
প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৫ বছরের মাথায় পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে আরাকান আর্মি (এএ)। বর্তমানে গোষ্ঠীটি রাজ্যের ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ টাউনশিপের মধ্যে ১৫টি এবং পুরো অঞ্চলের ৯০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া, গোষ্ঠীটি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরাকান আর্মির এ সামরিক অগ্রগতির অন্যতম মাইলফলক হলো রাখাইনের আন টাউনশিপে জান্তাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক কমান্ডের সদর দপ্তরের দখল। এটি এএ-এর সামরিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বকে আরও সুসংহত করেছে। আরাকান আর্মি তাদের রাজনৈতিক শাখা আরাকান পিপলস রেভল্যুশনারি গভর্নমেন্টের (এপিআরজি) মাধ্যমে রাখাইনের বিচারব্যবস্থা থেকে জনস্বাস্থ্য পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত পরিচালনা করছে। আর এই বিষয়টি তাদের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন ও কনফেডারেট রাজ্যের মর্যাদা অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্পষ্ট করছে।
রাখাইন রাজ্যের কৌশলগত অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং চীন-সমর্থিত অবকাঠামোর নৈকট্য এএ-এর উত্থানকে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। এই পরিবর্তন সংলাপ ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।
অসাধারণ কৌশল ও ডিটারেন্ট বা প্রতিরোধক্ষমতার মাধ্যমে এএ রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় কার্যত শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। এপিআরজি প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং জনসেবাসহ কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা এএ-এর বৈধতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে আরও স্পষ্ট করছে।
এএ-এর দ্রুত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জান্তা বাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে রাখাইনের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষ করে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর যোদ্ধাদের নিয়োগের মাধ্যমে তারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে।
এই কৌশল রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে জাতিগত বিভাজন আরও গভীর করেছে এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়িয়ে সংঘাতের চক্রকে দীর্ঘায়িত করছে। এএ এর শাসন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন এখনো চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
এএ-এর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সংলাপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা অর্জন করা কতটা সফল হবে, সেটাই শেষ পর্যন্ত নির্ধারক হয়ে উঠবে।
রাখাইনে চীনের প্রভাব
রাখাইন রাজ্যের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত অবস্থান চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর ও শ্বে গ্যাস পাইপলাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প চীনের অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আঞ্চলিক কৌশলগত পরিকল্পনার প্রতিফলন।
এই প্রকল্পগুলো শুধু চীনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ পথ নিশ্চিত করছে না, বরং ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগও আরও মজবুত করছে, যা রাখাইনকে চীনের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে।
তবে মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে চীনা বিনিয়োগ ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখে। আঞ্চলিক তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের ‘অপারেশন ১০২৭ ’—শুরুর পর থেকে জান্তাবিরোধী বাহিনী চীনা অর্থায়নের ৩৪টি প্রকল্পের মধ্যে ২৩ টির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রধান এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাখাইন, উত্তর শান রাজ্য এবং মধ্যাঞ্চল।
তবে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ও জান্তা বিরোধীদের রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সশস্ত্রবাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস—পিডিএফ সরাসরি চীনা প্রকল্পগুলোর ওপর হামলা চালানো থেকে বিরত থেকেছে। তারপরও ২০২৪ সালের অক্টোবরে জান্তা-সমর্থিত পিউসাওথি মিলিশিয়া মান্দালয়ে চীনা কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। এটি চীন-মিয়ানমার কূটনৈতিক সম্পর্কের সাত দশকের ইতিহাসে দ্বিতীয় ঘটনা।
বিনিয়োগ রক্ষা করতে চীন মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যৌথ নিরাপত্তা কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জান্তা এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খসড়া পর্যালোচনা করছে। যেখানে অস্ত্র ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানি সংক্রান্ত ব্যবস্থা এবং এর ফলে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব যেন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই উদ্যোগ মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে ঘিরে চীনের আস্থার অভাবকেই প্রতিফলিত করে। একই সঙ্গে, বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রতিরোধের সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে এরই মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করে রাখা এএ এটি ইতিবাচকভাবে নাও নিতে পারে।
যদিও চীনা বিনিয়োগ মিয়ানমারের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে জান্তার প্রতি অতিরিক্ত সমর্থন দেশটির অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ, বিশেষ করে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। তাই রাখাইনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে চীনের জন্য এই উত্তেজনাগুলো সামলানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিদ্যমান সংঘাত আরও ঘনীভূত না হয়।
জটিল সংঘাতের গতিশীলতা
আরাকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও ঐতিহাসিক ক্ষোভে জর্জরিত। জাতিগত জাতীয়তাবাদের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এএ-এর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এই বিভাজনকে আরও গভীর করেছে।
এই উত্তেজনা রাখাইনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধার সৃষ্টি করছে। তবে সমঝোতার সম্ভাবনাও বিদ্যমান। সম্প্রতি এএ এমন বার্তা দিয়েছে, যেখানে তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাখাইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং রাজনৈতিক সংলাপের জন্য খোলা দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্বাস তৈরির জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান, সরকার কাঠামোতে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো।
কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির ও নতুন সংকট
বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়োগকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যা সংঘাতের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জোরপূর্বক নিয়োগ এবং নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে সামরিক জান্তার পক্ষে টেনে নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয় যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে শরণার্থীদের শোষণ ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যদিও এএ রোহিঙ্গাদের স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তবে কেবল কথার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়; বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রশাসনিক কাঠামোয় রোহিঙ্গাদের বৃহত্তর সংযুক্তি এবং ন্যায়সংগত উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করলে পারস্পরিক আস্থা ও সহাবস্থানের ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এএ, রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সংলাপ সহজতর করা হলে সহযোগিতার জন্য একটি কাঠামো গড়ে উঠতে পারে।
এই উদ্যোগগুলো সফল করতে হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ শাসন কাঠামো গড়ে তোলা গেলে রাখাইন দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতার পথে এগোতে পারবে।
ভারত ও বাংলাদেশের ভূমিকা
রাখাইনের নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাখাইনে ভারতের কৌশলগত প্রকল্পগুলোর মধ্যে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। যার মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে, এএ-এর ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ ভারতের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে সুযোগও বয়ে আনতে পারে। সরাসরি এএ-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ভারতের জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ, এই যোগাযোগ রাখাইনে ভারতের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে পারে।
ভারত যদি বাস্তবসম্মত সহযোগিতার পথে হাঁটে, তবে এটি শুধু দেশটির বিনিয়োগই সুরক্ষিত করবে না, বরং রাখাইনে নয়াদিল্লির প্রভাবও বাড়াবে। পাশাপাশি, রাখাইনে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির মোকাবিলায় ভারতের সম্পৃক্ততা কার্যকর কৌশল হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনা চাপে পড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ সামাজিক-রাজনৈতিক উত্তেজনাও বেড়েছে। এএ-এর প্রতি কিছুটা নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন কৌশলগত সুযোগ খুঁজে পেতে পারে। যেমন, মানবিক করিডর স্থাপন, সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কিত ইস্যুগুলো সমাধান এবং এএ-এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত করা যেতে পারে।
ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই উচিত এএ-এর কার্যত শাসনক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের রাখাইনের মূল অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা। এই কৌশল গ্রহণ করলে এটি শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না, বরং অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।
সমাধানের পথ কী?
রাখাইনে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বহুমুখী কৌশল প্রয়োজন, যেখানে সুশাসন, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং মানবিক সহায়তাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
১. অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা: এএ-কে সামরিক সাফল্যের বাইরে গিয়ে নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা দেখাতে হবে। এর অর্থ হলো, সব সম্প্রদায়ের—বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের—অধিকার সংরক্ষণ এবং এমন শাসন কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে রাখাইনের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
২. গঠনমূলক সংলাপ প্রচার: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এএ, রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সংলাপের সুযোগ তৈরি করা অপরিহার্য। এই প্রচেষ্টাগুলো স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং এমন প্রক্রিয়া থাকতে হবে, যা জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে।
৩. কৌশলগত বিনিয়োগের সদ্ব্যবহার: চীন, ভারতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো যেন রাখাইনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হবে এবং সংঘাতের মূল কারণগুলো হ্রাস পাবে।
৪. মানবিক সহায়তা জোরদার: বাংলাদেশ ও ভারতসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উচিত রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সহায়তায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে মানুষের দুর্দশা কমানো সম্ভব হবে।
রাখাইনের সংকট জটিল হলেও এটি অমীমাংসিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অঞ্চলটি সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঐতিহাসিক ক্ষোভের সমাধান ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাখাইন একসময় সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
এশিয়া টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৫ বছরের মাথায় পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে আরাকান আর্মি (এএ)। বর্তমানে গোষ্ঠীটি রাজ্যের ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ টাউনশিপের মধ্যে ১৫টি এবং পুরো অঞ্চলের ৯০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া, গোষ্ঠীটি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরাকান আর্মির এ সামরিক অগ্রগতির অন্যতম মাইলফলক হলো রাখাইনের আন টাউনশিপে জান্তাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক কমান্ডের সদর দপ্তরের দখল। এটি এএ-এর সামরিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বকে আরও সুসংহত করেছে। আরাকান আর্মি তাদের রাজনৈতিক শাখা আরাকান পিপলস রেভল্যুশনারি গভর্নমেন্টের (এপিআরজি) মাধ্যমে রাখাইনের বিচারব্যবস্থা থেকে জনস্বাস্থ্য পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত পরিচালনা করছে। আর এই বিষয়টি তাদের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন ও কনফেডারেট রাজ্যের মর্যাদা অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্পষ্ট করছে।
রাখাইন রাজ্যের কৌশলগত অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং চীন-সমর্থিত অবকাঠামোর নৈকট্য এএ-এর উত্থানকে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। এই পরিবর্তন সংলাপ ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।
অসাধারণ কৌশল ও ডিটারেন্ট বা প্রতিরোধক্ষমতার মাধ্যমে এএ রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় কার্যত শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। এপিআরজি প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং জনসেবাসহ কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা এএ-এর বৈধতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে আরও স্পষ্ট করছে।
এএ-এর দ্রুত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জান্তা বাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে রাখাইনের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষ করে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর যোদ্ধাদের নিয়োগের মাধ্যমে তারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে।
এই কৌশল রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে জাতিগত বিভাজন আরও গভীর করেছে এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়িয়ে সংঘাতের চক্রকে দীর্ঘায়িত করছে। এএ এর শাসন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন এখনো চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
এএ-এর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সংলাপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা অর্জন করা কতটা সফল হবে, সেটাই শেষ পর্যন্ত নির্ধারক হয়ে উঠবে।
রাখাইনে চীনের প্রভাব
রাখাইন রাজ্যের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত অবস্থান চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর ও শ্বে গ্যাস পাইপলাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প চীনের অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আঞ্চলিক কৌশলগত পরিকল্পনার প্রতিফলন।
এই প্রকল্পগুলো শুধু চীনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ পথ নিশ্চিত করছে না, বরং ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগও আরও মজবুত করছে, যা রাখাইনকে চীনের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে।
তবে মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে চীনা বিনিয়োগ ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখে। আঞ্চলিক তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের ‘অপারেশন ১০২৭ ’—শুরুর পর থেকে জান্তাবিরোধী বাহিনী চীনা অর্থায়নের ৩৪টি প্রকল্পের মধ্যে ২৩ টির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রধান এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাখাইন, উত্তর শান রাজ্য এবং মধ্যাঞ্চল।
তবে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ও জান্তা বিরোধীদের রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সশস্ত্রবাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস—পিডিএফ সরাসরি চীনা প্রকল্পগুলোর ওপর হামলা চালানো থেকে বিরত থেকেছে। তারপরও ২০২৪ সালের অক্টোবরে জান্তা-সমর্থিত পিউসাওথি মিলিশিয়া মান্দালয়ে চীনা কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। এটি চীন-মিয়ানমার কূটনৈতিক সম্পর্কের সাত দশকের ইতিহাসে দ্বিতীয় ঘটনা।
বিনিয়োগ রক্ষা করতে চীন মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যৌথ নিরাপত্তা কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জান্তা এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খসড়া পর্যালোচনা করছে। যেখানে অস্ত্র ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানি সংক্রান্ত ব্যবস্থা এবং এর ফলে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব যেন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই উদ্যোগ মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে ঘিরে চীনের আস্থার অভাবকেই প্রতিফলিত করে। একই সঙ্গে, বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রতিরোধের সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে এরই মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করে রাখা এএ এটি ইতিবাচকভাবে নাও নিতে পারে।
যদিও চীনা বিনিয়োগ মিয়ানমারের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে জান্তার প্রতি অতিরিক্ত সমর্থন দেশটির অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ, বিশেষ করে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। তাই রাখাইনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে চীনের জন্য এই উত্তেজনাগুলো সামলানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিদ্যমান সংঘাত আরও ঘনীভূত না হয়।
জটিল সংঘাতের গতিশীলতা
আরাকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও ঐতিহাসিক ক্ষোভে জর্জরিত। জাতিগত জাতীয়তাবাদের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এএ-এর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এই বিভাজনকে আরও গভীর করেছে।
এই উত্তেজনা রাখাইনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধার সৃষ্টি করছে। তবে সমঝোতার সম্ভাবনাও বিদ্যমান। সম্প্রতি এএ এমন বার্তা দিয়েছে, যেখানে তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাখাইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং রাজনৈতিক সংলাপের জন্য খোলা দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্বাস তৈরির জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান, সরকার কাঠামোতে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো।
কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির ও নতুন সংকট
বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়োগকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যা সংঘাতের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জোরপূর্বক নিয়োগ এবং নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে সামরিক জান্তার পক্ষে টেনে নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয় যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে শরণার্থীদের শোষণ ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যদিও এএ রোহিঙ্গাদের স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তবে কেবল কথার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়; বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রশাসনিক কাঠামোয় রোহিঙ্গাদের বৃহত্তর সংযুক্তি এবং ন্যায়সংগত উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করলে পারস্পরিক আস্থা ও সহাবস্থানের ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এএ, রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সংলাপ সহজতর করা হলে সহযোগিতার জন্য একটি কাঠামো গড়ে উঠতে পারে।
এই উদ্যোগগুলো সফল করতে হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ শাসন কাঠামো গড়ে তোলা গেলে রাখাইন দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতার পথে এগোতে পারবে।
ভারত ও বাংলাদেশের ভূমিকা
রাখাইনের নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাখাইনে ভারতের কৌশলগত প্রকল্পগুলোর মধ্যে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। যার মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে, এএ-এর ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ ভারতের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে সুযোগও বয়ে আনতে পারে। সরাসরি এএ-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ভারতের জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ, এই যোগাযোগ রাখাইনে ভারতের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে পারে।
ভারত যদি বাস্তবসম্মত সহযোগিতার পথে হাঁটে, তবে এটি শুধু দেশটির বিনিয়োগই সুরক্ষিত করবে না, বরং রাখাইনে নয়াদিল্লির প্রভাবও বাড়াবে। পাশাপাশি, রাখাইনে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির মোকাবিলায় ভারতের সম্পৃক্ততা কার্যকর কৌশল হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনা চাপে পড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ সামাজিক-রাজনৈতিক উত্তেজনাও বেড়েছে। এএ-এর প্রতি কিছুটা নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন কৌশলগত সুযোগ খুঁজে পেতে পারে। যেমন, মানবিক করিডর স্থাপন, সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কিত ইস্যুগুলো সমাধান এবং এএ-এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত করা যেতে পারে।
ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই উচিত এএ-এর কার্যত শাসনক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের রাখাইনের মূল অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা। এই কৌশল গ্রহণ করলে এটি শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না, বরং অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।
সমাধানের পথ কী?
রাখাইনে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বহুমুখী কৌশল প্রয়োজন, যেখানে সুশাসন, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং মানবিক সহায়তাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
১. অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা: এএ-কে সামরিক সাফল্যের বাইরে গিয়ে নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা দেখাতে হবে। এর অর্থ হলো, সব সম্প্রদায়ের—বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের—অধিকার সংরক্ষণ এবং এমন শাসন কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে রাখাইনের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
২. গঠনমূলক সংলাপ প্রচার: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এএ, রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সংলাপের সুযোগ তৈরি করা অপরিহার্য। এই প্রচেষ্টাগুলো স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং এমন প্রক্রিয়া থাকতে হবে, যা জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে।
৩. কৌশলগত বিনিয়োগের সদ্ব্যবহার: চীন, ভারতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো যেন রাখাইনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হবে এবং সংঘাতের মূল কারণগুলো হ্রাস পাবে।
৪. মানবিক সহায়তা জোরদার: বাংলাদেশ ও ভারতসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উচিত রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সহায়তায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে মানুষের দুর্দশা কমানো সম্ভব হবে।
রাখাইনের সংকট জটিল হলেও এটি অমীমাংসিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অঞ্চলটি সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঐতিহাসিক ক্ষোভের সমাধান ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাখাইন একসময় সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
এশিয়া টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
আরও খবর পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রাখাইনের সংকট জটিল হলেও এটি অমীমাংসিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অঞ্চলটি সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঐতিহাসিক ক্ষোভের সমাধান ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাখাইন একসময় সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

রাখাইনের সংকট জটিল হলেও এটি অমীমাংসিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অঞ্চলটি সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঐতিহাসিক ক্ষোভের সমাধান ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাখাইন একসময় সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

রাখাইনের সংকট জটিল হলেও এটি অমীমাংসিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অঞ্চলটি সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঐতিহাসিক ক্ষোভের সমাধান ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাখাইন একসময় সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

রাখাইনের সংকট জটিল হলেও এটি অমীমাংসিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অঞ্চলটি সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঐতিহাসিক ক্ষোভের সমাধান ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাখাইন একসময় সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
২ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে