সৈকত দে

১
উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত জোরে খোলে চাঁটি মারতেন যে ভালোভাবে আচ্ছাদিত খোলও অনেক সময় ফেটে যেত। তিনি পুত্রের এসব সাধনা পছন্দ করতেন না। একদিন সব সাধনার জিনিস ব্রহ্মপুত্রের জলে ভাসিয়ে দেন। সেই শোকে পুত্র লোকনাথ মাত্র ৩২ বছরে ইহধাম ত্যাগ করেন আর তখন বউ কৃষ্ণমণি সন্তানসম্ভবা। কৃষ্ণমণির পুত্র কালীনাথ রায় হলেন উপেন্দ্রকিশোরের বাবা।
কালীনাথ তিন ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন—আরবি, ফারসি আর সংস্কৃত। সুকণ্ঠ স্তবের জন্য ভক্ত শ্রোতামণ্ডলীতে তিনি ‘শ্যামসুন্দর’ নামে খ্যাত হয়েছিলেন। জন্মের সময় উপেন্দ্রকিশোরের নাম ছিল কামদারঞ্জন এবং দূরসম্পর্কের এক কাকা হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে পোষ্যপুত্র হিসেবে নিয়ে আসেন ও নাম পাল্টে দেন। উপেন্দ্রকিশোর আর রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উপেন্দ্রকিশোরের বিয়ে হয় ১৮৮৫ সালের ১৫ জুন। ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর সুকুমার জন্মালেন ৷ ১৮৯২ সালের দিকে সুকুমার মসূয়া গ্রাম আর মধুপুরে হাওয়াবদলে এসেছিলেন সপরিবার। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগ মহামারি দেখা দিলে রায়চৌধুরী পরিবার মসূয়ায় চলে আসেন কিছুদিনের জন্য। উপেন্দ্রপুত্র সুকুমার ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহের ‘যুবক বন্ধু’। ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর উপেন্দ্রকিশোর চলে গেলেন। সেদিন ভোরবেলা জানালার পাশে একটা পাখি গান গেয়েছিল আর চারপাশে দণ্ডায়মান বিপন্ন আত্মীয়দের তিনি বললেন, ‘পাখি কী বলে গেল জানো? সে বললে, যাও চিরদিনের পথে এবার শান্তিতে যাও।’ স্ত্রী বললেন, ‘চোখ বুঝলেই কী সুন্দর আলো দেখি, ভগবান কত দয়া করে আমাকে পরকালের পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন।’
সুকুমার রায় বিদেশ থেকে ফেরার পর তাঁর বাবা-মায়ের পাত্রী খোঁজার সময় তিনি যে মন্তব্যটি করেন, তাতে তাঁর ধাতটা বোঝা যায়, ‘সুন্দরটুন্দর বুঝি না, দেখতে খারাপ না হলেই হলো। গান গাইতে পারলে ভালো হয়। আর ঠাট্টাতামাশা করলে যেন বুঝিয়ে বলতে না হয়।’ অর্থাৎ আজকালকার ভাষায় উইট আর সেন্স অব হিউমারসমৃদ্ধ জীবনসঙ্গীর অনুসন্ধানে ছিলেন সুকুমার রায়। সত্যজিৎ রায়ের মা সুপ্রভা রায়, সাধক কালীনারায়ণ গুপ্তের নাতনি। কালীনারায়ণ অসংখ্য সাধনসংগীতের প্রণেতা। সুপ্রভা সুন্দর কণ্ঠের জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্রী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গেয়েছেনও একাধিকবার। ১৯১৩ সালে সুকুমার সুপ্রভার বিয়ে হয়।
বাংলা ১৩২৭ সালের মাঘ মাসে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সুকুমার এবং ১৩২৮ সালের বৈশাখের ঊনবিংশ দিবসে জন্মালেন সত্যজিৎ। ১৯২১ সালে যে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সে কালান্তক ব্যাধি আর তাঁকে বাঁচতে দিল না। ১৯২৩ সালের ২৯ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ সুকুমারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আনন্দের, স্বস্তির, সুখের, পূর্ণতার গান শুনতে চেয়েছিলেন সুকুমার। রবীন্দ্রনাথ বন্ধুর অনুরোধে একাধিক গান গেয়েছিলেন ৷ একটা গান হচ্ছে–‘দুঃখ এ নহে সুখ নহে গো, গভীর শান্তি এ যে।’ ১০ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া আটে চলে গেলেন সুকুমার। কলকাতায় সেদিন ভূমিকম্প ঘটার তথ্য নথিবদ্ধ আছে। মাধুরীলতা রায়ের স্মৃতিকথায় জানা যাচ্ছে, তাঁর শেষ কথা, ‘এইবার বেরিয়ে পড়ি।’ ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৩ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন সুকুমার রায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে। এই ছোট নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কেই দু-একটা কথা বলা হবে।
২
৯ বছর বয়সে, ১৮৯৬ সালে অর্থাৎ বাংলা ১৩০৩ সালের ২ জ্যৈষ্ঠ বালকদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা ‘মুকুল’-এ প্রকাশ পেল সুকুমার রায়ের প্রথম রচনা। এটি ‘নদী’ নামে একটি কবিতা। অল্প বয়সে মুকুল পত্রিকাতে তাঁর একাধিক রচনা প্রকাশিত হয়। ১৯০৪ সালের নভেম্বর সংখ্যা ‘বয়েজ ওন পেপার’-এর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অল এইজেস ডিভিশনের ‘পেটস’ বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার পান। পরের বছর ‘রামধনবধ’ রচনা করেন বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যদিও পরবর্তীকালে পাণ্ডুলিপি লুপ্ত হয়ে গেছে ৷ ১৯০৬ সালে তিনি ফিজিকস আর কেমিস্ট্রিতে অনার্সসহ বিএসএসি পাস করেন। এবং তাঁর তোলা রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি পরের সময়ে ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ তরুণ সুকুমারকে স্নেহ করতেন। ১৩১৮ সালে, ২৪-২৬ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের ৫০তম জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য সুকুমার শান্তিনিকেতনে যান ৷ সেখানে তাঁর রচিত ‘অদ্ভুত রামায়ণ?’ গান হয়। সেখানে ছিল—‘ওরে ভাই তোরে তাই কানে কানে কই রে, ঐ আসে, ঐ আসে, ঐ ঐ ঐ রে’। এই লাইন শুনে আশ্রমিকরা তাঁর নাম দেয়, ‘ঐ আসে?’ এই বছরের অক্টোবরে বোম্বে থেকে ‘এস এস অ্যারাবিয়া’ জাহাজে বিদেশ পাড়ি দেন ৷ প্যারিস, ক্যালে, ডোভার হয়ে লন্ডনে এলেন ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৫ নাগাদ। একদিন বিশ্রাম নিয়ে ২৫ তারিখ ‘লন্ডন কাউন্টি কাউন্সিল স্কুল অব ফটোগ্রেভিং অ্যান্ড লিথোগ্রাফি’-তে ভর্তি হলেন। পড়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজ থেমে থাকছিল না। বন্ধ ছিল না অগ্রজ বন্ধু রবীন্দ্রনাথের প্রতি স্ব-আরোপিত দায়িত্ব। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ লন্ডন এলেন ১৬ জুন। ১৯ জুন উইলিয়াম উইনস্ট্যানলি পিয়ার্সনের বাড়ি বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে নিবন্ধ পড়েন ৷ ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে উপাদান সংগ্রহ করেন সুকুমার। শ্রোতা হিসেবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, রথেনস্টাইন সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্র কবিতার অনুবাদ পাঠ করেন এই সময়ে। উপস্থিত প্রকাশক, সম্পাদকেরা খুশি হন এই অনুবাদে। বলা যেতে পারে, উইজডম অব দ্য ইস্ট সিরিজের সম্পাদকের কথা। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির বছর তত্ত্বকৌমুদী পত্রিকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি, লন্ডনে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার কথা জানা যায়। প্রতি রোববার উপাসনা হতো এখানে। অর্থাৎ সুকুমার রায় প্রবাসে থাকাকালেও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বিচ্যুত হন নাই। ১৯১৩ সালের ১৫ জুন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণে গেলে সন্দেশ প্রথম সংখ্যা পড়ে রবীন্দ্রনাথ আনন্দ পাওয়ার কথা জানান। এই বছরের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ সুপ্রভা দেবীকে বিয়ে করেন। পান্তীর মাঠের কাছে ‘রাজমন্দির’-এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শিলাইদহ থেকে রবীন্দ্রনাথ আসেন। ১৯১৮ সালের রবীন্দ্র জন্মদিনে গান গেয়ে শোনান সুপ্রভা।
বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিশীলতা সুকুমার রায়ের সকল লেখার অভিনিবেশের কেন্দ্র। খেয়ালখুশি বা ননসেন্স লেখাতেও তিনি কখনো কুসংস্কার প্রশ্রয় দেন নাই। সন্দেশ সম্পাদক হিসেবে লেখা শিক্ষাপ্রচারমূলক নিবন্ধ থেকে বিজ্ঞানী সুকুমারকে আমরা চিনে উঠতে পারি। বিজ্ঞান দুনিয়া, যন্ত্রসভ্যতার নিত্যনতুন আবিষ্কারের ইতিহাস কিশোরদের উপযোগী ভাষায় পরিবেশন করেছেন তিনি। পরিবেশনের গুণে কেবল গবেষক নয়, সাধারণ কিশোর পাঠকদের কাছেও লেখাগুলি অমূল্য। বাবা উপেন্দ্রকিশোর বাংলা মুদ্রণ ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি, শিশুসাহিত্যের নিরলস ধারার কথা যদি উহ্য থাকে তবু। পুত্র সুকুমার, জানিয়েছি একটু মাত্র, মুদ্রণের নানা স্তরের অনুপুঙ্খ পাঠ নিতে গেলেন লন্ডনে। এবং, সে দেশেও নিজের প্রজ্ঞায় ও শ্রমে যথেষ্ট মনোযোগ ও সম্মান পেলেন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত না হলে, আমরা আরও কত-কী যে পেতাম, বাংলা সাহিত্য আরও কত রং পেত, এসব আলাপ অনুশোচনাই বাড়াবে। তাই বলি, যা পেয়েছি, তা পাঠ ও চর্চায় যদি আমরা এই অসময়ে নিজের মন রঙিন সার্থক করতে পারি, তবেই সুকুমার রায়ের জীবনসাধনা নতুন মাত্রা পাবে।
সূত্র: এই রচনা সিদ্ধার্থ ঘোষের সুকুমার রায়সংক্রান্ত একাধিক রচনার কাছে ঋণী।

১
উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত জোরে খোলে চাঁটি মারতেন যে ভালোভাবে আচ্ছাদিত খোলও অনেক সময় ফেটে যেত। তিনি পুত্রের এসব সাধনা পছন্দ করতেন না। একদিন সব সাধনার জিনিস ব্রহ্মপুত্রের জলে ভাসিয়ে দেন। সেই শোকে পুত্র লোকনাথ মাত্র ৩২ বছরে ইহধাম ত্যাগ করেন আর তখন বউ কৃষ্ণমণি সন্তানসম্ভবা। কৃষ্ণমণির পুত্র কালীনাথ রায় হলেন উপেন্দ্রকিশোরের বাবা।
কালীনাথ তিন ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন—আরবি, ফারসি আর সংস্কৃত। সুকণ্ঠ স্তবের জন্য ভক্ত শ্রোতামণ্ডলীতে তিনি ‘শ্যামসুন্দর’ নামে খ্যাত হয়েছিলেন। জন্মের সময় উপেন্দ্রকিশোরের নাম ছিল কামদারঞ্জন এবং দূরসম্পর্কের এক কাকা হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে পোষ্যপুত্র হিসেবে নিয়ে আসেন ও নাম পাল্টে দেন। উপেন্দ্রকিশোর আর রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উপেন্দ্রকিশোরের বিয়ে হয় ১৮৮৫ সালের ১৫ জুন। ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর সুকুমার জন্মালেন ৷ ১৮৯২ সালের দিকে সুকুমার মসূয়া গ্রাম আর মধুপুরে হাওয়াবদলে এসেছিলেন সপরিবার। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগ মহামারি দেখা দিলে রায়চৌধুরী পরিবার মসূয়ায় চলে আসেন কিছুদিনের জন্য। উপেন্দ্রপুত্র সুকুমার ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহের ‘যুবক বন্ধু’। ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর উপেন্দ্রকিশোর চলে গেলেন। সেদিন ভোরবেলা জানালার পাশে একটা পাখি গান গেয়েছিল আর চারপাশে দণ্ডায়মান বিপন্ন আত্মীয়দের তিনি বললেন, ‘পাখি কী বলে গেল জানো? সে বললে, যাও চিরদিনের পথে এবার শান্তিতে যাও।’ স্ত্রী বললেন, ‘চোখ বুঝলেই কী সুন্দর আলো দেখি, ভগবান কত দয়া করে আমাকে পরকালের পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন।’
সুকুমার রায় বিদেশ থেকে ফেরার পর তাঁর বাবা-মায়ের পাত্রী খোঁজার সময় তিনি যে মন্তব্যটি করেন, তাতে তাঁর ধাতটা বোঝা যায়, ‘সুন্দরটুন্দর বুঝি না, দেখতে খারাপ না হলেই হলো। গান গাইতে পারলে ভালো হয়। আর ঠাট্টাতামাশা করলে যেন বুঝিয়ে বলতে না হয়।’ অর্থাৎ আজকালকার ভাষায় উইট আর সেন্স অব হিউমারসমৃদ্ধ জীবনসঙ্গীর অনুসন্ধানে ছিলেন সুকুমার রায়। সত্যজিৎ রায়ের মা সুপ্রভা রায়, সাধক কালীনারায়ণ গুপ্তের নাতনি। কালীনারায়ণ অসংখ্য সাধনসংগীতের প্রণেতা। সুপ্রভা সুন্দর কণ্ঠের জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্রী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গেয়েছেনও একাধিকবার। ১৯১৩ সালে সুকুমার সুপ্রভার বিয়ে হয়।
বাংলা ১৩২৭ সালের মাঘ মাসে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সুকুমার এবং ১৩২৮ সালের বৈশাখের ঊনবিংশ দিবসে জন্মালেন সত্যজিৎ। ১৯২১ সালে যে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সে কালান্তক ব্যাধি আর তাঁকে বাঁচতে দিল না। ১৯২৩ সালের ২৯ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ সুকুমারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আনন্দের, স্বস্তির, সুখের, পূর্ণতার গান শুনতে চেয়েছিলেন সুকুমার। রবীন্দ্রনাথ বন্ধুর অনুরোধে একাধিক গান গেয়েছিলেন ৷ একটা গান হচ্ছে–‘দুঃখ এ নহে সুখ নহে গো, গভীর শান্তি এ যে।’ ১০ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া আটে চলে গেলেন সুকুমার। কলকাতায় সেদিন ভূমিকম্প ঘটার তথ্য নথিবদ্ধ আছে। মাধুরীলতা রায়ের স্মৃতিকথায় জানা যাচ্ছে, তাঁর শেষ কথা, ‘এইবার বেরিয়ে পড়ি।’ ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৩ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন সুকুমার রায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে। এই ছোট নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কেই দু-একটা কথা বলা হবে।
২
৯ বছর বয়সে, ১৮৯৬ সালে অর্থাৎ বাংলা ১৩০৩ সালের ২ জ্যৈষ্ঠ বালকদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা ‘মুকুল’-এ প্রকাশ পেল সুকুমার রায়ের প্রথম রচনা। এটি ‘নদী’ নামে একটি কবিতা। অল্প বয়সে মুকুল পত্রিকাতে তাঁর একাধিক রচনা প্রকাশিত হয়। ১৯০৪ সালের নভেম্বর সংখ্যা ‘বয়েজ ওন পেপার’-এর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অল এইজেস ডিভিশনের ‘পেটস’ বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার পান। পরের বছর ‘রামধনবধ’ রচনা করেন বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যদিও পরবর্তীকালে পাণ্ডুলিপি লুপ্ত হয়ে গেছে ৷ ১৯০৬ সালে তিনি ফিজিকস আর কেমিস্ট্রিতে অনার্সসহ বিএসএসি পাস করেন। এবং তাঁর তোলা রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি পরের সময়ে ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ তরুণ সুকুমারকে স্নেহ করতেন। ১৩১৮ সালে, ২৪-২৬ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের ৫০তম জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য সুকুমার শান্তিনিকেতনে যান ৷ সেখানে তাঁর রচিত ‘অদ্ভুত রামায়ণ?’ গান হয়। সেখানে ছিল—‘ওরে ভাই তোরে তাই কানে কানে কই রে, ঐ আসে, ঐ আসে, ঐ ঐ ঐ রে’। এই লাইন শুনে আশ্রমিকরা তাঁর নাম দেয়, ‘ঐ আসে?’ এই বছরের অক্টোবরে বোম্বে থেকে ‘এস এস অ্যারাবিয়া’ জাহাজে বিদেশ পাড়ি দেন ৷ প্যারিস, ক্যালে, ডোভার হয়ে লন্ডনে এলেন ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৫ নাগাদ। একদিন বিশ্রাম নিয়ে ২৫ তারিখ ‘লন্ডন কাউন্টি কাউন্সিল স্কুল অব ফটোগ্রেভিং অ্যান্ড লিথোগ্রাফি’-তে ভর্তি হলেন। পড়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজ থেমে থাকছিল না। বন্ধ ছিল না অগ্রজ বন্ধু রবীন্দ্রনাথের প্রতি স্ব-আরোপিত দায়িত্ব। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ লন্ডন এলেন ১৬ জুন। ১৯ জুন উইলিয়াম উইনস্ট্যানলি পিয়ার্সনের বাড়ি বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে নিবন্ধ পড়েন ৷ ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে উপাদান সংগ্রহ করেন সুকুমার। শ্রোতা হিসেবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, রথেনস্টাইন সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্র কবিতার অনুবাদ পাঠ করেন এই সময়ে। উপস্থিত প্রকাশক, সম্পাদকেরা খুশি হন এই অনুবাদে। বলা যেতে পারে, উইজডম অব দ্য ইস্ট সিরিজের সম্পাদকের কথা। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির বছর তত্ত্বকৌমুদী পত্রিকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি, লন্ডনে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার কথা জানা যায়। প্রতি রোববার উপাসনা হতো এখানে। অর্থাৎ সুকুমার রায় প্রবাসে থাকাকালেও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বিচ্যুত হন নাই। ১৯১৩ সালের ১৫ জুন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণে গেলে সন্দেশ প্রথম সংখ্যা পড়ে রবীন্দ্রনাথ আনন্দ পাওয়ার কথা জানান। এই বছরের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ সুপ্রভা দেবীকে বিয়ে করেন। পান্তীর মাঠের কাছে ‘রাজমন্দির’-এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শিলাইদহ থেকে রবীন্দ্রনাথ আসেন। ১৯১৮ সালের রবীন্দ্র জন্মদিনে গান গেয়ে শোনান সুপ্রভা।
বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিশীলতা সুকুমার রায়ের সকল লেখার অভিনিবেশের কেন্দ্র। খেয়ালখুশি বা ননসেন্স লেখাতেও তিনি কখনো কুসংস্কার প্রশ্রয় দেন নাই। সন্দেশ সম্পাদক হিসেবে লেখা শিক্ষাপ্রচারমূলক নিবন্ধ থেকে বিজ্ঞানী সুকুমারকে আমরা চিনে উঠতে পারি। বিজ্ঞান দুনিয়া, যন্ত্রসভ্যতার নিত্যনতুন আবিষ্কারের ইতিহাস কিশোরদের উপযোগী ভাষায় পরিবেশন করেছেন তিনি। পরিবেশনের গুণে কেবল গবেষক নয়, সাধারণ কিশোর পাঠকদের কাছেও লেখাগুলি অমূল্য। বাবা উপেন্দ্রকিশোর বাংলা মুদ্রণ ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি, শিশুসাহিত্যের নিরলস ধারার কথা যদি উহ্য থাকে তবু। পুত্র সুকুমার, জানিয়েছি একটু মাত্র, মুদ্রণের নানা স্তরের অনুপুঙ্খ পাঠ নিতে গেলেন লন্ডনে। এবং, সে দেশেও নিজের প্রজ্ঞায় ও শ্রমে যথেষ্ট মনোযোগ ও সম্মান পেলেন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত না হলে, আমরা আরও কত-কী যে পেতাম, বাংলা সাহিত্য আরও কত রং পেত, এসব আলাপ অনুশোচনাই বাড়াবে। তাই বলি, যা পেয়েছি, তা পাঠ ও চর্চায় যদি আমরা এই অসময়ে নিজের মন রঙিন সার্থক করতে পারি, তবেই সুকুমার রায়ের জীবনসাধনা নতুন মাত্রা পাবে।
সূত্র: এই রচনা সিদ্ধার্থ ঘোষের সুকুমার রায়সংক্রান্ত একাধিক রচনার কাছে ঋণী।
সৈকত দে

১
উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত জোরে খোলে চাঁটি মারতেন যে ভালোভাবে আচ্ছাদিত খোলও অনেক সময় ফেটে যেত। তিনি পুত্রের এসব সাধনা পছন্দ করতেন না। একদিন সব সাধনার জিনিস ব্রহ্মপুত্রের জলে ভাসিয়ে দেন। সেই শোকে পুত্র লোকনাথ মাত্র ৩২ বছরে ইহধাম ত্যাগ করেন আর তখন বউ কৃষ্ণমণি সন্তানসম্ভবা। কৃষ্ণমণির পুত্র কালীনাথ রায় হলেন উপেন্দ্রকিশোরের বাবা।
কালীনাথ তিন ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন—আরবি, ফারসি আর সংস্কৃত। সুকণ্ঠ স্তবের জন্য ভক্ত শ্রোতামণ্ডলীতে তিনি ‘শ্যামসুন্দর’ নামে খ্যাত হয়েছিলেন। জন্মের সময় উপেন্দ্রকিশোরের নাম ছিল কামদারঞ্জন এবং দূরসম্পর্কের এক কাকা হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে পোষ্যপুত্র হিসেবে নিয়ে আসেন ও নাম পাল্টে দেন। উপেন্দ্রকিশোর আর রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উপেন্দ্রকিশোরের বিয়ে হয় ১৮৮৫ সালের ১৫ জুন। ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর সুকুমার জন্মালেন ৷ ১৮৯২ সালের দিকে সুকুমার মসূয়া গ্রাম আর মধুপুরে হাওয়াবদলে এসেছিলেন সপরিবার। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগ মহামারি দেখা দিলে রায়চৌধুরী পরিবার মসূয়ায় চলে আসেন কিছুদিনের জন্য। উপেন্দ্রপুত্র সুকুমার ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহের ‘যুবক বন্ধু’। ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর উপেন্দ্রকিশোর চলে গেলেন। সেদিন ভোরবেলা জানালার পাশে একটা পাখি গান গেয়েছিল আর চারপাশে দণ্ডায়মান বিপন্ন আত্মীয়দের তিনি বললেন, ‘পাখি কী বলে গেল জানো? সে বললে, যাও চিরদিনের পথে এবার শান্তিতে যাও।’ স্ত্রী বললেন, ‘চোখ বুঝলেই কী সুন্দর আলো দেখি, ভগবান কত দয়া করে আমাকে পরকালের পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন।’
সুকুমার রায় বিদেশ থেকে ফেরার পর তাঁর বাবা-মায়ের পাত্রী খোঁজার সময় তিনি যে মন্তব্যটি করেন, তাতে তাঁর ধাতটা বোঝা যায়, ‘সুন্দরটুন্দর বুঝি না, দেখতে খারাপ না হলেই হলো। গান গাইতে পারলে ভালো হয়। আর ঠাট্টাতামাশা করলে যেন বুঝিয়ে বলতে না হয়।’ অর্থাৎ আজকালকার ভাষায় উইট আর সেন্স অব হিউমারসমৃদ্ধ জীবনসঙ্গীর অনুসন্ধানে ছিলেন সুকুমার রায়। সত্যজিৎ রায়ের মা সুপ্রভা রায়, সাধক কালীনারায়ণ গুপ্তের নাতনি। কালীনারায়ণ অসংখ্য সাধনসংগীতের প্রণেতা। সুপ্রভা সুন্দর কণ্ঠের জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্রী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গেয়েছেনও একাধিকবার। ১৯১৩ সালে সুকুমার সুপ্রভার বিয়ে হয়।
বাংলা ১৩২৭ সালের মাঘ মাসে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সুকুমার এবং ১৩২৮ সালের বৈশাখের ঊনবিংশ দিবসে জন্মালেন সত্যজিৎ। ১৯২১ সালে যে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সে কালান্তক ব্যাধি আর তাঁকে বাঁচতে দিল না। ১৯২৩ সালের ২৯ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ সুকুমারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আনন্দের, স্বস্তির, সুখের, পূর্ণতার গান শুনতে চেয়েছিলেন সুকুমার। রবীন্দ্রনাথ বন্ধুর অনুরোধে একাধিক গান গেয়েছিলেন ৷ একটা গান হচ্ছে–‘দুঃখ এ নহে সুখ নহে গো, গভীর শান্তি এ যে।’ ১০ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া আটে চলে গেলেন সুকুমার। কলকাতায় সেদিন ভূমিকম্প ঘটার তথ্য নথিবদ্ধ আছে। মাধুরীলতা রায়ের স্মৃতিকথায় জানা যাচ্ছে, তাঁর শেষ কথা, ‘এইবার বেরিয়ে পড়ি।’ ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৩ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন সুকুমার রায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে। এই ছোট নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কেই দু-একটা কথা বলা হবে।
২
৯ বছর বয়সে, ১৮৯৬ সালে অর্থাৎ বাংলা ১৩০৩ সালের ২ জ্যৈষ্ঠ বালকদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা ‘মুকুল’-এ প্রকাশ পেল সুকুমার রায়ের প্রথম রচনা। এটি ‘নদী’ নামে একটি কবিতা। অল্প বয়সে মুকুল পত্রিকাতে তাঁর একাধিক রচনা প্রকাশিত হয়। ১৯০৪ সালের নভেম্বর সংখ্যা ‘বয়েজ ওন পেপার’-এর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অল এইজেস ডিভিশনের ‘পেটস’ বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার পান। পরের বছর ‘রামধনবধ’ রচনা করেন বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যদিও পরবর্তীকালে পাণ্ডুলিপি লুপ্ত হয়ে গেছে ৷ ১৯০৬ সালে তিনি ফিজিকস আর কেমিস্ট্রিতে অনার্সসহ বিএসএসি পাস করেন। এবং তাঁর তোলা রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি পরের সময়ে ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ তরুণ সুকুমারকে স্নেহ করতেন। ১৩১৮ সালে, ২৪-২৬ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের ৫০তম জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য সুকুমার শান্তিনিকেতনে যান ৷ সেখানে তাঁর রচিত ‘অদ্ভুত রামায়ণ?’ গান হয়। সেখানে ছিল—‘ওরে ভাই তোরে তাই কানে কানে কই রে, ঐ আসে, ঐ আসে, ঐ ঐ ঐ রে’। এই লাইন শুনে আশ্রমিকরা তাঁর নাম দেয়, ‘ঐ আসে?’ এই বছরের অক্টোবরে বোম্বে থেকে ‘এস এস অ্যারাবিয়া’ জাহাজে বিদেশ পাড়ি দেন ৷ প্যারিস, ক্যালে, ডোভার হয়ে লন্ডনে এলেন ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৫ নাগাদ। একদিন বিশ্রাম নিয়ে ২৫ তারিখ ‘লন্ডন কাউন্টি কাউন্সিল স্কুল অব ফটোগ্রেভিং অ্যান্ড লিথোগ্রাফি’-তে ভর্তি হলেন। পড়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজ থেমে থাকছিল না। বন্ধ ছিল না অগ্রজ বন্ধু রবীন্দ্রনাথের প্রতি স্ব-আরোপিত দায়িত্ব। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ লন্ডন এলেন ১৬ জুন। ১৯ জুন উইলিয়াম উইনস্ট্যানলি পিয়ার্সনের বাড়ি বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে নিবন্ধ পড়েন ৷ ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে উপাদান সংগ্রহ করেন সুকুমার। শ্রোতা হিসেবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, রথেনস্টাইন সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্র কবিতার অনুবাদ পাঠ করেন এই সময়ে। উপস্থিত প্রকাশক, সম্পাদকেরা খুশি হন এই অনুবাদে। বলা যেতে পারে, উইজডম অব দ্য ইস্ট সিরিজের সম্পাদকের কথা। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির বছর তত্ত্বকৌমুদী পত্রিকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি, লন্ডনে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার কথা জানা যায়। প্রতি রোববার উপাসনা হতো এখানে। অর্থাৎ সুকুমার রায় প্রবাসে থাকাকালেও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বিচ্যুত হন নাই। ১৯১৩ সালের ১৫ জুন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণে গেলে সন্দেশ প্রথম সংখ্যা পড়ে রবীন্দ্রনাথ আনন্দ পাওয়ার কথা জানান। এই বছরের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ সুপ্রভা দেবীকে বিয়ে করেন। পান্তীর মাঠের কাছে ‘রাজমন্দির’-এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শিলাইদহ থেকে রবীন্দ্রনাথ আসেন। ১৯১৮ সালের রবীন্দ্র জন্মদিনে গান গেয়ে শোনান সুপ্রভা।
বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিশীলতা সুকুমার রায়ের সকল লেখার অভিনিবেশের কেন্দ্র। খেয়ালখুশি বা ননসেন্স লেখাতেও তিনি কখনো কুসংস্কার প্রশ্রয় দেন নাই। সন্দেশ সম্পাদক হিসেবে লেখা শিক্ষাপ্রচারমূলক নিবন্ধ থেকে বিজ্ঞানী সুকুমারকে আমরা চিনে উঠতে পারি। বিজ্ঞান দুনিয়া, যন্ত্রসভ্যতার নিত্যনতুন আবিষ্কারের ইতিহাস কিশোরদের উপযোগী ভাষায় পরিবেশন করেছেন তিনি। পরিবেশনের গুণে কেবল গবেষক নয়, সাধারণ কিশোর পাঠকদের কাছেও লেখাগুলি অমূল্য। বাবা উপেন্দ্রকিশোর বাংলা মুদ্রণ ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি, শিশুসাহিত্যের নিরলস ধারার কথা যদি উহ্য থাকে তবু। পুত্র সুকুমার, জানিয়েছি একটু মাত্র, মুদ্রণের নানা স্তরের অনুপুঙ্খ পাঠ নিতে গেলেন লন্ডনে। এবং, সে দেশেও নিজের প্রজ্ঞায় ও শ্রমে যথেষ্ট মনোযোগ ও সম্মান পেলেন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত না হলে, আমরা আরও কত-কী যে পেতাম, বাংলা সাহিত্য আরও কত রং পেত, এসব আলাপ অনুশোচনাই বাড়াবে। তাই বলি, যা পেয়েছি, তা পাঠ ও চর্চায় যদি আমরা এই অসময়ে নিজের মন রঙিন সার্থক করতে পারি, তবেই সুকুমার রায়ের জীবনসাধনা নতুন মাত্রা পাবে।
সূত্র: এই রচনা সিদ্ধার্থ ঘোষের সুকুমার রায়সংক্রান্ত একাধিক রচনার কাছে ঋণী।

১
উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত জোরে খোলে চাঁটি মারতেন যে ভালোভাবে আচ্ছাদিত খোলও অনেক সময় ফেটে যেত। তিনি পুত্রের এসব সাধনা পছন্দ করতেন না। একদিন সব সাধনার জিনিস ব্রহ্মপুত্রের জলে ভাসিয়ে দেন। সেই শোকে পুত্র লোকনাথ মাত্র ৩২ বছরে ইহধাম ত্যাগ করেন আর তখন বউ কৃষ্ণমণি সন্তানসম্ভবা। কৃষ্ণমণির পুত্র কালীনাথ রায় হলেন উপেন্দ্রকিশোরের বাবা।
কালীনাথ তিন ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন—আরবি, ফারসি আর সংস্কৃত। সুকণ্ঠ স্তবের জন্য ভক্ত শ্রোতামণ্ডলীতে তিনি ‘শ্যামসুন্দর’ নামে খ্যাত হয়েছিলেন। জন্মের সময় উপেন্দ্রকিশোরের নাম ছিল কামদারঞ্জন এবং দূরসম্পর্কের এক কাকা হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাঁকে পোষ্যপুত্র হিসেবে নিয়ে আসেন ও নাম পাল্টে দেন। উপেন্দ্রকিশোর আর রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। উপেন্দ্রকিশোরের বিয়ে হয় ১৮৮৫ সালের ১৫ জুন। ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর সুকুমার জন্মালেন ৷ ১৮৯২ সালের দিকে সুকুমার মসূয়া গ্রাম আর মধুপুরে হাওয়াবদলে এসেছিলেন সপরিবার। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগ মহামারি দেখা দিলে রায়চৌধুরী পরিবার মসূয়ায় চলে আসেন কিছুদিনের জন্য। উপেন্দ্রপুত্র সুকুমার ছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহের ‘যুবক বন্ধু’। ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর উপেন্দ্রকিশোর চলে গেলেন। সেদিন ভোরবেলা জানালার পাশে একটা পাখি গান গেয়েছিল আর চারপাশে দণ্ডায়মান বিপন্ন আত্মীয়দের তিনি বললেন, ‘পাখি কী বলে গেল জানো? সে বললে, যাও চিরদিনের পথে এবার শান্তিতে যাও।’ স্ত্রী বললেন, ‘চোখ বুঝলেই কী সুন্দর আলো দেখি, ভগবান কত দয়া করে আমাকে পরকালের পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন।’
সুকুমার রায় বিদেশ থেকে ফেরার পর তাঁর বাবা-মায়ের পাত্রী খোঁজার সময় তিনি যে মন্তব্যটি করেন, তাতে তাঁর ধাতটা বোঝা যায়, ‘সুন্দরটুন্দর বুঝি না, দেখতে খারাপ না হলেই হলো। গান গাইতে পারলে ভালো হয়। আর ঠাট্টাতামাশা করলে যেন বুঝিয়ে বলতে না হয়।’ অর্থাৎ আজকালকার ভাষায় উইট আর সেন্স অব হিউমারসমৃদ্ধ জীবনসঙ্গীর অনুসন্ধানে ছিলেন সুকুমার রায়। সত্যজিৎ রায়ের মা সুপ্রভা রায়, সাধক কালীনারায়ণ গুপ্তের নাতনি। কালীনারায়ণ অসংখ্য সাধনসংগীতের প্রণেতা। সুপ্রভা সুন্দর কণ্ঠের জন্য রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্রী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গেয়েছেনও একাধিকবার। ১৯১৩ সালে সুকুমার সুপ্রভার বিয়ে হয়।
বাংলা ১৩২৭ সালের মাঘ মাসে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সুকুমার এবং ১৩২৮ সালের বৈশাখের ঊনবিংশ দিবসে জন্মালেন সত্যজিৎ। ১৯২১ সালে যে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন সে কালান্তক ব্যাধি আর তাঁকে বাঁচতে দিল না। ১৯২৩ সালের ২৯ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ সুকুমারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আনন্দের, স্বস্তির, সুখের, পূর্ণতার গান শুনতে চেয়েছিলেন সুকুমার। রবীন্দ্রনাথ বন্ধুর অনুরোধে একাধিক গান গেয়েছিলেন ৷ একটা গান হচ্ছে–‘দুঃখ এ নহে সুখ নহে গো, গভীর শান্তি এ যে।’ ১০ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া আটে চলে গেলেন সুকুমার। কলকাতায় সেদিন ভূমিকম্প ঘটার তথ্য নথিবদ্ধ আছে। মাধুরীলতা রায়ের স্মৃতিকথায় জানা যাচ্ছে, তাঁর শেষ কথা, ‘এইবার বেরিয়ে পড়ি।’ ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৩ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন সুকুমার রায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে। এই ছোট নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কেই দু-একটা কথা বলা হবে।
২
৯ বছর বয়সে, ১৮৯৬ সালে অর্থাৎ বাংলা ১৩০৩ সালের ২ জ্যৈষ্ঠ বালকদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকা ‘মুকুল’-এ প্রকাশ পেল সুকুমার রায়ের প্রথম রচনা। এটি ‘নদী’ নামে একটি কবিতা। অল্প বয়সে মুকুল পত্রিকাতে তাঁর একাধিক রচনা প্রকাশিত হয়। ১৯০৪ সালের নভেম্বর সংখ্যা ‘বয়েজ ওন পেপার’-এর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অল এইজেস ডিভিশনের ‘পেটস’ বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার পান। পরের বছর ‘রামধনবধ’ রচনা করেন বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যদিও পরবর্তীকালে পাণ্ডুলিপি লুপ্ত হয়ে গেছে ৷ ১৯০৬ সালে তিনি ফিজিকস আর কেমিস্ট্রিতে অনার্সসহ বিএসএসি পাস করেন। এবং তাঁর তোলা রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি পরের সময়ে ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ তরুণ সুকুমারকে স্নেহ করতেন। ১৩১৮ সালে, ২৪-২৬ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের ৫০তম জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য সুকুমার শান্তিনিকেতনে যান ৷ সেখানে তাঁর রচিত ‘অদ্ভুত রামায়ণ?’ গান হয়। সেখানে ছিল—‘ওরে ভাই তোরে তাই কানে কানে কই রে, ঐ আসে, ঐ আসে, ঐ ঐ ঐ রে’। এই লাইন শুনে আশ্রমিকরা তাঁর নাম দেয়, ‘ঐ আসে?’ এই বছরের অক্টোবরে বোম্বে থেকে ‘এস এস অ্যারাবিয়া’ জাহাজে বিদেশ পাড়ি দেন ৷ প্যারিস, ক্যালে, ডোভার হয়ে লন্ডনে এলেন ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৫ নাগাদ। একদিন বিশ্রাম নিয়ে ২৫ তারিখ ‘লন্ডন কাউন্টি কাউন্সিল স্কুল অব ফটোগ্রেভিং অ্যান্ড লিথোগ্রাফি’-তে ভর্তি হলেন। পড়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক কাজ থেমে থাকছিল না। বন্ধ ছিল না অগ্রজ বন্ধু রবীন্দ্রনাথের প্রতি স্ব-আরোপিত দায়িত্ব। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ লন্ডন এলেন ১৬ জুন। ১৯ জুন উইলিয়াম উইনস্ট্যানলি পিয়ার্সনের বাড়ি বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে নিবন্ধ পড়েন ৷ ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে উপাদান সংগ্রহ করেন সুকুমার। শ্রোতা হিসেবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, রথেনস্টাইন সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্র কবিতার অনুবাদ পাঠ করেন এই সময়ে। উপস্থিত প্রকাশক, সম্পাদকেরা খুশি হন এই অনুবাদে। বলা যেতে পারে, উইজডম অব দ্য ইস্ট সিরিজের সম্পাদকের কথা। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির বছর তত্ত্বকৌমুদী পত্রিকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি, লন্ডনে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার কথা জানা যায়। প্রতি রোববার উপাসনা হতো এখানে। অর্থাৎ সুকুমার রায় প্রবাসে থাকাকালেও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বিচ্যুত হন নাই। ১৯১৩ সালের ১৫ জুন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণে গেলে সন্দেশ প্রথম সংখ্যা পড়ে রবীন্দ্রনাথ আনন্দ পাওয়ার কথা জানান। এই বছরের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ সুপ্রভা দেবীকে বিয়ে করেন। পান্তীর মাঠের কাছে ‘রাজমন্দির’-এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শিলাইদহ থেকে রবীন্দ্রনাথ আসেন। ১৯১৮ সালের রবীন্দ্র জন্মদিনে গান গেয়ে শোনান সুপ্রভা।
বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিশীলতা সুকুমার রায়ের সকল লেখার অভিনিবেশের কেন্দ্র। খেয়ালখুশি বা ননসেন্স লেখাতেও তিনি কখনো কুসংস্কার প্রশ্রয় দেন নাই। সন্দেশ সম্পাদক হিসেবে লেখা শিক্ষাপ্রচারমূলক নিবন্ধ থেকে বিজ্ঞানী সুকুমারকে আমরা চিনে উঠতে পারি। বিজ্ঞান দুনিয়া, যন্ত্রসভ্যতার নিত্যনতুন আবিষ্কারের ইতিহাস কিশোরদের উপযোগী ভাষায় পরিবেশন করেছেন তিনি। পরিবেশনের গুণে কেবল গবেষক নয়, সাধারণ কিশোর পাঠকদের কাছেও লেখাগুলি অমূল্য। বাবা উপেন্দ্রকিশোর বাংলা মুদ্রণ ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি, শিশুসাহিত্যের নিরলস ধারার কথা যদি উহ্য থাকে তবু। পুত্র সুকুমার, জানিয়েছি একটু মাত্র, মুদ্রণের নানা স্তরের অনুপুঙ্খ পাঠ নিতে গেলেন লন্ডনে। এবং, সে দেশেও নিজের প্রজ্ঞায় ও শ্রমে যথেষ্ট মনোযোগ ও সম্মান পেলেন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত না হলে, আমরা আরও কত-কী যে পেতাম, বাংলা সাহিত্য আরও কত রং পেত, এসব আলাপ অনুশোচনাই বাড়াবে। তাই বলি, যা পেয়েছি, তা পাঠ ও চর্চায় যদি আমরা এই অসময়ে নিজের মন রঙিন সার্থক করতে পারি, তবেই সুকুমার রায়ের জীবনসাধনা নতুন মাত্রা পাবে।
সূত্র: এই রচনা সিদ্ধার্থ ঘোষের সুকুমার রায়সংক্রান্ত একাধিক রচনার কাছে ঋণী।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

উপেন্দ্রকিশোরের মানসবিশ্ব গড়ে ওঠার পশ্চাৎপট মনে রাখতে হবে আমাদের সুকুমার রায়ের কথা ভাবতে গেলে। তাঁর ঠাকুরদা লোকনাথ রায় ছিলেন তন্ত্রসাধক। রীতিমতো মানুষের মাথার খুলির মালা সহযোগে তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। লোকনাথের বাবা রামকান্ত খোল বাজিয়ে খোলা গলায় কীর্তন গাইতেন আর এত
০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫