Ajker Patrika

ট্রাম্পের গোল্ডেন ডোম: যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষাকবচ, নাকি মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার উসকানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ১৩: ০০
ট্রাম্প প্রস্তাবিত গোল্ডেন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করবে নাকি মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতাও উসকে দেবে—তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকেরা। ছবি: এএফপি
ট্রাম্প প্রস্তাবিত গোল্ডেন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করবে নাকি মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতাও উসকে দেবে—তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকেরা। ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের জন্য একটি আকাশ প্রতিরক্ষা প্রকল্পের প্রস্তাব করেছেন। নাম ‘গোল্ডেন ডোম’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ধেয়ে আসা যেকোনো হাইপারসনিক, ব্যালিস্টিক ও অত্যাধুনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে এটি তৈরি হচ্ছে। গত ২০ মে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘একবার পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে গোল্ডেন ডোম বিশ্বের অন্য প্রান্ত, এমনকি মহাকাশ থেকেও উৎক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম হবে।’

তবে এমন একটি সর্বাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র (আকাশ) প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হয়তো বাস্তবে সম্ভব নয়। কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন, এটি কাজ করলেও গোল্ডেন ডোম তৈরি হতে কমপক্ষে ১ দশক সময় লাগবে। এর জন্য খরচ হতে পারে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। একই সঙ্গে, এটি বৈশ্বিক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও মহাকাশের সামরিকায়ানকেও ত্বরান্বিত করবে।

এই প্রকল্পের নাম ইসরায়েলের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে অনুপ্রাণিত। আয়রন ডোম ভূমি থেকে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে তুলনামূলকভাবে কম দূরত্বের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করে। কিন্তু গোল্ডেন ডোমকে অনেক বড় একটি এলাকা কভার করতে হবে। কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের আয়তনই ইসরায়েলের চেয়ে ৩৫০ গুণের বেশি। এ ছাড়া, আয়রন ডোম যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র/রকেটকে লক্ষ্য করে তৈরি, সেগুলোর তুলনায় আরও ভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই গোল্ডেন ডোমের।

ট্রাম্প ও তাঁর কর্মকর্তাদের মতে, এই ব্যবস্থা বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে উৎক্ষেপিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কম উচ্চতায় উড়ে আসা অত্যাধুনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং শব্দের পাঁচ গুণের বেশি গতিতে উড়তে ও কৌশল পরিবর্তনে সক্ষম হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও মোকাবিলা করতে পারবে। উল্লিখিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পারমাণবিক বা প্রচলিত বিস্ফোরক ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক বিবৃতিতে বলেছেন, গোল্ডেন ডোম হুমকি শনাক্ত ও প্রতিহত করতে ‘মহাকাশভিত্তিক সেন্সর ও আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা’ উভয়ই ব্যবহার করবে। রোড আইল্যান্ডের নেভাল ওয়ার কলেজের ডেভিড বারবাখ তাঁর ব্যক্তিগত মন্তব্যে নিউ সায়েন্টিস্টকে বলেছেন, এর মানে হলো ‘গোল্ডেন ডোমে’ একটি আমব্রেলা বা সর্বব্যাপী ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে বিভিন্ন প্রযুক্তি বিভিন্ন হুমকি মোকাবিলা করবে।

তবে এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এখনো বাস্তবে নেই। জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির টমাস গঞ্জালেজ রবার্টস জানান, গোল্ডেন ডোম সম্ভবত লোয়ার অরবটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে। এটি একটি নজিরবিহীন প্রযুক্তিগত অর্জন, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান তাঁর স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে একই ধরনের একটি ধারণা প্রস্তাব করেছিলেন। এর ডাকনাম ছিল ‘স্টার ওয়ার্স’। ট্রাম্প গোল্ডেন ডোমকে ‘প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ৪০ বছর আগে যে কাজ শুরু করেছিলেন, তা শেষ করার প্রচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারাকে ‘অন্ধকারে বুলেট দিয়ে বুলেট আঘাত করার’ মতো কঠিন বলে বর্ণনা করেন। বারবাখ বলেন, কারণ এ ক্ষেত্রে আগত ‘লক্ষ্যবস্তু ছোট, দ্রুত গতিশীল এবং কোনো রেডিও বা ইনফ্রারেড তরঙ্গ সংকেত বিচ্ছুরণ করে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এমনকি আশাবাদী প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও ১০০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারার সম্ভাবনা কম বলে স্বীকার করেন।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরই মধ্যেই ভূমিভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে আলাস্কায় মোতায়েন করা হয়েছে। বারবাখ বলেন, এগুলো ‘সর্বোচ্চ কয়েক ডজন আগত ওয়ারহেড গুলি করে নামাতে পারে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রাশিয়া ও চীন তাদের ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও প্রতিহত করা কঠিন করতে পাল্টা ব্যবস্থা তৈরি করছে।

বারবাখ বলেন, ‘সাবসনিক (শব্দের চেয়ে কম গতির) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বা মার্কিন সীমান্তের বাইরে থেকে উৎক্ষেপিত স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে বিদ্যমান প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। তবে পুরো দেশ কভার করার জন্য পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা ব্যয়বহুল হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসল চ্যালেঞ্জ হবে গোল্ডেন ডোমের লক্ষ্য। কারণ, ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসারে, এটি চীন বা রাশিয়ার মতো দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র শতভাগ আটকানোর চেষ্টা করবে।’

ট্রাম্পের দাবি, গোল্ডেন ডোম বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত, এমনকি মহাকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করবে। এর অর্থ হলো—এর জন্য ‘লোয়ার অরবিটালে সম্ভাব্য হাজার হাজার মহাকাশভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের একটি ঘন ক্ষেত্র প্রয়োজন হবে।’ রবার্টস বলেন, ‘এগুলো যেকোনো জায়গা থেকে উৎক্ষেপণের কয়েক মিনিটের মধ্যে কক্ষপথ থেকে নেমে এসে ক্ষেপণাস্ত্রকে আঘাত করতে পারবে।’

রবার্টস আরও বলেন, এটি নিশ্চিত করতে গিয়ে ‘যে পরিমাণ স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হবে, তা এখন পর্যন্ত উৎক্ষেপিত যেকোনো (স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন) বা স্যাটেলাইট নক্ষত্র মণ্ডলের চেয়ে বড় হতে হবে।’ বর্তমানে, মহাকাশে সবচেয়ে বড় স্যাটেলাইট নক্ষত্রমণ্ডল স্পেসএক্সের এবং এটি প্রায় ৭ হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত।

ট্রাম্প গোল্ডেন ডোমের জন্য ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেট প্রস্তাব করেছেন। যদিও এই তহবিল এখনো মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পায়নি। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের অনুমান, গোল্ডেন ডোমের মতো একটি মহাকাশভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর সিস্টেমের জন্য ৫৪২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। ওয়াশিংটন ডিসির সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্যাট্রিসিয়া বাজিলচিক বলেন, ‘১৭৫ বিলিয়ন ডলারের অঙ্কে কী কী ব্যয় অন্তর্ভুক্ত, তা স্পষ্ট নয়।’

ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন যে, গোল্ডেন ডোম তার বর্তমান মেয়াদের শেষ নাগাদ অর্থাৎ ২০২৯ সালের প্রথম দিকে ‘পুরোপুরি কার্যকর’ হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা এটা সম্ভব বলে মনে করেন না। বাজিলচিক বলেন, ‘তিন বছরের সময়সীমা খুবই উচ্চাভিলাষী। এই উদ্যোগ সম্ভবত কমপক্ষে ১০ দশক, এমনকি তারও বেশি সময় ধরে চলবে।’

সময়সীমার অনেকটাই নির্ভর করবে এই প্রকল্প কতগুলো বিদ্যমান সামরিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে তার ওপর। বাজিলচিক বলেন, ‘নতুন ইন্টারসেপ্টর, ওভার-দ্য-হরাইজন রাডার, মহাকাশভিত্তিক সেন্সর ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীসহ স্বল্প মেয়াদে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব।’ কিন্তু গোল্ডেন ডোমের জন্য প্রয়োজনীয় হাজার হাজার স্যাটেলাইট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কত দ্রুত উৎক্ষেপণ করতে পারবে, তা নিয়ে বড় ধরনে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মহাকাশভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর প্রযুক্তি বিকাশের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল।

রবার্টস বলেন, ‘আমার মনে হয়, মাত্র তিন বছরে একটি বিশাল (স্যাটেলাইট) নক্ষত্র মণ্ডল স্থাপনের জন্য একটি উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্পেসএক্স মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে যেকোনো সংস্থার চেয়ে বেশি জিনিস বেশিবার উৎক্ষেপণ করে। এখানে চাওয়া হচ্ছে সেই ধারণাকেও আরও বাড়িয়ে দেওয়া।’

বারবাখ বলেন, ‘আমার মনে হয়, এত দ্রুত শতভাগ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে সক্ষম অর্থে একটি সিস্টেম পুরোপুরি কার্যকর হওয়া প্রায় অসম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এত দ্রুত ছোট আকারের অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন করাও খুব কঠিন হবে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে এরই মধ্যে একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলমান। এই তিনটি দেশই নিজ নিজ পারমাণবিক অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ ও প্রসারিত করছে। একই সঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মহাকাশভিত্তিক ব্যবস্থাও তৈরি করছে। বাজিলচিক বলেন, যদি গোল্ডেন ডোম ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা উন্নত করতে পারে, তবে এটি ‘কৌশলগত হিসেব-নিকেশও বদলে’ দিতে পারে। এর মাধ্যমে যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা থাকা প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে, যা তাদের হামলা চালানো থেকে বিরত রাখবে।

অন্যদিকে, রবার্টস বলেন, গোল্ডেন ডোমের ‘অস্থিতিশীলতায় অবদান রাখার আশঙ্কা’ আছে। অর্থাৎ, এটি কৌশলগত অস্থিতিশীলতাও তৈরি করতে পারে। কারণ এটি ‘আপনার পারমাণবিক প্রতিপক্ষকে এই সংকেত দেয় যে, আপনি তাদের বিশ্বাস করেন না।’ ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোল্ডেন ডোমের ‘শক্তিশালী আক্রমণাত্মক ইঙ্গিত’ রয়েছে এবং এটি মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি বাড়াবে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, গোল্ডেন ডোমের পরিকল্পনা রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনার পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পারে।

বারবাখ বলেন, এই ব্যবস্থা মোকাবিলায় চীন ও রাশিয়া ‘মার্কিন স্যাটেলাইট ধ্বংস বা অকার্যকর করার চেষ্টা’ করতে পারে। উভয় দেশেরই স্যাটেলাইট ভূপাতিত করার মতো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তারা মার্কিন স্যাটেলাইট সিস্টেমে ইলেকট্রনিকভাবে জ্যাম বা হ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন সরকার সতর্ক করেছিল যে, রাশিয়ার কাছে মহাকাশ অস্ত্র উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা স্যাটেলাইট অকার্যকর বা ধ্বংস করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে সম্ভবত পারমাণবিক বিস্ফোরণ ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া।

এই দেশগুলো তাদের ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার বাড়াতে পারে এবং সম্ভবত আরও কৌশলী অস্ত্র তৈরি করতে পারে, যা মোতায়েন তো করা হবেই, প্রয়োজনে ব্যবহারও করা হতে পারে বলে মনে করেন বারবাখ। তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়া এরই মধ্যেই মহাকাশভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা দিয়ে ঠেকানো যাবে না এমন অস্ত্র তৈরি শুরু করেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি, আন্তঃমহাদেশীয় পারমাণবিক টর্পেডোর কথা বলেন, যা স্থল বা আকাশে নয়, পানির নিচে দিয়ে চলে।

নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।

ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।

ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।

ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।

‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

‘আমি তো মামলা করি না, ডাইরেক্ট ওয়ারেন্ট করাই’

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত