Ajker Patrika

প্রেমিকা-প্রেমিককে নির্যাতন করছিল কিশোর গ্যাং, উদ্ধারে গেলে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে পুলিশকে এলোপাতাড়ি কোপ

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪০
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বেড়িবাধ সংলগ্ন আদাবরের শ্যামলী হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বেড়িবাধ সংলগ্ন আদাবরের শ্যামলী হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

আদাবরে এক প্রেমিক যুগলকে অপহরণ করে মুক্তিপণ নিতে চেয়েছিল কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার শিকার হয় আদাবর থানা-পুলিশ। এতে তিন পুলিশ আহত হন। এই ঘটনার পর পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী ওই এলাকায় অভিযান চালায়। রাতের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে। তাদের মধ্যে ৫ জনকে পুলিশের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, বাকিদের মোবাইল কোর্টে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর বেড়িবাধ সংলগ্ন আদাবরের শ্যামলী হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আদাবর থানার কনস্টেবল ও গাড়িচালক আল আমিন, কনস্টেবল রায়হান ও নাজমুল আহত হন। তাদের মধ্যে কনস্টেবল আল আমিনের আঘাত গুরুতর। তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এ চিকিৎসাধীন।

সোমবার রাতে যা ঘটেছিল

শ্যামলী হাউজিংয়ের ৩ নম্বর সড়কের ২১৫/১৬ নম্বর তিন তলা বাড়ি। এটি গাবতলী ও সদরঘাট বেড়িবাধ সংলগ্ন। এলাকাটি বালুরমাঠ হিসেবে পরিচিত। বাড়ির মালিক শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি সেখানে থাকেন না। মো. মিলন ও তার স্ত্রী তাহমিনা বেগম বাড়িটির দেখাশোনা করেন। বাড়িটির নীচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ছোট ছোট ৪৬টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে নিম্মআয়ের মানুষ ভাড়া থাকেন। তেমনি একটি পরিবার ভবনটির তৃতীয় তলায় তাদের এক ষোড়শী মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকেন। মেয়েকে বাসায় রেখে ওই তরুনীর বাবা-মা তাদের উত্তরবঙ্গের বাড়িতে যায়। বাবা–মার অনুপস্থিতিতে ওই তরুনীর প্রেমিক পলাশ বাসায় আসেন। বিষয়টি টের পেয়ে যায় স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তারা ওই বাড়িতে ঢুকে তরুনী ও তরুণের ছবি তোলে, ভিডিও করে। তরুণকে মারধর করে। সন্ত্রাসীরা শ্লীতাহানীর চেষ্টা করে তরুণীর। কিছুক্ষণ পর ছেলে বন্ধু পলাশকে নিয়ে চলে যায় তারা।

বাড়িটির ম্যানেজার মিলনের স্ত্রী তাহমিনা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়ে ও ছেলের প্রেমের সম্পর্ক। বিষয়টি জানে তাদের পরিবার। বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে। ছেলে কখন এই বাড়িতে ঢুকছে, তা তাঁরা টের পায়নি। তবে পরে জানতে পেরেছি, তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।’

পলাশকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ধরে নিয়ে পাশের আরেকটি বাড়ির তৃতীয় তলার ছাদে নিয়ে যায়। এই বাড়িটি মূলত কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা। এই বাড়ির মালিক মালেক নামে এক ব্যক্তি। তিন তলার বাড়ির নিচতলায় রিকশার গ্যারেজ। এই গ্যারেজে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সারাদিন আড্ডা দেয়। মাকদ বিক্রি করে এবং মাদক রাখে।

ভাঙচুর করা হয় পুলিশের টহল গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙচুর করা হয় পুলিশের টহল গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরজমিনে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার সব দোকান বন্ধ। সড়কে পরে আছে ছোপ ছোপ রক্ত। কেউ ভয়তে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। পুরো এলাকায় আতঙ্ক। পলাশকে যেখানে আটকে রাখা হয় সেটি লম্বা একটি বাড়ি। এই জমির মালিক স্থানীয় কাসেম নামের এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে মালেক নামে একজন মাটি ভাড়া নিয়ে ইটের ঘর তুলে রিকশার গ্যারেজ, দোকান ও বাসাবাড়ি তৈরি করেছেন। এই ভবনটির সামনে রয়েছে আরও একটি ইটের তৈরি তিনতলা ভবন। সেটির নীচেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজ। সেই গ্যারেজ ও ভবনের মালিক মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। দুই ভবনের সরুপথে দিনের বেলাতেও অন্ধোকার। সেখানে নিয়েই পলাশকে প্রথমে মালেকের গ্যারেজে নিয়ে আটকায়। পরে ভবনের তৃতীয় তলার ছাদে ওঠানো হয় তাকে। পলাশ ও তার পরিবারের কাছ থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মোটা অংকের টাকা চেয়েছিল। ভবনটির নীচে রিনা বেগম নামে এক নারী ছোট্ট চায়ের দোকান করে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মাদকের স্পট পরিচালনা করেন।

ঘটনার বিষয়ে রিনা বেগম বলেন, ‘আমি সাড়ে ৫ বছর ধরে ভবনের নিচে চা বিক্রি করি। গতকাল অনেক ছেলেপেলে দৌড়াদৌড়ি করেছে। সেটি দেখলেও ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাইনা।’

পলাশকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তুলে নিয়ে যাওয়ার পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে স্থানীয়রা জানান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আদাবর থানার এসআই ইব্রাহীম খলিলের নেতৃত্বে তিনজন পুলিশ আসে ঘনাস্থলে। তারা এসে পলাশকে উদ্ধার করে। তাকে নিয়ে সেই মেয়েটির বাসার সামনে আসেন। অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটকও করে পুলিশ। তাদের নিয়ে থানায় যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশের গাড়িতে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেয়। চাপাতি ও সামুরাই দিয়ে গাড়িতে এলোপাতারি কোপাতে থাকে। এতে কনস্টেবল ও গাড়ি চালক আল আমিন গুরুতর আহত হন। পুলিশ দৌড়ে বিভিন্ন দিকে আশ্রয় নিতে থাকে। তবে গাড়িচালক আল-আমিন বের হতে পারেননি। তাকে তিন চারজন মিলে কোপাতে থাকে, এতে তার ডান হাতের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগে। সব দোকানপাট মূহুর্তে বন্ধ হয়ে যায়। সবাই বাড়ির গেট বন্ধ করে দেয়। পুলিশ কনস্টেবল আল আমিন তখন বাঁচাও বাঁচও বলে চিৎকার করে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছিল। তিনি দৌড়ে শহীদুলের বাড়ির নীচ তলার লোকমানের ফার্মেসিতে আশ্রয় নেয়। সেখানেও ঢুকে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ফার্মেসির সার্টার ভেঙে ফেলে।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, ‘পুলিশ ছিল মাত্র তিনজন, সন্ত্রাসীরা ছিল প্রায় ৫০-৬০ জন। তাদের সবার হাতে চাপাতি ছিল। যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে। পুলিশকে হামলা করে দ্রুত সন্ত্রাসীরা বেড়িবাধের দিকে চলে যায়।’

এরপর আহত পুলিশ সদস্যদের স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। বিষয়টি আদাবর থানা-পুলিশ জানার পর সেখানে যায় আদাবর থানার অন্য টহল পুলিশের গাড়ি, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব। রাত ২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১০২ জনকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। আহত দুই কনস্টেবল রায়হান ও নাজমুল চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি আল আমিন।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

হামলার বিষয়ে এসআই ইব্রাহিম খলিল বলেন, হামলার নেতৃত্বে ছিল কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা জনি ও রনি। তাদের সঙ্গে ছিলেন নাজির, ওসমান, দাঁতভাঙা সুজন, কবজিকাটা হৃদয় ও মাদক ব্যবসায়ী রাজুসহ আরও কয়েকজন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারা পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে জখম করে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

‎এই ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন এসআই ইব্রাহিম খলিল। আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সবাই স্থানীয় বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে পাওয়া অস্ত্রসামগ্রী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে নতুন ভোটারদের নিয়ে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্বাচনী অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে শতাধিক নতুন ভোটারের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁদপুর জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি হয়।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়া। নতুন ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি, গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ইত্যাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সুজনের সহযোগিতায় এই আয়োজন অবশ্যই অংশগ্রহণকারীদের অনেক সমৃদ্ধ করবে এবং সচেতন নাগরিক তৈরি হবে।’

পরে কলেজের অডিটরিয়ামে ৫০টি এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্নের মাধ্যমে ৩০ মিনিটের পরীক্ষা হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী তিনজন জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়।

পরীক্ষা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ও বিজয়ীদের হাতে সনদ তুলে দেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সুজনের আঞ্চলিক সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন।

সুজন চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রহিব বাদশা, শিক্ষক ওমর ফারুক, সংগঠক সালাউদ্দিন, কর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সাংবাদিক আলম পলাশ, জাকির হোসেন, শোভন আল-ইমরান, মোরশেদ আলম রোকন, মো. মাসুদ আলম, শরীফুল ইসলামসহ সুজন জেলা কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত