
ভারতের বিগত এক দশকের ক্রয়ক্ষমতা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশের পর অনেকেই আহ্লাদিত হয়েছেন, উদ্বেলিত হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সরকারি এই ডেটাগুলো ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে নির্বাচনের সামনে সুবিধা দিতেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্য ভারতের গভীরে প্রোথিত এবং খুব শিগগির তা দূর হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) আমার প্রথম বস, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মিচেল মুসা বলেছিলেন, কোনো একটি পরিসংখ্যানকে অবশ্যই ‘স্মেল টেস্টে’ উতরে যেতে হবে। সাধারণত, যখন কোনো একজন ব্যক্তি তাঁর সাধারণ জ্ঞান–অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোনো পরিসংখ্যান সত্য বা অসত্য কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন তখন সেটিকে স্মেল টেস্ট বলা হয়। সম্প্রতি যখন ভারত সরকার, বিগত এক দশকের ভোক্তা ব্যয়ের ডেটা প্রকাশ করেছে তখন আমার প্রথমেই সেই ঋষিতুল্য ব্যক্তিত্বের কথাটি মনে পড়েছে। আর তাঁর পরামর্শ অনুসরণ করতে ভারত সরকারের হাজির করা তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছি, তা থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই সন্দেহ পোষণ করেছেন যে, ভারতের অফিশিয়াল জিডিপির ডেটা ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জি–২০ সম্মেলনের ঠিক আগে, ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগ নির্লজ্জভাবে এমন একটি ফুলানো–ফাঁপানো পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। গত দশকের আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালে। সে সময় ভারতীয়দের উচ্চ অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতার হার উঠে এসেছিল। যার ফলে চাকরি হারাতে হয়েছিল সে সময়কার জরিপ পরিচালকের।
২০১২ সালে পরিচালিত ভোক্তা ব্যয় জরিপ অনুসারে, ভারতে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা লোকের হার ছিল ২২ শতাংশ। এরপর ২০১৮ সালে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। যে জরিপের তথ্য সরকার চেপে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ফাঁস হওয়া তথ্য দেখায় যে, দারিদ্র্যের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। তারপরও ভারত সরকারের আংশিক ভোক্তা ব্যয়ের ডেটা কিছু অর্থনীতিবিদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। যেমন, ভারতে নিযুক্ত আইএমএফের সাবেক প্রধান সুরজিৎ ভল্লা এবং ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ করণ ভাসিন তড়িঘড়ি এই ডেটা প্রকাশের পর উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলেছেন, ভারতের চরম দারিদ্র্য ‘দূর হয়েছে।’
তবে পরিসংখ্যানের এমন উপস্থাপন বিশ্বের এলিট দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ব্যাপারে হাইপ বাড়ালেও দারিদ্র্য দেশটির গভীরে প্রোথিতই থেকে যাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গরিবদের আয় কমে যাওয়ায় আয়বৈষম্য আরও বাড়তেই থাকবে।
দারিদ্র্যের পরিমাপ করা কঠিন। বিশেষ করে কোন সীমা পর্যন্ত মানুষকে দরিদ্র বলে বিবেচনা করা হবে তা নির্ধারণ করা কঠিন। ১৯৯০—এর দশকে বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্যের সীমা নির্ধারণ করেছিল দৈনিক অন্তত ১ ডলার আয়। পরে ২০১১ সালে তা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৯০ ডলার নির্ধারণ করা হয়। যারা দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার আয় করতে পারেন না তাদের চরম দরিদ্র বলে বিবেচনা করা হয়।
ভারতের একজন ব্যক্তির জন্য দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার আয় খুবই নিচু স্তরের ভোক্তা ব্যয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থনীতিবিদ শাওহুয়া চেন এবং মারটিন রাভালিয়নের মতে, এই আয় দিয়ে ন্যূনতম খাবার চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। বাকি মৌলিক চাহিদাগুলোর খুব সামান্যই এ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। ২০১২ সালে ১ দশমিক ৯০ ডলার সমান ছিল ৩০ রুপি। যা দিয়ে দিনে দুই বেলার খাবার জোটানোই কষ্টসাধ্য ছিল বলে মনে করেন দারিদ্র্য বিশেষজ্ঞ এস. সুব্রাহ্মনিয়ম।
মনে হচ্ছে, সর্বশেষ ভোগ-ব্যয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সুরজি ভল্লা এবং করণ ভাসিন এবারও ১ দশমিক ৯০ ডলারকে রুপিতে পরিবর্তিত করে হিসাব করেছেন। যেখানে আইএমএফের হিসাব বলছে, ১ ডলারের মূল্য হলো ২২ দশমিক ৯ রুপি। এর ফলে তাঁরা মনে করছেন, যারা দিনে ৪৫ রুপি ব্যয় করতে পারে না তারাই দরিদ্র।
তাদের এই হিসাব পদ্ধতির উদ্দেশ্য মূলত যেকোনো মূল্যে দেশ থেকে দারিদ্র্য ঝেঁটিয়ে বিদায় করা। সরকারি হিসাব অনুসারে, ভারতের গড় বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ। সেই হিসাবে ২০১২ সালের ৩০ রুপি দামের পণ্যের দাম এখন কমপক্ষে ৫৮ রুপি হবে। অধিকন্তু, নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলো অযৌক্তিক মূল্যস্ফীতি বৈষম্যের মুখোমুখি হয়—তারা যে ধরনের পণ্য কেনে, তাদের পছন্দের সীমিত স্বাধীনতা (যা তাদের স্থানীয় একচেটিয়াদের করুণার ওপর ছেড়ে দেয়) এবং প্রচুর পরিমাণে কেনার অক্ষমতার কারণে গড় মূল্যস্ফীতির হার বেশি।
অধিকন্তু, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি বৈষম্যের শিকার হন নানা কারণে, তাদের জন্য মূল্যস্ফীতির কশাঘাতটা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিই। কারণ তারা নিয়মিত ভিত্তিতে যেসব পণ্য কেনেন তাতে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় বেশি মূল্যস্ফীতি বহন করতে হয়। কারণ, তাদের সামনে অন্য কোনো সুযোগ না থাকায় একচেটিয়া বাজারের ওপর বাধ্য হয়ে নির্ভর করতে হয়। একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ পণ্য কিনতে না পারায়ও তাদের ক্রয়ক্ষমতা আসলে অন্যদের তুলনায় কমই হয়।
দুঃখের বিষয়, ভারত সরকার কখনোই সেই অর্থে গৃহস্থালির আয়ের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট খাত ধরে ধরে মূল্যস্ফীতির তথ্য দেয় না। ভারতের অর্ধেকেরও বেশি পরিবারের জন্য যদি বার্ষিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশও হয় তবে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য তাদের প্রতিদিন প্রায় ৮০ রুপি লাগবে। সে ক্ষেত্রে, ভারতের দারিদ্র্যের হার প্রায় ২২ শতাংশের মতো হবে। যা ২০১২ সালের সমানই।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, অতিরঞ্জিতভাবে সূচক ওপরে তুলে দেওয়ার অর্থ হলো—কঠিন বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। ২০১৪ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর চক্রবর্তী রঙ্গরাজনের নেতৃত্বে একটি কমিটি বলেছিল যে, গ্রামীণ অঞ্চলে প্রকৃত দারিদ্র্যসীমা হলো—দৈনিক ৩৩ রুপি আয়। অর্থাৎ, যারা এই অর্থ আয় করতে পারে না তাঁরা চরম দরিদ্র। এই সীমারেখা বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া সীমারেখার কাছাকাছি। সেই কমিটির হিসাব অনুসারে, ২০১৪ সালে শহুরে এলাকায় একজনের দৈনন্দিন ব্যয় প্রয়োজন ছিল অন্তত ৪৭ রুপি। তবে এস. সুব্রাহ্মনিয়াম বলছেন, শহুরে দারিদ্র্যের বিষয়টিকে ভয়াবহভাবে খাটো করে দেখা হয়েছে। তাঁর অনুমান, শহরে একজন মানুষের দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা পূরণে অন্তত ৮৮ রুপি প্রয়োজন।
বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার ব্যবহার করে রঙ্গরাজন ও সুব্রহ্মনিয়ামের অনুমানের মধ্যে তুলনা করে একটি উপসংহারে আসা যায়। এই দুই বিশেষজ্ঞের হিসাবের মাঝামাঝি রাখলে শহরে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে। এর অর্থ হলো, সামগ্রিকভাবে ভারতীয়দের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। এটি সম্ভবত শিক্ষা, পরিবহন এবং আবাসন খরচ, সেই সঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিকিৎসা ব্যয় তীব্রভাবে বৃদ্ধির কারণে হতে পেরেছে। এর কারণে, অনেক অভিভাবককে বাধ্য হয়েই তাদের সন্তানের জন্য খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষার সুযোগ ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ২০১৬ সালের ডিমনিটাইজেশনও অনেকটাই দায়ী। সে সময় ভারত সরকার মহাত্মা গান্ধীর ছবি সংবলিত ৫০০ ও ১০০০ রুপির মূল্যমানের সব নোট বাজার থেকে তুলে নেয়। যার ফলে, ভারতের ৮৭ শতাংশ মুদ্রাই বাতিল হয়ে যায়। এ ছাড়া, ২০১৭ সালের পণ্য ও সেবা কর আইন প্রয়োগও অন্যতম কারণ। এই দুটি বিষয় দরিদ্র শ্রেণির ওপর ভয়াবহ আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারিও একটি কঠিন ধাক্কা দিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিতে। এর কারণে কোটি কোটি মানুষ আবারও তুলনামূলক কম উৎপাদনশীল কৃষি খাতে ফিরে গেছে। ২০১৮ সালের তুলনায় বর্তমান সময়ে ভারতে অন্তত ৭ কোটি বেশি মানুষ কৃষি খাতে কাজ করছেন। এর মূল কারণ হলো, ভারতে কৃষি খাত ছাড়া অন্যান্য আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক খাতে তাদের জন্য কোনো কাজ নেই। যাও বা আছে সেগুলোর বেশির ভাগই আর্থিক ও শারীরিকভাবে অনিশ্চিত খাত যেমন—নির্মাণ, হকার, বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী এবং অন্যান্য গার্হস্থ্য কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
যেখানে কোটি কোটি ভারতীয় এই ধরনে উল্লেখযোগ্য কঠোর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে নির্বাচনের আগে এ ধরনে ভোগ-ব্যয় বৃদ্ধি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সন্দেহের উদ্রেক করে বৈকি। এই প্রেক্ষাপটে সুরজিৎ ভল্লা ও করণ ভাসিনের দারিদ্র্যের অবসানের ঘোষণাও সংশয়পূর্ণ। অধিকন্তু, তাঁরা যে দাবি করেছেন যে, ভোগ বৈষম্য তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে তাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ ধনী ভারতীয়রা যে ৪০০ ডলার মূল্যের জুতা পড়েন, যে ল্যাম্বরগিনি গাড়ি চালান বা বিলাসবহুল পার্টিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন তা তাঁরা সরকারি জরিপকারীদের কাছে উল্লেখ করেন না।
ভারতে ধনী-গরিবের ব্যবধানও বেশ ভীতিপূর্ণ। ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ের মূল অনুষ্ঠানের আগেই ১২ কোটি ডলার ব্যয়ের অনুষ্ঠান-উদ্যাপনের কথাই বিবেচনা করুন। যেখানে অনন্ত আম্বানি ১০ লাখ ডলারের ঘড়ি পরেছিল, একজন সুপারস্টার তাঁর বিয়েতে পারফর্ম করার জন্য ৬০ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিল এবং ভারতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিদের সেই বিয়েতে যোগ দেওয়া এবং সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য স্থানীয় একটি বিমানবন্দর সাধারণের সেবার জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল।
এদিকে, দরিদ্রদের মধ্যে ভোক্তা ব্যয়ের ব্যাপক অভাব এবং মূল্যস্ফীতির প্রকৃত ডেটার অভাব ভারতীয় দারিদ্র্যের সঠিক চিত্র পাওয়াকে অসম্ভব করে তোলে। এর চেয়েও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে কৌশলগতভাবে প্রকাশিত ডেটা এবং সেগুলোর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশ্লেষণ উভয়ই আসলে সন্দেহের দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।

ভারতের বিগত এক দশকের ক্রয়ক্ষমতা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশের পর অনেকেই আহ্লাদিত হয়েছেন, উদ্বেলিত হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সরকারি এই ডেটাগুলো ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে নির্বাচনের সামনে সুবিধা দিতেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্য ভারতের গভীরে প্রোথিত এবং খুব শিগগির তা দূর হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) আমার প্রথম বস, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব প্রয়াত মিচেল মুসা বলেছিলেন, কোনো একটি পরিসংখ্যানকে অবশ্যই ‘স্মেল টেস্টে’ উতরে যেতে হবে। সাধারণত, যখন কোনো একজন ব্যক্তি তাঁর সাধারণ জ্ঞান–অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোনো পরিসংখ্যান সত্য বা অসত্য কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন তখন সেটিকে স্মেল টেস্ট বলা হয়। সম্প্রতি যখন ভারত সরকার, বিগত এক দশকের ভোক্তা ব্যয়ের ডেটা প্রকাশ করেছে তখন আমার প্রথমেই সেই ঋষিতুল্য ব্যক্তিত্বের কথাটি মনে পড়েছে। আর তাঁর পরামর্শ অনুসরণ করতে ভারত সরকারের হাজির করা তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখতে পেয়েছি, তা থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই সন্দেহ পোষণ করেছেন যে, ভারতের অফিশিয়াল জিডিপির ডেটা ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জি–২০ সম্মেলনের ঠিক আগে, ভারতের জাতীয় পরিসংখ্যান বিভাগ নির্লজ্জভাবে এমন একটি ফুলানো–ফাঁপানো পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। গত দশকের আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালে। সে সময় ভারতীয়দের উচ্চ অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতার হার উঠে এসেছিল। যার ফলে চাকরি হারাতে হয়েছিল সে সময়কার জরিপ পরিচালকের।
২০১২ সালে পরিচালিত ভোক্তা ব্যয় জরিপ অনুসারে, ভারতে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা লোকের হার ছিল ২২ শতাংশ। এরপর ২০১৮ সালে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। যে জরিপের তথ্য সরকার চেপে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ফাঁস হওয়া তথ্য দেখায় যে, দারিদ্র্যের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। তারপরও ভারত সরকারের আংশিক ভোক্তা ব্যয়ের ডেটা কিছু অর্থনীতিবিদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। যেমন, ভারতে নিযুক্ত আইএমএফের সাবেক প্রধান সুরজিৎ ভল্লা এবং ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ করণ ভাসিন তড়িঘড়ি এই ডেটা প্রকাশের পর উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলেছেন, ভারতের চরম দারিদ্র্য ‘দূর হয়েছে।’
তবে পরিসংখ্যানের এমন উপস্থাপন বিশ্বের এলিট দেশগুলোর মধ্যে ভারতের ব্যাপারে হাইপ বাড়ালেও দারিদ্র্য দেশটির গভীরে প্রোথিতই থেকে যাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গরিবদের আয় কমে যাওয়ায় আয়বৈষম্য আরও বাড়তেই থাকবে।
দারিদ্র্যের পরিমাপ করা কঠিন। বিশেষ করে কোন সীমা পর্যন্ত মানুষকে দরিদ্র বলে বিবেচনা করা হবে তা নির্ধারণ করা কঠিন। ১৯৯০—এর দশকে বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্যের সীমা নির্ধারণ করেছিল দৈনিক অন্তত ১ ডলার আয়। পরে ২০১১ সালে তা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৯০ ডলার নির্ধারণ করা হয়। যারা দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার আয় করতে পারেন না তাদের চরম দরিদ্র বলে বিবেচনা করা হয়।
ভারতের একজন ব্যক্তির জন্য দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার আয় খুবই নিচু স্তরের ভোক্তা ব্যয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থনীতিবিদ শাওহুয়া চেন এবং মারটিন রাভালিয়নের মতে, এই আয় দিয়ে ন্যূনতম খাবার চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। বাকি মৌলিক চাহিদাগুলোর খুব সামান্যই এ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। ২০১২ সালে ১ দশমিক ৯০ ডলার সমান ছিল ৩০ রুপি। যা দিয়ে দিনে দুই বেলার খাবার জোটানোই কষ্টসাধ্য ছিল বলে মনে করেন দারিদ্র্য বিশেষজ্ঞ এস. সুব্রাহ্মনিয়ম।
মনে হচ্ছে, সর্বশেষ ভোগ-ব্যয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সুরজি ভল্লা এবং করণ ভাসিন এবারও ১ দশমিক ৯০ ডলারকে রুপিতে পরিবর্তিত করে হিসাব করেছেন। যেখানে আইএমএফের হিসাব বলছে, ১ ডলারের মূল্য হলো ২২ দশমিক ৯ রুপি। এর ফলে তাঁরা মনে করছেন, যারা দিনে ৪৫ রুপি ব্যয় করতে পারে না তারাই দরিদ্র।
তাদের এই হিসাব পদ্ধতির উদ্দেশ্য মূলত যেকোনো মূল্যে দেশ থেকে দারিদ্র্য ঝেঁটিয়ে বিদায় করা। সরকারি হিসাব অনুসারে, ভারতের গড় বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ। সেই হিসাবে ২০১২ সালের ৩০ রুপি দামের পণ্যের দাম এখন কমপক্ষে ৫৮ রুপি হবে। অধিকন্তু, নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলো অযৌক্তিক মূল্যস্ফীতি বৈষম্যের মুখোমুখি হয়—তারা যে ধরনের পণ্য কেনে, তাদের পছন্দের সীমিত স্বাধীনতা (যা তাদের স্থানীয় একচেটিয়াদের করুণার ওপর ছেড়ে দেয়) এবং প্রচুর পরিমাণে কেনার অক্ষমতার কারণে গড় মূল্যস্ফীতির হার বেশি।
অধিকন্তু, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি বৈষম্যের শিকার হন নানা কারণে, তাদের জন্য মূল্যস্ফীতির কশাঘাতটা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিই। কারণ তারা নিয়মিত ভিত্তিতে যেসব পণ্য কেনেন তাতে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় বেশি মূল্যস্ফীতি বহন করতে হয়। কারণ, তাদের সামনে অন্য কোনো সুযোগ না থাকায় একচেটিয়া বাজারের ওপর বাধ্য হয়ে নির্ভর করতে হয়। একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ পণ্য কিনতে না পারায়ও তাদের ক্রয়ক্ষমতা আসলে অন্যদের তুলনায় কমই হয়।
দুঃখের বিষয়, ভারত সরকার কখনোই সেই অর্থে গৃহস্থালির আয়ের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট খাত ধরে ধরে মূল্যস্ফীতির তথ্য দেয় না। ভারতের অর্ধেকেরও বেশি পরিবারের জন্য যদি বার্ষিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশও হয় তবে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য তাদের প্রতিদিন প্রায় ৮০ রুপি লাগবে। সে ক্ষেত্রে, ভারতের দারিদ্র্যের হার প্রায় ২২ শতাংশের মতো হবে। যা ২০১২ সালের সমানই।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, অতিরঞ্জিতভাবে সূচক ওপরে তুলে দেওয়ার অর্থ হলো—কঠিন বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। ২০১৪ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাবেক গভর্নর চক্রবর্তী রঙ্গরাজনের নেতৃত্বে একটি কমিটি বলেছিল যে, গ্রামীণ অঞ্চলে প্রকৃত দারিদ্র্যসীমা হলো—দৈনিক ৩৩ রুপি আয়। অর্থাৎ, যারা এই অর্থ আয় করতে পারে না তাঁরা চরম দরিদ্র। এই সীমারেখা বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া সীমারেখার কাছাকাছি। সেই কমিটির হিসাব অনুসারে, ২০১৪ সালে শহুরে এলাকায় একজনের দৈনন্দিন ব্যয় প্রয়োজন ছিল অন্তত ৪৭ রুপি। তবে এস. সুব্রাহ্মনিয়াম বলছেন, শহুরে দারিদ্র্যের বিষয়টিকে ভয়াবহভাবে খাটো করে দেখা হয়েছে। তাঁর অনুমান, শহরে একজন মানুষের দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা পূরণে অন্তত ৮৮ রুপি প্রয়োজন।
বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার ব্যবহার করে রঙ্গরাজন ও সুব্রহ্মনিয়ামের অনুমানের মধ্যে তুলনা করে একটি উপসংহারে আসা যায়। এই দুই বিশেষজ্ঞের হিসাবের মাঝামাঝি রাখলে শহরে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে। এর অর্থ হলো, সামগ্রিকভাবে ভারতীয়দের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। এটি সম্ভবত শিক্ষা, পরিবহন এবং আবাসন খরচ, সেই সঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিকিৎসা ব্যয় তীব্রভাবে বৃদ্ধির কারণে হতে পেরেছে। এর কারণে, অনেক অভিভাবককে বাধ্য হয়েই তাদের সন্তানের জন্য খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে শিক্ষার সুযোগ ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য ২০১৬ সালের ডিমনিটাইজেশনও অনেকটাই দায়ী। সে সময় ভারত সরকার মহাত্মা গান্ধীর ছবি সংবলিত ৫০০ ও ১০০০ রুপির মূল্যমানের সব নোট বাজার থেকে তুলে নেয়। যার ফলে, ভারতের ৮৭ শতাংশ মুদ্রাই বাতিল হয়ে যায়। এ ছাড়া, ২০১৭ সালের পণ্য ও সেবা কর আইন প্রয়োগও অন্যতম কারণ। এই দুটি বিষয় দরিদ্র শ্রেণির ওপর ভয়াবহ আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারিও একটি কঠিন ধাক্কা দিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিতে। এর কারণে কোটি কোটি মানুষ আবারও তুলনামূলক কম উৎপাদনশীল কৃষি খাতে ফিরে গেছে। ২০১৮ সালের তুলনায় বর্তমান সময়ে ভারতে অন্তত ৭ কোটি বেশি মানুষ কৃষি খাতে কাজ করছেন। এর মূল কারণ হলো, ভারতে কৃষি খাত ছাড়া অন্যান্য আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক খাতে তাদের জন্য কোনো কাজ নেই। যাও বা আছে সেগুলোর বেশির ভাগই আর্থিক ও শারীরিকভাবে অনিশ্চিত খাত যেমন—নির্মাণ, হকার, বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী এবং অন্যান্য গার্হস্থ্য কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
যেখানে কোটি কোটি ভারতীয় এই ধরনে উল্লেখযোগ্য কঠোর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেই সময়ে নির্বাচনের আগে এ ধরনে ভোগ-ব্যয় বৃদ্ধি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান সন্দেহের উদ্রেক করে বৈকি। এই প্রেক্ষাপটে সুরজিৎ ভল্লা ও করণ ভাসিনের দারিদ্র্যের অবসানের ঘোষণাও সংশয়পূর্ণ। অধিকন্তু, তাঁরা যে দাবি করেছেন যে, ভোগ বৈষম্য তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে তাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ ধনী ভারতীয়রা যে ৪০০ ডলার মূল্যের জুতা পড়েন, যে ল্যাম্বরগিনি গাড়ি চালান বা বিলাসবহুল পার্টিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন তা তাঁরা সরকারি জরিপকারীদের কাছে উল্লেখ করেন না।
ভারতে ধনী-গরিবের ব্যবধানও বেশ ভীতিপূর্ণ। ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ের মূল অনুষ্ঠানের আগেই ১২ কোটি ডলার ব্যয়ের অনুষ্ঠান-উদ্যাপনের কথাই বিবেচনা করুন। যেখানে অনন্ত আম্বানি ১০ লাখ ডলারের ঘড়ি পরেছিল, একজন সুপারস্টার তাঁর বিয়েতে পারফর্ম করার জন্য ৬০ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পেয়েছিল এবং ভারতীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিদের সেই বিয়েতে যোগ দেওয়া এবং সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য স্থানীয় একটি বিমানবন্দর সাধারণের সেবার জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল।
এদিকে, দরিদ্রদের মধ্যে ভোক্তা ব্যয়ের ব্যাপক অভাব এবং মূল্যস্ফীতির প্রকৃত ডেটার অভাব ভারতীয় দারিদ্র্যের সঠিক চিত্র পাওয়াকে অসম্ভব করে তোলে। এর চেয়েও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে কৌশলগতভাবে প্রকাশিত ডেটা এবং সেগুলোর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশ্লেষণ উভয়ই আসলে সন্দেহের দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

ভারতের বিগত এক দশকের ক্রয়ক্ষমতা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশের পর অনেকেই আহ্লাদিত হয়েছেন, উদ্বেলিত হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সরকারি এই ডেটাগুলো ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে নির্বাচনের সামনে সুবিধা দিতেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্য ভারতের গভীরে প্রোথিত এবং খুব শিগগির তা দূর হয়ে যাবে বল
০১ জুন ২০২৪
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ভারতের বিগত এক দশকের ক্রয়ক্ষমতা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশের পর অনেকেই আহ্লাদিত হয়েছেন, উদ্বেলিত হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সরকারি এই ডেটাগুলো ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে নির্বাচনের সামনে সুবিধা দিতেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্য ভারতের গভীরে প্রোথিত এবং খুব শিগগির তা দূর হয়ে যাবে বল
০১ জুন ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ভারতের বিগত এক দশকের ক্রয়ক্ষমতা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশের পর অনেকেই আহ্লাদিত হয়েছেন, উদ্বেলিত হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সরকারি এই ডেটাগুলো ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে নির্বাচনের সামনে সুবিধা দিতেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্য ভারতের গভীরে প্রোথিত এবং খুব শিগগির তা দূর হয়ে যাবে বল
০১ জুন ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভারতের বিগত এক দশকের ক্রয়ক্ষমতা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশের পর অনেকেই আহ্লাদিত হয়েছেন, উদ্বেলিত হয়েছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সরকারি এই ডেটাগুলো ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে নির্বাচনের সামনে সুবিধা দিতেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্য ভারতের গভীরে প্রোথিত এবং খুব শিগগির তা দূর হয়ে যাবে বল
০১ জুন ২০২৪
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে