Ajker Patrika

দল ছিল বাবা-ছেলের চাঁদাবাজি আর মনোনয়ন বাণিজ্যের চাবিকাঠি

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ৫১
দল ছিল বাবা-ছেলের চাঁদাবাজি আর মনোনয়ন বাণিজ্যের চাবিকাঠি

২০১২ সাল থেকে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় এই নেতার নিয়ন্ত্রণেই ছিল এই অঞ্চলের আওয়ামী লীগ। তাঁর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক।

সরকার পতনের পর স্থানীয়রা, এমনকি আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতা-কর্মীরাই বলছেন, এই বাবা-ছেলের নিয়ন্ত্রণে ছিল এলাকার চাঁদাবাজি, দলের পদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন বাণিজ্য। আর দলে পরিবারতন্ত্র কায়েম করে আওয়ামী লীগকেই পঙ্গু বানিয়েছেন। তাঁরা আত্মগোপনে গিয়ে আরাম-আয়েশে থাকতে পারলেও তৃণমূলের কর্মীরা ঝুঁকিতে পড়েছেন।

মনোনয়ন ও পদ-বাণিজ্য
বরিশাল অঞ্চলে আ.লীগের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাতেই ছিল দলীয় পদ এবং মনোনয়নের চাবিকাঠি। তিনি জেলার সব ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে একচেটিয়া বাণিজ্য করতেন বলে অভিযোগ দলের নেতা-কর্মীদের। মনোনয়নপ্রতি নেওয়া হতো ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

তা ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের পদ পেতেও হাসানাতকে উৎকোচ দিতে হতো বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক নেতা। তাঁদের মতে, হাসানাতের বড় সহযোগী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস তালুকদার, বানারীপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক এবং গৌরনদী পৌরসভার সাবেক মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ।

নেতারা জানান, কেউ হাসানাতের বিরুদ্ধাচরণ করলেই বহিষ্কার করা হতো। উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদ-বাণিজ্যও চলত একই পন্থায়।

২০২১ সালের নির্বাচনে বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হন নুরে আলম ব্যাপারী। বর্তমানে তিনি পলাতক। নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মাসুম মৃধা। তিনি বলেন, ‘দলের কাছে দুবার মনোনয়ন চাইলেও পাননি। অথচ অলৌকিক যোগ্যতার কারণে নুরে আলম ব্যাপারী মনোনয়ন পান। আসলে শতভাগ সত্য যে এখানে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এটাই বাস্তবতা। এটা যদি না হতো, তাহলে চাঁদপাশার বিএনপি-সমর্থিত দেলোয়ার রাঢ়ীও মনোনয়ন পেতেন না।’

ছাত্রলীগের একসময়ের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, ‘ছয় দফা আন্দোলনে জেল খেটেছি, ১৯৭৫ সালে বরিশালে মিছিল করেছি। আশির দশকে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু দুঃখ হলো হাসানাত সাহেব ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যেও আমাকে থাকতে দেননি।’

আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, ‘কৃষক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি থাকাকালীন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন পেলেও আমার মনোনয়ন কেড়ে নিয়ে জাতীয় পার্টির মইদুলকে দেন হাসানাত।’

এ বিষয়ে জানতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে ফোনে কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস তালুকদারের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনসুর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরিশালে কর্মীরা দুরবস্থায় আছেন। এখন তাঁদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পদ-বাণিজ্য এবং মনোনয়ন-বাণিজ্য হয়েছে—এমন কী প্রমাণ আছে? সভাপতি-সম্পাদকের অনুমতি ছাড়া এসব বিষয় মন্তব্য করব না।’

সাদিকের চাঁদাবাজি
বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ছয়জন ‘খলিফা’ দিয়ে গোটা নগরী পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরের সব হাটবাজার, লঞ্চঘাট, খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন সাদিকের অন্যতম খলিফা নগর আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তিনি ক্যাশিয়ার হিসেবে সাদিকের চাঁদাবাজির টাকা তুলতেন। টুটুল বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি, ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত সিটি করপোরেশনের প্ল্যান পাস করানোর বিনিময়ে ঘুষ, কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে দলের কর্মীরাই বলছেন। সাদিকের এই খলিফারা এখন ভারতে পালিয়ে আছেন বলে জানা যায়। 
নগরের নথুল্লাবাদের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না সেখানকার “বাঙলা হোটেল” দখল করে বাণিজ্য করেছেন। বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করতেন। চাঁদা না দিলে কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হতো।’ 

ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ব্যবহার
২০০২ সালে বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মঈন তুষার। এরপর আর দলে ঠাঁই হয়নি। তিনি বলেন, দুই যুগ ধরে যুবলীগের নেতৃত্ব নেই। স্বেচ্ছাসেবক লীগও দুই যুগ ধরে অচল। মহানগর আওয়ামী লীগ একতরফা গঠিত হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক নিজস্ব বলয় দিয়ে একতরফা দল চালাতেন। এই বরিশালে নেতারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাননি, ব্যক্তিকে শক্তিশালী করে টাকা কামিয়েছেন।’

বরিশাল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক হারুন বলেন, এখানে ব্যক্তি রাজনীতি হয়েছে। এটাকে শো করে ব্যবসা করেছে হাসানাত পরিবার। 
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নেতারা দল করেনি, ক্যাডার দিয়ে লুটপাট করছে। আসলে বেসরকারি নাইট কলেজের নেতা দিয়ে কি দল চালানো যায়?’

আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিন বছর হয়েছে ওয়ার্কিং কমিটির সভা হয়নি। কমিটিতে পদ পেয়ে কয়েকজন লুটপাট করছে। ভারতে আরামে থেকে মাঝে মাঝে ছবিও দেয় ফেসবুকে। অথচ এই নেতাদের জন্যই কর্মীরা আজ নির্যাতিত হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষকের ঘরে ১২ ফুট লম্বা গাঁজার গাছ, আটক

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
দিনাজপুরের বিরামপুরে গাঁজার গাছসহ আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দিনাজপুরের বিরামপুরে গাঁজার গাছসহ আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় ১২ ফুট উচ্চতার একটি গাঁজার গাছসহ এক কৃষককে আটক করেছে পুলিশ। পরে আজ শুক্রবার তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

বিরামপুর থানার জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক (এসআই) সাজিদুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জোতবাণী ইউনিয়নের চাকুল গ্রামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় মৃত দছির উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমানের (৪৫) বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে গাঁজার গাছটি জব্দ করা হয়।

পরে আজিজার রহমানকে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, গাছটির উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট, ওজন ১০ কেজি এবং আনুমানিক মূল্য এক লাখ টাকা।

এ বিষয়ে বিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। আজ আসামিকে দিনাজপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জেলে

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহরে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে চাটমোহর থানার পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ও রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আজ শুক্রবার দুপুরে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নবীর উদ্দিন মোল্লা (৭০) এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর সদরের মধ্য শালিখা মহল্লার বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন (৫৪)।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের বামনগ্রাম নিজ বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নবীর উদ্দিন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া একই দিন রাতে মধ্য শালিখা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুজনের বিরুদ্ধে চাটমোহর থানায় বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। আজ সকালে তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রামেকে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রথমবারের মতো মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। অনেকের ক্ষেত্রে ভর্তি রাখার প্রয়োজন থাকলেও সেটি সম্ভব হতো না। কিছু কিছু রোগী রাখা হতো মেডিসিন বিভাগেই।

এবার প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। এ ওয়ার্ডে ২৫টি শয্যা আছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য সাতটি, শিশু-কিশোরদের জন্য পাঁচটি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য তিনটি শয্যা সংরক্ষিত। এ ছাড়া রোগীদের থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টি করা হয়েছে এ ওয়ার্ডে।

রামেক হাসপাতালের সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদের উদ্যোগে হাসপাতালের পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই ওয়ার্ড করা হয়েছে। গত বুধবার তিনি এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। তারা মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমবে। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজের অ্যাক্রেডিটেশনেও সমস্যা হতে পারে। তখন এ কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার সুযোগ কমবে। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এই ওয়ার্ডটি জরুরি ছিল।

তাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে এই ওয়ার্ড চালু করার জন্য হাসপাতাল পরিচালকের কাছে অনুরোধ করা হয়। সবকিছু শুনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন। ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও নার্স দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এ হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটিই অবাক করার বিষয়। প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও চিকিৎসা নিতে পারবে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি। এরপর তিনি হাসপাতাল ও রোগীদের কল্যাণে নতুন অনেক উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করেছেন। হাসপাতালকে করে তুলেছেন রোগীবান্ধব। বাড়িয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান। বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

মানসিক রোগীদের জন্য নতুন ওয়ার্ড চালুর আগে গেল ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করেন শামীম আহাম্মদ। এরপর এখন পর্যন্ত হাসপাতালে একজন সাপে কাটা রোগীরও মৃত্যু হয়নি। আগে প্রায় প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হতো এ হাসপাতালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মান্নাকে ৩৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২০
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। ফাইল ছবি

আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ‘কলব্যাক নোটিশ’ জারি করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, বগুড়া শাখা। গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এ নোটিশ ইস্যু করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করা হলে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হলেও মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ না করায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। নোটিশে বলা হয়, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মান্না ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করেননি। বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও টাকা পরিশোধের কোনো চেষ্টাও করেননি তিনি।

গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত বুধবার ইসলামী ব্যাংক, বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এই নোটিশ ইস্যু করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া শাখাপ্রধান তৌহিদ রেজা স্বাক্ষরিত নোটিশে আরও বলা হয়, ‘মঞ্জুরিপত্রের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ডিলে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও আপনাকে/আপনাদেরকে মৌখিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে ও মোবাইল ফোনে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও আপনি/আপনারা তা পরিশোধ করেননি। ইতিপূর্বে আপনাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে, তবুও বিনিয়োগের দায় পরিশোধ করেননি। আপনার/আপনাদের লেনদেনের পরিস্থিতি দেখে আমাদের কাছে অনুমিত হচ্ছে যে, আপনার/আপনাদের সঙ্গে আমাদের আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অতএব, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগের সমুদয় দায় ৩৮৪.৭৬ মিলিয়ন টাকা পরিশোধ করে হিসাবসমূহ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে।’

এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) তৃতীয় অধ্যায় (নির্বাচন) ১২(১)(ঠ) ধারা অনুসারে কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে, এটা সঠিক। তবে চিঠির বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত