Ajker Patrika

রাসায়নিকের গুদামে আগুন: বিষাক্ত গ্যাস ও পদার্থে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি

  • নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা।
  • স্বজনদের কাছে ১৬টি মরদেহ হস্তান্তর।
  • বমি, মাথা ঘোরার ওষুধ বিক্রি বেশি।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ০৬
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি কারখানার ফটকে দায়িত্ব পালন করেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ফোরকান মোল্লা। ছয় দিন আগে পাশের রাস্তায় রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনার পরদিন তাঁর চোখে জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট ও বমিভাব দেখা দেয়। চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। একই রাস্তার আরেকটি কারখানার নিরাপত্তারক্ষী জুয়েল খানের কাছাকাছি রাসায়নিকের ড্রাম ছিটকে পড়েছিল। ড্রাম থেকে ছড়িয়ে পড়া গ্যাসে অসুস্থ হলে তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। রাসায়নিক কারখানার আশপাশের দুই শ থেকে তিন শ মিটারের মধ্যে থাকা বহু মানুষ অসুস্থ হয়েছে।

এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির বিশেষজ্ঞরা রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম এম এস আলম ট্রেডার্সে মজুত রাসায়নিক দ্রব্য এবং তার বিষাক্ত প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। স্থানীয় লোকজনকে দুর্ঘটনাস্থলের ১৫০-৩০০ মিটার এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে এখনো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ রয়ে গেছে, যা নিরাপদে সরিয়ে নিতে আরও তিন-চার দিন সময় লাগবে বলে ফায়ার সার্ভিস শনিবার জানিয়েছে।

স্থানীয় লোকজনও বলছেন, আগুনে পোড়া রাসায়নিক পদার্থ থেকে ছড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাস এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অনেকে বিভিন্ন মাত্রায় অসুস্থ হয়েছেন। এরই মধ্যে শিশুসহ এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হয়েছে, আর কত দিন এর প্রভাব থাকবে, তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। গতকাল রোববার ঘটনাস্থল এবং সেখান থেকে কয়েক শ গজ দূর পর্যন্ত জায়গার দোকানি, চাকরিজীবী, স্থায়ী বাসিন্দাসহ বিভিন্ন শ্রেণির অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম এবং পাশের পোশাক কারখানার অগ্নিকাণ্ডের ছয় দিন পার হলেও এলাকার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। ধোঁয়া কমলেও ভবনগুলোকে এখনো নিরাপদ ঘোষণা করা হয়নি। গুদামের ভেতরে ও বাইরে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডসহ বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি রয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, এসব গ্যাস স্থানীয়দের শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে স্বল্পমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিরও আশঙ্কা রয়েছে।

১৪ অক্টোবর দুপুরে মিরপুরের রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়ীর ওই রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম এবং পাশের একটি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পোশাক কারখানা থেকে ১৬ জনের অঙ্গার হওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানিয়েছিল, রাসায়নিকের গুদামে ৬-৭ ধরনের পদার্থ মজুত ছিল। ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্প কারখানাগুলোতে এসব উপাদান ব্যবহার করা হতো। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে গুদাম থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া এবং গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে।

আলম ট্রেডার্স নামের গুদামে মূলত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, ব্লিচিং পাউডার, ডিটারজেন্ট ও অন্যান্য দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ছিল। এগুলো আগুনে পুড়লে বিক্রিয়া করে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস ও বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ তৈরি করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান হাবিব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ রকম বড় অগ্নিকাণ্ডের প্রথম কয়েক দিন ধোঁয়া ও গ্যাসের ঘনত্ব বেশি থাকে, পরে ধীরে ধীরে কমে যায়। কিছু রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ মাটিতে থেকে পরবর্তী কিছুদিন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। দাহ চলার সময় উচ্চমাত্রার কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাস সৃষ্টি হয়। এসবের কারণে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, গলাব্যথা, ব্রঙ্কাইটিস বা দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের সমস্যা হতে পারে। এমনকি তা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ক্লোরিনেটেড অর্গানিক যৌগ ও ডাইঅক্সিন তৈরি হলে দেখা দিতে পারে আরও কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা।’

পরিবেশবিদেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে রাসায়নিক পদার্থ পুড়ে ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে সব সময় ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণার (পিএম ২.৫ ও পিএম ১০) পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। ধোঁয়ায় থাকা ভারী ধাতুসহ বিষাক্ত উপাদান জলাধার ও মাটিতে মিশে ভবিষ্যতে আরও বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। কয়েক দিন পর্যন্ত এলাকাবাসীর মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুদ্দিন বেননুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলাকার কারও হাঁপানি (অ্যাজমা), দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ ও ফুসফুসের টিস্যুর প্রদাহ থাকলে তাদের অবস্থা গুরুতর হতে পারে। তাদের উচ্চমাত্রার ওষুধ ও স্টেরয়েড নিতেও হতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্ট নেই, তাদেরও প্রদাহ দেখা দিতে পারে। এখানে ছড়ানো বিষাক্ত গ্যাসগুলো শরীরে ঢুকলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা; যেমন শ্বাসনালির ক্ষতি, সিওপিডি ও ফাইব্রোসিস তৈরি হতে পারে।

গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শিয়ালবাড়ীর কে ব্লকের ৩ নম্বর সড়কে পুলিশ ও অগ্নিনির্বাপক বাহিনী দায়িত্বে রয়েছে। ওই সড়কে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীতের চায়ের দোকানটি খোলা। দোকানি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইমরান হোসেন জানান, ঘটনার পর থেকে মোট চার দিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। শুরুতে বাতাসে গ্যাসের মাত্রা ছিল বেশি। রোববার থেকে কিছুটা কমেছে।

কে ব্লকের ২, ৪ নম্বর এবং মূল সড়কের পশ্চিম দিকের দুটি উপসড়ক মিলিয়ে ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যায়।

প্লটগুলোর কাছেই রয়েছে ওষুধের দোকান আরফান ফার্মা। সেখানকার কর্মী মেহেদী হাসান জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বেশি লোক এসেছেন বমি, সর্দি ও মাথা ঘোরার ওষুধ নিতে।

১৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিবেদক জানান, রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় লাগা আগুনে নিহত ১৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রাত ১০টার পর ঢামেক মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মরদেহগুলো হস্তান্তর করেন রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেসুর রহমান।

পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আজ (গতকাল) রাতে মালিবাগ সিআইডি ফরেনসিক থেকে ১৬ জনের লাশের ডিএনএ নমুনা আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। স্বজনদের খবর দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এনে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।’

এ সময় দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রকৌশলী মো. জাকির হোসাইন স্বজনদের কাছে জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেন।

ডিএনএ নমুনা অনুযায়ী হস্তান্তর করা মরদেহগুলো হলো বরগুনার বামনা উপজেলার মৃত ওমর ফারুকের মেয়ে মাহিরা আক্তার (১৪), ভোলার লালমোহনের দলিগর নগর গ্রামের ওয়াজি উল্লাহর মেয়ে নার্গিস আক্তার (১৮),শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নিজ পাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে ছানোয়ার হোসেন (২৫), গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে নূরে আলম সরকার (২৩), বরগুনার আমতলীর দাড়িকাটা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে আল মামুন (৩৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের তিলকনগর গ্রামের নজু মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলাম রবিন (২০), সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার গোল্লা রাজাপুর গ্রামের রতন মিয়ার মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৫), বরগুনা সদরের ইসলামপুর গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে খালিদ হাসান সাব্বির (২৯), নাটোরের সিংড়ার কৃষ্ণপুর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে আব্দুল আলিম (১৪), নেত্রকোনার বারহাট্টার নুরুল্লা গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে জয় মিয়া (২০), মোহনগঞ্জের সাউথখালী গ্রামের নয়ন মিয়ার মেয়ে আসমা আক্তার (১৩) এবং একই উপজেলার জয়পুর গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে তোফায়েল আহমেদ (১৮), মদন উপজেলার কদমশ্রী গ্রামের সনু মিয়ার মেয়ে মুনা আক্তার সামিয়া (১৬), লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার পশ্চিম নওদাবাস গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে মৌসুমী খাতুন (২২), শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর গ্রামের মুছা দেওয়ানের মেয়ে মুক্তা বেগম (৩৬) এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের নাজমুল ইসলাম রিয়াজ (৪০)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনা-৩ আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল, বৈধ ৯টি

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী-আড়ংঘাটা) আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এই আসনে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৯ জনের মনোনয়ন বৈধ এবং ৩ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের এই তথ্য জানান।

ফয়সাল কাদের জানান, ঋণখেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে যাঁদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তাঁরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফ মোল্যা, আবুল হাসান সিদ্দিক ও আরিফুর রহমান মিঠু। তবে তাঁরা চাইলে বিধি অনুযায়ী আপিল করতে পারবেন।

এই আসনে যাঁদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ইসলামী আন্দোলনের মো. আউয়াল, বিএনপির রকিবুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর মাহফুজুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ খান লিটন ও মইন মোহাম্মদ মায়াজ, বাসদের জনার্দন দত্ত, খেলাফত মজলিসের এফ এম হারুন অর রশিদ, এনডিএমের শেখ আরমান হোসেন এবং জাতীয় পার্টির আব্দুল্লাহ আল মামুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়, থার্টি ফার্স্ট নাইটে ৭ দফা বিধিনিষেধ পুলিশের

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। এ বছরও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা কক্সবাজারে এসেছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের আবহ বিরাজ করায় অনেকেই ভ্রমণ বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতসহ উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ও জনসমাগম না করতে ৭ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার জেলা পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, অপপ্রচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ানো, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, নাশকতা কিংবা সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ থাকবে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজার শহর ও সমুদ্রসৈকতে আতশবাজি ও পটকা বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একই সময়ে উন্মুক্ত স্থান ও রাস্তায় কোনো কনসার্ট কিংবা নাচগানের আয়োজন করা যাবে না। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বার ও মদের দোকানে বেচাকেনা বন্ধ থাকবে।

অলক বিশ্বাস জানান, বিধিনিষেধ কার্যকরের পাশাপাশি শহরের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নজরদারি জোরদার করা হবে।

পর্যটকের উপস্থিতি

বছরের শেষ দিন ও নতুন বছরের শুরুতে কক্সবাজারে সাধারণত পর্যটকের ঢল নামে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারাও সৈকতে ভিড় জমান। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে ৮-৯ বছর ধরে সৈকতে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উন্মুক্ত কোনো আয়োজন হচ্ছে না। শহরের কয়েকটি মানসম্মত হোটেল ও রিসোর্টে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান হলেও এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সেসব আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেলের মালিকেরা।

হোটেল ও রিসোর্টের মালিকেরা বলেন, ‘শোকাবহ পরিস্থিতির কারণে অনেক পর্যটক বুধবারের কক্ষ বুকিং বাতিল করেছেন। আবার যাঁরা মঙ্গল বা বুধবার কক্সবাজারে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁদের বড় অংশই সফর স্থগিত করেছেন।’

কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খানসামায় গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া চেয়ারম্যানপাড়া গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ভ্যানযোগে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাছেত সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশটির পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। মৃত্যুর কারণ ও পরিচয় উদ্‌ঘাটনে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নিয়ে আত্মগোপনে স্বামী

বগুড়া প্রতিনিধি
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় রিফাত জাহান রিংকি (১৯) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নুনগোলা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পরপরই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এই ঘটনায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত রিংকি শাজাহানপুর উপজেলার নন্দকুল উত্তর পাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে নুনগোলা এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে নুরুন্নবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের চার বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা রিংকিকে বাড়ির উঠানে স্বাভাবিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেন। যদিও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে পারিবারিক কলহের কথা শোনা যেত। রাতের দিকে হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

নিহত রিংকির বোন আশা খাতুন জানান, বিকেলে রিংকির মোবাইল থেকে তাঁর ফোনে একটি মিসকল আসে। পরে একাধিকবার ফোন করলেও রিংকি ফোন ধরেননি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে নুরুন্নবী ফোন করে জানায়, রিংকির ওপর জিনের আছর পড়েছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রিংকির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা যায়।

রিংকির মামি আয়না খাতুন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে রিংকিকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আলামত নষ্ট করতে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী নুরুন্নবী ও তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু রায়হান বলেন, ‘এর আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ঝগড়াবিবাদের কথা আমার জানা ছিল না। হঠাৎ রাতে মৃত্যুর খবর পাই। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে আত্মহত্যার কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত