Ajker Patrika

লিবিয়ায় মাফিয়া-দালাল চক্রের দ্বন্দ্ব, ফরিদপুরের দুই যুবককে ‘গুলি করে হত্যা’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
নিহত হৃদয়ের ছবি হাতে মা বিলকিস বেগমের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহত হৃদয়ের ছবি হাতে মা বিলকিস বেগমের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

অবৈধপথে ইতালি যাওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে ফরিদপুরের দুই যুবককে হত্যার ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরিবারের অভিযোগ, ইতালি যাওয়ার জন্য প্রত্যেক পরিবার দালাল চক্রকে ১৬ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু সেই টাকা লিবিয়ার মাফিয়াদের দেওয়া হয়নি বলে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা করে। হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাংলাদেশি দালাল চক্র গত ৫ দিন যাবৎ বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় এ দুই যুবকের পরিবারের কাছে। পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার মারা যাওয়ার বিষয়টি হয় পরিবার।

নিহত দুই যুবকের মধ্যে হৃদয় হাওলাদার (২৬) নামে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশের ছবি দেখে শনাক্ত করেছেন তাঁর বাবা মিজানুর রহমান মিন্টু হাওলাদার। অপর যুবক আকাশ হাওলাদার ওরফে রাসেলের (২২) মৃত্যুর খবর তাঁর বাবা মজিবর হাওলাদারকে জানায় দালাল চক্র। কিন্তু রাসেলের লাশ কোথায় আছে সেটি জানায়নি দালাল চক্র। নিহত দুই যুবক ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের বাসিন্দা।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন হৃদয় ও ব্যাসেল। ওই দিন রাত ৮ টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে পৌঁছান মিশরে। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি রাতে পরিবারের সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। গতকাল তাঁদের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।

স্থানীয় ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটি দালাল চক্রের মাধ্যমে লিবিয়ায় পৌঁছান তাঁরা। প্রথমে ওই এলাকার দালাল চক্রের সদস্য আনোয়ার মাতুব্বরের মাধ্যমে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় এনে আনোয়ার মাতুব্বর তাঁর দূরসম্পর্কের শ্বশুর মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মোল্লাদি গ্রামের শহীদ শেখের হাতে তুলে দেন। এরপর শহীদ শেখ লিবিয়ার বাসিন্দা হামেদ আল গাম্বী নামে এক দালালের হাতে তুলে দেন। কিন্তু হামেদ আল গাম্বীকে টাকা না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে একাধিক বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার।

আজ শনিবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করছেন। নিহত হৃদয় হাওলাদারের মা বিলকিস বেগম ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন। পাশে বসে আছেন ছোট বোন ও বাবা। ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর, অঝোরে ঝরছে তাঁদের চোখের পানি।

তিন ভাই বোনের মধ্যে হৃদয় ছিলেন মেজ। তিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসির গণ্ডি না পেরোতেই বাবার কাছে বায়না ধরেন ইতালি যাবেন। হৃদয়ের বাবা মিন্টু হাওলাদার জানান, ছেলেকে কোনোভাবেই বোঝানো যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে ওই এলাকার রাজ্জাক মাতুব্বরের ছেলে আনোয়ার মাতুব্বরের মাধ্যমে তাঁকে ইতালি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

মিন্টু হাওলাদার জানান, ছেলের সঙ্গে গত ২২ জানুয়ারি তাঁর শেষ কথা হয়। এরপর আর কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। তখন আনোয়ারের বাড়িতে গিয়ে জানালে সে বলে, ‘বোট (নৌকা) ডুবে গেছে।’ পরে তিনি বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, লিবিয়া থেকে কোনো নৌকা ছাড়েনি। সেখানকার একটি সাগর পাড়ে নিয়ে অনেক বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ‘একটি ফেসবুক পেজে কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে আমার ছেলের একটি ছবি পাই। ছবিতে দেখা যায়— আমার ছেলের বুকের ভেতর দিয়ে গুলি বের হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। ওরা আমার ছেলের পিঠের দিকে গুলি করে।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আমরা দালালদের ১৬ লক্ষ টাকা দেই। কিন্তু সেই টাকা মাফিয়াদের দেয়নি ওরা। এ নিয়ে দালালদের সঙ্গে ওই দেশের মাফিয়াদের গন্ডগোল হয়। পরে অনেককে ধরে নিয়ে গুলি করে মাইর‌্যা ফেলে।’

এদিকে ‘লিবিয়ার গেম খবর’ নামে ওই ফেসবুক পেজে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের পাড়ে একাধিক লাশ পড়ে আছে। কারও লাশ বালুর নিচে অর্ধেক চাপা, কারও লাশ আবার সাগরে ভাসছে। ওই নৌকা ডুবির ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, লিবিয়ার বেনগাজি আল আকিলা এলাকায় (ব্রেগার পশ্চিমে) ১৮ জন বাংলাদেশির মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

নিহত হৃদয় হাওলাদারের বাড়ি থেকে একটু দূরেই আকাশ হাওলাদার ওরফে রাসেলদের বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একই দৃশ্য। শোকে স্তব্ধ পরিবারের সদস্যরা। বসবাসের একমাত্র সম্বল ভিটেমাটি ও কিছু চাষের জমিসহ গয়না ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১৬ লাখ টাকায় ছেলের বায়নায় তাঁকে ইতালি পাঠান বাবা মজিবুর হাওলাদার।

তিনি বলেন, ‘এলাকার অনেকেই লিবিয়ায় গেছে। এসব দেখে আমার ছেলে বায়না ধরে সে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাবে। পরে স্থানীয় আনোয়ার মাতুব্বরের মাধ্যমে জমিজমা বিক্রি করে ১৬ লাখ টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দেই। পরে গত ২৪ জানুয়ারি দালালেরা ফোন করে বলে, ওদের নৌকা ছেড়ে দিয়েছে। ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে ইতালি পৌঁছাবে। কিন্তু দুই দিন পার হয়ে গেলেও ছেলের কোনো খোঁজ পাইনি। পরে দালাল বলে, দুই-তিন ঘণ্টা নৌকা চলার পরে নৌকায় বিস্ফোরণ হয়। কোস্টগার্ড উদ্ধার করে ওদের হাসপাতালে নিয়ে গেছে। তখন আমি বলি, হাসপাতালে গিয়ে আমার ছেলেকে দেখান। কিন্তু ৫ দিন হয়ে গেলেও তারা আমার ছেলের খোঁজ দিতে পারেনি। এরপর জানতে পারি, রাসেল মারা গেছে।’

সন্তানদের লাশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানান নিহত দুই পরিবারের সদস্যরা। তারা স্থানীয়দের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান এবং দালাল চক্রের বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে আনোয়ার মাতুব্বরদের বাড়িতে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন জানতে চাইলে পরিবার সে তথ্য দেয়নি। এ সময় আনোয়ার মাতুব্বরের ভাই আবু তারা মাতুব্বর দাবি করেন, আনোয়ার নয়, শহীদ শেখের মাধ্যমে তাঁদের ইতালি পাঠানো হয়েছে। তাঁর ছেলে সোহেল মাতুব্বরও ওদের ইতালি যাচ্ছিলেন বলে জানান আবু তারা মাতুব্বর। কিন্তু সেদিনের পর থেকে তাঁর ছেলেও নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ভাঙা থানার ওসি মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘লিবিয়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো কোন লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ দিলে দালালচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতার ঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগ, শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ তিন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে জ্বলছে ঘর। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুরে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আগুনে আয়েশা বেগম (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন বেলাল হোসেন এবং তাঁর আরও দুই শিশুসন্তান।

বেলাল হোসেন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধ দুই শিশু বীথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দগ্ধ শিশুদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, ভবানীগঞ্জের চরমনসা এলাকায় নিজের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন বেলাল হোসেন। গভীর রাতে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বৃত্তরা। মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ঘুমন্ত শিশু আয়েশা দগ্ধ হয়ে মারা যায়। দগ্ধ হন বেলাল হোসেন এবং তাঁর আরও দুই মেয়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তিনজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার দাস বলেন, এক শিশুকে মৃত এবং অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অরূপ পাল বলেন, বেলাল হোসেনের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুই শিশুর শরীর ৭০ থেকে ৮০ শাতংশ পুড়ে গেছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক শিশু মারা গেছে। আরও তিনজন অগ্নিদগ্ধ। তবে আগুনের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এটি পরিকল্পিতভাবে নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সড়কে ঝরল খালা-ভাগনের প্রাণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাবনার ঈশ্বরদীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঈশ্বরদী শহরের স্কুলপাড়ায় ঈশ্বরদী-লালপুর-বাঘা-বানেশ্বর আঞ্চলিক মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের ঝাউদিয়া এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে শাকিব হোসেন (২২) এবং শহরের পিয়ারাখালী এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী শিরিনা বেগম (৪৫)। নিহত ব্যক্তিরা সম্পর্কে খালা ও ভাগনে ছিলেন। তাঁরা দুজনই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল বিকেলে লালপুর থেকে যাত্রী নিয়ে একটি অটোরিকশা ঈশ্বরদী শহরে আসছিল। অটোরিকশাটি শহরের স্কুলপাড়ার মহাসড়কে এলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি অটোরিকশার দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে অটোরিকশার চালক পালিয়েছেন। এ ব্যাপারে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শরীয়তপুরে এনসিপির মশাল মিছিল

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৩
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল
শরীয়তপুর জেলা শহরে এনসিপির মশাল মিছিল

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যার প্রতিবাদে শরীয়তপুর জেলা শহরে মশাল মিছিল করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শহরের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ চত্বর থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় হাদি হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা।

এনসিপির শরীয়তপুর জেলার সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার বলেন, ‘হাদি হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভিন্নমত দমন ও রাজনৈতিক কণ্ঠরোধের ধারাবাহিকতারই অংশ এই হত্যাকাণ্ড। দিনদুপুরে খুনিরা গুলি করে কীভাবে পালিয়ে গেল? এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা অবিলম্বে এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, ‘এটি শুধু একজন ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যার বিচার না হলে তরুণ সমাজ রাজপথে আবারও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’

বিক্ষোভে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাণিজ্য থমকে আছে রেললাইনের অভাবে

  • ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি
  • সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার বহুল প্রতীক্ষিত রেললাইনের নির্মাণকাজ এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে। এক যুগ আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গেল মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরাবাসী বলছে, শত বছরের প্রতীক্ষিত রেললাইন নির্মিত হলে একদিকে যেমন সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকশিত হবে, অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে খরচ কমায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ ভাইসরয় সাতক্ষীরাকে রেললাইনে সংযুক্ত করে সুন্দরবন পর্যন্ত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। ১৯৫৮ সালে সাতক্ষীরা-ভেটখালি সড়ক নির্মাণের সময় জমি অধিগ্রহণ করেও নির্মিত হয়নি রেললাইন।

দীর্ঘকাল পরে ২০১০ সালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক জনসভায় তৎকালীন সরকারপ্রধান নাভারণ-সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ রেললাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৩ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয় অস্ট্রেলিয়ার ক্যানারেইল কোম্পানি লিমিটেড। সম্ভাব্যতা যাচাই করতে খরচ হয় ১১ কোটি টাকা। সম্ভাব্যতা ম্যাপে ৯৮ কিলোমিটার রেললাইনে ৮টি স্টেশনের প্রস্তাব রাখা হয়।

এরপর আবারও থেমে যায় রেললাইন নির্মাণের উদোগ। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রেললাইন স্থাপনের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাভারণ-সাতক্ষীরা রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে যশোর রেলওয়ের পক্ষ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এরপর গত মাসে যশোরের নাভারণ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ৫টি স্টেশনযুক্ত ৪২ কিলোমিটার রেললাইনের ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরায় ২২ লাখের বেশি মানুষের বাস। এ জেলা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। সুন্দরবন, চিংড়ি, আম ও ভোমরা বন্দরের কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, নৌপথ ও আকাশপথে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই জেলাবাসীর। রেললাইন নির্মিত হলে মৎস্য খাতের নতুন দিকের সূচনা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নূর খান বাবুল বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দিই, সে ধরনের উন্নয়ন চোখে পড়ে না।’

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, কলকাতা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। তাই রেললাইন হলে ভোমরায় ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আফরোজা আখতার বলেন, ‘জিআই পণ্য আম, চিংড়ি এবং ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহনের জন্য সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণ জরুরি। আমি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেললাইন নির্মাণের জন্য যত প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ ও সাবেক মেয়রের বাড়িতে আগুন

ময়মনসিংহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা: অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

হাদির মৃত্যু ঘিরে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র: বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত