Ajker Patrika

আকাশ প্রতিরক্ষায় কে এগিয়ে, পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ১৮: ২৪
প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির দিক থেকে ভারত অনেক এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের কৌশল ভিন্ন। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির দিক থেকে ভারত অনেক এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের কৌশল ভিন্ন। ছবি: সংগৃহীত

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ এবং ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো কোন দেশের, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানসহ ভারতের একটি সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯ ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি ড্রোনও ধ্বংস করার দাবি পাকিস্তানের। সেই সঙ্গে ৫ ভারতীয় পাইলটকে আটক করার দাবিও করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিবরণ মিলছে। তারা যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও হামলায় কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। শুধু সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের বেসরকারি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দীর্ঘ পাল্লার সক্ষমতা ও বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর কারণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারতের জন্য কম হুমকি নয়; বিশেষ করে, দুই দেশের সামরিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এদিক বিবেচনায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকলেও কাছাকাছি দূরত্বে ভারতের যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কার্যকর একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলা যায়। নিচে দুই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক বিবরণ তুলে ধরা হলো:

ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশ থেকে আসা যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় ভারত একটি শক্তিশালী, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো—

-এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে পাওয়া এস-৪০০ বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি মাল্টি-এএসএ রাডার ব্যবহার করে, একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এবং একই সঙ্গে ৩৬টিতে আঘাত হানতে পারে। এই রাডারব্যবস্থার শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। এটি শত্রুর আকাশসীমার গভীরে থাকা স্টিলথ বিমান (রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম আকাশযান), ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেকোনো হুমকিকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে এই ইউনিট মোতায়েন করেছে ভারত।

-বারাক-৮ (৭০-১০০ কিলোমিটার পাল্লা) : ভারত ও ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্টের জন্য এএসএ রাডার ব্যবহার করে এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধে কার্যকর। এটি নৌ ও স্থল উভয় প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা হয়েছে।

-আকাশ ও আকাশ-এনজি (৩০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : দেশীয়ভাবে তৈরি এই ব্যবস্থাগুলোতে এএসএ রাডার রয়েছে এবং এটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আকাশ-এনজি-এর পাল্লা পরে বাড়ানো হয়েছে এবং এর নির্ভুলতাও উন্নত করা হয়েছে।

-কিউআরএসএএম (২৫-৩০ কিলোমিটার পাল্লা) : দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম, স্বল্পপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ৩৬০-ডিগ্রি এএসএ রাডার কভারেজযুক্ত। এটি দ্রুতগতির লক্ষ্যবস্তু এবং সম্মুখ অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

-স্পাইডার (১৫-৩৫ কিলোমিটার পাল্লা) : ইসরায়েলের তৈরি এই স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর।

-পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি) : ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা (বিএমডি) ব্যবস্থার অংশ এটি। এটি ৫ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে সক্ষম।

-এসআরএসএএম (২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : নৌবাহিনীর স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা আইএনএস বিক্রান্তের মতো সামরিক স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষায় ব্যবহার করা হয়।

ভারতের শক্তির দিক

-বেশির ভাগ সিস্টেমে উন্নত এএসএ রাডার প্রযুক্তি রয়েছে। এই প্রযুক্তি উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে সক্ষম।

-দীর্ঘপাল্লার এস-৪০০ অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌশলগত প্রতিরক্ষা দেয়। এটি ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে লাহোর বা ইসলামাবাদ পর্যন্ত হুমকির মোকাবিলা করতে সক্ষম।

-আকাশ ও কিউআরএসএএম-এর মতো দেশীয় ব্যবস্থা বিদেশি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। এটি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।

-বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা কাঠামো পাকিস্তান ও চীন উভয়কে মোকাবিলা করতে সক্ষম। পাশাপাশি বিএমডি সক্ষমতা ব্যালিস্টিক হুমকি প্রতিহত করতে পারে।

পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। তবে এখনো সীমিত এবং চীনের প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো:

-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই (১০০-২৬০ কিলোমিটার পাল্লা) : সবচেয়ে উন্নত এই ব্যবস্থা ২০২১ সালে পায় পাকিস্তান। এটি চীনের এইচকিউ-৯-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, আবার রাশিয়ার এস-৩০০-এর কিছু উপাদানও রয়েছে। এইচকিউ-৯ বিই ২৬০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং এর সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটি জেএসজি-৪০০ ও জেপিজি-৬০০ রাডার ব্যবহার করে। তবে এটি এস-৪০০-এর চেয়ে কম আধুনিক।

-এফডি-২০০০ (১২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : এইচকিউ-৯ এ-এর রপ্তানি সংস্করণ এটি। এটি এইচটি-২৩৩ রাডার ব্যবহার করে বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। এটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩-এর চেয়ে বৃহত্তর পরিসরে কভারেজ দিতে পারে। তবে ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে কম কার্যকর।

-এইচকিউ-১৬ এফই/এলওয়াই-৮০ (৪০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়ার বুক-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর। এইচকিউ-১৬ এফই স্বল্প ও দীর্ঘপাল্লার প্রতিরক্ষার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে।

-এফএম-৯০ (১৫ কিলোমিটার পাল্লা) : স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য তৈরি, যা ভারতের স্পাইডারের সঙ্গে তুলনীয়। তবে এর ব্যবহার ততটা বহুমাত্রিক নয়।

-ম্যানপ্যাডস (যেমন, আরবিএস-৭০ এনজি) : বহনযোগ্য এই স্বল্পপাল্লার ব্যবস্থাগুলো নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির জন্য কার্যকর। তবে এর পরিধি সীমিত।

পাকিস্তানের শক্তির দিক

-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই একটি বিশ্বাসযোগ্য দীর্ঘপাল্লার প্রতিরোধব্যবস্থা। এটি ভারতীয় বিমানের জন্য বড় হুমকি।

-সমন্বিত প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক স্তরযুক্ত সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা (সিএলআইএডি) কাঠামো একাধিক ব্যবস্থাকে একত্রিত করে। ফলে প্রতিরক্ষা জাল তৈরি করতে পারে।

-সাশ্রয়ী চীনা ব্যবস্থা হওয়ায় বাজেট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বৃহত্তর পরিসরে মোতায়েনের সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের দুর্বলতা

-রাডার প্রযুক্তি (যেমন, এইচকিউ-৯-এর জেএসজি-৪০০) ভারতের এএসএ-ভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে কম উন্নত। ফলে মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট এবং জ্যামিং প্রতিরোধ সক্ষমতা সীমিত।

-কম এনগেজমেন্ট পাল্লা (এইচকিউ-৯-এর ২৬০ কিলোমিটার বনাম এস-৪০০-এর ৪০০ কিলোমিটার) কৌশলগত গভীরতা সীমিত করে।

-ভারতের বিএমডি সিস্টেমের তুলনায় সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা।

-দেশীয় কর্মসূচির (যেমন, লোএমএডিএস, এফএএজেড-এসএল) প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে চীনা আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

সক্ষমতায় কে এগিয়ে

১. পাল্লা ও বিস্তার

-ভারতের এস-৪০০ (৪০০ কিলোমিটার) পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই (২৬০ কিলোমিটার)-এর চেয়ে অনেক বেশি পাল্লার, যা ভারতকে পাকিস্তানের আকাশসীমার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তুলেছে।

-ভারতের মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেমগুলোও (বারাক-৮, আকাশ, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের এলওয়াই-৮০ ও এফএম-৯০-এর চেয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে।

২. রাডার প্রযুক্তি

-ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এএসএ রাডার (এস-৪০০, বারাক-৮, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের কম উন্নত রাডার সিস্টেমের তুলনায় উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে পারে।

৩. বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা

-দীর্ঘ, মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেম, বিএমডিসহ ভারতের বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোটি আরও ব্যাপক ও বহুমুখী। এটি পাকিস্তান ও চীন উভয় থেকে আসা বিভিন্ন হুমকি মোকাবিলা করতে পারে। পাকিস্তানের সিএলআইএডি এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর প্রতিরক্ষামূলক সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

৪. ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা

-ভারতের পিএডি ও এএডি সিস্টেম শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেয়, যেখানে পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই-এর ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে সীমিত কার্যকারিতা রয়েছে।

৫. দেশীয় সক্ষমতা

-ভারতের দেশীয় সিস্টেম (আকাশ, কিউআরএসএএম) এবং বিএমডি উন্নয়ন বিদেশি নির্ভরতা কমিয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের চীনা আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে বাজেট ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নমনীয়তাকে সীমিত করেছে।

৬. কৌশলগত প্রভাব

-এস-৪০০ ভারতকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়। এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কারণে পাকিস্তানকে এফ-১৬ ও জেএফ-১৭-এর মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। ভারতের ব্যবস্থাগুলো বারাক-৮ ও আকাশের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (যেমন, বাবর) প্রতিরোধ করতে পারে। পাকিস্তানের এইচকিউ-৯পি একটি কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা। তবে এটি যুদ্ধের সময় এস-৪০০-এর মতো আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম নয়।

পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম

এস-৪০০-এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাল্লা ও রাডার সক্ষমতা, উন্নত এএসএ প্রযুক্তি, একটি বহুস্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার কারণে আকাশ প্রতিরক্ষায় ভারতের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এইচকিউ-৯পি ও সিএলআইএডি-এর মাধ্যমে উন্নত হলেও কম পাল্লা, কম উন্নত রাডার এবং সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক সক্ষমতার কারণে সীমাবদ্ধ।

এ ছাড়া ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের কোনো আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নেই। ইসলামাবাদ আইসিবিএম ব্যবস্থা মোতায়েনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বিকাশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়, অথবা আপাতত সক্ষমতা নেই। পাকিস্তানের সতর্কতামূলক কৌশল অগ্রাধিকার পায়।

ভারতের চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও হুমকি বোধ করে। এর পাশাপাশি ভারতের আঞ্চলিক পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের কেবল একটি প্রধান শত্রু রয়েছে, সেটি হলো ভারত। ফলে প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংঘাতে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অপ্রাসঙ্গিক। পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মজুত তাদের আঞ্চলিক লক্ষ্য পূরণ করে। অর্থাৎ ভারতকে প্রতিরোধ করার মতো যথেষ্ট বলেই মনে করে তারা।

চীনের সঙ্গে সহযোগিতায় তৈরি শাহিন ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের জন্য অনেকটা নির্ভার থাকে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দেশটি ভারতের হামলা প্রতিহত করার জন্য একটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি ও মোতায়েন করার কাজ করছে। ভারতের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র, যেমন ব্রহ্মোস, ঠেকাতে নতুন প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনে বিনিয়োগ করছে পাকিস্তান।

লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের জোট: আসন সমঝোতা শেষ পর্যায়ে

উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত