আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমনে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আদিবাসী অধ্যুষিত খনিজ সমৃদ্ধ এই অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিনের সশস্ত্র বিদ্রোহ ‘নির্মূল’ করতে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে ‘অপারেশন জিরো’ বা ‘কাগার’ নামে চলমান অভিযানে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের কারিগাটা পাহাড় কার্যত ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, এই অভিযানে নিরীহ আদিবাসীরা হত্যার শিকার হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয়ই পরিচালনা করছে ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তাদের শাসনামলে নিরাপত্তা অভিযানের নামে হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, চলতি বছরে অন্তত ২০১ জন মাওবাদী বিদ্রোহী (যাদের নকশাল নামেও অভিহিত করা হয়) নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার (২১ মে) নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন বিদ্রোহী, যার মধ্যে মাওবাদীদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতাও রয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে আদিবাসী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ে ৪০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, নিহতদের অনেকেই নিরীহ আদিবাসী। আন্দোলনকারী ও বিরোধী দলের নেতারা সরকারকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাওবাদী যোদ্ধাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ১১ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৬ হাজার ১৬০ জন মাওবাদী যোদ্ধাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ ও মাওবাদী উভয় সূত্র জানিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের এই কঠোর নীতি কি শান্তি আনতে সাহায্য করবে, নাকি দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে?
ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো এবং জমিদারদের শোষণ থেকে মুক্তি।
এই তিন নেতা মিলেই ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিআই/লেনিনবাদী-এমএল) প্রতিষ্ঠা করেন, সেময় যাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিচালনা করা। তারা বিশ্বাস করতেন যে, বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের দাবি পূরণ হবে না। দরকার সশস্ত্র বিদ্রোহ। নকশাল বিদ্রোহীরা চীনা নেতা মাও সেতুং-এর বিপ্লবী আদর্শ দ্বারাও অনুপ্রাণিত ছিলেন। এই লক্ষ্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির রাষ্ট্র দখলের কৌশলের অনুকরণে তারা কয়েক দশক ধরে খনিজ সমৃদ্ধ মধ্য ও পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহ চালিয়েছেন।
তবে পরবর্তীতে সিপিআই(এমএল) একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যার ২০টিরও বেশি শাখা এখনো বিদ্যমান। মূল সিপিআই(এমএল) নিজেই সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করে ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ শুরু করে।
এদিকে, ১৯৮০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধ্র প্রদেশের কোন্ডাপল্লী সীতারামায়া ও কল্লুরি চিরঞ্জীবী প্রতিষ্ঠা করেন পিপলস ওয়ার নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। আরেকটি প্রধান বিচ্ছিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি), যাদের ঘাঁটি ছিল বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে, এমসিসি এবং সিপিআই(এমএল) পিপলস ওয়ার একীভূত হয়ে ভারতের বৃহত্তম সশস্ত্র মাওবাদী সংগঠন, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী) গঠন করে।
সংগঠনটির সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজ, গত বুধবার ছত্তিশগড়ের বস্তারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এই স্থানটিই ছিল মাওবাদীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি।

বিজেপির লক্ষ্য ‘নকশালমুক্ত ভারত’
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় বিজেপি পরিচালিত ছত্তিশগড় রাজ্য সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৩ বছরে ১৪১ জন মাওবাদী নিহত হয়েছিল। তবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২৪ সালেই নিরাপত্তা বাহিনী ২২৩ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীকে হত্যা করেছে।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘গত ১৫ মাস ধরে আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা নকশালদের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছে। এই অভিযান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে ভারতকে নকশালমুক্ত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এটি একটি নিষ্পত্তিমূলক পর্যায় এবং আমরা দ্রুত সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী কারিগাটা পাহাড়ে সন্দেহভাজন মাওবাদী আস্তানাগুলো ঘিরে রেখেছে এবং সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযানে সহায়তা করছে।
গত ১৪ মে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কারিগাটা পাহাড়ে ৩১ জন মাওবাদীকে হত্যার কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেন, ‘আমি আবারও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারত নকশালমুক্ত হবে।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানতে পেরেছে, ছত্তিশগড়ে প্রায় ৬৬ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে আধাসামরিক এবং বিশেষ বাহিনীও রয়েছে।
এদিকে, সরকার এসব সামরিক অভিযানে সাফল্য দাবি করলেও, পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভুয়া এনকাউন্টার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে।
ছত্তিশগড়ে পিইউসিএলের সভাপতি জুনাস তিরকি বলেছেন, ‘মাওবাদীদের নির্মূল করার অজুহাতে একটি বড় আকারের সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে বস্তারে সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামরিকীকরণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরীহ আদিবাসীদের ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যা করা হচ্ছে।’ পিইউসিএল গত দেড় বছরে অন্তত ১১টি ঘটনাকে ভুয়া এনকাউন্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে সরকার পিইউসিএলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বস্তারের পুলিশ মহাপরিদর্শক প্যাট্টিলিঙ্গম সুন্দররাজও এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, মাওবাদীরা প্রায়শই স্থানীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এনকাউন্টারের পর পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে। তবে, অতীতে বস্তারে একাধিক ‘এনকাউন্টার’ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা বিচার পায়নি।
সমস্যার মূলে খনিজ সম্পদ ও আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুতি?
নকশালরা দেশের খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলে বন্দুক তোলার কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ, বিশেষ করে বৈশ্বিক করপোরেশনগুলোকে দেওয়া খনিজ লিজ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুতিকে তুলে ধরেছেন। হাজার হাজার আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং খনিজ উত্তোলনের কারণে তাদের স্থানীয় পরিবেশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বস্তারের ৫১টি স্থান খনিজ উত্তোলনের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে কিছু বিদেশি কোম্পানিও আছে। প্রাক্তন বিধায়ক এবং আদিবাসী নেতা মণীশ কুঞ্জাম একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে বলেন, ‘আসল সমস্যা হলো এই অঞ্চলের লৌহ আকরিক।’
ভারতীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশের মোট লৌহ আকরিক মজুদের ১৯ শতাংশ ছত্তিশগড়ে, যার বেশির ভাগই বস্তারে অবস্থিত। ছত্তিশগড় ভারতের মোট রেলওয়ে রাজস্বের ১৮ শতাংশ সরবরাহ করে, যার অধিকাংশই আসে খনিজ পরিবহন থেকে।
প্রাক্তন বিধায়ক মণীশ কুঞ্জাম ব্যাখ্যা করেন, ২০০৫ সালে যখন টাটা ও এসার করপোরেশন লৌহ আকরিক উত্তোলনের প্রকল্প শুরু করে, তখন রাজ্য সরকার ‘সালওয়া জুডুম’ (গোন্ডি ভাষায় যার অর্থ শান্তি মার্চ) চালু করে মাওবাদী ভয়ের অজুহাতে ৬৪৪টি গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়। এতে অন্তত ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। তবে, আদিবাসীদের শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে কোম্পানিগুলো সরে যেতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, ‘সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার এখন খনিজ অঞ্চলে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন করেছে, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নতুন করে উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তবে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই অবশ্য বিশ্বাস করেন, আদিবাসী অঞ্চলের খনিজ সম্পদ ব্যবহার করা উচিত। তিনি দাবি করেন, ‘খনির কাজ এবং শিল্প কার্যকলাপ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীদের জীবন পরিবর্তিত হবে।’ তিনি গর্ব করে বলেন, ছত্তিশগড় খনিজ উৎপাদক রাজ্য গুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে (ওডিশার পর), যেখান থেকে গত বছর প্রায় ১ হাজার ৪১৯ কোটি রুপি আয় হয়েছে। তাই এ বছর, রাজ্য সরকার বেসরকারি সংস্থা গুলিকে আরও ৪৮টি প্রধান খনিজ ব্লক বরাদ্দ করেছে।
মানবাধিকার কর্মী সোনি সোরি বলেন, ‘সরকার একদিকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেয়, অন্যদিকে বস্তারকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করছে।’ মাওবাদীরা যুদ্ধবিরতি ও প্যারামিলিটারি বাহিনী প্রত্যাহারের শর্তে আলোচনা চায়। সিপিআই (মাওবাদী) মুখপাত্র অভয় বলেন, ‘শান্তি প্রক্রিয়া অর্থহীন যদি হত্যা চলতে থাকে।’ তবে মুখ্যমন্ত্রী সাই বলেন, ‘নকশাল নির্মূল একটি মিশন এবং এতে কোনো নমনীয়তার স্থান নেই।’
তবে খনিজ শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক দারিদ্র্য এবং মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব সরকারের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আদিবাসী নেতা নেতাম উল্লেখ করেন, রাজ্যের নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ৩৮, যেখানে জাতীয় নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে মাত্র ২৮। তিনি বলেন, বস্তারে দারিদ্র্যের হার ৮০ শতাংশ।
বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র সুশীল আনন্দ শুক্লা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আদিবাসীদের জীবনের বিনিময়ে রাজস্ব উপার্জনের ধারণা বিপজ্জনক এবং অসাংবিধানিক।’
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বস্তারে এখন প্রায় ১ হাজার সশস্ত্র মাওবাদী ও তাদের ১৫ হাজার সহযোগী রয়েছে, যা ২০১১ সালের তুলনায় অনেক কম। ধীরে ধীরে নতুন মাওবাদী সদস্য নিয়োগ, অস্ত্র ও ঘাঁটি কমছে। তবে প্রাক্তন ডিজিপি বিশ্বরঞ্জন বলেন, ‘হিংসার মাধ্যমে মাওবাদী মতাদর্শ পরাজিত করা যাবে না। অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে এটি নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে।’

ভারতের ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমনে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আদিবাসী অধ্যুষিত খনিজ সমৃদ্ধ এই অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিনের সশস্ত্র বিদ্রোহ ‘নির্মূল’ করতে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে ‘অপারেশন জিরো’ বা ‘কাগার’ নামে চলমান অভিযানে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের কারিগাটা পাহাড় কার্যত ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, এই অভিযানে নিরীহ আদিবাসীরা হত্যার শিকার হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয়ই পরিচালনা করছে ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তাদের শাসনামলে নিরাপত্তা অভিযানের নামে হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, চলতি বছরে অন্তত ২০১ জন মাওবাদী বিদ্রোহী (যাদের নকশাল নামেও অভিহিত করা হয়) নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার (২১ মে) নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন বিদ্রোহী, যার মধ্যে মাওবাদীদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতাও রয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে আদিবাসী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ে ৪০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, নিহতদের অনেকেই নিরীহ আদিবাসী। আন্দোলনকারী ও বিরোধী দলের নেতারা সরকারকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাওবাদী যোদ্ধাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ১১ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৬ হাজার ১৬০ জন মাওবাদী যোদ্ধাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ ও মাওবাদী উভয় সূত্র জানিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের এই কঠোর নীতি কি শান্তি আনতে সাহায্য করবে, নাকি দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে?
ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো এবং জমিদারদের শোষণ থেকে মুক্তি।
এই তিন নেতা মিলেই ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিআই/লেনিনবাদী-এমএল) প্রতিষ্ঠা করেন, সেময় যাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিচালনা করা। তারা বিশ্বাস করতেন যে, বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের দাবি পূরণ হবে না। দরকার সশস্ত্র বিদ্রোহ। নকশাল বিদ্রোহীরা চীনা নেতা মাও সেতুং-এর বিপ্লবী আদর্শ দ্বারাও অনুপ্রাণিত ছিলেন। এই লক্ষ্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির রাষ্ট্র দখলের কৌশলের অনুকরণে তারা কয়েক দশক ধরে খনিজ সমৃদ্ধ মধ্য ও পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহ চালিয়েছেন।
তবে পরবর্তীতে সিপিআই(এমএল) একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যার ২০টিরও বেশি শাখা এখনো বিদ্যমান। মূল সিপিআই(এমএল) নিজেই সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করে ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ শুরু করে।
এদিকে, ১৯৮০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধ্র প্রদেশের কোন্ডাপল্লী সীতারামায়া ও কল্লুরি চিরঞ্জীবী প্রতিষ্ঠা করেন পিপলস ওয়ার নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। আরেকটি প্রধান বিচ্ছিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি), যাদের ঘাঁটি ছিল বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে, এমসিসি এবং সিপিআই(এমএল) পিপলস ওয়ার একীভূত হয়ে ভারতের বৃহত্তম সশস্ত্র মাওবাদী সংগঠন, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী) গঠন করে।
সংগঠনটির সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজ, গত বুধবার ছত্তিশগড়ের বস্তারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এই স্থানটিই ছিল মাওবাদীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি।

বিজেপির লক্ষ্য ‘নকশালমুক্ত ভারত’
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় বিজেপি পরিচালিত ছত্তিশগড় রাজ্য সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৩ বছরে ১৪১ জন মাওবাদী নিহত হয়েছিল। তবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২৪ সালেই নিরাপত্তা বাহিনী ২২৩ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীকে হত্যা করেছে।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘গত ১৫ মাস ধরে আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা নকশালদের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছে। এই অভিযান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে ভারতকে নকশালমুক্ত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এটি একটি নিষ্পত্তিমূলক পর্যায় এবং আমরা দ্রুত সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী কারিগাটা পাহাড়ে সন্দেহভাজন মাওবাদী আস্তানাগুলো ঘিরে রেখেছে এবং সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযানে সহায়তা করছে।
গত ১৪ মে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কারিগাটা পাহাড়ে ৩১ জন মাওবাদীকে হত্যার কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেন, ‘আমি আবারও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারত নকশালমুক্ত হবে।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানতে পেরেছে, ছত্তিশগড়ে প্রায় ৬৬ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে আধাসামরিক এবং বিশেষ বাহিনীও রয়েছে।
এদিকে, সরকার এসব সামরিক অভিযানে সাফল্য দাবি করলেও, পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভুয়া এনকাউন্টার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে।
ছত্তিশগড়ে পিইউসিএলের সভাপতি জুনাস তিরকি বলেছেন, ‘মাওবাদীদের নির্মূল করার অজুহাতে একটি বড় আকারের সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে বস্তারে সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামরিকীকরণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরীহ আদিবাসীদের ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যা করা হচ্ছে।’ পিইউসিএল গত দেড় বছরে অন্তত ১১টি ঘটনাকে ভুয়া এনকাউন্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে সরকার পিইউসিএলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বস্তারের পুলিশ মহাপরিদর্শক প্যাট্টিলিঙ্গম সুন্দররাজও এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, মাওবাদীরা প্রায়শই স্থানীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এনকাউন্টারের পর পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে। তবে, অতীতে বস্তারে একাধিক ‘এনকাউন্টার’ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা বিচার পায়নি।
সমস্যার মূলে খনিজ সম্পদ ও আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুতি?
নকশালরা দেশের খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলে বন্দুক তোলার কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ, বিশেষ করে বৈশ্বিক করপোরেশনগুলোকে দেওয়া খনিজ লিজ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুতিকে তুলে ধরেছেন। হাজার হাজার আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং খনিজ উত্তোলনের কারণে তাদের স্থানীয় পরিবেশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বস্তারের ৫১টি স্থান খনিজ উত্তোলনের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে কিছু বিদেশি কোম্পানিও আছে। প্রাক্তন বিধায়ক এবং আদিবাসী নেতা মণীশ কুঞ্জাম একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে বলেন, ‘আসল সমস্যা হলো এই অঞ্চলের লৌহ আকরিক।’
ভারতীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশের মোট লৌহ আকরিক মজুদের ১৯ শতাংশ ছত্তিশগড়ে, যার বেশির ভাগই বস্তারে অবস্থিত। ছত্তিশগড় ভারতের মোট রেলওয়ে রাজস্বের ১৮ শতাংশ সরবরাহ করে, যার অধিকাংশই আসে খনিজ পরিবহন থেকে।
প্রাক্তন বিধায়ক মণীশ কুঞ্জাম ব্যাখ্যা করেন, ২০০৫ সালে যখন টাটা ও এসার করপোরেশন লৌহ আকরিক উত্তোলনের প্রকল্প শুরু করে, তখন রাজ্য সরকার ‘সালওয়া জুডুম’ (গোন্ডি ভাষায় যার অর্থ শান্তি মার্চ) চালু করে মাওবাদী ভয়ের অজুহাতে ৬৪৪টি গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়। এতে অন্তত ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। তবে, আদিবাসীদের শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে কোম্পানিগুলো সরে যেতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, ‘সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার এখন খনিজ অঞ্চলে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন করেছে, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নতুন করে উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তবে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই অবশ্য বিশ্বাস করেন, আদিবাসী অঞ্চলের খনিজ সম্পদ ব্যবহার করা উচিত। তিনি দাবি করেন, ‘খনির কাজ এবং শিল্প কার্যকলাপ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীদের জীবন পরিবর্তিত হবে।’ তিনি গর্ব করে বলেন, ছত্তিশগড় খনিজ উৎপাদক রাজ্য গুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে (ওডিশার পর), যেখান থেকে গত বছর প্রায় ১ হাজার ৪১৯ কোটি রুপি আয় হয়েছে। তাই এ বছর, রাজ্য সরকার বেসরকারি সংস্থা গুলিকে আরও ৪৮টি প্রধান খনিজ ব্লক বরাদ্দ করেছে।
মানবাধিকার কর্মী সোনি সোরি বলেন, ‘সরকার একদিকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেয়, অন্যদিকে বস্তারকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করছে।’ মাওবাদীরা যুদ্ধবিরতি ও প্যারামিলিটারি বাহিনী প্রত্যাহারের শর্তে আলোচনা চায়। সিপিআই (মাওবাদী) মুখপাত্র অভয় বলেন, ‘শান্তি প্রক্রিয়া অর্থহীন যদি হত্যা চলতে থাকে।’ তবে মুখ্যমন্ত্রী সাই বলেন, ‘নকশাল নির্মূল একটি মিশন এবং এতে কোনো নমনীয়তার স্থান নেই।’
তবে খনিজ শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক দারিদ্র্য এবং মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব সরকারের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আদিবাসী নেতা নেতাম উল্লেখ করেন, রাজ্যের নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ৩৮, যেখানে জাতীয় নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে মাত্র ২৮। তিনি বলেন, বস্তারে দারিদ্র্যের হার ৮০ শতাংশ।
বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র সুশীল আনন্দ শুক্লা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আদিবাসীদের জীবনের বিনিময়ে রাজস্ব উপার্জনের ধারণা বিপজ্জনক এবং অসাংবিধানিক।’
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বস্তারে এখন প্রায় ১ হাজার সশস্ত্র মাওবাদী ও তাদের ১৫ হাজার সহযোগী রয়েছে, যা ২০১১ সালের তুলনায় অনেক কম। ধীরে ধীরে নতুন মাওবাদী সদস্য নিয়োগ, অস্ত্র ও ঘাঁটি কমছে। তবে প্রাক্তন ডিজিপি বিশ্বরঞ্জন বলেন, ‘হিংসার মাধ্যমে মাওবাদী মতাদর্শ পরাজিত করা যাবে না। অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে এটি নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে।’
আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতের ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমনে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আদিবাসী অধ্যুষিত খনিজ সমৃদ্ধ এই অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিনের সশস্ত্র বিদ্রোহ ‘নির্মূল’ করতে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে ‘অপারেশন জিরো’ বা ‘কাগার’ নামে চলমান অভিযানে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের কারিগাটা পাহাড় কার্যত ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, এই অভিযানে নিরীহ আদিবাসীরা হত্যার শিকার হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয়ই পরিচালনা করছে ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তাদের শাসনামলে নিরাপত্তা অভিযানের নামে হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, চলতি বছরে অন্তত ২০১ জন মাওবাদী বিদ্রোহী (যাদের নকশাল নামেও অভিহিত করা হয়) নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার (২১ মে) নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন বিদ্রোহী, যার মধ্যে মাওবাদীদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতাও রয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে আদিবাসী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ে ৪০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, নিহতদের অনেকেই নিরীহ আদিবাসী। আন্দোলনকারী ও বিরোধী দলের নেতারা সরকারকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাওবাদী যোদ্ধাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ১১ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৬ হাজার ১৬০ জন মাওবাদী যোদ্ধাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ ও মাওবাদী উভয় সূত্র জানিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের এই কঠোর নীতি কি শান্তি আনতে সাহায্য করবে, নাকি দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে?
ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো এবং জমিদারদের শোষণ থেকে মুক্তি।
এই তিন নেতা মিলেই ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিআই/লেনিনবাদী-এমএল) প্রতিষ্ঠা করেন, সেময় যাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিচালনা করা। তারা বিশ্বাস করতেন যে, বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের দাবি পূরণ হবে না। দরকার সশস্ত্র বিদ্রোহ। নকশাল বিদ্রোহীরা চীনা নেতা মাও সেতুং-এর বিপ্লবী আদর্শ দ্বারাও অনুপ্রাণিত ছিলেন। এই লক্ষ্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির রাষ্ট্র দখলের কৌশলের অনুকরণে তারা কয়েক দশক ধরে খনিজ সমৃদ্ধ মধ্য ও পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহ চালিয়েছেন।
তবে পরবর্তীতে সিপিআই(এমএল) একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যার ২০টিরও বেশি শাখা এখনো বিদ্যমান। মূল সিপিআই(এমএল) নিজেই সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করে ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ শুরু করে।
এদিকে, ১৯৮০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধ্র প্রদেশের কোন্ডাপল্লী সীতারামায়া ও কল্লুরি চিরঞ্জীবী প্রতিষ্ঠা করেন পিপলস ওয়ার নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। আরেকটি প্রধান বিচ্ছিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি), যাদের ঘাঁটি ছিল বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে, এমসিসি এবং সিপিআই(এমএল) পিপলস ওয়ার একীভূত হয়ে ভারতের বৃহত্তম সশস্ত্র মাওবাদী সংগঠন, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী) গঠন করে।
সংগঠনটির সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজ, গত বুধবার ছত্তিশগড়ের বস্তারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এই স্থানটিই ছিল মাওবাদীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি।

বিজেপির লক্ষ্য ‘নকশালমুক্ত ভারত’
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় বিজেপি পরিচালিত ছত্তিশগড় রাজ্য সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৩ বছরে ১৪১ জন মাওবাদী নিহত হয়েছিল। তবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২৪ সালেই নিরাপত্তা বাহিনী ২২৩ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীকে হত্যা করেছে।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘গত ১৫ মাস ধরে আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা নকশালদের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছে। এই অভিযান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে ভারতকে নকশালমুক্ত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এটি একটি নিষ্পত্তিমূলক পর্যায় এবং আমরা দ্রুত সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী কারিগাটা পাহাড়ে সন্দেহভাজন মাওবাদী আস্তানাগুলো ঘিরে রেখেছে এবং সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযানে সহায়তা করছে।
গত ১৪ মে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কারিগাটা পাহাড়ে ৩১ জন মাওবাদীকে হত্যার কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেন, ‘আমি আবারও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারত নকশালমুক্ত হবে।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানতে পেরেছে, ছত্তিশগড়ে প্রায় ৬৬ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে আধাসামরিক এবং বিশেষ বাহিনীও রয়েছে।
এদিকে, সরকার এসব সামরিক অভিযানে সাফল্য দাবি করলেও, পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভুয়া এনকাউন্টার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে।
ছত্তিশগড়ে পিইউসিএলের সভাপতি জুনাস তিরকি বলেছেন, ‘মাওবাদীদের নির্মূল করার অজুহাতে একটি বড় আকারের সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে বস্তারে সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামরিকীকরণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরীহ আদিবাসীদের ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যা করা হচ্ছে।’ পিইউসিএল গত দেড় বছরে অন্তত ১১টি ঘটনাকে ভুয়া এনকাউন্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে সরকার পিইউসিএলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বস্তারের পুলিশ মহাপরিদর্শক প্যাট্টিলিঙ্গম সুন্দররাজও এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, মাওবাদীরা প্রায়শই স্থানীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এনকাউন্টারের পর পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে। তবে, অতীতে বস্তারে একাধিক ‘এনকাউন্টার’ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা বিচার পায়নি।
সমস্যার মূলে খনিজ সম্পদ ও আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুতি?
নকশালরা দেশের খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলে বন্দুক তোলার কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ, বিশেষ করে বৈশ্বিক করপোরেশনগুলোকে দেওয়া খনিজ লিজ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুতিকে তুলে ধরেছেন। হাজার হাজার আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং খনিজ উত্তোলনের কারণে তাদের স্থানীয় পরিবেশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বস্তারের ৫১টি স্থান খনিজ উত্তোলনের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে কিছু বিদেশি কোম্পানিও আছে। প্রাক্তন বিধায়ক এবং আদিবাসী নেতা মণীশ কুঞ্জাম একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে বলেন, ‘আসল সমস্যা হলো এই অঞ্চলের লৌহ আকরিক।’
ভারতীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশের মোট লৌহ আকরিক মজুদের ১৯ শতাংশ ছত্তিশগড়ে, যার বেশির ভাগই বস্তারে অবস্থিত। ছত্তিশগড় ভারতের মোট রেলওয়ে রাজস্বের ১৮ শতাংশ সরবরাহ করে, যার অধিকাংশই আসে খনিজ পরিবহন থেকে।
প্রাক্তন বিধায়ক মণীশ কুঞ্জাম ব্যাখ্যা করেন, ২০০৫ সালে যখন টাটা ও এসার করপোরেশন লৌহ আকরিক উত্তোলনের প্রকল্প শুরু করে, তখন রাজ্য সরকার ‘সালওয়া জুডুম’ (গোন্ডি ভাষায় যার অর্থ শান্তি মার্চ) চালু করে মাওবাদী ভয়ের অজুহাতে ৬৪৪টি গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়। এতে অন্তত ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। তবে, আদিবাসীদের শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে কোম্পানিগুলো সরে যেতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, ‘সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার এখন খনিজ অঞ্চলে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন করেছে, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নতুন করে উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তবে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই অবশ্য বিশ্বাস করেন, আদিবাসী অঞ্চলের খনিজ সম্পদ ব্যবহার করা উচিত। তিনি দাবি করেন, ‘খনির কাজ এবং শিল্প কার্যকলাপ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীদের জীবন পরিবর্তিত হবে।’ তিনি গর্ব করে বলেন, ছত্তিশগড় খনিজ উৎপাদক রাজ্য গুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে (ওডিশার পর), যেখান থেকে গত বছর প্রায় ১ হাজার ৪১৯ কোটি রুপি আয় হয়েছে। তাই এ বছর, রাজ্য সরকার বেসরকারি সংস্থা গুলিকে আরও ৪৮টি প্রধান খনিজ ব্লক বরাদ্দ করেছে।
মানবাধিকার কর্মী সোনি সোরি বলেন, ‘সরকার একদিকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেয়, অন্যদিকে বস্তারকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করছে।’ মাওবাদীরা যুদ্ধবিরতি ও প্যারামিলিটারি বাহিনী প্রত্যাহারের শর্তে আলোচনা চায়। সিপিআই (মাওবাদী) মুখপাত্র অভয় বলেন, ‘শান্তি প্রক্রিয়া অর্থহীন যদি হত্যা চলতে থাকে।’ তবে মুখ্যমন্ত্রী সাই বলেন, ‘নকশাল নির্মূল একটি মিশন এবং এতে কোনো নমনীয়তার স্থান নেই।’
তবে খনিজ শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক দারিদ্র্য এবং মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব সরকারের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আদিবাসী নেতা নেতাম উল্লেখ করেন, রাজ্যের নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ৩৮, যেখানে জাতীয় নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে মাত্র ২৮। তিনি বলেন, বস্তারে দারিদ্র্যের হার ৮০ শতাংশ।
বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র সুশীল আনন্দ শুক্লা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আদিবাসীদের জীবনের বিনিময়ে রাজস্ব উপার্জনের ধারণা বিপজ্জনক এবং অসাংবিধানিক।’
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বস্তারে এখন প্রায় ১ হাজার সশস্ত্র মাওবাদী ও তাদের ১৫ হাজার সহযোগী রয়েছে, যা ২০১১ সালের তুলনায় অনেক কম। ধীরে ধীরে নতুন মাওবাদী সদস্য নিয়োগ, অস্ত্র ও ঘাঁটি কমছে। তবে প্রাক্তন ডিজিপি বিশ্বরঞ্জন বলেন, ‘হিংসার মাধ্যমে মাওবাদী মতাদর্শ পরাজিত করা যাবে না। অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে এটি নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে।’

ভারতের ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমনে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আদিবাসী অধ্যুষিত খনিজ সমৃদ্ধ এই অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিনের সশস্ত্র বিদ্রোহ ‘নির্মূল’ করতে প্রায় ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে ‘অপারেশন জিরো’ বা ‘কাগার’ নামে চলমান অভিযানে ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা রাজ্যের কারিগাটা পাহাড় কার্যত ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ পরিণত হয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, এই অভিযানে নিরীহ আদিবাসীরা হত্যার শিকার হচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার উভয়ই পরিচালনা করছে ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তাদের শাসনামলে নিরাপত্তা অভিযানের নামে হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, চলতি বছরে অন্তত ২০১ জন মাওবাদী বিদ্রোহী (যাদের নকশাল নামেও অভিহিত করা হয়) নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার (২১ মে) নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন বিদ্রোহী, যার মধ্যে মাওবাদীদের এক শীর্ষস্থানীয় নেতাও রয়েছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মাসে আদিবাসী অধ্যুষিত ছত্তিশগড়ে ৪০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, নিহতদের অনেকেই নিরীহ আদিবাসী। আন্দোলনকারী ও বিরোধী দলের নেতারা সরকারকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাওবাদী যোদ্ধাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে ১১ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ৬ হাজার ১৬০ জন মাওবাদী যোদ্ধাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ ও মাওবাদী উভয় সূত্র জানিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের এই কঠোর নীতি কি শান্তি আনতে সাহায্য করবে, নাকি দেশের সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আদিবাসীদের আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে?
ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো এবং জমিদারদের শোষণ থেকে মুক্তি।
এই তিন নেতা মিলেই ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-সিপিআই/লেনিনবাদী-এমএল) প্রতিষ্ঠা করেন, সেময় যাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিচালনা করা। তারা বিশ্বাস করতেন যে, বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের দাবি পূরণ হবে না। দরকার সশস্ত্র বিদ্রোহ। নকশাল বিদ্রোহীরা চীনা নেতা মাও সেতুং-এর বিপ্লবী আদর্শ দ্বারাও অনুপ্রাণিত ছিলেন। এই লক্ষ্যে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির রাষ্ট্র দখলের কৌশলের অনুকরণে তারা কয়েক দশক ধরে খনিজ সমৃদ্ধ মধ্য ও পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহ চালিয়েছেন।
তবে পরবর্তীতে সিপিআই(এমএল) একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যার ২০টিরও বেশি শাখা এখনো বিদ্যমান। মূল সিপিআই(এমএল) নিজেই সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করে ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ শুরু করে।
এদিকে, ১৯৮০ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধ্র প্রদেশের কোন্ডাপল্লী সীতারামায়া ও কল্লুরি চিরঞ্জীবী প্রতিষ্ঠা করেন পিপলস ওয়ার নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। আরেকটি প্রধান বিচ্ছিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ছিল মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি), যাদের ঘাঁটি ছিল বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে, এমসিসি এবং সিপিআই(এমএল) পিপলস ওয়ার একীভূত হয়ে ভারতের বৃহত্তম সশস্ত্র মাওবাদী সংগঠন, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী) গঠন করে।
সংগঠনটির সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজ, গত বুধবার ছত্তিশগড়ের বস্তারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এই স্থানটিই ছিল মাওবাদীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি।

বিজেপির লক্ষ্য ‘নকশালমুক্ত ভারত’
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় বিজেপি পরিচালিত ছত্তিশগড় রাজ্য সরকার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৩ বছরে ১৪১ জন মাওবাদী নিহত হয়েছিল। তবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২৪ সালেই নিরাপত্তা বাহিনী ২২৩ জন সন্দেহভাজন মাওবাদীকে হত্যা করেছে।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘গত ১৫ মাস ধরে আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা নকশালদের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছে। এই অভিযান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে ভারতকে নকশালমুক্ত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। এটি একটি নিষ্পত্তিমূলক পর্যায় এবং আমরা দ্রুত সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী কারিগাটা পাহাড়ে সন্দেহভাজন মাওবাদী আস্তানাগুলো ঘিরে রেখেছে এবং সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযানে সহায়তা করছে।
গত ১৪ মে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কারিগাটা পাহাড়ে ৩১ জন মাওবাদীকে হত্যার কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেন, ‘আমি আবারও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ভারত নকশালমুক্ত হবে।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানতে পেরেছে, ছত্তিশগড়ে প্রায় ৬৬ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে আধাসামরিক এবং বিশেষ বাহিনীও রয়েছে।
এদিকে, সরকার এসব সামরিক অভিযানে সাফল্য দাবি করলেও, পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভুয়া এনকাউন্টার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে।
ছত্তিশগড়ে পিইউসিএলের সভাপতি জুনাস তিরকি বলেছেন, ‘মাওবাদীদের নির্মূল করার অজুহাতে একটি বড় আকারের সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে বস্তারে সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামরিকীকরণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরীহ আদিবাসীদের ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যা করা হচ্ছে।’ পিইউসিএল গত দেড় বছরে অন্তত ১১টি ঘটনাকে ভুয়া এনকাউন্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে সরকার পিইউসিএলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বস্তারের পুলিশ মহাপরিদর্শক প্যাট্টিলিঙ্গম সুন্দররাজও এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, মাওবাদীরা প্রায়শই স্থানীয়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এনকাউন্টারের পর পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করে। তবে, অতীতে বস্তারে একাধিক ‘এনকাউন্টার’ ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা বিচার পায়নি।
সমস্যার মূলে খনিজ সম্পদ ও আদিবাসীদের বাস্তুচ্যুতি?
নকশালরা দেশের খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চলে বন্দুক তোলার কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ, বিশেষ করে বৈশ্বিক করপোরেশনগুলোকে দেওয়া খনিজ লিজ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুতিকে তুলে ধরেছেন। হাজার হাজার আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং খনিজ উত্তোলনের কারণে তাদের স্থানীয় পরিবেশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বস্তারের ৫১টি স্থান খনিজ উত্তোলনের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬টি বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে কিছু বিদেশি কোম্পানিও আছে। প্রাক্তন বিধায়ক এবং আদিবাসী নেতা মণীশ কুঞ্জাম একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে বলেন, ‘আসল সমস্যা হলো এই অঞ্চলের লৌহ আকরিক।’
ভারতীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশের মোট লৌহ আকরিক মজুদের ১৯ শতাংশ ছত্তিশগড়ে, যার বেশির ভাগই বস্তারে অবস্থিত। ছত্তিশগড় ভারতের মোট রেলওয়ে রাজস্বের ১৮ শতাংশ সরবরাহ করে, যার অধিকাংশই আসে খনিজ পরিবহন থেকে।
প্রাক্তন বিধায়ক মণীশ কুঞ্জাম ব্যাখ্যা করেন, ২০০৫ সালে যখন টাটা ও এসার করপোরেশন লৌহ আকরিক উত্তোলনের প্রকল্প শুরু করে, তখন রাজ্য সরকার ‘সালওয়া জুডুম’ (গোন্ডি ভাষায় যার অর্থ শান্তি মার্চ) চালু করে মাওবাদী ভয়ের অজুহাতে ৬৪৪টি গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়। এতে অন্তত ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। তবে, আদিবাসীদের শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে কোম্পানিগুলো সরে যেতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, ‘সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার এখন খনিজ অঞ্চলে নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন করেছে, সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নতুন করে উত্তোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তবে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই অবশ্য বিশ্বাস করেন, আদিবাসী অঞ্চলের খনিজ সম্পদ ব্যবহার করা উচিত। তিনি দাবি করেন, ‘খনির কাজ এবং শিল্প কার্যকলাপ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীদের জীবন পরিবর্তিত হবে।’ তিনি গর্ব করে বলেন, ছত্তিশগড় খনিজ উৎপাদক রাজ্য গুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে (ওডিশার পর), যেখান থেকে গত বছর প্রায় ১ হাজার ৪১৯ কোটি রুপি আয় হয়েছে। তাই এ বছর, রাজ্য সরকার বেসরকারি সংস্থা গুলিকে আরও ৪৮টি প্রধান খনিজ ব্লক বরাদ্দ করেছে।
মানবাধিকার কর্মী সোনি সোরি বলেন, ‘সরকার একদিকে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেয়, অন্যদিকে বস্তারকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করছে।’ মাওবাদীরা যুদ্ধবিরতি ও প্যারামিলিটারি বাহিনী প্রত্যাহারের শর্তে আলোচনা চায়। সিপিআই (মাওবাদী) মুখপাত্র অভয় বলেন, ‘শান্তি প্রক্রিয়া অর্থহীন যদি হত্যা চলতে থাকে।’ তবে মুখ্যমন্ত্রী সাই বলেন, ‘নকশাল নির্মূল একটি মিশন এবং এতে কোনো নমনীয়তার স্থান নেই।’
তবে খনিজ শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক দারিদ্র্য এবং মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাব সরকারের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আদিবাসী নেতা নেতাম উল্লেখ করেন, রাজ্যের নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ৩৮, যেখানে জাতীয় নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজার জনে মাত্র ২৮। তিনি বলেন, বস্তারে দারিদ্র্যের হার ৮০ শতাংশ।
বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র সুশীল আনন্দ শুক্লা আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আদিবাসীদের জীবনের বিনিময়ে রাজস্ব উপার্জনের ধারণা বিপজ্জনক এবং অসাংবিধানিক।’
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বস্তারে এখন প্রায় ১ হাজার সশস্ত্র মাওবাদী ও তাদের ১৫ হাজার সহযোগী রয়েছে, যা ২০১১ সালের তুলনায় অনেক কম। ধীরে ধীরে নতুন মাওবাদী সদস্য নিয়োগ, অস্ত্র ও ঘাঁটি কমছে। তবে প্রাক্তন ডিজিপি বিশ্বরঞ্জন বলেন, ‘হিংসার মাধ্যমে মাওবাদী মতাদর্শ পরাজিত করা যাবে না। অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে এটি নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে।’

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো
২২ মে ২০২৫
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো
২২ মে ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো
২২ মে ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রামের একটি অভ্যুত্থান থেকে। এই গ্রাম থেকেই ‘নকশাল’ শব্দের উৎপত্তি। কমিউনিস্ট নেতা কানু সান্যাল, চারু মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালের নেতৃত্বে এই সশস্ত্র অভ্যুত্থান শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ছিল, ভূমিহীন দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো
২২ মে ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
১০ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে