ড. তাহা ইয়াসিন

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
ড. তাহা ইয়াসিন

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চিন্তাকে যুগ-মানসে ধারণ করেছিলেন। সমকালে মানুষের অন্তরের আকৃতিকে তিনি তাঁর লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ছিলেন গতিময়তার প্রতীক এবং জীবন-যাপনে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর কালে যৌবনদীপ্ত তারুণ্যের এমন নজির আর নেই। স্বদেশের সার্বিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন নির্ভীক। সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন আপসহীন। অধিকাংশ লেখক-বুদ্ধিজীবী শাসনদণ্ডের কাছে যেমন সর্বকালে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, নজরুল ছিলেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা করেছিলেন ‘উন্নত মম শির’। তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন, সংগ্রামী, গণবাদী ও সাম্যবাদী কবি। তাঁর পূর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি, শাস্ত্র ও সমাজ-সংস্কারমূলক রচনা আর কারও মাধ্যমে ফুটে ওঠেনি। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনতা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় সারা দেশে বিশ ও ত্রিশের দশকে রাজনৈতিক যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে সে আন্দোলনের একজন সৈনিক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সরাসরি রাজনৈতিক ফ্রন্টে না থেকে সাহিত্য রচনার মাধ্যমেও যে মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করা যায়, তিনি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে অনেক সাহিত্যিকের গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে কিন্তু তাদের কাউকে জেল খাটতে হয়নি। নজরুলের অনেক গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। গ্রন্থ নিষিদ্ধ হওয়া ছাড়াও একটি কবিতার (আনন্দময়ীর আগমনে) জন্য তিনি পুরো এক বছর জেল খাটেন।
নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ বিশ শতকের অসন্তুষ্ট ক্ষুব্ধ বাঙালি মানসের প্রোজ্জ্বল প্রতীক। নতুন আবেগের রূপায়ণে পুরোনো আঙ্গিক ও ভাষার অকিঞ্চিৎকরতা শিল্পীকে দুঃসাহসী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিদ্রোহীর ‘আমি’ কেবল কৰি নিজে নন বরং কোনো উদ্দিষ্ট শ্রোতার আত্মশক্তিই বিদ্রোহীর কেন্দ্রীয় বিষয়। এই উদ্দিষ্ট তাঁর সমকালীন সমাজ। ব্যাপক বিদ্রোহের ভেতরে যার জাগরণ সে জাগরণ তিনি কামনা করেছিলেন। উৎপীড়কের উৎখাত এবং উৎপীড়িতের মুক্তি হলেই সংগ্রাম শেষ হবে, অন্যথায় নয়। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি বিদ্রোহীতে দিয়েছেন।
তিনি ‘নবযুগ’, ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙল’ পত্রিকা পরিচালনা করেন। সাংবাদিক হিসেবেও কবিকে দেখা যায় কাব্যিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সাংবাদিক হিসেবে। সংবাদ শিরোনাম, বিজ্ঞাপনের ভাষা, সংবাদ সংক্ষিপ্তকরণ এবং জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লেখার কৌশল তাঁকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পত্রিকাগুলোর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলোর মাঝেও তাঁর দেশমাতৃকার নানা সমস্যাবলি উদ্ঘাটিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এগুলোর আবেদন কালোত্তীর্ণ হয়ে আজও সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে জেগে উঠতে চেতনার সঞ্চার করে। বাঙালি পল্টনে থাকার সময় নজরুল রুশ বিপ্লব সম্পর্কে জেনেছিলেন। করাচির সেনা ব্যারাকে তিনি রুশ বিপ্লবের ঘটনাবলিসংবলিত বই-পুস্তক, পত্রপত্রিকা জোগাড় করে গোপনে পড়তেন। সেই প্রভাবও সাহিত্যিক-সাংবাদিক জীবনে পড়ে। তিনি শ্রমিকশ্রেণির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘দি লেবার স্বরাজ পার্টি অব ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল গঠন করেন এবং সেটির মুখপাত্র হিসেবে ‘লাঙল’ নামক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। এই পার্টির স্বার্থে তিনি নিদারুণ আর্থিক দুর্দশাও সহ্য করেন। এই পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের অনুবাদ, কার্ল মার্ক্সের জীবনী এবং অনুবাদ করেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। শুধু দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ করেই তিনি থেমে থাকেননি, ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে পূর্ববঙ্গে কেন্দ্রীয় আইন সভার নির্বাচনও করেন। সমস্ত ঢাকা বিভাগ অর্থাৎ ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য দুটি মুসলিম আসন সংরক্ষিত ছিল। এই আসনে মুসলমান ভোটাররাই কেবল ভোট দিতে পারতেন। তখন সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটাধিকার দেওয়া হতো। ‘ভোটার ছিলেন মোট ১৮,১১৬ জন।’ ভোটার ছিলেন সম্পদশালী মুসলমানেরা। এরা নজরুলের লেখায় খুশি ছিলেন না বরং তাঁকে কাফের আখ্যা দিয়েছিলেন। ফলে ঘটনা যা হওয়ার তাই হয়। শেষ পর্যন্ত নজরুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
মুসলমান সমাজের গোঁড়ামিকে আঘাত করার জন্য গোঁড়া মুসলমানেরা তাঁকে পছন্দ করতেন না। বিত্তশালী ভোটারদের ভোটে তাঁদেরই প্রার্থী বরিশালের জমিদার ইসমাইল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে নাইট উপাধি পাওয়া আবদুল হালিম গজনবি জয়লাভ করেন। এরপর নজরুল কৃষ্ণনগরে ফিরে গিয়ে দেখেন আর্থিক অনটনে স্ত্রী-পুত্রের জীবন ওষ্ঠাগত। সেই পরিস্থিতিকে সর্বংসহা শাশুড়ি প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে সামাল দেন। নজরুল এই দুর্দিনে লেখেন ‘দারিদ্র্য’ কবিতাটি। নিষ্ঠুর বাস্তবের নির্মম কশাঘাত তাঁকে সাহায্য করেছিল মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণার প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরতে। সর্বকালেই নিঃসঙ্গ, একলা মানুষ অসহায়। নজরুল লেখনী ধারণ করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির এবং জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে। এ জন্য তিনি বসে বসে শুধু লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এসব কাজের মাধ্যমে জনমানুষের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে আসেন। চেষ্টা তিনি কোনো দিক থেকে কম করেননি। কিন্তু প্রতিভাবান এবং জনস্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ মানুষ জনগণের কাছে প্রিয় হন খুব কম। এসবের পরেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষের প্রিয় কবি।
অভাব-অনটন ছিল তাঁর চিরসাথি। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল প্রগাঢ়। অভাব ছিল সংসারে অথচ হৃদয় ছিল পূর্ণ, মনে ছিলেন ঐশ্বর্যশালী। অর্থকে তিনি গ্রাহ্য করেননি এবং অর্থের প্রতি তাঁর মোহ ছিল না। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধায় তিনি ছিলেন আদর্শ পুরুষ। সাহিত্যিক মহলে তিনি বিদ্রোহী কবি আর সংগীতজগতে ছিলেন সবার কাজীদা বলে পরিচিত। বিশ্বাসে এবং আচরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষ।
চিন্তায় নজরুল যেমন ছিলেন মুক্ত মানুষ, তেমনি বাস্তবজীবনেও ছিলেন উদার।
সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের একজন। তিনি নজরুল সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তাও চমৎকার, ‘চোখ দুটি যেন পেয়ালা, কখনো সে পেয়ালা খালি নেই প্রাণের অরুণরসে সদাই ভরপুর। গলাটি সারসের মত পাতলা নয়, পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত তেমনি সবল, বীর্য-ব্যঞ্জক। গলার স্বরটি ছিল ভারী, গলায় যে সুর খেলত বেশি তা বলতে পারিনে, কিন্তু সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু।...স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর দেহ, ছন্দোময় পদক্ষেপ, বহুজনের মধ্যে তাঁকে দূর থেকে চেনা যায় যে এ মানুষ সাধারণ মানুষ নয়। হাসির ঝলকে আসর জমিয়ে রাখেন একাই, আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করেন। কেউ তাঁকে কখনো হতাশ, বিপদগ্রস্ত দেখেছেন বলেন না। একমাত্র তাঁরা বলেছেন যাঁরা স্ত্রীর অসুখের সময় চিকিৎসার জন্য উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করতে দেখেছেন, পুত্র বুলবুলের মৃত্যুর পরের দিনগুলোতে দেখেছেন। তা না হলে কাজী নজরুলকে মনে করলে হাসিখুশি, দরদী, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা একজন মানুষের চেহারা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে।’
তাঁকে নিয়ে আলোচনার শেষ ছিল না, অনেক রটনাও ছিল। বন্ধুর যেমন শেষ ছিল না, ঈর্ষাকাতর লোকও কম ছিল না। বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পর্কে ঈর্ষাকাতর মন্তব্য করেছেন, ‘শনিবারের চিঠি’ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিখেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। নজরুলের জীবনবোধ এবং চিন্তাধারার সহজ গতি, আবেগের আগুনভরা কবিতা, মানুষের হৃদয়ভরা গান বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কারও মাঝে দেখা যায় না। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অনেক বড়, মানবতার জয়গান গেয়েছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সেই আদর্শ বজায় রেখেছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্যে নজরুল স্বতন্ত্র ও অনন্য।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
২৫ মে ২০২৫
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১৩ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২৩ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫