জাহাঙ্গীর আলম

ইংরেজ অর্থনীতিবিদ টমাস রবার্ট ম্যালথাস উনিশ শতকের প্রথমভাগে একটি বিখ্যাত জনমিতিক তত্ত্ব প্রচার করেন। এ তত্ত্বের প্রস্তাব হলো— খাদ্যশস্যের উৎপাদন যখন গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। ম্যালথাসের এই তত্ত্ব অনুসারে স্বাভাবিক নিয়মে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যসংকট এমনকি দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী। এই কারণে ম্যালথাস মনে করতেন, দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষ মারা পড়বে এবং এভাবেই জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
তৎকালীন বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এই তত্ত্ব অনেকখানি সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কৃষি, চিকিৎসা ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের হাত ধরে আর জনসংখ্যা বাড়েনি, উল্টো উন্নত দেশে দ্রুত জন্মহার কমেছে। সেটি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, শিল্পোন্নত দেশগুলো রীতিমতো জনসংখ্যা হ্রাসের সংকটে পড়েছে। এমনকি তরুণ (প্রজননক্ষম) জনগোষ্ঠীকে নানা প্রণোদনা দিয়েও সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করা যাচ্ছে না।
অথচ এক সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নীতি নির্ধারকেরা চরম উদ্বেগে ছিলেন। ১৯৬০–এর দশকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। ওই সময় জন্মহার ছিল বছরে প্রায় দুই শতাংশ। মানুষের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছিল জনসংখ্যা। অবশ্য এর আগের দুই বা তিন শতাব্দীতে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারেই বাড়ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২০ পর সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে শুরু করে।
যিশুখ্রিষ্টের সময় থেকে ১৭ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আবার প্রায় ২০০ বছরে এর দ্বিগুণ হয়। এরপর ১০০ বছরেরও কম সময়ে এর দ্বিগুণ হয়। ১৯৬০–এর দশকে উদ্বেগের বিষয় ছিল, ওই সময়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্থির থাকলে প্রতি ৩৫ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। ওই সময় জনমিতি বিশারদেরা বলেছিলেন, বছরে দুই শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে দুই শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। নীতি নির্ধারকেরা জোর বলাবলি শুরু করেছিলেন—মানবজাতির সুস্থ স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই গতি কমাতেই হবে। আর এর জন্য হয় বিশ্বের জন্মহার কমাতে হবে, অথবা কোনো কারণে মৃত্যুর হার অবশ্যই বাড়তে হবে।
অবশ্য ওই সময় বিশ্বের সব অঞ্চলে জনসংখ্যা সমান হারে বাড়েনি। যে প্রবণতা এখনো বিদ্যমান। শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে—জাপান এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে তখন তুলনামূলকভাবে ধীরে জনসংখ্যা বাড়ছিল। আর শিল্পোন্নত দেশগুলোর আরেকটি গ্রুপ—যুক্তরাষ্ট্র, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া), অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং আর্জেন্টিনা—দেশগুলোতে জাপান ও ইউরোপের ওই দেশগুলোর তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কিছুটা বেশি ছিল।
অপরদিকে এশিয়া (জাপান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের এশিয়া অংশ বাদে), দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ (প্রধানত ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া), আফ্রিকা (ইউরোপীয় সংখ্যালঘুরা বাদে), ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং লাতিন আমেরিকা (আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে বাদে)—মাঝারি থেকে খুব দ্রুত হারে জনসংখ্যা বাড়ছিল। এ সমস্ত এলাকায় বার্ষিক বৃদ্ধির হার দেড় থেকে তিন শতাংশের মধ্যে ছিল।
জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যা এরই মধ্যে টের পেতে শুরু করেছে চীন। যদিও বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। সম্প্রতি ৬০ বছরের মধ্যে জনসংখ্যা হ্রাসের রেকর্ড করেছে দেশটি।
এক কোটির কিছু বেশি মানুষ বাস করে এমন আটটি দেশ গত এক দশকে ধারাবাহিকভাবে জনসংখ্যা হ্রাস দেখছে। এর বেশির ভাগই ইউরোপীয়। ইউক্রেনের জনসংখ্যা রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে হ্রাস পেয়েছে। ইতালি, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং গ্রিসেও মানুষের সংখ্যা কমছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের এই দেশগুলোতে নারী প্রতি শিশুর জন্ম মাত্র ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৬। জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে এর হার ২-এর বেশি হতে হবে।
পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং গ্রিসে একটি বিশাল অংশ বাইরে অভিবাসী হচ্ছে। এসব দেশে মানুষের মধ্যে বিদেশে গিয়ে বসবাসের প্রবণতা বেশি। ইউরোপের বাইরে জাপানও প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমছে। প্রতি নারীর বিপরীতে শিশুর সংখ্যা ১ দশমিক ৩। সেই সঙ্গে এখানে অভিবাসীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। বিপরীতে জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি বড় সংকট হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ লাখের বেশি মানুষ হারিয়েছে জাপান।
মধ্যপ্রাচ্যেও একই অবস্থা। সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের কারণে জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে। লক্ষাধিক শরণার্থী প্রতিবেশী দেশ এবং দূরের কোনো দেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) অনুমান, যুদ্ধে প্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২২ সালের জনশুমারির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে দেশে জন্মহার কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩০ বছর যাবৎই বাংলাদেশে জন্মহার ধারাবাহিকভাবে কমছে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জন্মহার ছিল ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ। জন্মহার কমলেও বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। তবে হ্রাসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এখানেও জনসংখ্যার সংকট দেখা দেবে।
জনসংখ্যা হ্রাসে কিসের প্রভাব
আন্তর্জাতিক অভিবাসন ওই বৃদ্ধির হারে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব ফেলেনি। যেটি বর্তমানে ইউরোপের কিছু দেশে দেখা যাচ্ছে।
ওই গবেষকেরা দেখেছেন, জন্মহার হ্রাসের তাৎক্ষণিক কারণ ছিল বিবাহিতদের মধ্যে প্রজনন সক্ষমতার ওপর ইচ্ছাকৃত নিয়ন্ত্রণ। অবশ্য এর একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল আয়ারল্যান্ডে। সেখানে বেশি বয়সে বিয়ে এবং অবিবাহিত থাকার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। ওই দেশে বিয়ের গড় বয়স বেড়ে হয়েছিল ২৮ বছর। আইরিশ নারীদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি ৪৫ বছর বয়সে অবিবাহিত থেকে যেতেন।
অবশ্য অন্যান্য দেশে আয়ারল্যান্ডের মতো সামাজিক পরিবর্তন জন্মের হারের ওপর নগণ্য বা অনুকূল প্রভাব ফেলেছে। এই দেশগুলোতে—ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, নিম্ন দেশ (উত্তর–পশ্চিম ইউরোপের উপকূলীয় দেশ—বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গ), জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্স—বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে গর্ভনিরোধ পদ্ধতি গ্রহণ চর্চার কারণে জন্মহার কমে যায়। তবে বর্তমান সময়ের মতো প্রজনন সক্ষমতার কমে যাওয়ার কোনো উদ্বেগ তখন ছিল না। বরং খাদ্য, পুষ্টি, উন্নত চিকিৎসা এবং উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে বরং মানুষের প্রজনন সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল।
পশ্চিম ইউরোপে জন্মহার হ্রাসের একটি সামান্য অংশই গর্ভনিরোধের আধুনিক কৌশল উদ্ভাবনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এর কারণ প্রথমত, কিছু ইউরোপীয় দেশে গর্ভনিরোধক কৌশলের উদ্ভাবন এবং ব্যাপক উৎপাদনের আগে জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগের মতো গ্রেট ব্রিটেনের অর্ধেকেরও বেশি দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুশীলন করছিল। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতেও একই পরিস্থিতি ছিল।
তার মানে, জন্মহার হ্রাস গর্ভনিরোধের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলাফল নয়। বরং বিবাহিত দম্পতিরা বহু শতাব্দী ধরে চর্চিত স্থানীয় পদ্ধতি অবলম্বন করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপের জন্মহার পতনকে ব্যাখ্যা করতে হলে সেখানকার অধিবাসীদের কম সন্তান ধারণের জন্য নিজেদের যৌন আচরণ পরিবর্তন করার ইচ্ছাকেই বিবেচনায় নিতে হবে। মনোভাবের এই ধরনের পরিবর্তন নিঃসন্দেহে পশ্চিম ইউরোপের শিল্পায়ন ও আধুনিকীকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একটি অংশ ছিল।
মনোভাবের এই বিশেষ পরিবর্তনের অন্তর্নিহিত কারণগুলোর মধ্যে সন্তান জন্মদানের অর্থনৈতিক পরিণতির পরিবর্তন অন্যতম। প্রাক-শিল্প-প্রধান কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুরা অল্প বয়সেই কাজে সাহায্য করতে শুরু করে; আধুনিক সময়ে শিক্ষাগ্রহণের দীর্ঘ সময়ে তারা অভিভাবকের ওপর নির্ভরশীল থাকে না। তারা বৃদ্ধ পিতামাতার অবলম্বন হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে উচ্চ মৃত্যুহার বেশি সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় অনুঘটক ছিল। অন্যদিকে, একটি শহুরে, শিল্পোন্নত সমাজে শিশুদের ‘অর্থনৈতিক মূল্য’ কম, বিপরীতে তারা বড় ‘অর্থনৈতিক বোঝা’!
মনোভাবের পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে পারে এমন সামাজিক কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো—অর্থনৈতিক একক হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব কমে যাওয়া। ইউরোপের শিল্পায়ন এবং আধুনিকীকরণের সঙ্গে এর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। একটি শিল্পোন্নত অর্থনীতিতে পরিবার আর উৎপাদনের একক থাকে না। এ ধরনের পরিবারে বা সমাজে ব্যক্তিকে বিচার করা হয় কে কার চেয়ে বেশি উপার্জন করে তা দিয়ে। সন্তানেরা বড় হয়ে চাকরির খোঁজে বাড়ি ছাড়ে। বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে আর সন্তানদের ওপর নির্ভর করে না।
এই ধরনের আধুনিকীকরণ চলতে থাকায় নারীদের জন্যও জনশিক্ষা প্রসারিত হয়। এই শিক্ষা একটি শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরির জন্য অপরিহার্য। এইভাবে নারীদের ঐতিহ্যগত অধস্তন ভূমিকায় থাকার পরিবর্তিত ঘটে। যেহেতু শিশুদের যত্নের ভার পড়ে মূলত নারীদের ওপর, তাই নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি সম্ভবত পরিবারের আকার ইচ্ছাকৃতভাবে ছোট করে আনার মনোভাব বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এ ছাড়া একটি দেশের শিল্পায়ন এবং আধুনিকীকরণের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো প্রথা ও ঐতিহ্যের জায়গায় ধর্মনিরপেক্ষতা, বাস্তববাদ এবং যুক্তিবাদের উত্থানের পাশাপাশি ঘটে। যেহেতু একটি জাতির আধুনিকায়নের সঙ্গে পরিবেশের ক্রমবর্ধমান পরিসরের ওপর মানুষের ইচ্ছাকৃত নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেহেতু এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, শিল্পায়নের মধ্য দিয়ে বিকশিত একটি অর্থনীতিতে বসবাসকারী লোকেরা তাদের নিয়ন্ত্রণের পরিসর—নিজেদের যৌন কার্যকলাপের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেবে কি না—সে পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।
ব্যক্তিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভোগের নানা ক্ষেত্র প্রসারিত হওয়ার কারণে অনেক মানুষ এখন অবিবাহিত থাকতেই পছন্দ করছে। শুধু ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনায় চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে মেয়েরা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে জড়াচ্ছে না। উন্নত দেশে সন্তান লালন–পালন এখন রীতিমতো আভিজাত্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি একটি সন্তান লালন পালনের সামর্থ্য রাখাটা সক্ষমতার প্রশ্নে সামাজিক মর্যাদার বৃদ্ধির বিষয় বলেই মনে করেন অনেকে!
এটি স্পষ্ট যে, শিল্পায়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জন্মহার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। তবে জন্মহার কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসবের প্রভাব বেশ ধীর। এর জন্য দরকার হয় সমাজে গভীরভাবে প্রবিষ্ট প্রথার পরিবর্তন।
জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব
তরুণেরা যখন বড় শহর এবং শহরে চলে যায়, তখন তারা যে জায়গাটি রেখে যায় সেখানে জনসংখ্যার গড় বয়স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়। বয়স্ক বাসিন্দাদের উচ্চ অনুপাতসহ একটি সমাজ তখন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের জন্য কম আকর্ষণীয় হতে থাকে। কারণ স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত কর্মী খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ভোক্তার সংকটে পড়ে ব্যবসা আর লাভজনক থাকে না।
কম শিশু থাকার কারণে কমবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; আবাসন ব্যবসায় ধস নামবে; বহু বাড়ি খালি পড়ে থাকবে; কেয়ার হোমের সংকট তৈরি হবে; ভোক্তা কমে যাওয়ায় ব্যবসা–বাণিজ্যের টার্নওভার কমবে; খেলাধুলার সুযোগ কমবে; থিয়েটার, সিনেমা বা কনসার্টে কম লোক যাবে, ফলে এ ধরনের চর্চার সুযোগ কমবে; গণপরিবহনে কম লোক যাতায়াত করবে, ফলে চলাচল হয়ে উঠবে ব্যয়বহুল; স্থানীয় বাসিন্দাদের তাদের পছন্দের স্থানে যেতে অনেক দূর ভ্রমণ করতে হবে— ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমিস প্রেস, বিবিসি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

ইংরেজ অর্থনীতিবিদ টমাস রবার্ট ম্যালথাস উনিশ শতকের প্রথমভাগে একটি বিখ্যাত জনমিতিক তত্ত্ব প্রচার করেন। এ তত্ত্বের প্রস্তাব হলো— খাদ্যশস্যের উৎপাদন যখন গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। ম্যালথাসের এই তত্ত্ব অনুসারে স্বাভাবিক নিয়মে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যসংকট এমনকি দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী। এই কারণে ম্যালথাস মনে করতেন, দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ভিক্ষের কারণে মানুষ মারা পড়বে এবং এভাবেই জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
তৎকালীন বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এই তত্ত্ব অনেকখানি সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কৃষি, চিকিৎসা ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের হাত ধরে আর জনসংখ্যা বাড়েনি, উল্টো উন্নত দেশে দ্রুত জন্মহার কমেছে। সেটি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে, শিল্পোন্নত দেশগুলো রীতিমতো জনসংখ্যা হ্রাসের সংকটে পড়েছে। এমনকি তরুণ (প্রজননক্ষম) জনগোষ্ঠীকে নানা প্রণোদনা দিয়েও সন্তান গ্রহণে উৎসাহিত করা যাচ্ছে না।
অথচ এক সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নীতি নির্ধারকেরা চরম উদ্বেগে ছিলেন। ১৯৬০–এর দশকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। ওই সময় জন্মহার ছিল বছরে প্রায় দুই শতাংশ। মানুষের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছিল জনসংখ্যা। অবশ্য এর আগের দুই বা তিন শতাব্দীতে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারেই বাড়ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২০ পর সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে শুরু করে।
যিশুখ্রিষ্টের সময় থেকে ১৭ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। আবার প্রায় ২০০ বছরে এর দ্বিগুণ হয়। এরপর ১০০ বছরেরও কম সময়ে এর দ্বিগুণ হয়। ১৯৬০–এর দশকে উদ্বেগের বিষয় ছিল, ওই সময়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্থির থাকলে প্রতি ৩৫ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে। ওই সময় জনমিতি বিশারদেরা বলেছিলেন, বছরে দুই শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে দুই শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ১৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাবে। নীতি নির্ধারকেরা জোর বলাবলি শুরু করেছিলেন—মানবজাতির সুস্থ স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই গতি কমাতেই হবে। আর এর জন্য হয় বিশ্বের জন্মহার কমাতে হবে, অথবা কোনো কারণে মৃত্যুর হার অবশ্যই বাড়তে হবে।
অবশ্য ওই সময় বিশ্বের সব অঞ্চলে জনসংখ্যা সমান হারে বাড়েনি। যে প্রবণতা এখনো বিদ্যমান। শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে—জাপান এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশে তখন তুলনামূলকভাবে ধীরে জনসংখ্যা বাড়ছিল। আর শিল্পোন্নত দেশগুলোর আরেকটি গ্রুপ—যুক্তরাষ্ট্র, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া), অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং আর্জেন্টিনা—দেশগুলোতে জাপান ও ইউরোপের ওই দেশগুলোর তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার কিছুটা বেশি ছিল।
অপরদিকে এশিয়া (জাপান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের এশিয়া অংশ বাদে), দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ (প্রধানত ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া), আফ্রিকা (ইউরোপীয় সংখ্যালঘুরা বাদে), ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং লাতিন আমেরিকা (আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে বাদে)—মাঝারি থেকে খুব দ্রুত হারে জনসংখ্যা বাড়ছিল। এ সমস্ত এলাকায় বার্ষিক বৃদ্ধির হার দেড় থেকে তিন শতাংশের মধ্যে ছিল।
জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যা এরই মধ্যে টের পেতে শুরু করেছে চীন। যদিও বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন। সম্প্রতি ৬০ বছরের মধ্যে জনসংখ্যা হ্রাসের রেকর্ড করেছে দেশটি।
এক কোটির কিছু বেশি মানুষ বাস করে এমন আটটি দেশ গত এক দশকে ধারাবাহিকভাবে জনসংখ্যা হ্রাস দেখছে। এর বেশির ভাগই ইউরোপীয়। ইউক্রেনের জনসংখ্যা রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে হ্রাস পেয়েছে। ইতালি, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং গ্রিসেও মানুষের সংখ্যা কমছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের এই দেশগুলোতে নারী প্রতি শিশুর জন্ম মাত্র ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৬। জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে এর হার ২-এর বেশি হতে হবে।
পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং গ্রিসে একটি বিশাল অংশ বাইরে অভিবাসী হচ্ছে। এসব দেশে মানুষের মধ্যে বিদেশে গিয়ে বসবাসের প্রবণতা বেশি। ইউরোপের বাইরে জাপানও প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমছে। প্রতি নারীর বিপরীতে শিশুর সংখ্যা ১ দশমিক ৩। সেই সঙ্গে এখানে অভিবাসীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। বিপরীতে জাপানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি বড় সংকট হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ লাখের বেশি মানুষ হারিয়েছে জাপান।
মধ্যপ্রাচ্যেও একই অবস্থা। সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের কারণে জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে। লক্ষাধিক শরণার্থী প্রতিবেশী দেশ এবং দূরের কোনো দেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) অনুমান, যুদ্ধে প্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২২ সালের জনশুমারির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে দেশে জন্মহার কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩০ বছর যাবৎই বাংলাদেশে জন্মহার ধারাবাহিকভাবে কমছে। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের জন্মহার ছিল ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, সর্বশেষ ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ। জন্মহার কমলেও বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। তবে হ্রাসের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এখানেও জনসংখ্যার সংকট দেখা দেবে।
জনসংখ্যা হ্রাসে কিসের প্রভাব
আন্তর্জাতিক অভিবাসন ওই বৃদ্ধির হারে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব ফেলেনি। যেটি বর্তমানে ইউরোপের কিছু দেশে দেখা যাচ্ছে।
ওই গবেষকেরা দেখেছেন, জন্মহার হ্রাসের তাৎক্ষণিক কারণ ছিল বিবাহিতদের মধ্যে প্রজনন সক্ষমতার ওপর ইচ্ছাকৃত নিয়ন্ত্রণ। অবশ্য এর একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল আয়ারল্যান্ডে। সেখানে বেশি বয়সে বিয়ে এবং অবিবাহিত থাকার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। ওই দেশে বিয়ের গড় বয়স বেড়ে হয়েছিল ২৮ বছর। আইরিশ নারীদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি ৪৫ বছর বয়সে অবিবাহিত থেকে যেতেন।
অবশ্য অন্যান্য দেশে আয়ারল্যান্ডের মতো সামাজিক পরিবর্তন জন্মের হারের ওপর নগণ্য বা অনুকূল প্রভাব ফেলেছে। এই দেশগুলোতে—ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, নিম্ন দেশ (উত্তর–পশ্চিম ইউরোপের উপকূলীয় দেশ—বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গ), জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্স—বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে গর্ভনিরোধ পদ্ধতি গ্রহণ চর্চার কারণে জন্মহার কমে যায়। তবে বর্তমান সময়ের মতো প্রজনন সক্ষমতার কমে যাওয়ার কোনো উদ্বেগ তখন ছিল না। বরং খাদ্য, পুষ্টি, উন্নত চিকিৎসা এবং উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে বরং মানুষের প্রজনন সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল।
পশ্চিম ইউরোপে জন্মহার হ্রাসের একটি সামান্য অংশই গর্ভনিরোধের আধুনিক কৌশল উদ্ভাবনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এর কারণ প্রথমত, কিছু ইউরোপীয় দেশে গর্ভনিরোধক কৌশলের উদ্ভাবন এবং ব্যাপক উৎপাদনের আগে জন্মহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগের মতো গ্রেট ব্রিটেনের অর্ধেকেরও বেশি দম্পতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুশীলন করছিল। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতেও একই পরিস্থিতি ছিল।
তার মানে, জন্মহার হ্রাস গর্ভনিরোধের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলাফল নয়। বরং বিবাহিত দম্পতিরা বহু শতাব্দী ধরে চর্চিত স্থানীয় পদ্ধতি অবলম্বন করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপের জন্মহার পতনকে ব্যাখ্যা করতে হলে সেখানকার অধিবাসীদের কম সন্তান ধারণের জন্য নিজেদের যৌন আচরণ পরিবর্তন করার ইচ্ছাকেই বিবেচনায় নিতে হবে। মনোভাবের এই ধরনের পরিবর্তন নিঃসন্দেহে পশ্চিম ইউরোপের শিল্পায়ন ও আধুনিকীকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের একটি অংশ ছিল।
মনোভাবের এই বিশেষ পরিবর্তনের অন্তর্নিহিত কারণগুলোর মধ্যে সন্তান জন্মদানের অর্থনৈতিক পরিণতির পরিবর্তন অন্যতম। প্রাক-শিল্প-প্রধান কৃষিভিত্তিক সমাজে শিশুরা অল্প বয়সেই কাজে সাহায্য করতে শুরু করে; আধুনিক সময়ে শিক্ষাগ্রহণের দীর্ঘ সময়ে তারা অভিভাবকের ওপর নির্ভরশীল থাকে না। তারা বৃদ্ধ পিতামাতার অবলম্বন হয়ে ওঠে, সেই সঙ্গে উচ্চ মৃত্যুহার বেশি সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় অনুঘটক ছিল। অন্যদিকে, একটি শহুরে, শিল্পোন্নত সমাজে শিশুদের ‘অর্থনৈতিক মূল্য’ কম, বিপরীতে তারা বড় ‘অর্থনৈতিক বোঝা’!
মনোভাবের পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে পারে এমন সামাজিক কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো—অর্থনৈতিক একক হিসেবে পরিবারের গুরুত্ব কমে যাওয়া। ইউরোপের শিল্পায়ন এবং আধুনিকীকরণের সঙ্গে এর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। একটি শিল্পোন্নত অর্থনীতিতে পরিবার আর উৎপাদনের একক থাকে না। এ ধরনের পরিবারে বা সমাজে ব্যক্তিকে বিচার করা হয় কে কার চেয়ে বেশি উপার্জন করে তা দিয়ে। সন্তানেরা বড় হয়ে চাকরির খোঁজে বাড়ি ছাড়ে। বাবা-মা বৃদ্ধ বয়সে আর সন্তানদের ওপর নির্ভর করে না।
এই ধরনের আধুনিকীকরণ চলতে থাকায় নারীদের জন্যও জনশিক্ষা প্রসারিত হয়। এই শিক্ষা একটি শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরির জন্য অপরিহার্য। এইভাবে নারীদের ঐতিহ্যগত অধস্তন ভূমিকায় থাকার পরিবর্তিত ঘটে। যেহেতু শিশুদের যত্নের ভার পড়ে মূলত নারীদের ওপর, তাই নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি সম্ভবত পরিবারের আকার ইচ্ছাকৃতভাবে ছোট করে আনার মনোভাব বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এ ছাড়া একটি দেশের শিল্পায়ন এবং আধুনিকীকরণের বৈশিষ্ট্যযুক্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো প্রথা ও ঐতিহ্যের জায়গায় ধর্মনিরপেক্ষতা, বাস্তববাদ এবং যুক্তিবাদের উত্থানের পাশাপাশি ঘটে। যেহেতু একটি জাতির আধুনিকায়নের সঙ্গে পরিবেশের ক্রমবর্ধমান পরিসরের ওপর মানুষের ইচ্ছাকৃত নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেহেতু এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে, শিল্পায়নের মধ্য দিয়ে বিকশিত একটি অর্থনীতিতে বসবাসকারী লোকেরা তাদের নিয়ন্ত্রণের পরিসর—নিজেদের যৌন কার্যকলাপের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেবে কি না—সে পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে।
ব্যক্তিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভোগের নানা ক্ষেত্র প্রসারিত হওয়ার কারণে অনেক মানুষ এখন অবিবাহিত থাকতেই পছন্দ করছে। শুধু ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনায় চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে মেয়েরা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে জড়াচ্ছে না। উন্নত দেশে সন্তান লালন–পালন এখন রীতিমতো আভিজাত্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিজের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি একটি সন্তান লালন পালনের সামর্থ্য রাখাটা সক্ষমতার প্রশ্নে সামাজিক মর্যাদার বৃদ্ধির বিষয় বলেই মনে করেন অনেকে!
এটি স্পষ্ট যে, শিল্পায়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জন্মহার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। তবে জন্মহার কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসবের প্রভাব বেশ ধীর। এর জন্য দরকার হয় সমাজে গভীরভাবে প্রবিষ্ট প্রথার পরিবর্তন।
জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব
তরুণেরা যখন বড় শহর এবং শহরে চলে যায়, তখন তারা যে জায়গাটি রেখে যায় সেখানে জনসংখ্যার গড় বয়স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়। বয়স্ক বাসিন্দাদের উচ্চ অনুপাতসহ একটি সমাজ তখন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তাদের জন্য কম আকর্ষণীয় হতে থাকে। কারণ স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত কর্মী খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে ভোক্তার সংকটে পড়ে ব্যবসা আর লাভজনক থাকে না।
কম শিশু থাকার কারণে কমবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; আবাসন ব্যবসায় ধস নামবে; বহু বাড়ি খালি পড়ে থাকবে; কেয়ার হোমের সংকট তৈরি হবে; ভোক্তা কমে যাওয়ায় ব্যবসা–বাণিজ্যের টার্নওভার কমবে; খেলাধুলার সুযোগ কমবে; থিয়েটার, সিনেমা বা কনসার্টে কম লোক যাবে, ফলে এ ধরনের চর্চার সুযোগ কমবে; গণপরিবহনে কম লোক যাতায়াত করবে, ফলে চলাচল হয়ে উঠবে ব্যয়বহুল; স্থানীয় বাসিন্দাদের তাদের পছন্দের স্থানে যেতে অনেক দূর ভ্রমণ করতে হবে— ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমিস প্রেস, বিবিসি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

এক সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নীতি নির্ধারকেরা চরম উদ্বেগে ছিলেন। ১৯৬০–এর দশকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। ওই সময় জন্মহার ছিল বছরে প্রায় দুই শতাংশ। মানুষের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছিল জনসংখ্যা। অবশ্য এর আগের দুই বা তিন শতাব্দীতে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারেই বাড়ছিল
১১ জুলাই ২০২৩
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

এক সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নীতি নির্ধারকেরা চরম উদ্বেগে ছিলেন। ১৯৬০–এর দশকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। ওই সময় জন্মহার ছিল বছরে প্রায় দুই শতাংশ। মানুষের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছিল জনসংখ্যা। অবশ্য এর আগের দুই বা তিন শতাব্দীতে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারেই বাড়ছিল
১১ জুলাই ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

এক সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নীতি নির্ধারকেরা চরম উদ্বেগে ছিলেন। ১৯৬০–এর দশকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। ওই সময় জন্মহার ছিল বছরে প্রায় দুই শতাংশ। মানুষের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছিল জনসংখ্যা। অবশ্য এর আগের দুই বা তিন শতাব্দীতে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারেই বাড়ছিল
১১ জুলাই ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এক সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নীতি নির্ধারকেরা চরম উদ্বেগে ছিলেন। ১৯৬০–এর দশকে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। ওই সময় জন্মহার ছিল বছরে প্রায় দুই শতাংশ। মানুষের ইতিহাসে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছিল জনসংখ্যা। অবশ্য এর আগের দুই বা তিন শতাব্দীতে জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারেই বাড়ছিল
১১ জুলাই ২০২৩
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
২০ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
২ দিন আগে