আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত দুই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে তিন তিনবার সফর করেছেন। এই ঘন ঘন সফরকে আমলে নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলেছে, ভোট এলেই কেবল বারবার ‘অতিথি পাখির’ মতো দেখা দেন মোদি। তবে প্রশ্ন হলো—অল্প সময়ের ব্যবধানে মোদির এতবার পশ্চিমবঙ্গ সফরের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে দেখা জরুরি।
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন। নতুন এই পরিকল্পনায় কী কী কৌশল আছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—পশ্চিমবঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বিজেপির নতুন কৌশলে রয়েছে দশটি বড় দিক।
১. মমতাকে দেখে নেওয়া
বিজেপির অন্যতম প্রধান কৌশল হলো তৃণমূলের প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে নেওয়া। তবে বিজেপিতে মধ্যে এমন কোনো একক, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মুখ নেই যে মমতাকে এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। তৃণমূল ঘোষণা করেছে, এবারের নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ কম দেখা যাবে, বরং পোস্টার–ব্যানারে বেশি করে তুলে ধরা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতার এই একক উপস্থিতিকে ভারসাম্য করার চেষ্টা হিসেবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের মুখ হিসেবে মোদিকেই সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের মধ্য অন্যতম শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি শহুরে, মধ্যবিত্ত, সেক্যুলার চরিত্রের হলেও গণমানুষের নেতা নন। অন্যদিকে তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরের জেলা নেতা হলেও তিনি প্রকৃত গণমানুষের নেতা। কারণ, তিনি পরিশ্রমী, নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বেফাঁস কথা বলায় তাঁর ব্যাপক কুখ্যাতিও রয়েছে।
এর পাশাপাশি রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে। তবে কোনোভাবেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নন। এর বাইরে, দিলীপ ঘোষ একসময় রাজনীতির মঞ্চ গরম করতে পারলেও নানা কেলেঙ্কারির কারণে এখন তিনি সংগঠন থেকে সরে গেছেন।
২. নিশ্চয়তার ফুলঝুরি
নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী জাতীয় ‘ব্র্যান্ডিং’ থাকায় বিজেপি এবার তাঁকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার ফুলঝুরি ছোটানোর চেষ্টা করছে। আগের জনপ্রিয় স্লোগান ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়’কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক নতুন বাংলা—যেখানে উন্নয়ন থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মুক্ত রাখা হবে।
বিপরীতে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রতিটি আসনে জনসংযোগ করলেই জয় আসবে। এর বিপরীতে বিজেপির কাছে তৃণমূলের মতো শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। তাই অভিষেক জেলা জেলায় আরও বেশি করে প্রবেশ করছেন, স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন।
গত নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি বুঝতে পেরেছে, মোদি যত বার্তাই দিন না কেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি মেটাতে বিজেপি এবার আরও আক্রমণাত্মক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারে নেমেছে—ভ্লগ, পডকাস্ট, স্থানীয় বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে আরএসএসের সহায়তাও নিচ্ছে। ফলে এবার বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দেখা যাবে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বেশি বেশি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’—এর মতো পরিচিত কর্মসূচি প্রচার করেছেন। এই জায়গায় বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে হারানো কঠিন হবে। মমতা ব্যানার্জির কাজ করার ধরনও অনেকটা কৌশলী। বিজেপি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় নেই, তাই কেন্দ্রীয় সরকার মোদির ইমেজ ব্যবহার করে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তিও নেই। তবে এবার তারা চেষ্টা করছে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর। বাইরে থেকে আরএসএসের কর্মী এনে ধর্মীয় লাইনে নির্বাচনী প্রচারের পর্যায়ে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন মানুষ এসব কর্মসূচির প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা কী।
৩. বিজেপি-আরএসএস সমীকরণ
গতবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের আরএসএস প্রচারকেরাই নিজেদের মধ্যে একমত নন, যদিও দলে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন যিনি আরএসএসকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে মোহন ভাগবত পশ্চিমবঙ্গে এলে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা না করে আরএসএস কর্মীদের ওপরই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরএসএসের মূল পরিকল্পনা হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরানো। তারা বিজেপির জন্য কাজ করবে, তবে একসঙ্গে নয়—স্বতন্ত্রভাবে। এতে তাদের কাজের ধরন আরও কার্যকর হবে। তাই এবারও আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তারা ঘরে ঘরে প্রচার চালাবে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং বিভিন্ন জেলায় শাখা সভা আয়োজন করবে।
৪. হিন্দুত্বের আবেদন
এই মুহূর্তে বিজেপি কিংবা আরএসএস—কেউই ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে জোর দিচ্ছে না। হিন্দুত্ব এখন বিজেপির রাজনীতিতে বেশি কার্যকর হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোতে—যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘জয় শ্রী রাম’ আর মোদির উপস্থিতি একসঙ্গে মিলেছিল এবং বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সে সময় বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘জয় বজরংবলী’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান আরও তীব্রভাবে ছড়িয়েছিলেন।
৫. উন্নয়নই মূল কথা
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের সমাবেশে নরেন্দ্র মোদি ‘জয় মা কালী’ ও ‘জয় মা দুর্গা’ বলেছিলেন। তবে সর্বশেষ দমদমের সভায় তিনি এগুলোও বলেননি। সেখানে মূল বিষয় ছিল উন্নয়ন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে উন্নয়নের জন্য এতটা তৃষ্ণার্ত, তা একমাত্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকারই এনে দিতে পারে। তাই মূল স্লোগান ছিল—‘বিজেপি লাও, বাংলা বাঁচাও—বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে বাংলা বাঁচাও।’
৬. নেতা নয় বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূলের সরকার
এবার মোদি ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন না। গত নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই মমতা প্রধান টার্গেট ছিলেন। ২০২১ সালের ভোটে ইডি অভিষেকের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতারা তাকে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, কয়লা-কতল পাচারসহ নানা অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছিলেন। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত মোদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। বরং মূল ফোকাস রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব। একসময় যে শহর নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল, তা উনিশ শতকের মতো অবক্ষয়ে নিমজ্জিত—এমন বার্তাই দিচ্ছে বিজেপি। আর তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে নতুন যুগ আনতে পারে কেবল বিজেপিই। এটি তাদের নতুন কৌশল।
৭. মেরুকরণের রাজনীতি
আগে শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণকে সামনে এনে প্রচার চালাতেন। তবে বিজেপি জানে, মুসলিম ভোটারদের জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তারা এখন কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-আইএসএফ জোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও আগের দুই নির্বাচনে আইএসএফ বিশেষ কোনো ভোট টানতে পারেনি। উল্টো এই জোট বিজেপির জন্য ক্ষতিকরও হয়েছে। তাই বিজেপির মূল কৌশল হচ্ছে হিন্দু ভোট ধরে রাখা এবং মমতার হাতে যা আছে তা থেকে কিছু টেনে নেওয়া। তবে এবার তারা সরাসরি হিন্দু-মুসলিম সংঘাত নয় বরং অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনছে। কারণ কেবল মুসলিম ভোটে মমতা জিততে পারবেন না। এই কৌশল উত্তর প্রদেশে কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গে অন্যভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
অতীতে বাজপেয়ি-আদভানি যুগেও পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছিল। এবারও বিজেপি মনে করছে, ‘রাম’-এর চেয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যু কার্যকর। মোদি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, অনুপ্রবেশ অবৈধ দখল ও বেআইনি অভিবাসন। যাদের এখানে থাকার বা ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, তাদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে দেওয়া যাবে না। তবে তিনি অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ থেকে বিরত থেকেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, এই অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ, এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বিএসএফের। তাই এর দায় তৃণমূলের নয়। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা অনুপ্রবেশের জন্য দায়ী, শুধু বিএসএফকে দায়ী করলে চলবে না। তারা বলছে, ত্রিপুরা সরকার যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে সক্ষম হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা করে না।
৮. ভোটার তালিকা
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া অনেক কঠোরভাবে করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ বিজেপি সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন এটা করছে বিহারের ভোটের জনমিতি পাল্টে দেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে নিয়ে গিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।
বিপরীতে বিজেপি বলছে, ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে ভোট কারচুপি চালানোর জন্যই তৃণমূল এর বিরোধিতা করছে। একই অভিযোগ তৃণমূল একসময় সিপিএমের বিরুদ্ধে তুলেছিল। এখন বিজেপি একই অভিযোগ তুলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
৯. পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি
নির্বাচনে দুর্নীতি ইস্যু কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত আছে। সব সময় নয়, তবে কিছু সময়ে এটি বড় ইস্যু হয়েছে। যেমন—১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ‘মিস্টার ক্লিন।’ কিন্তু ১৯৮৯ সালে বোফোর্স কেলেঙ্কারির পর তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বোফোর্স গান্ধী।’ তখন স্লোগান ওঠে—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ এতে দুর্নীতি ইস্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় জায়গা পায়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেলেঙ্কারি ইত্যাদি সামনে আনলেও মমতা তাতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তিনি অনেকটা প্রতিরোধী অবস্থানে আছেন। তবে মোদি দুর্নীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। গত বছর এবং তার আগের বছরও ১৫ আগস্টের ভাষণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। তৃণমূল যদিও এটিকে ‘ওয়াশিং মেশিন ইস্যু’ বলে আখ্যা দিয়েছে—অর্থাৎ, বেছে বেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তবুও বিজেপি এই ইস্যুকে সামনে এনে প্রচার চালাতে চায়। আগামী দিনগুলোতে দুর্নীতি বিরোধী প্রচার আরও জোরদার করবে বিজেপি।
১০. ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা ভুল থেকে শেখার কৌশল
দুর্গাপূজার সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাবে, আর আসল প্রচার শুরু হবে দীপাবলির পর থেকে। এর আগে পর্যন্ত বিজেপি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর কৌশল নিচ্ছে। মোদি যে প্রথম তিনটি সভা করেছেন, তার ভিত্তিতে জরিপ হবে। দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা এসব জরিপ চালাবে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং পরবর্তী প্রচার কৌশল সাজানো হবে।
এনডিটিভি থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

গত দুই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে তিন তিনবার সফর করেছেন। এই ঘন ঘন সফরকে আমলে নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলেছে, ভোট এলেই কেবল বারবার ‘অতিথি পাখির’ মতো দেখা দেন মোদি। তবে প্রশ্ন হলো—অল্প সময়ের ব্যবধানে মোদির এতবার পশ্চিমবঙ্গ সফরের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে দেখা জরুরি।
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন। নতুন এই পরিকল্পনায় কী কী কৌশল আছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—পশ্চিমবঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বিজেপির নতুন কৌশলে রয়েছে দশটি বড় দিক।
১. মমতাকে দেখে নেওয়া
বিজেপির অন্যতম প্রধান কৌশল হলো তৃণমূলের প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে নেওয়া। তবে বিজেপিতে মধ্যে এমন কোনো একক, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মুখ নেই যে মমতাকে এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। তৃণমূল ঘোষণা করেছে, এবারের নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ কম দেখা যাবে, বরং পোস্টার–ব্যানারে বেশি করে তুলে ধরা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতার এই একক উপস্থিতিকে ভারসাম্য করার চেষ্টা হিসেবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের মুখ হিসেবে মোদিকেই সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের মধ্য অন্যতম শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি শহুরে, মধ্যবিত্ত, সেক্যুলার চরিত্রের হলেও গণমানুষের নেতা নন। অন্যদিকে তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরের জেলা নেতা হলেও তিনি প্রকৃত গণমানুষের নেতা। কারণ, তিনি পরিশ্রমী, নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বেফাঁস কথা বলায় তাঁর ব্যাপক কুখ্যাতিও রয়েছে।
এর পাশাপাশি রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে। তবে কোনোভাবেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নন। এর বাইরে, দিলীপ ঘোষ একসময় রাজনীতির মঞ্চ গরম করতে পারলেও নানা কেলেঙ্কারির কারণে এখন তিনি সংগঠন থেকে সরে গেছেন।
২. নিশ্চয়তার ফুলঝুরি
নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী জাতীয় ‘ব্র্যান্ডিং’ থাকায় বিজেপি এবার তাঁকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার ফুলঝুরি ছোটানোর চেষ্টা করছে। আগের জনপ্রিয় স্লোগান ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়’কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক নতুন বাংলা—যেখানে উন্নয়ন থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মুক্ত রাখা হবে।
বিপরীতে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রতিটি আসনে জনসংযোগ করলেই জয় আসবে। এর বিপরীতে বিজেপির কাছে তৃণমূলের মতো শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। তাই অভিষেক জেলা জেলায় আরও বেশি করে প্রবেশ করছেন, স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন।
গত নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি বুঝতে পেরেছে, মোদি যত বার্তাই দিন না কেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি মেটাতে বিজেপি এবার আরও আক্রমণাত্মক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারে নেমেছে—ভ্লগ, পডকাস্ট, স্থানীয় বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে আরএসএসের সহায়তাও নিচ্ছে। ফলে এবার বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দেখা যাবে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বেশি বেশি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’—এর মতো পরিচিত কর্মসূচি প্রচার করেছেন। এই জায়গায় বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে হারানো কঠিন হবে। মমতা ব্যানার্জির কাজ করার ধরনও অনেকটা কৌশলী। বিজেপি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় নেই, তাই কেন্দ্রীয় সরকার মোদির ইমেজ ব্যবহার করে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তিও নেই। তবে এবার তারা চেষ্টা করছে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর। বাইরে থেকে আরএসএসের কর্মী এনে ধর্মীয় লাইনে নির্বাচনী প্রচারের পর্যায়ে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন মানুষ এসব কর্মসূচির প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা কী।
৩. বিজেপি-আরএসএস সমীকরণ
গতবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের আরএসএস প্রচারকেরাই নিজেদের মধ্যে একমত নন, যদিও দলে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন যিনি আরএসএসকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে মোহন ভাগবত পশ্চিমবঙ্গে এলে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা না করে আরএসএস কর্মীদের ওপরই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরএসএসের মূল পরিকল্পনা হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরানো। তারা বিজেপির জন্য কাজ করবে, তবে একসঙ্গে নয়—স্বতন্ত্রভাবে। এতে তাদের কাজের ধরন আরও কার্যকর হবে। তাই এবারও আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তারা ঘরে ঘরে প্রচার চালাবে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং বিভিন্ন জেলায় শাখা সভা আয়োজন করবে।
৪. হিন্দুত্বের আবেদন
এই মুহূর্তে বিজেপি কিংবা আরএসএস—কেউই ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে জোর দিচ্ছে না। হিন্দুত্ব এখন বিজেপির রাজনীতিতে বেশি কার্যকর হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোতে—যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘জয় শ্রী রাম’ আর মোদির উপস্থিতি একসঙ্গে মিলেছিল এবং বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সে সময় বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘জয় বজরংবলী’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান আরও তীব্রভাবে ছড়িয়েছিলেন।
৫. উন্নয়নই মূল কথা
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের সমাবেশে নরেন্দ্র মোদি ‘জয় মা কালী’ ও ‘জয় মা দুর্গা’ বলেছিলেন। তবে সর্বশেষ দমদমের সভায় তিনি এগুলোও বলেননি। সেখানে মূল বিষয় ছিল উন্নয়ন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে উন্নয়নের জন্য এতটা তৃষ্ণার্ত, তা একমাত্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকারই এনে দিতে পারে। তাই মূল স্লোগান ছিল—‘বিজেপি লাও, বাংলা বাঁচাও—বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে বাংলা বাঁচাও।’
৬. নেতা নয় বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূলের সরকার
এবার মোদি ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন না। গত নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই মমতা প্রধান টার্গেট ছিলেন। ২০২১ সালের ভোটে ইডি অভিষেকের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতারা তাকে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, কয়লা-কতল পাচারসহ নানা অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছিলেন। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত মোদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। বরং মূল ফোকাস রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব। একসময় যে শহর নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল, তা উনিশ শতকের মতো অবক্ষয়ে নিমজ্জিত—এমন বার্তাই দিচ্ছে বিজেপি। আর তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে নতুন যুগ আনতে পারে কেবল বিজেপিই। এটি তাদের নতুন কৌশল।
৭. মেরুকরণের রাজনীতি
আগে শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণকে সামনে এনে প্রচার চালাতেন। তবে বিজেপি জানে, মুসলিম ভোটারদের জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তারা এখন কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-আইএসএফ জোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও আগের দুই নির্বাচনে আইএসএফ বিশেষ কোনো ভোট টানতে পারেনি। উল্টো এই জোট বিজেপির জন্য ক্ষতিকরও হয়েছে। তাই বিজেপির মূল কৌশল হচ্ছে হিন্দু ভোট ধরে রাখা এবং মমতার হাতে যা আছে তা থেকে কিছু টেনে নেওয়া। তবে এবার তারা সরাসরি হিন্দু-মুসলিম সংঘাত নয় বরং অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনছে। কারণ কেবল মুসলিম ভোটে মমতা জিততে পারবেন না। এই কৌশল উত্তর প্রদেশে কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গে অন্যভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
অতীতে বাজপেয়ি-আদভানি যুগেও পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছিল। এবারও বিজেপি মনে করছে, ‘রাম’-এর চেয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যু কার্যকর। মোদি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, অনুপ্রবেশ অবৈধ দখল ও বেআইনি অভিবাসন। যাদের এখানে থাকার বা ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, তাদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে দেওয়া যাবে না। তবে তিনি অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ থেকে বিরত থেকেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, এই অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ, এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বিএসএফের। তাই এর দায় তৃণমূলের নয়। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা অনুপ্রবেশের জন্য দায়ী, শুধু বিএসএফকে দায়ী করলে চলবে না। তারা বলছে, ত্রিপুরা সরকার যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে সক্ষম হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা করে না।
৮. ভোটার তালিকা
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া অনেক কঠোরভাবে করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ বিজেপি সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন এটা করছে বিহারের ভোটের জনমিতি পাল্টে দেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে নিয়ে গিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।
বিপরীতে বিজেপি বলছে, ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে ভোট কারচুপি চালানোর জন্যই তৃণমূল এর বিরোধিতা করছে। একই অভিযোগ তৃণমূল একসময় সিপিএমের বিরুদ্ধে তুলেছিল। এখন বিজেপি একই অভিযোগ তুলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
৯. পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি
নির্বাচনে দুর্নীতি ইস্যু কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত আছে। সব সময় নয়, তবে কিছু সময়ে এটি বড় ইস্যু হয়েছে। যেমন—১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ‘মিস্টার ক্লিন।’ কিন্তু ১৯৮৯ সালে বোফোর্স কেলেঙ্কারির পর তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বোফোর্স গান্ধী।’ তখন স্লোগান ওঠে—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ এতে দুর্নীতি ইস্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় জায়গা পায়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেলেঙ্কারি ইত্যাদি সামনে আনলেও মমতা তাতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তিনি অনেকটা প্রতিরোধী অবস্থানে আছেন। তবে মোদি দুর্নীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। গত বছর এবং তার আগের বছরও ১৫ আগস্টের ভাষণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। তৃণমূল যদিও এটিকে ‘ওয়াশিং মেশিন ইস্যু’ বলে আখ্যা দিয়েছে—অর্থাৎ, বেছে বেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তবুও বিজেপি এই ইস্যুকে সামনে এনে প্রচার চালাতে চায়। আগামী দিনগুলোতে দুর্নীতি বিরোধী প্রচার আরও জোরদার করবে বিজেপি।
১০. ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা ভুল থেকে শেখার কৌশল
দুর্গাপূজার সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাবে, আর আসল প্রচার শুরু হবে দীপাবলির পর থেকে। এর আগে পর্যন্ত বিজেপি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর কৌশল নিচ্ছে। মোদি যে প্রথম তিনটি সভা করেছেন, তার ভিত্তিতে জরিপ হবে। দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা এসব জরিপ চালাবে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং পরবর্তী প্রচার কৌশল সাজানো হবে।
এনডিটিভি থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত দুই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে তিন তিনবার সফর করেছেন। এই ঘন ঘন সফরকে আমলে নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলেছে, ভোট এলেই কেবল বারবার ‘অতিথি পাখির’ মতো দেখা দেন মোদি। তবে প্রশ্ন হলো—অল্প সময়ের ব্যবধানে মোদির এতবার পশ্চিমবঙ্গ সফরের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে দেখা জরুরি।
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন। নতুন এই পরিকল্পনায় কী কী কৌশল আছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—পশ্চিমবঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বিজেপির নতুন কৌশলে রয়েছে দশটি বড় দিক।
১. মমতাকে দেখে নেওয়া
বিজেপির অন্যতম প্রধান কৌশল হলো তৃণমূলের প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে নেওয়া। তবে বিজেপিতে মধ্যে এমন কোনো একক, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মুখ নেই যে মমতাকে এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। তৃণমূল ঘোষণা করেছে, এবারের নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ কম দেখা যাবে, বরং পোস্টার–ব্যানারে বেশি করে তুলে ধরা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতার এই একক উপস্থিতিকে ভারসাম্য করার চেষ্টা হিসেবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের মুখ হিসেবে মোদিকেই সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের মধ্য অন্যতম শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি শহুরে, মধ্যবিত্ত, সেক্যুলার চরিত্রের হলেও গণমানুষের নেতা নন। অন্যদিকে তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরের জেলা নেতা হলেও তিনি প্রকৃত গণমানুষের নেতা। কারণ, তিনি পরিশ্রমী, নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বেফাঁস কথা বলায় তাঁর ব্যাপক কুখ্যাতিও রয়েছে।
এর পাশাপাশি রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে। তবে কোনোভাবেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নন। এর বাইরে, দিলীপ ঘোষ একসময় রাজনীতির মঞ্চ গরম করতে পারলেও নানা কেলেঙ্কারির কারণে এখন তিনি সংগঠন থেকে সরে গেছেন।
২. নিশ্চয়তার ফুলঝুরি
নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী জাতীয় ‘ব্র্যান্ডিং’ থাকায় বিজেপি এবার তাঁকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার ফুলঝুরি ছোটানোর চেষ্টা করছে। আগের জনপ্রিয় স্লোগান ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়’কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক নতুন বাংলা—যেখানে উন্নয়ন থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মুক্ত রাখা হবে।
বিপরীতে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রতিটি আসনে জনসংযোগ করলেই জয় আসবে। এর বিপরীতে বিজেপির কাছে তৃণমূলের মতো শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। তাই অভিষেক জেলা জেলায় আরও বেশি করে প্রবেশ করছেন, স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন।
গত নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি বুঝতে পেরেছে, মোদি যত বার্তাই দিন না কেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি মেটাতে বিজেপি এবার আরও আক্রমণাত্মক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারে নেমেছে—ভ্লগ, পডকাস্ট, স্থানীয় বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে আরএসএসের সহায়তাও নিচ্ছে। ফলে এবার বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দেখা যাবে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বেশি বেশি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’—এর মতো পরিচিত কর্মসূচি প্রচার করেছেন। এই জায়গায় বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে হারানো কঠিন হবে। মমতা ব্যানার্জির কাজ করার ধরনও অনেকটা কৌশলী। বিজেপি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় নেই, তাই কেন্দ্রীয় সরকার মোদির ইমেজ ব্যবহার করে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তিও নেই। তবে এবার তারা চেষ্টা করছে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর। বাইরে থেকে আরএসএসের কর্মী এনে ধর্মীয় লাইনে নির্বাচনী প্রচারের পর্যায়ে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন মানুষ এসব কর্মসূচির প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা কী।
৩. বিজেপি-আরএসএস সমীকরণ
গতবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের আরএসএস প্রচারকেরাই নিজেদের মধ্যে একমত নন, যদিও দলে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন যিনি আরএসএসকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে মোহন ভাগবত পশ্চিমবঙ্গে এলে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা না করে আরএসএস কর্মীদের ওপরই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরএসএসের মূল পরিকল্পনা হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরানো। তারা বিজেপির জন্য কাজ করবে, তবে একসঙ্গে নয়—স্বতন্ত্রভাবে। এতে তাদের কাজের ধরন আরও কার্যকর হবে। তাই এবারও আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তারা ঘরে ঘরে প্রচার চালাবে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং বিভিন্ন জেলায় শাখা সভা আয়োজন করবে।
৪. হিন্দুত্বের আবেদন
এই মুহূর্তে বিজেপি কিংবা আরএসএস—কেউই ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে জোর দিচ্ছে না। হিন্দুত্ব এখন বিজেপির রাজনীতিতে বেশি কার্যকর হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোতে—যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘জয় শ্রী রাম’ আর মোদির উপস্থিতি একসঙ্গে মিলেছিল এবং বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সে সময় বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘জয় বজরংবলী’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান আরও তীব্রভাবে ছড়িয়েছিলেন।
৫. উন্নয়নই মূল কথা
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের সমাবেশে নরেন্দ্র মোদি ‘জয় মা কালী’ ও ‘জয় মা দুর্গা’ বলেছিলেন। তবে সর্বশেষ দমদমের সভায় তিনি এগুলোও বলেননি। সেখানে মূল বিষয় ছিল উন্নয়ন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে উন্নয়নের জন্য এতটা তৃষ্ণার্ত, তা একমাত্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকারই এনে দিতে পারে। তাই মূল স্লোগান ছিল—‘বিজেপি লাও, বাংলা বাঁচাও—বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে বাংলা বাঁচাও।’
৬. নেতা নয় বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূলের সরকার
এবার মোদি ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন না। গত নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই মমতা প্রধান টার্গেট ছিলেন। ২০২১ সালের ভোটে ইডি অভিষেকের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতারা তাকে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, কয়লা-কতল পাচারসহ নানা অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছিলেন। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত মোদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। বরং মূল ফোকাস রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব। একসময় যে শহর নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল, তা উনিশ শতকের মতো অবক্ষয়ে নিমজ্জিত—এমন বার্তাই দিচ্ছে বিজেপি। আর তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে নতুন যুগ আনতে পারে কেবল বিজেপিই। এটি তাদের নতুন কৌশল।
৭. মেরুকরণের রাজনীতি
আগে শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণকে সামনে এনে প্রচার চালাতেন। তবে বিজেপি জানে, মুসলিম ভোটারদের জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তারা এখন কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-আইএসএফ জোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও আগের দুই নির্বাচনে আইএসএফ বিশেষ কোনো ভোট টানতে পারেনি। উল্টো এই জোট বিজেপির জন্য ক্ষতিকরও হয়েছে। তাই বিজেপির মূল কৌশল হচ্ছে হিন্দু ভোট ধরে রাখা এবং মমতার হাতে যা আছে তা থেকে কিছু টেনে নেওয়া। তবে এবার তারা সরাসরি হিন্দু-মুসলিম সংঘাত নয় বরং অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনছে। কারণ কেবল মুসলিম ভোটে মমতা জিততে পারবেন না। এই কৌশল উত্তর প্রদেশে কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গে অন্যভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
অতীতে বাজপেয়ি-আদভানি যুগেও পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছিল। এবারও বিজেপি মনে করছে, ‘রাম’-এর চেয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যু কার্যকর। মোদি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, অনুপ্রবেশ অবৈধ দখল ও বেআইনি অভিবাসন। যাদের এখানে থাকার বা ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, তাদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে দেওয়া যাবে না। তবে তিনি অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ থেকে বিরত থেকেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, এই অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ, এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বিএসএফের। তাই এর দায় তৃণমূলের নয়। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা অনুপ্রবেশের জন্য দায়ী, শুধু বিএসএফকে দায়ী করলে চলবে না। তারা বলছে, ত্রিপুরা সরকার যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে সক্ষম হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা করে না।
৮. ভোটার তালিকা
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া অনেক কঠোরভাবে করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ বিজেপি সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন এটা করছে বিহারের ভোটের জনমিতি পাল্টে দেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে নিয়ে গিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।
বিপরীতে বিজেপি বলছে, ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে ভোট কারচুপি চালানোর জন্যই তৃণমূল এর বিরোধিতা করছে। একই অভিযোগ তৃণমূল একসময় সিপিএমের বিরুদ্ধে তুলেছিল। এখন বিজেপি একই অভিযোগ তুলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
৯. পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি
নির্বাচনে দুর্নীতি ইস্যু কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত আছে। সব সময় নয়, তবে কিছু সময়ে এটি বড় ইস্যু হয়েছে। যেমন—১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ‘মিস্টার ক্লিন।’ কিন্তু ১৯৮৯ সালে বোফোর্স কেলেঙ্কারির পর তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বোফোর্স গান্ধী।’ তখন স্লোগান ওঠে—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ এতে দুর্নীতি ইস্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় জায়গা পায়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেলেঙ্কারি ইত্যাদি সামনে আনলেও মমতা তাতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তিনি অনেকটা প্রতিরোধী অবস্থানে আছেন। তবে মোদি দুর্নীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। গত বছর এবং তার আগের বছরও ১৫ আগস্টের ভাষণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। তৃণমূল যদিও এটিকে ‘ওয়াশিং মেশিন ইস্যু’ বলে আখ্যা দিয়েছে—অর্থাৎ, বেছে বেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তবুও বিজেপি এই ইস্যুকে সামনে এনে প্রচার চালাতে চায়। আগামী দিনগুলোতে দুর্নীতি বিরোধী প্রচার আরও জোরদার করবে বিজেপি।
১০. ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা ভুল থেকে শেখার কৌশল
দুর্গাপূজার সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাবে, আর আসল প্রচার শুরু হবে দীপাবলির পর থেকে। এর আগে পর্যন্ত বিজেপি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর কৌশল নিচ্ছে। মোদি যে প্রথম তিনটি সভা করেছেন, তার ভিত্তিতে জরিপ হবে। দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা এসব জরিপ চালাবে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং পরবর্তী প্রচার কৌশল সাজানো হবে।
এনডিটিভি থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

গত দুই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে তিন তিনবার সফর করেছেন। এই ঘন ঘন সফরকে আমলে নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলেছে, ভোট এলেই কেবল বারবার ‘অতিথি পাখির’ মতো দেখা দেন মোদি। তবে প্রশ্ন হলো—অল্প সময়ের ব্যবধানে মোদির এতবার পশ্চিমবঙ্গ সফরের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে দেখা জরুরি।
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন। নতুন এই পরিকল্পনায় কী কী কৌশল আছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—পশ্চিমবঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বিজেপির নতুন কৌশলে রয়েছে দশটি বড় দিক।
১. মমতাকে দেখে নেওয়া
বিজেপির অন্যতম প্রধান কৌশল হলো তৃণমূলের প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে নেওয়া। তবে বিজেপিতে মধ্যে এমন কোনো একক, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মুখ নেই যে মমতাকে এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। তৃণমূল ঘোষণা করেছে, এবারের নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ কম দেখা যাবে, বরং পোস্টার–ব্যানারে বেশি করে তুলে ধরা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতার এই একক উপস্থিতিকে ভারসাম্য করার চেষ্টা হিসেবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের মুখ হিসেবে মোদিকেই সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের মধ্য অন্যতম শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি শহুরে, মধ্যবিত্ত, সেক্যুলার চরিত্রের হলেও গণমানুষের নেতা নন। অন্যদিকে তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরের জেলা নেতা হলেও তিনি প্রকৃত গণমানুষের নেতা। কারণ, তিনি পরিশ্রমী, নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বেফাঁস কথা বলায় তাঁর ব্যাপক কুখ্যাতিও রয়েছে।
এর পাশাপাশি রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে। তবে কোনোভাবেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নন। এর বাইরে, দিলীপ ঘোষ একসময় রাজনীতির মঞ্চ গরম করতে পারলেও নানা কেলেঙ্কারির কারণে এখন তিনি সংগঠন থেকে সরে গেছেন।
২. নিশ্চয়তার ফুলঝুরি
নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী জাতীয় ‘ব্র্যান্ডিং’ থাকায় বিজেপি এবার তাঁকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার ফুলঝুরি ছোটানোর চেষ্টা করছে। আগের জনপ্রিয় স্লোগান ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়’কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক নতুন বাংলা—যেখানে উন্নয়ন থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মুক্ত রাখা হবে।
বিপরীতে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রতিটি আসনে জনসংযোগ করলেই জয় আসবে। এর বিপরীতে বিজেপির কাছে তৃণমূলের মতো শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। তাই অভিষেক জেলা জেলায় আরও বেশি করে প্রবেশ করছেন, স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন।
গত নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি বুঝতে পেরেছে, মোদি যত বার্তাই দিন না কেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি মেটাতে বিজেপি এবার আরও আক্রমণাত্মক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারে নেমেছে—ভ্লগ, পডকাস্ট, স্থানীয় বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে আরএসএসের সহায়তাও নিচ্ছে। ফলে এবার বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দেখা যাবে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বেশি বেশি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’—এর মতো পরিচিত কর্মসূচি প্রচার করেছেন। এই জায়গায় বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে হারানো কঠিন হবে। মমতা ব্যানার্জির কাজ করার ধরনও অনেকটা কৌশলী। বিজেপি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় নেই, তাই কেন্দ্রীয় সরকার মোদির ইমেজ ব্যবহার করে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তিও নেই। তবে এবার তারা চেষ্টা করছে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর। বাইরে থেকে আরএসএসের কর্মী এনে ধর্মীয় লাইনে নির্বাচনী প্রচারের পর্যায়ে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন মানুষ এসব কর্মসূচির প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা কী।
৩. বিজেপি-আরএসএস সমীকরণ
গতবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের আরএসএস প্রচারকেরাই নিজেদের মধ্যে একমত নন, যদিও দলে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন যিনি আরএসএসকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে মোহন ভাগবত পশ্চিমবঙ্গে এলে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা না করে আরএসএস কর্মীদের ওপরই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরএসএসের মূল পরিকল্পনা হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরানো। তারা বিজেপির জন্য কাজ করবে, তবে একসঙ্গে নয়—স্বতন্ত্রভাবে। এতে তাদের কাজের ধরন আরও কার্যকর হবে। তাই এবারও আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তারা ঘরে ঘরে প্রচার চালাবে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং বিভিন্ন জেলায় শাখা সভা আয়োজন করবে।
৪. হিন্দুত্বের আবেদন
এই মুহূর্তে বিজেপি কিংবা আরএসএস—কেউই ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে জোর দিচ্ছে না। হিন্দুত্ব এখন বিজেপির রাজনীতিতে বেশি কার্যকর হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোতে—যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘জয় শ্রী রাম’ আর মোদির উপস্থিতি একসঙ্গে মিলেছিল এবং বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সে সময় বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘জয় বজরংবলী’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান আরও তীব্রভাবে ছড়িয়েছিলেন।
৫. উন্নয়নই মূল কথা
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের সমাবেশে নরেন্দ্র মোদি ‘জয় মা কালী’ ও ‘জয় মা দুর্গা’ বলেছিলেন। তবে সর্বশেষ দমদমের সভায় তিনি এগুলোও বলেননি। সেখানে মূল বিষয় ছিল উন্নয়ন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে উন্নয়নের জন্য এতটা তৃষ্ণার্ত, তা একমাত্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকারই এনে দিতে পারে। তাই মূল স্লোগান ছিল—‘বিজেপি লাও, বাংলা বাঁচাও—বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে বাংলা বাঁচাও।’
৬. নেতা নয় বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূলের সরকার
এবার মোদি ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন না। গত নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই মমতা প্রধান টার্গেট ছিলেন। ২০২১ সালের ভোটে ইডি অভিষেকের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতারা তাকে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, কয়লা-কতল পাচারসহ নানা অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছিলেন। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত মোদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। বরং মূল ফোকাস রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব। একসময় যে শহর নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল, তা উনিশ শতকের মতো অবক্ষয়ে নিমজ্জিত—এমন বার্তাই দিচ্ছে বিজেপি। আর তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে নতুন যুগ আনতে পারে কেবল বিজেপিই। এটি তাদের নতুন কৌশল।
৭. মেরুকরণের রাজনীতি
আগে শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণকে সামনে এনে প্রচার চালাতেন। তবে বিজেপি জানে, মুসলিম ভোটারদের জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তারা এখন কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-আইএসএফ জোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও আগের দুই নির্বাচনে আইএসএফ বিশেষ কোনো ভোট টানতে পারেনি। উল্টো এই জোট বিজেপির জন্য ক্ষতিকরও হয়েছে। তাই বিজেপির মূল কৌশল হচ্ছে হিন্দু ভোট ধরে রাখা এবং মমতার হাতে যা আছে তা থেকে কিছু টেনে নেওয়া। তবে এবার তারা সরাসরি হিন্দু-মুসলিম সংঘাত নয় বরং অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনছে। কারণ কেবল মুসলিম ভোটে মমতা জিততে পারবেন না। এই কৌশল উত্তর প্রদেশে কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গে অন্যভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
অতীতে বাজপেয়ি-আদভানি যুগেও পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছিল। এবারও বিজেপি মনে করছে, ‘রাম’-এর চেয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যু কার্যকর। মোদি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, অনুপ্রবেশ অবৈধ দখল ও বেআইনি অভিবাসন। যাদের এখানে থাকার বা ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, তাদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে দেওয়া যাবে না। তবে তিনি অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ থেকে বিরত থেকেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, এই অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ, এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বিএসএফের। তাই এর দায় তৃণমূলের নয়। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা অনুপ্রবেশের জন্য দায়ী, শুধু বিএসএফকে দায়ী করলে চলবে না। তারা বলছে, ত্রিপুরা সরকার যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে সক্ষম হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা করে না।
৮. ভোটার তালিকা
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া অনেক কঠোরভাবে করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ বিজেপি সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন এটা করছে বিহারের ভোটের জনমিতি পাল্টে দেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে নিয়ে গিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।
বিপরীতে বিজেপি বলছে, ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে ভোট কারচুপি চালানোর জন্যই তৃণমূল এর বিরোধিতা করছে। একই অভিযোগ তৃণমূল একসময় সিপিএমের বিরুদ্ধে তুলেছিল। এখন বিজেপি একই অভিযোগ তুলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
৯. পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি
নির্বাচনে দুর্নীতি ইস্যু কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত আছে। সব সময় নয়, তবে কিছু সময়ে এটি বড় ইস্যু হয়েছে। যেমন—১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ‘মিস্টার ক্লিন।’ কিন্তু ১৯৮৯ সালে বোফোর্স কেলেঙ্কারির পর তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বোফোর্স গান্ধী।’ তখন স্লোগান ওঠে—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ এতে দুর্নীতি ইস্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় জায়গা পায়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেলেঙ্কারি ইত্যাদি সামনে আনলেও মমতা তাতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তিনি অনেকটা প্রতিরোধী অবস্থানে আছেন। তবে মোদি দুর্নীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। গত বছর এবং তার আগের বছরও ১৫ আগস্টের ভাষণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। তৃণমূল যদিও এটিকে ‘ওয়াশিং মেশিন ইস্যু’ বলে আখ্যা দিয়েছে—অর্থাৎ, বেছে বেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তবুও বিজেপি এই ইস্যুকে সামনে এনে প্রচার চালাতে চায়। আগামী দিনগুলোতে দুর্নীতি বিরোধী প্রচার আরও জোরদার করবে বিজেপি।
১০. ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা ভুল থেকে শেখার কৌশল
দুর্গাপূজার সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাবে, আর আসল প্রচার শুরু হবে দীপাবলির পর থেকে। এর আগে পর্যন্ত বিজেপি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর কৌশল নিচ্ছে। মোদি যে প্রথম তিনটি সভা করেছেন, তার ভিত্তিতে জরিপ হবে। দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা এসব জরিপ চালাবে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং পরবর্তী প্রচার কৌশল সাজানো হবে।
এনডিটিভি থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে