আব্দুর রহমান

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কে উত্তেজনা গত কয়েক বছরে নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া উত্তেজনা এখন শুধু সামরিক বা কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, তা ছড়িয়ে পড়েছে অর্থনীতি, প্রযুক্তি, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার মঞ্চেও। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকেই প্রশ্ন করছেন—নতুন কোনো কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ুযুদ্ধ ২.০ কি দরজায় কড়া নাড়ছে?
সম্প্রতি সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব দিমিত্রি মেদভেদেভের উত্তেজনাকর মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রাশিয়ার উপকূলে মোতায়েনের নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ একধরনের কৌশলগত সংকেত, যার উদ্দেশ্য রাশিয়াকে ভয় দেখানো, সরাসরি যুদ্ধ নয়। তবে দুই পরাশক্তির মধ্যকার উত্তেজনাকে স্নায়ুযুদ্ধের কল্পনায় রূপ দিতে এই ইঙ্গিত যথেষ্ট।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল—একদিকে মার্কিন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। কিন্তু বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে মূলত কৌশলগত আধিপত্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা কাজ করছে।
কিংস কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক ও বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞ লরেন্স ফ্রিডম্যান যেমনটি বলেছেন, বর্তমান উত্তেজনাকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ ২.০’ বলা যেতে পারে। তবে তাঁর মতে, এটি কোনোভাবেই প্রথম স্নায়ুযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি নয়। কারণ আজকের রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো পরাশক্তি নয়, বরং অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকা একটি দেশ।
ফ্রিডম্যান বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তির ওপর জোর দেওয়া দুই স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে একটি বড় মিল। তবে স্নায়ুযুদ্ধ ১.০ এবং ২.০–এর মধ্যে পার্থক্যগুলো অত্যন্ত গভীর। সবচেয়ে স্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো—রাশিয়া এখন অনেক দুর্বল অবস্থানে রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলনায়।’
তাঁর মতে, প্রথম স্নায়ুযুদ্ধ ছিল এক বৈশ্বিক ব্যাপার। যদিও এটি ইউরোপে শুরু হয়েছিল, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ ২.০-এ রাশিয়ার মনোযোগ মূলত ইউরোপেই কেন্দ্রীভূত। সিরিয়া এর ব্যতিক্রম হিসেবে একটি বড় উদাহরণ। তিনি বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়ান ফেডারেশনে রূপ নেওয়ার ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রথম স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ব্লকের অর্থনীতির সঙ্গে বাকি বিশ্বের অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুবই সীমিত ছিল, জ্বালানি খাত ছাড়া।’
বর্তমানে চলমান স্নায়ুযুদ্ধ ২.০-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো, মস্কো আর কোনো আন্তর্জাতিক আদর্শভিত্তিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দাবি করে না। স্নায়ুযুদ্ধ ১.০ ছিল ইন্টারনেট-পূর্ব যুগের দ্বন্দ্ব। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ ২.০–এর অবয়ব তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটের প্রভাবের মধ্য দিয়ে।
তবে রাশিয়ার এই ‘পিছিয়ে থাকাকে’ অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। বর্তমানে রাশিয়া, চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়া মিলে একটি অঘোষিত বৈশ্বিক অক্ষ গঠন করছে, যাকে পশ্চিমাদের অনেকে বলছেন ‘Axis of Upheaval’ বা ‘বিপর্যয়ের অক্ষ’। এই জোটের লক্ষ্য পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া নিজেকে ইউরোপ ও পশ্চিমের বিরুদ্ধে একটি বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কৌশলগত বিভ্রান্তি, যা রাশিয়ার পক্ষে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দূত ও পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক জন বোলটন এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ধাঁচের বিচ্ছিন্ন কৌশল বড় কোনো বৈশ্বিক লক্ষ্য তৈরি করতে পারছে না, বরং মার্কিন নেতৃত্বকে দুর্বল করছে। এর ফলে রাশিয়া ও চীন প্রভাব বাড়াতে পারছে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায়।
জন বোলটনের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে পড়ে, তখন পুরো বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা অনিশ্চয়তা ছিল—কী ঘটতে যাচ্ছে। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন ‘নতুন বিশ্বব্যবস্থার’ কথা। সে সময় মার্কিনরা ভেবেছিল, দুনিয়াজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কিন্তু তা আর হয়নি। অবশ্য, মার্কিনরা যেমনটা মনে করেছিল, রাশিয়া তাদের চাহিদামতো ‘ভালো হয়ে যাবে’ সেটাও হয়নি।
মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, ‘আরব দুনিয়ায় যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, তা আমরা আগেভাগে টের পাইনি। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লব কীভাবে পুরো অঞ্চলে “চরমপন্থার” বিস্তার ঘটাবে, সেটাও আঁচ করতে পারিনি। আবার ১৯৯০-এর দশকে আমরা চিন্তাও করিনি যে, চীন ভবিষ্যতে হুমকি হয়ে উঠবে। আমরা শুনেছিলাম, দেং জিয়াওপিং চীনাদের বলেছিলেন, “তোমাদের ক্ষমতা লুকিয়ে রাখো, সময়ের অপেক্ষা করো।” আমরা বুঝতেই পারিনি উনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন।’
ফলে, আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাশিয়া-চীন বলয়মুখী হওয়া, ব্রিকসের মতো জোটের মাধ্যমে পশ্চিমা আরোপিত বিশ্বব্যবস্থা চ্যালেঞ্জ করার আলোকে জন বোলটন মনে করছেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের অবসান মানেই ইতিহাসের অবসান, সংঘাত আর আমাদের জন্য আর কোনো হুমকি নয়—এই ভ্রান্ত ধারণাই আমাদের বড় ভুল করতে বাধ্য করেছে। রাশিয়া, চীন এবং ইসলামি জঙ্গিবাদের হুমকি সম্পর্কে আমরা ভুল হিসাব করেছি।’
অন্যদিকে রুশ অর্থনীতিও এই উত্তেজনার মূল্য দিচ্ছে। রয়টার্সের এক সমীক্ষা বলছে, রুশ মুদ্রা রুবল আগামী ১২ মাসে প্রায় ২০ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, আমদানি সংকট ও পুঁজিবাজারে অস্থিরতা এর কারণ। তবে এই আর্থিক চাপ রাশিয়াকে থামাতে পারেনি। বরং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একপ্রকার ‘ঘাতসহ’ অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছেন—যা তাঁকে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার মধ্যেও টিকে থাকতে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই স্নায়ুযুদ্ধ যদি সত্যিই শুরু হয়ে থাকে, তবে তা আগের মতো কেবল পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা নয়। বরং এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও সাইবার যুদ্ধকৌশল—এই নতুন ক্ষেত্রগুলোতে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএসআইএস বলছে, ১৯৮০-এর দশকে মার্কিন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে বড় ভূমিকা রেখেছিল। আজকের দিনে সেই প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা আরও তীব্র, আরও বহুমাত্রিক। এখন শুধু অস্ত্র তৈরি নয়, বরং তথ্যপ্রবাহ, বাণিজ্য নেটওয়ার্ক, এমনকি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের দিকেও নজর দিতে হচ্ছে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি আর এই উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আইএনএফ বা স্টার্ট—এর মতো কৌশলগত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। নতুন কোনো চুক্তির সম্ভাবনাও নেই। এর ফলে পারমাণবিক প্রতিযোগিতা একটি অস্থির, অপ্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলা কঠিন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই দ্বন্দ্ব ‘প্রক্সি যুদ্ধের’ মাধ্যমে চলবে—যেমনটা এখন ইউক্রেনে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই স্নায়ুযুদ্ধ হবে অর্থনীতি ও প্রযুক্তির মাঠে—যেখানে এআই চালিত অস্ত্র, ডিজিটাল মুদ্রা ও ব্লকচেইন নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম মূল যুদ্ধক্ষেত্র।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—এই উত্তেজনার কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা নেই। আগে যেমন পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্ত বিশ্বে দুই পরাশক্তির একটি সুস্পষ্ট বিরোধ রেখা ছিল, এখন তেমন নেই। ফলে ছোট কোনো ভুল পদক্ষেপ, ভুল তথ্য বা রাজনৈতিক হঠকারিতাই বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
তবে দ্বিমুখী একটি স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে এমনটা মনে করেন না হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অড আর্নে ওয়েস্ট্যাড। তাঁর মতে, ‘আজকের আন্তর্জাতিক রাজনীতি স্নায়ুযুদ্ধের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। আগের মতো দ্বিধাবিভক্ত (বাইপোলার) বিশ্ব আর নেই...চীন ক্রমেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে...রাশিয়া বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এক অতৃপ্ত সুযোগসন্ধানী...মতাদর্শ এখন আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান চালিকাশক্তি নয়।’
চীন, ইউরোপ, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক বিষয়েই একমত নয়, তবে পুঁজিবাদ ও বাজারব্যবস্থার মূল্য নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ নেই। চীন ও রাশিয়া—উভয়ই কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, যারা নামমাত্র প্রতিনিধিত্ব-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থার ভান করে। তবে তারা আর আগের মতো তাদের শাসনব্যবস্থা অন্যত্র রপ্তানি করতে চায় না, যেমনটা তারা স্নায়ুযুদ্ধের সময় করত। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র—যে দেশ অতীতে রাজনৈতিক মূল্যবোধ রপ্তানি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগ্রহী ছিল—ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অধীনে এখন তা থেকেও অনেকটা পিছিয়ে এসেছে।
ওয়েস্ট্যাড বলেন, ‘বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, তা স্নায়ুযুদ্ধ নয়...ইতিহাসকে যদি আমরা নীতিনির্ধারণে কাজে লাগাতে চাই, তাহলে আমাদের সাদৃশ্য খোঁজার পাশাপাশি পার্থক্যগুলো সম্পর্কেও সমানভাবে সচেতন থাকতে হবে।’
এ অবস্থায় বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধ নয়—বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতি, অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। ইউরোপের দেশগুলোর উচিত হবে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো, যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্বে স্থির থাকা, আর রাশিয়ার মতো দেশকে কূটনৈতিক চাপে রেখে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অন্যদিকে রাশিয়ার লক্ষ্য থাকবে—যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব যেন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নতজানু হয়ে পড়ে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বিশ্ব এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যেই আছে—যার রূপ, মাত্রা ও কৌশল আগের চেয়ে আলাদা, তবে পরিণতি কতটা গভীর হবে, তা নির্ভর করছে বিশ্বনেতাদের বিচক্ষণতা ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ওপর।
এ বিষয়ে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের গবেষক ইউজিন রুমার বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে কীভাবে আমরা রাশিয়াকে গত পঁচিশ বছরে বহুবার অংশীদার বলে ঘোষণা করার পরও শেষমেশ তার সঙ্গে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লাম। আমাদের নিজেদের অতীত কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে দেখতে হবে—আমরা সবকিছু ঠিকভাবে করেছি কি না, কোনো ভুল করেছি কি না, আর ভবিষ্যতে সেই ভুলগুলো কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়।’
তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট, দ্য আটলান্টিক ও রাশিয়া ম্যাটারস
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কে উত্তেজনা গত কয়েক বছরে নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া উত্তেজনা এখন শুধু সামরিক বা কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, তা ছড়িয়ে পড়েছে অর্থনীতি, প্রযুক্তি, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার মঞ্চেও। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকেই প্রশ্ন করছেন—নতুন কোনো কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ুযুদ্ধ ২.০ কি দরজায় কড়া নাড়ছে?
সম্প্রতি সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব দিমিত্রি মেদভেদেভের উত্তেজনাকর মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুটি নিউক্লিয়ার সাবমেরিন রাশিয়ার উপকূলে মোতায়েনের নির্দেশ দিলে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ একধরনের কৌশলগত সংকেত, যার উদ্দেশ্য রাশিয়াকে ভয় দেখানো, সরাসরি যুদ্ধ নয়। তবে দুই পরাশক্তির মধ্যকার উত্তেজনাকে স্নায়ুযুদ্ধের কল্পনায় রূপ দিতে এই ইঙ্গিত যথেষ্ট।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল—একদিকে মার্কিন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। কিন্তু বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে মূলত কৌশলগত আধিপত্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা কাজ করছে।
কিংস কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক ও বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞ লরেন্স ফ্রিডম্যান যেমনটি বলেছেন, বর্তমান উত্তেজনাকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ ২.০’ বলা যেতে পারে। তবে তাঁর মতে, এটি কোনোভাবেই প্রথম স্নায়ুযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি নয়। কারণ আজকের রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো পরাশক্তি নয়, বরং অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকা একটি দেশ।
ফ্রিডম্যান বলেন, ‘পারমাণবিক শক্তির ওপর জোর দেওয়া দুই স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যে একটি বড় মিল। তবে স্নায়ুযুদ্ধ ১.০ এবং ২.০–এর মধ্যে পার্থক্যগুলো অত্যন্ত গভীর। সবচেয়ে স্পষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো—রাশিয়া এখন অনেক দুর্বল অবস্থানে রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের তুলনায়।’
তাঁর মতে, প্রথম স্নায়ুযুদ্ধ ছিল এক বৈশ্বিক ব্যাপার। যদিও এটি ইউরোপে শুরু হয়েছিল, পরে তা ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ ২.০-এ রাশিয়ার মনোযোগ মূলত ইউরোপেই কেন্দ্রীভূত। সিরিয়া এর ব্যতিক্রম হিসেবে একটি বড় উদাহরণ। তিনি বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়ান ফেডারেশনে রূপ নেওয়ার ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে। প্রথম স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ব্লকের অর্থনীতির সঙ্গে বাকি বিশ্বের অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুবই সীমিত ছিল, জ্বালানি খাত ছাড়া।’
বর্তমানে চলমান স্নায়ুযুদ্ধ ২.০-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো, মস্কো আর কোনো আন্তর্জাতিক আদর্শভিত্তিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দাবি করে না। স্নায়ুযুদ্ধ ১.০ ছিল ইন্টারনেট-পূর্ব যুগের দ্বন্দ্ব। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ ২.০–এর অবয়ব তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটের প্রভাবের মধ্য দিয়ে।
তবে রাশিয়ার এই ‘পিছিয়ে থাকাকে’ অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। বর্তমানে রাশিয়া, চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়া মিলে একটি অঘোষিত বৈশ্বিক অক্ষ গঠন করছে, যাকে পশ্চিমাদের অনেকে বলছেন ‘Axis of Upheaval’ বা ‘বিপর্যয়ের অক্ষ’। এই জোটের লক্ষ্য পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া নিজেকে ইউরোপ ও পশ্চিমের বিরুদ্ধে একটি বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কৌশলগত বিভ্রান্তি, যা রাশিয়ার পক্ষে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দূত ও পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক জন বোলটন এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ধাঁচের বিচ্ছিন্ন কৌশল বড় কোনো বৈশ্বিক লক্ষ্য তৈরি করতে পারছে না, বরং মার্কিন নেতৃত্বকে দুর্বল করছে। এর ফলে রাশিয়া ও চীন প্রভাব বাড়াতে পারছে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায়।
জন বোলটনের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ভেঙে পড়ে, তখন পুরো বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা অনিশ্চয়তা ছিল—কী ঘটতে যাচ্ছে। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ বলেছিলেন ‘নতুন বিশ্বব্যবস্থার’ কথা। সে সময় মার্কিনরা ভেবেছিল, দুনিয়াজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কিন্তু তা আর হয়নি। অবশ্য, মার্কিনরা যেমনটা মনে করেছিল, রাশিয়া তাদের চাহিদামতো ‘ভালো হয়ে যাবে’ সেটাও হয়নি।
মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, ‘আরব দুনিয়ায় যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, তা আমরা আগেভাগে টের পাইনি। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লব কীভাবে পুরো অঞ্চলে “চরমপন্থার” বিস্তার ঘটাবে, সেটাও আঁচ করতে পারিনি। আবার ১৯৯০-এর দশকে আমরা চিন্তাও করিনি যে, চীন ভবিষ্যতে হুমকি হয়ে উঠবে। আমরা শুনেছিলাম, দেং জিয়াওপিং চীনাদের বলেছিলেন, “তোমাদের ক্ষমতা লুকিয়ে রাখো, সময়ের অপেক্ষা করো।” আমরা বুঝতেই পারিনি উনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন।’
ফলে, আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাশিয়া-চীন বলয়মুখী হওয়া, ব্রিকসের মতো জোটের মাধ্যমে পশ্চিমা আরোপিত বিশ্বব্যবস্থা চ্যালেঞ্জ করার আলোকে জন বোলটন মনে করছেন, ‘স্নায়ুযুদ্ধের অবসান মানেই ইতিহাসের অবসান, সংঘাত আর আমাদের জন্য আর কোনো হুমকি নয়—এই ভ্রান্ত ধারণাই আমাদের বড় ভুল করতে বাধ্য করেছে। রাশিয়া, চীন এবং ইসলামি জঙ্গিবাদের হুমকি সম্পর্কে আমরা ভুল হিসাব করেছি।’
অন্যদিকে রুশ অর্থনীতিও এই উত্তেজনার মূল্য দিচ্ছে। রয়টার্সের এক সমীক্ষা বলছে, রুশ মুদ্রা রুবল আগামী ১২ মাসে প্রায় ২০ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, আমদানি সংকট ও পুঁজিবাজারে অস্থিরতা এর কারণ। তবে এই আর্থিক চাপ রাশিয়াকে থামাতে পারেনি। বরং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একপ্রকার ‘ঘাতসহ’ অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছেন—যা তাঁকে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার মধ্যেও টিকে থাকতে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই স্নায়ুযুদ্ধ যদি সত্যিই শুরু হয়ে থাকে, তবে তা আগের মতো কেবল পারমাণবিক অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা নয়। বরং এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও সাইবার যুদ্ধকৌশল—এই নতুন ক্ষেত্রগুলোতে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএসআইএস বলছে, ১৯৮০-এর দশকে মার্কিন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে বড় ভূমিকা রেখেছিল। আজকের দিনে সেই প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা আরও তীব্র, আরও বহুমাত্রিক। এখন শুধু অস্ত্র তৈরি নয়, বরং তথ্যপ্রবাহ, বাণিজ্য নেটওয়ার্ক, এমনকি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের দিকেও নজর দিতে হচ্ছে।
রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি আর এই উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আইএনএফ বা স্টার্ট—এর মতো কৌশলগত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। নতুন কোনো চুক্তির সম্ভাবনাও নেই। এর ফলে পারমাণবিক প্রতিযোগিতা একটি অস্থির, অপ্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলা কঠিন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই দ্বন্দ্ব ‘প্রক্সি যুদ্ধের’ মাধ্যমে চলবে—যেমনটা এখন ইউক্রেনে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই স্নায়ুযুদ্ধ হবে অর্থনীতি ও প্রযুক্তির মাঠে—যেখানে এআই চালিত অস্ত্র, ডিজিটাল মুদ্রা ও ব্লকচেইন নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম মূল যুদ্ধক্ষেত্র।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—এই উত্তেজনার কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা নেই। আগে যেমন পূর্ব ও পশ্চিম দুই ভাগে বিভক্ত বিশ্বে দুই পরাশক্তির একটি সুস্পষ্ট বিরোধ রেখা ছিল, এখন তেমন নেই। ফলে ছোট কোনো ভুল পদক্ষেপ, ভুল তথ্য বা রাজনৈতিক হঠকারিতাই বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
তবে দ্বিমুখী একটি স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে এমনটা মনে করেন না হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অড আর্নে ওয়েস্ট্যাড। তাঁর মতে, ‘আজকের আন্তর্জাতিক রাজনীতি স্নায়ুযুদ্ধের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। আগের মতো দ্বিধাবিভক্ত (বাইপোলার) বিশ্ব আর নেই...চীন ক্রমেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে...রাশিয়া বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এক অতৃপ্ত সুযোগসন্ধানী...মতাদর্শ এখন আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান চালিকাশক্তি নয়।’
চীন, ইউরোপ, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র অনেক বিষয়েই একমত নয়, তবে পুঁজিবাদ ও বাজারব্যবস্থার মূল্য নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ নেই। চীন ও রাশিয়া—উভয়ই কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, যারা নামমাত্র প্রতিনিধিত্ব-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থার ভান করে। তবে তারা আর আগের মতো তাদের শাসনব্যবস্থা অন্যত্র রপ্তানি করতে চায় না, যেমনটা তারা স্নায়ুযুদ্ধের সময় করত। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র—যে দেশ অতীতে রাজনৈতিক মূল্যবোধ রপ্তানি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগ্রহী ছিল—ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অধীনে এখন তা থেকেও অনেকটা পিছিয়ে এসেছে।
ওয়েস্ট্যাড বলেন, ‘বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, তা স্নায়ুযুদ্ধ নয়...ইতিহাসকে যদি আমরা নীতিনির্ধারণে কাজে লাগাতে চাই, তাহলে আমাদের সাদৃশ্য খোঁজার পাশাপাশি পার্থক্যগুলো সম্পর্কেও সমানভাবে সচেতন থাকতে হবে।’
এ অবস্থায় বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধ নয়—বুদ্ধিদীপ্ত কূটনীতি, অভ্যন্তরীণ সংহতি এবং প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই ভবিষ্যৎ হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। ইউরোপের দেশগুলোর উচিত হবে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো, যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্বে স্থির থাকা, আর রাশিয়ার মতো দেশকে কূটনৈতিক চাপে রেখে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অন্যদিকে রাশিয়ার লক্ষ্য থাকবে—যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব যেন অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে নতজানু হয়ে পড়ে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বিশ্ব এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যেই আছে—যার রূপ, মাত্রা ও কৌশল আগের চেয়ে আলাদা, তবে পরিণতি কতটা গভীর হবে, তা নির্ভর করছে বিশ্বনেতাদের বিচক্ষণতা ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ওপর।
এ বিষয়ে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের গবেষক ইউজিন রুমার বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে কীভাবে আমরা রাশিয়াকে গত পঁচিশ বছরে বহুবার অংশীদার বলে ঘোষণা করার পরও শেষমেশ তার সঙ্গে একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়লাম। আমাদের নিজেদের অতীত কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে দেখতে হবে—আমরা সবকিছু ঠিকভাবে করেছি কি না, কোনো ভুল করেছি কি না, আর ভবিষ্যতে সেই ভুলগুলো কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়।’
তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট, দ্য আটলান্টিক ও রাশিয়া ম্যাটারস
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল—একদিকে মার্কিন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। কিন্তু বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে মূলত কৌশলগত আধিপত্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা কাজ করছে।
০৩ আগস্ট ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল—একদিকে মার্কিন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। কিন্তু বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে মূলত কৌশলগত আধিপত্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা কাজ করছে।
০৩ আগস্ট ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল—একদিকে মার্কিন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। কিন্তু বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে মূলত কৌশলগত আধিপত্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা কাজ করছে।
০৩ আগস্ট ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৯ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের টানাপোড়েন সরাসরি আগের স্নায়ুযুদ্ধের মতো নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিল—একদিকে মার্কিন পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। কিন্তু বর্তমান দ্বন্দ্বের পেছনে মূলত কৌশলগত আধিপত্য, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা কাজ করছে।
০৩ আগস্ট ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগে