Ajker Patrika

এ দেশে প্রতিবাদেরও কি ‘ফর্মুলা’ আছে

ফজলুল কবির
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ৩৪
এ দেশে প্রতিবাদেরও কি ‘ফর্মুলা’ আছে

এক মাস পার না হতেই সবকিছুই যেন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এই সময়ের জন্যই অপেক্ষা ছিল। জানা ছিল—এসব স্বাভাবিকতা পেয়ে যাবে, যেমন পেয়েছে এর আগে। সবকিছু অনেকটা চিত্রনাট্য মেনেই হয়েছে বলা যায়। কুমিল্লায় হামলা, চাঁদপুরে বিস্তার এবং সেভাবে এগোতে এগোতে এল রংপুরে। তারপর সবার সক্রিয় হয়ে ওঠা। এ এক দারুণ দৃশ্য। সেই নাসিরনগর থেকে শুরু করে সবশেষ রংপুর—কোথাও এই দৃশ্যের কোনো হেরফের হয়নি। 

এসব দৃশ্যের পর নিয়ম মেনে প্রতিবাদ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। পেশাজীবী, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক নানা সংগঠন বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদ করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সবাই বেশ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রতিবাদস্থলগুলোর দিকে তাকালে কিছু প্রশ্ন সামনে এসে যাবে। বিশেষত, প্রতিবাদী কর্মসূচিগুলোর স্থান এবং প্রতিবাদী মুখগুলোর যে ধ্রুব প্রতিরূপ, তা বেশ গুরুতর প্রশ্ন তুলে দেয়। 

রাজধানীর দিকে তাকালে এই প্রতিবাদী কর্মসূচিগুলোর একটি বিশেষ চরিত্রের দেখা মিলবে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানের রাজনীতির প্রসঙ্গটি। এ নিয়ে এখানে কথা বলাটা প্রসঙ্গান্তর হয়ে যেতে পারে। তাই এড়িয়ে যাওয়া হলো। 

রাজধানীতে এই কর্মসূচিগুলো মুখ্যত শাহবাগকেন্দ্রিক। সঙ্গে শহীদ মিনার, রাজু ভাস্কর্য, জাতীয় প্রেসক্লাব ইত্যাদি আছে। এই স্থানগুলোতে গেলে প্রতিদিনই সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে নানা ধারার প্রতিবাদ কর্মসূচির দেখা মিলবে। এর মধ্যে রয়েছে মানববন্ধন (এটি বেশ জনপ্রিয় কর্মসূচি), বিক্ষোভ সমাবেশ বা সমাবেশ, প্রতিবাদী শিল্প প্রদর্শনী, প্রতিবাদী গান-কবিতার আয়োজন, বিক্ষোভ মিছিল, স্মারকলিপি পেশের আগে শোভাযাত্রা ইত্যাদি। ও হ্যাঁ, মশাল মিছিলও হয়েছিল বেশ কয়েকটি। মোমবাতি প্রজ্বালন, প্রতীকী অনশনসহ রয়েছে আরও বিচিত্র সব কর্মসূচি। 

রাজধানীর বাইরে গেলেও এ ধরনের কর্মসূচির মধ্যে এই কয়েকটি ধরনই শুধু পাওয়া যাবে। তবে এলাকাভেদে এই ধরনের বৈচিত্র্যও কমে আসবে নিঃসন্দেহে। আর স্থানের প্রশ্ন উঠলে স্থানীয় প্রেসক্লাব, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রাঙ্গণকেই প্রতিবাদের স্থল হিসেবে বেছে নেওয়ার রেওয়াজ দৃশ্যমান। 

রাজধানী বা রাজধানীর বাইরে এই গুটিকয় স্থানে গেলেই এখন একটা অসাম্প্রদায়িক আবহের দেখা মেলে। না, এ নিয়ে দুঃখ নেই। রাজু ভাস্কর্যে যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে সহিংসতাবিরোধী কনসার্ট হলো, তা তো আশাই জাগায়। সেখানে হাজির হাজারো তরুণ-যুবাসহ নানা বয়সী মানুষের জমায়েত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জনসমাজের একমুখী গতিপথের বিরুদ্ধেই একটা আওয়াজ তৈরি করে। এটা আশাজাগানিয়া। কিন্তু এটিই দুঃখের কারণ হয়, যখন এই জমায়েতের একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ার অস্বস্তিকর প্রশ্নটি সামনে আসে। 

কিছু নির্দিষ্ট প্রতিবাদ নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলেই আবদ্ধ হয়ে পড়াটা নিঃসন্দেহে প্রতিবাদী সেই ভাষার, সেই অবস্থানের পরিসরের সংকুচিত হয়ে পড়ার ইঙ্গিতবাহী। রাজু ভাস্কর্যের কনসার্টে যাঁরা যোগ দিলেন, বা যাঁরা না দিয়েও দূর থেকে সংহতি জানালেন, শাহবাগে প্রতিদিন যাঁরা আসছেন এবং প্রেসক্লাবে যারা রোজ রোজ প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁরা তো গোটা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে আছেন বা থাকেন। কিন্তু এই স্থানগুলোতে আসার আগ পর্যন্ত ঠিক প্ল্যাকার্ডটি বা স্লোগানটি হাতে বা কণ্ঠে তুলে নেন না। চিৎকার করে বলেন না যে ‘এ ঠিক নয়, আমি মানি না।’ অথচ এই স্থানগুলোতে এলে তাঁরা ঠিকই কণ্ঠকে উচ্চগ্রামে তুলে ‘মানি না’ শব্দটি উচ্চারণ করছেন। দিচ্ছেন আরও কড়া কড়া সব স্লোগান। কিন্তু নিজ অঞ্চলে হওয়া হামলার সময় তাঁর কণ্ঠটি হয়তো ঠিকই রুদ্ধ ছিল।

কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলা, চাঁদপুরে বিস্তার এবং সেভাবে রংপুরে হামলা পর্যন্ত দেশের প্রতিবাদী শক্তিগুলো অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকলতাহলে প্রতিবাদের যথার্থ সময়টি পেরিয়ে কেন প্রতিবাদ? এর উত্তর খুঁজতে হলে কয়েকটি অস্বস্তিকর বিষয়ের দিকে তাকাতে হবে। এর প্রথমটি অতি অবশ্যই নিরাপত্তা। নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রথম ধাক্কাতেই বা ঘটনাস্থলেই প্রতিবাদী পদক্ষেপটি না আসার কারণ নিঃসন্দেহে নিরাপত্তা। নাগরিকদের মনে সে সময় নিজের নিরাপত্তার প্রশ্নটিই সবার আগে আসে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি দ্বিধা তৈরি করে, তা হলো প্রতিবাদে সঙ্গী পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে সংশয়। এই সংশয় সঠিক সময়ে প্রতিবাদ করতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই নিরাপত্তা ও প্রতিবাদে সঙ্গী পাওয়াবিষয়ক সংশয়ের সঙ্গে যুক্ত আছে রাষ্ট্রপ্রকল্প। প্রশ্নটির উত্তরে তৃতীয় যে অস্বস্তিকর উত্তর সামনে আসে, তা হলো প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে কিছু বিষয়ের সুনির্দিষ্টায়ন। শুরুতেই যে ধরনগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার বৃত্তের মধ্যেই যেন সব প্রতিবাদ বন্দী হয়ে পড়েছে। সঙ্গে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। 

এ ক্ষেত্রে জনপরিসরে চলমান দুটি প্রবণতা বেশ স্পষ্টভাবে শনাক্ত হয়। এক. কোনো ঘটনা বা ঘটনাপ্রবাহের কারণে নিজের ভেতরে হওয়া বিরুদ্ধভাব নাগরিকেরা প্রথমেই গিলে ফেলার চেষ্টা করেন। তাঁদের মধ্যে একধরনের ভীতি কাজ করে। নিজের ভেতরে হওয়া বিরুদ্ধভাব তাঁর ভেতরে এক অব্যাখ্যাত অস্বস্তির জন্ম দেয়। এই অস্বস্তি প্রতিমুহূর্তে তাঁকে বলে দেয়—‘শান্ত থাকো, তুমিও সংখ্যালঘু।’ কারণ, তাঁর দরজার বাইরে তখন অজস্র যুদ্ধংদেহী মানুষ সংখ্যা ও কণ্ঠের উচ্চতা দিয়ে নিজেদের ‘সংখ্যাগুরু’ হিসেবে ঘোষণা করছে। যদিও বাইরে থাকা সেই আপাত ‘সংখ্যাগুরুও’ জানে না, তারা আসলে কার হয়ে কী খেলছে।

দ্বিতীয় যে প্রবণতা, তাকে অনেকটা সোশ্যাল মিডিয়া সিনড্রোম বলা যায়। এটা অনেকটা মুখ দেখানো বিষয়। ক্যামেরার সামনে মুখ দেখানোর লোভ তো বড় বড় তারকাও সংবরণ করতে পারেন না, সাধারণ মানুষের আর দোষ কী? ফলে এই প্রবণতা এখন মহামারির পর্যায়ে চলে গেছে। এটা হলো অনেকটা নিরাপদ বলয়ে থেকে টুকটাক প্রতিবাদ করা। এর লাভও আছে বেশ, চলতি ধারার সঙ্গেও থাকা যায়, আবার কিছু ফ্যান-ফলোয়ারও তৈরি হয়। ফলে বাস্তব জীবনে একজনের চর্চা যা-ই হোক না কেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই প্রচলিত ন্যায় ধারণার সঙ্গেই থাকতে পছন্দ করেন। এটি একজন ব্যক্তির এমন ভাবমূর্তি তৈরি করে, যা হয়তো ঠিকঠাক তার প্রতিনিধিত্বও করে না। 

এই প্রবণতার নির্মাতা কে? 
এই যে প্রতিবাদের ধরন ও সাধারণের মধ্যে বিদ্যমান প্রবণতা—এর নির্মাতা আসলে কে? এর এক কথায় উত্তর—‘রাষ্ট্র’। রাষ্ট্র কাজটি কোনো ঘোষণা দিয়ে করে না। সে বলেও দেয় না যে এভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন বা ওই স্থানে সমবেত হোন। রাষ্ট্র এ-ও বলে দেয় না যে নিজ পাড়া-মহল্লা বা গ্রামে থেকে প্রতিবাদ করবেন না। এর কোনোটিই রাষ্ট্র উচ্চারণ করে না, প্রজ্ঞাপন দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে ঘোষণা করে না। কিন্তু তার পরও এটি রাষ্ট্রেরই নির্মাণ। 

কীভাবে? এর জন্য রাষ্ট্রের হাতে আছে অগণিত পাঠশালা। প্রথমেই আছে আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আদালত, আইনপ্রণেতা ও তাঁদের দেওয়া বক্তব্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তাঁদের কোলঘেঁষা রাজনীতির ধারা ইত্যাদি আছে সবচেয়ে ওপরের স্তরে, যাকে চোখে দেখা যায় বা যার কার্যক্রম অনুধাবন করা যায়। ফলে যেকোনো অন্যায়ের প্রতিকার চাইতে নাগরিকদের এগুলোর শরণই নিতে দেখা যায়। এই শরণ নেওয়ার পর এই কাঠামোগুলোর আচরণ বা প্রতিক্রিয়া আদতে নির্ধারণ করে দেয়—কোন অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়া যাবে, আর কোনটির নয়। কোন প্রতিবাদ কতটা উচ্চগ্রামে হবে বা আদৌ হবে না—তাও এই পতিক্রিয়ার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়। একটির প্রতিক্রিয়া অন্যটির সীমা নির্ধারণ করে দেয়। রাষ্ট্রের এই তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায়-অন্যায়, আচার-অনাচার ইত্যাদির বহিরাবরণ ঠিক করে দেয়। 

আর এই আচার-অনাচারের মনটি তৈরি করে শিক্ষাক্রম, পাঠদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা সম্পর্কিত রীতি-নীতি ইত্যাদি। আবার এই শিক্ষাক্রম, পাঠদান, রীতি-নীতি ইত্যাদি কে কতটা লঙ্ঘন করতে পারবে, তা দিয়েও জনপরিসরে একটা বার্তা দেওয়া হয়, যা আচার-অনাচারের মন নির্মাণের কাজটি করে। এর সঙ্গে যখন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ইত্যাদি সংগঠন এবং অতি অবশ্যই পরিবার যুক্ত হয়, তখন এই নির্মাতার রূপটিকে আর সহজে চিহ্নিত করা যায় না। আর এই খোলসের মধ্যে থেকেই ক্রমাগত উৎপাদন হয়ে চলে সেই সব ধারণা, যা রাষ্ট্রের কাঠামো ও তার শাসকগোষ্ঠীর টিকে থাকার মূল শর্ত। 

এটি এমন এক সমন্বয়, যা ক্ষমতায় সম্পূর্ণ নতুন কাউকে বসিয়েও ঠিক বদলানো যায় না। ভাঙনপ্রবণ নদীর গভীরে থাকা চোরা স্রোতের সঙ্গেই শুধু এর তুলনা চলে। ওপরে শান্ত নদীর গভীরে থাকা এই চোরা স্রোতই খেয়ে ফেলে পাড়ের মাটি ও বাঁধন। গ্রাস করে একের পর এক ঘর-গেরস্থালি। আর সেই ভাঙন শুরু হলেই কেবল ক্ষয়টি সামনে আসে। 

সাম্প্রদায়িক হামলা ও তার পরবর্তী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে এই এত আলাপের মিল কোথায়? বাংলাদেশ তো বহুত্ববাদের কথা বলে। সরকার থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বারবার অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথাই বলে। সাম্প্রদায়িক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মোটাদাগে সবার কাছ থেকেই সবিস্ময় প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। আর এখানেই হাজির হয় প্রশ্নটি। সাম্প্রদায়িক হামলার এই নজির যদি সত্য হয়, তবে বিস্ময় ঠিক খাপ খায় না। আবার বিস্ময়কে আমলে নিলে হামলার বাস্তবতা তো থাকার কথা নয়। 

রাজধানীতে প্রতিবাদী কর্মসূচিগুলো মুখ্যত শাহবাগকেন্দ্রিককিন্তু দুটোই হচ্ছে। অর্থাৎ, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার যে বাণী, তা একটি শহুরে নাগরিক অভিলাষ মাত্র। এই অভিলাষ বাস্তব রূপ পায়নি। না হলে কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদ তাৎক্ষণিকভাবে কুমিল্লাতেই হওয়ার কথা, তা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বা রংপুর পর্যন্ত যাওয়ার প্রশ্নই উঠত না। ওই একটি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি এলাকায় এমন রাষ্ট্র গড়ার ইচ্ছা পোষণ করা ব্যক্তিরা প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে তেমনটা হয়নি। বরং, একটা ভয়ের আবহ নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোকে দেখা গেছে পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বসতে, খবরের শরীর কাটছাঁট করতে, খবর গিলে ফেলতে। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ত্বরিত পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সেখানেও দ্বিধা ছিল—কতটা এগোনো যাবে, কতটা যাবে না—এই নিয়ে। 

অর্থাৎ, মূল ধারাটি নিয়ে সবাই সংশয়ে ছিল। প্রকৃতিগতভাবেই অধিকাংশ মানুষ মূলধারায় থাকতে চায়। তার সমাজবদ্ধ না হয়ে, জোট না বেঁধে কোনো উপায় নেই। তার বিবর্তনই হয়েছে এই পথ ধরে। ফলে তাকে দল পাকাতে হয়। যে দলে সংখ্যা বেশি, সেই দলেই ভিড়ে যাওয়ার প্রবণতা অধিকাংশের। এ কারণে একটা নিরাপদ আবহ তৈরির আগ পর্যন্ত এমনকি কাউকে ঘটনাস্থল থেকে সুদূর শাহবাগেও সমবেত হতে দেখা যায় না। অথচ, তখনো রংপুর ঘটেনি, ঘটেনি হাজীগঞ্জ। সবার মধ্যেই আরও বড় সংকট এড়ানোর লক্ষ্যে নীরবতা পালনের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। 

কথা হলো, এই নীরবতা পালনের বার্তাটি ঠিক কে দিল? এই বার্তাই আচার-অনাচারের মনের নির্মাতা সেই প্রতিষ্ঠানগুলো দিল। যেগুলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে মোটাদাগে চিহ্নিত করা যায়। 

যখন নীরবতা ভাঙল, তখনো তা কিছু রীতি মেনেই ভাঙল। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি নানা সংগঠন যখন প্রতিবাদে নামল, সমাজের নানা স্তরের পেশাজীবীরা যখন প্রতিবাদী বিবৃতি দিলেন, তখনো সেই একই রীতিই চোখে পড়ল। সুনির্দিষ্ট কিছু স্থান, সুনির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য সামনে এল এবং এখনো আসছে। এও আরেক ধরনের আচারই বলা যায়। সুন্দরবন ধ্বংস হলে যেমন, রাজনীতিবিদ খুন হলে যেমন, অ্যাকটিভিস্ট গুম হলে যেমন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হলে যেমন, কর্মসংস্থানের দাবিও ঠিক তেমনভাবেই মঞ্চায়ন হয়। এও এক প্রকল্পিত ছক। এটিও নানা ঘটনায় নাগরিক প্রতিক্রিয়ার ধরনটি নির্ধারণ করে দেয়। এরও আছে জনপ্রিয় ও অজনপ্রিয় ধারা। এরও আছে মিডিয়াবান্ধব ও অবান্ধব ধারা। এটিও বলে দেয় প্রতিবাদের পথ ঠিক কতটা হাঁটা নিরাপদ, কতটা হাঁটাই দস্তুর। ফলে ঘুরেফিরে মূলধারা থেকে একটু বাইরে চলার ঝুঁকি নেওয়া লোকেরাও এমন একটি বৃত্ত পেয়ে যায়, যাকে ঘিরে স্বচ্ছন্দে দিনের পর দিন ঘুরপাক খাওয়া যায়। আর এই ঘুরপাকই আদতে ‘রাষ্ট্র’ নামের ঘড়িটিকে ঠিক রাখে, যে কিছু বিশেষ ধরনের অন্যায়ের দায়মুক্তি দেয় এবং বহুদিন ধরেই দিয়ে আসছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত