ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘পেনাল্টি’ আরোপ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্কের খামখেয়ালিপনার মুখে ভারত ভয় পাবে না, তবে কৌশল বদলাতে পারে—বলে মনে করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের এই এমপি বলেছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখবে, তবে সম্পর্কটা হতে পারে আগের চেয়ে বেশি স্বার্থভিত্তিক। আদর্শ নয়, নিজের লাভ-ক্ষতির দিকটাই গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে ভারত নিজেকে আরও স্বনির্ভর করে তোলার দিকেও নজর দেবে।
শশী থারুর

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভারসাম্যমূলক। দুই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির মতো কিছু অভিন্ন মূল্যবোধ রয়েছে। কিন্তু আবার অনেক সময়ই দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ ভিন্ন পথে চলে। তাই সম্পর্কটি কখনো খুব ঘনিষ্ঠ, আবার কখনো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু কূটনৈতিক ঘটনায় ভারত দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছে। এখন নয়াদিল্লিতে মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—এই সম্পর্ক কি বড় কোনো পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে?
ভারতের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ধরনের ‘ভূরাজনৈতিক নাটকীয়তা’ দেখিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত থামানোর কৃতিত্ব তাঁরই। তিনি বলেন, তিনি পাকিস্তানকে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, তাই পাকিস্তান পিছু হটেছে। ভারত এই দাবিতে খুবই ক্ষুব্ধ। কারণ, একদিকে ভারত তার সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল, আর অন্যদিকে ট্রাম্পের এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুজনেই বলেছেন, সেই সময় ট্রাম্প তাঁদের কারও সঙ্গে ফোনেও কথা বলেননি। সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাণিজ্য বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। ফলে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
হয়তো ট্রাম্প পাকিস্তানের ওপর কিছুটা চাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু ভারতের ওপর তাঁর কোনো প্রভাব ছিল না। ভারত এমনিতেই শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তাই বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই ভারতের ছিল না।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে তথাকথিত ‘পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা’ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে। এটি ছিল নির্ভুল, দ্রুত এবং সীমিত পাল্টা ব্যবস্থা। এতে পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি চিহ্নিত জঙ্গি ঘাঁটি ও অন্যান্য স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল শুধুই সেই সন্ত্রাসীরা, যারা ভারতীয় পর্যটকদের হত্যা করেছিল। এটা কোনোভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পদক্ষেপ ছিল না। তবে পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যে, সন্ত্রাসীরা তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা করেছে।
পাকিস্তান এরপর পাল্টা হামলা চালায় এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাতে থাকে। ভারত জবাবে পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়, তবে তা ছিল আবারও হিসেব করে নেওয়া এবং কৌশলগতভাবে পরিমিত এক প্রতিক্রিয়া। এরপর পাকিস্তানও ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে এবং ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে, যার মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমানও ছিল।
এই দ্বিতীয় দফা হামলার পরই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহ দেখায়। হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সেসময় পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছিল। তবে এতে ট্রাম্পের বিশেষ কোনো ভূমিকা ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেই কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যা ভারতের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—তাঁরা কোনো হুমকি বা প্রলোভনে নয়, নিজেদের সিদ্ধান্তেই এই সব পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রাম্পের এমন আচরণ ভারতে অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে। তবে এটিই একমাত্র ঘটনা নয়, যা ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। চলতি বছরের জুন মাসে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন। সেখানে পাকিস্তানের কোনো নির্বাচিত বেসামরিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ভারতের সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই আসিম মুনিরকে একজন কট্টর ইসলামপন্থী ও ভারতবিদ্বেষীয় হিসেবে দেখে। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চীনের ব্যাপারে ট্রাম্পের অবস্থানও ভারতের কাছে ধোঁয়াশাপূর্ণ। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন তিনি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন, বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেন, এমনকি চীনকে সরাসরি আক্রমণাত্মক ভাষায় আক্রমণও করেন।
কিন্তু এখন ট্রাম্পের অবস্থান পাল্টে যাচ্ছে। একদিকে তিনি চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে আবার শুল্ক বসাচ্ছেন, আর অন্যদিকে তিনি বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আমন্ত্রণে তিনি বেইজিং সফর করতে পারেন। আবার কখনো তিনি চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য সমঝোতা চাইছেন বলেও মন্তব্য করছেন। এই দ্বৈত আচরণে ভারত বিভ্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে—এই নতুন চীন নীতিতে ভারতের অবস্থান কোথায়? আদৌ কি ট্রাম্পের মাথায় ভারত আছে?
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলেও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং চীনের প্রভাব প্রতিরোধে একটি গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করত।
ভারত নিজেও তখন ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’ বা কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে। অর্থাৎ, সরাসরি কোনো শিবিরে যায়নি, বরং নিজের স্বার্থ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত কোয়াড জোট (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) পুনরুজ্জীবিত করতেও উৎসাহ দেখিয়েছে।
এটা ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ, চীন কেবল ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে না, বরং পাকিস্তানকেও জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। এখন চীন সরাসরি ভারতের শিল্প খাতকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভারতীয় প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের যাওয়া কমিয়ে দিচ্ছে, ভারতীয় কারখানাগুলোর কাছে উন্নত চীনা যন্ত্রপাতি পৌঁছানো বন্ধ করছে।
ইতিমধ্যে এর প্রভাব ভারতের ইলেকট্রনিকস ও উৎপাদন শিল্পে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে চীনের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে—ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকেও তারা প্রভাবিত করছে। ভারতের সরকারি ও বেসরকারি উভয় মহলই চীনকে এখন বড় হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখানে অস্পষ্ট। ভারতের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, অন্তত পাকিস্তানকে চীন যে সামরিক গোয়েন্দা সহায়তা দিয়েছে—বিশেষ করে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করার সাহায্য—সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরব হবে।
কিন্তু ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং তিনি আবার ভারতের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন। ৩০ জুলাই তিনি ঘোষণা দেন, ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে তিনি ভারতকে আরও এক ধরনের ‘পেনাল্টি’ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শাস্তি হতে পারে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক, কারণ ভারত এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কিনছে।
যদি বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা সম্পর্ককেও ট্রাম্প ব্যবহার করতে পারেন—এমন ভয়ও এখন ভারতের মধ্যে রয়েছে। এসব ঘটনাপ্রবাহ ভারতের কৌশলগত দুশ্চিন্তা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগে কখনো ভারতের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার ছিল না—সে ইতিহাস ভারত ভুলে যায়নি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিপিএস ডেটা চেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ভারত নিজেই তার নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেম গড়ে তোলে।
এখন ভারতের সামনে দুটি প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে—১. ভারত কি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করবে? ২. নাকি যুক্তরাষ্ট্রকেও একইভাবে দূরে ঠেলে দিয়ে বাস্তববাদী কূটনীতি অনুসরণ করবে? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো—একটি সম্পর্ক যদি কোনো এক ব্যক্তির খামখেয়ালিপূর্ণ মেজাজের ওপর নির্ভর করে, তাহলে সেই সম্পর্কের মূল্যই বা কতটুকু?
ভারত অবশ্য হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। কিন্তু এটা ঠিক যে, ভবিষ্যতে ভারত অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। ভারতের কোনো সামরিক চুক্তিভিত্তিক জোটে অংশ নেই, তাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের তুলনায় ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতা অনেক বেশি।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত এখন কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটার কথা ভাবছে। এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের জুলাই মাসের বেইজিং সফরে। এটা দেখায় যে, ভারত চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে চাইছে। তবে এর মানে এই নয় যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে দিচ্ছে। বরং ভারত এখন আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আগের মতো আদর্শভিত্তিক না রেখে বাস্তব স্বার্থভিত্তিক করে তুলছে।
ভারতের নতুন কৌশলগত নীতির মূল কথা হলো, ‘সন্ত্রাসে কোনো ছাড় নয়, সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা থাকবে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত জবাব দেওয়া হবে।’ পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের হামলা এই নীতির বাস্তব উদাহরণ।
যত দিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, ভারত সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই সম্পর্ক যদি একপেশে হয়ে পড়ে, তবে ভারত নিজস্ব পথেই হাঁটবে। কারণ, এখনকার বাস্তবতা এটাই—ভারতকে নিজের স্বার্থে, নিজের মতো করে পথ বেছে নিতে হবে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভারসাম্যমূলক। দুই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির মতো কিছু অভিন্ন মূল্যবোধ রয়েছে। কিন্তু আবার অনেক সময়ই দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ ভিন্ন পথে চলে। তাই সম্পর্কটি কখনো খুব ঘনিষ্ঠ, আবার কখনো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু কূটনৈতিক ঘটনায় ভারত দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছে। এখন নয়াদিল্লিতে মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—এই সম্পর্ক কি বড় কোনো পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে?
ভারতের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ধরনের ‘ভূরাজনৈতিক নাটকীয়তা’ দেখিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত থামানোর কৃতিত্ব তাঁরই। তিনি বলেন, তিনি পাকিস্তানকে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, তাই পাকিস্তান পিছু হটেছে। ভারত এই দাবিতে খুবই ক্ষুব্ধ। কারণ, একদিকে ভারত তার সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল, আর অন্যদিকে ট্রাম্পের এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুজনেই বলেছেন, সেই সময় ট্রাম্প তাঁদের কারও সঙ্গে ফোনেও কথা বলেননি। সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাণিজ্য বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। ফলে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
হয়তো ট্রাম্প পাকিস্তানের ওপর কিছুটা চাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু ভারতের ওপর তাঁর কোনো প্রভাব ছিল না। ভারত এমনিতেই শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তাই বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই ভারতের ছিল না।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে তথাকথিত ‘পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা’ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে। এটি ছিল নির্ভুল, দ্রুত এবং সীমিত পাল্টা ব্যবস্থা। এতে পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি চিহ্নিত জঙ্গি ঘাঁটি ও অন্যান্য স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল শুধুই সেই সন্ত্রাসীরা, যারা ভারতীয় পর্যটকদের হত্যা করেছিল। এটা কোনোভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পদক্ষেপ ছিল না। তবে পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যে, সন্ত্রাসীরা তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা করেছে।
পাকিস্তান এরপর পাল্টা হামলা চালায় এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাতে থাকে। ভারত জবাবে পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়, তবে তা ছিল আবারও হিসেব করে নেওয়া এবং কৌশলগতভাবে পরিমিত এক প্রতিক্রিয়া। এরপর পাকিস্তানও ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে এবং ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে, যার মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমানও ছিল।
এই দ্বিতীয় দফা হামলার পরই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহ দেখায়। হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সেসময় পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছিল। তবে এতে ট্রাম্পের বিশেষ কোনো ভূমিকা ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেই কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যা ভারতের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—তাঁরা কোনো হুমকি বা প্রলোভনে নয়, নিজেদের সিদ্ধান্তেই এই সব পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রাম্পের এমন আচরণ ভারতে অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে। তবে এটিই একমাত্র ঘটনা নয়, যা ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। চলতি বছরের জুন মাসে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন। সেখানে পাকিস্তানের কোনো নির্বাচিত বেসামরিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ভারতের সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই আসিম মুনিরকে একজন কট্টর ইসলামপন্থী ও ভারতবিদ্বেষীয় হিসেবে দেখে। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চীনের ব্যাপারে ট্রাম্পের অবস্থানও ভারতের কাছে ধোঁয়াশাপূর্ণ। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন তিনি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন, বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেন, এমনকি চীনকে সরাসরি আক্রমণাত্মক ভাষায় আক্রমণও করেন।
কিন্তু এখন ট্রাম্পের অবস্থান পাল্টে যাচ্ছে। একদিকে তিনি চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে আবার শুল্ক বসাচ্ছেন, আর অন্যদিকে তিনি বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আমন্ত্রণে তিনি বেইজিং সফর করতে পারেন। আবার কখনো তিনি চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য সমঝোতা চাইছেন বলেও মন্তব্য করছেন। এই দ্বৈত আচরণে ভারত বিভ্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে—এই নতুন চীন নীতিতে ভারতের অবস্থান কোথায়? আদৌ কি ট্রাম্পের মাথায় ভারত আছে?
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলেও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং চীনের প্রভাব প্রতিরোধে একটি গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করত।
ভারত নিজেও তখন ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’ বা কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে। অর্থাৎ, সরাসরি কোনো শিবিরে যায়নি, বরং নিজের স্বার্থ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত কোয়াড জোট (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) পুনরুজ্জীবিত করতেও উৎসাহ দেখিয়েছে।
এটা ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ, চীন কেবল ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে না, বরং পাকিস্তানকেও জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। এখন চীন সরাসরি ভারতের শিল্প খাতকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভারতীয় প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের যাওয়া কমিয়ে দিচ্ছে, ভারতীয় কারখানাগুলোর কাছে উন্নত চীনা যন্ত্রপাতি পৌঁছানো বন্ধ করছে।
ইতিমধ্যে এর প্রভাব ভারতের ইলেকট্রনিকস ও উৎপাদন শিল্পে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে চীনের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে—ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকেও তারা প্রভাবিত করছে। ভারতের সরকারি ও বেসরকারি উভয় মহলই চীনকে এখন বড় হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখানে অস্পষ্ট। ভারতের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, অন্তত পাকিস্তানকে চীন যে সামরিক গোয়েন্দা সহায়তা দিয়েছে—বিশেষ করে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করার সাহায্য—সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরব হবে।
কিন্তু ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং তিনি আবার ভারতের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন। ৩০ জুলাই তিনি ঘোষণা দেন, ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে তিনি ভারতকে আরও এক ধরনের ‘পেনাল্টি’ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শাস্তি হতে পারে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক, কারণ ভারত এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কিনছে।
যদি বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা সম্পর্ককেও ট্রাম্প ব্যবহার করতে পারেন—এমন ভয়ও এখন ভারতের মধ্যে রয়েছে। এসব ঘটনাপ্রবাহ ভারতের কৌশলগত দুশ্চিন্তা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগে কখনো ভারতের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার ছিল না—সে ইতিহাস ভারত ভুলে যায়নি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিপিএস ডেটা চেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ভারত নিজেই তার নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেম গড়ে তোলে।
এখন ভারতের সামনে দুটি প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে—১. ভারত কি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করবে? ২. নাকি যুক্তরাষ্ট্রকেও একইভাবে দূরে ঠেলে দিয়ে বাস্তববাদী কূটনীতি অনুসরণ করবে? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো—একটি সম্পর্ক যদি কোনো এক ব্যক্তির খামখেয়ালিপূর্ণ মেজাজের ওপর নির্ভর করে, তাহলে সেই সম্পর্কের মূল্যই বা কতটুকু?
ভারত অবশ্য হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। কিন্তু এটা ঠিক যে, ভবিষ্যতে ভারত অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। ভারতের কোনো সামরিক চুক্তিভিত্তিক জোটে অংশ নেই, তাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের তুলনায় ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতা অনেক বেশি।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত এখন কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটার কথা ভাবছে। এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের জুলাই মাসের বেইজিং সফরে। এটা দেখায় যে, ভারত চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে চাইছে। তবে এর মানে এই নয় যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে দিচ্ছে। বরং ভারত এখন আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আগের মতো আদর্শভিত্তিক না রেখে বাস্তব স্বার্থভিত্তিক করে তুলছে।
ভারতের নতুন কৌশলগত নীতির মূল কথা হলো, ‘সন্ত্রাসে কোনো ছাড় নয়, সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা থাকবে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত জবাব দেওয়া হবে।’ পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের হামলা এই নীতির বাস্তব উদাহরণ।
যত দিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, ভারত সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই সম্পর্ক যদি একপেশে হয়ে পড়ে, তবে ভারত নিজস্ব পথেই হাঁটবে। কারণ, এখনকার বাস্তবতা এটাই—ভারতকে নিজের স্বার্থে, নিজের মতো করে পথ বেছে নিতে হবে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘পেনাল্টি’ আরোপ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্কের খামখেয়ালিপনার মুখে ভারত ভয় পাবে না, তবে কৌশল বদলাতে পারে—বলে মনে করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের এই এমপি বলেছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখবে, তবে সম্পর্কটা হতে পারে আগের চেয়ে বেশি স্বার্থভিত্তিক। আদর্শ নয়, নিজের লাভ-ক্ষতির দিকটাই গুরুত্ব পাবে। একই সঙ্গে ভারত নিজেকে আরও স্বনির্ভর করে তোলার দিকেও নজর দেবে।
শশী থারুর

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভারসাম্যমূলক। দুই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির মতো কিছু অভিন্ন মূল্যবোধ রয়েছে। কিন্তু আবার অনেক সময়ই দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ ভিন্ন পথে চলে। তাই সম্পর্কটি কখনো খুব ঘনিষ্ঠ, আবার কখনো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু কূটনৈতিক ঘটনায় ভারত দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছে। এখন নয়াদিল্লিতে মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—এই সম্পর্ক কি বড় কোনো পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে?
ভারতের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ধরনের ‘ভূরাজনৈতিক নাটকীয়তা’ দেখিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত থামানোর কৃতিত্ব তাঁরই। তিনি বলেন, তিনি পাকিস্তানকে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, তাই পাকিস্তান পিছু হটেছে। ভারত এই দাবিতে খুবই ক্ষুব্ধ। কারণ, একদিকে ভারত তার সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল, আর অন্যদিকে ট্রাম্পের এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুজনেই বলেছেন, সেই সময় ট্রাম্প তাঁদের কারও সঙ্গে ফোনেও কথা বলেননি। সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাণিজ্য বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। ফলে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
হয়তো ট্রাম্প পাকিস্তানের ওপর কিছুটা চাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু ভারতের ওপর তাঁর কোনো প্রভাব ছিল না। ভারত এমনিতেই শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তাই বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই ভারতের ছিল না।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে তথাকথিত ‘পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা’ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে। এটি ছিল নির্ভুল, দ্রুত এবং সীমিত পাল্টা ব্যবস্থা। এতে পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি চিহ্নিত জঙ্গি ঘাঁটি ও অন্যান্য স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল শুধুই সেই সন্ত্রাসীরা, যারা ভারতীয় পর্যটকদের হত্যা করেছিল। এটা কোনোভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পদক্ষেপ ছিল না। তবে পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যে, সন্ত্রাসীরা তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা করেছে।
পাকিস্তান এরপর পাল্টা হামলা চালায় এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাতে থাকে। ভারত জবাবে পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়, তবে তা ছিল আবারও হিসেব করে নেওয়া এবং কৌশলগতভাবে পরিমিত এক প্রতিক্রিয়া। এরপর পাকিস্তানও ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে এবং ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে, যার মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমানও ছিল।
এই দ্বিতীয় দফা হামলার পরই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহ দেখায়। হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সেসময় পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছিল। তবে এতে ট্রাম্পের বিশেষ কোনো ভূমিকা ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেই কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যা ভারতের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—তাঁরা কোনো হুমকি বা প্রলোভনে নয়, নিজেদের সিদ্ধান্তেই এই সব পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রাম্পের এমন আচরণ ভারতে অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে। তবে এটিই একমাত্র ঘটনা নয়, যা ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। চলতি বছরের জুন মাসে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন। সেখানে পাকিস্তানের কোনো নির্বাচিত বেসামরিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ভারতের সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই আসিম মুনিরকে একজন কট্টর ইসলামপন্থী ও ভারতবিদ্বেষীয় হিসেবে দেখে। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চীনের ব্যাপারে ট্রাম্পের অবস্থানও ভারতের কাছে ধোঁয়াশাপূর্ণ। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন তিনি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন, বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেন, এমনকি চীনকে সরাসরি আক্রমণাত্মক ভাষায় আক্রমণও করেন।
কিন্তু এখন ট্রাম্পের অবস্থান পাল্টে যাচ্ছে। একদিকে তিনি চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে আবার শুল্ক বসাচ্ছেন, আর অন্যদিকে তিনি বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আমন্ত্রণে তিনি বেইজিং সফর করতে পারেন। আবার কখনো তিনি চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য সমঝোতা চাইছেন বলেও মন্তব্য করছেন। এই দ্বৈত আচরণে ভারত বিভ্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে—এই নতুন চীন নীতিতে ভারতের অবস্থান কোথায়? আদৌ কি ট্রাম্পের মাথায় ভারত আছে?
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলেও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং চীনের প্রভাব প্রতিরোধে একটি গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করত।
ভারত নিজেও তখন ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’ বা কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে। অর্থাৎ, সরাসরি কোনো শিবিরে যায়নি, বরং নিজের স্বার্থ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত কোয়াড জোট (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) পুনরুজ্জীবিত করতেও উৎসাহ দেখিয়েছে।
এটা ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ, চীন কেবল ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে না, বরং পাকিস্তানকেও জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। এখন চীন সরাসরি ভারতের শিল্প খাতকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভারতীয় প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের যাওয়া কমিয়ে দিচ্ছে, ভারতীয় কারখানাগুলোর কাছে উন্নত চীনা যন্ত্রপাতি পৌঁছানো বন্ধ করছে।
ইতিমধ্যে এর প্রভাব ভারতের ইলেকট্রনিকস ও উৎপাদন শিল্পে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে চীনের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে—ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকেও তারা প্রভাবিত করছে। ভারতের সরকারি ও বেসরকারি উভয় মহলই চীনকে এখন বড় হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখানে অস্পষ্ট। ভারতের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, অন্তত পাকিস্তানকে চীন যে সামরিক গোয়েন্দা সহায়তা দিয়েছে—বিশেষ করে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করার সাহায্য—সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরব হবে।
কিন্তু ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং তিনি আবার ভারতের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন। ৩০ জুলাই তিনি ঘোষণা দেন, ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে তিনি ভারতকে আরও এক ধরনের ‘পেনাল্টি’ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শাস্তি হতে পারে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক, কারণ ভারত এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কিনছে।
যদি বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা সম্পর্ককেও ট্রাম্প ব্যবহার করতে পারেন—এমন ভয়ও এখন ভারতের মধ্যে রয়েছে। এসব ঘটনাপ্রবাহ ভারতের কৌশলগত দুশ্চিন্তা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগে কখনো ভারতের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার ছিল না—সে ইতিহাস ভারত ভুলে যায়নি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিপিএস ডেটা চেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ভারত নিজেই তার নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেম গড়ে তোলে।
এখন ভারতের সামনে দুটি প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে—১. ভারত কি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করবে? ২. নাকি যুক্তরাষ্ট্রকেও একইভাবে দূরে ঠেলে দিয়ে বাস্তববাদী কূটনীতি অনুসরণ করবে? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো—একটি সম্পর্ক যদি কোনো এক ব্যক্তির খামখেয়ালিপূর্ণ মেজাজের ওপর নির্ভর করে, তাহলে সেই সম্পর্কের মূল্যই বা কতটুকু?
ভারত অবশ্য হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। কিন্তু এটা ঠিক যে, ভবিষ্যতে ভারত অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। ভারতের কোনো সামরিক চুক্তিভিত্তিক জোটে অংশ নেই, তাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের তুলনায় ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতা অনেক বেশি।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত এখন কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটার কথা ভাবছে। এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের জুলাই মাসের বেইজিং সফরে। এটা দেখায় যে, ভারত চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে চাইছে। তবে এর মানে এই নয় যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে দিচ্ছে। বরং ভারত এখন আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আগের মতো আদর্শভিত্তিক না রেখে বাস্তব স্বার্থভিত্তিক করে তুলছে।
ভারতের নতুন কৌশলগত নীতির মূল কথা হলো, ‘সন্ত্রাসে কোনো ছাড় নয়, সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা থাকবে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত জবাব দেওয়া হবে।’ পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের হামলা এই নীতির বাস্তব উদাহরণ।
যত দিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, ভারত সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই সম্পর্ক যদি একপেশে হয়ে পড়ে, তবে ভারত নিজস্ব পথেই হাঁটবে। কারণ, এখনকার বাস্তবতা এটাই—ভারতকে নিজের স্বার্থে, নিজের মতো করে পথ বেছে নিতে হবে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই ভারসাম্যমূলক। দুই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির মতো কিছু অভিন্ন মূল্যবোধ রয়েছে। কিন্তু আবার অনেক সময়ই দুই দেশের জাতীয় স্বার্থ ভিন্ন পথে চলে। তাই সম্পর্কটি কখনো খুব ঘনিষ্ঠ, আবার কখনো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু কূটনৈতিক ঘটনায় ভারত দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছে। এখন নয়াদিল্লিতে মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—এই সম্পর্ক কি বড় কোনো পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে?
ভারতের দৃষ্টিতে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ধরনের ‘ভূরাজনৈতিক নাটকীয়তা’ দেখিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত থামানোর কৃতিত্ব তাঁরই। তিনি বলেন, তিনি পাকিস্তানকে বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, তাই পাকিস্তান পিছু হটেছে। ভারত এই দাবিতে খুবই ক্ষুব্ধ। কারণ, একদিকে ভারত তার সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল, আর অন্যদিকে ট্রাম্পের এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুজনেই বলেছেন, সেই সময় ট্রাম্প তাঁদের কারও সঙ্গে ফোনেও কথা বলেননি। সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাণিজ্য বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। ফলে ট্রাম্পের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
হয়তো ট্রাম্প পাকিস্তানের ওপর কিছুটা চাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু ভারতের ওপর তাঁর কোনো প্রভাব ছিল না। ভারত এমনিতেই শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তাই বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ বা সংঘাতে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই ভারতের ছিল না।
২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে তথাকথিত ‘পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা’ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করে। এটি ছিল নির্ভুল, দ্রুত এবং সীমিত পাল্টা ব্যবস্থা। এতে পাকিস্তানের ভেতরে ৯টি চিহ্নিত জঙ্গি ঘাঁটি ও অন্যান্য স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল শুধুই সেই সন্ত্রাসীরা, যারা ভারতীয় পর্যটকদের হত্যা করেছিল। এটা কোনোভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পদক্ষেপ ছিল না। তবে পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যে, সন্ত্রাসীরা তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা করেছে।
পাকিস্তান এরপর পাল্টা হামলা চালায় এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাতে থাকে। ভারত জবাবে পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়, তবে তা ছিল আবারও হিসেব করে নেওয়া এবং কৌশলগতভাবে পরিমিত এক প্রতিক্রিয়া। এরপর পাকিস্তানও ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে এবং ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে, যার মধ্যে রাফাল যুদ্ধবিমানও ছিল।
এই দ্বিতীয় দফা হামলার পরই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহ দেখায়। হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সেসময় পাকিস্তানকে চাপ দিয়েছিল। তবে এতে ট্রাম্পের বিশেষ কোনো ভূমিকা ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি নিজেই কৃতিত্ব দাবি করেছেন, যা ভারতের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—তাঁরা কোনো হুমকি বা প্রলোভনে নয়, নিজেদের সিদ্ধান্তেই এই সব পদক্ষেপ নিয়েছে।
ট্রাম্পের এমন আচরণ ভারতে অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে। তবে এটিই একমাত্র ঘটনা নয়, যা ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। চলতি বছরের জুন মাসে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানান এবং তাঁর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করেন। সেখানে পাকিস্তানের কোনো নির্বাচিত বেসামরিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ভারতের সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই আসিম মুনিরকে একজন কট্টর ইসলামপন্থী ও ভারতবিদ্বেষীয় হিসেবে দেখে। তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চীনের ব্যাপারে ট্রাম্পের অবস্থানও ভারতের কাছে ধোঁয়াশাপূর্ণ। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় তিনি চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন তিনি উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেন, বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেন, এমনকি চীনকে সরাসরি আক্রমণাত্মক ভাষায় আক্রমণও করেন।
কিন্তু এখন ট্রাম্পের অবস্থান পাল্টে যাচ্ছে। একদিকে তিনি চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে আবার শুল্ক বসাচ্ছেন, আর অন্যদিকে তিনি বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আমন্ত্রণে তিনি বেইজিং সফর করতে পারেন। আবার কখনো তিনি চীনের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য সমঝোতা চাইছেন বলেও মন্তব্য করছেন। এই দ্বৈত আচরণে ভারত বিভ্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে—এই নতুন চীন নীতিতে ভারতের অবস্থান কোথায়? আদৌ কি ট্রাম্পের মাথায় ভারত আছে?
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলেও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং চীনের প্রভাব প্রতিরোধে একটি গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করত।
ভারত নিজেও তখন ‘স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি’ বা কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে। অর্থাৎ, সরাসরি কোনো শিবিরে যায়নি, বরং নিজের স্বার্থ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত কোয়াড জোট (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) পুনরুজ্জীবিত করতেও উৎসাহ দেখিয়েছে।
এটা ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ, চীন কেবল ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে না, বরং পাকিস্তানকেও জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। এখন চীন সরাসরি ভারতের শিল্প খাতকে দুর্বল করার কৌশল নিয়েছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভারতীয় প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের যাওয়া কমিয়ে দিচ্ছে, ভারতীয় কারখানাগুলোর কাছে উন্নত চীনা যন্ত্রপাতি পৌঁছানো বন্ধ করছে।
ইতিমধ্যে এর প্রভাব ভারতের ইলেকট্রনিকস ও উৎপাদন শিল্পে পড়তে শুরু করেছে। এদিকে চীনের প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে—ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকেও তারা প্রভাবিত করছে। ভারতের সরকারি ও বেসরকারি উভয় মহলই চীনকে এখন বড় হুমকি হিসেবে দেখছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখানে অস্পষ্ট। ভারতের কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, অন্তত পাকিস্তানকে চীন যে সামরিক গোয়েন্দা সহায়তা দিয়েছে—বিশেষ করে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ভারতীয় লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করার সাহায্য—সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরব হবে।
কিন্তু ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং তিনি আবার ভারতের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করেছেন। ৩০ জুলাই তিনি ঘোষণা দেন, ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। একই সঙ্গে তিনি ভারতকে আরও এক ধরনের ‘পেনাল্টি’ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই শাস্তি হতে পারে আরও ১০ শতাংশ শুল্ক, কারণ ভারত এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কিনছে।
যদি বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে ভবিষ্যতে প্রতিরক্ষা সম্পর্ককেও ট্রাম্প ব্যবহার করতে পারেন—এমন ভয়ও এখন ভারতের মধ্যে রয়েছে। এসব ঘটনাপ্রবাহ ভারতের কৌশলগত দুশ্চিন্তা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগে কখনো ভারতের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার ছিল না—সে ইতিহাস ভারত ভুলে যায়নি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জিপিএস ডেটা চেয়েছিল, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ভারত নিজেই তার নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেম গড়ে তোলে।
এখন ভারতের সামনে দুটি প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে—১. ভারত কি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করবে? ২. নাকি যুক্তরাষ্ট্রকেও একইভাবে দূরে ঠেলে দিয়ে বাস্তববাদী কূটনীতি অনুসরণ করবে? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হলো—একটি সম্পর্ক যদি কোনো এক ব্যক্তির খামখেয়ালিপূর্ণ মেজাজের ওপর নির্ভর করে, তাহলে সেই সম্পর্কের মূল্যই বা কতটুকু?
ভারত অবশ্য হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। কিন্তু এটা ঠিক যে, ভবিষ্যতে ভারত অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। ভারতের কোনো সামরিক চুক্তিভিত্তিক জোটে অংশ নেই, তাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের তুলনায় ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতা অনেক বেশি।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারত এখন কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটার কথা ভাবছে। এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের জুলাই মাসের বেইজিং সফরে। এটা দেখায় যে, ভারত চীনের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে চাইছে। তবে এর মানে এই নয় যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে দিচ্ছে। বরং ভারত এখন আত্মনির্ভরতার ওপর জোর দিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে আগের মতো আদর্শভিত্তিক না রেখে বাস্তব স্বার্থভিত্তিক করে তুলছে।
ভারতের নতুন কৌশলগত নীতির মূল কথা হলো, ‘সন্ত্রাসে কোনো ছাড় নয়, সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা থাকবে এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত জবাব দেওয়া হবে।’ পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের হামলা এই নীতির বাস্তব উদাহরণ।
যত দিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে, ভারত সেই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই সম্পর্ক যদি একপেশে হয়ে পড়ে, তবে ভারত নিজস্ব পথেই হাঁটবে। কারণ, এখনকার বাস্তবতা এটাই—ভারতকে নিজের স্বার্থে, নিজের মতো করে পথ বেছে নিতে হবে।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘পেনাল্টি’ আরোপ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্কের খামখেয়ালিপনার মুখে ভারত ভয় পাবে না, তবে কৌশল বদলাতে পারে—বলে মনে করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের এই এমপি...
০৩ আগস্ট ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘পেনাল্টি’ আরোপ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্কের খামখেয়ালিপনার মুখে ভারত ভয় পাবে না, তবে কৌশল বদলাতে পারে—বলে মনে করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের এই এমপি...
০৩ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘পেনাল্টি’ আরোপ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্কের খামখেয়ালিপনার মুখে ভারত ভয় পাবে না, তবে কৌশল বদলাতে পারে—বলে মনে করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের এই এমপি...
০৩ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছিলেন, সেই ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাঁর দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং ‘পেনাল্টি’ আরোপ করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্কের খামখেয়ালিপনার মুখে ভারত ভয় পাবে না, তবে কৌশল বদলাতে পারে—বলে মনে করেন শশী থারুর। কংগ্রেসের এই এমপি...
০৩ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে