Ajker Patrika

গাংনীতে চলছে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম

রাকিবুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর)
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫২
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের আমেজ শুরু হতেই গ্রামবাংলার নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পুরোনো ঐতিহ্য কুমড়ো বড়ি তৈরিতে। মাষকলাইয়ের ডালের সঙ্গে চালকুমড়া, পেঁপে কিংবা মুলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই জনপ্রিয় খাবার। সুস্বাদু ও মুখরোচক হওয়ায় শীতকাল এলেই কুমড়ো বড়ির কদর বাড়ে গ্রাম থেকে শহর সবখানে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রথমে মাষকলাইয়ের ডাল ভিজিয়ে নরম করা হয়। এরপর চালকুমড়া, মুলা বা পেঁপে ভালোভাবে মিশিয়ে মিলে ভাঙানো হয়। পরে সেই মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করা হয় শীতের বহুল পরিচিত খাবার কুমড়ো বড়ি। শীতের শুরুতেই গ্রাম্য নারীদের এই ব্যস্ততা চোখে পড়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

গাংনীর এক নারী জলী খাতুন বলেন, ‘শীত এলেই আমরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করি। এই বড়ি সবাই খুব পছন্দ করে।’

হাড়াভাঙ্গা গ্রামের ঝরনা খাতুন বলেন, ‘শীত মৌসুমে কুমড়ো বড়ি ছাড়া আমাদের পরিবারে যেন চলেই না। নতুন মাষকলাই উঠলেই প্রতিবছর বড়ি দিই। শোল, টাকি, টেংরা মাছ কিংবা ডিমের সঙ্গে কুমড়ো বড়ি দিয়ে রান্না করলে স্বাদ অন্যরকম হয়।’

মোহাম্মদপুর গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবাই কুমড়ো বড়ি খুব পছন্দ করে। নানা ধরনের সবজি ও মাছের সঙ্গে বড়ি দিয়ে রান্না করা হয়, যা খুবই সুস্বাদু।’

অলিনগর গ্রামের মো. মারফত আলী বলেন, শীত এলেই কুমড়ো বড়ি দেওয়ার ধুম পড়ে যায়। এই সময় চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। বর্তমানে মাষকলাই বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে।

মিলের মালিক মো. মহিবুল ইসলাম বলেন, শীতের শুরু থেকেই বড়ি ভাঙানোর মৌসুম শুরু হয়। প্রতিদিন অনেক ভিড় হয়। নারীদের পাশাপাশি পুরুষেরাও বড়ি ভাঙাতে আসেন। চালকুমড়া, কলাইয়ের ডাল, পেঁপে ও মুলা মিশিয়ে এনে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা হারে ভাঙানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কুমড়ো বড়ি এমন একটি খাবার, যা প্রায় সব ধরনের তরকারির সঙ্গে মানিয়ে যায়। শীত মৌসুম এলেই গ্রামের নারীরা বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে আবার বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করেন।

কুমড়ো বড়ি ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ বলেন, বর্তমানে কুমড়ো বড়ি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাষকলাইয়ের দাম বেশি হওয়ায় বড়ির দামও বেড়েছে। কলাইয়ের দাম কমলে বড়ির দামও কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেয়ে দেখা মানে বিয়ে ফাইনাল না: মনোনয়ন প্রসঙ্গে হাজি ইয়াছিন

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩৪
আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নে হাজি ইয়াছিনের গণসংযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নে হাজি ইয়াছিনের গণসংযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লা-৬ (সদর, সদর দক্ষিণ ও সিটি করপোরেশন) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেলেও এখনো আশা ছাড়েননি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই বলেছি, অনেকে মেয়ে দেখতে যায়। মেয়ে দেখার পর অনেক কথা হয়, অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু মেয়ে দেখা মানেই তো বিয়ে ফাইনাল হয়ে যাওয়া নয়। তখন আলোচনা হয় আদৌ বিয়ে হবে কি না। দলের চেয়ারম্যানও বারবার বলেছেন, এটি ছিল প্রাথমিক সিলেকশন; ফাইনাল সিলেকশন হবে সামনে। তখনই সিদ্ধান্ত হবে বিয়ে হবে, নাকি হবে না। ’

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা এবং কুমিল্লা নিয়ে নিজের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা-সংবলিত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগকালে হাজি ইয়াছিন এসব কথা বলেন।

হাজি ইয়াছিন বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। সাবেক মন্ত্রী মরহুম কর্নেল আকবর হোসেন জীবদ্দশায় বলে গিয়েছিলেন, “আমার পরে ইয়াছিন আপনাদের পাশে থাকবে।” সেই কথা অনুযায়ী আমি তখন থেকে আজ পর্যন্ত আপনাদের পাশে ছিলাম কি না, আপনারাই তার সাক্ষী।’

হাজি ইয়াছিন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের টানা ১৭ বছরের শাসনামলে আপনারা অসংখ্য মামলা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকেই বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি, ধানের জমিতে কিংবা পথেঘাটে রাত কাটিয়েছেন। সেই কঠিন সময়ে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি এবং ভবিষ্যতেও ইনশা আল্লাহ আপনাদের পাশেই থাকব।’

সাবেক এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘এত জুলুম-নির্যাতনের পরও কেউ কি আপনাদের আমাকে বা দল থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছে? পারে নাই। অতীতেও পারেনি, বর্তমানেও পারবে না, ভবিষ্যতেও ইনশা আল্লাহ পারবে না। আমার কথা একদম পরিষ্কার, আমি ছিলাম, আছি এবং থাকব ইনশা আল্লাহ।’

হাজি ইয়াছিন বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি কখনো “সিল মারো ভাই সিল মারো” রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। জনগণের ভোটেই বিএনপি সরকার গঠন করেছে। সুতরাং, এই ছয়টি নির্বাচনী এলাকার জনগণ যা চাইবে, সেটাই হবে। ইনশা আল্লাহ, জনতার জয় হবেই।’

গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম রায়হান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফারুক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মেরাজ, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান সাঈদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আনোয়ার হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী জোবায়ের আলম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক ধীমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন রবিন প্রমুখ।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পাঁচথুবী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ৩

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর উত্তরায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি। আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া মহাসড়কের ছাপরা মসজিস-সংলগ্ন এলাকা থেকে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. নাঈম (৩২), মিন্টু মিয়া (৩০) ও আল আমিন (২২)।

গ্রেপ্তারকালে তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি ছুরি, একটি চাপাতি ও একটি লোহার রড জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

কারাগারের থাকা ওই ডাকাতেরা হলেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীরের ছেলে নাঈম, শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার ভেলুয়া গ্রামের সাজু মণ্ডলের ছেলে মিন্টু মিয়া এবং গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আল আমিন।

এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. রফিক আহমেদ আজ সন্ধ্যায় জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৯ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে মামলা করা হয়। পরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

অপর দিকে একই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক খান জানান, গ্রেপ্তারকালে তাঁদের কাছ থেকে একটি চাপাতি, একটি ছুরি ও একটি লোহার রড জব্দ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাবিতে আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাকসুর জিএস আম্মারের

রাবি প্রতিনিধি  
সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত
সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থী ডিনদের পদত্যাগে এক কর্মদিবসের আলটিমেটাম দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে এই হুঁশিয়ারি দেন।

পোস্টে জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি ডিনদের অপসারণ করা হয়নাই। নির্বাচিত বলে পুরো ১.৫ বছর স্টে করাইছে প্রশাসন। গতকাল ১৭ ডিসেম্বর ডিনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে, শুনেছি এই ডিনদের আবার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।’  

আম্মার আরও লেখেন, ‘আমার আল্টিমেটাম আমি ফিলাপ করে তারপর ছাড়ি এটা প্রশাসন ভালোমতন জানেন। আজ সময় দিলাম রিজাইনের জন্য সম্মানের সাথে। আগামীকাল অফিসে দেখলে বাকিটা বুঝিয়ে দেবো। সাথে সাথে রাবিয়ানদের অনুরোধ জানাবো, আগামীকাল সকাল ১০টায় রাকসু ভবনের সামনে চলে আসবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে ১২টি অনুষদের মধ্যে ছয়টিতে জয়ী হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজ (হলুদ প্যানেল)। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে আইন, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও ভূবিজ্ঞান অনুষদে ডিন নির্বাচিত হন। নির্বাচিত ডিনদের মধ্যে রয়েছেন আইন অনুষদে আইন বিভাগের আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদে গণিত বিভাগের ড. নাসিমা আখতার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম একরাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূবিজ্ঞান অনুষদে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এইচ এম সেলিম রেজা।  

মেয়াদোত্তীর্ণ আওয়ামীপন্থী ডিনদের সময় বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর যদি সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার সদিচ্ছা থাকত, তাহলে প্রথম ও জরুরি পদক্ষেপ হওয়া উচিত ছিল আওয়ামীপন্থী ডিনদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। ডিন পদটি শুধু প্রশাসনিক নয়; এটি একদিকে একাডেমিক নীতিনির্ধারণে প্রভাবশালী, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর নৈতিক ও আদর্শিক প্রভাব বিস্তারকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি তো দেওয়া হয়নি, বরং আইনগত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কোনো স্বচ্ছ ব্যাখ্যা ছাড়াই সময় বাড়ানো হয়েছে। কোন যুক্তিতে এই মেয়াদ বাড়ানো হলো? জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিপক্ষের শক্তিকে কেন বারবার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখা হচ্ছে?’

তবে আওয়ামীপন্থী ডিনরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ডিনরা কিংবা উপাচার্য সেই দায়িত্ব পালন করেন। এটা নির্বাচিত পদ। এই পদ থেকে পদত্যাগের সুযোগ তাঁদের নেই। ফলে ইচ্ছা করলেই তাঁরা পদত্যাগ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে উপাচার্যকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম একরাম উল্লাহ বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে যেহেতু আমাদের মেয়াদ গতকাল শেষ হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে এই পদে থাকার ইচ্ছা নেই।’ হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার পদত্যাগের কোনো অধিকার নেই। উপাচার্য যেহেতু দায়িত্ব দিয়েছেন, উপাচার্যকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি চাইলে আরেকটি চিঠি ইস্যু করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।’

 

ডিনদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে কি না—জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘তাঁরা নির্বাচিত ডিন হওয়ায় গত এক বছর ধরে আমরা তাঁদের রেখেছি। ১৭ তারিখ সমাবর্তন ছিল, সামনে ভর্তি পরীক্ষা। এই মুহূর্তে ডিন নির্বাচন দিলে ভর্তি পরীক্ষার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই এক মাস সময় বাড়ানো হয়েছে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ডিনদের সরানোর এখতিয়ার কেবল উপাচার্যের। এর আগে করোনাকালেও ডিনদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।

ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন আরও বলেন, উপাচার্যের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্বের চাপ না বাড়ানোর জন্য তাঁদের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা সিন্ডিকেট সভাসহ গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্তমূলক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাহিনী নির্মূলে প্রয়োজনে চরমপন্থা অবলম্বন করতেও দ্বিধা করব না: সিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার হাসাব আজিজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সিএমপি কমিশনার হাসাব আজিজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও অতিরিক্ত আইজিপি হাসিব আজিজ বলেছেন, ‘নানা রকমের বাহিনী আছে। আমার চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশ বাহিনী ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী থাকতে পারবে না। সাজ্জাদ বাহিনী, লাল্টু বাহিনী, পল্টু বাহিনী—এই সমস্ত বাহিনীকে নির্মূল করতে হবে। নির্মূল মানে নির্মূল। প্রয়োজনে চরমপন্থা অবলম্বন করতেও আমি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করব না।’

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের কর্ণফুলী হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।

হাসিব আজিজ বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে সাঁড়াশি অভিযান কিন্তু চলমান। এই অভিযানটা আমরা আরও তিন-চার মাস আগেই শুরু করেছি। নির্বাচন-সংক্রান্ত নানা রকমের চ্যালেঞ্জ আছে, চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু এখন মোটামুটি দৃশ্যমান। আমরা বুঝতে পারছি, কোন কোন জায়গা থেকে কী কী ধরনের ঝুঁকি আমাদের ওপর আসতে পারে। ঝুঁকির বিষয়টি ঢাকায় দেখলাম, চট্টগ্রামে দেখলাম, খুলনায় দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘এত দিন ধরে “পতিত স্বৈরাচার”, এখন আরেকটা আসছে “বিতাড়িত স্বৈরাচার”। এই বিতাড়িত স্বৈরাচারের যারা কুচক্রী এবং দুর্বৃত্ত, যারা দোসর এবং তাদের যে বিদেশি প্রভু, তারা চেষ্টা করছে কিন্তু এখানে অনেক রকমের সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশে যে নির্বাচনটা হতে না দেওয়া এবং একটা পর্যায়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। বিতাড়িত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিদেশি প্রভু যারা আছে, তাদের এই প্রচেষ্টাকে আমাদের নস্যাৎ করতে হবে। অবশ্যই নস্যাৎ করতে হবে।’

পুলিশ কমিশনার বলেন, যেকোনো রাষ্ট্র তিনটা পিলারের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকে। একটি নির্বাহী বিভাগ, একটি বিচার বিভাগ আরেকটি হচ্ছে সার্বভৌম সংসদ। যেখানে সাধারণ নাগরিকদের, সাধারণ মানুষের, জনগণের সার্বভৌমত্ব, সেটা হচ্ছে সংসদ। এই তিনটা বিভাগের মধ্যে একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান তৈরি করে এবং এই ভারসাম্যমূলক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র টিকে থাকে। পরবর্তীকালে বলা হলো, এর বাইরেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, সেটা হচ্ছে মিডিয়া।

তিনি বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গগুলো আছে, এগুলো যদি একটা অ্যালাইনমেন্টে থাকে, পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে এক হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রব্যবস্থার যে কতখানি বিপর্যয় হয়—সেটা কিন্তু গত ১৭ বছরে দেখেছি। সাধারণ প্রশাসন, বিচারালয়, পুলিশ, সাংবাদিক—সব একটা অ্যালাইনমেন্টে চলে আসছিল। একটা অ্যালাইনমেন্টে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল, রুলিং পার্টি নিয়ে এসেছিল, আওয়ামী লীগ। তার ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থাটা একটা বিপর্যয়ের মুখে পড়ল। আওয়ামীপন্থী প্রশাসন, আওয়ামীপন্থী বিচারক, আওয়ামীপন্থী পুলিশ, আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক—সব এক অ্যালাইনমেন্টে। কী হলো? শেষমেশ একটা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হলো।’

পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার জানান, লুণ্ঠিত অস্ত্রের ৮০ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ অস্ত্র পাহাড়ি এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের হাতে চলে গেছে বলে তথ্য রয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

মতবিনিময় সভায় একুশে পদকপ্রাপ্ত, দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ‘জনগণের একটা ভীতি থাকে, এই যে পুলিশ ভীতি যেটা, সেটাকে আমাদের মন থেকে দূর করে আমরা যাতে তাদের কাছে গিয়ে সমাজকে কিছু দিতে পারি। ভীতিটা দূর করে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে সমস্ত অপকর্ম হচ্ছে, সেগুলোর ইনফরমেশনটা দিতে পারি। ইনফরমেশনটা দিলেই কিন্তু পুলিশ গিয়ে সেখানে দেখবে এবং সেখানে তার প্রতিকার করার যে ব্যবস্থা সেটা ওনারা করতে পারেন। কারণ, সব জায়গায় গিয়ে, পুরো শহরে আসলে ওনাদের পক্ষে গিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। আমার মনে হয় এইদিকে আমাদের আরেকটু মনোযোগী হওয়া উচিত।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. আরিফ। চ্যানেল ওয়ানের ব্যুরোপ্রধান মো. শাহনেওয়াজ রিটনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি পিপলস ভিউ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. হুমায়ুন কবির, প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি মুস্তফা নঈম, ক্লাবের কার্যকরী সদস্য ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান ও রফিকুল ইসলাম সেলিম।

আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের অর্থ সম্পাদক আবুল হাসনাত, কার্যকরী সদস্য আরিচ আহমেদ শাহ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রূপম চক্রবর্তী, ক্রীড়া সম্পাদক রুবেল খান, গ্রন্থাগার সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক হাসান মুকুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারুক আবদুল্লাহসহ অন্যরা। এ সময় চট্টগ্রামে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত