
তিন বছর ধরে ইউক্রেন এমন পরিস্থিতি সহ্য করে আসছে, যা একসময় ছিল অকল্পনীয়। দেশটির রাজধানীতে আকাশ ও স্থল হামলা, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ; ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, গ্লাইড বোমা হামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যা— এমন কোনো ঘটনা নেই যা ঘটেনি। কিন্তু এখন কিয়েভ একেবারেই অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, যেটির উৎস আবার ইউক্রেনের মিত্র বলে পরিচিতি পশ্চিমা বিশ্ব। আরও স্পষ্ট করে বললে, যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এসেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক গড়ার নগ্ন প্রয়াস সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। তিনি প্রকাশ্যেই ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বহু প্রতীক্ষিত সৌদি আরব সফর স্থগিত করেছেন জেলেনস্কি। কারণ কিয়েভের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য সংলাপে ‘ঘটনাচক্রে’ অংশ নিতে চাননি তিনি। জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি— এটি খুবই বিস্ময়কর! আমি মনে করি, এটি অনেকের জন্যই অপ্রত্যাশিত ছিল।’ ঠিক পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জেলেনস্কিকে সরাসরি ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ বলে আক্রমণ করেন ট্রাম্প।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সংলাপের সিদ্ধান্ত এবং ক্রেমলিনের পুনর্বাসনে তাঁর সুস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষা কিয়েভের রাজনৈতিক মহলে গভীর আলোড়ন তুলেছে। তবে সেই বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেছে, সত্যিকার অর্থে এখন খুব বেশি বিস্মিত নন কেউ। জেলেনস্কির দলের এক জ্যেষ্ঠ এমপি বলেন, ‘যেদিন আমরা খবরটি শুনি, সেদিন আমাদের মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না, তবে এমন কিছু হবে বলে আমরা ধরে নিয়েছিলাম।’ কারণ, ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের জন্য ওয়াশিংটনের দরজা যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি যে, রাশিয়ার ন্যারেটিভ আমেরিকায় কতটা গভীরভাবে শিকড় গেড়েছে!’ ইউক্রেনের বিরোধী দলীয় এক এমপি পার্লামেন্টে বিরাজমান এক ধরনের ‘অশুভ আশঙ্কার’ কথা উল্লেখ করেন। তাঁর আশঙ্কা, এমপিদের এমন এক অপমানজনক যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হতে পারে, যা তাদের জন্য লজ্জাজনক হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও, দেশটির টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। মানুষ, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক থেকে শুরু করে সবাই ক্লান্ত। হাজারো মানুষ হতাহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়েছেন। ইউরোপে পালিয়ে যাওয়া ৪৩ লাখ ইউক্রেনীয়দের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশির বয়স ১৮ বছরের কম। তাদের অনেকেই আর কখনো ফিরে আসবে না। দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ছাড়া যেনতেন একটি চুক্তি হলে অনেক ইউক্রেনীয় বাবা-মার জন্য সন্তানদের বিদেশে পাঠানোর বিকল্প থাকবে না। বিষয়টি ইউক্রেনের জনমিতিতে বিদ্যমান অসন্তোষকে তীব্রতর করবে। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের শান্তি প্রয়োজন। এমন এক শান্তি, যা আমাদের ধ্বংস করবে না।’
যেসব পরিবারে কিশোর ছেলে আছে, তাদের কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তারা হয় সুযোগ থাকতেই ছেলেদের ইউরোপে পাঠিয়ে দেবে না হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশেই রেখে দিতে হবে। সাবেক সৈনিক সেরহি ভাসিলিউক এমন একটি জটিলতার মুখোমুখি। ১৭ বছর বয়সী ছেলে আন্দ্রিকে বিদেশ পাঠাতে তিনি ও তাঁর স্ত্রী একমত হলেও ছেলের দ্বিধাহীন অস্বীকার তাঁদের উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আন্দ্রি বলেছে, সে অন্য কোথাও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কিন্তু আন্দ্রির মা তা কোনোভাবেই মানতে রাজি নন। সেরহি অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছেলের ইচ্ছায় সায় দিয়েছেন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের কাজ তিনিও করেছেন। তাই সেরহির জন্য বিষয়টা তেমন অসহনীয় নয়। তিনি বলেন, ওর মতো ছেলেরা যদি যুদ্ধে না থাকে, তাহলে লড়াই করার কেউ থাকবে না।
এত দীর্ঘ বিপর্যয়ের পরও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখনো পর্যন্ত চুক্তিতে আসার মতো কিছু হয়নি। কিন্তু ইউক্রেনের জনজীবনে ও রণক্ষেত্রে যে নেতিবাচক ঘটনাপ্রবাহ ঘটে যাচ্ছে, ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে বাইরের দুনিয়ায় ঠিক একইরকম ঘটনা ঘটছে। রাশিয়া একটি ফাঁদ পেতে রেখেছে। তা হলো- নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও তাৎক্ষণিক নির্বাচন ছাড়া যুদ্ধবিরতির ডাক। সেটা ঘটলে ইউক্রেনের জনগণের ঐক্য বিনষ্ট হবে। ইউক্রেনের অনেকের আশঙ্কা, এখন ট্রাম্প প্রশাসন যে ধরনের ভাষা প্রয়োগ করছে, তাতে রাশিয়ার পাতা ফাঁদের ছায়া দেখা যাচ্ছে।
ইউক্রেনের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সরাতে চান বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি কখনোই তাঁকে পছন্দ করেননি। জেলেনস্কিকে সামলোনো কঠিন বলে মনে করেন ট্রাম্প। তাই, নির্বাচন তাঁর কাছে কোনো ইস্যু নয়, উদ্দেশ্য জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া।’
ট্রাম্পের গতি দ্রুত শান্তি অর্জনের ক্ষেত্র তৈরি না করলেও ইউক্রেনের জন্য অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব তৈরি করবে। এরপর সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নের ভার পড়বে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাঁধে। তখন জেলেনস্কি চাপে পড়বেন, সেই ফাঁকে ট্রাম্প আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবেন। ট্রাম্পের ছক মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এখনো তাঁর বিপৎসীমাগুলো চিহ্নিত করতে পারেননি।
গত সপ্তাহে ইকোনমিস্টকে জেলেনস্কি বলেন, ‘খুনির’ (পুতিন) সঙ্গে বসার প্রস্তুতি মানেই আপস। তবে এরই মধ্যে জেলেনস্কি নির্দেশনা দিয়েছেন, তিনি নিরাপত্তার গ্যারান্টি ছাড়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন না, বা তাকে এড়িয়ে কোনো চুক্তি হলে তা মেনে নেবেন না। শীর্ষস্থানীয় এক ইউক্রেনের কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে হারানো অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে কখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে না ইউক্রেন। তবে ন্যাটোর সদস্যপদ যে খুব দূরের সম্ভাবনা, তা তিনি স্বীকার করেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ইউক্রেনের জন্য ন্যূনতম ও গ্রহণযোগ্য চাওয়া হলো— পশ্চিমা বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর সঙ্গে অব্যাহত সম্পর্ক বজায় রাখা, ইউক্রেনে পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং বিদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি। সেই বাহিনীর কত বড় হবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ইউক্রেনে তাদের উপস্থিতি। তিনি বলেন, ‘যখন তারা এখানে থাকবে, আমরা বিশ্বাস করি, তাদের পক্ষে চলে যাওয়া কঠিন হবে।’
তাত্ত্বিকভাবে, ট্রাম্প যে চুক্তি করতে চান সেটির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে ইউক্রেন। তবে বাস্তবতা হলো— সময়ের সঙ্গে ইউক্রেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। উভয় পক্ষের জন্যই যুদ্ধ নির্মম, তবে তা ইউক্রেনীয়দের জন্য বেশি কঠিন। কারণ, দেশটি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও কম জনসংখ্যার। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুতর সমস্যা আছে এবং কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব দেখা যাচ্ছে। ফ্রন্টলাইনে ব্রিগেডগুলো লোকবলের অভাবে ভুগছে, কিছু ব্রিগেডের আকার এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
এদিকে, সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের হাতে অনেক অস্ত্র আছে। তিনি সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারেন; রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারেন; ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের যোগাযোগের মেরুদণ্ড স্টারলিংক সেবা বন্ধ; এবং রিয়েল টাইম টার্গেটিং প্রযুক্তির মতো সহায়তাগুলো পাঠানো বন্ধ করে দিতে পারেন। ইউক্রেনের সামনে নতুন বিকল্প থাকলেও তা এসব সিস্টেম বন্ধের ক্ষতি পোষাতে পারবে না। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি জেলেনস্কি ১৮ এবং ২০ বছর বয়সী ছেলেদের মাঠে নামাতে পারেন, তাহলে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অর্থপূর্ণ হতে পারে। তা নাহলে এমন একটি চুক্তি সম্মত হওয়াই তার জন্য সর্বোত্তম পথ।’
ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে ট্রাম্পের সংলাপে ইউরোপকে বাদ দেওয়ার ফলে এখন অনেক কিছুই নির্ভর করছে শুধু জেলেনস্কির ওপর। তাঁর পক্ষে ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া কঠিন দাবি ঠেকানোর ভাল যুক্তি আছে। এটির ওপর নির্ভর করছে জেলেনস্কির পদ এবং ইতিহাসে অবস্থান। কিন্তু নিজের পরিচয় দিতে শত্রুদের ব্যবহারে সিদ্ধ এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো কাজটি তাঁর জন্য বিপজ্জনক এবং মানসিকভাবে কঠিন হতে পারে। অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো এরই মধ্যে উদ্বিগ্ন যে, জেলেনস্কি ক্রমাগত একটি সংকীর্ণ বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন। এটি ঠিক এমন এক সময়ে ঘটছে যখন তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যাপক সমর্থন প্রয়োজন। এক সূত্র বললেন, জেলেনস্কিকে ‘না’ বলার জন্য কেউ প্রস্তুত নন এবং তিনি ভুল করেই যাচ্ছেন। অনেক ইউক্রেনীয়ও স্পষ্টভাবে তাদের সমর অধিনায়কের প্রতি হতাশ।
ইউক্রেনের এক জরিপ অনুসারে, জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয়, তবে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে সাবেক সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনির কাছে ৩০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হতে পারেন। জালুঝনি এখনও রাজনীতিতে প্রবেশ করেননি। গত জানুয়ারির এক জরিপে দেখা যায়, জেলেনস্কির প্রতি মানুষের আস্থা কমে ৫২ শতাংশে নেমেছে। এটি যুদ্ধের সময়কালের মধ্যে নিম্নতম। অথচ, যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনের ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁর প্রতি আস্থা রাখতেন। তবে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ জেলেনস্কিকে পছন্দ করে।
ইউক্রেনের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনো ‘সবচেয়ে খারাপ’ না হলেও ট্রাম্প ক্রেমলিনের নীলনকশা বাস্তবায়ন করলে পরিস্থিতি ‘দুঃস্বপ্ন’ হয়ে উঠতে সময় লাগবে না। ওই নীলনকশার আওতায় ইউক্রেনকে কার্যকর নিরাপত্তা গ্যারান্টি না দিয়েই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে, রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পরিণত নির্বাচন, দুর্বল প্রেসিডেন্সি, ভগ্ন পার্লামেন্ট, তাঁরপর মাঠ থেকে সেনা প্রত্যাহার, ব্যাপক অভিবাসন এবং শেষ দৃশ্যে ইউক্রেনের ভেতরের সংহতি বিনষ্ট করা হবে।
এমনটা হলে যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনীয়রা যে ঐক্য দেখিয়েছিল তা তখন কেবলই এক দূরবর্তী স্মৃতি হয়ে থাকবে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি অসম্ভব নয়। মনে রাখবেন, দেশে কোটি কোটি অস্ত্র আছে। এমনকি ফ্রন্টলাইনে মাত্র ২ হাজার ৪০০ ডলার দিয়েও একটি রুশ ট্যাংক কিনতে পারবেন।’
ইউক্রেন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার লক্ষ্য পুতিন ত্যাগ করেছেন— তেমন একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ১৭ বছর বয়সী ছেলের দিকে তাকিয়ে সেরহি ভাসিলিউক ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘যতদিন সেই নষ্ট লোক (পুতিন) জীবিত থাকবে’ ততদিন যুদ্ধ চলতে থাকবে। তবে দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি যুদ্ধের প্রথম কয়েকদিনে অতিক্রান্ত হয়েছে, যখন ইউক্রেনীয়রা রুশ ট্যাংকের সারি কিয়েভের দোরগোড়ায় থামিয়ে দিয়েছিল।
এক সময় সেরহি নিজেই রুশ বাহিনী ঠেকানোর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু এখন মশাল তাঁর ছেলের প্রজন্মের হাতে। আগামী ৩ জুন আন্দ্রি ১৮ বছরে প্রবেশ করবে। ওই দিন আন্দ্রির দুটি কাজের পরিকল্পনা আছে— অর্থনীতি বিষয়ক ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হওয়া এবং ইউক্রেনের এলিট অ্যাসল্ট ইউনিটগুলোর একটিতে অংশগ্রহণ করা। এবিষয়ে আন্দ্রির বাবা বলেন, ‘এখন যুদ্ধ শেষ হলেও; যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হলেও ভবিষ্যতে যে যুদ্ধ আর হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়তে হবে।’
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

তিন বছর ধরে ইউক্রেন এমন পরিস্থিতি সহ্য করে আসছে, যা একসময় ছিল অকল্পনীয়। দেশটির রাজধানীতে আকাশ ও স্থল হামলা, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ; ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, গ্লাইড বোমা হামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যা— এমন কোনো ঘটনা নেই যা ঘটেনি। কিন্তু এখন কিয়েভ একেবারেই অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, যেটির উৎস আবার ইউক্রেনের মিত্র বলে পরিচিতি পশ্চিমা বিশ্ব। আরও স্পষ্ট করে বললে, যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এসেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক গড়ার নগ্ন প্রয়াস সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলেছে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। তিনি প্রকাশ্যেই ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বহু প্রতীক্ষিত সৌদি আরব সফর স্থগিত করেছেন জেলেনস্কি। কারণ কিয়েভের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য সংলাপে ‘ঘটনাচক্রে’ অংশ নিতে চাননি তিনি। জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি— এটি খুবই বিস্ময়কর! আমি মনে করি, এটি অনেকের জন্যই অপ্রত্যাশিত ছিল।’ ঠিক পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জেলেনস্কিকে সরাসরি ‘অনির্বাচিত স্বৈরশাসক’ বলে আক্রমণ করেন ট্রাম্প।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সংলাপের সিদ্ধান্ত এবং ক্রেমলিনের পুনর্বাসনে তাঁর সুস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষা কিয়েভের রাজনৈতিক মহলে গভীর আলোড়ন তুলেছে। তবে সেই বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেছে, সত্যিকার অর্থে এখন খুব বেশি বিস্মিত নন কেউ। জেলেনস্কির দলের এক জ্যেষ্ঠ এমপি বলেন, ‘যেদিন আমরা খবরটি শুনি, সেদিন আমাদের মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না, তবে এমন কিছু হবে বলে আমরা ধরে নিয়েছিলাম।’ কারণ, ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের জন্য ওয়াশিংটনের দরজা যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি যে, রাশিয়ার ন্যারেটিভ আমেরিকায় কতটা গভীরভাবে শিকড় গেড়েছে!’ ইউক্রেনের বিরোধী দলীয় এক এমপি পার্লামেন্টে বিরাজমান এক ধরনের ‘অশুভ আশঙ্কার’ কথা উল্লেখ করেন। তাঁর আশঙ্কা, এমপিদের এমন এক অপমানজনক যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হতে পারে, যা তাদের জন্য লজ্জাজনক হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও, দেশটির টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। মানুষ, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক থেকে শুরু করে সবাই ক্লান্ত। হাজারো মানুষ হতাহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়েছেন। ইউরোপে পালিয়ে যাওয়া ৪৩ লাখ ইউক্রেনীয়দের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশির বয়স ১৮ বছরের কম। তাদের অনেকেই আর কখনো ফিরে আসবে না। দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ছাড়া যেনতেন একটি চুক্তি হলে অনেক ইউক্রেনীয় বাবা-মার জন্য সন্তানদের বিদেশে পাঠানোর বিকল্প থাকবে না। বিষয়টি ইউক্রেনের জনমিতিতে বিদ্যমান অসন্তোষকে তীব্রতর করবে। ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের শান্তি প্রয়োজন। এমন এক শান্তি, যা আমাদের ধ্বংস করবে না।’
যেসব পরিবারে কিশোর ছেলে আছে, তাদের কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তারা হয় সুযোগ থাকতেই ছেলেদের ইউরোপে পাঠিয়ে দেবে না হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশেই রেখে দিতে হবে। সাবেক সৈনিক সেরহি ভাসিলিউক এমন একটি জটিলতার মুখোমুখি। ১৭ বছর বয়সী ছেলে আন্দ্রিকে বিদেশ পাঠাতে তিনি ও তাঁর স্ত্রী একমত হলেও ছেলের দ্বিধাহীন অস্বীকার তাঁদের উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আন্দ্রি বলেছে, সে অন্য কোথাও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে। কিন্তু আন্দ্রির মা তা কোনোভাবেই মানতে রাজি নন। সেরহি অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছেলের ইচ্ছায় সায় দিয়েছেন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের কাজ তিনিও করেছেন। তাই সেরহির জন্য বিষয়টা তেমন অসহনীয় নয়। তিনি বলেন, ওর মতো ছেলেরা যদি যুদ্ধে না থাকে, তাহলে লড়াই করার কেউ থাকবে না।
এত দীর্ঘ বিপর্যয়ের পরও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখনো পর্যন্ত চুক্তিতে আসার মতো কিছু হয়নি। কিন্তু ইউক্রেনের জনজীবনে ও রণক্ষেত্রে যে নেতিবাচক ঘটনাপ্রবাহ ঘটে যাচ্ছে, ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে বাইরের দুনিয়ায় ঠিক একইরকম ঘটনা ঘটছে। রাশিয়া একটি ফাঁদ পেতে রেখেছে। তা হলো- নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও তাৎক্ষণিক নির্বাচন ছাড়া যুদ্ধবিরতির ডাক। সেটা ঘটলে ইউক্রেনের জনগণের ঐক্য বিনষ্ট হবে। ইউক্রেনের অনেকের আশঙ্কা, এখন ট্রাম্প প্রশাসন যে ধরনের ভাষা প্রয়োগ করছে, তাতে রাশিয়ার পাতা ফাঁদের ছায়া দেখা যাচ্ছে।
ইউক্রেনের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সরাতে চান বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি কখনোই তাঁকে পছন্দ করেননি। জেলেনস্কিকে সামলোনো কঠিন বলে মনে করেন ট্রাম্প। তাই, নির্বাচন তাঁর কাছে কোনো ইস্যু নয়, উদ্দেশ্য জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া।’
ট্রাম্পের গতি দ্রুত শান্তি অর্জনের ক্ষেত্র তৈরি না করলেও ইউক্রেনের জন্য অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব তৈরি করবে। এরপর সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নের ভার পড়বে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কাঁধে। তখন জেলেনস্কি চাপে পড়বেন, সেই ফাঁকে ট্রাম্প আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবেন। ট্রাম্পের ছক মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এখনো তাঁর বিপৎসীমাগুলো চিহ্নিত করতে পারেননি।
গত সপ্তাহে ইকোনমিস্টকে জেলেনস্কি বলেন, ‘খুনির’ (পুতিন) সঙ্গে বসার প্রস্তুতি মানেই আপস। তবে এরই মধ্যে জেলেনস্কি নির্দেশনা দিয়েছেন, তিনি নিরাপত্তার গ্যারান্টি ছাড়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন না, বা তাকে এড়িয়ে কোনো চুক্তি হলে তা মেনে নেবেন না। শীর্ষস্থানীয় এক ইউক্রেনের কর্মকর্তা বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে হারানো অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে কখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে না ইউক্রেন। তবে ন্যাটোর সদস্যপদ যে খুব দূরের সম্ভাবনা, তা তিনি স্বীকার করেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ইউক্রেনের জন্য ন্যূনতম ও গ্রহণযোগ্য চাওয়া হলো— পশ্চিমা বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর সঙ্গে অব্যাহত সম্পর্ক বজায় রাখা, ইউক্রেনে পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং বিদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি। সেই বাহিনীর কত বড় হবে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ইউক্রেনে তাদের উপস্থিতি। তিনি বলেন, ‘যখন তারা এখানে থাকবে, আমরা বিশ্বাস করি, তাদের পক্ষে চলে যাওয়া কঠিন হবে।’
তাত্ত্বিকভাবে, ট্রাম্প যে চুক্তি করতে চান সেটির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে ইউক্রেন। তবে বাস্তবতা হলো— সময়ের সঙ্গে ইউক্রেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। উভয় পক্ষের জন্যই যুদ্ধ নির্মম, তবে তা ইউক্রেনীয়দের জন্য বেশি কঠিন। কারণ, দেশটি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও কম জনসংখ্যার। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুতর সমস্যা আছে এবং কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব দেখা যাচ্ছে। ফ্রন্টলাইনে ব্রিগেডগুলো লোকবলের অভাবে ভুগছে, কিছু ব্রিগেডের আকার এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
এদিকে, সমাধান চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের হাতে অনেক অস্ত্র আছে। তিনি সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারেন; রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারেন; ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রের যোগাযোগের মেরুদণ্ড স্টারলিংক সেবা বন্ধ; এবং রিয়েল টাইম টার্গেটিং প্রযুক্তির মতো সহায়তাগুলো পাঠানো বন্ধ করে দিতে পারেন। ইউক্রেনের সামনে নতুন বিকল্প থাকলেও তা এসব সিস্টেম বন্ধের ক্ষতি পোষাতে পারবে না। এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি জেলেনস্কি ১৮ এবং ২০ বছর বয়সী ছেলেদের মাঠে নামাতে পারেন, তাহলে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অর্থপূর্ণ হতে পারে। তা নাহলে এমন একটি চুক্তি সম্মত হওয়াই তার জন্য সর্বোত্তম পথ।’
ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে ট্রাম্পের সংলাপে ইউরোপকে বাদ দেওয়ার ফলে এখন অনেক কিছুই নির্ভর করছে শুধু জেলেনস্কির ওপর। তাঁর পক্ষে ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া কঠিন দাবি ঠেকানোর ভাল যুক্তি আছে। এটির ওপর নির্ভর করছে জেলেনস্কির পদ এবং ইতিহাসে অবস্থান। কিন্তু নিজের পরিচয় দিতে শত্রুদের ব্যবহারে সিদ্ধ এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মতো কাজটি তাঁর জন্য বিপজ্জনক এবং মানসিকভাবে কঠিন হতে পারে। অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো এরই মধ্যে উদ্বিগ্ন যে, জেলেনস্কি ক্রমাগত একটি সংকীর্ণ বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন। এটি ঠিক এমন এক সময়ে ঘটছে যখন তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যাপক সমর্থন প্রয়োজন। এক সূত্র বললেন, জেলেনস্কিকে ‘না’ বলার জন্য কেউ প্রস্তুত নন এবং তিনি ভুল করেই যাচ্ছেন। অনেক ইউক্রেনীয়ও স্পষ্টভাবে তাদের সমর অধিনায়কের প্রতি হতাশ।
ইউক্রেনের এক জরিপ অনুসারে, জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয়, তবে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে সাবেক সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনির কাছে ৩০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হতে পারেন। জালুঝনি এখনও রাজনীতিতে প্রবেশ করেননি। গত জানুয়ারির এক জরিপে দেখা যায়, জেলেনস্কির প্রতি মানুষের আস্থা কমে ৫২ শতাংশে নেমেছে। এটি যুদ্ধের সময়কালের মধ্যে নিম্নতম। অথচ, যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনের ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁর প্রতি আস্থা রাখতেন। তবে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনের মাত্র ৪ শতাংশ মানুষ জেলেনস্কিকে পছন্দ করে।
ইউক্রেনের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনো ‘সবচেয়ে খারাপ’ না হলেও ট্রাম্প ক্রেমলিনের নীলনকশা বাস্তবায়ন করলে পরিস্থিতি ‘দুঃস্বপ্ন’ হয়ে উঠতে সময় লাগবে না। ওই নীলনকশার আওতায় ইউক্রেনকে কার্যকর নিরাপত্তা গ্যারান্টি না দিয়েই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে, রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পরিণত নির্বাচন, দুর্বল প্রেসিডেন্সি, ভগ্ন পার্লামেন্ট, তাঁরপর মাঠ থেকে সেনা প্রত্যাহার, ব্যাপক অভিবাসন এবং শেষ দৃশ্যে ইউক্রেনের ভেতরের সংহতি বিনষ্ট করা হবে।
এমনটা হলে যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনীয়রা যে ঐক্য দেখিয়েছিল তা তখন কেবলই এক দূরবর্তী স্মৃতি হয়ে থাকবে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি অসম্ভব নয়। মনে রাখবেন, দেশে কোটি কোটি অস্ত্র আছে। এমনকি ফ্রন্টলাইনে মাত্র ২ হাজার ৪০০ ডলার দিয়েও একটি রুশ ট্যাংক কিনতে পারবেন।’
ইউক্রেন রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার লক্ষ্য পুতিন ত্যাগ করেছেন— তেমন একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ১৭ বছর বয়সী ছেলের দিকে তাকিয়ে সেরহি ভাসিলিউক ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ‘যতদিন সেই নষ্ট লোক (পুতিন) জীবিত থাকবে’ ততদিন যুদ্ধ চলতে থাকবে। তবে দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি যুদ্ধের প্রথম কয়েকদিনে অতিক্রান্ত হয়েছে, যখন ইউক্রেনীয়রা রুশ ট্যাংকের সারি কিয়েভের দোরগোড়ায় থামিয়ে দিয়েছিল।
এক সময় সেরহি নিজেই রুশ বাহিনী ঠেকানোর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু এখন মশাল তাঁর ছেলের প্রজন্মের হাতে। আগামী ৩ জুন আন্দ্রি ১৮ বছরে প্রবেশ করবে। ওই দিন আন্দ্রির দুটি কাজের পরিকল্পনা আছে— অর্থনীতি বিষয়ক ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হওয়া এবং ইউক্রেনের এলিট অ্যাসল্ট ইউনিটগুলোর একটিতে অংশগ্রহণ করা। এবিষয়ে আন্দ্রির বাবা বলেন, ‘এখন যুদ্ধ শেষ হলেও; যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হলেও ভবিষ্যতে যে যুদ্ধ আর হবে না, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়তে হবে।’
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেনের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সরাতে চান বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি কখনোই তাঁকে পছন্দ করেননি। জেলেনস্কিকে সামলোনো কঠিন বলে মনে করেন ট্রাম্প। তাই, নির্বাচন তাঁর কাছে কোনো ইস্যু নয়, উদ্দেশ্য জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইউক্রেনের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সরাতে চান বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি কখনোই তাঁকে পছন্দ করেননি। জেলেনস্কিকে সামলোনো কঠিন বলে মনে করেন ট্রাম্প। তাই, নির্বাচন তাঁর কাছে কোনো ইস্যু নয়, উদ্দেশ্য জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

ইউক্রেনের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সরাতে চান বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি কখনোই তাঁকে পছন্দ করেননি। জেলেনস্কিকে সামলোনো কঠিন বলে মনে করেন ট্রাম্প। তাই, নির্বাচন তাঁর কাছে কোনো ইস্যু নয়, উদ্দেশ্য জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

ইউক্রেনের সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সরাতে চান বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তিনি কখনোই তাঁকে পছন্দ করেননি। জেলেনস্কিকে সামলোনো কঠিন বলে মনে করেন ট্রাম্প। তাই, নির্বাচন তাঁর কাছে কোনো ইস্যু নয়, উদ্দেশ্য জেলেনস্কিকে সরিয়ে দেওয়া।’
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে