Ajker Patrika

বিএমডিএতে অস্থিরতা, সেচ কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা

  • রাসিকের সাবেক মেয়র ও আ.লীগ নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন ইডি শফিকুল
  • বদলির আদেশের পরও ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন তিনি
  • মামলা, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, সাময়িক বরখাস্ত ও শোকজের ঘটনাও ঘটে
  • বিষয়টা মন্ত্রণালয় দেখছে বলে জানান বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৫৬
বিএমডিএতে অস্থিরতা, সেচ কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে তাঁর দপ্তর থেকে বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে সংস্থাটিতে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শফিকুলের মামলা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও আটজনকে শোকজের মতো পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাঁরাও পাল্টা কর্মসূচি দিতে যাচ্ছেন। এসব কারণে ভরা মৌসুমে যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে সেচ কার্যক্রম।

এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে শফিকুল অফিস ছাড়ার পর গত সোমবার নতুন ইডি নিয়োগ দেয় সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলমকে ইডি নিয়োগ করা হয়। এ নিয়েও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, বিএমডিএর কাজ প্রকৌশলবিদ্যার। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ পদে অযোগ্য।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা

গত ১৪ জুলাই বিএমডিএর ইডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। সূত্র বলছে, তিনি একসময় রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি বিএমডিএ ছাড়ছিলেন না।

ফলে ২৩ মার্চ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী গিয়ে তাঁকে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপরই হেনস্তার অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন শফিকুল। ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তিনি মামলাও করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ৫০ থেকে ৬০ জনকে। ঘটনার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে আটজনকে। ২৫ মার্চ স্বাক্ষর করা শোকজের এই চিঠি তাঁরা পেয়েছেন গত মঙ্গলবার। একের পর এক এই পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে তাঁরাও পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। গত ২৬ মার্চ রাজশাহী এবং ২৭ মার্চ রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিএমডিএর একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ইডি শফিকুল ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তা। তাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করিয়েছেন। তদন্তের আগেই এভাবে অব্যাহতি ও সাময়িক বরখাস্ত করা একেবারেই নজিরবিহীন। ফলে বিএমডিএর সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরাও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

বিরোধ কেন ইডির সঙ্গে খায়রুজ্জামান লিটনের সুপারিশে শফিকুল বিএমডিএর ইডি হয়েছিলেন বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আওয়ামী সরকারের পতনের পরই তাঁর সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি আরও প্রকট হয় যখন আওয়ামী সরকারের পতনের পরও সেই দলের সমর্থক ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করতে থাকেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাহফুজুর রহমান নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছাড়া কাউকেই পাত্তা দিতেন না শফিকুল। মাহফুজুর বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের চাকরিবিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ মনোনীত আইইবি রাজশাহী কেন্দ্রের সদস্য। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক ইডি ১৭ বছর ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজশাহীতে বদলি করে না এনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদেরই একের পর এক নানা সুবিধা দিতে থাকেন। নিজের বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল ইসলাম বিএমডিএর নাজিরুল ইসলাম নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে বদলির আদেশ জারি করেন। অথচ নাজিরুল বিগত সরকারের আমলে অনুমোদিত ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে কাজ করছেন। নাজিরুল গত সরকারের আমলে মোট তিনটি প্রকল্পের পিডি হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল গত ১৩ মার্চ দুটি আদেশে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আরও দুই আদেশে ২৭ জনকে বদলি করা হয়। আর যেসব কর্মচারী জুলাই আন্দোলন দমনে সরাসরি লাঠি হাতে মাঠে নামেন, তাঁদের বহাল রাখা হয়। ইডির বদলির আদেশের পর মাহফুজুর রহমান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দেন। এতে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএতেই রাখার দাবি জানাতে বলা হয়।

এসব বিষয়ে কথা বলতে সদ্য সাবেক ইডি শফিকুলকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএমডিএতে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা ঠিক। তবে এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টা এখন মন্ত্রণালয় দেখছে।’

মনগড়া তদন্ত কমিটির অভিযোগ

এদিকে শফিকুলকে তাঁর দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় সংস্থার চেয়ারম্যান মনগড়া তদন্ত কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নির্দেশনা অমান্য করে নিজের ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ।

বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরকের দাবি, কৃষি উপদেষ্টা তাঁকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আসাদুজ্জামান উপদেষ্টার নির্দেশনা আমলে না নিয়ে ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি করেছেন। এই কমিটি ভেঙে দিতে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী চিঠিটি গ্রহণ করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় বিএমডিএ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানকে। তিনি পরিচয় পেয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

  • জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২২ লাখ ৭ হাজার
  • সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি
  • মাধ্যমিকের সব বই না আসায় এ বছরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা শিক্ষকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।

গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্যটকের বাড়তি চাপে ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে

  • তিন দিনের ছুটিতে হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষ বুকড
  • ২০২৫-কে বিদায় ও ২০২৬-কে স্বাগত জানাতে পর্যটকের চাপ আরও বাড়বে
  • বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কক্সবাজারে যানজট
কক্সবাজার প্রতিনিধি
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। বরাবরের মতোই অবকাশযাপনে ভ্রমণপিপাসুরা এবারও দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করবেন। তবে শনিবারেই চাপ কমবে না। পর্যটকের এই ঢল আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা ভিড় করবেন।

হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের মালিকেরা বলছেন, বুধবার বিকেল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোয় শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। মাঝারি মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

সাগরপারের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডেতে কক্ষ আছে ২৪৫টি। তাদের প্রায় সব কক্ষ শনিবার পর্যন্ত বুকিং আছে। হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক (রিজার্ভেশন) আবু তালেব শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিন দিনের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।

কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ, সেন্ট মার্টিন ও আশপাশের এলাকার ৬০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ আছে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময়ে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিপুল পর্যটক সমাগমে যেন কেউ থাকা-খাওয়ায় বাড়তি অর্থ আদায় না করে তার জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকের আনাগোনায় তিন কিলোমিটার সৈকত মুখর। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শান্ত সৈকতে কেউ গোসলে নেমেছেন, কেউ জেটস্কি করে দূর সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার চেয়ার-ছাতায় বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে সমুদ্র দর্শনে সময় কাটাচ্ছেন। গোসলে নামা বিপুল পর্যটকদের নানাভাবে সতর্ক করছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকের বাড়তি চাপে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী সড়ক, মেরিন ড্রাইভ ও শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

পর্যটকেরা শহরের এই তিন পয়েন্টের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সৈকতে ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন।

কুমিল্লার হোমনা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে বড়দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে তিন দিনের জন্য ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।’ তাঁর মতো পরিবার নিয়ে অনেকেই বেড়ানোর জন্য বের হয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বাড়বে—বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। কোথাও পর্যটক হয়রানির খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেটে জুয়া খেলা অবস্থায় আটক ৭

সিলেট প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটে জুয়া খেলা অবস্থায় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কানিশাইল ১ নম্বর রোডের মারুফ টি স্টল নামক দোকানে অভিযান পরিচালনা করে তির শিলং-জাতীয় জুয়া খেলা অবস্থায় তাঁদের আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন কানিশাইলের সজীব মিয়ার কলোনির রমিজ আলীর ছেলে তাহের মিয়া (৩০), উসমান মিয়ার ছেলে শামীম (২০), ইমন মিয়ার কলোনির মো. আব্দুল করিম তালুকদারের ছেলে মো. স্বপন মিয়া (৫৫), রঙ্গ মিয়ার ছেলে জসিম (৪৫), জামাল উদ্দিনের ছেলে আল আমিন (২৭), আব্দুর রশিদের ছেলে মো. বাদল (৩৮) এবং আবুল কালামের ছেলে সুজাত মিয়া (৩৫)।

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনায় মা হত্যায় ছেলে গ্রেপ্তার

খুলনা প্রতিনিধি
মো. রিয়াদ খান।  ছবি: সংগৃহীত
মো. রিয়াদ খান। ছবি: সংগৃহীত

খুলনায় শিউলী বেগম হত্যা মামলায় ছেলে মো. রিয়াদ খানকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তাঁকে খুলনা র‌্যাব-৬ এবং ৭-এর যৌথ অভিযানে ফেনী জেলার সদর থানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার রিয়াদ শিউলী বেগমের একমাত্র ছেলে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২ লাখ ৫ হাজার ৮০ টাকা, দুটি আইফোন, একটি স্মার্টফোন ও একটি এয়ারপড জব্দ করা হয়।

র‌্যাবের পাঠানো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা গেছে, নিহত শিউলি বেগম সৌদি আরবপ্রবাসী ছিলেন। গত ২৭ অক্টোবর দুই মাসের ছুটিতে বাংলাদেশে আসেন। পরে নগরীর ট্যাংক রোডের বাসিন্দা রবিউল ইসলামের বাড়ির নিচতলায় ছেলে রিয়াদ খান এবং দ্বিতীয় স্বামী সাগরকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

দেশে আসার ১০-১২ দিন পরে উত্তরা ব্যাংক খুলনা শাখা থেকে পৌনে ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে আলমারিতে রেখে দেন।

৯ ডিসেম্বর রাতে শিউলী বেগমের বড় মেয়ে রুবিনা আক্তার এবং তাঁর স্বামী রাজিব রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতে চলে যান। ১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে শিউলী বেগমকে ফোনে না পেয়ে রুবিনা আক্তারকে খোঁজ নিতে বলেন তাঁর স্বামী।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে তাঁর সন্ধান না পেয়ে ওই দিন রাতে স্থানীয়দের সহায়তায় তালা ভেঙে ঘর থেকে শিউলী বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরে তাঁর ঘর থেকে পৌনে ৭ লাখ টাকা উধাও হয়ে যায়। শিউলী বেগম হত্যার পর থেকে একমাত্র ছেলে রিয়াদ খানেরও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই রায়হান গাজী বাদী হয়ে শিউলী বেগমের ছেলে রিয়াদ খানকে আসামি করে মামলা করেন। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় র‌্যাব খুলনা-৬ ও ৭-এর একটি দল তাঁকে ফেনী সদর থেকে গ্রেপ্তার করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত