লাখ টাকা নেন শংকর সাহা। কিন্তু নিয়োগ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তৎকালীন সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপুর ভয় দেখাত। আর এখন বর্তমান সভাপতি এসি ল্যান্ড স্যারের ভয় দেখায়। টাকা ফেরতসহ দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক শংকর কর সাহার অপসারণ দাবি করি।’

দুই লাখ টাকা দেওয়ার সাক্ষী স্থানীয় মুরব্বি ফেরদৌস আলম বলেন, ‘আরিফুলের চাকরির জন্য প্রধান শিক্ষক শংকর সাহার সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার কথা হয়। তখন আরিফুলের পরিবার আমি ও আরেক মুরব্বি হাফিজ শিকদারের উপস্থিতিতে শংকর সাহাকে নগদ দুই লাখ টাকা দেয়। নিয়োগ স্থগিতের পর টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকেন আরিফুলকে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও প্রধান শিক্ষক তাতে সাড়া দেননি। আর তিনি টাকা নেওয়ার কথাও অস্বীকার করছেন। এখন টাকা ফেরত চাইলে প্রশাসন দিয়ে হেনস্তা করাসহ নানা রকম হুমকি দেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুশলী খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর সাহা চাকরির জন্য ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আরিফুল আমার বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল, সেইভাবে ওকে চিনি। কিন্তু চাকরির কথা বলে ওর কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি সময় না দেওয়ায় তিনবার চেষ্টা করেও নিয়োগটি সম্পন্ন করতে পারিনি। আর কাউকে কোনো ভয় দেখাইনি।’

টুঙ্গিপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আল-আমিন হালদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। যদি প্রধান শিক্ষক কাউকে প্রশাসনিক ভয় দেখিয়ে থাকে, তাহলে সেটাও অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনী ব্যালট ছাপাতে ৫৩১ টন কাগজ সরবরাহ কেপিএমের

কাপ্তাই ( রাঙামাটি) প্রতিনিধি
কর্ণফুলী পেপার মিলে কাগজ উৎপাদনের কাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্ণফুলী পেপার মিলে কাগজ উৎপাদনের কাজ চলছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট ছাপাতে এ পর্যন্ত ৫৩১ টন কাগজ সরবরাহ করেছে কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম)। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ৩৮৪ টন কাগজ সরবরাহ করা হবে। কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ গতকাল রোববার এ তথ্য জানান।  

নির্বাচনের ব্যালট ছাপাতে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কেপিএমের কাছ থেকে ৯১৫ কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস  (বিএসও)। এই কাগজের বর্তমান বাজারমূল্য ১১ কোটি ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭৮১  টাকা। আবার বিএসও থেকে  নির্বাচন কমিশন এই কাগজ কিনে নিয়ে ব্যালট পেপার ছাপাবে।  

গতকাল বেলা ১১টায় কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য নির্বাচন কমিশন কেপিএম মিলে ব্রাউন, সবুজ ও গোলাপি কালার কাগজের চাহিদাপত্র দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাগজ সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা সিংহভাগ কাগজ সরবরাহ  করেছি। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাগজ সরবরাহ করব। তবে কাপ্তাই লেকের পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় কাগজ উৎপাদন নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। কাগজ উৎপাদনে প্রচুর পানির প্রয়োজন; যা লেক থেকে ব্যবহার করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনটি মেশিন। এখন শুধু একটি মেশিন চালু আছে। একটি মেশিনে দিনে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিষমুক্ত বেগুন চাষে মুরাদের বাজিমাত

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বেগুন চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন কৃষক মুরাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বেগুন চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন কৃষক মুরাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কৃষক মুরাদ হালদার। এই বছর অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে অরগানিক বেগুন চাষ করেছেন তিনি। আর প্রথমবার বেগুন চাষ করেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।

মুরাদ উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের মৌভোগ গ্রামের একজন যুবক। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনটি প্লটের ৫৫ কাঠা জমিতে চার জাতের বেগুন চাষ করেছেন তিনি। এতে মোট উৎপাদন খরচ পড়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ১৮ কাঠার খেত থেকে তিনি ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে গেলে তিনটি প্লট থেকে সাত-আট লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

মুরাদ হালদার বলেন, ‘বেগুন চাষ করে এত লাভ হবে, কখনো ভাবিনি। আগামীতে দুই বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করব। সবচেয়ে বড় কথা, এই বেগুন অরগানিক ও বিষমুক্ত। কারণ, বেগুনের জমিতে কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়নি।’

গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মৌভোগ গ্রামে মুরাদের একটি ১৮ কাঠার বেগুন খেতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মণ বেগুন খেত থেকে তোলা হয়েছে। ৯ জন শ্রমিক বেগুনগুলো আকার অনুযায়ী গ্রেডিং করে বস্তায় ভরছেন। ঢাকা ও মাদারীপুর থেকে ট্রাকে পাইকারেরা এসেছেন বেগুন কিনতে। আশপাশের খেতে প্রতি কেজি বেগুনের পাইকারি দাম ৫০ টাকা হলেও মুরাদের খেতের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। বিষমুক্ত অর্গানিক ফসল হওয়ায় এই বেগুন সুস্বাদু এবং এর চাহিদা ও দাম বেশি বলে জানান পাইকার ইব্রাহীম শেখ। প্রতি পাঁচ থেকে সাত দিন পর এই খেত থেকে ২৫ থেকে ৩০ মণ বেগুন তোলেন মুরাদ। বাকি দুটি খেতের উৎপাদন শুরু হলে সপ্তাহে ৭০ থেকে ৮০ মণ বেগুণ পাবেন বলে জানান তিনি।

মুরাদের চাষকৃত বেগুন খেতগুলো পাশে ও ওপর থেকে জাল দিয়ে ঘেরা রয়েছে, যাতে সহজে পোকামাকড় ঢুকতে না পারে। তা ছাড়া পোকামাকড়ের প্রাকৃতিক বালাইনাশক হিসেবে কিউট্রাক ফাঁদ, ট্রাইকোডার্মা, স্টিকি ইয়োলো কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। রাসায়নিক সারের বদলে জমিতে জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে ও আগাছার প্রকোপ কমাতে মাটিতে মালচিং পেপার ব্যবহার করেছেন। ফলে সেচ খরচ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান মুরাদ।

মুরাদ তার তিনটি খেতে ভারতের উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ‘চক্র বিএন ৪২২’ জাত, হায়দরাবাদের ‘নবকিরণ’ জাত, উচ্চ মূল্যের ‘ভিএনআর ২১২’ জাত এবং গ্রিনবল জাতের বেগুন চাষ করেছেন। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে এই জাতের বেগুন চারা রোপণ করেছিলেন। এসব জাতের বেগুন আগাম ফসল ফলে এবং প্রতিটি গাছে দীর্ঘদিন বেগুন হয়। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব জাত নির্বাচন করেছেন।

মুরাদের সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক কৃষক তাঁর বেগুনখেত দেখতে আসছেন এবং তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। আগামী মৌসুমে একই পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করবেন বলে জানান স্থানীয় চাষি রবিন হালদার, শাহজাহান শেখসহ অনেকে।

উপজেলার নলধা-মৌভোগ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, ‘প্রথমবার মুরাদ হালদার বেগুন চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। তিনি কৃষি অফিসের পরামর্শে সনাতন পদ্ধতির বদলে আধুনিক ও আর্গানিক চাষ পদ্ধতি গ্রহণ করায় এ সাফল্য পেয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে কারিগরি সহযোগিতা ও নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ঠেকাতে চাষিরা সবচেয়ে বেশি বিষ প্রয়োগ করে, যা স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মুরাদ রাসায়নিক বিষ ছাড়া বেগুন উৎপাদন করেছেন। চাষি মুরাদ হালদারের সাফল্য দেখে অনেকেই বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত বেগুন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত