Ajker Patrika

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: হলের নিয়ন্ত্রণ নিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১২

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১৭: ৫৭
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: হলের নিয়ন্ত্রণ নিতে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১২

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হল ও বঙ্গবন্ধু হলের নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা চালালে তাঁরা আহত হন। আহতদের মধ্যে ছয়জনকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল রাতের ঘটনার জেরে আজ রোববার দিনভর ক্যাম্পাসে স্লোগান, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শের-ই-বাংলা বাংলা ও বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট স্বাক্ষরিত এক নোটিশে আজকের মধ্যে অবৈধ বহিরাগতদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদায়ী মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে গতকাল রাতে ওই সংঘর্ষ হয়। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা হেলমেট ও মাস্ক পরে লাঠিসোঁটা নিয়ে গভীর রাতে ছাত্রাবাসে ঢুকে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়। ওই ঘটনার পর সাদিকের অনুসারীরা আজ সারা দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উত্তেজনামূলক স্লোগান দিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন।

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। তবে মেয়র সাদিক ও প্রতিমন্ত্রী শামীমের অনুসারী দুটি পক্ষ ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রায়ই তারা পাল্টাপাল্টি হামলা করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১২জানা গেছে, বর্তমানে সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীদের নেতৃত্ব দেন মুবাশ্বির রিদম ও তানজিম মঞ্জু এবং প্রতিমন্ত্রী অনুসারীদের নেতৃত্বে রয়েছেন রক্তিম হাসান ও মুয়ীদুর রহমান বাকি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ১০-১২ জন গতকাল রাত দেড়টার দিকে হেলমেট ও মাস্ক পরে দেশীয় অস্ত্র ও জিআই পাইপ নিয়ে প্রথমে শের-ই-বাংলা হলে ঢোকেন। তাঁরা প্রধান ফটক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কক্ষ বাইরে থেকে আটকে দেন। পরে চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীদের খুঁজতে কয়েকটি কক্ষে তল্লাশি চালান। তাঁরা বঙ্গবন্ধু হলে গিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় তল্লাশি চালান। সেখানে প্রতিপক্ষের কয়েকজনকে পেয়ে বেদম মারধর করেন। এ সময়ের মধ্যে রক্তিম-বাকি গ্রুপ সংগঠিত হয়ে পাল্টা হামলা করলে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।

সংঘর্ষে রক্তিম-বাকি গ্রুপের মুহীদুর রহমান বাকি, সাইমুন ইসলাম, আয়াতউল্লাহ, ইফরান হোসেন রাজ, ইবনে গালিব, রাকিবুল হোসেন রনি ও সোহেল রানা এবং রাফি-শরিফ গ্রুপের ফাত্তাউর রাফি, হাসিবুল হাসান শান্ত, আল সামাদ শান্ত, মো. মঞ্জু ও শরীফুল ইসলাম আহত হয়েছেন।

মেয়র সাদিকপন্থী ছাত্রলীগ কর্মী আলম সামাদ শান্ত বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে মুয়ীদুর রহমান বাকি গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক আগে বহিষ্কার হয়েছে। সম্প্রতি তিনি প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী দাবি করে অবৈধভাবে ছাত্রাবাসে থাকছেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করছেন। তাঁরা এর প্রতিবাদ করেছেন।

গত রাতে হামলার পর আজ ক্যাম্পাসে এক পক্ষের বিক্ষোভতবে মুয়ীদুর রহমান বাকি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হামলাকারীরা বিগত দিনেও একাধিকবার হামলা-সন্ত্রাস করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বাকি বলেন, তাঁর বহিষ্কারাদেশ তিন বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের জেরে আজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ছাড়া হলের বিভিন্ন পয়েন্টে স্লোগান দিতে দেখা গেছে তাঁদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দুপুরে শের-ই-বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া স্বাক্ষরিত এক নোটিশে জানানো হয়, যারা হলে বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী নন, আজকের মধ্যে তাঁদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রাবাসের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। দুই হলে অবৈধ কেউ থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হলে অস্ত্র নিয়ে অবৈধ বহিরাগতদের থাকতে দেওয়া হবে না। ছাত্র নয় এমন কেউ যাতে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে। আহতদের খোঁজখবর নিতে প্রক্টরিয়াল বডির দুজন হাসপাতালে গিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় মাদারীপুর অন্ধকারে

মাদারীপুর প্রতিনিধি
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় অন্ধকারে ঢেকে গেছে মাদারীপুর জেলা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ঘন কুয়াশা দেখা যায়।

এর আগে দিনভর আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত নামতেই চারদিকে ঘন কুয়াশা ছড়িয়ে পড়লে রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে ও সতর্কতার সঙ্গে।

রিকশাচালক নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি সাধারণত রাত ১২টা পর্যন্ত রিকশা চালাই। কিন্তু আজ হঠাৎ অনেক কুয়াশা পড়েছে, রাস্তাও ফাঁকা। তাই আগেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।”

ডিসি ব্রিজ এলাকার মুদি দোকান ব্যবসায়ী রানা বলেন, “প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখি। আজ কুয়াশা আর শীত বেশি থাকায় রাত সাড়ে ৮টার দিকেই দোকান বন্ধ করেছি।”

মাদারীপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আগামী দুই সপ্তাহ জেলায় শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থাকতে পারে। এ সময় সাধারণ মানুষকে সতর্কভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলাতেও যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচলের অনুরোধ জানান এবং মহাসড়কে চলাচলকারী চালকদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় চার-পাঁচ দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তাতীরবর্তী এলাকার মানুষেরা। তবে শীত নিবারণের জন্য সরকারি সহায়তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। শীতার্ত মানুষের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় তারা কম্বল পাচ্ছে না। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বেদপাড়া এলাকায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় সন্ধ্যা রানী (৫০) নামের এক নারীকে। শীতের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঠান্ডায় হাত-পা কোঁকড়া হয়ে যাচ্ছে। আগুন পোহাইলেও ঠিকমতো কাজ হয় না। আগের বছর শীত আসার আগেই কম্বল পাইছিলাম। এবার শীত আইসা চলি যাচ্ছে, কেউ খোঁজও নিল না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এবার শীতে কি সরকার থাকি কোনো কম্বলের ব্যবস্থাই নাই, নাকি সবগুলা লোকজনে ভাগ করে খাইছে?’

এই অভিযোগ শুধু সন্ধ্যা রানীর নয়; কয়েক দিনে সরেজমিনে উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তাতীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনমজুর, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ শীত নিবারণে সরকারি সহায়তার কোনো দৃশ্যমান উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

আলমবিদিতর ইউনিয়নের ডাঙ্গী পাইকান এলাকায় আলুখেতে কাজ করার সময় কথা হয় দিনমজুর নুর আমিনের (৫৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা বাড়ার কারণে কোমর আর ঘাড়ের ব্যথা এমন হইছে যে ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না, ঘাড়ও সোজা করতে পারি না। তবুও কাজ করা লাগে। বসে থাকলে কি আর পেট চলবে?’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর গত বুধবার গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে নির্বাচনী কিছু জটিলতার কারণে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশনায় কম্বলগুলো উপজেলা পরিষদের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের বিষয়টি জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে ১০০টি করে কম্বল সরবরাহ করা হয়।

জানতে চাইলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁদের ইউনিয়নের জন্য ১০০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। শনিবার (আজ) সেগুলো বিতরণ করা হবে।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, সম্ভবত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন সচিব পিআইও অফিস থেকে ১০০টি কম্বল এনেছেন। তবে সঠিক তথ্য খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজীবুল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাসিক সমন্বয় সভায় ওপর থেকে নির্দেশনা এসেছে, জরুরি অবস্থা ছাড়া কোনো কম্বল বিতরণ করা যাবে না। নির্বাচনী কিছু জটিলতাও রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘কম্বলের বরাদ্দ ছিল। আমরা সেগুলো বিতরণ করে ফেলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি

একসময়ের জ্ঞানের বাতিঘর আজ নিকষ কালো অন্ধকার

মেহেদী হাসান, (দিনাজপুর) ফুলবাড়ী
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
লতা-পাতা ও আগাছায় ভরা শতবর্ষী সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দূর থেকে তাকালেই মনে হয়, কোনো পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। লতা-পাতায় ঢাকা দেয়াল, আগাছায় ভরা চত্বর আর তালাবদ্ধ দরজার ভেতরে মাকড়সার জাল। অথচ একসময় এ জায়গাটিই ছিল পাঠকের ভিড়ে মুখর, জ্ঞানের আলোয় উজ্জ্বল এক প্রজন্মের আশ্রয়। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামে শতবর্ষী ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’ আজ নীরব অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে—ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে।

জানা গেছে, ১৯১৬ সালে তৎকালীন জমিদার সুরেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর ছেলে ক্ষীতিশ চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ফুলবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে সুজাপুর গ্রামে যাত্রা শুরু করে এ পাবলিক লাইব্রেরিটি। সুজাপুর হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পর দরিদ্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বইয়ের সংকট দূর করতে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়। বাবার স্মৃতি অমর করে রাখতে এর নামকরণ করা হয় ‘সুরেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি’।

একসময় এ লাইব্রেরিতে ছিল বিপুল বই। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা গ্রন্থে ভরপুর ছিল তাকগুলো। পাঠকদের পদচারণে মুখর ছিল পুরো প্রাঙ্গণ। এ লাইব্রেরি থেকেই বহু মানুষ জ্ঞানের আলোয় পথচলা শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে যেমন ছোট যমুনা নদী আজ মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, তেমনি এ লাইব্রেরিও ধীরে ধীরে হারিয়েছে তার প্রাণ। সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ১৯৭১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী আগুনে পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরির অমূল্য বই ও আসবাবপত্র।

দীর্ঘ নীরবতার পর ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর লাইব্রেরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুরোনো ভবনের পাশে ১২ শতাংশ জমিতে নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে পুরোনো ভবন সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয় ১ হাজার ১২০টি বই। ২০১৫ সালে আরও ২ লাখ টাকা অনুদানে নির্মিত হয় অতিরিক্ত একটি ঘর। ২০১৭ সালে সেখানে চালু হয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এলাকার শিক্ষিত যুবকেরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। পাঠকদের পদচারণে আবারও মুখর হয়ে ওঠে লাইব্রেরিটি। গঠিত হয় পরিচালনা কমিটি। মনে হয়েছিল, আবার বুঝি ফিরবে সেই দিন।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্থাভাব, লাইব্রেরিয়ানের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের চাপে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। কে নেবে এর দায়িত্ব—এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর মধ্যেই আঘাত হানে করোনা মহামারি। বন্ধ হয়ে যায় সব কার্যক্রম। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতের আঁধারে চুরি যায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছয়টি কম্পিউটার। এভাবেই নতুন আশার শেষ আলোটুকুও যেন নিভে যায়।

এ বিষয়ে ইউএনও আহমেদ হাছান জানান, তিনি লাইব্রেরিটি পরিদর্শন করে পরিচালনা কমিটিকে আপাতত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে লাইব্রেরি খুলে বসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। পরবর্তী সময়ে জনবলসংকটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শুরু না হওয়ায় শঙ্কায় কৃষক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষায় ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ এবং ১৫ ডিসেম্বর নির্মাণ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এখনো কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষায় ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ এবং ১৫ ডিসেম্বর নির্মাণ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এখনো কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাওরে বছরে একটি ফসলই ফলে, আর তা হলো বোরো ধান। এ ফসলের ওপর নির্ভর করে চলে হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের ঘর-গেরস্থালি। আগাম বন্যার হাত থেকে বোরো রক্ষায় প্রতিবছর দেওয়া হয় অস্থায়ী বাঁধ। সেই বাঁধের কাজ শুরু হয় ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত নেত্রকোনায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিই (পিআইসি) গঠন করা হয়নি। ফলে আগাম বন্যায় ফসল ভেসে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন জেলার হাওরপাড়ের বাসিন্দারা।

নেত্রকোনায় হাওরের ফসল রক্ষায় ৩০ অক্টোবরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নির্ধারণ, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের নির্মাণ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত পিআইসি গঠন সম্পন্ন করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

পাউবো ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩৪টি হাওর রয়েছে। এসব হাওরে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। বোরো রক্ষায় গত বছর জেলার ৭ উপজেলায় ১৪৯ কিলোমিটার অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এ জন্য ১৯১টি পিআইসি গঠন করা হয়। বরাদ্দ ছিল ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। তবে এবার কত কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে হবে সেই জরিপই শেষ করতে পারেনি পাউবো। ফলে চূড়ান্ত হয়নি কতগুলো পিআইসি গঠন করা হবে। ফলে এর বরাদ্দের পরিমাণও জানাতে পারেনি পাউবো।

মোহনগঞ্জ উপজেলার বরান্তর গ্রামের একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা ঋণ করে বোরোর আবাদ করছেন। বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু হয়নি। এ কারণে তাঁরা আতঙ্কে আছেন। আগাম বন্যায় ফসল নষ্ট হলে নিজেদের সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ চান তাঁরা।

খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একটিমাত্র বোরো ফসলের ওপরে আমাদের সারা বছরের খাওয়াদাওয়া, হাটবাজার ও পোলাপানের লেখাপড়ার খরচসহ যাবতীয় খরচ নির্ভর করে। এবার সময়মতো বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়নি, ফলে যথাসময়ে শেষ করতে পারবে না। আগাম বন্যা হলে আমাদের ফসল বাঁচানো যাবে না।’

পাউবো ও জেলা প্রশাসন সূত্র আরও জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাজে সরাসরি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নসহ তদারকিতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করে জেলা কমিটি করা হয়। একইভাবে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে সভাপতি ও পাউবোর একজন কর্মকর্তাকে সদস্যসচিব করে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। মূলত উপজেলা কমিটি প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করে জেলা কমিটিতে পাঠায়। পরে জেলা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের পিআইসি থাকে।

প্রকল্পের সদস্যসচিব ও নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, জরিপ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে পিআইসি গঠন করার পাশাপাশি কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। জরিপের রিপোর্ট এখনো হাতে না পাওয়ায় এবার কতগুলো পিআইসি গঠন হবে আর বরাদ্দ কত হবে জানানো যাচ্ছে না।

কাজ শুরু করতে দেরি হলেও নির্ধারিত সময়েই শেষ করতে পারব। এ নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, চলতি সপ্তাহে পিআইসি কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে। আগামী সপ্তাহে কাজ শুরু করা হবে। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু জটিলতা ছিল, পাশাপাশি হাওরের পানি নামতে দেরি হয়েছে। সব জটিলতা সমাধান করে পিআইসি গঠন শুরু হয়েছে। দেরিতে কাজ শুরু হলেও নির্ধারিত সময়েই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত