জাহাঙ্গীর আলম

প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।

আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।

উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।

অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।

আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।

আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।

উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।

অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।

আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম

প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।

আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।

উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।

অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।

আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।

আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।

উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।

অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।

আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।

ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১৮ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১৮ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১৮ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১৬ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই।
২৪ জুলাই ২০২১
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৮ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১৮ ঘণ্টা আগে