Ajker Patrika

ঢাকায় চাঁদাবাজি চরমে

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৯: ০৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের নানা অঙ্গীকার এবং তৎপরতার পরও রাজধানীতে অপরাধের মাত্রা কমাতে দৃশ্যমান প্রভাব নেই; বিশেষ করে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য চরমে উঠেছে। চাঁদাবাজেরা এমনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে আতঙ্ক ছড়াতে গুলি করে তার ভিডিও ধারণ করার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। পুলিশের কর্মর্কতারা বলছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক আবহে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে ওঠায় চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বেড়েছে। সমস্যার সমাধানে ‘রাজনৈতিক সহায়তা’ দরকার বলে মত দিয়েছেন তাঁরা।

চাঁদাবাজদের গুলি করে ভিডিও ধারণের ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায়। চাঁদা চেয়ে না পেয়ে মনির আহমেদ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর অফিসে ঢুকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। একজন গুলি করার সময় তার ভিডিও করছিল সঙ্গের একজন। তৃতীয় আরেকজন মোটরসাইকেলে বসে অপেক্ষা করছিল। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বলেছে, জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

অপহরণের হুমকি দিয়ে আগেই চাঁদা চাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। স্কুলশিক্ষকের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও এর শিকার হয়েছেন। ১৭ মার্চ রাজধানীর গুলশানের একটি স্কুলের শিক্ষিকাকে ফোন করে চাঁদা চাওয়া হয়। অন্যথায় তাঁর সন্তানকে অপহরণের হুমকি দেন ফোন করা ব্যক্তি। ভুক্তভোগী নারী জানান, ফোনে তাঁকে বলা হয় থানা, পুলিশ, র‍্যাব করে কোনো কাজ হবে না। তাঁর ছেলে বা মেয়েকে তুলে নেওয়া হবে। তা এড়াতে চাইলে এখনই বলতে হবে কত দেওয়া হবে। টাকা না দিলে ছেলের লাশ পাওয়া যাবে। ছেলেপেলে বাসায় গিয়ে পাঁচটি করে গুলি করবে।

সন্ত্রাসীর নির্মম ভাষার হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে ওই শিক্ষিকা একপর্যায়ে ফোন রেখে দেন। তবে আবারও ফোন করে হুমকি দেওয়া হতে থাকে। দাবি করা হয় একটি মোটা অঙ্কের চাঁদা। ওই নারী এখনো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে ফোন নম্বর থেকে ওই নারীকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তা গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এক নারীর নামে নিবন্ধিত। তবে চাঁদা দাবি করা সন্ত্রাসী ফোন করেছিল মাদারীপুরে বসে। এখনো তাঁকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ওই শিক্ষিকা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন আতঙ্কে।

এভাবেই রাজধানীতে নানা কায়দায় চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। কখনো ফোনে, কখনো সামনাসামনি ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বাড়ির মালিক, উচ্চ বেতনের চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলেই দেওয়া হয় অপহরণ বা হত্যার হুমকি। কখনো কখনো সত্যি সত্যিই হত্যার ঘটনাও ঘটছে।

ডিএমপির সদর দপ্তরের অপরাধ বিশ্লেষণ বিভাগের (ক্রাইম অ্যানালাইসিস ডিভিশন) তথ্য বলছে, হুমকি দিয়ে পুরোনো কায়দায়ই চাঁদাবাজি চলছে। তবে হুমকির ধরনে পরিবর্তন এসেছে। কাকে কী বলে হুমকি দিলে কাজ হবে, দৃশ্যত সেটা নিয়ে ভেবেচিন্তে কাজ করছে সন্ত্রাসীরা। আর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবন ও বাণিজ্যিক আবাসন প্রকল্পগুলোতে। শিল্পকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও চাঁদাবাজির বড় শিকার।

ডিএমপির হিসাব বলছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত ৪৭ দিনে ঢাকা মহানগর পুলিশের ৮টি ক্রাইম বিভাগের ৫০টি থানায় ১১৩টি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রমনা বিভাগে ১১টি, লালবাগে ১১টি, মতিঝিলে ২২টি, তেজগাঁওয়ে ২০টি, মিরপুরে ১৭টি, গুলশানে ১৭টি, উত্তরা ৬টি এবং ওয়ারীতে ৮টি। একই সময়ে এসব মামলায় ১২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে ২০ জনকে। সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে মতিঝিল, তেজগাঁও এবং গুলশানে।

রাজধানীর উল্লিখিত তিন এলাকায় চাঁদাবাজি বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডিএমপির সদর দপ্তরের অপরাধ বিশ্লেষণ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব এলাকায় ব্যাংক-বিমা, শিল্পকারখানাসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বিত্তবান মানুষের বসবাস—দুটোই বেশি। অপরাধীরা এ জন্যই এসব এলাকাকে টার্গেট করে বেশি।

মোহাম্মদপুরের বছিলা এবং এর আশপাশের এলাকায় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে। এসব স্থানে প্রায়ই চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আসছে। পুলিশ জানায়, গত ২১ মার্চ বিকেলে বছিলার সিটি হাউজিংয়ে স্টকলট ব্যবসায়ী নাজিম খান অন্তরের কাছে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ফারুক হোসেন নামের এক সন্ত্রাসী। তাঁর সঙ্গে ওই এলাকার বড় সোহান, পিন্টুসহ সাত-আটজন ছিল। ভুক্তভোগী নাজিম খান সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে সেনাসদস্যরা গিয়ে ফারুককে গ্রেপ্তার করেন।

চাঁদাবাজির ঘটনা বর্ণনা করে নাজিম খান বলেন, চাঁদা চেয়ে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁকে পথে আটকে মারধর করে। বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানালে সেনাসদস্যরা ফারুককে গ্রেপ্তার করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ফারুকের বিরুদ্ধে থানায় আরও দুটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের রূপনগরের দুয়ারীপাড়ার একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না পেয়ে রাজমিস্ত্রি নিজাম উদ্দিনকে মারধর করে তারা। এই ঘটনায় রূপনগর থানায় স্থানীয় শফিকসহ ১০ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত শফিক রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নম্বর আঞ্চলিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। শফিকের বক্তব্যের জন্য কয়েকবার ফোন করা হলেও তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

ডিএমপির সূত্রই বলেছে, কাজ এগিয়ে নেওয়া নির্বিঘ্ন রাখতে নির্মাণাধীন ভবনের চাঁদাবাজির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সাধারণত থানায় অভিযোগ করেন না। অপরাধীদের সঙ্গে আপস করার চেষ্টা করেন। অল্পসংখ্যক লোক সাহস নিয়ে মামলা করেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চাঁদাবাজদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একই ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার পর ঢাকার ব্যবসাক্ষেত্রে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্মাণ খাতের অনেক ঠিকাদার হুমকির মুখে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীদের অপহরণ বা হামলার শিকার হতে হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তা এবং ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছুসংখ্যক শীর্ষ অপরাধীর মুক্তিও চাঁদাবাজির মাত্রা বাড়িয়ে তোলার জন্য দায়ী। ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতার হাতবদলের পর চাঁদাবাজদের মুখ পরিবর্তন হয়েছে মাত্র, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। গত জানুয়ারিতে এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজদের একটি তালিকা করে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। তবে তাতে আশানুরূপ ফল আসেনি। চাঁদাবাজেরা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, ক্ষমতার পালাবদলের পরের অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের জন্য দায়ী। পুলিশ চিহ্নিত অপরাধীদের যথেষ্ট সংখ্যায় গ্রেপ্তার করছে না। অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বের হয়ে লাপাত্তা রয়েছে। তাদের নামেও চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।

তবে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। ডিএমপি দাবি করেছে, পুলিশ ও র‍্যাব চাঁদাবাজি মোকাবিলায় জোরদার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মো. তালেবুর রহমান বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। ঈদ সামনে রেখে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে।’

পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলেও রাজনৈতিক সহায়তা ছাড়া এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধ করা কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি: আসামি গ্রেপ্তারের আশা ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশা একরকম ছেড়েই দিচ্ছে পুলিশ। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোর অনুমান, হামলাকারীরা ইতিমধ্যে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। গত শুক্রবারের হামলার ঘটনার পর থেকে র‍্যাব ও ঢাকা মহানগর পুলিশ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাঁরা কেউ সরাসরি হামলাকারী নন।

গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানব পাচারে জড়িত চক্রের দুই সহযোগী, সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবী। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

হাদির হত্যাচেষ্টাকে কেন্দ্র করে অভিযানে সর্বশেষ গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সামিয়া, শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ঘন ঘন ফোনে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ফয়সাল করিম মাসুদ যে হাদির ওপর হামলা চালানো ‘শুটার’ আর আলমগীর শেখ মোটরসাইকেলচালক, তা শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ ব্যবহার করে অবস্থান লুকিয়ে রেখেছিলেন। হামলার পর এই দুজন ঢাকা থেকে বেরিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পার হয়ে ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে চলে যান। তদন্তকারীরা বলছেন, মূল সন্দেহভাজনেরা সীমান্ত পার হওয়ার আগে ধাপে ধাপে ঢাকা থেকে হালুয়াঘাট পর্যন্ত গেছেন।

গত শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। হামলাকারীরা মোটরসাইকেলে হাদিকে অনুসরণ করে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়।

গতকাল বিকেলে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি অবশ্য জানান, সন্দেহভাজনদের কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন কি না—এমন কোনো তথ্য ইমিগ্রেশন ডেটাবেইসে পাওয়া যায়নি। ফয়সালের সর্বশেষ দেশের বাইরে যাওয়ার তথ্য অনুযায়ী, তিনি জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর বৈধভাবে দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সন্দেহভাজনদের বিষয়ে অভিযান চালিয়ে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে মানব পাচার চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিককে র‍্যাব গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। সীমান্ত থেকে আটক করা দুই ব্যক্তি হলেন সিবিয়ন দিও ও সঞ্চয় চিসম।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আটক করা দুই ব্যক্তি মূল হামলাকারীদের সীমান্ত পার করতে সাহায্য করেছেন। তাঁদের মাধ্যমে মূল সন্দেহভাজনদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় অংশ নেওয়া দুজনের মোবাইল ফোনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকার অদূরের একটি উপজেলা থেকে তাঁদের দুই সহযোগী মো. মিলন ও হাবিবুর রহমান হাবিবকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার দিন এই দুজনের সঙ্গে হামলাকারীদের শতাধিকবার ফোনে যোগাযোগ হয়। আর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আবদুল হান্নানকে র‍্যাব-২ গ্রেপ্তার করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করেছে।

পল্টন থানা-পুলিশ হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আবদুল হান্নান আদালতকে বলেন, মোটরসাইকেলটি তিনি একটি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। মালিকানা পরিবর্তনের জন্য দুই মাস আগে কল দেওয়া হলেও অসুস্থ থাকায় তিনি যেতে পারেননি।

ভারতের প্রতি আহ্বান

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে হাদির ওপর হামলাকারীরা ভারতে ঢুকে পড়লে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর বিপরীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে ভারতের ভূখণ্ড কখনোই ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা আশা করি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবৈধ ৫ সার কারখানা বর্জ্যে বিপাকে স্থানীয়রা

  • জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনুমোদনহীন সার কারখানা।
  • দুর্গন্ধে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

জৈব কৃষি এবং পরিবেশবান্ধব সারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুযোগ নিয়ে চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া ইউনিয়নে গত কয়েক মাসে পাঁচটি ছোট-বড় ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ও অন্যান্য জৈবসারের কারখানা গড়ে উঠেছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই উদ্যোগ গতি আনলেও, কারখানার অব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং সার লাইসেন্স না থাকায় আশপাশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হওয়ায় বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়েছে, যা স্থানীয়ভাবে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হওয়া সত্ত্বেও আয়কর বা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সরকারের কোষাগারে সঠিকভাবে জমা না দেওয়ায় রাষ্ট্র বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বলেও জানান তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নে কৃষি খামার, মডার্ন অ্যাগ্রো ফার্ম, চুয়াডাঙ্গা অ্যাগ্রো কম্পোস্ট, চুয়াডাঙ্গা ভার্মি কম্পোস্ট ও মা অ্যাগ্রো নামের পাঁচটি অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে সার উৎপাদন করা হচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় খোলামেলা পরিবেশে বিপুল কাঁচা গোবর ও জৈব পদার্থ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ফলে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে চুয়াডাঙ্গা অ্যাগ্রো কম্পোস্ট ও চুয়াডাঙ্গা ভার্মি কম্পোস্টের স্বত্বাধিকারী এরফান বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, আবেদন করেছি। তবে এখনো লাইসেন্স নেই।’ কৃষি খামার নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল বলেন, ‘এত নিয়ম আইন জানি না। এখন সরকার বন্ধ করতে বললে বন্ধ করে দেব।’

সরেজমিনে দেখা যায়, অননুমোদিত কারখানাগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড অনুসরণ করছে না। ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির প্রধান উপাদান হলো গোবর এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করলে এই কাঁচামাল এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ-পরবর্তী অব্যবস্থাপিত বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে মিশে যাচ্ছে। কারখানার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সরাসরি নিকটস্থ পুকুর, খাল বা কৃষিজমিতে ফেলার কারণে ভূপৃষ্ঠের জল এবং মাটির মারাত্মক দূষণ ঘটছে। এই বর্জ্যের কারণে জলজ প্রাণীরও ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচা গোবর ও জৈব পদার্থ খোলা জায়গায় দীর্ঘ সময় স্তূপ করে রাখলে বা সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা পচনের সময় তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। ফলে বায়ুর গুণমান নষ্ট এবং আশপাশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। দুর্গন্ধ ও পরিবেশদূষণের কারণে কারখানা পরিচালনাকারীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রায়ই বিরোধ তৈরি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘অনুমোদনহীন কারখানা চালু রাখা যাবে না। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আলুকদিয়ায় কয়েকটি অবৈধ সার কারখানার বিষয়ে শুনেছি। আমরা দ্রুতই সেখানে অভিযান চালাব। ওই এলাকায় কেউ ছাড়পত্র নেননি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাজারের নামে ফুটপাত ভাড়া বিএনপি নেতার

গনেশ দাস, বগুড়া 
ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে দোকান। সম্প্রতি বগুড়ার তিনমাথা রেলগেট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে দোকান। সম্প্রতি বগুড়ার তিনমাথা রেলগেট বাজার এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ায় বাজার ইজারার নামে মহাসড়কসংলগ্ন ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বগুড়া শহর বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। সেই নেতার নাম সায়েদুল ইসলাম সায়েদ। তিনি বগুড়া শহর বিএনপির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি।

জানা গেছে, বগুড়া পৌরসভা থেকে তিনমাথা রেলগেট বাজার ইজারা নিয়েছেন সায়েদুল ইসলাম সায়েদ। কিন্তু বাজার ছাড়াও মহাসড়কসংলগ্ন ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দোকান বসিয়ে প্রতিদিন প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা নেন তিনি।

জানতে চাইলে ফ্লাইওভারের নিচে বসানো দোকানদার রাসেল, জালাল ও ইদ্রিস জানান, ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে অস্থায়ী দোকান বসানোর অনুমতি পেতে এবং ব্যবসা চালাতে প্রতিদিন ৩০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। ইজারাদারের নিয়োজিত লোকজন পৌরসভার রশিদ দিয়ে চাঁদা নিলেও সেখানে টাকার অঙ্ক লেখা থাকে না। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দোকান সরিয়ে দেওয়ার হুমকি, এমনকি হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে দোকান করতে চাই। কিন্তু প্রতিদিন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেওয়া হয় না।’

বগুড়া পৌরসভার বাজার পরিদর্শক আব্দুল হাই বলেন, শহরের মধ্যে কিছু অস্থায়ী বাজার রয়েছে, যা পৌরসভা থেকে পেরিফেরি করা হয়নি। যেখানে বাজার বসে, সেই স্থানকে বাজার হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তিনমাথা রেলগেট বাজার বাংলা ১৪২৩ সনের জন্য ৫ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ইজারাদার ও বিএনপি নেতা সায়েদুল ইসলাম সায়েদ বলেন, ‘৫ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নেওয়া হলেও পৌরসভা থেকে বাজারের অবস্থান চিহ্নিত করে দেওয়া হয়নি। আয়কর ভ্যাট এবং অন্যান্য খরচ দিয়ে আমার ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ। বাজারের স্থান নির্ধারণ করা না থাকায় এবং বিনিয়োগ করা টাকা তুলতে ফুটপাত এবং ফ্লাইওভারের নিচে বসা দোকান থেকে ইজারার টাকা তুলতে হয়।’

চাঁদা আদায়ের রশিদ
চাঁদা আদায়ের রশিদ

এ বিষয়ে বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর বলেন, ‘ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচে দোকান বসানো আইনবিরোধী। সাসেক প্রকল্প থেকে এখনো মহাসড়ক আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তারপরও এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘মহাসড়কের পাশের ফুটপাত এবং ফ্লাইওভারের নিচে দোকান বাসানোর কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। হাইওয়ে পুলিশ এর আগেও এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছে। শিগগির আবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চুয়াডাঙ্গার দুই আসন: একটিতে লড়াইয়ের আভাস, অন্যটিতে এগিয়ে বিএনপি

  • নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচারে সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
  • কর্মসংস্থানে জোর বিএনপির প্রার্থীদের।
  • কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের অঙ্গীকার জামায়াতের।
মেহেরাব্বিন সানভী, চুয়াডাঙ্গা
মাহমুদ হাসান খান বাবু, মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, রুহুল আমিন, তৌহিদ হোসেন, মাসুদ পারভেজ রাসেল, মোল্লা ফারুক এহসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা ও শেখ সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদ হাসান খান বাবু, মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, রুহুল আমিন, তৌহিদ হোসেন, মাসুদ পারভেজ রাসেল, মোল্লা ফারুক এহসান, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা ও শেখ সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

একসময় চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনেই ছিল বিএনপির আধিপত্য। আগামী নির্বাচনেও দৃশ্যত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে এগিয়ে বিএনপি। তবে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জামায়াতের শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে দলটিকে। সেখানে দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। দুই আসনেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের পর থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের হাতে। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি মো. শরীফুজ্জামান শরীফ। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন জহুরুল ইসলাম। এনসিপি থেকে আলোচনায় আছেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মোল্লা ফারুক এহসান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তৌহিদ হোসেন। ২০ ডিসেম্বর জেলা নির্বাচন অফিস ঘোষিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, এখানে মোট ভোটার ৫ লাখ ৭ হাজার ৪৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৭১ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫০৩ জন।

মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘নির্বাচিত হলে চুয়াডাঙ্গা শহরে বাইপাস সড়ক, আলমডাঙ্গায় বড় হাসপাতাল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করব। শিল্পকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা এই অঞ্চলের অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্তদের জন্য একটি গ্যারান্টি হবে। ধানের শীষ বিজয়ী হলে আধুনিক ও জনবান্ধব মডেল শহর গড়ে তুলব।’

অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ সন্ত্রাসমুক্ত স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা, জনগণের এই তিন প্রত্যাশায় ন্যায়ভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা প্রস্তুত। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতের টিকিটে নির্বাচিত হন হাবিবুর রহমান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন হাজী মো. মোজাম্মেল হক। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এবার এখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি ও বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান সজীব। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) থেকে আলোচনায় আছেন শেখ সেলিম। আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ১৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩১ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৬৩ জন।

মাহমুদ হাসান খান বাবু ব্যবসায়ী নেতা হওয়ায় এলাকায় তাঁর যাতায়াত অপেক্ষাকৃত কম। তবে ভোটকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের নিয়ে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের রুহুল আমিন আগে থেকেই এলাকায় সক্রিয়। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এখানে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলের মধ্যে শক্ত লড়াই হবে।

মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘জেলার উন্নয়নে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চাই। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, প্রতি উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোকে ২০০ শয্যা করার বিষয়ে আমরা কাজ করব। বেকারত্ব দূরীকরণে দলীয় কর্মসূচির আলোকে কাজ করব।’

জামায়াতের রুহুল আমিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানুষের জন্য কাজ করেছি। নির্বাচনের জন্য আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। আমাদের প্রত্যাশা, এবার বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী নির্বাচন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত