Ajker Patrika

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২৮ দফা প্রস্তাবে কী আছে, কে কী পাবে, কী হারাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাব অনুসারে, কিয়েভকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিশাল একটি অংশ রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে, সেনাবাহিনীর আকার কমাতে হবে এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এই ২৮ দফা পরিকল্পনার একটি খসড়া পেয়েছে। পরে তা তা এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা, এক মার্কিন কর্মকর্তা এবং প্রস্তাবটির সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র যাচাই করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ‘দ্রুততর সময়সীমার’ মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে চাপ দিচ্ছে। আর পরিকল্পনায় এমন সব প্রস্তাব রয়েছে, যা ইউক্রেন বহুবার প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে এবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরিকল্পনাটিকে সরাসরি বাতিল করছেন না।

হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের জন্য ‘সহজ নয়।’ তবে তাঁর দাবি, যুদ্ধ থামাতেই হবে, আর তা না হলে ইউক্রেন আরও বেশি এলাকা হারাতে পারে।

ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই খসড়া তৈরি করেছেন এবং এতে পররাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিও ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের মতামতও ছিল। উইটকফ পরিকল্পনাটি নিয়ে রাশিয়ার দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। দিমিত্রিয়েভ অ্যাক্সিওসকে বলেন, তিনি আশাবাদী, কারণ এ বার ‘রাশিয়ার অবস্থান সত্যিই গুরুত্ব পাচ্ছে।’ যদিও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো পরিকল্পনাটিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেননি।

দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠকের পর উইটকফ ও কুশনার ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রুস্তেম উমেরভের সঙ্গেও পরিকল্পনাটি নিয়ে আলোচনা করেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকল গতকাল বৃহস্পতিবার পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলেনস্কির হাতে তুলে দেন। এর পর জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্প ও তাঁর দলের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

জেলেনস্কি বলেছেন, এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিন্তার দৃষ্টিভঙ্গি’, চূড়ান্ত প্রস্তাব নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তাঁর অবস্থানের চূড়ান্ত রেখা স্পষ্ট করেছে এবং বলেছে পরিকল্পনাটিকে ‘বাস্তব অর্থবহ’ করতে নিজেদের প্রস্তাব দেবে। এক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, পরিকল্পনাটিকে তারা ‘জীবন্ত নথি’ হিসেবে দেখছেন, আলোচনার ভিত্তিতে যা পরিবর্তিত হতে পারে। ওই কর্মকর্তার দাবি, আলোচনার সময় ইউক্রেন বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে ইতিবাচক ছিল এবং তাতে তাদের কিছু অবস্থান যুক্ত করতেও পেরেছে।

ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে পরিকল্পনাটিকে সমর্থন দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর জন্য গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি, ঠিক যেমন গাজা যুদ্ধ শেষ করেছি। আমরা মনে করি পরিকল্পনাটি সহজ নয়, কিন্তু ইউক্রেনের জন্য ভালো।’

ইউক্রেনে ভূখণ্ড ছাড়ার পাশাপাশি খসড়ায় বলা আছে, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আবার রুশ অনুপ্রবেশ হলে ‘সুনির্দিষ্ট সমন্বিত সামরিক প্রতিক্রিয়া’ দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র এতে কী ভূমিকা নেবে, তা স্পষ্ট নয়। পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও রয়েছে—জমে থাকা রুশ সম্পদের একটি অংশ দিয়ে ইউক্রেন পুনর্গঠনের তহবিল গঠন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব (যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও খনন খাতে) এবং রাশিয়ার জি–৮–এ ফিরে আসা।

যুদ্ধ চলাকালে যে সব পক্ষ যা করেছে—সবাইকে সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে। অর্থাৎ রুশ কর্মকর্তাদের ও সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা চলবে না। ইউক্রেনকে চুক্তির ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জেলেনস্কি সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাক্সিওসকে বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি হলেই তিনি নির্বাচন চান।

নিচে ছাড়া বর্তমান ২৮ দফা পরিকল্পনাটি হুবহু তুলে ধরা হলো। অ্যাক্সিওস স্পষ্টতার জন্য কিছুস্থানে ইটালিকে ব্যাখ্যা যোগ করেছে।

১. ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে।

২. রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে একটি সমন্বিত অনাক্রমণ চুক্তি সম্পন্ন হবে। গত ৩০ বছরের সব ধোঁয়াশা নিষ্পত্তি হবে।

৩. রাশিয়া প্রতিবেশী দেশগুলোতে আক্রমণ করবে না এবং ন্যাটো আর সম্প্রসারিত হবে না।

৪. রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংলাপ হবে, যাতে সব নিরাপত্তা ইস্যু সমাধান, উত্তেজনা প্রশমনের পরিবেশ তৈরি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।

৫. ইউক্রেন নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পাবে।

ব্যাখ্যা: এক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হবে, যা এর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় তোলা হয়নি। তবে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা খসড়ায় নেই।

৬. ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখে সীমাবদ্ধ থাকবে।

  • ব্যাখ্যা: বর্তমানে ইউক্রেনের সেনাসংখ্যা ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখের মধ্যে, আর যুদ্ধের আগে ছিল প্রায় আড়াই লাখ।

৭. ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না, এটি দেশটির সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ন্যাটোও নিজেদের বিধিতে যুক্ত করবে যে, ইউক্রেনকে ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে না।

৮. ন্যাটো ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন করবে না।

  • ব্যাখ্যা: ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে অল্পসংখ্যক সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব বিবেচনা করছিল। এই পরিকল্পনায় তা উপেক্ষা করা হয়েছে।

৯. ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে মোতায়েন করা হবে।

১০. যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি—

  • যুক্তরাষ্ট্র এই গ্যারান্টির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবে।
  • ইউক্রেন যদি রাশিয়ায় আক্রমণ করে, সে ক্ষেত্রে এই গ্যারান্টি বাতিল হবে।
  • রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ চালায়, তাহলে সমন্বিত ও কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সমস্ত বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে, নতুন দখলকৃত অঞ্চলকে দেওয়া স্বীকৃতি ও এই চুক্তির অধীনে পাওয়া সব সুবিধা প্রত্যাহার হবে।
  • ইউক্রেন কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে নিরাপত্তা গ্যারান্টি অবৈধ বলে গণ্য হবে।

১১. ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্যতা—

  • ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্যপদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে এবং বিষয়টি বিবেচনায় থাকা অবস্থায় ইউরোপীয় বাজারে স্বল্পমেয়াদি বিশেষ সুবিধা পাবে।

১২. ইউক্রেন পুনর্গঠনের শক্তিশালী বৈশ্বিক উদ্যোগ—

  • দ্রুত বর্ধনশীল খাতে (প্রযুক্তি, ডেটা সেন্টার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি) বিনিয়োগের জন্য একটি ইউক্রেন ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করা হবে।
  • যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে একযোগে দেশটির গ্যাস অবকাঠামো (পাইপলাইন, সংরক্ষণাগারসহ) পুনর্নির্মাণ, উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও পরিচালনায় সহযোগিতা করবে।
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলো পুনর্বাসন করে শহর ও আবাসিক অঞ্চল পুনর্নির্মাণ ও আধুনিকায়নের কাজ করা হবে।
  • অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
  • খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন।
  • বিশ্বব্যাংক এসব উদ্যোগের গতি বাড়াতে বিশেষ অর্থায়ন প্যাকেজ তৈরি করবে।

১৩. রাশিয়াকে পুনরায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত করা—

  • নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদাভাবে আলোচনার মাধ্যমে তুলে নেওয়া হবে।
  • যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি, প্রাকৃতিক সম্পদ, অবকাঠামো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সেন্টার, আর্কটিকে দুর্লভ খনিজ উত্তোলন প্রকল্প এবং অন্যান্য পারস্পরিক লাভজনক করপোরেট খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তিতে প্রবেশ করবে।
  • রাশিয়াকে জি-৮ এ ফিরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।

১৪. জব্দ রুশ সম্পদ ব্যবহারের প্রস্তাব

  • বিভিন্ন দেশে জব্দ করা রুশ সম্পদের ১০০ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউক্রেন পুনর্নির্মাণে বিনিয়োগ করা হবে।
  • যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগ থেকে ৫০ শতাংশ মুনাফা পাবে।
  • ইউরোপ আরও ১০০ বিলিয়ন ডলার যুক্ত করবে, যাতে ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য মোট বিনিয়োগ বাড়ানো যায়।
  • ইউরোপে জব্দ রুশ সম্পদ মুক্ত করা হবে।
  • বাকি রুশ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার যৌথ বিনিয়োগ তহবিলে রাখা হবে, যা নির্দিষ্ট খাতে যৌথ প্রকল্প পরিচালনা করবে। এর লক্ষ্য হবে দুই পক্ষের স্বার্থ বাড়িয়ে ভবিষ্যতে সংঘাতে না ফেরার প্রণোদনা সৃষ্টি করা।

১৫. যৌথ নিরাপত্তা ওয়ার্কিং গ্রুপ

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া নিরাপত্তা বিষয়ক যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে, যারা এই চুক্তির প্রতিটি ধারার বাস্তবায়ন তদারকি করবে।

১৬. রাশিয়ার অনাক্রমণনীতি—

  • রাশিয়া আইন করে ইউরোপ ও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অনাক্রমণের নীতি নিশ্চিত করবে।

১৭. পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ—

  • নিউ স্টার্টসহ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিস্তার রোধবিষয়ক সব চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একমত হবে। (নোট: নিউ স্টার্ট, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার শেষ বড় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কথা।)

১৮. ইউক্রেনের অ-পারমাণবিক অবস্থান

  • ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্র অ–প্রসারণ চুক্তি অনুযায়ী নিজেকে একটি অ-পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে বজায় রাখবে।

১৯. জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

  • আইএইএর তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রটি চালু করা হবে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাশিয়া ও ইউক্রেন সমান হারে পাবে (৫০:৫০)।

২০. সংস্কৃতি ও সহনশীলতা বিষয়ক শিক্ষা

  • দুই দেশ ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি বোঝাপড়া, সহনশীলতা বাড়ানো এবং বর্ণবাদ ও কুসংস্কার দূরীকরণের লক্ষ্যে স্কুল ও সমাজে শিক্ষা কর্মসূচি চালু করবে।
  • ইউক্রেন ধর্মীয় সহনশীলতা ও ভাষাগত সংখ্যালঘু সুরক্ষায় ইইউর নিয়ম গ্রহণ করবে।
  • দুই দেশই বৈষম্যমূলক সব ব্যবস্থা বাতিল করবে এবং ইউক্রেনীয় ও রুশ গণমাধ্যম ও শিক্ষার পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করবে। (নোট—ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২০ সালের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি পরিকল্পনায়ও এমন ধারণা ছিল।)
  • নাৎসি মতাদর্শ ও সংশ্লিষ্ট সব কর্মকাণ্ড অস্বীকার ও নিষিদ্ধ করা হবে।

২১. ভূখণ্ড—

  • ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিকভাবে বাস্তবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
  • খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে স্থির করা হবে, যা কার্যত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হবে।
  • রাশিয়া পাঁচ অঞ্চলের বাইরে নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য সম্মত ভূখণ্ড ত্যাগ করবে।
  • ইউক্রেন দোনেৎস্কের যে অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। এই এলাকা নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোন হিসেবে গণ্য হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। তবে রুশ সেনা এই নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় প্রবেশ করবে না।

২২. বলপ্রয়োগ নিষিদ্ধকরণ

  • ভবিষ্যৎ ভূখণ্ড ব্যবস্থা নিয়ে সম্মত হওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেন কোনোভাবেই বলপ্রয়োগ করে এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে না। এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হলে কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি প্রযোজ্য হবে না।

২৩. দিনিপ্রো নদী ও কৃষ্ণ সাগর

  • রাশিয়া ইউক্রেনকে দিনিপ্রো নদী ব্যবহার করে বাণিজ্য পরিচালনায় বাধা দেবে না। কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য পরিবহনে অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে দুই পক্ষ চুক্তিতে পৌঁছাবে।

২৪. মানবিক কমিটি

  • অমীমাংসিত বিষয়ে একটি মানবিক কমিটি গঠন করা হবে।
  • সব বন্দী ও মৃতদেহ ‘সবার বিনিময়ে সবাই’ নীতিতে বিনিময় করা হবে।
  • সব বেসামরিক আটক ব্যক্তি ও জিম্মিদের, এমনকি শিশুদেরও, ফেরত পাঠানো হবে।
  • পরিবার পুনর্মিলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
  • সংঘাতের শিকার মানুষের দুঃখ কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২৫. ইউক্রেনে নির্বাচন

  • ইউক্রেন ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে।

২৬. সাধারণ পূর্ণ ক্ষমা

  • যুদ্ধকালীন কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ পূর্ণ ক্ষমা পাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো দাবি বা অভিযোগ উত্থাপন না করার অঙ্গীকার করবে।

২৭. চুক্তির আইনগত বাধ্যবাধকতা

  • এই চুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে। এর বাস্তবায়ন তদারকি ও নিশ্চয়তা দেবে পিস কাউন্সিল, যার প্রধান থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প।
  • চুক্তিভঙ্গের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। (নোট: গাজা শান্তি পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প একই কাঠামো প্রস্তাব করেছিলেন।)

২৮. চূড়ান্ত ধাপ

  • সব পক্ষ এই স্মারক চুক্তিতে সম্মত হলে, উভয় পক্ষ নির্ধারিত স্থানে সরে যাওয়ার পরই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হবে।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত