সুমন কায়সার, ঢাকা

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি প্রমাণ করেই যেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিধ্বংসী হামলা করে বসেছেন ট্রাম্প।
সংলাপ-সমঝোতার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে ট্রাম্প বোমারু বিমান পাঠালেন দুই দিনের মধ্যেই। ভয়ালদর্শন মার্কিন বিমান ততোধিক ভয়াবহ ৩০ হাজার পাউন্ডের ১৪টি বোমা ফেলল এক ফোরদোতেই। নাতাঞ্জ আর ইস্পাহানের কেন্দ্র ধ্বংসে বরাদ্দ ছিল ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডনাইট হ্যামার’ নামের এই আচানক হামলা কেবল তিন ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রকেই আঘাত করেনি, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে তা। বলা হচ্ছে, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়িয়ে দিল এ ঘটনা।
রোববার ভোরের মার্কিন হামলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা হুট করেই অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত কয়দিনের যুদ্ধের গতিধারাই বদলে দিয়েছে এ ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যকে আরেক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের চক্করেও তা ফেলে দিতে পারে। ‘যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যের যুদ্ধে জড়াচ্ছে না’, ‘সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ’—এসব বোলচাল দিয়ে ৭ কোটি ৭০ লাখ নাগরিকের ভোটে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প হয়তো আরেকবার তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছেন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর ওয়াদার বরখেলাপের তালিকা এরই মধ্যে দীর্ঘ।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন কোন দিকে রূপ নেবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান ও তার মিত্রদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। মার্কিন হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরান বলেছে, এর ‘প্রতিক্রিয়া হবে চিরস্থায়ী’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গত সপ্তাহেই বলে দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ সংঘাতে যোগ দিলে তার ‘নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি হবে’। হামলার ঘটনার পর পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উত্তেজনা কমাতে কূটনীতির পক্ষে কথা বললেও জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন হামলার সামরিক জবাব অনিবার্য। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার দেশের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে...।’
যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই সাবধান করে দিয়েছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। শনিবারই তারা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে এ সংঘাতে যোগ দিলে লোহিতসাগর দিয়ে যাওয়া মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
ইরান এখন ঠিক কী করবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জোর দিয়ে বলা মুশকিল। দেশটির অবশিষ্ট সামরিক কমান্ডার, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ শীর্ষ নেতারা নিশ্চয় এ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত এখন। উত্তেজনা এখন চরমে। কোনো পক্ষেরই পিছু হটার উপায় নেই; বিশেষ করে মার্কিন হস্তক্ষেপের পরিণতি নিয়ে এত জোর গলায় কথা বলার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকা ইরানের নেতৃত্বের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক হবে। ইসরায়েলের একতরফা হামলার পর দেশজুড়ে গড়ে ওঠা জাতীয় সংহতিও তাদের সাহস জোগাবে। দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে সামরিক ক্ষমতায় নাজুক অবস্থায় থাকা ইরান যেভাবে বলদর্পী অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী ইসরায়েলের হামলার জবাব দিয়ে যাচ্ছে, তা জাতি হিসেবে তাদের সংগ্রামী ঐতিহ্য ও অনমনীয়তারই প্রমাণ। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর সামরিক শক্তির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ানো আলাদা কথা। সে জন্য ধরে নেওয়া যায়, মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব খুব সম্ভবত হবে সীমিত পর্যায়ের। সংগত কারণেই হতাহত বেশি না হওয়া বা উত্তেজনা বেশি বাড়িয়ে না দেওয়ার দিকে সতর্ক নজর থাকবে তাদের। প্রসঙ্গত, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যে কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্রের কথা বিশ্লেষকেরা বলাবলি করছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আরও ভয়ংকর মার্কিন হামলা এড়াতে প্রতিশোধমূলক কিছুই না করা, সর্বশক্তি দিয়ে মার্কিন স্বার্থে হামলা চালানো অথবা আপাতত মুখ বুজে থেকে পরে সুবিধামতো হামলা করা।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ৫০টির মতো। এগুলোতে অস্ত্র-সরঞ্জাম ছাড়াও ৪০ হাজারের বেশি সেনা আছে বলে ধারণা করা হয়। শুধু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ড্রোনসহ অন্যান্য কিছু অস্ত্রের পাল্লায়ও তা পড়ে। কাতারের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মেহরান কামরাভাকে আল জাজিরা টিভিতে বলতে দেখা যায়, ‘একজন ইরানি কমান্ডার একদা তাঁকে বলেছিলেন, তার মানে হচ্ছে, এই ৪০ হাজারই আমাদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।’
পারস্য উপসাগরের অদূরে আছে মার্কিন সামরিক-বেসামরিক জাহাজ। সেখানে হামলা হলে প্রভাব পড়বে নৌবাণিজ্যের ওপরও। বিশ্বের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহনের নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি ইরানে আগেই দিয়ে রেখেছে। ইরানি বাহিনী নিজেরা ছাড়াও ইরাক, সিরিয়া, লেবাননে থাকা তাদের সমর্থকগোষ্ঠীগুলো নিজ দায়িত্বে প্রতিশোধের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তারা তেহরানের নির্দেশনার অপেক্ষায় বসে না-ও থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক স্টিফেন জিউনেস বলেছেন, ইরানিরা ওপরের কোনো না কোনো লক্ষ্যে হামলা না করলেই তিনি বিস্মিত হবেন।
সংঘাতের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব
মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর থেকে সম্ভবত ইরানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার একটা আভাস পাওয়া যায়। তেল আবিব ও হাইফায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি। ঠিক মার্কিন হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই হামলার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, নাকি তা চলমান অভিযানেরই ধারাবাহিকতা, সেটা হয়তো এখনই বলা যাবে না। তবে আইআরজিসি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলে ইরানের ২০তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে শুরু হয়েছে। আর প্রতিশোধমূলক হামলায় সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি খাইবার শেকান মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানি হামলার তীব্রতায় গতকালই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ফ্লাইট স্থগিত ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তিন বিমান সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ মিত্র’ যুক্তরাজ্য যে ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে নিজের আগ্রহী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা-ও হয়তো কাকতালীয় বিষয় নয়।
পরমাণু কর্মসূচির কী হবে
ইরান এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। উদ্দেশ্য—শান্তিপূর্ণ বেসামরিক কার্যক্রম বা বোমা তৈরি করা—যেটাই হোক, তারা এখন হয়তো আরও গোপনে আরও সুরক্ষিতভাবে কর্মসূচি চালাবে। তিনটি বড় পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার অর্থ (তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত নয়) এই নয় যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মৃত্যু ঘটেছে। প্রযুক্তিটা যেমন তাদের বিজ্ঞানীদের মাথায় রয়ে গেছে, ইউরেনিয়ামসহ যন্ত্র-উপকরণগুলোও হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। ইরানি কর্মকর্তারা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন হামলার আগেই কিছু স্পর্শকাতর সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী কোম্পানি ম্যাক্সার ১৯ ও ২০ জুন ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রের আশপাশে অস্বাভাবিক যানবাহন চলাচল চিহ্নিত করার কথা বলেছে, তা এই বক্তব্যকে কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি যে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলসহ তার মিত্রদের জন্য তাৎক্ষণিক বিপদ ছিল না, এ ব্যাপারে অনেকে একমত। মার্কিন গোয়েন্দারাই বলেছিল, ইরান বোমা তৈরির খুব কাছে নেই। তবে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড দৃশ্যত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপেই অতি সম্প্রতি মত কিছুটা বদলে বলেন, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বোমা তৈরিতে সক্ষম।
যুগপৎ ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলার শিকার হয়ে এখন ইরান মনে করতে পারে, ‘বোমাতেই উদ্ধার!’ নতুন উৎসাহে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে পারে তারা। মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পারসিও এমনটাই মনে করেন। তাঁর মতে, ইরানের সবচেয়ে মূল্যবান পারমাণবিক সম্পদ হলো তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত। যে পর্যন্ত তাদের কাছে তা থাকবে, সে পর্যন্ত বলা যাবে তাদের পরমাণু কর্মসূচি বহাল রয়েছে, যা এখনো অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। ট্রিটা পারসি মনে করেন, প্রমাণ ছাড়া ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রহীন অনেক রাষ্ট্রকেই শঙ্কিত করবে। এই পরিস্থিতিতে ইরান আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশে পরিণত হবে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় একজন পার্লামেন্টারি নেতা এমন কথাও মুখ ফুটে বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি গতকাল রোববারই মস্কো সফরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। পুরোনো মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠক হবে তাঁর। ইরানের সঙ্গে কয়েক মাস আগে কৌশলগত চুক্তি করা রাশিয়ার সর্বেসর্বা পুতিন এ পর্যন্ত চলতি সংঘাতে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ ব্যক্ত করা ছাড়া প্রকাশ্য ভূমিকা রাখেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টিও মাথায় রাখার মতো বিষয়। আব্বাস আরাঘচি মস্কো থেকে কী বার্তা নিয়ে ফেরেন, তা ইরানের পরবর্তী করণীয়র ওপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে।

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি প্রমাণ করেই যেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিধ্বংসী হামলা করে বসেছেন ট্রাম্প।
সংলাপ-সমঝোতার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে ট্রাম্প বোমারু বিমান পাঠালেন দুই দিনের মধ্যেই। ভয়ালদর্শন মার্কিন বিমান ততোধিক ভয়াবহ ৩০ হাজার পাউন্ডের ১৪টি বোমা ফেলল এক ফোরদোতেই। নাতাঞ্জ আর ইস্পাহানের কেন্দ্র ধ্বংসে বরাদ্দ ছিল ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডনাইট হ্যামার’ নামের এই আচানক হামলা কেবল তিন ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রকেই আঘাত করেনি, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে তা। বলা হচ্ছে, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়িয়ে দিল এ ঘটনা।
রোববার ভোরের মার্কিন হামলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা হুট করেই অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত কয়দিনের যুদ্ধের গতিধারাই বদলে দিয়েছে এ ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যকে আরেক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের চক্করেও তা ফেলে দিতে পারে। ‘যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যের যুদ্ধে জড়াচ্ছে না’, ‘সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ’—এসব বোলচাল দিয়ে ৭ কোটি ৭০ লাখ নাগরিকের ভোটে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প হয়তো আরেকবার তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছেন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর ওয়াদার বরখেলাপের তালিকা এরই মধ্যে দীর্ঘ।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন কোন দিকে রূপ নেবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান ও তার মিত্রদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। মার্কিন হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরান বলেছে, এর ‘প্রতিক্রিয়া হবে চিরস্থায়ী’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গত সপ্তাহেই বলে দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ সংঘাতে যোগ দিলে তার ‘নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি হবে’। হামলার ঘটনার পর পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উত্তেজনা কমাতে কূটনীতির পক্ষে কথা বললেও জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন হামলার সামরিক জবাব অনিবার্য। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার দেশের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে...।’
যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই সাবধান করে দিয়েছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। শনিবারই তারা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে এ সংঘাতে যোগ দিলে লোহিতসাগর দিয়ে যাওয়া মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
ইরান এখন ঠিক কী করবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জোর দিয়ে বলা মুশকিল। দেশটির অবশিষ্ট সামরিক কমান্ডার, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ শীর্ষ নেতারা নিশ্চয় এ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত এখন। উত্তেজনা এখন চরমে। কোনো পক্ষেরই পিছু হটার উপায় নেই; বিশেষ করে মার্কিন হস্তক্ষেপের পরিণতি নিয়ে এত জোর গলায় কথা বলার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকা ইরানের নেতৃত্বের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক হবে। ইসরায়েলের একতরফা হামলার পর দেশজুড়ে গড়ে ওঠা জাতীয় সংহতিও তাদের সাহস জোগাবে। দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে সামরিক ক্ষমতায় নাজুক অবস্থায় থাকা ইরান যেভাবে বলদর্পী অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী ইসরায়েলের হামলার জবাব দিয়ে যাচ্ছে, তা জাতি হিসেবে তাদের সংগ্রামী ঐতিহ্য ও অনমনীয়তারই প্রমাণ। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর সামরিক শক্তির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ানো আলাদা কথা। সে জন্য ধরে নেওয়া যায়, মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব খুব সম্ভবত হবে সীমিত পর্যায়ের। সংগত কারণেই হতাহত বেশি না হওয়া বা উত্তেজনা বেশি বাড়িয়ে না দেওয়ার দিকে সতর্ক নজর থাকবে তাদের। প্রসঙ্গত, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যে কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্রের কথা বিশ্লেষকেরা বলাবলি করছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আরও ভয়ংকর মার্কিন হামলা এড়াতে প্রতিশোধমূলক কিছুই না করা, সর্বশক্তি দিয়ে মার্কিন স্বার্থে হামলা চালানো অথবা আপাতত মুখ বুজে থেকে পরে সুবিধামতো হামলা করা।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ৫০টির মতো। এগুলোতে অস্ত্র-সরঞ্জাম ছাড়াও ৪০ হাজারের বেশি সেনা আছে বলে ধারণা করা হয়। শুধু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ড্রোনসহ অন্যান্য কিছু অস্ত্রের পাল্লায়ও তা পড়ে। কাতারের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মেহরান কামরাভাকে আল জাজিরা টিভিতে বলতে দেখা যায়, ‘একজন ইরানি কমান্ডার একদা তাঁকে বলেছিলেন, তার মানে হচ্ছে, এই ৪০ হাজারই আমাদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।’
পারস্য উপসাগরের অদূরে আছে মার্কিন সামরিক-বেসামরিক জাহাজ। সেখানে হামলা হলে প্রভাব পড়বে নৌবাণিজ্যের ওপরও। বিশ্বের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহনের নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি ইরানে আগেই দিয়ে রেখেছে। ইরানি বাহিনী নিজেরা ছাড়াও ইরাক, সিরিয়া, লেবাননে থাকা তাদের সমর্থকগোষ্ঠীগুলো নিজ দায়িত্বে প্রতিশোধের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তারা তেহরানের নির্দেশনার অপেক্ষায় বসে না-ও থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক স্টিফেন জিউনেস বলেছেন, ইরানিরা ওপরের কোনো না কোনো লক্ষ্যে হামলা না করলেই তিনি বিস্মিত হবেন।
সংঘাতের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব
মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর থেকে সম্ভবত ইরানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার একটা আভাস পাওয়া যায়। তেল আবিব ও হাইফায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি। ঠিক মার্কিন হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই হামলার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, নাকি তা চলমান অভিযানেরই ধারাবাহিকতা, সেটা হয়তো এখনই বলা যাবে না। তবে আইআরজিসি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলে ইরানের ২০তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে শুরু হয়েছে। আর প্রতিশোধমূলক হামলায় সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি খাইবার শেকান মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানি হামলার তীব্রতায় গতকালই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ফ্লাইট স্থগিত ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তিন বিমান সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ মিত্র’ যুক্তরাজ্য যে ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে নিজের আগ্রহী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা-ও হয়তো কাকতালীয় বিষয় নয়।
পরমাণু কর্মসূচির কী হবে
ইরান এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। উদ্দেশ্য—শান্তিপূর্ণ বেসামরিক কার্যক্রম বা বোমা তৈরি করা—যেটাই হোক, তারা এখন হয়তো আরও গোপনে আরও সুরক্ষিতভাবে কর্মসূচি চালাবে। তিনটি বড় পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার অর্থ (তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত নয়) এই নয় যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মৃত্যু ঘটেছে। প্রযুক্তিটা যেমন তাদের বিজ্ঞানীদের মাথায় রয়ে গেছে, ইউরেনিয়ামসহ যন্ত্র-উপকরণগুলোও হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। ইরানি কর্মকর্তারা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন হামলার আগেই কিছু স্পর্শকাতর সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী কোম্পানি ম্যাক্সার ১৯ ও ২০ জুন ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রের আশপাশে অস্বাভাবিক যানবাহন চলাচল চিহ্নিত করার কথা বলেছে, তা এই বক্তব্যকে কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি যে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলসহ তার মিত্রদের জন্য তাৎক্ষণিক বিপদ ছিল না, এ ব্যাপারে অনেকে একমত। মার্কিন গোয়েন্দারাই বলেছিল, ইরান বোমা তৈরির খুব কাছে নেই। তবে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড দৃশ্যত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপেই অতি সম্প্রতি মত কিছুটা বদলে বলেন, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বোমা তৈরিতে সক্ষম।
যুগপৎ ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলার শিকার হয়ে এখন ইরান মনে করতে পারে, ‘বোমাতেই উদ্ধার!’ নতুন উৎসাহে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে পারে তারা। মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পারসিও এমনটাই মনে করেন। তাঁর মতে, ইরানের সবচেয়ে মূল্যবান পারমাণবিক সম্পদ হলো তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত। যে পর্যন্ত তাদের কাছে তা থাকবে, সে পর্যন্ত বলা যাবে তাদের পরমাণু কর্মসূচি বহাল রয়েছে, যা এখনো অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। ট্রিটা পারসি মনে করেন, প্রমাণ ছাড়া ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রহীন অনেক রাষ্ট্রকেই শঙ্কিত করবে। এই পরিস্থিতিতে ইরান আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশে পরিণত হবে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় একজন পার্লামেন্টারি নেতা এমন কথাও মুখ ফুটে বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি গতকাল রোববারই মস্কো সফরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। পুরোনো মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠক হবে তাঁর। ইরানের সঙ্গে কয়েক মাস আগে কৌশলগত চুক্তি করা রাশিয়ার সর্বেসর্বা পুতিন এ পর্যন্ত চলতি সংঘাতে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ ব্যক্ত করা ছাড়া প্রকাশ্য ভূমিকা রাখেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টিও মাথায় রাখার মতো বিষয়। আব্বাস আরাঘচি মস্কো থেকে কী বার্তা নিয়ে ফেরেন, তা ইরানের পরবর্তী করণীয়র ওপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে।
সুমন কায়সার, ঢাকা

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি প্রমাণ করেই যেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিধ্বংসী হামলা করে বসেছেন ট্রাম্প।
সংলাপ-সমঝোতার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে ট্রাম্প বোমারু বিমান পাঠালেন দুই দিনের মধ্যেই। ভয়ালদর্শন মার্কিন বিমান ততোধিক ভয়াবহ ৩০ হাজার পাউন্ডের ১৪টি বোমা ফেলল এক ফোরদোতেই। নাতাঞ্জ আর ইস্পাহানের কেন্দ্র ধ্বংসে বরাদ্দ ছিল ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডনাইট হ্যামার’ নামের এই আচানক হামলা কেবল তিন ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রকেই আঘাত করেনি, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে তা। বলা হচ্ছে, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়িয়ে দিল এ ঘটনা।
রোববার ভোরের মার্কিন হামলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা হুট করেই অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত কয়দিনের যুদ্ধের গতিধারাই বদলে দিয়েছে এ ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যকে আরেক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের চক্করেও তা ফেলে দিতে পারে। ‘যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যের যুদ্ধে জড়াচ্ছে না’, ‘সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ’—এসব বোলচাল দিয়ে ৭ কোটি ৭০ লাখ নাগরিকের ভোটে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প হয়তো আরেকবার তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছেন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর ওয়াদার বরখেলাপের তালিকা এরই মধ্যে দীর্ঘ।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন কোন দিকে রূপ নেবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান ও তার মিত্রদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। মার্কিন হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরান বলেছে, এর ‘প্রতিক্রিয়া হবে চিরস্থায়ী’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গত সপ্তাহেই বলে দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ সংঘাতে যোগ দিলে তার ‘নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি হবে’। হামলার ঘটনার পর পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উত্তেজনা কমাতে কূটনীতির পক্ষে কথা বললেও জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন হামলার সামরিক জবাব অনিবার্য। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার দেশের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে...।’
যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই সাবধান করে দিয়েছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। শনিবারই তারা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে এ সংঘাতে যোগ দিলে লোহিতসাগর দিয়ে যাওয়া মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
ইরান এখন ঠিক কী করবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জোর দিয়ে বলা মুশকিল। দেশটির অবশিষ্ট সামরিক কমান্ডার, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ শীর্ষ নেতারা নিশ্চয় এ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত এখন। উত্তেজনা এখন চরমে। কোনো পক্ষেরই পিছু হটার উপায় নেই; বিশেষ করে মার্কিন হস্তক্ষেপের পরিণতি নিয়ে এত জোর গলায় কথা বলার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকা ইরানের নেতৃত্বের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক হবে। ইসরায়েলের একতরফা হামলার পর দেশজুড়ে গড়ে ওঠা জাতীয় সংহতিও তাদের সাহস জোগাবে। দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে সামরিক ক্ষমতায় নাজুক অবস্থায় থাকা ইরান যেভাবে বলদর্পী অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী ইসরায়েলের হামলার জবাব দিয়ে যাচ্ছে, তা জাতি হিসেবে তাদের সংগ্রামী ঐতিহ্য ও অনমনীয়তারই প্রমাণ। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর সামরিক শক্তির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ানো আলাদা কথা। সে জন্য ধরে নেওয়া যায়, মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব খুব সম্ভবত হবে সীমিত পর্যায়ের। সংগত কারণেই হতাহত বেশি না হওয়া বা উত্তেজনা বেশি বাড়িয়ে না দেওয়ার দিকে সতর্ক নজর থাকবে তাদের। প্রসঙ্গত, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যে কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্রের কথা বিশ্লেষকেরা বলাবলি করছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আরও ভয়ংকর মার্কিন হামলা এড়াতে প্রতিশোধমূলক কিছুই না করা, সর্বশক্তি দিয়ে মার্কিন স্বার্থে হামলা চালানো অথবা আপাতত মুখ বুজে থেকে পরে সুবিধামতো হামলা করা।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ৫০টির মতো। এগুলোতে অস্ত্র-সরঞ্জাম ছাড়াও ৪০ হাজারের বেশি সেনা আছে বলে ধারণা করা হয়। শুধু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ড্রোনসহ অন্যান্য কিছু অস্ত্রের পাল্লায়ও তা পড়ে। কাতারের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মেহরান কামরাভাকে আল জাজিরা টিভিতে বলতে দেখা যায়, ‘একজন ইরানি কমান্ডার একদা তাঁকে বলেছিলেন, তার মানে হচ্ছে, এই ৪০ হাজারই আমাদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।’
পারস্য উপসাগরের অদূরে আছে মার্কিন সামরিক-বেসামরিক জাহাজ। সেখানে হামলা হলে প্রভাব পড়বে নৌবাণিজ্যের ওপরও। বিশ্বের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহনের নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি ইরানে আগেই দিয়ে রেখেছে। ইরানি বাহিনী নিজেরা ছাড়াও ইরাক, সিরিয়া, লেবাননে থাকা তাদের সমর্থকগোষ্ঠীগুলো নিজ দায়িত্বে প্রতিশোধের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তারা তেহরানের নির্দেশনার অপেক্ষায় বসে না-ও থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক স্টিফেন জিউনেস বলেছেন, ইরানিরা ওপরের কোনো না কোনো লক্ষ্যে হামলা না করলেই তিনি বিস্মিত হবেন।
সংঘাতের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব
মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর থেকে সম্ভবত ইরানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার একটা আভাস পাওয়া যায়। তেল আবিব ও হাইফায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি। ঠিক মার্কিন হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই হামলার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, নাকি তা চলমান অভিযানেরই ধারাবাহিকতা, সেটা হয়তো এখনই বলা যাবে না। তবে আইআরজিসি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলে ইরানের ২০তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে শুরু হয়েছে। আর প্রতিশোধমূলক হামলায় সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি খাইবার শেকান মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানি হামলার তীব্রতায় গতকালই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ফ্লাইট স্থগিত ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তিন বিমান সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ মিত্র’ যুক্তরাজ্য যে ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে নিজের আগ্রহী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা-ও হয়তো কাকতালীয় বিষয় নয়।
পরমাণু কর্মসূচির কী হবে
ইরান এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। উদ্দেশ্য—শান্তিপূর্ণ বেসামরিক কার্যক্রম বা বোমা তৈরি করা—যেটাই হোক, তারা এখন হয়তো আরও গোপনে আরও সুরক্ষিতভাবে কর্মসূচি চালাবে। তিনটি বড় পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার অর্থ (তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত নয়) এই নয় যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মৃত্যু ঘটেছে। প্রযুক্তিটা যেমন তাদের বিজ্ঞানীদের মাথায় রয়ে গেছে, ইউরেনিয়ামসহ যন্ত্র-উপকরণগুলোও হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। ইরানি কর্মকর্তারা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন হামলার আগেই কিছু স্পর্শকাতর সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী কোম্পানি ম্যাক্সার ১৯ ও ২০ জুন ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রের আশপাশে অস্বাভাবিক যানবাহন চলাচল চিহ্নিত করার কথা বলেছে, তা এই বক্তব্যকে কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি যে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলসহ তার মিত্রদের জন্য তাৎক্ষণিক বিপদ ছিল না, এ ব্যাপারে অনেকে একমত। মার্কিন গোয়েন্দারাই বলেছিল, ইরান বোমা তৈরির খুব কাছে নেই। তবে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড দৃশ্যত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপেই অতি সম্প্রতি মত কিছুটা বদলে বলেন, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বোমা তৈরিতে সক্ষম।
যুগপৎ ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলার শিকার হয়ে এখন ইরান মনে করতে পারে, ‘বোমাতেই উদ্ধার!’ নতুন উৎসাহে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে পারে তারা। মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পারসিও এমনটাই মনে করেন। তাঁর মতে, ইরানের সবচেয়ে মূল্যবান পারমাণবিক সম্পদ হলো তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত। যে পর্যন্ত তাদের কাছে তা থাকবে, সে পর্যন্ত বলা যাবে তাদের পরমাণু কর্মসূচি বহাল রয়েছে, যা এখনো অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। ট্রিটা পারসি মনে করেন, প্রমাণ ছাড়া ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রহীন অনেক রাষ্ট্রকেই শঙ্কিত করবে। এই পরিস্থিতিতে ইরান আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশে পরিণত হবে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় একজন পার্লামেন্টারি নেতা এমন কথাও মুখ ফুটে বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি গতকাল রোববারই মস্কো সফরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। পুরোনো মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠক হবে তাঁর। ইরানের সঙ্গে কয়েক মাস আগে কৌশলগত চুক্তি করা রাশিয়ার সর্বেসর্বা পুতিন এ পর্যন্ত চলতি সংঘাতে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ ব্যক্ত করা ছাড়া প্রকাশ্য ভূমিকা রাখেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টিও মাথায় রাখার মতো বিষয়। আব্বাস আরাঘচি মস্কো থেকে কী বার্তা নিয়ে ফেরেন, তা ইরানের পরবর্তী করণীয়র ওপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে।

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি প্রমাণ করেই যেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিধ্বংসী হামলা করে বসেছেন ট্রাম্প।
সংলাপ-সমঝোতার জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে ট্রাম্প বোমারু বিমান পাঠালেন দুই দিনের মধ্যেই। ভয়ালদর্শন মার্কিন বিমান ততোধিক ভয়াবহ ৩০ হাজার পাউন্ডের ১৪টি বোমা ফেলল এক ফোরদোতেই। নাতাঞ্জ আর ইস্পাহানের কেন্দ্র ধ্বংসে বরাদ্দ ছিল ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডনাইট হ্যামার’ নামের এই আচানক হামলা কেবল তিন ইরানি পারমাণবিক কেন্দ্রকেই আঘাত করেনি, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে তা। বলা হচ্ছে, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়িয়ে দিল এ ঘটনা।
রোববার ভোরের মার্কিন হামলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে আরও তীব্র করে তুলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা হুট করেই অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত কয়দিনের যুদ্ধের গতিধারাই বদলে দিয়েছে এ ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যকে আরেক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের চক্করেও তা ফেলে দিতে পারে। ‘যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যের যুদ্ধে জড়াচ্ছে না’, ‘সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ’—এসব বোলচাল দিয়ে ৭ কোটি ৭০ লাখ নাগরিকের ভোটে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প হয়তো আরেকবার তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছেন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর ওয়াদার বরখেলাপের তালিকা এরই মধ্যে দীর্ঘ।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন কোন দিকে রূপ নেবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান ও তার মিত্রদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। মার্কিন হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরান বলেছে, এর ‘প্রতিক্রিয়া হবে চিরস্থায়ী’। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গত সপ্তাহেই বলে দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ সংঘাতে যোগ দিলে তার ‘নিঃসন্দেহে অপূরণীয় ক্ষতি হবে’। হামলার ঘটনার পর পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি উত্তেজনা কমাতে কূটনীতির পক্ষে কথা বললেও জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন হামলার সামরিক জবাব অনিবার্য। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার দেশের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে...।’
যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই সাবধান করে দিয়েছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। শনিবারই তারা বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে এ সংঘাতে যোগ দিলে লোহিতসাগর দিয়ে যাওয়া মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
ইরান এখন ঠিক কী করবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জোর দিয়ে বলা মুশকিল। দেশটির অবশিষ্ট সামরিক কমান্ডার, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ শীর্ষ নেতারা নিশ্চয় এ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত এখন। উত্তেজনা এখন চরমে। কোনো পক্ষেরই পিছু হটার উপায় নেই; বিশেষ করে মার্কিন হস্তক্ষেপের পরিণতি নিয়ে এত জোর গলায় কথা বলার পর হাত গুটিয়ে বসে থাকা ইরানের নেতৃত্বের জন্য রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক হবে। ইসরায়েলের একতরফা হামলার পর দেশজুড়ে গড়ে ওঠা জাতীয় সংহতিও তাদের সাহস জোগাবে। দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে সামরিক ক্ষমতায় নাজুক অবস্থায় থাকা ইরান যেভাবে বলদর্পী অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী ইসরায়েলের হামলার জবাব দিয়ে যাচ্ছে, তা জাতি হিসেবে তাদের সংগ্রামী ঐতিহ্য ও অনমনীয়তারই প্রমাণ। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর সামরিক শক্তির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ানো আলাদা কথা। সে জন্য ধরে নেওয়া যায়, মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব খুব সম্ভবত হবে সীমিত পর্যায়ের। সংগত কারণেই হতাহত বেশি না হওয়া বা উত্তেজনা বেশি বাড়িয়ে না দেওয়ার দিকে সতর্ক নজর থাকবে তাদের। প্রসঙ্গত, অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যে কয়েকটি সম্ভাব্য চিত্রের কথা বিশ্লেষকেরা বলাবলি করছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আরও ভয়ংকর মার্কিন হামলা এড়াতে প্রতিশোধমূলক কিছুই না করা, সর্বশক্তি দিয়ে মার্কিন স্বার্থে হামলা চালানো অথবা আপাতত মুখ বুজে থেকে পরে সুবিধামতো হামলা করা।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ৫০টির মতো। এগুলোতে অস্ত্র-সরঞ্জাম ছাড়াও ৪০ হাজারের বেশি সেনা আছে বলে ধারণা করা হয়। শুধু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ড্রোনসহ অন্যান্য কিছু অস্ত্রের পাল্লায়ও তা পড়ে। কাতারের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মেহরান কামরাভাকে আল জাজিরা টিভিতে বলতে দেখা যায়, ‘একজন ইরানি কমান্ডার একদা তাঁকে বলেছিলেন, তার মানে হচ্ছে, এই ৪০ হাজারই আমাদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।’
পারস্য উপসাগরের অদূরে আছে মার্কিন সামরিক-বেসামরিক জাহাজ। সেখানে হামলা হলে প্রভাব পড়বে নৌবাণিজ্যের ওপরও। বিশ্বের ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহনের নৌপথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি ইরানে আগেই দিয়ে রেখেছে। ইরানি বাহিনী নিজেরা ছাড়াও ইরাক, সিরিয়া, লেবাননে থাকা তাদের সমর্থকগোষ্ঠীগুলো নিজ দায়িত্বে প্রতিশোধের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তারা তেহরানের নির্দেশনার অপেক্ষায় বসে না-ও থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের পরিচালক স্টিফেন জিউনেস বলেছেন, ইরানিরা ওপরের কোনো না কোনো লক্ষ্যে হামলা না করলেই তিনি বিস্মিত হবেন।
সংঘাতের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব
মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর থেকে সম্ভবত ইরানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার একটা আভাস পাওয়া যায়। তেল আবিব ও হাইফায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি। ঠিক মার্কিন হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই হামলার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, নাকি তা চলমান অভিযানেরই ধারাবাহিকতা, সেটা হয়তো এখনই বলা যাবে না। তবে আইআরজিসি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলে ইরানের ২০তম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে শুরু হয়েছে। আর প্রতিশোধমূলক হামলায় সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটি খাইবার শেকান মোতায়েন করা হয়েছে। ইরানি হামলার তীব্রতায় গতকালই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ফ্লাইট স্থগিত ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তিন বিমান সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ মিত্র’ যুক্তরাজ্য যে ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে নিজের আগ্রহী নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা-ও হয়তো কাকতালীয় বিষয় নয়।
পরমাণু কর্মসূচির কী হবে
ইরান এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। উদ্দেশ্য—শান্তিপূর্ণ বেসামরিক কার্যক্রম বা বোমা তৈরি করা—যেটাই হোক, তারা এখন হয়তো আরও গোপনে আরও সুরক্ষিতভাবে কর্মসূচি চালাবে। তিনটি বড় পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলার অর্থ (তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত নয়) এই নয় যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির মৃত্যু ঘটেছে। প্রযুক্তিটা যেমন তাদের বিজ্ঞানীদের মাথায় রয়ে গেছে, ইউরেনিয়ামসহ যন্ত্র-উপকরণগুলোও হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। ইরানি কর্মকর্তারা এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, মার্কিন হামলার আগেই কিছু স্পর্শকাতর সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্র সরবরাহকারী কোম্পানি ম্যাক্সার ১৯ ও ২০ জুন ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রের আশপাশে অস্বাভাবিক যানবাহন চলাচল চিহ্নিত করার কথা বলেছে, তা এই বক্তব্যকে কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা দেয়।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি যে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলসহ তার মিত্রদের জন্য তাৎক্ষণিক বিপদ ছিল না, এ ব্যাপারে অনেকে একমত। মার্কিন গোয়েন্দারাই বলেছিল, ইরান বোমা তৈরির খুব কাছে নেই। তবে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড দৃশ্যত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপেই অতি সম্প্রতি মত কিছুটা বদলে বলেন, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বোমা তৈরিতে সক্ষম।
যুগপৎ ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলার শিকার হয়ে এখন ইরান মনে করতে পারে, ‘বোমাতেই উদ্ধার!’ নতুন উৎসাহে পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে পারে তারা। মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পারসিও এমনটাই মনে করেন। তাঁর মতে, ইরানের সবচেয়ে মূল্যবান পারমাণবিক সম্পদ হলো তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত। যে পর্যন্ত তাদের কাছে তা থাকবে, সে পর্যন্ত বলা যাবে তাদের পরমাণু কর্মসূচি বহাল রয়েছে, যা এখনো অস্ত্রে পরিণত হতে পারে। ট্রিটা পারসি মনে করেন, প্রমাণ ছাড়া ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলা বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রহীন অনেক রাষ্ট্রকেই শঙ্কিত করবে। এই পরিস্থিতিতে ইরান আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশে পরিণত হবে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় একজন পার্লামেন্টারি নেতা এমন কথাও মুখ ফুটে বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি গতকাল রোববারই মস্কো সফরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। পুরোনো মিত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠক হবে তাঁর। ইরানের সঙ্গে কয়েক মাস আগে কৌশলগত চুক্তি করা রাশিয়ার সর্বেসর্বা পুতিন এ পর্যন্ত চলতি সংঘাতে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ ব্যক্ত করা ছাড়া প্রকাশ্য ভূমিকা রাখেননি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়টিও মাথায় রাখার মতো বিষয়। আব্বাস আরাঘচি মস্কো থেকে কী বার্তা নিয়ে ফেরেন, তা ইরানের পরবর্তী করণীয়র ওপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে।

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি
২৩ জুন ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি
২৩ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি
২৩ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি
২৩ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে