Ajker Patrika

গাজীপুরে বাবার আদর্শ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তিন কন্যা ও এক ছেলে

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০: ০২
গাজীপুরে বাবার আদর্শ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে তিন কন্যা ও এক ছেলে

রাজধানী লাগোয়া শিল্প নগরী গাজীপুরকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ ও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি মনে করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এ দেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রাম এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। দলটির ইতিহাসের অংশীদার আওয়ামী লীগের প্রয়াত অনেক নেতার মধ্যে গাজীপুরে রয়েছেন চারজন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন বাবাদের আদর্শের অনুসারী তিন কন্যা ও এক ছেলে। তাঁরা বাবার আদর্শ বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অপরদিকে জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতেই নারী প্রার্থী পেয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে আলাদা উৎসাহ।

এবারের নির্বাচনে বাবার উত্তরসূরি হিসাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা হলেন—গাজীপুর-৩ আসনে রোমানা আলি টুসি, গাজীপুর-৪ আসনে সিমিন হোসেন রিমি, গাজীপুর-৫ আসনে মেহের আফরোজ চুমকি ও গাজীপুর-২ আসনে মো. জাহিদ হাসান রাসেল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসনগুলো বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। এ চার উত্তরসূরির মধ্যে তিনজন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এবং একজন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকলেও আসনগুলোতে এসব প্রার্থীরা দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। এসব কারণে আসনগুলোতে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা জমে উঠেছে। ভোটারদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

গাজীপুর-২:

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শ্রমিক লীগের কিংবদন্তি নেতা, ভাওয়াল বীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের উত্তরসূরি মো. জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি এ আসনের ৪ বারের সংসদ সদস্য এবং সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবারের নির্বাচনে তাঁর সঙ্গে আরও ৬ জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের (ট্রাক) সঙ্গে।

কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি আগে কখনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন না।

এ আসনটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড (গাজীপুর সদর) ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড (টঙ্গী) এলাকা এবং গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট (গাজীপুর সদর) এলাকা নিয়ে গঠিত। জাহিদ আহসান রাসেলের বাড়ি টঙ্গী। কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের বাড়ি গাজীপুর অংশে। টঙ্গীর ভোট ভাগ না হলে রাসেল জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এখানে কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সমর্থন দিয়ে ব্যাপক প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ফলে এখানে নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

গাজীপুর-৩:

আসনটিতে দীর্ঘদিনে আওয়ামী লীগের তুমুল জনপ্রিয় নেতা ছিলেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট রহমত আলী। তিনি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের উদ্ভাবক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পিতার আদর্শের পথ ধরে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন রহমত আলীর কন্যা অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি। তিনি বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।

টুসি কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। নৌকা পাওয়ার পর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুলি জলিল, বর্তমান পৌর মেয়র আনিছুর রহমানসহ রহমত আলীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা বিপুল উৎসাহে টুসির পক্ষে রয়েছেন।

এখানে আরও প্রার্থী আছেন ৬ জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের (ট্রাক) সঙ্গে। মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এবার মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও সাবেক শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান। এখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি তাঁর হাতে গড়া। এ কারণে অধিকাংশ নেতা তার প্রতি বিশ্বস্ত। ফলে এখানে জয়ের লড়াই হবে তীব্র।

রুমানা আলী টুসি বলেন, ‘আমার বাবা স্বাধীনতার পর বহুদিন এ এলাকার মানুষের সেবা করেছেন, জাতীয় রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। আমি জয়ী হলে পিতার আদর্শ নিয়ে সব সময় মানুষের পাশে থাকব।

গাজীপুর-৪:

কাপাসিয়া আসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক, প্রথম প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদের জন্মভূমি। তাঁর প্রতি কাপাসিয়ার মানুষের রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা, মমতা ও ভালোবাসা। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাজউদ্দীন আহমদের উত্তরসূরি সিমিন হোসেন রিমি। রিমি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। রিমির ছোট ভাই সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ পদত্যাগ করলে ২০১২ সালের উপনির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি এখানকার সংসদ সদস্য। এবারও দল তার প্রতি আস্থা রেখে নৌকা তুলে দিয়েছে।

এখানে আরও প্রার্থী আছেন ৪ জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাজউদ্দীন আহমদের ভাগিনা, শিল্পপতি, বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আলম আহমেদের সঙ্গে। আলম আহমেদ দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

আলম আহমেদ বাছাইকালে ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়ন হারান। পরে উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে প্রতীক বরাদ্দের একদিন পর নির্বাচনী লড়াইয়ে ফিরে আসেন। আলম আহমেদ প্রতীক নিয়েছেন ঈগল। পরে রিমি নিজে পক্ষভুক্ত হয়ে ফুপাতো ভাইয়ের পক্ষে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায় বাতিলের আবেদন করলে গত ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের ফুল বেঞ্চ রিমির আবেদন না মঞ্জুর করেন। নির্বাচনী প্রচারণায় এটি এখন মূল ইস্যু। এখানে চলছে তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে ও ভাগিনার লড়াই। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লাসহ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত একটি অংশ আলমের পক্ষে।

সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘আমি আমার বাবা, জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে যাচ্ছি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নে গতি এনেছি। সঙ্গে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো, বাল্য বিয়েমুক্ত এলাকা গড়ে তোলা, সবার জন্য স্বাস্থ্য-শিক্ষার সুযোগ ও মাদকমুক্ত এলাকা গঠনে কাজ করেছি। এবার লক্ষ্য স্মার্ট দেশ গঠনে কাজ করা। এ লক্ষ্যে আমি আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছি।’

গাজীপুর-৫:

গাজীপুর-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শহীদ অ্যাড. ময়েজ উদ্দিনের উত্তরসূরি মেহের আফরোজ চুমকি। চুমকি ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে ২০০৯,২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এই আসনে নৌকার প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন দুই মেয়াদে। চুমকি এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বাবার পরিচয়ে রাজনীতিতে এলেও রাজনীতির মাঠে বিশ্বস্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল কমিটি তার হাতে গড়া। কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রসহ প্রায় সকল পদধারী নেতা তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত। তিনি এলাকায় শান্তি কন্যা হিসাবে পরিচিত।

এখানে আরও প্রার্থী আছেন পাঁচজন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানের (ট্রাক) সঙ্গে। আখতারউজ্জামান এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য, গাজীপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএস। তিনি এখাসকার মানুষের কাছে বেশ প্রিয়। এ কারণে কালীগঞ্জের প্রবীণ নাগরিক, সিনিয়র নেতা-কর্মী যারা বিভিন্ন সময়ে অবহেলিত হয়েছেন, তারা আখতারউজ্জামানের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘বাবার দেখানো পথেই রাজনীতির মাঠে বিচরণ করে চলছি। আমৃত্যু আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে নারীদের সঙ্গে নিয়ে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কাজ করতে চাই।’

এ ছাড়া গাজীপুর-৫ আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর সিটির ৩টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলার বাড়ীয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আখতারউজ্জামানকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ আসনে তাদের উভয়ের প্রচারণায় ব্যাপক জন সমাগম দেখা যায়। এ আসনে বর্তমান ও সাবেক দুই এমপির তীব্র লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত