চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার ৩ দিন পেরোলেও মামলা করেনি পরিবার, কারণ জানে না পুলিশ

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৩: ৪০
আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ১৯
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহনকারী পুলিশের প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে ভক্তরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত চত্বর (ইনসেটে নিহত আইনজীবী)। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহতের ঘটনায় ৩ দিন পেরোলেও হত্যা মামলা করেনি পরিবার। এ বিষয়ে পুলিশের কাছেও কোনো তথ্য নেই।

তবে সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের কোতোয়ালি এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মোট ৩৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

এদিকে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে নগরের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে একদল দুষ্কৃতকারী পাথর ঘাটসহ আশপাশ এলাকায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসব ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম।

পুলিশ জানায়, সর্বশেষ গ্রেপ্তার তিনজন হলেন—বাবলা ধর, সজল শীল ও দুর্লভ দাস। আদালতের মাধ্যমে আজ তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে দুর্লভ দাস আইনজীবী হত্যার ঘটনার সময় ধারালো অস্ত্র হাতে ছিলেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ বলেছে, মঙ্গলবারের ওই সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। এ তিন মামলায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১ হাজার ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ৩৮ জনের মধ্যে আইনজীবী হত্যায় ৯ জন জড়িত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হত্যা মামলা হলে তাঁদের ওই মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা করার জন্য আসেননি। তাঁরা এলে মামলা নেওয়া হবে।’

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে নামঞ্জুর হয়। এরপর কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তাঁর অনুসারীরা। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে ভাঙচুরের প্রতিবাদে আইনজীবীরা মিছিল বের করলে ধাওয়া দিয়ে সাইফুলকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইনজীবীকে খুনের ঘটনায় ২৫ থেকে ৩০ জন অংশ নেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান তিনজন। তাঁর নিথর দেহ পড়ে থাকলেও লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে থাকা ২৫-৩০ জনের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একজন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবার নম্বরে কয়েকবার কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

সোমবার ভারতীয় হাইকমিশনার অভিমুখে মার্চ

এদিকে আইনজীবী সাইফুল হত্যার প্রতিবাদে গতকালও উত্তপ্ত ছিল চট্টগ্রাম। জুমার নামাজ শেষে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে হেফাজতে ইসলাম। মিছিলটি নগরের ওয়াসা মোড়ে জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে ষোলোশহর ২ নম্বর গেটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে আগামী সোমবার ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে মার্চ করার ঘোষণা দেন হেফাজতের নেতারা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত