সময় যত গড়িয়েছে, মার্কিন গণতন্ত্র তার মূল প্রতিশ্রুতি পূরণে ক্রমশ ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সংকীর্ণ ও সুবিধাভোগী অভিজাত গোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে মনোযোগী হয়ে সমস্যাকে আরও গভীর করেছে। মার্কিন ধাঁচের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শ্রমজীবী মানুষের কাছে ফেরার বিকল্প নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুতর হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা যে ভোটারদের কাছে একেবারেই পাত্তা পায়নি, তাতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ঠিক ১১ মাস আগে নির্ভরযোগ্য গ্যালাপ জরিপ দেখিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৮ শতাংশ ভোটার ‘বিদ্যমান মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ নিয়ে সন্তুষ্ট। এই হার জরিপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এমন অনাস্থা আর কখনো দেখা যায়নি।
সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষজ্ঞনির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনা এবং কার্যকর জনসেবা—এই চারটি বিষয় মার্কিন গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবতা হলো মার্কিন গণতন্ত্র এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক যেমন ব্যর্থ অপরাপর ধনী (এমনকি মধ্যম আয়ের) দেশগুলো।
তবে, পরিস্থিতি সব সময় এমন ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিন দশকে নাগরিকদের সাধারণ সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে মার্কিন গণতন্ত্র। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখেই সব শ্রেণির মানুষের প্রকৃত মজুরি দ্রুত বেড়েছিল; ফলত সমাজে বৈষম্যও কমেছিল। কিন্তু সত্তর ও আশির দশকের শেষ দিকে সমৃদ্ধির এই ধারা থেমে যায়; দ্রুত বাড়তে থাকে বৈষম্য। উচ্চতর ডিগ্রিধারী নয়, এমন শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে একেবারে নগণ্য। প্রায় অর্ধেক মার্কিন শ্রমিকের চোখের সামনে বাকিদের আয় তাঁদের চেয়ে তরতর করে বেড়েছে।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে তাই বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
মার্কিন গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি মতপ্রকাশের অধিকার। যেকোনো সমস্যায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে উত্থাপনের অধিকার স্বীকৃত। তবে এই অধিকার কখনোই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আমেরিকার ইতিহাসের বড় সময়জুড়ে অনেক সংখ্যালঘু ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। ভোটারদের ক্ষমতাহীনতা গত চার দশকে আরও সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়ে উঠেছে। সমাজতাত্ত্বিক আরলি রাসেল হকশিল্ড যেমনটা বলেছেন, যাদের কলেজ ডিগ্রি নেই এবং যারা মধ্য-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে বাস করেন—এমন অনেক আমেরিকান ‘নিজভূমে পরবাসী’ মনে করেন নিজেকে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতিবাচক দিক হলো—সমাজের বড় অংশের মানুষ যখন এমনটা অনুভব করছে, তখন তাঁরা শ্রমজীবীদের থেকে দূরে সরে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, পেশাজীবী ও শিক্ষিত এলিট জোটে পরিণত হয়েছে। এদের নিজেদেরই অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে। সেগুলোর সঙ্গে শ্রমজীবী শ্রেণির অগ্রাধিকারের মিল নেই বললেই চলে।
তা ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের অসন্তোষকে উসকে দিয়েছে ডানপন্থী বহু গণমাধ্যম। মূলধারার গণমাধ্যম ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশের ‘অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উদ্বেগ’ উপেক্ষা করার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। গত চার বছরে এই প্রবণতা তীব্রতর হয়েছে। কারণ পরিচয় সম্পর্কিত ক্রমাগত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের পরিবেশ। এমন পরিস্থিতি অনেক ভোটারকেও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে।
মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কেবল বিশেষজ্ঞ ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে অ্যাজেন্ডা নির্ধারিত হলে অন্তত নাগরিকেরা নিজেদের বলতে পারত যে, কাজ করছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা অন্তত ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকেই ফাঁকা মনে হচ্ছে। তাঁরা এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন, যা কথিতভাবে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
কারণ, এই বিশেষজ্ঞরাই ওয়াল স্ট্রিটে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন। তারা জানতেন ঝুঁকি কীভাবে পরিচালনা করতে হয়। ফলে, এই আর্থিক ব্যবস্থা কেবল তাদেরই ফায়দা দিয়েছে। তাই, মার্কিন প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে—এই বিষয়টি কেবল মিথ্যাই প্রমাণিত হয়নি, এটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যখন রাজনীতিবিদ ও নিয়ন্ত্রকেরা দোষীদের উদ্ধার করতে ছুটে গেছেন, কিন্তু লাখো আমেরিকান যারা তাদের বাড়ি ও জীবিকা হারিয়েছিলেন, তাদের জন্য প্রায় কিছুই করেননি—তখন।
বিশেষজ্ঞদের প্রতি জনসাধারণের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। যখন লকডাউন ও ভ্যাকসিনের মতো বিষয়গুলো বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাসের পরীক্ষা হিসেবে দাঁড়িয়েছে এই সময়ে। যারা এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন, তাদের মূলধারার গণমাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বিকল্প মাধ্যমগুলোর দিকে ছুটে গেছেন, যেখানে অডিয়েন্স দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানেই আসে জনসেবার প্রতিশ্রুতির প্রশ্ন। ব্রিটিশ কবি জন বেটজেমন একবার লিখেছিলেন, ‘আমাদের জাতি গণতন্ত্র এবং সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার পক্ষে’। কিন্তু গণতন্ত্র যে নির্ভরযোগ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রদান করবে, তা নিয়ে সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে, এই ব্যবস্থা নিজেরই সাফল্যের শিকার। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক ইউরোপীয় দেশ মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং জনসেবায় দুর্নীতি কমাতে আইন প্রণয়ন করেছে, নতুন পণ্য থেকে জনগণকে সুরক্ষিত করতে নিয়মাবলি তৈরি করে।
কিন্তু যত বেশি নিয়মকানুন এবং নিরাপত্তা প্রক্রিয়া যোগ হয়েছে, জনসেবা ততটাই অদক্ষ হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রতি মাইল মহাসড়কে সরকারি ব্যয় তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে, যা নতুন নিরাপত্তা নিয়ম ও প্রক্রিয়ার কারণে হয়েছে। একইভাবে নির্মাণ খাতের উৎপাদনশীলতার পতনও কঠোর ভূমি ব্যবহারবিধির জন্য দায়ী। শুধু ব্যয়ই বাড়েনি; নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং নাগরিকমুখী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠা নিয়মগুলো বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য সেবার, যেমন শিক্ষা খাতে, মানের অবনতি ঘটিয়েছে।
সংক্ষেপে, গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতির চারটি স্তম্ভই ভেঙে পড়েছে বলে মনে করেন অনেক আমেরিকান। তবে এর মানে এই নয় যে, তারা এখন কোনো ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পছন্দ করেন। আমেরিকানরা এখনো তাদের দেশ নিয়ে গর্বিত এবং এর গণতান্ত্রিক চরিত্রকে তাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করেন।
ভালো খবর হলো, গণতন্ত্রকে পুনর্গঠন করা এবং আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিয়ে। যার অর্থ হলো, রাজনীতিতে বড় অর্থের (বড় বড় পুঁজির) প্রভাব কমানো। একইভাবে, গণতন্ত্রকে বিশেষজ্ঞদের হাত থেকে পুরোপুরি আলাদা করা সম্ভব নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা কম রাজনীতিককরণ করা যেতে পারে। সরকারি বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে নির্বাচন করা উচিত এবং স্থানীয় সরকারের স্তরে তাদের আরও বেশি নিয়োগ দেওয়া হলে তা উপকারে আসবে।
অবশ্য, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে এসব কিছু হবে—এমন সম্ভাবনা নেই। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি এবং তিনি আগামী চার বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রীতি ভেঙে ফেলবেন। তাই গণতন্ত্রকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়ে মধ্য-বামপন্থী শক্তিগুলোর ওপর। তাদেরই বড় ব্যবসা এবং বড় প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক কমাতে হবে এবং তাদের শ্রমজীবী জনগণের শিকড়ে ফিরে যেতে হবে। যদি ট্রাম্পের জয় ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো তিনি অজান্তেই আমেরিকান গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুতর হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা যে ভোটারদের কাছে একেবারেই পাত্তা পায়নি, তাতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ঠিক ১১ মাস আগে নির্ভরযোগ্য গ্যালাপ জরিপ দেখিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৮ শতাংশ ভোটার ‘বিদ্যমান মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ নিয়ে সন্তুষ্ট। এই হার জরিপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এমন অনাস্থা আর কখনো দেখা যায়নি।
সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষজ্ঞনির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনা এবং কার্যকর জনসেবা—এই চারটি বিষয় মার্কিন গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবতা হলো মার্কিন গণতন্ত্র এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক যেমন ব্যর্থ অপরাপর ধনী (এমনকি মধ্যম আয়ের) দেশগুলো।
তবে, পরিস্থিতি সব সময় এমন ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিন দশকে নাগরিকদের সাধারণ সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে মার্কিন গণতন্ত্র। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখেই সব শ্রেণির মানুষের প্রকৃত মজুরি দ্রুত বেড়েছিল; ফলত সমাজে বৈষম্যও কমেছিল। কিন্তু সত্তর ও আশির দশকের শেষ দিকে সমৃদ্ধির এই ধারা থেমে যায়; দ্রুত বাড়তে থাকে বৈষম্য। উচ্চতর ডিগ্রিধারী নয়, এমন শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে একেবারে নগণ্য। প্রায় অর্ধেক মার্কিন শ্রমিকের চোখের সামনে বাকিদের আয় তাঁদের চেয়ে তরতর করে বেড়েছে।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে তাই বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
মার্কিন গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি মতপ্রকাশের অধিকার। যেকোনো সমস্যায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে উত্থাপনের অধিকার স্বীকৃত। তবে এই অধিকার কখনোই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আমেরিকার ইতিহাসের বড় সময়জুড়ে অনেক সংখ্যালঘু ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। ভোটারদের ক্ষমতাহীনতা গত চার দশকে আরও সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়ে উঠেছে। সমাজতাত্ত্বিক আরলি রাসেল হকশিল্ড যেমনটা বলেছেন, যাদের কলেজ ডিগ্রি নেই এবং যারা মধ্য-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে বাস করেন—এমন অনেক আমেরিকান ‘নিজভূমে পরবাসী’ মনে করেন নিজেকে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতিবাচক দিক হলো—সমাজের বড় অংশের মানুষ যখন এমনটা অনুভব করছে, তখন তাঁরা শ্রমজীবীদের থেকে দূরে সরে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, পেশাজীবী ও শিক্ষিত এলিট জোটে পরিণত হয়েছে। এদের নিজেদেরই অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে। সেগুলোর সঙ্গে শ্রমজীবী শ্রেণির অগ্রাধিকারের মিল নেই বললেই চলে।
তা ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের অসন্তোষকে উসকে দিয়েছে ডানপন্থী বহু গণমাধ্যম। মূলধারার গণমাধ্যম ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশের ‘অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উদ্বেগ’ উপেক্ষা করার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। গত চার বছরে এই প্রবণতা তীব্রতর হয়েছে। কারণ পরিচয় সম্পর্কিত ক্রমাগত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের পরিবেশ। এমন পরিস্থিতি অনেক ভোটারকেও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে।
মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কেবল বিশেষজ্ঞ ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে অ্যাজেন্ডা নির্ধারিত হলে অন্তত নাগরিকেরা নিজেদের বলতে পারত যে, কাজ করছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা অন্তত ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকেই ফাঁকা মনে হচ্ছে। তাঁরা এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন, যা কথিতভাবে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
কারণ, এই বিশেষজ্ঞরাই ওয়াল স্ট্রিটে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন। তারা জানতেন ঝুঁকি কীভাবে পরিচালনা করতে হয়। ফলে, এই আর্থিক ব্যবস্থা কেবল তাদেরই ফায়দা দিয়েছে। তাই, মার্কিন প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে—এই বিষয়টি কেবল মিথ্যাই প্রমাণিত হয়নি, এটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যখন রাজনীতিবিদ ও নিয়ন্ত্রকেরা দোষীদের উদ্ধার করতে ছুটে গেছেন, কিন্তু লাখো আমেরিকান যারা তাদের বাড়ি ও জীবিকা হারিয়েছিলেন, তাদের জন্য প্রায় কিছুই করেননি—তখন।
বিশেষজ্ঞদের প্রতি জনসাধারণের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। যখন লকডাউন ও ভ্যাকসিনের মতো বিষয়গুলো বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাসের পরীক্ষা হিসেবে দাঁড়িয়েছে এই সময়ে। যারা এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন, তাদের মূলধারার গণমাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বিকল্প মাধ্যমগুলোর দিকে ছুটে গেছেন, যেখানে অডিয়েন্স দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানেই আসে জনসেবার প্রতিশ্রুতির প্রশ্ন। ব্রিটিশ কবি জন বেটজেমন একবার লিখেছিলেন, ‘আমাদের জাতি গণতন্ত্র এবং সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার পক্ষে’। কিন্তু গণতন্ত্র যে নির্ভরযোগ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রদান করবে, তা নিয়ে সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে, এই ব্যবস্থা নিজেরই সাফল্যের শিকার। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক ইউরোপীয় দেশ মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং জনসেবায় দুর্নীতি কমাতে আইন প্রণয়ন করেছে, নতুন পণ্য থেকে জনগণকে সুরক্ষিত করতে নিয়মাবলি তৈরি করে।
কিন্তু যত বেশি নিয়মকানুন এবং নিরাপত্তা প্রক্রিয়া যোগ হয়েছে, জনসেবা ততটাই অদক্ষ হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রতি মাইল মহাসড়কে সরকারি ব্যয় তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে, যা নতুন নিরাপত্তা নিয়ম ও প্রক্রিয়ার কারণে হয়েছে। একইভাবে নির্মাণ খাতের উৎপাদনশীলতার পতনও কঠোর ভূমি ব্যবহারবিধির জন্য দায়ী। শুধু ব্যয়ই বাড়েনি; নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং নাগরিকমুখী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠা নিয়মগুলো বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য সেবার, যেমন শিক্ষা খাতে, মানের অবনতি ঘটিয়েছে।
সংক্ষেপে, গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতির চারটি স্তম্ভই ভেঙে পড়েছে বলে মনে করেন অনেক আমেরিকান। তবে এর মানে এই নয় যে, তারা এখন কোনো ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পছন্দ করেন। আমেরিকানরা এখনো তাদের দেশ নিয়ে গর্বিত এবং এর গণতান্ত্রিক চরিত্রকে তাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করেন।
ভালো খবর হলো, গণতন্ত্রকে পুনর্গঠন করা এবং আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিয়ে। যার অর্থ হলো, রাজনীতিতে বড় অর্থের (বড় বড় পুঁজির) প্রভাব কমানো। একইভাবে, গণতন্ত্রকে বিশেষজ্ঞদের হাত থেকে পুরোপুরি আলাদা করা সম্ভব নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা কম রাজনীতিককরণ করা যেতে পারে। সরকারি বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে নির্বাচন করা উচিত এবং স্থানীয় সরকারের স্তরে তাদের আরও বেশি নিয়োগ দেওয়া হলে তা উপকারে আসবে।
অবশ্য, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে এসব কিছু হবে—এমন সম্ভাবনা নেই। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি এবং তিনি আগামী চার বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রীতি ভেঙে ফেলবেন। তাই গণতন্ত্রকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়ে মধ্য-বামপন্থী শক্তিগুলোর ওপর। তাদেরই বড় ব্যবসা এবং বড় প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক কমাতে হবে এবং তাদের শ্রমজীবী জনগণের শিকড়ে ফিরে যেতে হবে। যদি ট্রাম্পের জয় ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো তিনি অজান্তেই আমেরিকান গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
সময় যত গড়িয়েছে, মার্কিন গণতন্ত্র তার মূল প্রতিশ্রুতি পূরণে ক্রমশ ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সংকীর্ণ ও সুবিধাভোগী অভিজাত গোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে মনোযোগী হয়ে সমস্যাকে আরও গভীর করেছে। মার্কিন ধাঁচের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শ্রমজীবী মানুষের কাছে ফেরার বিকল্প নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুতর হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা যে ভোটারদের কাছে একেবারেই পাত্তা পায়নি, তাতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ঠিক ১১ মাস আগে নির্ভরযোগ্য গ্যালাপ জরিপ দেখিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৮ শতাংশ ভোটার ‘বিদ্যমান মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ নিয়ে সন্তুষ্ট। এই হার জরিপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এমন অনাস্থা আর কখনো দেখা যায়নি।
সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষজ্ঞনির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনা এবং কার্যকর জনসেবা—এই চারটি বিষয় মার্কিন গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবতা হলো মার্কিন গণতন্ত্র এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক যেমন ব্যর্থ অপরাপর ধনী (এমনকি মধ্যম আয়ের) দেশগুলো।
তবে, পরিস্থিতি সব সময় এমন ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিন দশকে নাগরিকদের সাধারণ সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে মার্কিন গণতন্ত্র। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখেই সব শ্রেণির মানুষের প্রকৃত মজুরি দ্রুত বেড়েছিল; ফলত সমাজে বৈষম্যও কমেছিল। কিন্তু সত্তর ও আশির দশকের শেষ দিকে সমৃদ্ধির এই ধারা থেমে যায়; দ্রুত বাড়তে থাকে বৈষম্য। উচ্চতর ডিগ্রিধারী নয়, এমন শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে একেবারে নগণ্য। প্রায় অর্ধেক মার্কিন শ্রমিকের চোখের সামনে বাকিদের আয় তাঁদের চেয়ে তরতর করে বেড়েছে।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে তাই বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
মার্কিন গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি মতপ্রকাশের অধিকার। যেকোনো সমস্যায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে উত্থাপনের অধিকার স্বীকৃত। তবে এই অধিকার কখনোই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আমেরিকার ইতিহাসের বড় সময়জুড়ে অনেক সংখ্যালঘু ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। ভোটারদের ক্ষমতাহীনতা গত চার দশকে আরও সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়ে উঠেছে। সমাজতাত্ত্বিক আরলি রাসেল হকশিল্ড যেমনটা বলেছেন, যাদের কলেজ ডিগ্রি নেই এবং যারা মধ্য-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে বাস করেন—এমন অনেক আমেরিকান ‘নিজভূমে পরবাসী’ মনে করেন নিজেকে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতিবাচক দিক হলো—সমাজের বড় অংশের মানুষ যখন এমনটা অনুভব করছে, তখন তাঁরা শ্রমজীবীদের থেকে দূরে সরে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, পেশাজীবী ও শিক্ষিত এলিট জোটে পরিণত হয়েছে। এদের নিজেদেরই অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে। সেগুলোর সঙ্গে শ্রমজীবী শ্রেণির অগ্রাধিকারের মিল নেই বললেই চলে।
তা ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের অসন্তোষকে উসকে দিয়েছে ডানপন্থী বহু গণমাধ্যম। মূলধারার গণমাধ্যম ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশের ‘অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উদ্বেগ’ উপেক্ষা করার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। গত চার বছরে এই প্রবণতা তীব্রতর হয়েছে। কারণ পরিচয় সম্পর্কিত ক্রমাগত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের পরিবেশ। এমন পরিস্থিতি অনেক ভোটারকেও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে।
মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কেবল বিশেষজ্ঞ ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে অ্যাজেন্ডা নির্ধারিত হলে অন্তত নাগরিকেরা নিজেদের বলতে পারত যে, কাজ করছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা অন্তত ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকেই ফাঁকা মনে হচ্ছে। তাঁরা এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন, যা কথিতভাবে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
কারণ, এই বিশেষজ্ঞরাই ওয়াল স্ট্রিটে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন। তারা জানতেন ঝুঁকি কীভাবে পরিচালনা করতে হয়। ফলে, এই আর্থিক ব্যবস্থা কেবল তাদেরই ফায়দা দিয়েছে। তাই, মার্কিন প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে—এই বিষয়টি কেবল মিথ্যাই প্রমাণিত হয়নি, এটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যখন রাজনীতিবিদ ও নিয়ন্ত্রকেরা দোষীদের উদ্ধার করতে ছুটে গেছেন, কিন্তু লাখো আমেরিকান যারা তাদের বাড়ি ও জীবিকা হারিয়েছিলেন, তাদের জন্য প্রায় কিছুই করেননি—তখন।
বিশেষজ্ঞদের প্রতি জনসাধারণের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। যখন লকডাউন ও ভ্যাকসিনের মতো বিষয়গুলো বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাসের পরীক্ষা হিসেবে দাঁড়িয়েছে এই সময়ে। যারা এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন, তাদের মূলধারার গণমাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বিকল্প মাধ্যমগুলোর দিকে ছুটে গেছেন, যেখানে অডিয়েন্স দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানেই আসে জনসেবার প্রতিশ্রুতির প্রশ্ন। ব্রিটিশ কবি জন বেটজেমন একবার লিখেছিলেন, ‘আমাদের জাতি গণতন্ত্র এবং সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার পক্ষে’। কিন্তু গণতন্ত্র যে নির্ভরযোগ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রদান করবে, তা নিয়ে সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে, এই ব্যবস্থা নিজেরই সাফল্যের শিকার। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক ইউরোপীয় দেশ মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং জনসেবায় দুর্নীতি কমাতে আইন প্রণয়ন করেছে, নতুন পণ্য থেকে জনগণকে সুরক্ষিত করতে নিয়মাবলি তৈরি করে।
কিন্তু যত বেশি নিয়মকানুন এবং নিরাপত্তা প্রক্রিয়া যোগ হয়েছে, জনসেবা ততটাই অদক্ষ হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রতি মাইল মহাসড়কে সরকারি ব্যয় তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে, যা নতুন নিরাপত্তা নিয়ম ও প্রক্রিয়ার কারণে হয়েছে। একইভাবে নির্মাণ খাতের উৎপাদনশীলতার পতনও কঠোর ভূমি ব্যবহারবিধির জন্য দায়ী। শুধু ব্যয়ই বাড়েনি; নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং নাগরিকমুখী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠা নিয়মগুলো বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য সেবার, যেমন শিক্ষা খাতে, মানের অবনতি ঘটিয়েছে।
সংক্ষেপে, গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতির চারটি স্তম্ভই ভেঙে পড়েছে বলে মনে করেন অনেক আমেরিকান। তবে এর মানে এই নয় যে, তারা এখন কোনো ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পছন্দ করেন। আমেরিকানরা এখনো তাদের দেশ নিয়ে গর্বিত এবং এর গণতান্ত্রিক চরিত্রকে তাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করেন।
ভালো খবর হলো, গণতন্ত্রকে পুনর্গঠন করা এবং আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিয়ে। যার অর্থ হলো, রাজনীতিতে বড় অর্থের (বড় বড় পুঁজির) প্রভাব কমানো। একইভাবে, গণতন্ত্রকে বিশেষজ্ঞদের হাত থেকে পুরোপুরি আলাদা করা সম্ভব নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা কম রাজনীতিককরণ করা যেতে পারে। সরকারি বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে নির্বাচন করা উচিত এবং স্থানীয় সরকারের স্তরে তাদের আরও বেশি নিয়োগ দেওয়া হলে তা উপকারে আসবে।
অবশ্য, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে এসব কিছু হবে—এমন সম্ভাবনা নেই। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি এবং তিনি আগামী চার বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রীতি ভেঙে ফেলবেন। তাই গণতন্ত্রকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়ে মধ্য-বামপন্থী শক্তিগুলোর ওপর। তাদেরই বড় ব্যবসা এবং বড় প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক কমাতে হবে এবং তাদের শ্রমজীবী জনগণের শিকড়ে ফিরে যেতে হবে। যদি ট্রাম্পের জয় ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো তিনি অজান্তেই আমেরিকান গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুতর হুমকি’ হিসেবে তুলে ধরে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা যে ভোটারদের কাছে একেবারেই পাত্তা পায়নি, তাতে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ঠিক ১১ মাস আগে নির্ভরযোগ্য গ্যালাপ জরিপ দেখিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৮ শতাংশ ভোটার ‘বিদ্যমান মার্কিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ নিয়ে সন্তুষ্ট। এই হার জরিপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এমন অনাস্থা আর কখনো দেখা যায়নি।
সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষজ্ঞনির্ভর রাষ্ট্র পরিচালনা এবং কার্যকর জনসেবা—এই চারটি বিষয় মার্কিন গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবতা হলো মার্কিন গণতন্ত্র এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ঠিক যেমন ব্যর্থ অপরাপর ধনী (এমনকি মধ্যম আয়ের) দেশগুলো।
তবে, পরিস্থিতি সব সময় এমন ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিন দশকে নাগরিকদের সাধারণ সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে মার্কিন গণতন্ত্র। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখেই সব শ্রেণির মানুষের প্রকৃত মজুরি দ্রুত বেড়েছিল; ফলত সমাজে বৈষম্যও কমেছিল। কিন্তু সত্তর ও আশির দশকের শেষ দিকে সমৃদ্ধির এই ধারা থেমে যায়; দ্রুত বাড়তে থাকে বৈষম্য। উচ্চতর ডিগ্রিধারী নয়, এমন শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে একেবারে নগণ্য। প্রায় অর্ধেক মার্কিন শ্রমিকের চোখের সামনে বাকিদের আয় তাঁদের চেয়ে তরতর করে বেড়েছে।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে তাই বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
প্রায় দশক ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ঊর্ধ্বগতি ২০১৫ সালের দিকে বেশ থেমে যায়। এর মধ্যে গত দশক কিছুটা ভালো কাটলেও মহামারির কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি শহরের শ্রমজীবী মানুষ বড় ঘা দিয়েছে। ফলে স্বভাবতই পেটের দায়ের কাছে ডেমোক্র্যাটীয় গণতন্ত্রের বুলি হেরে গেছে। এবারের নির্বাচনে বেশির ভাগ আমেরিকানের কাছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
মার্কিন গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি মতপ্রকাশের অধিকার। যেকোনো সমস্যায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে উত্থাপনের অধিকার স্বীকৃত। তবে এই অধিকার কখনোই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। আমেরিকার ইতিহাসের বড় সময়জুড়ে অনেক সংখ্যালঘু ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। ভোটারদের ক্ষমতাহীনতা গত চার দশকে আরও সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়ে উঠেছে। সমাজতাত্ত্বিক আরলি রাসেল হকশিল্ড যেমনটা বলেছেন, যাদের কলেজ ডিগ্রি নেই এবং যারা মধ্য-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে বাস করেন—এমন অনেক আমেরিকান ‘নিজভূমে পরবাসী’ মনে করেন নিজেকে।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতিবাচক দিক হলো—সমাজের বড় অংশের মানুষ যখন এমনটা অনুভব করছে, তখন তাঁরা শ্রমজীবীদের থেকে দূরে সরে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, পেশাজীবী ও শিক্ষিত এলিট জোটে পরিণত হয়েছে। এদের নিজেদেরই অনেক চাওয়া-পাওয়া আছে। সেগুলোর সঙ্গে শ্রমজীবী শ্রেণির অগ্রাধিকারের মিল নেই বললেই চলে।
তা ছাড়া শ্রমজীবী মানুষের অসন্তোষকে উসকে দিয়েছে ডানপন্থী বহু গণমাধ্যম। মূলধারার গণমাধ্যম ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশের ‘অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উদ্বেগ’ উপেক্ষা করার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে। গত চার বছরে এই প্রবণতা তীব্রতর হয়েছে। কারণ পরিচয় সম্পর্কিত ক্রমাগত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও গণমাধ্যমের পরিবেশ। এমন পরিস্থিতি অনেক ভোটারকেও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে।
মার্কিন শাসনব্যবস্থায় কেবল বিশেষজ্ঞ ও অভিজাত বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে অ্যাজেন্ডা নির্ধারিত হলে অন্তত নাগরিকেরা নিজেদের বলতে পারত যে, কাজ করছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা অন্তত ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকেই ফাঁকা মনে হচ্ছে। তাঁরা এমন একটি আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন, যা কথিতভাবে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
কারণ, এই বিশেষজ্ঞরাই ওয়াল স্ট্রিটে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন। তারা জানতেন ঝুঁকি কীভাবে পরিচালনা করতে হয়। ফলে, এই আর্থিক ব্যবস্থা কেবল তাদেরই ফায়দা দিয়েছে। তাই, মার্কিন প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে—এই বিষয়টি কেবল মিথ্যাই প্রমাণিত হয়নি, এটি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যখন রাজনীতিবিদ ও নিয়ন্ত্রকেরা দোষীদের উদ্ধার করতে ছুটে গেছেন, কিন্তু লাখো আমেরিকান যারা তাদের বাড়ি ও জীবিকা হারিয়েছিলেন, তাদের জন্য প্রায় কিছুই করেননি—তখন।
বিশেষজ্ঞদের প্রতি জনসাধারণের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। যখন লকডাউন ও ভ্যাকসিনের মতো বিষয়গুলো বিজ্ঞানের প্রতি বিশ্বাসের পরীক্ষা হিসেবে দাঁড়িয়েছে এই সময়ে। যারা এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন, তাদের মূলধারার গণমাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বিকল্প মাধ্যমগুলোর দিকে ছুটে গেছেন, যেখানে অডিয়েন্স দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখানেই আসে জনসেবার প্রতিশ্রুতির প্রশ্ন। ব্রিটিশ কবি জন বেটজেমন একবার লিখেছিলেন, ‘আমাদের জাতি গণতন্ত্র এবং সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার পক্ষে’। কিন্তু গণতন্ত্র যে নির্ভরযোগ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রদান করবে, তা নিয়ে সন্দেহ ক্রমশ বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে, এই ব্যবস্থা নিজেরই সাফল্যের শিকার। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক ইউরোপীয় দেশ মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং জনসেবায় দুর্নীতি কমাতে আইন প্রণয়ন করেছে, নতুন পণ্য থেকে জনগণকে সুরক্ষিত করতে নিয়মাবলি তৈরি করে।
কিন্তু যত বেশি নিয়মকানুন এবং নিরাপত্তা প্রক্রিয়া যোগ হয়েছে, জনসেবা ততটাই অদক্ষ হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে প্রতি মাইল মহাসড়কে সরকারি ব্যয় তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে, যা নতুন নিরাপত্তা নিয়ম ও প্রক্রিয়ার কারণে হয়েছে। একইভাবে নির্মাণ খাতের উৎপাদনশীলতার পতনও কঠোর ভূমি ব্যবহারবিধির জন্য দায়ী। শুধু ব্যয়ই বাড়েনি; নিরাপদ, স্বচ্ছ এবং নাগরিকমুখী প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে গড়ে ওঠা নিয়মগুলো বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য সেবার, যেমন শিক্ষা খাতে, মানের অবনতি ঘটিয়েছে।
সংক্ষেপে, গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতির চারটি স্তম্ভই ভেঙে পড়েছে বলে মনে করেন অনেক আমেরিকান। তবে এর মানে এই নয় যে, তারা এখন কোনো ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পছন্দ করেন। আমেরিকানরা এখনো তাদের দেশ নিয়ে গর্বিত এবং এর গণতান্ত্রিক চরিত্রকে তাদের পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে মনে করেন।
ভালো খবর হলো, গণতন্ত্রকে পুনর্গঠন করা এবং আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে সবার জন্য সমান সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিয়ে। যার অর্থ হলো, রাজনীতিতে বড় অর্থের (বড় বড় পুঁজির) প্রভাব কমানো। একইভাবে, গণতন্ত্রকে বিশেষজ্ঞদের হাত থেকে পুরোপুরি আলাদা করা সম্ভব নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা কম রাজনীতিককরণ করা যেতে পারে। সরকারি বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে নির্বাচন করা উচিত এবং স্থানীয় সরকারের স্তরে তাদের আরও বেশি নিয়োগ দেওয়া হলে তা উপকারে আসবে।
অবশ্য, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনে এসব কিছু হবে—এমন সম্ভাবনা নেই। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি এবং তিনি আগামী চার বছরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক রীতি ভেঙে ফেলবেন। তাই গণতন্ত্রকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব পড়ে মধ্য-বামপন্থী শক্তিগুলোর ওপর। তাদেরই বড় ব্যবসা এবং বড় প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক কমাতে হবে এবং তাদের শ্রমজীবী জনগণের শিকড়ে ফিরে যেতে হবে। যদি ট্রাম্পের জয় ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো তিনি অজান্তেই আমেরিকান গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ মিনিট আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
২ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশেষজ্ঞদের ব্যর্থতা ও মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হতে থাকা মার্কিন গণতন্ত্রের বর্তমান সংকটগুলো তুলে ধরেছেন সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যারন আসেমোগলু। তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় মার্কিন গণতন্ত্রের সাফল্যের পরিচায়ক হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা চাপের মুখে পড়েছে...
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
২ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশেষজ্ঞদের ব্যর্থতা ও মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হতে থাকা মার্কিন গণতন্ত্রের বর্তমান সংকটগুলো তুলে ধরেছেন সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যারন আসেমোগলু। তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় মার্কিন গণতন্ত্রের সাফল্যের পরিচায়ক হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা চাপের মুখে পড়েছে...
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ মিনিট আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশেষজ্ঞদের ব্যর্থতা ও মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হতে থাকা মার্কিন গণতন্ত্রের বর্তমান সংকটগুলো তুলে ধরেছেন সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যারন আসেমোগলু। তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় মার্কিন গণতন্ত্রের সাফল্যের পরিচায়ক হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা চাপের মুখে পড়েছে...
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ মিনিট আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
২ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

অর্থনৈতিক বৈষম্য, বিশেষজ্ঞদের ব্যর্থতা ও মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হতে থাকা মার্কিন গণতন্ত্রের বর্তমান সংকটগুলো তুলে ধরেছেন সদ্য নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যারন আসেমোগলু। তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় মার্কিন গণতন্ত্রের সাফল্যের পরিচায়ক হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা চাপের মুখে পড়েছে...
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৩ মিনিট আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
২ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে