Ajker Patrika

অস্বস্তি আর ভয়ের ছায়া উন্মুক্ত স্থানগুলোতে

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৫২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুনিরা মুনমুন আবৃত্তিশিল্পী। সপ্তাহখানেক আগের এক সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডি লেকের পাশে তিনি শিকার হয়েছেন এক চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার। কিছুতেই ভুলতে পারছেন না বিষয়টি। মুনিরা ও তাঁর এক বান্ধবী রবীন্দ্র সরোবরে লেকের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ কিছু অল্পবয়সী ছেলে এসে তাঁদের হেনস্তা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের গায়ে হাত পর্যন্ত তোলে। মুনিরারা সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। একপর্যায়ে তাঁরা উত্ত্যক্তকারীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে বাঁচেন।

খোদ রাজধানী শহরের বিভিন্ন অবকাশ কাটানো ও আড্ডার জায়গাগুলোতে গেলে এ ধরনের হয়রানির আশঙ্কায় থাকছেন নাগরিকরা। গত দুই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্র সরোবর, রমনা পার্ক ও হাতিরঝিল এলাকায় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব জায়গায় এসে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে উন্মুক্ত স্থানে একটু স্বস্তির সময় কাটাতে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। নারীরা, বিশেষ করে রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে পড়ছেন নানা ভোগান্তিতে।

ধানমন্ডি লেকের পাশে হেনস্তার শিকার আবৃত্তিশিল্পী মুনিরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এখন কী করব? কোথাও গেলে নিরাপদ না। সারাক্ষণ ভয় কাজ করে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা এমনই।’

থিয়েটারকর্মী জান্নাত শ্রাবণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নাটকের মহড়া দেন। বন্ধু, সতীর্থদের সঙ্গে অদূরেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘ছবির হাটের’ পাশে নিয়মিত আড্ডা দেন। ইদানীং সেই আড্ডা কম বসছে। জান্নাত বললেন, ‘বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলার যে অবস্থা তাতে কোনো পার্কে বসা কিংবা রাস্তায় চলাচল আমি একটুও নিরাপদ মনে করি না। একা বের হলেই মনে হয়, এই বুঝি খারাপ কিছু ঘটল। প্রতিদিন কারও না কারও খারাপ অভিজ্ঞতা হচ্ছে তো। সব সময় আতঙ্কে থাকি।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সন্ধ্যায় প্রায়ই গানের আড্ডায় থাকেন মিজান বকশি। তিনিসহ কর্মজীবী বন্ধুদের একটা দল কাজ শেষে সন্ধ্যায় একটু বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য উদ্যানে আসেন। কিছু গান আর আড্ডার পরে বাসায় ফেরেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মিজান বললেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বর্তমানে যে অবস্থা

তাতে আমাদেরই ভয় করে। যেখানে সেখানে লোকে ছিনতাইকারীর হাতে পড়ছে। রাত বেশি হলে ভয় লাগে। আমাদের সঙ্গে কোনো মেয়ে সহকর্মী থাকলে এখন বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিই।’

স্নিগ্ধা সাহা পুরান ঢাকায় থাকেন। রমনা পার্কে একটি বেঞ্চে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীরা সবচেয়ে অনিরাপদ অবস্থায় আছে। স্নিগ্ধা জানালেন, আগে কখনো কখনো দরকারে রাত ১২টার পরেও বের হয়েছেন। সন্ধ্যার পর দেরি করে বাসায় ফিরেছেন। তখন মনে এত ভয় ছিল না। গত কয়েক মাস বাইরে গেলে পরনে গয়না রাখেন না। দরকারি কেনাকাটার জন্যও টাকা সঙ্গে রাখতে ভয় লাগে। ‘রিকশার পাশ দিয়ে জোরে কোনো বাইক চলে গেলেই ব্যাগ শক্ত করে ধরি। মনে হয় ছিনতাইকারী না তো!’, বলেন স্নিগ্ধা।

আক্ষেপ করে পুরান ঢাকার এ বাসিন্দা বললেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশের ওপর তো কোনো ভরসাই নেই।... কিছু হলে নারীদের ওপরই দোষ পড়ে। তারা রাতে রাস্তায় কেন বের হয়েছে–এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।’

হাতিরঝিল এলাকায় কথা হয় তরুণ-যুবকদের একটি দলের সঙ্গে। তাঁদের কেউ চাকরিজীবী, কেউ শিক্ষার্থী। লেকের পাশে বসে দলটি গান করে। তাঁদের সঙ্গে আলাপ হলো। এই তরুণেরা মত দিলেন, উন্মুক্ত স্থানের নিরাপত্তাব্যবস্থা জরুরিভিত্তিতে বাড়ানো দরকার। তা না হলে নিরাপদে সময় কাটানোর জায়গাগুলোতে আসতে দ্বিধা করবে মানুষ। দলটিতে গিটার বাজান ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহসিন মাহবুব। তিনি বললেন, ‘ঢাকায় আমাদের দম ফেলার জায়গায় এমনিতেই অল্প। যে জায়গাগুলোতে মানুষ একটু বিশ্রাম কিংবা বিনোদনের জন্য বসে, সেগুলো যদি অনিরাপদ হয়ে যায়, তাহলে তারা যাবে কোথায়? আইনশৃঙ্খলার দিকে সরকারের কড়া নজর দেওয়া দরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত