
সুদানের গৃহযুদ্ধ শুধু অভ্যন্তরীণ দুই পক্ষের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই; দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলও নানাভাবে জড়িয়ে পড়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান ও বিদ্রোহী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেতি আন্তর্জাতিক মহলের দাবার ঘুঁটি হয়ে পড়েছেন।
যুদ্ধরত এক পক্ষের হাতে বন্দী ২৭ সেনাকে ফিরিয়ে এনেছে মিসর। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিবিয়ার এক যুদ্ধবাজ নেতা এরই মধ্যে সুদানের একটি পক্ষকে অস্ত্র দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি রাশিয়ার কুখ্যাত বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারও সুদানের যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ওয়াগনার অস্ত্র দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে।
২০১৯ সালে বিপুল বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশিরের তিন দশকের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর দেশটিতে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিলেন অনেকে। কিন্তু আফ্রিকার এই তৃতীয় বৃহত্তম দেশে বৈশ্বিক শক্তিগুলো স্বার্থান্বেষী হস্তক্ষেপের কারণে তা আর শিগগির হয়ে উঠছে না।
নীল নদ ও লোহিত সাগর অঞ্চলে খনিজ ও কৃষিসমৃদ্ধ সুদান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে দশকব্যাপী নানা পক্ষের নিষেধাজ্ঞা ও কোণঠাসা করে রাখার নীতি। এই পরিস্থিতি তৃতীয় পক্ষের অনানুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
রাশিয়া সুদানের লোহিত সাগরসংলগ্ন বন্দরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের চেষ্টা করছে। লোভনীয় স্বর্ণের খনির হিস্যা পেতে মরিয়া ওয়াগনার গ্রুপ।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহামেদ হামদানকে ইয়েমেনে যুদ্ধের জন্য নানা সহযোগিতা দিয়েছে। মিসর পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে আরেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল বুরহানকে। তিনি পাচ্ছেন সেনা ও যুদ্ধবিমান।
এদিকে ইসরায়েলও বসে নেই—এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে কিছু একটা অর্জনের স্বপ্ন দেখছে তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি চাইলেও গোপনে আরও কিছু পেতে চায় তেল আবিব।
তবে পশ্চিমের জন্য সেখানে প্রভাব বিস্তার খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যখন রাশিয়া ও চীন আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তারে অনেকখানি এগিয়ে গেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফট ভ্যালি ইনস্টিটিউটের সুদানি বিশ্লেষক মাগদি আল গিজৌলি সঠিকভাবেই বলেছেন, সুদানে সবাই কিছু না কিছুর হিস্যা চায়। এখানে এত বেশি স্বার্থান্বেষী পক্ষ তৎপর যে ক্ষমতার ভারসাম্য বলে আর কিছু নেই! এরই মধ্যে একাধিক বৈদেশিক শক্তি পক্ষ নিয়ে ফেলেছে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিটির নাম সংযুক্ত আরব আমিরাত। হর্ন অব আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন দেশ সুদানের গৃহযুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
সুদানের বিপুল কৃষি সম্ভাবনাকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচনা করে আমিরাত। কিন্তু কাতারের সঙ্গে বিরোধের সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বশির সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আমিরাত ও সৌদি আরব সুদানের উন্নয়নে ৩০০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দেয়।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, সুদানের এই গৃহযুদ্ধে আরব আমিরাতের কোনো আগ্রহ নেই। তবে পশ্চিমা একটি দেশ (অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র) আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়েছে, আরব আমিরাতের হয়তো অনেক কিছু নিয়েই এখন খেদ হচ্ছে। সুদানে তাদের নেটওয়ার্ক-সেন্ট্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি বেশ জটিলতার মধ্যে পড়েছে। এটি আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই।
সুদানে আরব আমিরাতের প্রভাব বিস্তারের গল্পটা মোটামুটি সরল। রাজতন্ত্রের প্রভাব এই অঞ্চলে বিস্তার করতে চাওয়াই লক্ষ্য। আবুধাবির বনি ফাতিমা রাজবংশ সুদানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। তারা অভিনব উপায়ে দেশটির বৃহৎ ব্যাংক, করপোরেশন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে নিজেদের ভাড়াটে ও বেতনভোগী সেনাও রয়েছে।
আরব আমিরাতের গল্প হলো, সুদানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নিজের কৌশলগত অবস্থান তৈরি করা। এর ফাঁকে সুদানের ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো পরিচালনায় সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করা।
যদিও আরব আমিরাত-সুদানের সম্পর্ক দেশ দুটির বৈদেশিক ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু এর আড়ালে বনি ফাতিমা বংশ সুদানে রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে।
সুদানে বনি ফাতিমার গড়ে তোলা নেটওয়ার্কগুলো আবুধাবির সঙ্গে সব সময় সম্পর্ক রাখছে। এসব নেটওয়ার্কের মধ্য রয়েছে নিজেদের পক্ষ, প্রতিপক্ষ, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ছোট-বড় নানা পর্যায়ের ব্যক্তি। এরা এই অঞ্চলসহ সারা বিশ্বে আরব আমিরাতকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে।
মাকড়সার জালের মতো ছড়ানো প্রভাব
সুদানের আরএসএফের প্রধান হেমেতির সঙ্গে আরব আমিরাতের সম্পর্ক দেশটির গৃহযুদ্ধের পেছনে নাড়ির সম্পর্কের মতো। এটি পোঁতা আছে আবুধাবিতে। আরব বসন্তের পর আমিরাতি পক্ষগুলো সুদানে হেমেতিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অভ্যুত্থানে সহযোগিতা করেছিল। এসব পক্ষ সুদানের রাজধানী খার্তুমের অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
হেমেতি বর্তমানে আরব আমিরাতের তৈরি নকশা অনুযায়ীই যুদ্ধ করে যাচ্ছে। সুদানে আরব আমিরাত-ভিত্তিক ব্যাংক ও সম্মুখসারির কোম্পানিগুলো আরএসএফকে অর্থায়ন করে থাকে।
ইয়েমেন আক্রমণে সৌদি আরব-আরব আমিরাতে যৌথ অভিযানে এ পর্যন্ত হেমেতি হাজারো সৈন্য পাঠিয়েছে। হেমেতি দিনে দিনে আমিরাতি নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। আবুধাবির হয়ে ইয়েমেনে অভিযান পরিচালনার জন্য হেমেতি অস্ত্র ও মোটা অঙ্কের অর্থও পেয়েছেন।
সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে আরএসফের সৈন্যদের হাতে আরব আমিরাতের কেনা থার্মোবারিক বোমা দেখা গেছে। তবে একটি বিষয় অনিশ্চিত যে, এসব অস্ত্র আরব আমিরাত সরাসরি আরএসএফকে দিয়েছে নাকি লিবিয়ার সংগঠনগুলোর মাধ্যমে দিয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে লিবিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে আরব আমিরাত ও রাশিয়া প্রভাব বিস্তার করে আসছে। আরব আমিরাতের তৈরি খলিফা হাফতার বাহিনী ও রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপ এখন লিবিয়ার গণ্ডি ছেড়ে সুদানেও প্রবেশ করছে।
হর্ন অব আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য এই অঞ্চলে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হলো আরব আমিরাত। লিবিয়ায় দেশ দুটির যৌথ অভিযানের বিষয়ে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছিল আরব আমিরাতেই।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আরব আমিরাত ওয়াগনার গ্রুপ সৃষ্টিতে অর্থ ঢেলেছে। যারা এখন উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠেছে।
সুষম ক্ষমতার খেলা
ওয়াগনার গ্রুপ যখন আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দিকে অগ্রসরমাণ তখন সৈন্যদের একটি দল সুদানে ঢুকে পড়ে। তারা দেশটির খনি শিল্প ও স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে থাকে। এ সময় উদয় হয় হেমেতির। বাজারে স্বর্ণ প্রবেশের চ্যানেল তৈরি করে দিয়ে এই ব্যবসার মূল উপকারভোগী হয়ে ওঠেন। তিনি ওয়াগনার গ্রুপকে আফ্রিকার আরও অঞ্চলে ঢুকে পড়ার সুযোগ করে দেন।
এদিকে দুবাই এসব স্বর্ণের ক্রেতা। আরব আমিরাত আফ্রিকার স্থানীয় নেতাদের আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতেও মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে এই অঞ্চল থেকে রাশিয়াকে অর্থ সহযোগিতাও নিশ্চিত করেছে দুবাই।
এমনকি ওয়াগনার নেটওয়ার্কের আওতাধীন কোম্পানিগুলোকে আরব আমিরাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল। আফ্রিকায় সৈন্য, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে একটি লজিস্টিক সাপোর্ট কোম্পানির ওপর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এই অঞ্চলে আরব আমিরাতের সৃষ্ট ও পরিচালিত নেটওয়ার্ক এখন স্বয়ংক্রিয়। এখন আবুধাবি শুধু অর্থসংস্থান ও কাঠামোগত বিষয়গুলো ঠিক করে দেয়। পক্ষীয় গ্রুপগুলো পরিচালনার জটিল প্রক্রিয়া সুষমভাবেই গঠিত, কোথাও কোনো ফাঁকফোকর নেই। পক্ষগুলো নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নে ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত।
২০১৯ সালে হেমেতি লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে হাফতার বাহিনীর সমর্থনে ১ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। সহযোগী হিসেবে হাফতার বাহিনীও এখন হেমেতির সমর্থনে সুদানে সৈন্য পাঠাচ্ছে।
খোলা চোখেই দেখা যাচ্ছে, এসব অসম ক্ষমতার লড়াই শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলায় রূপ নিয়েছে, এই পরিস্থিতি এখন কোনো ব্যক্তি বা দেশের নিয়ন্ত্রণে নেই। আরব আমিরাত এখানে শুধু কেন্দ্র হয়ে আছে, যাকে নিজেদের স্বার্থে তৈরি করেছিল আমিরাত, সে এখন তার ক্ষমতার চর্চা শুরু করেছে।
পশ্চিমা কূটনীতিকেরা এখন এই গৃহযুদ্ধের জন্য আরব আমিরাতের দিকেই আঙুল তুলছেন। তাঁরা দেশটির নেটওয়ার্ক-সেন্ট্রিক রাজনীতির সমালোচনা করছেন। কেননা, এই ব্যবস্থা বছরের পর বছর ধরে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহ ও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অর্থসংস্থানে সাহায্য করে আসছে।
এখন সুদানের এই গৃহযুদ্ধ যে-ই থামানোর উদ্যোগ নিক না কেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র হলেও, সেই পক্ষকে বসতে হবে আরব আমিরাতের সঙ্গেই। কারণ জেনারেল হেমেতি কী করতে যাচ্ছেন তা নির্ভর করছে আরব আমিরাতের ওপর।
নিউইয়র্ক টাইমস ও মিডলইস্ট মনিটর থেকে অনুবাদ মুহম্মদ আবদুল বাছেদ

সুদানের গৃহযুদ্ধ শুধু অভ্যন্তরীণ দুই পক্ষের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই; দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলও নানাভাবে জড়িয়ে পড়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান ও বিদ্রোহী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) প্রধান মোহামেদ হামদান দাগালো ওরফে হেমেতি আন্তর্জাতিক মহলের দাবার ঘুঁটি হয়ে পড়েছেন।
যুদ্ধরত এক পক্ষের হাতে বন্দী ২৭ সেনাকে ফিরিয়ে এনেছে মিসর। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লিবিয়ার এক যুদ্ধবাজ নেতা এরই মধ্যে সুদানের একটি পক্ষকে অস্ত্র দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি রাশিয়ার কুখ্যাত বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারও সুদানের যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তারা মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিলেও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ওয়াগনার অস্ত্র দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে।
২০১৯ সালে বিপুল বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আল বশিরের তিন দশকের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর দেশটিতে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছিলেন অনেকে। কিন্তু আফ্রিকার এই তৃতীয় বৃহত্তম দেশে বৈশ্বিক শক্তিগুলো স্বার্থান্বেষী হস্তক্ষেপের কারণে তা আর শিগগির হয়ে উঠছে না।
নীল নদ ও লোহিত সাগর অঞ্চলে খনিজ ও কৃষিসমৃদ্ধ সুদান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে দশকব্যাপী নানা পক্ষের নিষেধাজ্ঞা ও কোণঠাসা করে রাখার নীতি। এই পরিস্থিতি তৃতীয় পক্ষের অনানুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
রাশিয়া সুদানের লোহিত সাগরসংলগ্ন বন্দরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের চেষ্টা করছে। লোভনীয় স্বর্ণের খনির হিস্যা পেতে মরিয়া ওয়াগনার গ্রুপ।
সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহামেদ হামদানকে ইয়েমেনে যুদ্ধের জন্য নানা সহযোগিতা দিয়েছে। মিসর পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে আরেক সেনা কর্মকর্তা জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল বুরহানকে। তিনি পাচ্ছেন সেনা ও যুদ্ধবিমান।
এদিকে ইসরায়েলও বসে নেই—এই যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে কিছু একটা অর্জনের স্বপ্ন দেখছে তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি চাইলেও গোপনে আরও কিছু পেতে চায় তেল আবিব।
তবে পশ্চিমের জন্য সেখানে প্রভাব বিস্তার খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যখন রাশিয়া ও চীন আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তারে অনেকখানি এগিয়ে গেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফট ভ্যালি ইনস্টিটিউটের সুদানি বিশ্লেষক মাগদি আল গিজৌলি সঠিকভাবেই বলেছেন, সুদানে সবাই কিছু না কিছুর হিস্যা চায়। এখানে এত বেশি স্বার্থান্বেষী পক্ষ তৎপর যে ক্ষমতার ভারসাম্য বলে আর কিছু নেই! এরই মধ্যে একাধিক বৈদেশিক শক্তি পক্ষ নিয়ে ফেলেছে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ শক্তিটির নাম সংযুক্ত আরব আমিরাত। হর্ন অব আফ্রিকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন দেশ সুদানের গৃহযুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
সুদানের বিপুল কৃষি সম্ভাবনাকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচনা করে আমিরাত। কিন্তু কাতারের সঙ্গে বিরোধের সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বশির সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আমিরাত ও সৌদি আরব সুদানের উন্নয়নে ৩০০ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দেয়।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, সুদানের এই গৃহযুদ্ধে আরব আমিরাতের কোনো আগ্রহ নেই। তবে পশ্চিমা একটি দেশ (অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র) আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়েছে, আরব আমিরাতের হয়তো অনেক কিছু নিয়েই এখন খেদ হচ্ছে। সুদানে তাদের নেটওয়ার্ক-সেন্ট্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি বেশ জটিলতার মধ্যে পড়েছে। এটি আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই।
সুদানে আরব আমিরাতের প্রভাব বিস্তারের গল্পটা মোটামুটি সরল। রাজতন্ত্রের প্রভাব এই অঞ্চলে বিস্তার করতে চাওয়াই লক্ষ্য। আবুধাবির বনি ফাতিমা রাজবংশ সুদানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে। তারা অভিনব উপায়ে দেশটির বৃহৎ ব্যাংক, করপোরেশন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে নিজেদের ভাড়াটে ও বেতনভোগী সেনাও রয়েছে।
আরব আমিরাতের গল্প হলো, সুদানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে নিজের কৌশলগত অবস্থান তৈরি করা। এর ফাঁকে সুদানের ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো পরিচালনায় সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করা।
যদিও আরব আমিরাত-সুদানের সম্পর্ক দেশ দুটির বৈদেশিক ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কিন্তু এর আড়ালে বনি ফাতিমা বংশ সুদানে রাজনীতির কলকাঠি নাড়ে।
সুদানে বনি ফাতিমার গড়ে তোলা নেটওয়ার্কগুলো আবুধাবির সঙ্গে সব সময় সম্পর্ক রাখছে। এসব নেটওয়ার্কের মধ্য রয়েছে নিজেদের পক্ষ, প্রতিপক্ষ, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ছোট-বড় নানা পর্যায়ের ব্যক্তি। এরা এই অঞ্চলসহ সারা বিশ্বে আরব আমিরাতকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে।
মাকড়সার জালের মতো ছড়ানো প্রভাব
সুদানের আরএসএফের প্রধান হেমেতির সঙ্গে আরব আমিরাতের সম্পর্ক দেশটির গৃহযুদ্ধের পেছনে নাড়ির সম্পর্কের মতো। এটি পোঁতা আছে আবুধাবিতে। আরব বসন্তের পর আমিরাতি পক্ষগুলো সুদানে হেমেতিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অভ্যুত্থানে সহযোগিতা করেছিল। এসব পক্ষ সুদানের রাজধানী খার্তুমের অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
হেমেতি বর্তমানে আরব আমিরাতের তৈরি নকশা অনুযায়ীই যুদ্ধ করে যাচ্ছে। সুদানে আরব আমিরাত-ভিত্তিক ব্যাংক ও সম্মুখসারির কোম্পানিগুলো আরএসএফকে অর্থায়ন করে থাকে।
ইয়েমেন আক্রমণে সৌদি আরব-আরব আমিরাতে যৌথ অভিযানে এ পর্যন্ত হেমেতি হাজারো সৈন্য পাঠিয়েছে। হেমেতি দিনে দিনে আমিরাতি নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। আবুধাবির হয়ে ইয়েমেনে অভিযান পরিচালনার জন্য হেমেতি অস্ত্র ও মোটা অঙ্কের অর্থও পেয়েছেন।
সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে আরএসফের সৈন্যদের হাতে আরব আমিরাতের কেনা থার্মোবারিক বোমা দেখা গেছে। তবে একটি বিষয় অনিশ্চিত যে, এসব অস্ত্র আরব আমিরাত সরাসরি আরএসএফকে দিয়েছে নাকি লিবিয়ার সংগঠনগুলোর মাধ্যমে দিয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে লিবিয়ায় শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে আরব আমিরাত ও রাশিয়া প্রভাব বিস্তার করে আসছে। আরব আমিরাতের তৈরি খলিফা হাফতার বাহিনী ও রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের সংগঠন ওয়াগনার গ্রুপ এখন লিবিয়ার গণ্ডি ছেড়ে সুদানেও প্রবেশ করছে।
হর্ন অব আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য এই অঞ্চলে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ঘাঁটি হলো আরব আমিরাত। লিবিয়ায় দেশ দুটির যৌথ অভিযানের বিষয়ে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছিল আরব আমিরাতেই।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আরব আমিরাত ওয়াগনার গ্রুপ সৃষ্টিতে অর্থ ঢেলেছে। যারা এখন উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠেছে।
সুষম ক্ষমতার খেলা
ওয়াগনার গ্রুপ যখন আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দিকে অগ্রসরমাণ তখন সৈন্যদের একটি দল সুদানে ঢুকে পড়ে। তারা দেশটির খনি শিল্প ও স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে থাকে। এ সময় উদয় হয় হেমেতির। বাজারে স্বর্ণ প্রবেশের চ্যানেল তৈরি করে দিয়ে এই ব্যবসার মূল উপকারভোগী হয়ে ওঠেন। তিনি ওয়াগনার গ্রুপকে আফ্রিকার আরও অঞ্চলে ঢুকে পড়ার সুযোগ করে দেন।
এদিকে দুবাই এসব স্বর্ণের ক্রেতা। আরব আমিরাত আফ্রিকার স্থানীয় নেতাদের আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতেও মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে এই অঞ্চল থেকে রাশিয়াকে অর্থ সহযোগিতাও নিশ্চিত করেছে দুবাই।
এমনকি ওয়াগনার নেটওয়ার্কের আওতাধীন কোম্পানিগুলোকে আরব আমিরাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগও করে দেওয়া হয়েছিল। আফ্রিকায় সৈন্য, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে একটি লজিস্টিক সাপোর্ট কোম্পানির ওপর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এই অঞ্চলে আরব আমিরাতের সৃষ্ট ও পরিচালিত নেটওয়ার্ক এখন স্বয়ংক্রিয়। এখন আবুধাবি শুধু অর্থসংস্থান ও কাঠামোগত বিষয়গুলো ঠিক করে দেয়। পক্ষীয় গ্রুপগুলো পরিচালনার জটিল প্রক্রিয়া সুষমভাবেই গঠিত, কোথাও কোনো ফাঁকফোকর নেই। পক্ষগুলো নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নে ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত।
২০১৯ সালে হেমেতি লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে হাফতার বাহিনীর সমর্থনে ১ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। সহযোগী হিসেবে হাফতার বাহিনীও এখন হেমেতির সমর্থনে সুদানে সৈন্য পাঠাচ্ছে।
খোলা চোখেই দেখা যাচ্ছে, এসব অসম ক্ষমতার লড়াই শেষ পর্যন্ত বিশৃঙ্খলায় রূপ নিয়েছে, এই পরিস্থিতি এখন কোনো ব্যক্তি বা দেশের নিয়ন্ত্রণে নেই। আরব আমিরাত এখানে শুধু কেন্দ্র হয়ে আছে, যাকে নিজেদের স্বার্থে তৈরি করেছিল আমিরাত, সে এখন তার ক্ষমতার চর্চা শুরু করেছে।
পশ্চিমা কূটনীতিকেরা এখন এই গৃহযুদ্ধের জন্য আরব আমিরাতের দিকেই আঙুল তুলছেন। তাঁরা দেশটির নেটওয়ার্ক-সেন্ট্রিক রাজনীতির সমালোচনা করছেন। কেননা, এই ব্যবস্থা বছরের পর বছর ধরে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহ ও ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অর্থসংস্থানে সাহায্য করে আসছে।
এখন সুদানের এই গৃহযুদ্ধ যে-ই থামানোর উদ্যোগ নিক না কেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র হলেও, সেই পক্ষকে বসতে হবে আরব আমিরাতের সঙ্গেই। কারণ জেনারেল হেমেতি কী করতে যাচ্ছেন তা নির্ভর করছে আরব আমিরাতের ওপর।
নিউইয়র্ক টাইমস ও মিডলইস্ট মনিটর থেকে অনুবাদ মুহম্মদ আবদুল বাছেদ

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

নিল নদ এবং লোহিত সাগর অঞ্চলে খনিজ ও কৃষিসমৃদ্ধ সুদান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে দশকব্যাপী নানা পক্ষের নিষেধাজ্ঞা এবং কোণঠাসা করে রাখার নীতি। এই পরিস্থিতি তৃতীয় পক্ষের অনানুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। রাশিয়া সুদানের লোহিত সাগরসংলগ্ন বন্দরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের চ
০২ মে ২০২৩
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

নিল নদ এবং লোহিত সাগর অঞ্চলে খনিজ ও কৃষিসমৃদ্ধ সুদান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে দশকব্যাপী নানা পক্ষের নিষেধাজ্ঞা এবং কোণঠাসা করে রাখার নীতি। এই পরিস্থিতি তৃতীয় পক্ষের অনানুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। রাশিয়া সুদানের লোহিত সাগরসংলগ্ন বন্দরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের চ
০২ মে ২০২৩
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নিল নদ এবং লোহিত সাগর অঞ্চলে খনিজ ও কৃষিসমৃদ্ধ সুদান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে দশকব্যাপী নানা পক্ষের নিষেধাজ্ঞা এবং কোণঠাসা করে রাখার নীতি। এই পরিস্থিতি তৃতীয় পক্ষের অনানুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। রাশিয়া সুদানের লোহিত সাগরসংলগ্ন বন্দরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের চ
০২ মে ২০২৩
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

নিল নদ এবং লোহিত সাগর অঞ্চলে খনিজ ও কৃষিসমৃদ্ধ সুদান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে দশকব্যাপী নানা পক্ষের নিষেধাজ্ঞা এবং কোণঠাসা করে রাখার নীতি। এই পরিস্থিতি তৃতীয় পক্ষের অনানুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। রাশিয়া সুদানের লোহিত সাগরসংলগ্ন বন্দরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের চ
০২ মে ২০২৩
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে