ইমরান খান

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পরমাণুবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন আন্দ্রে দিমিত্রিভিচ শাখারভ। সোভিয়েত ঘরানার ভাবনা হিসাবে নিলে তিনি ছিলেন ভিন্নমতাবলম্বী। পরমাণু অস্ত্র তৈরি-ব্যবহার ও রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধী হওয়ায় তৎকালীন নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ ছিল। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি জনসমক্ষে তীব্র প্রতিবাদ করলে তাঁকে গোর্কি শহরে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ গ্লাসনস্তের নীতির অধীন শাখারভকে মুক্তি দেন। তবে গর্বাচেভের এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় রাশিয়ায় দমনপীড়ন স্তিমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ এত দিনেও দেখা যায়নি; বরং আরও প্রকট হচ্ছে।
আন্দ্রে শাখারভ প্রায়ই যুক্তি দিতেন এই বলে যে, কোনো দেশে দমনপীড়ন চললে দেশটির অবস্থান বিদেশে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। মৃত্যুর তিন দশক পর এসেও রাশিয়ায় তাঁর এই যুক্তির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মেমোরিয়াল নামের একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত-যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের নিক্তিতে মেমোরিয়ালের এসব তথ্য আর শাখারভের যুক্তি আজ যেন এক পাল্লায় হাজির। ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অন্ধকার সময়ে ঢুকে গেছে। দেশে দমনপীড়নকে ন্যায্যতা দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জনগণকে বলছেন, রাশিয়ান জীবনধারাকে ধ্বংস করতে পশ্চিমা নীতি বিশেষভাবে নকশা করা। এভাবে জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে পুতিন ক্ষমতায় টেকার চেষ্টা চালালেও পশ্চিমের সঙ্গে তাঁর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক প্রতিনিয়তই গাঢ় হচ্ছে। এর ভবিষ্যৎ যে কোথায় ঠেকবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

শাখারভ পুরস্কার বিজয়ী আলেক্সি নাভালনি রাশিয়ায় নিপীড়নের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করায় ৪৪ বছর বয়সী বিরোধীদলীয় নেতা ও আইনজীবী নাভালনিকে গত বছরের আগস্টে বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল উঠছে পুতিন ও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির দিকে। প্রায় পাঁচ মাস জার্মানিতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে গত ১৭ জানুয়ারি মস্কো বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাবন্দী আলেক্সি নাভালনির শারীরিক অবস্থা ‘নাটকীয়ভাবে খারাপ হচ্ছে’ বলে চিকিৎসকেরা খোলা চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা ও মুক্তির দাবি তোলা হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হলেও তাঁকে মুক্তি না দিয়ে রাখা হয়েছে দেশের অন্যতম কুখ্যাত কারাগার ‘পেনাল কলোনি নম্বর ২’-এ।
নাভালনিকে গ্রেপ্তার করেই থেমে থাকেনি পুতিন সরকার। ২০১১ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন’-কে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। নাভালনির বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থককে দেশছাড়া করা হয়েছে। সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা দেশে আছেন, তাঁদেরও খোঁজা হচ্ছে। নাভালনির পক্ষে কাজ করার জন্য ৯ নভেম্বর অধিকারকর্মী লিলিয়া চানিসেভাকে গ্রেপ্তার করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিপীড়নের এই জাল ছড়িয়ে পড়েছে রাজনীতির বাইরেও। চানিসেভাকে গ্রেপ্তারের দিনই রাশিয়ার শীর্ষ উদারনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী সের্গেই জুয়েভকে (৬৭) কারাগারে নেওয়া হয়। হৃদ্রোগের চিকিৎসা নিয়ে সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা এই প্রশাসককে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে কারাগারে নিয়ে একটি বানোয়াট মামলায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার বাজেট হিসাব বলছে, ২০২০ সালে রাশিয়ার মোট বাজেট ছিল ১ হাজার ১১৬ বিলিয়ন রুবল। এর মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতের জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৩৪ বিলিয়ন রুবল। অর্থাৎ মোট বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করা হয় এই খাতে। ইকোনমিস্ট বলছে, এই খাতের জন্য নির্ধারিত বাজেটের বেশির ভাগই খরচ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণভাবে। ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছর পুলিশ এবং নিরাপত্তা খাতে ১০ শতাংশ বেশি লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে কর্মরত সেনার চেয়ে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি করে রাশিয়ার বহু পুলিশ ও নিরাপত্তা খাতের লোক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিনিময়ে এরা পুতিনের শাসন, দুর্নীতির, আয় কমার প্রতিবাদে রাজপথে নামা নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য গভর্নমেন্ট ফিন্যান্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন ‘অ্যানাটমি অব আ প্রায়োরিটি ড্রাইভেন বাজেট প্রসেস’-এ বলা হয়েছে, কোন খাতে সরকার কী পরিমাণ বাজেট দেবে, তা নির্ভর করে ওই খাত থেকে কতটা পরিষেবা প্রত্যাশা করে তার ওপর। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূল বিষয়। এভাবে গুরুত্বসহকারে খাত তালিকাবদ্ধ করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাজেট বণ্টন করা হয়। যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেওয়ার ইচ্ছে, প্রবণতা থাকে ওই খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ বাজেট দেওয়ার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দশকে রাশিয়ায় ব্যাপক সমৃদ্ধি হয়। তবে তাঁর দমনপীড়ন বর্তমানে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা থেকে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা তাঁর জন্য এক রকম অসম্ভব। অবশ্য জ্বালানির উচ্চমূল্য, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও ক্রেমলিন ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে ভালো একটি জায়গায় পৌঁছেছে, যা রাশিয়ার জন্য কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করতে পারে। তবে চীনের মতো টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের কোনো চেষ্টা আপাতত রাশিয়া দেখাতে পারছে না।
রাশিয়ায় পুতিনপন্থীরা জোর দিয়ে বলছেন, সেখানকার পরিবার, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ পশ্চিমা বিশ্বের কারণে কলুষিত হচ্ছে। এ থেকে নিজেদের রক্ষা করার বিষয়েও তাঁরা সোচ্চার। পশ্চিমের বিরুদ্ধে ‘লড়াই করা’ ক্রেমলিনের কোনো নীতির বিরোধিতা করলেই তকমা দেওয়া হচ্ছে ‘বিদেশি এজেন্ট’। এই তকমার মূল শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বৈরশাসকেরা তাঁদের সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন’-কে সব সময় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আর সেই ঢাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিপীড়নকে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এভাবে সৃষ্ট সহিংসতা প্রায়ই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোকেও এ পথেই হাঁটতে দেখা গেছে। সেখানেও ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাশিয়া একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে গুলি করে নামিয়েছে এবং বেলারুশ এক স্থানীয় ভিন্নমতাবলম্বীকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ছিনতাই করেছে। স্বনির্বাসিত হয়ে বেলারুশের সরকারবিরোধী অনেকে পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

বড় পরিসরে বিবেচনা করলে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিপক্ষে পশ্চিমা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। তিনি কখনো কখনো টিকাবিরোধী প্রচারণা চালান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হন বা সৈন্য জমায়েত করেন ইউক্রেন সীমান্তে। তিনি গ্যাসের অতিরিক্ত সরবরাহের প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেন ও মলদোভার মতো দেশগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টাও চালান।
তবে সুখবর হলো, রাশিয়ার সব মানুষ কিন্তু পুতিনে বুঁদ নয়। মোট জনগণের অধিকাংশই বেশির ভাগ সংঘর্ষের সুবিধায় বিশ্বাসী নন। পুতিনের নানাবিধ প্রচারের মাঝেও দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের পশ্চিম সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বলছেন, রাশিয়ার উচিত পশ্চিমকে অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা। এরই মধ্যে তরুণদের মধ্যে সরকারি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে মানবাধিকারের পক্ষে থাকার কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়।
ক্রেমলিন ও রুশ জনগণের মধ্যে এই বিভেদ কাজে লাগানোর একটি বড় সুযোগ রয়েছে পশ্চিমের হাতে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এখনই কথা বলা উচিত পশ্চিমের। আশ্বাস পেলে রাশিয়ার ছাত্র, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উন্নত জীবনের আশা বাড়বে। পশ্চিমা সরকারের উচিত তাঁদের জায়গা দেওয়া; রুশ শিক্ষার্থীদের পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানানো। তাহলে শুধু পুতিনের দমনপীড়নের শিকারদেরই নয়, নিজেদেরও সাহায্য করা হবে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পরমাণুবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন আন্দ্রে দিমিত্রিভিচ শাখারভ। সোভিয়েত ঘরানার ভাবনা হিসাবে নিলে তিনি ছিলেন ভিন্নমতাবলম্বী। পরমাণু অস্ত্র তৈরি-ব্যবহার ও রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধী হওয়ায় তৎকালীন নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ ছিল। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি জনসমক্ষে তীব্র প্রতিবাদ করলে তাঁকে গোর্কি শহরে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ গ্লাসনস্তের নীতির অধীন শাখারভকে মুক্তি দেন। তবে গর্বাচেভের এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় রাশিয়ায় দমনপীড়ন স্তিমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ এত দিনেও দেখা যায়নি; বরং আরও প্রকট হচ্ছে।
আন্দ্রে শাখারভ প্রায়ই যুক্তি দিতেন এই বলে যে, কোনো দেশে দমনপীড়ন চললে দেশটির অবস্থান বিদেশে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। মৃত্যুর তিন দশক পর এসেও রাশিয়ায় তাঁর এই যুক্তির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মেমোরিয়াল নামের একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত-যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের নিক্তিতে মেমোরিয়ালের এসব তথ্য আর শাখারভের যুক্তি আজ যেন এক পাল্লায় হাজির। ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অন্ধকার সময়ে ঢুকে গেছে। দেশে দমনপীড়নকে ন্যায্যতা দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জনগণকে বলছেন, রাশিয়ান জীবনধারাকে ধ্বংস করতে পশ্চিমা নীতি বিশেষভাবে নকশা করা। এভাবে জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে পুতিন ক্ষমতায় টেকার চেষ্টা চালালেও পশ্চিমের সঙ্গে তাঁর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক প্রতিনিয়তই গাঢ় হচ্ছে। এর ভবিষ্যৎ যে কোথায় ঠেকবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

শাখারভ পুরস্কার বিজয়ী আলেক্সি নাভালনি রাশিয়ায় নিপীড়নের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করায় ৪৪ বছর বয়সী বিরোধীদলীয় নেতা ও আইনজীবী নাভালনিকে গত বছরের আগস্টে বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল উঠছে পুতিন ও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির দিকে। প্রায় পাঁচ মাস জার্মানিতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে গত ১৭ জানুয়ারি মস্কো বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাবন্দী আলেক্সি নাভালনির শারীরিক অবস্থা ‘নাটকীয়ভাবে খারাপ হচ্ছে’ বলে চিকিৎসকেরা খোলা চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা ও মুক্তির দাবি তোলা হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হলেও তাঁকে মুক্তি না দিয়ে রাখা হয়েছে দেশের অন্যতম কুখ্যাত কারাগার ‘পেনাল কলোনি নম্বর ২’-এ।
নাভালনিকে গ্রেপ্তার করেই থেমে থাকেনি পুতিন সরকার। ২০১১ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন’-কে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। নাভালনির বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থককে দেশছাড়া করা হয়েছে। সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা দেশে আছেন, তাঁদেরও খোঁজা হচ্ছে। নাভালনির পক্ষে কাজ করার জন্য ৯ নভেম্বর অধিকারকর্মী লিলিয়া চানিসেভাকে গ্রেপ্তার করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিপীড়নের এই জাল ছড়িয়ে পড়েছে রাজনীতির বাইরেও। চানিসেভাকে গ্রেপ্তারের দিনই রাশিয়ার শীর্ষ উদারনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী সের্গেই জুয়েভকে (৬৭) কারাগারে নেওয়া হয়। হৃদ্রোগের চিকিৎসা নিয়ে সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা এই প্রশাসককে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে কারাগারে নিয়ে একটি বানোয়াট মামলায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার বাজেট হিসাব বলছে, ২০২০ সালে রাশিয়ার মোট বাজেট ছিল ১ হাজার ১১৬ বিলিয়ন রুবল। এর মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতের জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৩৪ বিলিয়ন রুবল। অর্থাৎ মোট বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করা হয় এই খাতে। ইকোনমিস্ট বলছে, এই খাতের জন্য নির্ধারিত বাজেটের বেশির ভাগই খরচ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণভাবে। ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছর পুলিশ এবং নিরাপত্তা খাতে ১০ শতাংশ বেশি লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে কর্মরত সেনার চেয়ে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি করে রাশিয়ার বহু পুলিশ ও নিরাপত্তা খাতের লোক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিনিময়ে এরা পুতিনের শাসন, দুর্নীতির, আয় কমার প্রতিবাদে রাজপথে নামা নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য গভর্নমেন্ট ফিন্যান্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন ‘অ্যানাটমি অব আ প্রায়োরিটি ড্রাইভেন বাজেট প্রসেস’-এ বলা হয়েছে, কোন খাতে সরকার কী পরিমাণ বাজেট দেবে, তা নির্ভর করে ওই খাত থেকে কতটা পরিষেবা প্রত্যাশা করে তার ওপর। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূল বিষয়। এভাবে গুরুত্বসহকারে খাত তালিকাবদ্ধ করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাজেট বণ্টন করা হয়। যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেওয়ার ইচ্ছে, প্রবণতা থাকে ওই খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ বাজেট দেওয়ার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দশকে রাশিয়ায় ব্যাপক সমৃদ্ধি হয়। তবে তাঁর দমনপীড়ন বর্তমানে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা থেকে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা তাঁর জন্য এক রকম অসম্ভব। অবশ্য জ্বালানির উচ্চমূল্য, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও ক্রেমলিন ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে ভালো একটি জায়গায় পৌঁছেছে, যা রাশিয়ার জন্য কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করতে পারে। তবে চীনের মতো টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের কোনো চেষ্টা আপাতত রাশিয়া দেখাতে পারছে না।
রাশিয়ায় পুতিনপন্থীরা জোর দিয়ে বলছেন, সেখানকার পরিবার, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ পশ্চিমা বিশ্বের কারণে কলুষিত হচ্ছে। এ থেকে নিজেদের রক্ষা করার বিষয়েও তাঁরা সোচ্চার। পশ্চিমের বিরুদ্ধে ‘লড়াই করা’ ক্রেমলিনের কোনো নীতির বিরোধিতা করলেই তকমা দেওয়া হচ্ছে ‘বিদেশি এজেন্ট’। এই তকমার মূল শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বৈরশাসকেরা তাঁদের সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন’-কে সব সময় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আর সেই ঢাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিপীড়নকে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এভাবে সৃষ্ট সহিংসতা প্রায়ই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোকেও এ পথেই হাঁটতে দেখা গেছে। সেখানেও ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাশিয়া একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে গুলি করে নামিয়েছে এবং বেলারুশ এক স্থানীয় ভিন্নমতাবলম্বীকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ছিনতাই করেছে। স্বনির্বাসিত হয়ে বেলারুশের সরকারবিরোধী অনেকে পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

বড় পরিসরে বিবেচনা করলে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিপক্ষে পশ্চিমা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। তিনি কখনো কখনো টিকাবিরোধী প্রচারণা চালান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হন বা সৈন্য জমায়েত করেন ইউক্রেন সীমান্তে। তিনি গ্যাসের অতিরিক্ত সরবরাহের প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেন ও মলদোভার মতো দেশগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টাও চালান।
তবে সুখবর হলো, রাশিয়ার সব মানুষ কিন্তু পুতিনে বুঁদ নয়। মোট জনগণের অধিকাংশই বেশির ভাগ সংঘর্ষের সুবিধায় বিশ্বাসী নন। পুতিনের নানাবিধ প্রচারের মাঝেও দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের পশ্চিম সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বলছেন, রাশিয়ার উচিত পশ্চিমকে অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা। এরই মধ্যে তরুণদের মধ্যে সরকারি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে মানবাধিকারের পক্ষে থাকার কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়।
ক্রেমলিন ও রুশ জনগণের মধ্যে এই বিভেদ কাজে লাগানোর একটি বড় সুযোগ রয়েছে পশ্চিমের হাতে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এখনই কথা বলা উচিত পশ্চিমের। আশ্বাস পেলে রাশিয়ার ছাত্র, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উন্নত জীবনের আশা বাড়বে। পশ্চিমা সরকারের উচিত তাঁদের জায়গা দেওয়া; রুশ শিক্ষার্থীদের পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানানো। তাহলে শুধু পুতিনের দমনপীড়নের শিকারদেরই নয়, নিজেদেরও সাহায্য করা হবে।
ইমরান খান

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পরমাণুবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন আন্দ্রে দিমিত্রিভিচ শাখারভ। সোভিয়েত ঘরানার ভাবনা হিসাবে নিলে তিনি ছিলেন ভিন্নমতাবলম্বী। পরমাণু অস্ত্র তৈরি-ব্যবহার ও রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধী হওয়ায় তৎকালীন নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ ছিল। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি জনসমক্ষে তীব্র প্রতিবাদ করলে তাঁকে গোর্কি শহরে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ গ্লাসনস্তের নীতির অধীন শাখারভকে মুক্তি দেন। তবে গর্বাচেভের এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় রাশিয়ায় দমনপীড়ন স্তিমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ এত দিনেও দেখা যায়নি; বরং আরও প্রকট হচ্ছে।
আন্দ্রে শাখারভ প্রায়ই যুক্তি দিতেন এই বলে যে, কোনো দেশে দমনপীড়ন চললে দেশটির অবস্থান বিদেশে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। মৃত্যুর তিন দশক পর এসেও রাশিয়ায় তাঁর এই যুক্তির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মেমোরিয়াল নামের একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত-যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের নিক্তিতে মেমোরিয়ালের এসব তথ্য আর শাখারভের যুক্তি আজ যেন এক পাল্লায় হাজির। ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অন্ধকার সময়ে ঢুকে গেছে। দেশে দমনপীড়নকে ন্যায্যতা দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জনগণকে বলছেন, রাশিয়ান জীবনধারাকে ধ্বংস করতে পশ্চিমা নীতি বিশেষভাবে নকশা করা। এভাবে জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে পুতিন ক্ষমতায় টেকার চেষ্টা চালালেও পশ্চিমের সঙ্গে তাঁর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক প্রতিনিয়তই গাঢ় হচ্ছে। এর ভবিষ্যৎ যে কোথায় ঠেকবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

শাখারভ পুরস্কার বিজয়ী আলেক্সি নাভালনি রাশিয়ায় নিপীড়নের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করায় ৪৪ বছর বয়সী বিরোধীদলীয় নেতা ও আইনজীবী নাভালনিকে গত বছরের আগস্টে বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল উঠছে পুতিন ও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির দিকে। প্রায় পাঁচ মাস জার্মানিতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে গত ১৭ জানুয়ারি মস্কো বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাবন্দী আলেক্সি নাভালনির শারীরিক অবস্থা ‘নাটকীয়ভাবে খারাপ হচ্ছে’ বলে চিকিৎসকেরা খোলা চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা ও মুক্তির দাবি তোলা হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হলেও তাঁকে মুক্তি না দিয়ে রাখা হয়েছে দেশের অন্যতম কুখ্যাত কারাগার ‘পেনাল কলোনি নম্বর ২’-এ।
নাভালনিকে গ্রেপ্তার করেই থেমে থাকেনি পুতিন সরকার। ২০১১ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন’-কে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। নাভালনির বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থককে দেশছাড়া করা হয়েছে। সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা দেশে আছেন, তাঁদেরও খোঁজা হচ্ছে। নাভালনির পক্ষে কাজ করার জন্য ৯ নভেম্বর অধিকারকর্মী লিলিয়া চানিসেভাকে গ্রেপ্তার করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিপীড়নের এই জাল ছড়িয়ে পড়েছে রাজনীতির বাইরেও। চানিসেভাকে গ্রেপ্তারের দিনই রাশিয়ার শীর্ষ উদারনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী সের্গেই জুয়েভকে (৬৭) কারাগারে নেওয়া হয়। হৃদ্রোগের চিকিৎসা নিয়ে সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা এই প্রশাসককে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে কারাগারে নিয়ে একটি বানোয়াট মামলায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার বাজেট হিসাব বলছে, ২০২০ সালে রাশিয়ার মোট বাজেট ছিল ১ হাজার ১১৬ বিলিয়ন রুবল। এর মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতের জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৩৪ বিলিয়ন রুবল। অর্থাৎ মোট বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করা হয় এই খাতে। ইকোনমিস্ট বলছে, এই খাতের জন্য নির্ধারিত বাজেটের বেশির ভাগই খরচ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণভাবে। ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছর পুলিশ এবং নিরাপত্তা খাতে ১০ শতাংশ বেশি লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে কর্মরত সেনার চেয়ে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি করে রাশিয়ার বহু পুলিশ ও নিরাপত্তা খাতের লোক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিনিময়ে এরা পুতিনের শাসন, দুর্নীতির, আয় কমার প্রতিবাদে রাজপথে নামা নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য গভর্নমেন্ট ফিন্যান্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন ‘অ্যানাটমি অব আ প্রায়োরিটি ড্রাইভেন বাজেট প্রসেস’-এ বলা হয়েছে, কোন খাতে সরকার কী পরিমাণ বাজেট দেবে, তা নির্ভর করে ওই খাত থেকে কতটা পরিষেবা প্রত্যাশা করে তার ওপর। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূল বিষয়। এভাবে গুরুত্বসহকারে খাত তালিকাবদ্ধ করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাজেট বণ্টন করা হয়। যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেওয়ার ইচ্ছে, প্রবণতা থাকে ওই খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ বাজেট দেওয়ার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দশকে রাশিয়ায় ব্যাপক সমৃদ্ধি হয়। তবে তাঁর দমনপীড়ন বর্তমানে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা থেকে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা তাঁর জন্য এক রকম অসম্ভব। অবশ্য জ্বালানির উচ্চমূল্য, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও ক্রেমলিন ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে ভালো একটি জায়গায় পৌঁছেছে, যা রাশিয়ার জন্য কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করতে পারে। তবে চীনের মতো টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের কোনো চেষ্টা আপাতত রাশিয়া দেখাতে পারছে না।
রাশিয়ায় পুতিনপন্থীরা জোর দিয়ে বলছেন, সেখানকার পরিবার, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ পশ্চিমা বিশ্বের কারণে কলুষিত হচ্ছে। এ থেকে নিজেদের রক্ষা করার বিষয়েও তাঁরা সোচ্চার। পশ্চিমের বিরুদ্ধে ‘লড়াই করা’ ক্রেমলিনের কোনো নীতির বিরোধিতা করলেই তকমা দেওয়া হচ্ছে ‘বিদেশি এজেন্ট’। এই তকমার মূল শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বৈরশাসকেরা তাঁদের সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন’-কে সব সময় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আর সেই ঢাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিপীড়নকে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এভাবে সৃষ্ট সহিংসতা প্রায়ই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোকেও এ পথেই হাঁটতে দেখা গেছে। সেখানেও ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাশিয়া একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে গুলি করে নামিয়েছে এবং বেলারুশ এক স্থানীয় ভিন্নমতাবলম্বীকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ছিনতাই করেছে। স্বনির্বাসিত হয়ে বেলারুশের সরকারবিরোধী অনেকে পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

বড় পরিসরে বিবেচনা করলে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিপক্ষে পশ্চিমা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। তিনি কখনো কখনো টিকাবিরোধী প্রচারণা চালান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হন বা সৈন্য জমায়েত করেন ইউক্রেন সীমান্তে। তিনি গ্যাসের অতিরিক্ত সরবরাহের প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেন ও মলদোভার মতো দেশগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টাও চালান।
তবে সুখবর হলো, রাশিয়ার সব মানুষ কিন্তু পুতিনে বুঁদ নয়। মোট জনগণের অধিকাংশই বেশির ভাগ সংঘর্ষের সুবিধায় বিশ্বাসী নন। পুতিনের নানাবিধ প্রচারের মাঝেও দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের পশ্চিম সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বলছেন, রাশিয়ার উচিত পশ্চিমকে অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা। এরই মধ্যে তরুণদের মধ্যে সরকারি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে মানবাধিকারের পক্ষে থাকার কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়।
ক্রেমলিন ও রুশ জনগণের মধ্যে এই বিভেদ কাজে লাগানোর একটি বড় সুযোগ রয়েছে পশ্চিমের হাতে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এখনই কথা বলা উচিত পশ্চিমের। আশ্বাস পেলে রাশিয়ার ছাত্র, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উন্নত জীবনের আশা বাড়বে। পশ্চিমা সরকারের উচিত তাঁদের জায়গা দেওয়া; রুশ শিক্ষার্থীদের পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানানো। তাহলে শুধু পুতিনের দমনপীড়নের শিকারদেরই নয়, নিজেদেরও সাহায্য করা হবে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পরমাণুবিজ্ঞানী ও মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন আন্দ্রে দিমিত্রিভিচ শাখারভ। সোভিয়েত ঘরানার ভাবনা হিসাবে নিলে তিনি ছিলেন ভিন্নমতাবলম্বী। পরমাণু অস্ত্র তৈরি-ব্যবহার ও রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধী হওয়ায় তৎকালীন নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ ছিল। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি জনসমক্ষে তীব্র প্রতিবাদ করলে তাঁকে গোর্কি শহরে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। পরে ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ গ্লাসনস্তের নীতির অধীন শাখারভকে মুক্তি দেন। তবে গর্বাচেভের এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় রাশিয়ায় দমনপীড়ন স্তিমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ এত দিনেও দেখা যায়নি; বরং আরও প্রকট হচ্ছে।
আন্দ্রে শাখারভ প্রায়ই যুক্তি দিতেন এই বলে যে, কোনো দেশে দমনপীড়ন চললে দেশটির অবস্থান বিদেশে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। মৃত্যুর তিন দশক পর এসেও রাশিয়ায় তাঁর এই যুক্তির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মেমোরিয়াল নামের একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত-যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের নিক্তিতে মেমোরিয়ালের এসব তথ্য আর শাখারভের যুক্তি আজ যেন এক পাল্লায় হাজির। ইকোনমিস্ট বলছে, পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অন্ধকার সময়ে ঢুকে গেছে। দেশে দমনপীড়নকে ন্যায্যতা দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জনগণকে বলছেন, রাশিয়ান জীবনধারাকে ধ্বংস করতে পশ্চিমা নীতি বিশেষভাবে নকশা করা। এভাবে জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে পুতিন ক্ষমতায় টেকার চেষ্টা চালালেও পশ্চিমের সঙ্গে তাঁর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক প্রতিনিয়তই গাঢ় হচ্ছে। এর ভবিষ্যৎ যে কোথায় ঠেকবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

শাখারভ পুরস্কার বিজয়ী আলেক্সি নাভালনি রাশিয়ায় নিপীড়নের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করায় ৪৪ বছর বয়সী বিরোধীদলীয় নেতা ও আইনজীবী নাভালনিকে গত বছরের আগস্টে বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল উঠছে পুতিন ও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির দিকে। প্রায় পাঁচ মাস জার্মানিতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে গত ১৭ জানুয়ারি মস্কো বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাবন্দী আলেক্সি নাভালনির শারীরিক অবস্থা ‘নাটকীয়ভাবে খারাপ হচ্ছে’ বলে চিকিৎসকেরা খোলা চিঠি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসা ও মুক্তির দাবি তোলা হয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হলেও তাঁকে মুক্তি না দিয়ে রাখা হয়েছে দেশের অন্যতম কুখ্যাত কারাগার ‘পেনাল কলোনি নম্বর ২’-এ।
নাভালনিকে গ্রেপ্তার করেই থেমে থাকেনি পুতিন সরকার। ২০১১ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন’-কে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। নাভালনির বেশির ভাগ কর্মী-সমর্থককে দেশছাড়া করা হয়েছে। সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা দেশে আছেন, তাঁদেরও খোঁজা হচ্ছে। নাভালনির পক্ষে কাজ করার জন্য ৯ নভেম্বর অধিকারকর্মী লিলিয়া চানিসেভাকে গ্রেপ্তার করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নিপীড়নের এই জাল ছড়িয়ে পড়েছে রাজনীতির বাইরেও। চানিসেভাকে গ্রেপ্তারের দিনই রাশিয়ার শীর্ষ উদারনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী সের্গেই জুয়েভকে (৬৭) কারাগারে নেওয়া হয়। হৃদ্রোগের চিকিৎসা নিয়ে সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা এই প্রশাসককে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে কারাগারে নিয়ে একটি বানোয়াট মামলায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার বাজেট হিসাব বলছে, ২০২০ সালে রাশিয়ার মোট বাজেট ছিল ১ হাজার ১১৬ বিলিয়ন রুবল। এর মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতের জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৩৪ বিলিয়ন রুবল। অর্থাৎ মোট বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করা হয় এই খাতে। ইকোনমিস্ট বলছে, এই খাতের জন্য নির্ধারিত বাজেটের বেশির ভাগই খরচ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণভাবে। ২০১৪ সালের তুলনায় এ বছর পুলিশ এবং নিরাপত্তা খাতে ১০ শতাংশ বেশি লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে কর্মরত সেনার চেয়ে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি করে রাশিয়ার বহু পুলিশ ও নিরাপত্তা খাতের লোক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিনিময়ে এরা পুতিনের শাসন, দুর্নীতির, আয় কমার প্রতিবাদে রাজপথে নামা নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য গভর্নমেন্ট ফিন্যান্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন ‘অ্যানাটমি অব আ প্রায়োরিটি ড্রাইভেন বাজেট প্রসেস’-এ বলা হয়েছে, কোন খাতে সরকার কী পরিমাণ বাজেট দেবে, তা নির্ভর করে ওই খাত থেকে কতটা পরিষেবা প্রত্যাশা করে তার ওপর। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মূল বিষয়। এভাবে গুরুত্বসহকারে খাত তালিকাবদ্ধ করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাজেট বণ্টন করা হয়। যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেওয়ার ইচ্ছে, প্রবণতা থাকে ওই খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ বাজেট দেওয়ার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দশকে রাশিয়ায় ব্যাপক সমৃদ্ধি হয়। তবে তাঁর দমনপীড়ন বর্তমানে যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তা থেকে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা তাঁর জন্য এক রকম অসম্ভব। অবশ্য জ্বালানির উচ্চমূল্য, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও ক্রেমলিন ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে ভালো একটি জায়গায় পৌঁছেছে, যা রাশিয়ার জন্য কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করতে পারে। তবে চীনের মতো টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের কোনো চেষ্টা আপাতত রাশিয়া দেখাতে পারছে না।
রাশিয়ায় পুতিনপন্থীরা জোর দিয়ে বলছেন, সেখানকার পরিবার, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ পশ্চিমা বিশ্বের কারণে কলুষিত হচ্ছে। এ থেকে নিজেদের রক্ষা করার বিষয়েও তাঁরা সোচ্চার। পশ্চিমের বিরুদ্ধে ‘লড়াই করা’ ক্রেমলিনের কোনো নীতির বিরোধিতা করলেই তকমা দেওয়া হচ্ছে ‘বিদেশি এজেন্ট’। এই তকমার মূল শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, স্বৈরশাসকেরা তাঁদের সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন’-কে সব সময় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আর সেই ঢাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিপীড়নকে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এভাবে সৃষ্ট সহিংসতা প্রায়ই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোকেও এ পথেই হাঁটতে দেখা গেছে। সেখানেও ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাশিয়া একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে গুলি করে নামিয়েছে এবং বেলারুশ এক স্থানীয় ভিন্নমতাবলম্বীকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ছিনতাই করেছে। স্বনির্বাসিত হয়ে বেলারুশের সরকারবিরোধী অনেকে পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

বড় পরিসরে বিবেচনা করলে দেখা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিপক্ষে পশ্চিমা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। তিনি কখনো কখনো টিকাবিরোধী প্রচারণা চালান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হন বা সৈন্য জমায়েত করেন ইউক্রেন সীমান্তে। তিনি গ্যাসের অতিরিক্ত সরবরাহের প্রতিশ্রুতিকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেন ও মলদোভার মতো দেশগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টাও চালান।
তবে সুখবর হলো, রাশিয়ার সব মানুষ কিন্তু পুতিনে বুঁদ নয়। মোট জনগণের অধিকাংশই বেশির ভাগ সংঘর্ষের সুবিধায় বিশ্বাসী নন। পুতিনের নানাবিধ প্রচারের মাঝেও দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের পশ্চিম সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ বলছেন, রাশিয়ার উচিত পশ্চিমকে অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা। এরই মধ্যে তরুণদের মধ্যে সরকারি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে মানবাধিকারের পক্ষে থাকার কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়।
ক্রেমলিন ও রুশ জনগণের মধ্যে এই বিভেদ কাজে লাগানোর একটি বড় সুযোগ রয়েছে পশ্চিমের হাতে। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এখনই কথা বলা উচিত পশ্চিমের। আশ্বাস পেলে রাশিয়ার ছাত্র, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উন্নত জীবনের আশা বাড়বে। পশ্চিমা সরকারের উচিত তাঁদের জায়গা দেওয়া; রুশ শিক্ষার্থীদের পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানানো। তাহলে শুধু পুতিনের দমনপীড়নের শিকারদেরই নয়, নিজেদেরও সাহায্য করা হবে।

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা অন্য আঞ্চলিক দেশ এবং এর বাইরেও ‘বিস্তৃত’ হতে পারে। তিনি গত বুধবার ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেন, ‘আমরা শূন্য-সমষ্টিগত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছি এবং সংঘাতের বদলে সহযোগিতার
১ ঘণ্টা আগে
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
৩ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা অন্য আঞ্চলিক দেশ এবং এর বাইরেও ‘বিস্তৃত’ হতে পারে। তিনি গত বুধবার ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেন, ‘আমরা শূন্য-সমষ্টিগত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছি এবং সংঘাতের বদলে সহযোগিতার আবশ্যকতার ওপর ধারাবাহিকভাবে জোর দিয়েছি।’
বস্তুত, এই প্রস্তাব দক্ষিণ এশিয়ার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চীনকে সঙ্গে নিয়ে একটি বিকল্প জোট তৈরির ইঙ্গিত। বিশেষত এমন এক সময়ে যখন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে এই অঞ্চলের প্রধান সংস্থা সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজওনাল কো-অপারেশন বা দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থা–সার্ক কার্যকারিতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে।
গত জুনে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর ওপর মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা বলেন, এই সহযোগিতা ‘কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রতি লক্ষ্য করে নয়।’
দারের এই মন্তব্য এমন এক প্রেক্ষাপটে এল, যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে—পাকিস্তান–ভারতের কয়েক দশকের পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী গত মে মাসে চার দিনের যুদ্ধে জড়িয়েছিল, যা সম্পর্ককে আরও টানাপোড়েনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ঢাকা–নয়াদিল্লি সম্পর্কও ব্যাপক খারাপ হয়েছে। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান এবং নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়নি। গত নভেম্বরে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো–সার্কে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এবং আফগানিস্তান রয়েছে–তারা কি এই নতুন আঞ্চলিক জোটকে মেনে নেবে? মনে হচ্ছে এই জোট ভারতকে বাদ দেওয়ার, কিংবা অন্তত দেশটির প্রভাবকে সীমিত করার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হচ্ছে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে এই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের লক্ষ্য হলো—অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রগুলোতে ‘পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ করা এবং এই ধারণাটি আরও দেশ ও অঞ্চলে ‘বিস্তৃত ও অনুকরণযোগ্য’ হতে পারে। তিনি ইসলামাবাদ কনক্লেভে বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে বহুমুখী বাস্তবতা থাকতে পারে।’
তিনি ভারতকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদের নিজেদের জাতীয় উন্নয়নের প্রয়োজন এবং আঞ্চলিক অগ্রাধিকারগুলো কারও গোঁড়ামির কাছে জিম্মি থাকতে পারে না এবং আপনারা জানেন, আমি কাকে ইঙ্গিত করছি।’ ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যেকার উত্তেজনা প্রসঙ্গে দার উল্লেখ করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘কাঠামোগত আলোচনার’ প্রক্রিয়া ‘১১ বছরের বেশি’ সময় ধরে থমকে আছে। তিনি আরও যোগ করেন, অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলোরও ‘আমাদের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে দোদুল্যমান সম্পর্কের’ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান এমন একটি দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখে যেখানে ‘বিভাজনের’ জায়গায় যোগাযোগ ও সহযোগিতা স্থান নেবে, যেখানে অর্থনীতিগুলো পারস্পরিক সমন্বয়ে বৃদ্ধি পাবে, আন্তর্জাতিক বৈধতা অনুসারে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধের সমাধান হবে এবং যেখানে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে শান্তি বজায় থাকবে। শিক্ষাবিদ রাবিয়া আখতারের মতে, এই পর্যায়ে প্রস্তাবটি ‘কার্যকর হওয়ার চেয়ে আকাঙ্ক্ষামূলক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের (সিএসএসপিআর) পরিচালক আখতার বলেন, ‘কিন্তু এটি এমন এক সময়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার ও নতুন করে সাজানোর পাকিস্তানের উদ্দেশ্যকে তুলে ধরেছে, যখন সার্ক স্থবির হয়ে আছে।’
সার্ক ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় একটি শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর সাতটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ ছিল—বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। ২০০৭ সালে আফগানিস্তান অষ্টম সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। সার্কের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশীয়দের কল্যাণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটানো।
এর মহৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও, সংস্থাটি গত ৪০ বছর ধরেই লক্ষ্য অর্জনে লড়াই করেছে। এর মূল কারণ হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার কয়েক দশকের পুরোনো উত্তেজনা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা এবং উপমহাদেশ বিভাজনের পর এই দুই প্রতিবেশী তিনটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে ১৯ তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু ভারত শাসিত কাশ্মীরে এক প্রাণঘাতী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
সিএসএসপিআর-এর আখতার বলেন, ‘এই সংস্থাটির কাজ করার জন্য ঐকমত্যের প্রয়োজন, আর দুটি বৃহত্তম সদস্য দেশের কাছ থেকে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ থেকে আলাদা রাখার রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সার্ক সামনে এগোতে পারে না।’
আঞ্চলিক এই সংস্থাটির শেষ শীর্ষ সম্মেলন ২০১৪ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বিশ্লেষকেরা বলেন, সার্ক নিষ্ক্রিয় থাকলেও এই অঞ্চলের জন্য কাজ করার সম্ভাবনা তার আছে–যদি ভারত ও পাকিস্তান তাদের সেই সুযোগ দেয়। ২০২৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বিশ্বের দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বসবাস করে, যা দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল করে তুলেছে।
তবুও, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য খুবই কম, যা এই অঞ্চলের সামগ্রিক বাণিজ্যের মাত্র প্রায় ৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিপরীতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের একটি জোট আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার বাণিজ্য তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ২৫ শতাংশ। আসিয়ান জোটের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ কোটি।
বিশ্বব্যাংকের অনুমান, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যদি বাণিজ্য বাধাগুলো হ্রাস করে, তাহলে তারা ৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিনিময় করতে পারত–যা তাদের বর্তমান বাণিজ্যের তিন গুণ। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য এখনো করুণ। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য ছিল মাত্র ২ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সাল নাগাদ তা আরও কমে অর্ধেকে অর্থাৎ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। যদিও অন্যান্য দেশের মাধ্যমে পরিচালিত তাদের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের।
আঞ্চলিক যোগাযোগের অভাবকে এই অঞ্চলের দুর্বল বাণিজ্য সংযোগের একটি প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালে, এই জোট একটি মোটর ভেহিক্যালস চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে ছিল, যার ফলে ইউরোপের মতো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে গাড়ি ও ট্রাক চলাচল করতে পারত। কিন্তু ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান সেই চুক্তি–এবং আঞ্চলিক রেল সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি পৃথক চুক্তি–আটকে দেয়।
তারপর থেকে এই জোটের একত্রে আসার ক্ষমতা কয়েকটি উপলক্ষে সীমাবদ্ধ ছিল। যেমন কোভিড-১৯ মহামারির সময় যখন সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি জরুরি তহবিল গঠন করে এবং জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে। বিশ্লেষক ফারওয়া আমের বলেন, ‘যদি এই দুটি দেশ (ভারত ও পাকিস্তান) বৃহত্তর আঞ্চলিক স্বার্থে সহযোগিতার সীমিত পথও চিহ্নিত করতে পারত, তাহলে নীতিগতভাবে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা যেত।’
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের (এএসপিআই) দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক আমের যোগ করেন, ‘তবে, বর্তমান রাজনৈতিক গতিশীলতা বিবেচনা করে, এমন একটি সাফল্য একটি সুদূর সম্ভাবনা বলে মনে হচ্ছে।’
তবে আঞ্চলিক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে সার্ককে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা পাকিস্তানই প্রথম করছে না। সার্ক একটি আঞ্চলিক পরিবহন চুক্তি অনুমোদন করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল–দেশগুলোর আদ্যক্ষর অনুসারে বিবিআইএন নামে একটি জোট তৈরি করে–নিজেদের মধ্যে একই ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। আমের উল্লেখ করেন, ভারত অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থা, যেমন বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) অংশ। বিমসটেকে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড রয়েছে।
তবুও, আমের সামগ্রিকভাবে বলেন, ‘অল্প বা মাঝারি মেয়াদে’ আঞ্চলিক বহুপাক্ষিকতার চেয়ে ‘দ্বিপক্ষীয় ও ত্রয়ী ব্যবস্থাগুলোই প্রাধান্য’ পাবে। কারণ, এক বা দুটি দেশের সঙ্গে একবারে কাজ করা ‘বেশি নমনীয়তা, পরিষ্কার প্রণোদনা এবং বাস্তব ফলাফল পাওয়ার বৃহত্তর সম্ভাবনা’ দেয়।
এই অবস্থায় পাকিস্তান যে প্রস্তাব দিচ্ছে, নতুন জোটের তা কার্যকর হবে কী—এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ আখতার বলেন, ‘প্রস্তাবটি কার্যকর হবে কিনা তা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। প্রথমত, প্রথাগত কাঠামো যখন থমকে আছে, তখন সম্ভাব্য দেশগুলো ছোট, বিষয়-কেন্দ্রিক দলগুলোতে কার্যকরী মূল্য দেখতে পাচ্ছে কিনা এবং দ্বিতীয়ত, এই অংশগ্রহণের কারণে ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে কোনো মূল্য দিতে হচ্ছে কিনা।’
আখতার বলেন, বেশ কয়েকটি দক্ষিণ এশীয় দেশ পাকিস্তানের প্রস্তাবিত আঞ্চলিক উদ্যোগে প্রাথমিক আগ্রহ দেখাতে পারে, যদিও আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণের দিকে কোনো পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ এবং হয়তো ভুটানের মতো দেশগুলো অনুসন্ধানী আলোচনায়, বিশেষ করে যোগাযোগ, জলবায়ু অভিযোজন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে, খোলা থাকতে পারে।’
তবে আখতার উল্লেখ করেন, ভারতের আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা এবং পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ‘আসল সদস্যপদ গ্রহণ সতর্কতার সঙ্গে হবে।’ এই বিষয়ে এএসপিআই-এর আমের মনে করেন পাকিস্তানের প্রস্তাবটি ‘কৌশলগতভাবে সুসংগত।’ তিনি বলেন, ‘দেশটি এখন কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে আছে। তারা চীনের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে নতুন ও উন্নত সম্পর্ক তৈরি করেছে।’
আমেরের মতে, ‘এই দ্বৈত-পথের সম্পৃক্ততা ইসলামাবাদকে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অভিনেতা হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা দিয়েছে। কার্যত, আঞ্চলিক কূটনীতির কেন্দ্রে একটি আসন ফিরে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা অন্য আঞ্চলিক দেশ এবং এর বাইরেও ‘বিস্তৃত’ হতে পারে। তিনি গত বুধবার ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেন, ‘আমরা শূন্য-সমষ্টিগত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছি এবং সংঘাতের বদলে সহযোগিতার আবশ্যকতার ওপর ধারাবাহিকভাবে জোর দিয়েছি।’
বস্তুত, এই প্রস্তাব দক্ষিণ এশিয়ার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চীনকে সঙ্গে নিয়ে একটি বিকল্প জোট তৈরির ইঙ্গিত। বিশেষত এমন এক সময়ে যখন ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে এই অঞ্চলের প্রধান সংস্থা সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজওনাল কো-অপারেশন বা দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থা–সার্ক কার্যকারিতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে।
গত জুনে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর ওপর মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা বলেন, এই সহযোগিতা ‘কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রতি লক্ষ্য করে নয়।’
দারের এই মন্তব্য এমন এক প্রেক্ষাপটে এল, যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে—পাকিস্তান–ভারতের কয়েক দশকের পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী গত মে মাসে চার দিনের যুদ্ধে জড়িয়েছিল, যা সম্পর্ককে আরও টানাপোড়েনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ঢাকা–নয়াদিল্লি সম্পর্কও ব্যাপক খারাপ হয়েছে। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান এবং নয়াদিল্লি এখন পর্যন্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়নি। গত নভেম্বরে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো–সার্কে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এবং আফগানিস্তান রয়েছে–তারা কি এই নতুন আঞ্চলিক জোটকে মেনে নেবে? মনে হচ্ছে এই জোট ভারতকে বাদ দেওয়ার, কিংবা অন্তত দেশটির প্রভাবকে সীমিত করার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হচ্ছে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীনের সঙ্গে এই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের লক্ষ্য হলো—অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রগুলোতে ‘পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ করা এবং এই ধারণাটি আরও দেশ ও অঞ্চলে ‘বিস্তৃত ও অনুকরণযোগ্য’ হতে পারে। তিনি ইসলামাবাদ কনক্লেভে বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে বহুমুখী বাস্তবতা থাকতে পারে।’
তিনি ভারতকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদের নিজেদের জাতীয় উন্নয়নের প্রয়োজন এবং আঞ্চলিক অগ্রাধিকারগুলো কারও গোঁড়ামির কাছে জিম্মি থাকতে পারে না এবং আপনারা জানেন, আমি কাকে ইঙ্গিত করছি।’ ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যেকার উত্তেজনা প্রসঙ্গে দার উল্লেখ করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘কাঠামোগত আলোচনার’ প্রক্রিয়া ‘১১ বছরের বেশি’ সময় ধরে থমকে আছে। তিনি আরও যোগ করেন, অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলোরও ‘আমাদের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে দোদুল্যমান সম্পর্কের’ অভিজ্ঞতা রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান এমন একটি দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখে যেখানে ‘বিভাজনের’ জায়গায় যোগাযোগ ও সহযোগিতা স্থান নেবে, যেখানে অর্থনীতিগুলো পারস্পরিক সমন্বয়ে বৃদ্ধি পাবে, আন্তর্জাতিক বৈধতা অনুসারে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধের সমাধান হবে এবং যেখানে মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে শান্তি বজায় থাকবে। শিক্ষাবিদ রাবিয়া আখতারের মতে, এই পর্যায়ে প্রস্তাবটি ‘কার্যকর হওয়ার চেয়ে আকাঙ্ক্ষামূলক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের (সিএসএসপিআর) পরিচালক আখতার বলেন, ‘কিন্তু এটি এমন এক সময়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রক্রিয়াকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার ও নতুন করে সাজানোর পাকিস্তানের উদ্দেশ্যকে তুলে ধরেছে, যখন সার্ক স্থবির হয়ে আছে।’
সার্ক ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় একটি শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর সাতটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ ছিল—বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। ২০০৭ সালে আফগানিস্তান অষ্টম সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। সার্কের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশীয়দের কল্যাণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটানো।
এর মহৎ উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও, সংস্থাটি গত ৪০ বছর ধরেই লক্ষ্য অর্জনে লড়াই করেছে। এর মূল কারণ হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার কয়েক দশকের পুরোনো উত্তেজনা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা এবং উপমহাদেশ বিভাজনের পর এই দুই প্রতিবেশী তিনটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে ১৯ তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু ভারত শাসিত কাশ্মীরে এক প্রাণঘাতী হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
সিএসএসপিআর-এর আখতার বলেন, ‘এই সংস্থাটির কাজ করার জন্য ঐকমত্যের প্রয়োজন, আর দুটি বৃহত্তম সদস্য দেশের কাছ থেকে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ থেকে আলাদা রাখার রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সার্ক সামনে এগোতে পারে না।’
আঞ্চলিক এই সংস্থাটির শেষ শীর্ষ সম্মেলন ২০১৪ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বিশ্লেষকেরা বলেন, সার্ক নিষ্ক্রিয় থাকলেও এই অঞ্চলের জন্য কাজ করার সম্ভাবনা তার আছে–যদি ভারত ও পাকিস্তান তাদের সেই সুযোগ দেয়। ২০২৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বিশ্বের দুই বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বসবাস করে, যা দক্ষিণ এশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল করে তুলেছে।
তবুও, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য খুবই কম, যা এই অঞ্চলের সামগ্রিক বাণিজ্যের মাত্র প্রায় ৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিপরীতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের একটি জোট আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার বাণিজ্য তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ২৫ শতাংশ। আসিয়ান জোটের জনসংখ্যা প্রায় ৭০ কোটি।
বিশ্বব্যাংকের অনুমান, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যদি বাণিজ্য বাধাগুলো হ্রাস করে, তাহলে তারা ৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিনিময় করতে পারত–যা তাদের বর্তমান বাণিজ্যের তিন গুণ। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য এখনো করুণ। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য ছিল মাত্র ২ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সাল নাগাদ তা আরও কমে অর্ধেকে অর্থাৎ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। যদিও অন্যান্য দেশের মাধ্যমে পরিচালিত তাদের অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের।
আঞ্চলিক যোগাযোগের অভাবকে এই অঞ্চলের দুর্বল বাণিজ্য সংযোগের একটি প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালে, এই জোট একটি মোটর ভেহিক্যালস চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে ছিল, যার ফলে ইউরোপের মতো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে গাড়ি ও ট্রাক চলাচল করতে পারত। কিন্তু ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান সেই চুক্তি–এবং আঞ্চলিক রেল সহযোগিতা সম্পর্কিত একটি পৃথক চুক্তি–আটকে দেয়।
তারপর থেকে এই জোটের একত্রে আসার ক্ষমতা কয়েকটি উপলক্ষে সীমাবদ্ধ ছিল। যেমন কোভিড-১৯ মহামারির সময় যখন সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি জরুরি তহবিল গঠন করে এবং জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে। বিশ্লেষক ফারওয়া আমের বলেন, ‘যদি এই দুটি দেশ (ভারত ও পাকিস্তান) বৃহত্তর আঞ্চলিক স্বার্থে সহযোগিতার সীমিত পথও চিহ্নিত করতে পারত, তাহলে নীতিগতভাবে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা যেত।’
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের (এএসপিআই) দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক আমের যোগ করেন, ‘তবে, বর্তমান রাজনৈতিক গতিশীলতা বিবেচনা করে, এমন একটি সাফল্য একটি সুদূর সম্ভাবনা বলে মনে হচ্ছে।’
তবে আঞ্চলিক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে সার্ককে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা পাকিস্তানই প্রথম করছে না। সার্ক একটি আঞ্চলিক পরিবহন চুক্তি অনুমোদন করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল–দেশগুলোর আদ্যক্ষর অনুসারে বিবিআইএন নামে একটি জোট তৈরি করে–নিজেদের মধ্যে একই ধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। আমের উল্লেখ করেন, ভারত অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থা, যেমন বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) অংশ। বিমসটেকে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড রয়েছে।
তবুও, আমের সামগ্রিকভাবে বলেন, ‘অল্প বা মাঝারি মেয়াদে’ আঞ্চলিক বহুপাক্ষিকতার চেয়ে ‘দ্বিপক্ষীয় ও ত্রয়ী ব্যবস্থাগুলোই প্রাধান্য’ পাবে। কারণ, এক বা দুটি দেশের সঙ্গে একবারে কাজ করা ‘বেশি নমনীয়তা, পরিষ্কার প্রণোদনা এবং বাস্তব ফলাফল পাওয়ার বৃহত্তর সম্ভাবনা’ দেয়।
এই অবস্থায় পাকিস্তান যে প্রস্তাব দিচ্ছে, নতুন জোটের তা কার্যকর হবে কী—এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ আখতার বলেন, ‘প্রস্তাবটি কার্যকর হবে কিনা তা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। প্রথমত, প্রথাগত কাঠামো যখন থমকে আছে, তখন সম্ভাব্য দেশগুলো ছোট, বিষয়-কেন্দ্রিক দলগুলোতে কার্যকরী মূল্য দেখতে পাচ্ছে কিনা এবং দ্বিতীয়ত, এই অংশগ্রহণের কারণে ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে কোনো মূল্য দিতে হচ্ছে কিনা।’
আখতার বলেন, বেশ কয়েকটি দক্ষিণ এশীয় দেশ পাকিস্তানের প্রস্তাবিত আঞ্চলিক উদ্যোগে প্রাথমিক আগ্রহ দেখাতে পারে, যদিও আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণের দিকে কোনো পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ এবং হয়তো ভুটানের মতো দেশগুলো অনুসন্ধানী আলোচনায়, বিশেষ করে যোগাযোগ, জলবায়ু অভিযোজন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে, খোলা থাকতে পারে।’
তবে আখতার উল্লেখ করেন, ভারতের আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা এবং পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ‘আসল সদস্যপদ গ্রহণ সতর্কতার সঙ্গে হবে।’ এই বিষয়ে এএসপিআই-এর আমের মনে করেন পাকিস্তানের প্রস্তাবটি ‘কৌশলগতভাবে সুসংগত।’ তিনি বলেন, ‘দেশটি এখন কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে আছে। তারা চীনের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে নতুন ও উন্নত সম্পর্ক তৈরি করেছে।’
আমেরের মতে, ‘এই দ্বৈত-পথের সম্পৃক্ততা ইসলামাবাদকে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক অভিনেতা হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা দিয়েছে। কার্যত, আঞ্চলিক কূটনীতির কেন্দ্রে একটি আসন ফিরে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। সোভিয়েত নির্যাতন নথিভুক্ত করা এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
১৭ নভেম্বর ২০২১
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
৩ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রুশদের মতে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেন তাদের শর্তগুলো মানতে চাইছে না, সেটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অন্যদিকে কিয়েভ এবং তার অধিকাংশ ইউরোপীয় মিত্রদের বক্তব্য, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তির পথে প্রধান বাধা হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল মস্কোয় যান। সেখানে পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, যা চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে। এই দলে ছিলেন আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বৈঠককে ‘খুবই কাজের এবং গঠনমূলক’ বললেও স্বীকার করেন যে, ‘সামনে অনেক পথ বাকি।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা হলো ‘মূল প্রশ্ন।’ তবে তিনি এটাও মেনে নেন যে, ভূখণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার অবস্থানকে একেবারেই হাস্যকর মনে করছেন। কারণ, মস্কোই ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। তাদের ধারণা, ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে লাগাতার বোমা হামলা চলার কারণে পুতিনের আসলে শান্তিতে কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের ভিজিটিং ফেলো ও রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলিয়া বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘যেমনটা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, আমেরিকান এবং ক্রেমলিনের মধ্যে যা ঘটছে, তা নিয়ে তাদের ধারণা মূলত আলাদা।’ তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রস্তাবের মূল ধারণা হিসেবে আমেরিকানরা ভূখণ্ড বিনিময়ের যে চেষ্টা করেছিল, তাতে পুতিনের বিশেষ আগ্রহ নেই। তিনি আসলে পূর্ব ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো পাল্টে দিতে আগ্রহী।’
রাশিয়ার অনেকে ক্রেমলিনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন এবং অনেকটা একই ভাষায় কথা বলেন। মস্কোভিত্তিক থিংক ট্যাংক ডিগোরিয়া এক্সপার্ট ক্লাবের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পার্টাক বারানভস্কির মতামত রুশ সরকারের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কিয়েভ সরকারের ক্রমাগত নাশকতা, তথ্য বিকৃত করা এবং অনিবার্যকে বিলম্বিত করার চেষ্টা আলোচনা প্রক্রিয়াকে অনেক জটিল করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ প্রথমে মিনস্ক চুক্তি কার্যকর করতে রাজি হয়নি এবং পরে ইস্তাম্বুলে আলোচনা হওয়া প্রাথমিক শান্তি চুক্তির শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমন এক ভরসা করার অযোগ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলাপ চালানো সত্যিই কঠিন।’
মিনস্ক চুক্তি ছিল ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সই হওয়া একাধিক চুক্তিমালা, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের দনবাসে চলা যুদ্ধ থামানো, যেখানে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিয়েভ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছিল। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেলারুশ ও তুরস্কে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কোনোটিই শান্তি আনতে পারেনি।
যদিও মস্কোয় সর্বশেষ বৈঠকে কী আলোচিত হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়নি, তবু রাশিয়ায় সামান্য হলেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের শেষ হয়তো কাছাকাছি। সেন্ট পিটার্সবার্গের ষাটোর্ধ্ব ব্যবসায়ী তাতিয়ানা এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেই দোষ দেন। তবে তিনি মনে করেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররাই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে বাধ্য করছেন।
তিনি আক্ষেপ করে প্রশ্ন করেন, ‘এই পরিস্থিতিতে যখন একমাত্র ট্রাম্পকেই কিছুটা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন বলে মনে হচ্ছে। যিনি কিনা আবার স্বভাবগতভাবেই সম্পূর্ণ উন্মাদ। তাহলে বুঝুন দুনিয়ার কী হাল হয়েছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি সবার জন্যই আরও খারাপ। একটা সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে স্পষ্টতই রাশিয়ার পাল্লা ভারী, যা আমেরিকান জেনারেলরাও ভালোই বোঝেন।’
গত মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘোষণা করেন, রুশ সৈন্যরা অবশেষে পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করেছে। এর ফলে দুই বছরের অবরোধের অবসান ঘটেছে। ইউক্রেন শহর পতনের কথা অস্বীকার করলেও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রুশদের অগ্রযাত্রা থামাতে তাদের সেনারা বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের যেসব অংশ এখনো রাশিয়ার দখলে যায়নি, সেখান থেকে সেনা সরাতে হবে। ওই এলাকা একটি নিরপেক্ষ নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল হবে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে তা রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত হবে। একই সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকস, যা ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া বা রুশ-সমর্থিতদের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর বিনিময়ে, রাশিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা আর কোনো ইউরোপীয় দেশ আক্রমণ করবে না এবং এই প্রতিশ্রুতি তাদের আইনে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া, যুদ্ধাপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাবও আছে। গত সপ্তাহে পুতিন স্বীকার করেন যে এই পরিকল্পনা ‘ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘যদি ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে যায়, তবে আমরা যুদ্ধ থামাব। যদি না যায়, তবে আমরা সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’
সূত্র মারফত জানা যায়, গত সপ্তাহান্তে ইউক্রেনীয় মধ্যস্থতাকারীরা তাদের আমেরিকান প্রতিপক্ষকে আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে—কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী রুশ অর্থনীতিবিদ ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত নয়, বরং তার শর্তগুলো পূরণ হওয়া পর্যন্ত।’
মঙ্গলবার বৈঠকের আগে, পুতিন ইউরোপকে হুমকি দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি সতর্ক করে দেন যে রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে না, ‘তবে ইউরোপ যদি চায় এবং শুরু করে, আমরা এই মুহূর্তেই প্রস্তুত।’
বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘পুতিন এর জন্যই প্রস্তুতি নেবেন, ঠিক যেমন ২০২২ সালের আগে তিনি বলেছিলেন যে—রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে যাচ্ছে না, যা বিপরীতটাই ইঙ্গিত করেছিল।’ দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকার পরও ইনোজেমতসেভ এবং বারানভস্কি দুজনেই একমত যে রাশিয়া অনির্দিষ্টকাল ধরে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘এতটা তীব্রতায় বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মোটেও কোনো সমস্যা নয়।’
তাঁর ভাষায়, ‘যুদ্ধের শুরুতে যত সমস্যা ছিল, এখন তার চেয়ে কম। কারণ, শুরুতে আমরা দেখেছি তাদের লোক জড়ো করতে হয়েছিল; এখন তারা বেশ ভালো বেতন দেয় এবং (নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা) ক্রমাগত তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া, তাদের অস্ত্রের সমস্যা ছিল এবং ভাষ্যকাররা লিখেছিলেন যে তিন মাসের মধ্যে তাদের শেল ফুরিয়ে যাবে। বাস্তবে, এখন যুদ্ধের আগের চেয়েও বেশি সক্রিয়ভাবে অস্ত্র উৎপাদন হচ্ছে।’
ইনোজেমতসেভ মনে করেন, এখন ‘আমেরিকানরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে—হয় এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে, না হয় ইউক্রেনের প্রতি সব রকম সমর্থন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বার্তা এখন কিয়েভকে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। আর তাই, ইউক্রেনীয়দের কোনো না কোনোভাবে রাজি করানো হবে...ইউক্রেনীয়রা জানে যে ইউরোপ তাদের রক্ষা করতে পারবে না। অর্থাৎ, যদি এখন আমেরিকানরা এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে দাঁড়ায়, তবে ইউরোপের কাছে বছরের পর বছর ধরে এই কারণকে সমর্থন করার মতো অর্থ বা সংকল্প কোনোটাই থাকবে না।’
ইনোজেমতসেভ উল্লেখ করেন, একটি চুক্তি হলেও তা ইউক্রেনের স্বার্থে আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা নিজেদের সেনাবাহিনীর জন্য ৬ লাখ সৈন্য এবং অন্তত কয়েক বছরের জন্য একটি বিরতি নিশ্চিত করতে পারে, তবে বাস্তবে এটিই সমস্যার সমাধান।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন সব সময়ই একটি হুমকি হয়ে থাকবেন এবং তাই পশ্চিমের প্রধান কাজ হলো (৭৩ বছর বয়সী) পুতিনকে উতরে যাওয়া। যদি তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য লড়াইয়ে বিরতি আসে, তবে এটি তার জীবনের শেষের দিকে পৌঁছে যাবে, যা স্বভাবতই তাঁকে কম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’
এ ছাড়া, যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার রুশ অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে। তবে ইনোজেমতসেভ ও বুদ্রাইৎস্কিস সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, জীবন ২০২২ সালের আগের মতো স্বাভাবিক হবে। তাঁদের অনুমান, সমাজ প্রবলভাবে সামরিক এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘শান্তি আসতে পারে না। এমন এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ফেরা সম্ভব নয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ দমনমূলক সর্বাত্মক একনায়কতন্ত্রের উপযোগী এই সমস্ত ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে, কারণ আমাদের আর কোনো সরাসরি বাহ্যিক হুমকি নেই।’
তাঁর মতে, ‘এটাই রাশিয়ার পুতিন রেজিমের নকশা। তাঁর ক্ষমতা এভাবেই সাজানো হয়েছে যে, এখানে এক অন্তহীন যুদ্ধ চলবে, যেখানে রুশ অভিজাতরা পতাকার নিচে একত্রিত থাকবে, দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলবে...এগুলো কেবল সাময়িকভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চালু করা কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা নয়, বরং এভাবেই তিনি শাসন চালিয়ে যাবেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ইউক্রেন, ইউরোপ, বাল্টিক রাষ্ট্র বা ‘যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো রূপে যুদ্ধ’ হলো পুতিন ২০২২ সালের পরে রাশিয়ায় যে ‘স্বাভাবিকতা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার অবিচ্ছেদ্য চালিকাশক্তি। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘সুতরাং, এই রেজিম টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলতে থাকবে।’
কিছু রুশ নাগরিক ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। মস্কোর গণমাধ্যম সের্গেই কালেনিক বলেন, ‘আমেরিকা যত দিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তাদের দখলদার সৈন্য প্রত্যাহার না করবে, তত দিন যুদ্ধ শেষ হবে না।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

রুশদের মতে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইউক্রেন তাদের শর্তগুলো মানতে চাইছে না, সেটাই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়। অন্যদিকে কিয়েভ এবং তার অধিকাংশ ইউরোপীয় মিত্রদের বক্তব্য, এই যুদ্ধবিরতির চুক্তির পথে প্রধান বাধা হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল মস্কোয় যান। সেখানে পুতিনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, যা চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে। এই দলে ছিলেন আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ এই বৈঠককে ‘খুবই কাজের এবং গঠনমূলক’ বললেও স্বীকার করেন যে, ‘সামনে অনেক পথ বাকি।’ তিনি বলেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা হলো ‘মূল প্রশ্ন।’ তবে তিনি এটাও মেনে নেন যে, ভূখণ্ড সংক্রান্ত প্রশ্নে কোনো সমঝোতা হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার অবস্থানকে একেবারেই হাস্যকর মনে করছেন। কারণ, মস্কোই ২০২২ সালে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। তাদের ধারণা, ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে লাগাতার বোমা হামলা চলার কারণে পুতিনের আসলে শান্তিতে কোনো প্রকৃত আগ্রহ নেই।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের ভিজিটিং ফেলো ও রুশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইলিয়া বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘যেমনটা প্রত্যাশা করা গিয়েছিল, এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, আমেরিকান এবং ক্রেমলিনের মধ্যে যা ঘটছে, তা নিয়ে তাদের ধারণা মূলত আলাদা।’ তিনি বলেন, ‘শান্তি প্রস্তাবের মূল ধারণা হিসেবে আমেরিকানরা ভূখণ্ড বিনিময়ের যে চেষ্টা করেছিল, তাতে পুতিনের বিশেষ আগ্রহ নেই। তিনি আসলে পূর্ব ইউরোপের সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামো পাল্টে দিতে আগ্রহী।’
রাশিয়ার অনেকে ক্রেমলিনের বক্তব্যকেই সমর্থন করেন এবং অনেকটা একই ভাষায় কথা বলেন। মস্কোভিত্তিক থিংক ট্যাংক ডিগোরিয়া এক্সপার্ট ক্লাবের সদস্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্পার্টাক বারানভস্কির মতামত রুশ সরকারের সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে কিয়েভ সরকারের ক্রমাগত নাশকতা, তথ্য বিকৃত করা এবং অনিবার্যকে বিলম্বিত করার চেষ্টা আলোচনা প্রক্রিয়াকে অনেক জটিল করে তুলেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ প্রথমে মিনস্ক চুক্তি কার্যকর করতে রাজি হয়নি এবং পরে ইস্তাম্বুলে আলোচনা হওয়া প্রাথমিক শান্তি চুক্তির শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এমন এক ভরসা করার অযোগ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলাপ চালানো সত্যিই কঠিন।’
মিনস্ক চুক্তি ছিল ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সই হওয়া একাধিক চুক্তিমালা, যার উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের দনবাসে চলা যুদ্ধ থামানো, যেখানে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিয়েভ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছিল। ২০২২ সালের পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বেলারুশ ও তুরস্কে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে, কিন্তু কোনোটিই শান্তি আনতে পারেনি।
যদিও মস্কোয় সর্বশেষ বৈঠকে কী আলোচিত হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ফাঁস হয়নি, তবু রাশিয়ায় সামান্য হলেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে, যুদ্ধের শেষ হয়তো কাছাকাছি। সেন্ট পিটার্সবার্গের ষাটোর্ধ্ব ব্যবসায়ী তাতিয়ানা এই যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকেই দোষ দেন। তবে তিনি মনে করেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তাঁর ইউরোপীয় মিত্ররাই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে বাধ্য করছেন।
তিনি আক্ষেপ করে প্রশ্ন করেন, ‘এই পরিস্থিতিতে যখন একমাত্র ট্রাম্পকেই কিছুটা বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন বলে মনে হচ্ছে। যিনি কিনা আবার স্বভাবগতভাবেই সম্পূর্ণ উন্মাদ। তাহলে বুঝুন দুনিয়ার কী হাল হয়েছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি সবার জন্যই আরও খারাপ। একটা সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে স্পষ্টতই রাশিয়ার পাল্লা ভারী, যা আমেরিকান জেনারেলরাও ভালোই বোঝেন।’
গত মঙ্গলবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ঘোষণা করেন, রুশ সৈন্যরা অবশেষে পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক দখল করেছে। এর ফলে দুই বছরের অবরোধের অবসান ঘটেছে। ইউক্রেন শহর পতনের কথা অস্বীকার করলেও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রুশদের অগ্রযাত্রা থামাতে তাদের সেনারা বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
প্রস্তাবিত চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের যেসব অংশ এখনো রাশিয়ার দখলে যায়নি, সেখান থেকে সেনা সরাতে হবে। ওই এলাকা একটি নিরপেক্ষ নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল হবে, তবে আন্তর্জাতিকভাবে তা রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত হবে। একই সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকস, যা ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া বা রুশ-সমর্থিতদের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর বিনিময়ে, রাশিয়াকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা আর কোনো ইউরোপীয় দেশ আক্রমণ করবে না এবং এই প্রতিশ্রুতি তাদের আইনে লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ ছাড়া, যুদ্ধাপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাবও আছে। গত সপ্তাহে পুতিন স্বীকার করেন যে এই পরিকল্পনা ‘ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হতে পারে।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘যদি ইউক্রেনীয় সৈন্যরা তাদের দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে যায়, তবে আমরা যুদ্ধ থামাব। যদি না যায়, তবে আমরা সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করব।’
সূত্র মারফত জানা যায়, গত সপ্তাহান্তে ইউক্রেনীয় মধ্যস্থতাকারীরা তাদের আমেরিকান প্রতিপক্ষকে আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে—কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী রুশ অর্থনীতিবিদ ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত নয়, বরং তার শর্তগুলো পূরণ হওয়া পর্যন্ত।’
মঙ্গলবার বৈঠকের আগে, পুতিন ইউরোপকে হুমকি দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি সতর্ক করে দেন যে রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে না, ‘তবে ইউরোপ যদি চায় এবং শুরু করে, আমরা এই মুহূর্তেই প্রস্তুত।’
বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘পুতিন এর জন্যই প্রস্তুতি নেবেন, ঠিক যেমন ২০২২ সালের আগে তিনি বলেছিলেন যে—রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে যাচ্ছে না, যা বিপরীতটাই ইঙ্গিত করেছিল।’ দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকার পরও ইনোজেমতসেভ এবং বারানভস্কি দুজনেই একমত যে রাশিয়া অনির্দিষ্টকাল ধরে তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম। ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘এতটা তীব্রতায় বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মোটেও কোনো সমস্যা নয়।’
তাঁর ভাষায়, ‘যুদ্ধের শুরুতে যত সমস্যা ছিল, এখন তার চেয়ে কম। কারণ, শুরুতে আমরা দেখেছি তাদের লোক জড়ো করতে হয়েছিল; এখন তারা বেশ ভালো বেতন দেয় এবং (নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা) ক্রমাগত তালিকাভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া, তাদের অস্ত্রের সমস্যা ছিল এবং ভাষ্যকাররা লিখেছিলেন যে তিন মাসের মধ্যে তাদের শেল ফুরিয়ে যাবে। বাস্তবে, এখন যুদ্ধের আগের চেয়েও বেশি সক্রিয়ভাবে অস্ত্র উৎপাদন হচ্ছে।’
ইনোজেমতসেভ মনে করেন, এখন ‘আমেরিকানরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে—হয় এই যুদ্ধ শেষ করতে হবে, না হয় ইউক্রেনের প্রতি সব রকম সমর্থন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই বার্তা এখন কিয়েভকে স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। আর তাই, ইউক্রেনীয়দের কোনো না কোনোভাবে রাজি করানো হবে...ইউক্রেনীয়রা জানে যে ইউরোপ তাদের রক্ষা করতে পারবে না। অর্থাৎ, যদি এখন আমেরিকানরা এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে দাঁড়ায়, তবে ইউরোপের কাছে বছরের পর বছর ধরে এই কারণকে সমর্থন করার মতো অর্থ বা সংকল্প কোনোটাই থাকবে না।’
ইনোজেমতসেভ উল্লেখ করেন, একটি চুক্তি হলেও তা ইউক্রেনের স্বার্থে আসতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি তারা নিজেদের সেনাবাহিনীর জন্য ৬ লাখ সৈন্য এবং অন্তত কয়েক বছরের জন্য একটি বিরতি নিশ্চিত করতে পারে, তবে বাস্তবে এটিই সমস্যার সমাধান।’ তিনি বলেন, ‘পুতিন সব সময়ই একটি হুমকি হয়ে থাকবেন এবং তাই পশ্চিমের প্রধান কাজ হলো (৭৩ বছর বয়সী) পুতিনকে উতরে যাওয়া। যদি তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য লড়াইয়ে বিরতি আসে, তবে এটি তার জীবনের শেষের দিকে পৌঁছে যাবে, যা স্বভাবতই তাঁকে কম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’
এ ছাড়া, যেকোনো সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার রুশ অর্থনীতির জন্য উপকারী হবে। তবে ইনোজেমতসেভ ও বুদ্রাইৎস্কিস সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, জীবন ২০২২ সালের আগের মতো স্বাভাবিক হবে। তাঁদের অনুমান, সমাজ প্রবলভাবে সামরিক এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। বুদ্রাইৎস্কিস বলেন, ‘শান্তি আসতে পারে না। এমন এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও ফেরা সম্ভব নয় যেখানে পূর্ণাঙ্গ দমনমূলক সর্বাত্মক একনায়কতন্ত্রের উপযোগী এই সমস্ত ব্যবস্থা তুলে নেওয়া হবে, কারণ আমাদের আর কোনো সরাসরি বাহ্যিক হুমকি নেই।’
তাঁর মতে, ‘এটাই রাশিয়ার পুতিন রেজিমের নকশা। তাঁর ক্ষমতা এভাবেই সাজানো হয়েছে যে, এখানে এক অন্তহীন যুদ্ধ চলবে, যেখানে রুশ অভিজাতরা পতাকার নিচে একত্রিত থাকবে, দেশের অভ্যন্তরে যে কোনো ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলবে...এগুলো কেবল সাময়িকভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চালু করা কিছু অসাধারণ ব্যবস্থা নয়, বরং এভাবেই তিনি শাসন চালিয়ে যাবেন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ইউক্রেন, ইউরোপ, বাল্টিক রাষ্ট্র বা ‘যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো রূপে যুদ্ধ’ হলো পুতিন ২০২২ সালের পরে রাশিয়ায় যে ‘স্বাভাবিকতা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার অবিচ্ছেদ্য চালিকাশক্তি। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘সুতরাং, এই রেজিম টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলতে থাকবে।’
কিছু রুশ নাগরিক ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। মস্কোর গণমাধ্যম সের্গেই কালেনিক বলেন, ‘আমেরিকা যত দিন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে তাদের দখলদার সৈন্য প্রত্যাহার না করবে, তত দিন যুদ্ধ শেষ হবে না।’
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। সোভিয়েত নির্যাতন নথিভুক্ত করা এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
১৭ নভেম্বর ২০২১
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা অন্য আঞ্চলিক দেশ এবং এর বাইরেও ‘বিস্তৃত’ হতে পারে। তিনি গত বুধবার ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেন, ‘আমরা শূন্য-সমষ্টিগত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছি এবং সংঘাতের বদলে সহযোগিতার
১ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। সোভিয়েত নির্যাতন নথিভুক্ত করা এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
১৭ নভেম্বর ২০২১
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা অন্য আঞ্চলিক দেশ এবং এর বাইরেও ‘বিস্তৃত’ হতে পারে। তিনি গত বুধবার ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেন, ‘আমরা শূন্য-সমষ্টিগত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছি এবং সংঘাতের বদলে সহযোগিতার
১ ঘণ্টা আগে
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
৩ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বর্তমান রাশিয়ায় সোভিয়েত যুগের শেষ দিকের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। সোভিয়েত নির্যাতন নথিভুক্ত করা এই মেমোরিয়ালকে এরই মধ্যে সরকার-সমর্থকেরা ‘বিদেশি এজেন্ট’ তকমা দিয়েছেন।
১৭ নভেম্বর ২০২১
পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তা অন্য আঞ্চলিক দেশ এবং এর বাইরেও ‘বিস্তৃত’ হতে পারে। তিনি গত বুধবার ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেন, ‘আমরা শূন্য-সমষ্টিগত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছি এবং সংঘাতের বদলে সহযোগিতার
১ ঘণ্টা আগে
ভ্লাদিস্লাভ ইনোজেমতসেভ বলেন, ‘পুতিন ভালোভাবেই জানেন যে ইউক্রেনের হাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তাই, পুতিন সবকিছু নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। তাঁর হাতে সময় আছে। তিনি এক বা দুই বছর ধরে লড়তে পারেন। সমস্যাটা বরং পশ্চিমের (এবং তাদের লড়াইয়ের ইচ্ছার)। তাই, হ্যাঁ, তিনি দেরি করতে প্রস্তুত—ইউক্রেন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দেও
৩ ঘণ্টা আগে
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১ দিন আগে