আজকের পত্রিকা ডেস্ক

গত দুই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে তিন তিনবার সফর করেছেন। এই ঘন ঘন সফরকে আমলে নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলেছে, ভোট এলেই কেবল বারবার ‘অতিথি পাখির’ মতো দেখা দেন মোদি। তবে প্রশ্ন হলো—অল্প সময়ের ব্যবধানে মোদির এতবার পশ্চিমবঙ্গ সফরের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে দেখা জরুরি।
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন। নতুন এই পরিকল্পনায় কী কী কৌশল আছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—পশ্চিমবঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বিজেপির নতুন কৌশলে রয়েছে দশটি বড় দিক।
১. মমতাকে দেখে নেওয়া
বিজেপির অন্যতম প্রধান কৌশল হলো তৃণমূলের প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে নেওয়া। তবে বিজেপিতে মধ্যে এমন কোনো একক, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মুখ নেই যে মমতাকে এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। তৃণমূল ঘোষণা করেছে, এবারের নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ কম দেখা যাবে, বরং পোস্টার–ব্যানারে বেশি করে তুলে ধরা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতার এই একক উপস্থিতিকে ভারসাম্য করার চেষ্টা হিসেবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের মুখ হিসেবে মোদিকেই সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের মধ্য অন্যতম শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি শহুরে, মধ্যবিত্ত, সেক্যুলার চরিত্রের হলেও গণমানুষের নেতা নন। অন্যদিকে তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরের জেলা নেতা হলেও তিনি প্রকৃত গণমানুষের নেতা। কারণ, তিনি পরিশ্রমী, নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বেফাঁস কথা বলায় তাঁর ব্যাপক কুখ্যাতিও রয়েছে।
এর পাশাপাশি রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে। তবে কোনোভাবেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নন। এর বাইরে, দিলীপ ঘোষ একসময় রাজনীতির মঞ্চ গরম করতে পারলেও নানা কেলেঙ্কারির কারণে এখন তিনি সংগঠন থেকে সরে গেছেন।
২. নিশ্চয়তার ফুলঝুরি
নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী জাতীয় ‘ব্র্যান্ডিং’ থাকায় বিজেপি এবার তাঁকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার ফুলঝুরি ছোটানোর চেষ্টা করছে। আগের জনপ্রিয় স্লোগান ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়’কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক নতুন বাংলা—যেখানে উন্নয়ন থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মুক্ত রাখা হবে।
বিপরীতে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রতিটি আসনে জনসংযোগ করলেই জয় আসবে। এর বিপরীতে বিজেপির কাছে তৃণমূলের মতো শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। তাই অভিষেক জেলা জেলায় আরও বেশি করে প্রবেশ করছেন, স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন।
গত নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি বুঝতে পেরেছে, মোদি যত বার্তাই দিন না কেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি মেটাতে বিজেপি এবার আরও আক্রমণাত্মক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারে নেমেছে—ভ্লগ, পডকাস্ট, স্থানীয় বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে আরএসএসের সহায়তাও নিচ্ছে। ফলে এবার বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দেখা যাবে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বেশি বেশি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’—এর মতো পরিচিত কর্মসূচি প্রচার করেছেন। এই জায়গায় বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে হারানো কঠিন হবে। মমতা ব্যানার্জির কাজ করার ধরনও অনেকটা কৌশলী। বিজেপি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় নেই, তাই কেন্দ্রীয় সরকার মোদির ইমেজ ব্যবহার করে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তিও নেই। তবে এবার তারা চেষ্টা করছে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর। বাইরে থেকে আরএসএসের কর্মী এনে ধর্মীয় লাইনে নির্বাচনী প্রচারের পর্যায়ে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন মানুষ এসব কর্মসূচির প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা কী।
৩. বিজেপি-আরএসএস সমীকরণ
গতবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের আরএসএস প্রচারকেরাই নিজেদের মধ্যে একমত নন, যদিও দলে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন যিনি আরএসএসকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে মোহন ভাগবত পশ্চিমবঙ্গে এলে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা না করে আরএসএস কর্মীদের ওপরই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরএসএসের মূল পরিকল্পনা হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরানো। তারা বিজেপির জন্য কাজ করবে, তবে একসঙ্গে নয়—স্বতন্ত্রভাবে। এতে তাদের কাজের ধরন আরও কার্যকর হবে। তাই এবারও আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তারা ঘরে ঘরে প্রচার চালাবে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং বিভিন্ন জেলায় শাখা সভা আয়োজন করবে।
৪. হিন্দুত্বের আবেদন
এই মুহূর্তে বিজেপি কিংবা আরএসএস—কেউই ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে জোর দিচ্ছে না। হিন্দুত্ব এখন বিজেপির রাজনীতিতে বেশি কার্যকর হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোতে—যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘জয় শ্রী রাম’ আর মোদির উপস্থিতি একসঙ্গে মিলেছিল এবং বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সে সময় বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘জয় বজরংবলী’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান আরও তীব্রভাবে ছড়িয়েছিলেন।
৫. উন্নয়নই মূল কথা
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের সমাবেশে নরেন্দ্র মোদি ‘জয় মা কালী’ ও ‘জয় মা দুর্গা’ বলেছিলেন। তবে সর্বশেষ দমদমের সভায় তিনি এগুলোও বলেননি। সেখানে মূল বিষয় ছিল উন্নয়ন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে উন্নয়নের জন্য এতটা তৃষ্ণার্ত, তা একমাত্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকারই এনে দিতে পারে। তাই মূল স্লোগান ছিল—‘বিজেপি লাও, বাংলা বাঁচাও—বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে বাংলা বাঁচাও।’
৬. নেতা নয় বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূলের সরকার
এবার মোদি ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন না। গত নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই মমতা প্রধান টার্গেট ছিলেন। ২০২১ সালের ভোটে ইডি অভিষেকের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতারা তাকে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, কয়লা-কতল পাচারসহ নানা অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছিলেন। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত মোদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। বরং মূল ফোকাস রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব। একসময় যে শহর নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল, তা উনিশ শতকের মতো অবক্ষয়ে নিমজ্জিত—এমন বার্তাই দিচ্ছে বিজেপি। আর তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে নতুন যুগ আনতে পারে কেবল বিজেপিই। এটি তাদের নতুন কৌশল।
৭. মেরুকরণের রাজনীতি
আগে শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণকে সামনে এনে প্রচার চালাতেন। তবে বিজেপি জানে, মুসলিম ভোটারদের জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তারা এখন কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-আইএসএফ জোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও আগের দুই নির্বাচনে আইএসএফ বিশেষ কোনো ভোট টানতে পারেনি। উল্টো এই জোট বিজেপির জন্য ক্ষতিকরও হয়েছে। তাই বিজেপির মূল কৌশল হচ্ছে হিন্দু ভোট ধরে রাখা এবং মমতার হাতে যা আছে তা থেকে কিছু টেনে নেওয়া। তবে এবার তারা সরাসরি হিন্দু-মুসলিম সংঘাত নয় বরং অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনছে। কারণ কেবল মুসলিম ভোটে মমতা জিততে পারবেন না। এই কৌশল উত্তর প্রদেশে কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গে অন্যভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
অতীতে বাজপেয়ি-আদভানি যুগেও পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছিল। এবারও বিজেপি মনে করছে, ‘রাম’-এর চেয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যু কার্যকর। মোদি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, অনুপ্রবেশ অবৈধ দখল ও বেআইনি অভিবাসন। যাদের এখানে থাকার বা ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, তাদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে দেওয়া যাবে না। তবে তিনি অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ থেকে বিরত থেকেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, এই অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ, এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বিএসএফের। তাই এর দায় তৃণমূলের নয়। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা অনুপ্রবেশের জন্য দায়ী, শুধু বিএসএফকে দায়ী করলে চলবে না। তারা বলছে, ত্রিপুরা সরকার যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে সক্ষম হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা করে না।
৮. ভোটার তালিকা
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া অনেক কঠোরভাবে করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ বিজেপি সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন এটা করছে বিহারের ভোটের জনমিতি পাল্টে দেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে নিয়ে গিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।
বিপরীতে বিজেপি বলছে, ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে ভোট কারচুপি চালানোর জন্যই তৃণমূল এর বিরোধিতা করছে। একই অভিযোগ তৃণমূল একসময় সিপিএমের বিরুদ্ধে তুলেছিল। এখন বিজেপি একই অভিযোগ তুলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
৯. পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি
নির্বাচনে দুর্নীতি ইস্যু কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত আছে। সব সময় নয়, তবে কিছু সময়ে এটি বড় ইস্যু হয়েছে। যেমন—১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ‘মিস্টার ক্লিন।’ কিন্তু ১৯৮৯ সালে বোফোর্স কেলেঙ্কারির পর তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বোফোর্স গান্ধী।’ তখন স্লোগান ওঠে—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ এতে দুর্নীতি ইস্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় জায়গা পায়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেলেঙ্কারি ইত্যাদি সামনে আনলেও মমতা তাতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তিনি অনেকটা প্রতিরোধী অবস্থানে আছেন। তবে মোদি দুর্নীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। গত বছর এবং তার আগের বছরও ১৫ আগস্টের ভাষণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। তৃণমূল যদিও এটিকে ‘ওয়াশিং মেশিন ইস্যু’ বলে আখ্যা দিয়েছে—অর্থাৎ, বেছে বেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তবুও বিজেপি এই ইস্যুকে সামনে এনে প্রচার চালাতে চায়। আগামী দিনগুলোতে দুর্নীতি বিরোধী প্রচার আরও জোরদার করবে বিজেপি।
১০. ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা ভুল থেকে শেখার কৌশল
দুর্গাপূজার সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাবে, আর আসল প্রচার শুরু হবে দীপাবলির পর থেকে। এর আগে পর্যন্ত বিজেপি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর কৌশল নিচ্ছে। মোদি যে প্রথম তিনটি সভা করেছেন, তার ভিত্তিতে জরিপ হবে। দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা এসব জরিপ চালাবে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং পরবর্তী প্রচার কৌশল সাজানো হবে।
এনডিটিভি থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

গত দুই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে তিন তিনবার সফর করেছেন। এই ঘন ঘন সফরকে আমলে নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করে বলেছে, ভোট এলেই কেবল বারবার ‘অতিথি পাখির’ মতো দেখা দেন মোদি। তবে প্রশ্ন হলো—অল্প সময়ের ব্যবধানে মোদির এতবার পশ্চিমবঙ্গ সফরের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খুঁজে দেখা জরুরি।
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন। নতুন এই পরিকল্পনায় কী কী কৌশল আছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—পশ্চিমবঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বিজেপির নতুন কৌশলে রয়েছে দশটি বড় দিক।
১. মমতাকে দেখে নেওয়া
বিজেপির অন্যতম প্রধান কৌশল হলো তৃণমূলের প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে নেওয়া। তবে বিজেপিতে মধ্যে এমন কোনো একক, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী মুখ নেই যে মমতাকে এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন। তৃণমূল ঘোষণা করেছে, এবারের নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ কম দেখা যাবে, বরং পোস্টার–ব্যানারে বেশি করে তুলে ধরা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতার এই একক উপস্থিতিকে ভারসাম্য করার চেষ্টা হিসেবে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের মুখ হিসেবে মোদিকেই সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের মধ্য অন্যতম শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি শহুরে, মধ্যবিত্ত, সেক্যুলার চরিত্রের হলেও গণমানুষের নেতা নন। অন্যদিকে তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারী মেদিনীপুরের জেলা নেতা হলেও তিনি প্রকৃত গণমানুষের নেতা। কারণ, তিনি পরিশ্রমী, নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে বেফাঁস কথা বলায় তাঁর ব্যাপক কুখ্যাতিও রয়েছে।
এর পাশাপাশি রয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। তিনি বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে। তবে কোনোভাবেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নন। এর বাইরে, দিলীপ ঘোষ একসময় রাজনীতির মঞ্চ গরম করতে পারলেও নানা কেলেঙ্কারির কারণে এখন তিনি সংগঠন থেকে সরে গেছেন।
২. নিশ্চয়তার ফুলঝুরি
নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী জাতীয় ‘ব্র্যান্ডিং’ থাকায় বিজেপি এবার তাঁকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার ফুলঝুরি ছোটানোর চেষ্টা করছে। আগের জনপ্রিয় স্লোগান ‘মোদি হ্যায়, তো মুমকিন হ্যায়’কে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এক নতুন বাংলা—যেখানে উন্নয়ন থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মুক্ত রাখা হবে।
বিপরীতে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, প্রতিটি আসনে জনসংযোগ করলেই জয় আসবে। এর বিপরীতে বিজেপির কাছে তৃণমূলের মতো শক্তিশালী সাংগঠনিক ক্ষমতা নেই। তাই অভিষেক জেলা জেলায় আরও বেশি করে প্রবেশ করছেন, স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন।
গত নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি বুঝতে পেরেছে, মোদি যত বার্তাই দিন না কেন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তা প্রতিটি গ্রামে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি মেটাতে বিজেপি এবার আরও আক্রমণাত্মক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারে নেমেছে—ভ্লগ, পডকাস্ট, স্থানীয় বিজ্ঞাপন ব্যবহার করছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে আরএসএসের সহায়তাও নিচ্ছে। ফলে এবার বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দেখা যাবে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বেশি বেশি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ ও ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’—এর মতো পরিচিত কর্মসূচি প্রচার করেছেন। এই জায়গায় বিজেপির পক্ষে তৃণমূলকে হারানো কঠিন হবে। মমতা ব্যানার্জির কাজ করার ধরনও অনেকটা কৌশলী। বিজেপি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় নেই, তাই কেন্দ্রীয় সরকার মোদির ইমেজ ব্যবহার করে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তিও নেই। তবে এবার তারা চেষ্টা করছে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর। বাইরে থেকে আরএসএসের কর্মী এনে ধর্মীয় লাইনে নির্বাচনী প্রচারের পর্যায়ে কাজ করানো হচ্ছে। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন মানুষ এসব কর্মসূচির প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং অমীমাংসিত সমস্যাগুলো নিয়ে জনগণের অভিজ্ঞতা কী।
৩. বিজেপি-আরএসএস সমীকরণ
গতবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ও আরএসএসের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের আরএসএস প্রচারকেরাই নিজেদের মধ্যে একমত নন, যদিও দলে একজন সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন যিনি আরএসএসকে প্রতিনিধিত্ব করেন। এর আগে মোহন ভাগবত পশ্চিমবঙ্গে এলে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা না করে আরএসএস কর্মীদের ওপরই বেশি মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আরএসএসের মূল পরিকল্পনা হলো পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সরানো। তারা বিজেপির জন্য কাজ করবে, তবে একসঙ্গে নয়—স্বতন্ত্রভাবে। এতে তাদের কাজের ধরন আরও কার্যকর হবে। তাই এবারও আরএসএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তারা ঘরে ঘরে প্রচার চালাবে, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবে এবং বিভিন্ন জেলায় শাখা সভা আয়োজন করবে।
৪. হিন্দুত্বের আবেদন
এই মুহূর্তে বিজেপি কিংবা আরএসএস—কেউই ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানে জোর দিচ্ছে না। হিন্দুত্ব এখন বিজেপির রাজনীতিতে বেশি কার্যকর হিন্দিভাষী অঞ্চলগুলোতে—যেমন উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ‘জয় শ্রী রাম’ আর মোদির উপস্থিতি একসঙ্গে মিলেছিল এবং বিজেপি রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল। সে সময় বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘জয় বজরংবলী’ ও ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান আরও তীব্রভাবে ছড়িয়েছিলেন।
৫. উন্নয়নই মূল কথা
কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের সমাবেশে নরেন্দ্র মোদি ‘জয় মা কালী’ ও ‘জয় মা দুর্গা’ বলেছিলেন। তবে সর্বশেষ দমদমের সভায় তিনি এগুলোও বলেননি। সেখানে মূল বিষয় ছিল উন্নয়ন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে উন্নয়নের জন্য এতটা তৃষ্ণার্ত, তা একমাত্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকারই এনে দিতে পারে। তাই মূল স্লোগান ছিল—‘বিজেপি লাও, বাংলা বাঁচাও—বিজেপিকে ক্ষমতায় এনে বাংলা বাঁচাও।’
৬. নেতা নয় বিজেপির আক্রমণের লক্ষ্য তৃণমূলের সরকার
এবার মোদি ব্যক্তিগতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন না। গত নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই মমতা প্রধান টার্গেট ছিলেন। ২০২১ সালের ভোটে ইডি অভিষেকের বাড়িতে হানা দেওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতারা তাকে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, কয়লা-কতল পাচারসহ নানা অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছিলেন। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত মোদি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেননি। বরং মূল ফোকাস রাজ্যের তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব। একসময় যে শহর নবজাগরণের কেন্দ্র ছিল, তা উনিশ শতকের মতো অবক্ষয়ে নিমজ্জিত—এমন বার্তাই দিচ্ছে বিজেপি। আর তারা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে নতুন যুগ আনতে পারে কেবল বিজেপিই। এটি তাদের নতুন কৌশল।
৭. মেরুকরণের রাজনীতি
আগে শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণকে সামনে এনে প্রচার চালাতেন। তবে বিজেপি জানে, মুসলিম ভোটারদের জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য তারা এখন কংগ্রেস-বামফ্রন্ট-আইএসএফ জোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যদিও আগের দুই নির্বাচনে আইএসএফ বিশেষ কোনো ভোট টানতে পারেনি। উল্টো এই জোট বিজেপির জন্য ক্ষতিকরও হয়েছে। তাই বিজেপির মূল কৌশল হচ্ছে হিন্দু ভোট ধরে রাখা এবং মমতার হাতে যা আছে তা থেকে কিছু টেনে নেওয়া। তবে এবার তারা সরাসরি হিন্দু-মুসলিম সংঘাত নয় বরং অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনছে। কারণ কেবল মুসলিম ভোটে মমতা জিততে পারবেন না। এই কৌশল উত্তর প্রদেশে কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গে অন্যভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
অতীতে বাজপেয়ি-আদভানি যুগেও পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে সামনে আনা হয়েছিল। এবারও বিজেপি মনে করছে, ‘রাম’-এর চেয়ে অনুপ্রবেশ ইস্যু কার্যকর। মোদি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, অনুপ্রবেশ অবৈধ দখল ও বেআইনি অভিবাসন। যাদের এখানে থাকার বা ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, তাদের পশ্চিমবঙ্গে থাকতে দেওয়া যাবে না। তবে তিনি অতিরিক্ত রাজনীতিকরণ থেকে বিরত থেকেছেন।
তিনি আরও বলেছেন, এই অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ, এবং অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব বিএসএফের। তাই এর দায় তৃণমূলের নয়। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকা অনুপ্রবেশের জন্য দায়ী, শুধু বিএসএফকে দায়ী করলে চলবে না। তারা বলছে, ত্রিপুরা সরকার যেখানে অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে সক্ষম হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা করে না।
৮. ভোটার তালিকা
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া অনেক কঠোরভাবে করা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ বিজেপি সরকারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন এটা করছে বিহারের ভোটের জনমিতি পাল্টে দেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় ইলেকশন কমিশন পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রক্রিয়া চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে নিয়ে গিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।
বিপরীতে বিজেপি বলছে, ভোটার তালিকা সংশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে ভোট কারচুপি চালানোর জন্যই তৃণমূল এর বিরোধিতা করছে। একই অভিযোগ তৃণমূল একসময় সিপিএমের বিরুদ্ধে তুলেছিল। এখন বিজেপি একই অভিযোগ তুলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই দেখার বিষয়।
৯. পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি
নির্বাচনে দুর্নীতি ইস্যু কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ভিন্নমত আছে। সব সময় নয়, তবে কিছু সময়ে এটি বড় ইস্যু হয়েছে। যেমন—১৯৮৪ সাল পর্যন্ত রাজীব গান্ধী ছিলেন ‘মিস্টার ক্লিন।’ কিন্তু ১৯৮৯ সালে বোফোর্স কেলেঙ্কারির পর তাঁর নাম হয়ে যায় ‘বোফোর্স গান্ধী।’ তখন স্লোগান ওঠে—‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ এতে দুর্নীতি ইস্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় জায়গা পায়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি শিক্ষাক্ষেত্রের দুর্নীতি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেলেঙ্কারি ইত্যাদি সামনে আনলেও মমতা তাতে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তিনি অনেকটা প্রতিরোধী অবস্থানে আছেন। তবে মোদি দুর্নীতিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। গত বছর এবং তার আগের বছরও ১৫ আগস্টের ভাষণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কথা বলেছেন। তৃণমূল যদিও এটিকে ‘ওয়াশিং মেশিন ইস্যু’ বলে আখ্যা দিয়েছে—অর্থাৎ, বেছে বেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তবুও বিজেপি এই ইস্যুকে সামনে এনে প্রচার চালাতে চায়। আগামী দিনগুলোতে দুর্নীতি বিরোধী প্রচার আরও জোরদার করবে বিজেপি।
১০. ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা ভুল থেকে শেখার কৌশল
দুর্গাপূজার সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘুরপাক খাবে, আর আসল প্রচার শুরু হবে দীপাবলির পর থেকে। এর আগে পর্যন্ত বিজেপি ট্রায়াল অ্যান্ড এরর কৌশল নিচ্ছে। মোদি যে প্রথম তিনটি সভা করেছেন, তার ভিত্তিতে জরিপ হবে। দল ছাড়াও বিভিন্ন পেশাদার সংস্থা এসব জরিপ চালাবে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং পরবর্তী প্রচার কৌশল সাজানো হবে।
এনডিটিভি থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকা সহ-সম্পাদক আব্দুর রহমান

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।
প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।
পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।
পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।
কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।
দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।
শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।
কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।
উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।
ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।
রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।
দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।
দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।
জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।
রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।
উদ্ভাবন কি থেমে যাবে
অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।
যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।
বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে
ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে
গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।
চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব
বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।
আল-জাজিরা অবলম্বনে

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।
তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।
তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।
এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার...
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।
রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।
পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।
বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
২৫ আগস্ট ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।
১৯ ঘণ্টা আগে
বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
১ দিন আগে
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে।
১ দিন আগে