Ajker Patrika

মিডল ইস্ট মনিটরের নিবন্ধ

গাজা যেন আরেক অশউইৎজ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে অনাহারে অপুষ্টির শিকার দুই ফিলিস্তিনি শিশু মোহাম্মদ ও জিনা। ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে অনাহারে অপুষ্টির শিকার দুই ফিলিস্তিনি শিশু মোহাম্মদ ও জিনা। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা এবং দেশটির ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী ঔদ্ধত্য এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখান থেকে আর পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অন্তহীন যুদ্ধ এখন হামলে পড়েছে দামেস্কে। রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে সিরিয়ায়। তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনার যেন কেউই নেই।

বিশ্ব গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা, বৈশ্বিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার মুখে নির্লিপ্ত আচরণ করে যাচ্ছে। দুঃখজনকভাবে একের পর এক ইসরায়েলি সরকারের প্রতি অনুগত অবস্থানে রয়ে গেছে। আর এটা করতে গিয়ে দেশটি নিজেদেরই প্রতিষ্ঠিত বহু মৌলিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক আইন জলাঞ্জলি দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্লজ্জ আচরণ গত ২১ মাসে গাজায় সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাত ধরে। তিনি তাঁর ‘ইসরায়েলপন্থী’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে সঙ্গে নিয়ে বারবার নেতানিয়াহুর চরমপন্থী ও বর্ণবাদী আচরণ প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন। এই পরিস্থিতির সবচেয়ে হাস্যকর দৃষ্টান্তগুলোর একটি হলো, ভাসমান একটি পিয়ারের নির্মাণকাজ। এটি করার উদ্দেশ্য ছিল—গাজা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার নয়—এমন ধারণা দেওয়া। প্রকৃত সাহায্য না দিয়ে এই প্রতীকী উদ্যোগ কেবলই ইসরায়েল আরোপিত দুর্ভিক্ষ ও অবরোধকে আরও সুসংহত করেছে, নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক চাপ থেকে নেতানিয়াহুকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। অথচ একই সঙ্গে গাজার ওপর ইসরায়েলের গণহত্যামূলক অবরোধ বহাল রাখারও সুযোগ দিয়েছে।

এই ভাসমান পিয়ার বা জেটি ছিল মূলত নেতানিয়াহুরই একটি ফাঁদ। আর বাইডেন সেই ফাঁদে কেবল পা-ই দেননি, সেখানে অর্থায়নও করেছেন। শুরু থেকেই এই প্রকল্প ছিল একটি প্রহসন। ৩২০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পের সঙ্গে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সমন্বয় কেমন হবে, তার পরিকল্পনা করতেই চলে গেছে কয়েক মাস। এরপর যখন এটি আংশিকভাবে কার্যকর হলো—একাধিক ফটোশুটের মাধ্যমে অন্তত তা-ই প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে—তার কিছু দিনের মধ্যেই যেন এটি ভূমধ্যসাগরের ঢেউয়ে তলিয়ে গেছে। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এর। এই পিয়ার কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল না, বরং ছিল নৈতিক বিপর্যয়।

যাই হোক, এই ভাসমান পিয়ার বা এখনকার গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বালকসুলভ নির্বুদ্ধিতা এবং নেতানিয়াহুর ধোঁকার এক অপূর্ব মিশ্রণ। এগুলো দেখায় যে, ওয়াশিংটন আসলে গাজাবাসীকে সহায়তা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা আসলে তা করছে না, সহায়তা করার ভান করছে মাত্র।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ইসরায়েলকে গাজাবাসীকে অনাহারে রাখার কৌশল চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ব বিবেককে চোখ বন্ধ করে রেখে শান্তি বোধ করার সুযোগও হয়তো দিয়েছে। ইসরায়েলকে গাজায় ত্রাণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে বাধ্য না করে বরং যুক্তরাষ্ট্র এক ফালতু নাটক চালিয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে।

ভাসমান পিয়ার যখন ডুবছিল, তখন বাইডেন ও জর্ডানের বাদশাহ আরেক নাটকের অবতারণা করেন। তাঁরা ‘মানবতার দূত’ সাজার ভঙ ধরে গাজায় বিমান থেকে ত্রাণসহায়তা ফেলার নাটক চালিয়ে যান কিছু দিন। তবে বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানির পর সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। যাই হোক, অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নিয়ে ইসরায়েল ও তার নপুংসক আরব সহযোগীরা আবারও গাজায় ত্রাণসহায়তা ফেলার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছে। কিন্তু এসব কৌশল মূলত ইসরায়েলকে তার নারকীয় ভূমি দখলমূলক কর্মকাণ্ডকে চালিয়ে যাওয়ারই সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধে কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না।

বিগত কয়েক দিনে গাজায় অনাহারে অন্তত ৫৭ জন মারা গেছে। অথচ বিপরীত চিত্র হলো, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, তাদের কাছে গাজার পুরো জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর মতো অন্তত তিন মাসের খাবার রয়েছে। কিন্তু তারপরও ইসরায়েল খাদ্যকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে যাচ্ছে। আর ইসরায়েলের এই হত্যাযজ্ঞে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে মূলত গাজায় খাদ্য প্রবেশ করতে না দিয়ে শিশুদের অনাহারে রাখছে।

যখন সবাই ভাবছে যে, গাজায় ত্রাণসহায়তা দেওয়ার জন্য পিয়ার নির্মাণ, বিমান থেকে খাবার ফেলা—কৃত্রিমতা বই আর কিছু নয়, তখনই ইসরায়েল চালু করে আরও এক চতুর পরিকল্পনা—গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। টানা চার মাসের অনাহার আর বোমাবর্ষণের পর এই প্রকল্প আনা হলো নতুন এক ধোঁকা হিসেবে। এ ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা ইসরায়েলের, আর অর্থ আগের মতোই যুক্তরাষ্ট্রের। এই প্রকল্পের লক্ষ্য গাজাবাসীর অনাহার ঘোচানো নয়, বরং আন্তর্জাতিক চাপ প্রশমিত করা। এটি আশ্চর্যের কিছু নয় যে, ট্রাম্পও বাইডেনের মতো, ইসরায়েলের প্রতি একই রকম অনুগত ভঙ্গিতে এই প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছেন।

তিন মাস চালু থাকার পর দেখা যাচ্ছে, জিএইচএফ আদতে ইসরায়েলের আরও একটি প্রাণঘাতী প্রতারণা। বেঁচে থাকার আশা জাগানো এই প্রকল্প এখন এক মরণফাঁদ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি—মানে প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ জন—জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছে। যারা এই মৃত্যুফাঁদ এড়িয়ে বাড়িতে ছিল, তাদের জন্য ছিল অনাহার। আর যারা ত্রাণ সংগ্রহে গিয়েছিল, তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিল ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি। আর এই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীই পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, তারাই আবার ত্রাণকেন্দ্র খুলছে, সেখানে যেতে বাধ্য করে ফিলিস্তিনিদের সেখানে গুলি করে মারছে।

মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত জিএইচএফ ইসরায়েলের হাতে তুলে দিয়েছে গাজায় খাদ্যসহায়তা নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। আর এখন দেখা যাচ্ছে, পানি সংগ্রহ করতে যাওয়া কিশোরীও টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। টিকে থাকার প্রতিটি মৌলিক উপাদান—খাবার, পানি, ওষুধকে ইসরায়েল অস্ত্রে পরিণত করেছে। এগুলো এমন অস্ত্র, যা দিয়ে মানুষকে অনাহারে মারা যায়, পানি থেকে বঞ্চিত করা যায়, ওষুধ আটকানো যায়, এমনকি একটি জাতিকে জিম্মি করে তাদের নিজ ভূমি থেকে ‘স্বেচ্ছায়’ বিতাড়নের পরিস্থিতি গড়ে তোলা যায়।

এই তথাকথিত হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের পর ইসরায়েল আরও একটি ‘অরওয়েলীয়’ প্রকল্প প্রকাশ করেছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান সিটির’ নামে। এর উদ্দেশ্য, গাজা উপত্যকার উত্তরাংশ থেকে ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে একটি প্রাচীরঘেরা শিবিরে রাখা, যেখানে প্রবেশ করা যাবে, কিন্তু বের হওয়া যাবে না। এই নতুন শিবিরকে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের মতো লোকেরাও ‘আধুনিক কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। এই ক্যাম্প মূলত গাজার এক-চতুর্থাংশ জনগণকে বন্দী করার পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি। এর আয়তন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক নাৎসি বন্দিশিবিরকেও ছাপিয়ে গেছে।

হিউম্যানিটারিয়ান সিটি বা মানবিক শহর—একটি বন্দিশিবিরকে এই নামে আখ্যা দেওয়া মূলত ইসরায়েলের ‘লিঙ্গুইস্টিক ওয়ার’ বা ভাষাগত যুদ্ধেরই অংশ। এই যুদ্ধে ভাষাকে অস্ত্রে পরিণত করেছে ইসরায়েল। তারা ফিলিস্তিনিদের না খাইয়ে মারে না, বরং তাদের জন্য আরোপ করে ‘ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ।’ তারা ঘেটো বানায় না, তৈরি করে তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’—যেখানে মূলত ফিলিস্তিনিদের ঘেটোর মধ্যেই বন্দী করার বাস্তবতা প্রকাশ করা হয়। ইসরায়েল সরাসরি জাতিগত নির্মূলীকরণে অংশ নেয় না, বরং দেয় ‘স্বেচ্ছায়’ দেশত্যাগের বিকল্প। এখানে ইসরায়েল গণবিচ্যুতি ঘটায় না, বরং প্রস্তাব দেয় একটি তথাকথিত ‘মানবিক শহর’ গড়ার।

ইসরায়েল এই ভাষার ভেলকি দেখাতে পারে একটাই কারণে। সেটি হলো—ওয়াশিংটনে আমেরিকান রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এআইপিএসি বা আমেরিকান-ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি। ইসরায়েলপন্থী এই লবিং গ্রুপে প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা। এই কমিটি ইহুদি রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করে, বিদেশি সাহায্য ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার মতো বিষয়গুলোতে কংগ্রেসে লবি করে এবং উভয় জাতির জন্য উপকারী নীতির পক্ষে লবিং করে।

ইসরায়েল যখন এই ভাষা সন্ত্রাস চালিয়ে যায়, তখনই বিশ্ব শক্তিগুলো কেবল ভান করে যেন, তারা কিছু একটা করছে। ফ্রান্স দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে প্রতীকী স্বীকৃতির ইঙ্গিত দেয় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিবৃতি দেয় কিছু সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিণতির কথা বলে, যা আদতে অর্থহীন। ব্রিটেন সর্বদা কূটকৌশলের ধারা বজায় রেখে কেবল ইসরায়েলকে পরামর্শ দেয়, যেন তারা ‘মানবিকভাবে’ যুদ্ধ চালায় এবং যেন তারা পশ্চিম তীরে তাণ্ডব চালানো ইসরায়েলি সেটলার সন্ত্রাসীদের ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখে। এসব কোনো কঠিন বার্তা নয়, বরং ফাঁপা, নিষ্ক্রিয় অঙ্গীকার—যেগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলকে দায়মুক্তি দিয়ে যাওয়ার সুযোগ রাখা।

আর আরব বিশ্ব? যেন তারা ভূতের মতো নীরব এবং সমানভাবে দায়ী। তারা বিভক্ত তিনটি নোংরা গোষ্ঠীতে। পশ্চিমে মিসর কার্যত গাজা অবরোধের সক্রিয় অংশীদার। পূর্ব দিকে জর্ডান ও উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলের বাণিজ্যিক ও সামরিক সুরক্ষাবলয়। আর রয়েছে সেই রাষ্ট্রগুলো—যারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পায়ে অর্থের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে। আর আরব দেশগুলো এসব করছে ঠিক তখনই, যখন গাজায় আগুন জ্বলছে আর পশ্চিম তীর টুকরো টুকরো করে ফেলা হচ্ছে একের পর এক ইহুদি বসতি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ একচেটিয়া সড়ক স্থাপনের মাধ্যমে।

এই সম্মিলিত নীরবতা—এই মঞ্চস্থ ক্ষোভ, যেখানে সরাসরি নিন্দাও অনুপস্থিত—এটা নিছক উদাসীনতা নয়, বরং ষড়যন্ত্র। এটা সেই নাৎসি মতাদর্শেরই পুনরুত্থান—শুধু পতাকা আর পোশাক বদলে গেছে। গণহত্যার কলাকৌশল হুবহু অনুসরণ করছে না ঠিকই, কিন্তু যে নৈতিক ঔদাসীন্য এমন বর্বরতা সম্ভব করে তোলে, সেই একই নির্মম নির্লিপ্ততার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখছি।

আমি একজন ফিলিস্তিনি হিসেবে ক্ষুব্ধ। কিন্তু তারচেয়েও বেশি ক্ষুব্ধ একজন আমেরিকান ও মানুষ হিসেবে। পুরো বিশ্ব যখন ‘মানবিক শহর’ নামের একটি নতুন বন্দিশিবির গঠনের সাক্ষী হয়, তখন কেবল আপত্তির অভিনয় করে চলে—এটা আমাদের সবার জন্য অপমানজনক। আমি ভাবি, যদি কোনো নাৎসি একসময় অশউইৎজকে ‘বিনোদনকেন্দ্র’ বলত, তখন বিশ্ব—বিশেষ করে ইহুদিরা—কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাত?

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত