আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে তাঁর সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছেন এবং এটিকে ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। তবে এ রকম কথা তিনি আগেও বলেছেন, তাঁর আগের প্রেসিডেন্টরাও বলেছেন। আশা করি, এবার তাঁর কথাটা সত্যি হবে, কিন্তু খুব বেশি বাজি ধরতে রাজি নই।
এই যুদ্ধবিরতির পরও দুটি বড় প্রশ্ন ঝুলে আছে। প্রথম প্রশ্নটা স্পষ্ট—‘এই চুক্তি টিকবে তো?’ আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি আসলে প্রথমটার উত্তর নির্ধারণ করে। প্রশ্নটি হলো—ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের বাকি দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের পরিবর্তন কি এমন পথে এগোচ্ছে, যাতে ফিলিস্তিনে বহু প্রতীক্ষিত স্থায়ী শান্তি সম্ভব হয়?
প্রথম প্রশ্নের জবাবে আশাবাদী হওয়া কঠিন। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল কট্টর ইসরায়েলপন্থী মধ্যস্থতাকারী। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্পের বন্ধু স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার অন্যতম এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপটি আসলে একধরনের আলটিমেটামের মতো, আলোচনার ফল নয়। এতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীদের কিছু চরম দাবি, যেমন গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ প্রত্যাখ্যান করা হলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু প্রায় অসম্ভব শর্ত, যেমন হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করা, সব টানেল ধ্বংস করা, তাদের রাজনীতির বাইরে রাখা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের কিন্তু ‘অস্পষ্ট সংস্কার’ করা। এখনো গঠিত হয়নি, কীভাবে গঠিত হবে তা-ও স্পষ্ট নয়—এমন একটি ‘পর্যবেক্ষণ সংস্থা’ নজরদারি করবে কে চুক্তি মানছে আর কে মানছে না। এই পর্যবেক্ষণ সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবে ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ।’
সবচেয়ে বড় কথা, এই চুক্তিতে কঠিন রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভবিষ্যতের কোনো এক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান দখল প্রসঙ্গে এই চুক্তি একেবারেই নীরব। ফলে ইসরায়েলের জন্য যে কোনো সময় ফিলিস্তিনিরা শর্ত মানেনি অভিযোগ তুলে আবার দমননীতি জোরদার করা বা সহিংসতা শুরু করার সুযোগ সব সময় খোলা থাকবে।
তাই এই পরিকল্পনা সফল হবে বলে বিশ্বাস করতে হলে ধরে নিতে হবে যে, বহির্বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ বজায় রাখবে, যাতে তারা এই চুক্তি রক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ন্যায়ভিত্তিক ও স্থায়ী শান্তির পথে এগোয়। ট্রাম্প হয়তো এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর টালবাহানা দেখে ক্লান্ত হয়ে তাঁকে এই অস্পষ্ট চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। সেটাই প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে ইসরায়েলের ওপর কতটা প্রভাব খাটাতে পারেন।
কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই যে নেতানিয়াহু, তাঁর কট্টর ডানপন্থী সমর্থক কিংবা ইসরায়েলি সমাজ সত্যিকারের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বা এক রাষ্ট্রীয় কনফেডারেশনের কোনো রূপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এমনকি তারা যদি নিশ্চিতও হন যে হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো পুরোপুরি প্রান্তিক হয়ে গেছে; তবুও হয়তো তারা মানবে না। ট্রাম্পের কুখ্যাত স্বল্প মনোযোগ, খামখেয়ালি ব্যক্তিত্ব এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে অনাগ্রহের কথা বিবেচনা করলে সত্যিই কি কেউ বিশ্বাস করে যে তিনি এই উদ্যোগে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর মনোযোগ বা অনুসরণ বজায় রাখবেন?
সমস্যাটা কেবল ট্রাম্প নন। অতীতে বাইরের শক্তিগুলো প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোকে সাময়িকভাবে লড়াই বন্ধে রাজি করিয়েছে—যেমন ১৯৫৬,১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল, কিংবা যুক্তরাষ্ট্র পরে বহুবার করেছে। কিন্তু তারা কখনোই যথেষ্ট সময়, মনোযোগ, রাজনৈতিক পুঁজি বা নিজেদের পূর্ণ প্রভাব ব্যবহার করে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণেই অসলো চুক্তি, ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলন, ২০০৭ সালের আনাপোলিস সম্মেলন, ব্যর্থ মধ্যপ্রাচ্য কোয়ার্টেট উদ্যোগ এবং অন্যান্য বহুল প্রচারিত শান্তি উদ্যোগগুলো সবই ব্যর্থ হয়েছে।
এই অবস্থায় যদি স্থায়ী মার্কিন চাপই এই অঞ্চলে শান্তির পূর্বশর্ত হয়, তাহলে পরের প্রশ্নটি হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কি এমনভাবে বদলে যাচ্ছে, যা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অবস্থান যাই হোক না কেন, শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস আন্তর্জাতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক প্রতিক্রিয়াও দেশটির ভাবমূর্তিতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে—প্রতীকী পদক্ষেপ হলেও এটি মনোভাবের পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ইসরায়েলের আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাগুলোও এখন স্থগিত।
যুক্তরাষ্ট্রে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে নাটকীয় পরিবর্তন। আগের তুলনায় এখন বেশি সংখ্যক আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে। ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমতুল্য, আর মাত্র ২২ শতাংশ বলেন, সেই পদক্ষেপ ন্যায্য। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সবচেয়ে বেশি কমেছে ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে। তবে বিশিষ্ট রক্ষণশীল নেতারাও—যেমন স্টিভ ব্যানন, টাকার কার্লসন এবং কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন—ইসরায়েল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা বেশি উদ্বিগ্ন মানবাধিকার ইস্যুতে, আর রক্ষণশীল সমালোচকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্তভাবে এক ক্রমবর্ধমানহারে অবাধ্য হতে থাকা ইসরায়েলকে সমর্থন করা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিশেষ সম্পর্কের প্রত্যক্ষ মূল্য বহু দিন ধরেই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় বিদেশি গ্রহীতা ইসরায়েল। দেশটির তথাকথিত ‘গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখার আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকারও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ইসরায়েল একটি সমৃদ্ধ দেশ—মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের ১৬ তম স্থানে দেশটি এবং তাদের রয়েছে বিপুল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার। সাধারণত দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পায়। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা সবটাই গিয়েছে মার্কিন করদাতাদের পকেট থেকে।
এই নিঃশর্ত সহায়তাই যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে অজনপ্রিয় করে তুলেছে। যদিও সেসব দেশের শাসকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য অস্ত্র, বিনিয়োগ ও বাজার প্রবেশাধিকারের আশায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রতি এই অন্ধ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ বা নৈতিক প্রভাবকে দুর্বল করে দেয়। কারণ, এটি ওয়াশিংটনের মানবাধিকার রক্ষার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নৈতিকভাবে রাশিয়া বা চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই ভণ্ডামি হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তাদের অগ্রাধিকারে এসব নৈতিক আদর্শের স্থান কম, তবে এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই বিশেষ সম্পর্কের আরেকটি দিক হলো—এক কোটি মানুষেরও কম জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের রাজনৈতিক জীবনে অযথা বিপুল প্রভাব বিস্তার করছে। ভাবুন, ইসরায়েল নামের এই ছোট দেশটিকে নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে যত খবর, বিশ্লেষণ, আলোচনা হয়, তার তুলনায় কত কম জায়গা পায় বড় ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো—যেমন ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া বা ব্রাজিল। ইসরায়েলের সমান জনসংখ্যা ও জিডিপির দেশ অস্ট্রিয়া, যেখানে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সদর দপ্তর স্থাপন করেছে—তবু সে দেশের খবর মার্কিনদের কানে পৌঁছায় কদাচিৎ। আবার দেখুন, কত থিংকট্যাংক ও লবিং গ্রুপ শুধু এই একটি দেশকে ঘিরে কাজ করছে কিংবা মার্কিন রাজনীতিকেরা ইসরায়েলের বিষয়ে কতটা সময় ব্যয় করেন।
এমনকি এই ছোট দেশটিকে ঘিরে থাকা বিষয়গুলো প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরেও প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সাম্প্রতিক হামলার পেছনে নানা কারণ থাকলেও, গাজায় গণহত্যা ও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রতিবাদে (যেখানে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন) ছাত্রদের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগ এই আক্রমণকে আরও তীব্র করেছে। একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এই আঘাতের পেছনে ইসরায়েলকে সমালোচনা থেকে রক্ষা করার একতরফা ইচ্ছাই একমাত্র কারণ নয়, তবে সেটিও নিঃসন্দেহে একটি বড় উপাদান।
শেষ পর্যন্ত, ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের যে পরিমাণ সময় ও মনোযোগ ব্যয় করতে হয়, সেটিও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টার নিজে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির আলোচনায়। বিল ক্লিনটনও একইভাবে চেষ্টা করেছিলেন। এর বাইরেও তাঁরা এই বিষয়ে অসংখ্য ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন—তিনজনই ইসরায়েল-সংক্রান্ত বিষয়েই দিন বা সপ্তাহ পার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চার বছরে ১৬ বার ইসরায়েল সফর করেছেন, অথচ পুরো সময়ে আফ্রিকা মহাদেশে গেছেন মাত্র চারবার। এমনকি ট্রাম্পও চাইলেও ইসরায়েল নীতি থেকে পুরোপুরি নিজেকে দূরে রাখতে বা তা অধস্তনদের হাতে ছেড়ে দিতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট, তাঁর উপদেষ্টা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা এই একটি দেশকে ঘিরে যত সময় ব্যয় করেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য সমস্যাগুলোয় ব্যয় করা সম্ভব হতো।
এ কারণেই আমি ও আরও অনেকে বারবার আহ্বান জানিয়েছি—যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলা। সেই সম্পর্ক হবে ইসরায়েলের আকার, কৌশলগত গুরুত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে ওয়াশিংটন আর ভান করবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। ইসরায়েল এমন কিছু করলে যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কাম্য, তাহলে তারা আমেরিকার সমর্থন পাবে। কিন্তু যদি এমন কিছু করে যা যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের বিরুদ্ধে যায়—যেমন দখলকৃত ভূখণ্ডে নতুন বসতি স্থাপন—তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়বে।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ইসরায়েল ‘স্বাভাবিক দেশ’ নয়, তাই স্বাভাবিক সম্পর্কের ধারণাটাই অর্থহীন। কারণ হিসেবে তারা বলবেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের ঐতিহাসিক পটভূমি, খ্রিষ্টানদের দীর্ঘ ও করুণ ইহুদিবিদ্বেষ, হলোকাস্টের উত্তরাধিকার আর মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সংঘাতপূর্ণ বাস্তবতা। হয়তো তাই। কিন্তু ২০২৫ সালে ইসরায়েল যেভাবে ‘অস্বাভাবিক’, সেটাই আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্ধ সমর্থন কমানোর কারণ, বাড়ানোর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়ান লাস্টিক সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল এখন ক্রমশ ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক এজেকিয়েল দ্ররের বর্ণনা অনুযায়ী একটি ‘পাগল রাষ্ট্রে’ পরিণত হচ্ছে। দ্রর এমন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যও বর্ণনা করেছেন। এমন রাষ্ট্র—১) আগ্রাসী ও ক্ষতিকর লক্ষ্য অনুসরণ করে,২) সেই লক্ষ্য অর্জনে চরম আদর্শিক অন্ধত্ব দেখায়,৩) নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব করে, অথচ অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হয় না,৪) লক্ষ্য অর্জনে যৌক্তিক কৌশল বেছে নিতে পারে এবং ৫) তা বাস্তবায়নের সামর্থ্যও রাখে।
লাস্টিকের মতে, ইসরায়েলের এই বিপজ্জনক গতিপথের একটি প্রধান কারণ হলো মার্কিন প্রশাসনগুলোর কাছ থেকে প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়া—যা এসেছে ‘ইসরায়েল লবির অতিমাত্রায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ক্ষমতা’ থেকে। এই অবস্থান কি ‘ইসরায়েলবিরোধী?’ মোটেও নয়। বরং নিঃশর্ত সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ইসরায়েলের জন্য তেমনই ধ্বংসাত্মক। আজ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিসরে সমর্থন হারাচ্ছে, অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত হচ্ছে, আরও বেশি করে উগ্র ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে এবং দক্ষ, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম নাগরিকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
একটি ‘ইতিবাচক স্বাভাবিক’ নীতিই দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—দুই দেশের জন্য ভালো হবে। যদিও এতে এআইপ্যাক, জায়নিস্ট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা, ক্রিশ্চিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েল এবং সেই সব সংগঠনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে—যারা বছরের পর বছর ‘বিশেষ সম্পর্ক’ টিকিয়ে রেখেছে, ইসরায়েলকে আজকের দুরবস্থায় নিয়ে এসেছে, এবং ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মানুষের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, তা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে। সংক্ষেপে, যদি কেউ স্থায়ী শান্তি চায়—তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘আরও স্বাভাবিক’ হতে হবে।
লেখক: স্টিফেন মার্টিন ওয়াল্ট, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে তাঁর সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছেন এবং এটিকে ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। তবে এ রকম কথা তিনি আগেও বলেছেন, তাঁর আগের প্রেসিডেন্টরাও বলেছেন। আশা করি, এবার তাঁর কথাটা সত্যি হবে, কিন্তু খুব বেশি বাজি ধরতে রাজি নই।
এই যুদ্ধবিরতির পরও দুটি বড় প্রশ্ন ঝুলে আছে। প্রথম প্রশ্নটা স্পষ্ট—‘এই চুক্তি টিকবে তো?’ আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি আসলে প্রথমটার উত্তর নির্ধারণ করে। প্রশ্নটি হলো—ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের বাকি দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের পরিবর্তন কি এমন পথে এগোচ্ছে, যাতে ফিলিস্তিনে বহু প্রতীক্ষিত স্থায়ী শান্তি সম্ভব হয়?
প্রথম প্রশ্নের জবাবে আশাবাদী হওয়া কঠিন। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল কট্টর ইসরায়েলপন্থী মধ্যস্থতাকারী। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্পের বন্ধু স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার অন্যতম এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপটি আসলে একধরনের আলটিমেটামের মতো, আলোচনার ফল নয়। এতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীদের কিছু চরম দাবি, যেমন গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ প্রত্যাখ্যান করা হলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু প্রায় অসম্ভব শর্ত, যেমন হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করা, সব টানেল ধ্বংস করা, তাদের রাজনীতির বাইরে রাখা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের কিন্তু ‘অস্পষ্ট সংস্কার’ করা। এখনো গঠিত হয়নি, কীভাবে গঠিত হবে তা-ও স্পষ্ট নয়—এমন একটি ‘পর্যবেক্ষণ সংস্থা’ নজরদারি করবে কে চুক্তি মানছে আর কে মানছে না। এই পর্যবেক্ষণ সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবে ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ।’
সবচেয়ে বড় কথা, এই চুক্তিতে কঠিন রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভবিষ্যতের কোনো এক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান দখল প্রসঙ্গে এই চুক্তি একেবারেই নীরব। ফলে ইসরায়েলের জন্য যে কোনো সময় ফিলিস্তিনিরা শর্ত মানেনি অভিযোগ তুলে আবার দমননীতি জোরদার করা বা সহিংসতা শুরু করার সুযোগ সব সময় খোলা থাকবে।
তাই এই পরিকল্পনা সফল হবে বলে বিশ্বাস করতে হলে ধরে নিতে হবে যে, বহির্বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ বজায় রাখবে, যাতে তারা এই চুক্তি রক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ন্যায়ভিত্তিক ও স্থায়ী শান্তির পথে এগোয়। ট্রাম্প হয়তো এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর টালবাহানা দেখে ক্লান্ত হয়ে তাঁকে এই অস্পষ্ট চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। সেটাই প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে ইসরায়েলের ওপর কতটা প্রভাব খাটাতে পারেন।
কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই যে নেতানিয়াহু, তাঁর কট্টর ডানপন্থী সমর্থক কিংবা ইসরায়েলি সমাজ সত্যিকারের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বা এক রাষ্ট্রীয় কনফেডারেশনের কোনো রূপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এমনকি তারা যদি নিশ্চিতও হন যে হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো পুরোপুরি প্রান্তিক হয়ে গেছে; তবুও হয়তো তারা মানবে না। ট্রাম্পের কুখ্যাত স্বল্প মনোযোগ, খামখেয়ালি ব্যক্তিত্ব এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে অনাগ্রহের কথা বিবেচনা করলে সত্যিই কি কেউ বিশ্বাস করে যে তিনি এই উদ্যোগে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর মনোযোগ বা অনুসরণ বজায় রাখবেন?
সমস্যাটা কেবল ট্রাম্প নন। অতীতে বাইরের শক্তিগুলো প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোকে সাময়িকভাবে লড়াই বন্ধে রাজি করিয়েছে—যেমন ১৯৫৬,১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল, কিংবা যুক্তরাষ্ট্র পরে বহুবার করেছে। কিন্তু তারা কখনোই যথেষ্ট সময়, মনোযোগ, রাজনৈতিক পুঁজি বা নিজেদের পূর্ণ প্রভাব ব্যবহার করে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণেই অসলো চুক্তি, ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলন, ২০০৭ সালের আনাপোলিস সম্মেলন, ব্যর্থ মধ্যপ্রাচ্য কোয়ার্টেট উদ্যোগ এবং অন্যান্য বহুল প্রচারিত শান্তি উদ্যোগগুলো সবই ব্যর্থ হয়েছে।
এই অবস্থায় যদি স্থায়ী মার্কিন চাপই এই অঞ্চলে শান্তির পূর্বশর্ত হয়, তাহলে পরের প্রশ্নটি হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কি এমনভাবে বদলে যাচ্ছে, যা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অবস্থান যাই হোক না কেন, শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস আন্তর্জাতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক প্রতিক্রিয়াও দেশটির ভাবমূর্তিতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে—প্রতীকী পদক্ষেপ হলেও এটি মনোভাবের পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ইসরায়েলের আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাগুলোও এখন স্থগিত।
যুক্তরাষ্ট্রে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে নাটকীয় পরিবর্তন। আগের তুলনায় এখন বেশি সংখ্যক আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে। ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমতুল্য, আর মাত্র ২২ শতাংশ বলেন, সেই পদক্ষেপ ন্যায্য। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সবচেয়ে বেশি কমেছে ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে। তবে বিশিষ্ট রক্ষণশীল নেতারাও—যেমন স্টিভ ব্যানন, টাকার কার্লসন এবং কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন—ইসরায়েল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা বেশি উদ্বিগ্ন মানবাধিকার ইস্যুতে, আর রক্ষণশীল সমালোচকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্তভাবে এক ক্রমবর্ধমানহারে অবাধ্য হতে থাকা ইসরায়েলকে সমর্থন করা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিশেষ সম্পর্কের প্রত্যক্ষ মূল্য বহু দিন ধরেই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় বিদেশি গ্রহীতা ইসরায়েল। দেশটির তথাকথিত ‘গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখার আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকারও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ইসরায়েল একটি সমৃদ্ধ দেশ—মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের ১৬ তম স্থানে দেশটি এবং তাদের রয়েছে বিপুল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার। সাধারণত দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পায়। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা সবটাই গিয়েছে মার্কিন করদাতাদের পকেট থেকে।
এই নিঃশর্ত সহায়তাই যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে অজনপ্রিয় করে তুলেছে। যদিও সেসব দেশের শাসকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য অস্ত্র, বিনিয়োগ ও বাজার প্রবেশাধিকারের আশায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রতি এই অন্ধ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ বা নৈতিক প্রভাবকে দুর্বল করে দেয়। কারণ, এটি ওয়াশিংটনের মানবাধিকার রক্ষার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নৈতিকভাবে রাশিয়া বা চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই ভণ্ডামি হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তাদের অগ্রাধিকারে এসব নৈতিক আদর্শের স্থান কম, তবে এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই বিশেষ সম্পর্কের আরেকটি দিক হলো—এক কোটি মানুষেরও কম জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের রাজনৈতিক জীবনে অযথা বিপুল প্রভাব বিস্তার করছে। ভাবুন, ইসরায়েল নামের এই ছোট দেশটিকে নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে যত খবর, বিশ্লেষণ, আলোচনা হয়, তার তুলনায় কত কম জায়গা পায় বড় ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো—যেমন ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া বা ব্রাজিল। ইসরায়েলের সমান জনসংখ্যা ও জিডিপির দেশ অস্ট্রিয়া, যেখানে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সদর দপ্তর স্থাপন করেছে—তবু সে দেশের খবর মার্কিনদের কানে পৌঁছায় কদাচিৎ। আবার দেখুন, কত থিংকট্যাংক ও লবিং গ্রুপ শুধু এই একটি দেশকে ঘিরে কাজ করছে কিংবা মার্কিন রাজনীতিকেরা ইসরায়েলের বিষয়ে কতটা সময় ব্যয় করেন।
এমনকি এই ছোট দেশটিকে ঘিরে থাকা বিষয়গুলো প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরেও প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সাম্প্রতিক হামলার পেছনে নানা কারণ থাকলেও, গাজায় গণহত্যা ও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রতিবাদে (যেখানে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন) ছাত্রদের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগ এই আক্রমণকে আরও তীব্র করেছে। একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এই আঘাতের পেছনে ইসরায়েলকে সমালোচনা থেকে রক্ষা করার একতরফা ইচ্ছাই একমাত্র কারণ নয়, তবে সেটিও নিঃসন্দেহে একটি বড় উপাদান।
শেষ পর্যন্ত, ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের যে পরিমাণ সময় ও মনোযোগ ব্যয় করতে হয়, সেটিও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টার নিজে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির আলোচনায়। বিল ক্লিনটনও একইভাবে চেষ্টা করেছিলেন। এর বাইরেও তাঁরা এই বিষয়ে অসংখ্য ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন—তিনজনই ইসরায়েল-সংক্রান্ত বিষয়েই দিন বা সপ্তাহ পার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চার বছরে ১৬ বার ইসরায়েল সফর করেছেন, অথচ পুরো সময়ে আফ্রিকা মহাদেশে গেছেন মাত্র চারবার। এমনকি ট্রাম্পও চাইলেও ইসরায়েল নীতি থেকে পুরোপুরি নিজেকে দূরে রাখতে বা তা অধস্তনদের হাতে ছেড়ে দিতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট, তাঁর উপদেষ্টা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা এই একটি দেশকে ঘিরে যত সময় ব্যয় করেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য সমস্যাগুলোয় ব্যয় করা সম্ভব হতো।
এ কারণেই আমি ও আরও অনেকে বারবার আহ্বান জানিয়েছি—যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলা। সেই সম্পর্ক হবে ইসরায়েলের আকার, কৌশলগত গুরুত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে ওয়াশিংটন আর ভান করবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। ইসরায়েল এমন কিছু করলে যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কাম্য, তাহলে তারা আমেরিকার সমর্থন পাবে। কিন্তু যদি এমন কিছু করে যা যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের বিরুদ্ধে যায়—যেমন দখলকৃত ভূখণ্ডে নতুন বসতি স্থাপন—তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়বে।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ইসরায়েল ‘স্বাভাবিক দেশ’ নয়, তাই স্বাভাবিক সম্পর্কের ধারণাটাই অর্থহীন। কারণ হিসেবে তারা বলবেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের ঐতিহাসিক পটভূমি, খ্রিষ্টানদের দীর্ঘ ও করুণ ইহুদিবিদ্বেষ, হলোকাস্টের উত্তরাধিকার আর মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সংঘাতপূর্ণ বাস্তবতা। হয়তো তাই। কিন্তু ২০২৫ সালে ইসরায়েল যেভাবে ‘অস্বাভাবিক’, সেটাই আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্ধ সমর্থন কমানোর কারণ, বাড়ানোর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়ান লাস্টিক সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল এখন ক্রমশ ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক এজেকিয়েল দ্ররের বর্ণনা অনুযায়ী একটি ‘পাগল রাষ্ট্রে’ পরিণত হচ্ছে। দ্রর এমন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যও বর্ণনা করেছেন। এমন রাষ্ট্র—১) আগ্রাসী ও ক্ষতিকর লক্ষ্য অনুসরণ করে,২) সেই লক্ষ্য অর্জনে চরম আদর্শিক অন্ধত্ব দেখায়,৩) নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব করে, অথচ অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হয় না,৪) লক্ষ্য অর্জনে যৌক্তিক কৌশল বেছে নিতে পারে এবং ৫) তা বাস্তবায়নের সামর্থ্যও রাখে।
লাস্টিকের মতে, ইসরায়েলের এই বিপজ্জনক গতিপথের একটি প্রধান কারণ হলো মার্কিন প্রশাসনগুলোর কাছ থেকে প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়া—যা এসেছে ‘ইসরায়েল লবির অতিমাত্রায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ক্ষমতা’ থেকে। এই অবস্থান কি ‘ইসরায়েলবিরোধী?’ মোটেও নয়। বরং নিঃশর্ত সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ইসরায়েলের জন্য তেমনই ধ্বংসাত্মক। আজ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিসরে সমর্থন হারাচ্ছে, অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত হচ্ছে, আরও বেশি করে উগ্র ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে এবং দক্ষ, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম নাগরিকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
একটি ‘ইতিবাচক স্বাভাবিক’ নীতিই দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—দুই দেশের জন্য ভালো হবে। যদিও এতে এআইপ্যাক, জায়নিস্ট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা, ক্রিশ্চিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েল এবং সেই সব সংগঠনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে—যারা বছরের পর বছর ‘বিশেষ সম্পর্ক’ টিকিয়ে রেখেছে, ইসরায়েলকে আজকের দুরবস্থায় নিয়ে এসেছে, এবং ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মানুষের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, তা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে। সংক্ষেপে, যদি কেউ স্থায়ী শান্তি চায়—তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘আরও স্বাভাবিক’ হতে হবে।
লেখক: স্টিফেন মার্টিন ওয়াল্ট, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে তাঁর সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছেন এবং এটিকে ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। তবে এ রকম কথা তিনি আগেও বলেছেন, তাঁর আগের প্রেসিডেন্টরাও বলেছেন। আশা করি, এবার তাঁর কথাটা সত্যি হবে, কিন্তু খুব বেশি বাজি ধরতে রাজি নই।
এই যুদ্ধবিরতির পরও দুটি বড় প্রশ্ন ঝুলে আছে। প্রথম প্রশ্নটা স্পষ্ট—‘এই চুক্তি টিকবে তো?’ আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি আসলে প্রথমটার উত্তর নির্ধারণ করে। প্রশ্নটি হলো—ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের বাকি দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের পরিবর্তন কি এমন পথে এগোচ্ছে, যাতে ফিলিস্তিনে বহু প্রতীক্ষিত স্থায়ী শান্তি সম্ভব হয়?
প্রথম প্রশ্নের জবাবে আশাবাদী হওয়া কঠিন। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল কট্টর ইসরায়েলপন্থী মধ্যস্থতাকারী। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্পের বন্ধু স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার অন্যতম এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপটি আসলে একধরনের আলটিমেটামের মতো, আলোচনার ফল নয়। এতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীদের কিছু চরম দাবি, যেমন গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ প্রত্যাখ্যান করা হলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু প্রায় অসম্ভব শর্ত, যেমন হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করা, সব টানেল ধ্বংস করা, তাদের রাজনীতির বাইরে রাখা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের কিন্তু ‘অস্পষ্ট সংস্কার’ করা। এখনো গঠিত হয়নি, কীভাবে গঠিত হবে তা-ও স্পষ্ট নয়—এমন একটি ‘পর্যবেক্ষণ সংস্থা’ নজরদারি করবে কে চুক্তি মানছে আর কে মানছে না। এই পর্যবেক্ষণ সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবে ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ।’
সবচেয়ে বড় কথা, এই চুক্তিতে কঠিন রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভবিষ্যতের কোনো এক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান দখল প্রসঙ্গে এই চুক্তি একেবারেই নীরব। ফলে ইসরায়েলের জন্য যে কোনো সময় ফিলিস্তিনিরা শর্ত মানেনি অভিযোগ তুলে আবার দমননীতি জোরদার করা বা সহিংসতা শুরু করার সুযোগ সব সময় খোলা থাকবে।
তাই এই পরিকল্পনা সফল হবে বলে বিশ্বাস করতে হলে ধরে নিতে হবে যে, বহির্বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ বজায় রাখবে, যাতে তারা এই চুক্তি রক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ন্যায়ভিত্তিক ও স্থায়ী শান্তির পথে এগোয়। ট্রাম্প হয়তো এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর টালবাহানা দেখে ক্লান্ত হয়ে তাঁকে এই অস্পষ্ট চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। সেটাই প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে ইসরায়েলের ওপর কতটা প্রভাব খাটাতে পারেন।
কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই যে নেতানিয়াহু, তাঁর কট্টর ডানপন্থী সমর্থক কিংবা ইসরায়েলি সমাজ সত্যিকারের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বা এক রাষ্ট্রীয় কনফেডারেশনের কোনো রূপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এমনকি তারা যদি নিশ্চিতও হন যে হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো পুরোপুরি প্রান্তিক হয়ে গেছে; তবুও হয়তো তারা মানবে না। ট্রাম্পের কুখ্যাত স্বল্প মনোযোগ, খামখেয়ালি ব্যক্তিত্ব এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে অনাগ্রহের কথা বিবেচনা করলে সত্যিই কি কেউ বিশ্বাস করে যে তিনি এই উদ্যোগে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর মনোযোগ বা অনুসরণ বজায় রাখবেন?
সমস্যাটা কেবল ট্রাম্প নন। অতীতে বাইরের শক্তিগুলো প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোকে সাময়িকভাবে লড়াই বন্ধে রাজি করিয়েছে—যেমন ১৯৫৬,১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল, কিংবা যুক্তরাষ্ট্র পরে বহুবার করেছে। কিন্তু তারা কখনোই যথেষ্ট সময়, মনোযোগ, রাজনৈতিক পুঁজি বা নিজেদের পূর্ণ প্রভাব ব্যবহার করে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণেই অসলো চুক্তি, ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলন, ২০০৭ সালের আনাপোলিস সম্মেলন, ব্যর্থ মধ্যপ্রাচ্য কোয়ার্টেট উদ্যোগ এবং অন্যান্য বহুল প্রচারিত শান্তি উদ্যোগগুলো সবই ব্যর্থ হয়েছে।
এই অবস্থায় যদি স্থায়ী মার্কিন চাপই এই অঞ্চলে শান্তির পূর্বশর্ত হয়, তাহলে পরের প্রশ্নটি হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কি এমনভাবে বদলে যাচ্ছে, যা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অবস্থান যাই হোক না কেন, শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস আন্তর্জাতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক প্রতিক্রিয়াও দেশটির ভাবমূর্তিতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে—প্রতীকী পদক্ষেপ হলেও এটি মনোভাবের পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ইসরায়েলের আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাগুলোও এখন স্থগিত।
যুক্তরাষ্ট্রে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে নাটকীয় পরিবর্তন। আগের তুলনায় এখন বেশি সংখ্যক আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে। ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমতুল্য, আর মাত্র ২২ শতাংশ বলেন, সেই পদক্ষেপ ন্যায্য। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সবচেয়ে বেশি কমেছে ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে। তবে বিশিষ্ট রক্ষণশীল নেতারাও—যেমন স্টিভ ব্যানন, টাকার কার্লসন এবং কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন—ইসরায়েল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা বেশি উদ্বিগ্ন মানবাধিকার ইস্যুতে, আর রক্ষণশীল সমালোচকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্তভাবে এক ক্রমবর্ধমানহারে অবাধ্য হতে থাকা ইসরায়েলকে সমর্থন করা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিশেষ সম্পর্কের প্রত্যক্ষ মূল্য বহু দিন ধরেই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় বিদেশি গ্রহীতা ইসরায়েল। দেশটির তথাকথিত ‘গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখার আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকারও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ইসরায়েল একটি সমৃদ্ধ দেশ—মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের ১৬ তম স্থানে দেশটি এবং তাদের রয়েছে বিপুল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার। সাধারণত দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পায়। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা সবটাই গিয়েছে মার্কিন করদাতাদের পকেট থেকে।
এই নিঃশর্ত সহায়তাই যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে অজনপ্রিয় করে তুলেছে। যদিও সেসব দেশের শাসকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য অস্ত্র, বিনিয়োগ ও বাজার প্রবেশাধিকারের আশায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রতি এই অন্ধ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ বা নৈতিক প্রভাবকে দুর্বল করে দেয়। কারণ, এটি ওয়াশিংটনের মানবাধিকার রক্ষার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নৈতিকভাবে রাশিয়া বা চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই ভণ্ডামি হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তাদের অগ্রাধিকারে এসব নৈতিক আদর্শের স্থান কম, তবে এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই বিশেষ সম্পর্কের আরেকটি দিক হলো—এক কোটি মানুষেরও কম জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের রাজনৈতিক জীবনে অযথা বিপুল প্রভাব বিস্তার করছে। ভাবুন, ইসরায়েল নামের এই ছোট দেশটিকে নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে যত খবর, বিশ্লেষণ, আলোচনা হয়, তার তুলনায় কত কম জায়গা পায় বড় ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো—যেমন ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া বা ব্রাজিল। ইসরায়েলের সমান জনসংখ্যা ও জিডিপির দেশ অস্ট্রিয়া, যেখানে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সদর দপ্তর স্থাপন করেছে—তবু সে দেশের খবর মার্কিনদের কানে পৌঁছায় কদাচিৎ। আবার দেখুন, কত থিংকট্যাংক ও লবিং গ্রুপ শুধু এই একটি দেশকে ঘিরে কাজ করছে কিংবা মার্কিন রাজনীতিকেরা ইসরায়েলের বিষয়ে কতটা সময় ব্যয় করেন।
এমনকি এই ছোট দেশটিকে ঘিরে থাকা বিষয়গুলো প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরেও প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সাম্প্রতিক হামলার পেছনে নানা কারণ থাকলেও, গাজায় গণহত্যা ও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রতিবাদে (যেখানে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন) ছাত্রদের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগ এই আক্রমণকে আরও তীব্র করেছে। একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এই আঘাতের পেছনে ইসরায়েলকে সমালোচনা থেকে রক্ষা করার একতরফা ইচ্ছাই একমাত্র কারণ নয়, তবে সেটিও নিঃসন্দেহে একটি বড় উপাদান।
শেষ পর্যন্ত, ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের যে পরিমাণ সময় ও মনোযোগ ব্যয় করতে হয়, সেটিও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টার নিজে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির আলোচনায়। বিল ক্লিনটনও একইভাবে চেষ্টা করেছিলেন। এর বাইরেও তাঁরা এই বিষয়ে অসংখ্য ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন—তিনজনই ইসরায়েল-সংক্রান্ত বিষয়েই দিন বা সপ্তাহ পার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চার বছরে ১৬ বার ইসরায়েল সফর করেছেন, অথচ পুরো সময়ে আফ্রিকা মহাদেশে গেছেন মাত্র চারবার। এমনকি ট্রাম্পও চাইলেও ইসরায়েল নীতি থেকে পুরোপুরি নিজেকে দূরে রাখতে বা তা অধস্তনদের হাতে ছেড়ে দিতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট, তাঁর উপদেষ্টা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা এই একটি দেশকে ঘিরে যত সময় ব্যয় করেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য সমস্যাগুলোয় ব্যয় করা সম্ভব হতো।
এ কারণেই আমি ও আরও অনেকে বারবার আহ্বান জানিয়েছি—যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলা। সেই সম্পর্ক হবে ইসরায়েলের আকার, কৌশলগত গুরুত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে ওয়াশিংটন আর ভান করবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। ইসরায়েল এমন কিছু করলে যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কাম্য, তাহলে তারা আমেরিকার সমর্থন পাবে। কিন্তু যদি এমন কিছু করে যা যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের বিরুদ্ধে যায়—যেমন দখলকৃত ভূখণ্ডে নতুন বসতি স্থাপন—তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়বে।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ইসরায়েল ‘স্বাভাবিক দেশ’ নয়, তাই স্বাভাবিক সম্পর্কের ধারণাটাই অর্থহীন। কারণ হিসেবে তারা বলবেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের ঐতিহাসিক পটভূমি, খ্রিষ্টানদের দীর্ঘ ও করুণ ইহুদিবিদ্বেষ, হলোকাস্টের উত্তরাধিকার আর মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সংঘাতপূর্ণ বাস্তবতা। হয়তো তাই। কিন্তু ২০২৫ সালে ইসরায়েল যেভাবে ‘অস্বাভাবিক’, সেটাই আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্ধ সমর্থন কমানোর কারণ, বাড়ানোর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়ান লাস্টিক সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল এখন ক্রমশ ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক এজেকিয়েল দ্ররের বর্ণনা অনুযায়ী একটি ‘পাগল রাষ্ট্রে’ পরিণত হচ্ছে। দ্রর এমন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যও বর্ণনা করেছেন। এমন রাষ্ট্র—১) আগ্রাসী ও ক্ষতিকর লক্ষ্য অনুসরণ করে,২) সেই লক্ষ্য অর্জনে চরম আদর্শিক অন্ধত্ব দেখায়,৩) নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব করে, অথচ অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হয় না,৪) লক্ষ্য অর্জনে যৌক্তিক কৌশল বেছে নিতে পারে এবং ৫) তা বাস্তবায়নের সামর্থ্যও রাখে।
লাস্টিকের মতে, ইসরায়েলের এই বিপজ্জনক গতিপথের একটি প্রধান কারণ হলো মার্কিন প্রশাসনগুলোর কাছ থেকে প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়া—যা এসেছে ‘ইসরায়েল লবির অতিমাত্রায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ক্ষমতা’ থেকে। এই অবস্থান কি ‘ইসরায়েলবিরোধী?’ মোটেও নয়। বরং নিঃশর্ত সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ইসরায়েলের জন্য তেমনই ধ্বংসাত্মক। আজ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিসরে সমর্থন হারাচ্ছে, অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত হচ্ছে, আরও বেশি করে উগ্র ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে এবং দক্ষ, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম নাগরিকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
একটি ‘ইতিবাচক স্বাভাবিক’ নীতিই দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—দুই দেশের জন্য ভালো হবে। যদিও এতে এআইপ্যাক, জায়নিস্ট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা, ক্রিশ্চিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েল এবং সেই সব সংগঠনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে—যারা বছরের পর বছর ‘বিশেষ সম্পর্ক’ টিকিয়ে রেখেছে, ইসরায়েলকে আজকের দুরবস্থায় নিয়ে এসেছে, এবং ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মানুষের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, তা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে। সংক্ষেপে, যদি কেউ স্থায়ী শান্তি চায়—তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘আরও স্বাভাবিক’ হতে হবে।
লেখক: স্টিফেন মার্টিন ওয়াল্ট, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে তাঁর সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছেন এবং এটিকে ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। তবে এ রকম কথা তিনি আগেও বলেছেন, তাঁর আগের প্রেসিডেন্টরাও বলেছেন। আশা করি, এবার তাঁর কথাটা সত্যি হবে, কিন্তু খুব বেশি বাজি ধরতে রাজি নই।
এই যুদ্ধবিরতির পরও দুটি বড় প্রশ্ন ঝুলে আছে। প্রথম প্রশ্নটা স্পষ্ট—‘এই চুক্তি টিকবে তো?’ আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি আসলে প্রথমটার উত্তর নির্ধারণ করে। প্রশ্নটি হলো—ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের বাকি দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের পরিবর্তন কি এমন পথে এগোচ্ছে, যাতে ফিলিস্তিনে বহু প্রতীক্ষিত স্থায়ী শান্তি সম্ভব হয়?
প্রথম প্রশ্নের জবাবে আশাবাদী হওয়া কঠিন। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল কট্টর ইসরায়েলপন্থী মধ্যস্থতাকারী। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্পের বন্ধু স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার অন্যতম এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপটি আসলে একধরনের আলটিমেটামের মতো, আলোচনার ফল নয়। এতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীদের কিছু চরম দাবি, যেমন গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ প্রত্যাখ্যান করা হলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু প্রায় অসম্ভব শর্ত, যেমন হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করা, সব টানেল ধ্বংস করা, তাদের রাজনীতির বাইরে রাখা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের কিন্তু ‘অস্পষ্ট সংস্কার’ করা। এখনো গঠিত হয়নি, কীভাবে গঠিত হবে তা-ও স্পষ্ট নয়—এমন একটি ‘পর্যবেক্ষণ সংস্থা’ নজরদারি করবে কে চুক্তি মানছে আর কে মানছে না। এই পর্যবেক্ষণ সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবে ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ।’
সবচেয়ে বড় কথা, এই চুক্তিতে কঠিন রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভবিষ্যতের কোনো এক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান দখল প্রসঙ্গে এই চুক্তি একেবারেই নীরব। ফলে ইসরায়েলের জন্য যে কোনো সময় ফিলিস্তিনিরা শর্ত মানেনি অভিযোগ তুলে আবার দমননীতি জোরদার করা বা সহিংসতা শুরু করার সুযোগ সব সময় খোলা থাকবে।
তাই এই পরিকল্পনা সফল হবে বলে বিশ্বাস করতে হলে ধরে নিতে হবে যে, বহির্বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ বজায় রাখবে, যাতে তারা এই চুক্তি রক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ন্যায়ভিত্তিক ও স্থায়ী শান্তির পথে এগোয়। ট্রাম্প হয়তো এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর টালবাহানা দেখে ক্লান্ত হয়ে তাঁকে এই অস্পষ্ট চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। সেটাই প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে ইসরায়েলের ওপর কতটা প্রভাব খাটাতে পারেন।
কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই যে নেতানিয়াহু, তাঁর কট্টর ডানপন্থী সমর্থক কিংবা ইসরায়েলি সমাজ সত্যিকারের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বা এক রাষ্ট্রীয় কনফেডারেশনের কোনো রূপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এমনকি তারা যদি নিশ্চিতও হন যে হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো পুরোপুরি প্রান্তিক হয়ে গেছে; তবুও হয়তো তারা মানবে না। ট্রাম্পের কুখ্যাত স্বল্প মনোযোগ, খামখেয়ালি ব্যক্তিত্ব এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে অনাগ্রহের কথা বিবেচনা করলে সত্যিই কি কেউ বিশ্বাস করে যে তিনি এই উদ্যোগে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর মনোযোগ বা অনুসরণ বজায় রাখবেন?
সমস্যাটা কেবল ট্রাম্প নন। অতীতে বাইরের শক্তিগুলো প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোকে সাময়িকভাবে লড়াই বন্ধে রাজি করিয়েছে—যেমন ১৯৫৬,১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল, কিংবা যুক্তরাষ্ট্র পরে বহুবার করেছে। কিন্তু তারা কখনোই যথেষ্ট সময়, মনোযোগ, রাজনৈতিক পুঁজি বা নিজেদের পূর্ণ প্রভাব ব্যবহার করে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণেই অসলো চুক্তি, ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলন, ২০০৭ সালের আনাপোলিস সম্মেলন, ব্যর্থ মধ্যপ্রাচ্য কোয়ার্টেট উদ্যোগ এবং অন্যান্য বহুল প্রচারিত শান্তি উদ্যোগগুলো সবই ব্যর্থ হয়েছে।
এই অবস্থায় যদি স্থায়ী মার্কিন চাপই এই অঞ্চলে শান্তির পূর্বশর্ত হয়, তাহলে পরের প্রশ্নটি হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কি এমনভাবে বদলে যাচ্ছে, যা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অবস্থান যাই হোক না কেন, শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস আন্তর্জাতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক প্রতিক্রিয়াও দেশটির ভাবমূর্তিতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে—প্রতীকী পদক্ষেপ হলেও এটি মনোভাবের পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ইসরায়েলের আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাগুলোও এখন স্থগিত।
যুক্তরাষ্ট্রে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে নাটকীয় পরিবর্তন। আগের তুলনায় এখন বেশি সংখ্যক আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে। ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমতুল্য, আর মাত্র ২২ শতাংশ বলেন, সেই পদক্ষেপ ন্যায্য। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সবচেয়ে বেশি কমেছে ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে। তবে বিশিষ্ট রক্ষণশীল নেতারাও—যেমন স্টিভ ব্যানন, টাকার কার্লসন এবং কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন—ইসরায়েল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা বেশি উদ্বিগ্ন মানবাধিকার ইস্যুতে, আর রক্ষণশীল সমালোচকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্তভাবে এক ক্রমবর্ধমানহারে অবাধ্য হতে থাকা ইসরায়েলকে সমর্থন করা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিশেষ সম্পর্কের প্রত্যক্ষ মূল্য বহু দিন ধরেই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় বিদেশি গ্রহীতা ইসরায়েল। দেশটির তথাকথিত ‘গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখার আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকারও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ইসরায়েল একটি সমৃদ্ধ দেশ—মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের ১৬ তম স্থানে দেশটি এবং তাদের রয়েছে বিপুল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার। সাধারণত দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পায়। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা সবটাই গিয়েছে মার্কিন করদাতাদের পকেট থেকে।
এই নিঃশর্ত সহায়তাই যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে অজনপ্রিয় করে তুলেছে। যদিও সেসব দেশের শাসকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য অস্ত্র, বিনিয়োগ ও বাজার প্রবেশাধিকারের আশায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রতি এই অন্ধ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ বা নৈতিক প্রভাবকে দুর্বল করে দেয়। কারণ, এটি ওয়াশিংটনের মানবাধিকার রক্ষার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নৈতিকভাবে রাশিয়া বা চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই ভণ্ডামি হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তাদের অগ্রাধিকারে এসব নৈতিক আদর্শের স্থান কম, তবে এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই বিশেষ সম্পর্কের আরেকটি দিক হলো—এক কোটি মানুষেরও কম জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের রাজনৈতিক জীবনে অযথা বিপুল প্রভাব বিস্তার করছে। ভাবুন, ইসরায়েল নামের এই ছোট দেশটিকে নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে যত খবর, বিশ্লেষণ, আলোচনা হয়, তার তুলনায় কত কম জায়গা পায় বড় ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো—যেমন ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া বা ব্রাজিল। ইসরায়েলের সমান জনসংখ্যা ও জিডিপির দেশ অস্ট্রিয়া, যেখানে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সদর দপ্তর স্থাপন করেছে—তবু সে দেশের খবর মার্কিনদের কানে পৌঁছায় কদাচিৎ। আবার দেখুন, কত থিংকট্যাংক ও লবিং গ্রুপ শুধু এই একটি দেশকে ঘিরে কাজ করছে কিংবা মার্কিন রাজনীতিকেরা ইসরায়েলের বিষয়ে কতটা সময় ব্যয় করেন।
এমনকি এই ছোট দেশটিকে ঘিরে থাকা বিষয়গুলো প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরেও প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সাম্প্রতিক হামলার পেছনে নানা কারণ থাকলেও, গাজায় গণহত্যা ও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রতিবাদে (যেখানে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন) ছাত্রদের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগ এই আক্রমণকে আরও তীব্র করেছে। একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এই আঘাতের পেছনে ইসরায়েলকে সমালোচনা থেকে রক্ষা করার একতরফা ইচ্ছাই একমাত্র কারণ নয়, তবে সেটিও নিঃসন্দেহে একটি বড় উপাদান।
শেষ পর্যন্ত, ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের যে পরিমাণ সময় ও মনোযোগ ব্যয় করতে হয়, সেটিও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টার নিজে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির আলোচনায়। বিল ক্লিনটনও একইভাবে চেষ্টা করেছিলেন। এর বাইরেও তাঁরা এই বিষয়ে অসংখ্য ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন—তিনজনই ইসরায়েল-সংক্রান্ত বিষয়েই দিন বা সপ্তাহ পার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চার বছরে ১৬ বার ইসরায়েল সফর করেছেন, অথচ পুরো সময়ে আফ্রিকা মহাদেশে গেছেন মাত্র চারবার। এমনকি ট্রাম্পও চাইলেও ইসরায়েল নীতি থেকে পুরোপুরি নিজেকে দূরে রাখতে বা তা অধস্তনদের হাতে ছেড়ে দিতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট, তাঁর উপদেষ্টা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা এই একটি দেশকে ঘিরে যত সময় ব্যয় করেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য সমস্যাগুলোয় ব্যয় করা সম্ভব হতো।
এ কারণেই আমি ও আরও অনেকে বারবার আহ্বান জানিয়েছি—যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলা। সেই সম্পর্ক হবে ইসরায়েলের আকার, কৌশলগত গুরুত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে ওয়াশিংটন আর ভান করবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। ইসরায়েল এমন কিছু করলে যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কাম্য, তাহলে তারা আমেরিকার সমর্থন পাবে। কিন্তু যদি এমন কিছু করে যা যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের বিরুদ্ধে যায়—যেমন দখলকৃত ভূখণ্ডে নতুন বসতি স্থাপন—তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়বে।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ইসরায়েল ‘স্বাভাবিক দেশ’ নয়, তাই স্বাভাবিক সম্পর্কের ধারণাটাই অর্থহীন। কারণ হিসেবে তারা বলবেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের ঐতিহাসিক পটভূমি, খ্রিষ্টানদের দীর্ঘ ও করুণ ইহুদিবিদ্বেষ, হলোকাস্টের উত্তরাধিকার আর মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সংঘাতপূর্ণ বাস্তবতা। হয়তো তাই। কিন্তু ২০২৫ সালে ইসরায়েল যেভাবে ‘অস্বাভাবিক’, সেটাই আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্ধ সমর্থন কমানোর কারণ, বাড়ানোর নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়ান লাস্টিক সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল এখন ক্রমশ ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক এজেকিয়েল দ্ররের বর্ণনা অনুযায়ী একটি ‘পাগল রাষ্ট্রে’ পরিণত হচ্ছে। দ্রর এমন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যও বর্ণনা করেছেন। এমন রাষ্ট্র—১) আগ্রাসী ও ক্ষতিকর লক্ষ্য অনুসরণ করে,২) সেই লক্ষ্য অর্জনে চরম আদর্শিক অন্ধত্ব দেখায়,৩) নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব করে, অথচ অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হয় না,৪) লক্ষ্য অর্জনে যৌক্তিক কৌশল বেছে নিতে পারে এবং ৫) তা বাস্তবায়নের সামর্থ্যও রাখে।
লাস্টিকের মতে, ইসরায়েলের এই বিপজ্জনক গতিপথের একটি প্রধান কারণ হলো মার্কিন প্রশাসনগুলোর কাছ থেকে প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়া—যা এসেছে ‘ইসরায়েল লবির অতিমাত্রায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ক্ষমতা’ থেকে। এই অবস্থান কি ‘ইসরায়েলবিরোধী?’ মোটেও নয়। বরং নিঃশর্ত সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ইসরায়েলের জন্য তেমনই ধ্বংসাত্মক। আজ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিসরে সমর্থন হারাচ্ছে, অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত হচ্ছে, আরও বেশি করে উগ্র ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে এবং দক্ষ, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম নাগরিকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
একটি ‘ইতিবাচক স্বাভাবিক’ নীতিই দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—দুই দেশের জন্য ভালো হবে। যদিও এতে এআইপ্যাক, জায়নিস্ট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা, ক্রিশ্চিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েল এবং সেই সব সংগঠনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে—যারা বছরের পর বছর ‘বিশেষ সম্পর্ক’ টিকিয়ে রেখেছে, ইসরায়েলকে আজকের দুরবস্থায় নিয়ে এসেছে, এবং ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মানুষের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, তা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে। সংক্ষেপে, যদি কেউ স্থায়ী শান্তি চায়—তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘আরও স্বাভাবিক’ হতে হবে।
লেখক: স্টিফেন মার্টিন ওয়াল্ট, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প...
১৬ অক্টোবর ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে