Ajker Patrika

ফরেন পলিসির নিবন্ধ /ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তির পথে বাধা ‘পাগল রাষ্ট্র’ ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষ সম্পর্ক’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১৪
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ফিলিস্তিনে শান্তির পথে বাধা ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নজর। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ফিলিস্তিনে শান্তির পথে বাধা ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নজর। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় হত্যাযজ্ঞ অন্তত সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী ব্যক্তিদের বিনিময় শুরু হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাও এখন কিছুটা সহজে পৌঁছাতে পারছে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে। এর জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ হতেই পারি। স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে তাঁর সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছেন এবং এটিকে ‘নয়া মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন। তবে এ রকম কথা তিনি আগেও বলেছেন, তাঁর আগের প্রেসিডেন্টরাও বলেছেন। আশা করি, এবার তাঁর কথাটা সত্যি হবে, কিন্তু খুব বেশি বাজি ধরতে রাজি নই।

এই যুদ্ধবিরতির পরও দুটি বড় প্রশ্ন ঝুলে আছে। প্রথম প্রশ্নটা স্পষ্ট—‘এই চুক্তি টিকবে তো?’ আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি আসলে প্রথমটার উত্তর নির্ধারণ করে। প্রশ্নটি হলো—ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের বাকি দেশগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের পরিবর্তন কি এমন পথে এগোচ্ছে, যাতে ফিলিস্তিনে বহু প্রতীক্ষিত স্থায়ী শান্তি সম্ভব হয়?

প্রথম প্রশ্নের জবাবে আশাবাদী হওয়া কঠিন। অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল কট্টর ইসরায়েলপন্থী মধ্যস্থতাকারী। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্পের বন্ধু স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার অন্যতম এবং সেখানে ফিলিস্তিনিদের অংশগ্রহণ ছিল সীমিত। পরিকল্পনার চূড়ান্ত রূপটি আসলে একধরনের আলটিমেটামের মতো, আলোচনার ফল নয়। এতে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থীদের কিছু চরম দাবি, যেমন গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ প্রত্যাখ্যান করা হলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু প্রায় অসম্ভব শর্ত, যেমন হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র করা, সব টানেল ধ্বংস করা, তাদের রাজনীতির বাইরে রাখা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের কিন্তু ‘অস্পষ্ট সংস্কার’ করা। এখনো গঠিত হয়নি, কীভাবে গঠিত হবে তা-ও স্পষ্ট নয়—এমন একটি ‘পর্যবেক্ষণ সংস্থা’ নজরদারি করবে কে চুক্তি মানছে আর কে মানছে না। এই পর্যবেক্ষণ সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকবে ট্রাম্পের নেতৃত্বে ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ।’

সবচেয়ে বড় কথা, এই চুক্তিতে কঠিন রাজনৈতিক বিষয়গুলো ভবিষ্যতের কোনো এক অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান দখল প্রসঙ্গে এই চুক্তি একেবারেই নীরব। ফলে ইসরায়েলের জন্য যে কোনো সময় ফিলিস্তিনিরা শর্ত মানেনি অভিযোগ তুলে আবার দমননীতি জোরদার করা বা সহিংসতা শুরু করার সুযোগ সব সময় খোলা থাকবে।

তাই এই পরিকল্পনা সফল হবে বলে বিশ্বাস করতে হলে ধরে নিতে হবে যে, বহির্বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ বজায় রাখবে, যাতে তারা এই চুক্তি রক্ষা করে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ন্যায়ভিত্তিক ও স্থায়ী শান্তির পথে এগোয়। ট্রাম্প হয়তো এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর টালবাহানা দেখে ক্লান্ত হয়ে তাঁকে এই অস্পষ্ট চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য করেছেন। সেটাই প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে ইসরায়েলের ওপর কতটা প্রভাব খাটাতে পারেন।

কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই যে নেতানিয়াহু, তাঁর কট্টর ডানপন্থী সমর্থক কিংবা ইসরায়েলি সমাজ সত্যিকারের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বা এক রাষ্ট্রীয় কনফেডারেশনের কোনো রূপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এমনকি তারা যদি নিশ্চিতও হন যে হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো পুরোপুরি প্রান্তিক হয়ে গেছে; তবুও হয়তো তারা মানবে না। ট্রাম্পের কুখ্যাত স্বল্প মনোযোগ, খামখেয়ালি ব্যক্তিত্ব এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে অনাগ্রহের কথা বিবেচনা করলে সত্যিই কি কেউ বিশ্বাস করে যে তিনি এই উদ্যোগে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর মনোযোগ বা অনুসরণ বজায় রাখবেন?

সমস্যাটা কেবল ট্রাম্প নন। অতীতে বাইরের শক্তিগুলো প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত পক্ষগুলোকে সাময়িকভাবে লড়াই বন্ধে রাজি করিয়েছে—যেমন ১৯৫৬,১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন করেছিল, কিংবা যুক্তরাষ্ট্র পরে বহুবার করেছে। কিন্তু তারা কখনোই যথেষ্ট সময়, মনোযোগ, রাজনৈতিক পুঁজি বা নিজেদের পূর্ণ প্রভাব ব্যবহার করে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই রাজনৈতিক সমাধানে আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণেই অসলো চুক্তি, ২০০০ সালের ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলন, ২০০৭ সালের আনাপোলিস সম্মেলন, ব্যর্থ মধ্যপ্রাচ্য কোয়ার্টেট উদ্যোগ এবং অন্যান্য বহুল প্রচারিত শান্তি উদ্যোগগুলো সবই ব্যর্থ হয়েছে।

এই অবস্থায় যদি স্থায়ী মার্কিন চাপই এই অঞ্চলে শান্তির পূর্বশর্ত হয়, তাহলে পরের প্রশ্নটি হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কি এমনভাবে বদলে যাচ্ছে, যা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অবস্থান যাই হোক না কেন, শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে?

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস আন্তর্জাতিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের গণহত্যামূলক প্রতিক্রিয়াও দেশটির ভাবমূর্তিতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে—প্রতীকী পদক্ষেপ হলেও এটি মনোভাবের পরিবর্তনের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ইসরায়েলের আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাগুলোও এখন স্থগিত।

যুক্তরাষ্ট্রে জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে নাটকীয় পরিবর্তন। আগের তুলনায় এখন বেশি সংখ্যক আমেরিকান ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে। ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যার সমতুল্য, আর মাত্র ২২ শতাংশ বলেন, সেই পদক্ষেপ ন্যায্য। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন সবচেয়ে বেশি কমেছে ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে। তবে বিশিষ্ট রক্ষণশীল নেতারাও—যেমন স্টিভ ব্যানন, টাকার কার্লসন এবং কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন—ইসরায়েল নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা বেশি উদ্বিগ্ন মানবাধিকার ইস্যুতে, আর রক্ষণশীল সমালোচকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিঃশর্তভাবে এক ক্রমবর্ধমানহারে অবাধ্য হতে থাকা ইসরায়েলকে সমর্থন করা ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিশেষ সম্পর্কের প্রত্যক্ষ মূল্য বহু দিন ধরেই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় বিদেশি গ্রহীতা ইসরায়েল। দেশটির তথাকথিত ‘গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ বজায় রাখার আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকারও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ইসরায়েল একটি সমৃদ্ধ দেশ—মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের ১৬ তম স্থানে দেশটি এবং তাদের রয়েছে বিপুল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার। সাধারণত দেশটি প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পায়। তবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সময় সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা সবটাই গিয়েছে মার্কিন করদাতাদের পকেট থেকে।

এই নিঃশর্ত সহায়তাই যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে অজনপ্রিয় করে তুলেছে। যদিও সেসব দেশের শাসকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য অস্ত্র, বিনিয়োগ ও বাজার প্রবেশাধিকারের আশায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রতি এই অন্ধ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ বা নৈতিক প্রভাবকে দুর্বল করে দেয়। কারণ, এটি ওয়াশিংটনের মানবাধিকার রক্ষার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নৈতিকভাবে রাশিয়া বা চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এই ভণ্ডামি হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তাদের অগ্রাধিকারে এসব নৈতিক আদর্শের স্থান কম, তবে এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এই বিশেষ সম্পর্কের আরেকটি দিক হলো—এক কোটি মানুষেরও কম জনসংখ্যার একটি ছোট দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের রাজনৈতিক জীবনে অযথা বিপুল প্রভাব বিস্তার করছে। ভাবুন, ইসরায়েল নামের এই ছোট দেশটিকে নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যমে যত খবর, বিশ্লেষণ, আলোচনা হয়, তার তুলনায় কত কম জায়গা পায় বড় ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো—যেমন ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া বা ব্রাজিল। ইসরায়েলের সমান জনসংখ্যা ও জিডিপির দেশ অস্ট্রিয়া, যেখানে বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা সদর দপ্তর স্থাপন করেছে—তবু সে দেশের খবর মার্কিনদের কানে পৌঁছায় কদাচিৎ। আবার দেখুন, কত থিংকট্যাংক ও লবিং গ্রুপ শুধু এই একটি দেশকে ঘিরে কাজ করছে কিংবা মার্কিন রাজনীতিকেরা ইসরায়েলের বিষয়ে কতটা সময় ব্যয় করেন।

এমনকি এই ছোট দেশটিকে ঘিরে থাকা বিষয়গুলো প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরেও প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সাম্প্রতিক হামলার পেছনে নানা কারণ থাকলেও, গাজায় গণহত্যা ও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রতিবাদে (যেখানে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন) ছাত্রদের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত ‘ইহুদিবিদ্বেষের’ অভিযোগ এই আক্রমণকে আরও তীব্র করেছে। একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এই আঘাতের পেছনে ইসরায়েলকে সমালোচনা থেকে রক্ষা করার একতরফা ইচ্ছাই একমাত্র কারণ নয়, তবে সেটিও নিঃসন্দেহে একটি বড় উপাদান।

শেষ পর্যন্ত, ইসরায়েলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের যে পরিমাণ সময় ও মনোযোগ ব্যয় করতে হয়, সেটিও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৮ সালে জিমি কার্টার নিজে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির আলোচনায়। বিল ক্লিনটনও একইভাবে চেষ্টা করেছিলেন। এর বাইরেও তাঁরা এই বিষয়ে অসংখ্য ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা এবং জো বাইডেন—তিনজনই ইসরায়েল-সংক্রান্ত বিষয়েই দিন বা সপ্তাহ পার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন চার বছরে ১৬ বার ইসরায়েল সফর করেছেন, অথচ পুরো সময়ে আফ্রিকা মহাদেশে গেছেন মাত্র চারবার। এমনকি ট্রাম্পও চাইলেও ইসরায়েল নীতি থেকে পুরোপুরি নিজেকে দূরে রাখতে বা তা অধস্তনদের হাতে ছেড়ে দিতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট, তাঁর উপদেষ্টা ও শীর্ষ কর্মকর্তারা এই একটি দেশকে ঘিরে যত সময় ব্যয় করেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য সমস্যাগুলোয় ব্যয় করা সম্ভব হতো।

এ কারণেই আমি ও আরও অনেকে বারবার আহ্বান জানিয়েছি—যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি ‘স্বাভাবিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলা। সেই সম্পর্ক হবে ইসরায়েলের আকার, কৌশলগত গুরুত্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি স্বাভাবিক সম্পর্কে ওয়াশিংটন আর ভান করবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। ইসরায়েল এমন কিছু করলে যা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কাম্য, তাহলে তারা আমেরিকার সমর্থন পাবে। কিন্তু যদি এমন কিছু করে যা যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের বিরুদ্ধে যায়—যেমন দখলকৃত ভূখণ্ডে নতুন বসতি স্থাপন—তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়বে।

কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ইসরায়েল ‘স্বাভাবিক দেশ’ নয়, তাই স্বাভাবিক সম্পর্কের ধারণাটাই অর্থহীন। কারণ হিসেবে তারা বলবেন, ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের ঐতিহাসিক পটভূমি, খ্রিষ্টানদের দীর্ঘ ও করুণ ইহুদিবিদ্বেষ, হলোকাস্টের উত্তরাধিকার আর মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সংঘাতপূর্ণ বাস্তবতা। হয়তো তাই। কিন্তু ২০২৫ সালে ইসরায়েল যেভাবে ‘অস্বাভাবিক’, সেটাই আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্ধ সমর্থন কমানোর কারণ, বাড়ানোর নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়ান লাস্টিক সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল এখন ক্রমশ ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক এজেকিয়েল দ্ররের বর্ণনা অনুযায়ী একটি ‘পাগল রাষ্ট্রে’ পরিণত হচ্ছে। দ্রর এমন রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যও বর্ণনা করেছেন। এমন রাষ্ট্র—১) আগ্রাসী ও ক্ষতিকর লক্ষ্য অনুসরণ করে,২) সেই লক্ষ্য অর্জনে চরম আদর্শিক অন্ধত্ব দেখায়,৩) নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব করে, অথচ অনৈতিক কাজ করতে পিছপা হয় না,৪) লক্ষ্য অর্জনে যৌক্তিক কৌশল বেছে নিতে পারে এবং ৫) তা বাস্তবায়নের সামর্থ্যও রাখে।

লাস্টিকের মতে, ইসরায়েলের এই বিপজ্জনক গতিপথের একটি প্রধান কারণ হলো মার্কিন প্রশাসনগুলোর কাছ থেকে প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন পাওয়া—যা এসেছে ‘ইসরায়েল লবির অতিমাত্রায় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ক্ষমতা’ থেকে। এই অবস্থান কি ‘ইসরায়েলবিরোধী?’ মোটেও নয়। বরং নিঃশর্ত সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ইসরায়েলের জন্য তেমনই ধ্বংসাত্মক। আজ ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিসরে সমর্থন হারাচ্ছে, অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত হচ্ছে, আরও বেশি করে উগ্র ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে এবং দক্ষ, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম নাগরিকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

একটি ‘ইতিবাচক স্বাভাবিক’ নীতিই দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—দুই দেশের জন্য ভালো হবে। যদিও এতে এআইপ্যাক, জায়নিস্ট অর্গানাইজেশন অব আমেরিকা, ক্রিশ্চিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরায়েল এবং সেই সব সংগঠনের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে—যারা বছরের পর বছর ‘বিশেষ সম্পর্ক’ টিকিয়ে রেখেছে, ইসরায়েলকে আজকের দুরবস্থায় নিয়ে এসেছে, এবং ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মানুষের ওপর যে নিপীড়ন চলছে, তা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করেছে। সংক্ষেপে, যদি কেউ স্থায়ী শান্তি চায়—তাহলে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ‘আরও স্বাভাবিক’ হতে হবে।

লেখক: স্টিফেন মার্টিন ওয়াল্ট, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত