Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে কি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে, তাদের ডকট্রিন কী বলে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ১২: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।

আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।

উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:

ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।

নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।

কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।

পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।

ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?

ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।

ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?

প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।

নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।

পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:

  • প্রথম আঘাত নয় (No First Use-NFU) : এই নীতির অর্থ হলো ভারত শত্রুর ওপর প্রথম পারমাণবিক হামলা চালাবে না। পারমাণবিক হামলার শিকার হলে তবেই তারা পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেবে। ভারতের নীতি অনুযায়ী, ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলা হলে বা বিদেশি ভূখণ্ডে তাদের সেনাদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে তারা প্রতিশোধ নিতে পারে। ভারত পারমাণবিক শক্তিধর নয় এমন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
  • বিশ্বাসযোগ্য ন্যূনতম প্রতিরোধ (Credible Minimum Deterrence) : ভারতের অবস্থান মূলত প্রতিরোধের ওপর কেন্দ্রীভূত। অর্থাৎ, অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকে পারমাণবিক হামলার হুমকি মোকাবিলায় তারা পারমাণবিক অস্ত্রাগার গড়ে তুলেছে। ভারতের দাবি, তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগার এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে একটি বিমাস্বরূপ। তবে নয়াদিল্লি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) স্বাক্ষরকারী নয়। তারা বলে, সমস্ত দেশ একই সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণ না করা পর্যন্ত তারা তা করবে না।
  • ব্যাপক প্রতিশোধ (Massive Retaliation) : কোনো আগ্রাসী দেশ প্রথম আঘাত হানলে ভারত এমনভাবে প্রতিশোধ নেবে, যাতে শত্রুর সামরিক সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়।
  • জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্রের বিকল্প: ডকট্রিন অনুযায়ী, ভারত সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে, যারা জৈব বা রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে দেশ বা বিদেশে তাদের সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে।

পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?

  • কৌশলগত অস্পষ্টতা: পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত কোনো ব্যাপক নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। এর ফলে তারা অতীতের মতো ভবিষ্যতে কোনো সংঘাতের যেকোনো পর্যায়ে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করার বিষয়ে নীতিগত নমনীয়তা রাখে বলে মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুরু থেকেই ইসলামাবাদের এই অস্বচ্ছতা কৌশলগত ছিল। ধারণা করা হয়, ভারতের উন্নত সামরিক শক্তির পাশাপাশি পারমাণবিক শক্তিকেও প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে এই নীতি তৈরি করেছে পাকিস্তান।
  • চারটি ট্রিগার: অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল খালিদ আহমেদ কিদওয়াই। তিনি পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতির সঙ্গে জড়িত একজন গুরুত্বপূর্ণ কৌশলবিদ এবং পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার একজন উপদেষ্টা হিসেবে বিবেচিত। ২০০১ সালে তিনি চারটি বিস্তৃত ‘রেড লাইন’ বা ট্রিগার নির্ধারণ করেছিলেন। এসব পরিস্থিতিতে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো:

স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।

সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।

অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।

তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।

ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?

যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।

২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।

রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’

ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’

পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?

পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।

পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।

২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দোনেৎস্ক: শান্তি-আলোচনার টেবিলে পুতিন-জেলেনস্কির অন্তিম বাধা, এর গুরুত্ব কতটা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে এখন মূল আলোচনার ইস্যু হয়ে আছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের ২০ শতাংশ ভূমি ছাড়ের বিষয়টি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতদের মধ্যে ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউরি উশাকভ, এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে অমীমাংসিত ‘আঞ্চলিক সমস্যাই’ মূল বাধা। আর এই অঞ্চল আর কোনোটিই নয়, দোনেৎস্ক।

উশাকভ মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্পূর্ণ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ দাবির কথাই বলেছিলেন। পুতিন ইউক্রেনে হাজার হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রায় ৪ বছর পরও এবং দোনেৎস্কে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের এক দশকেরও বেশি সময় পর অঞ্চলটির কিছু অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে।

প্রায় সব দেশই দোনেৎস্ককে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চারটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যা মস্কো ২০২২ সালে একটি গণভোটের পর সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো সেই গণভোটকে ‘প্রহসন’ বলে বাতিল করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, যুদ্ধটি এখন দোনেৎস্কের সেই ২০ শতাংশ বা ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এলাকা নিয়ে, যা রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে না কিন্তু চায়।

পুতিন ২০২২ সালে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর সময় বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য হলো ‘গত আট বছর ধরে যারা ভয়ভীতি ও গণহত্যার শিকার হয়েছেন...সেই মানুষগুলোকে রক্ষা করা।’ ইউক্রেন এবং তার মিত্ররা বলেছিল, পুতিনের এই দাবি ঔপনিবেশিক ধাঁচের এবং এলাকা দখলের জন্য একটি মিথ্যা অজুহাত মাত্র।

পুতিনের এই দাবি মূলত দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে, যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। পূর্ব ইউক্রেনে এর পরের সংঘর্ষে উভয় পক্ষই শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল। মস্কো এই অঞ্চলের বিশাল রুশভাষী জনসংখ্যাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল যে,২০২২ সালে হস্তক্ষেপ করা তাদের নৈতিক কর্তব্য।

কিয়েভ বলেছিল, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না এবং তারাও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে শহর ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের শুরু পর্যন্ত ইউক্রেনীয় সরকারি বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘাতে উভয় পক্ষে ৩ হাজার ১০৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯ হাজার বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছিলেন।

দোনেৎস্কের বাকি যে অংশটি রাশিয়া চায়, তার মধ্যে রয়েছে স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্ক—দুটি ‘দুর্গনগরী’ যা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই শহরগুলো ইউক্রেনের বাকি অঞ্চল রক্ষার জন্য কিয়েভের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দোনেৎস্কের পশ্চিমের ভূমি অনেকটাই সমতল এবং বিশাল খোলা মাঠ; যা রাশিয়াকে দোনেৎস্কের বাইরে অগ্রসর হতে এবং দিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীর পর্যন্ত এলাকা দখল করার পথ সহজ করে দেবে।

শহরগুলো পরিখা, ট্যাংক-বিধ্বংসী বাধা, বাংকার এবং মাইনক্ষেত্রসহ অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা লাইনের অংশ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া অবৈধ হবে এবং তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণের জন্য রাশিয়াকে একটি পথ খুলে দেবে।

কিয়েভের আশঙ্কা, যদি তারা দোনেৎস্কের বাকি অংশ ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া আবার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হবে এবং একসময় দোনেৎস্ক ব্যবহার করে পশ্চিম দিকে আক্রমণ চালাবে।

উভয় পক্ষই দোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে যুদ্ধে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে এবং প্রচুর অর্থ ও সরঞ্জাম ব্যয় করেছে। এর মধ্যে বাখমুত শহরের লড়াইও রয়েছে। যেখানে রাশিয়া হাজার হাজার দণ্ডিত অপরাধীকে ভাড়াটে সৈন্যে পরিণত করে রণক্ষেত্রে নামিয়েছিল। এ কারণে, দোনেৎস্ক উভয় দেশের জনমানসে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কারও পক্ষে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা কঠিন।

ইউক্রেন চায় না যে, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে জয় করতে ব্যর্থ হওয়া ভূখণ্ডকে উপহার হিসেবে পাক এবং জেলেনস্কি বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করা উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার অক্টোবর মাসে বলেছিল, রাশিয়ার অগ্রগতির হার দেখে মনে হয় না যে তারা খুব শিগগিরই দোনেৎস্কের বাকি অংশ দখল করতে চলেছে। তবে ‘রাশিয়ার অগ্রগতির একটি অপরিবর্তনীয় হার ধরে নিলে’ তারা ২০২৭ সালের আগস্টের মধ্যে তা নিতে পারে।

রাশিয়ার কমান্ডাররা অবশ্য আরও বেশি আশাবাদী। জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ রোববার পুতিনকে বলেছেন, মস্কোর বাহিনী পুরো ফ্রন্ট লাইন বরাবর অগ্রসর হচ্ছে এবং দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দোনেৎস্ক বন্দর, রেলপথ এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কেন্দ্র। এটি একসময় ইউক্রেনের কয়লা, পরিশোধিত ইস্পাত, কোক, ঢালাই লোহা এবং ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি সরবরাহ করত, তবে যুদ্ধের কারণে অনেক খনি ও কারখানা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া, দোনেৎস্কে বিরল মৃত্তিকা, টাইটানিয়াম এবং জিরকোনিয়াম রয়েছে—যা এটিকে নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের জন্য আয়ের উৎস।

দোনেৎস্কের ভাগ্য পুতিন এবং জেলেনস্কি উভয়ের ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। পুতিন নিজেকে জাতিগত রুশদের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। পুরো দোনেৎস্ককে সুরক্ষিত করা এই বক্তব্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু। জেলেনস্কি ২০১৯ সালে পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধ অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। ২০২২ সাল থেকে তিনি অনেক বড়, বৈরী প্রতিবেশীর মুখে অস্ত্র এবং সংখ্যায় কম ইউক্রেনের এক দৃঢ় রক্ষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।

লড়াই না করে দোনেৎস্ক ছেড়ে দেওয়া—যেখানে অন্তত আড়াই লাখ ইউক্রেনীয় বাস করে—ইউক্রেনীয়দের কাছে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখা হতে পারে, যাদের অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে স্বজন হারিয়েছেন। কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোসিওলজির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনীয়দের একটি সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এখনো আঞ্চলিক ছাড়ের বিরোধিতা করে।

জেলেনস্কিসহ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যেকোনো শান্তি চুক্তির অধীনে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি ছাড়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, তাঁর ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো ম্যান্ডেট নেই এবং রাষ্ট্রের ভূমি ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো কেনা-বেচা করা যায় না। ইউক্রেনের সংবিধান অনুসারে, আঞ্চলিক পরিবর্তন অবশ্যই একটি গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে, যা ইউক্রেনের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, অন্তত ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় ভোটারের স্বাক্ষর থাকলে আয়োজন করা যেতে পারে।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই গণভোটের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘কিছু ভূমি অদল-বদল হবে।’ এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা মূলত এই দোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাবে সেটাই নিয়েই থমকে আছে।

রয়টার্স থেকে পরিমার্জিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কী হবে, যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া হয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ইলন মাস্ক সহ বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কয়েকজন। ছবি: এএফপি

বিশ্বজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠে আসছে—‘যদি বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সীমিত করা হয়, অথবা এই শ্রেণিটিকেই সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়, তবে কী ঘটবে?’ পশ্চিমা দেশগুলোতে চরম ধনী বা বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও প্রভাব বাড়তে থাকায় এখন এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্প্রতি টেসলার মালিক ইলন মাস্ক গত নভেম্বরে এমন এক পে-অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তাঁকে একজন ট্রিলিয়ন ডলারের মালিকে পরিণত করতে পারে। তিনি ইতিমধ্যেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী। যদি তিনি প্রস্তাবিত পূর্ণ প্যাকেজটি পান, তাহলে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। ফোর্বসের হিসেবে বর্তমানে বিশ্বের ৩ হাজার ২৮ জন বিলিয়নিয়ার আছেন। তাঁদের মোট সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পৃথিবীতে এখনো প্রায় ৮৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ দৈনিক তিন ডলারের নিচে আয় করে চরম দারিদ্র্যে দিন কাটান।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের এই বিপুল সম্পদ বৈষম্য শুধু অর্থনীতিকে নয়, রাজনীতি, মিডিয়া ও চিন্তাকেও প্রভাবিত করে। অনেকেই মনে করেন, বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ও ক্ষমতা বিশ্বব্যবস্থাকে ‘অতি ধনীদের স্বার্থে’ পুনর্গঠন করছে। আবার অন্য একটি মত বলছে, বিলিয়নিয়ারেরা না থাকলে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও অগ্রগতি থমকে যাবে। কারণ বৃহৎ বিনিয়োগই গড়ে তোলে নতুন সমাধান।

উদ্ভাবন কি থেমে যাবে

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের ম্যাক্সওয়েল মার্লোর মতে, বিলিয়নিয়ারদের বিলোপ করা হলে পশ্চিমা অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে। তাঁর দাবি, অধিকাংশ বিলিয়নিয়ার তাঁদের সম্পদের মালিক হয়েছেন সমাজের চাহিদামতো পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরি করে। তাঁদের সম্পদ মূলত কোম্পানির শেয়ার, মেধাস্বত্ব অথবা সম্পত্তি—যা দিনে দিনে ওঠানামা করে। তাঁর মতে, এই ধনী ব্যক্তিদের প্রণোদনাই উদ্ভাবনে গতি আনে; তা না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে।

যদি ন্যায্যভাবে সম্পদ বণ্টিত হতো

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের ডেরেজে আলেমায়েহুর মতে, শুধু বিলিয়নিয়ার কর আরোপ নয়—প্রশ্ন হচ্ছে, সেই কর কোথায় যাবে। দক্ষিণ বিশ্বের শ্রম ও সম্পদ থেকেই যে বিপুল সম্পদ তৈরি হয়, তাই তার ন্যায্য অংশ দক্ষিণেই ফিরে আসা উচিত। তিনি বলেন, বৈষম্য কমাতে শুধু অর্থ হস্তান্তর নয়, বৈশ্বিক আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি; নইলে বৈষম্য আরও গভীর হবে।

বিধিনিষেধ কি বদলাতে হবে

ডেনিসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফাদেল কাবুব বলেন, বিলিয়নিয়ারেরা আসলে ব্যর্থ নীতির ফল। সিস্টেম যেভাবে সাজানো, তাতে সম্পদ একদিকে কেন্দ্রীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, বিলিয়নিয়ার শ্রেণিকে বিলোপ করতে হলে আধুনিক অ্যান্টি ট্রাস্ট ও কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

মিডিয়ার ওপর প্রভাব কমবে

গোল্ডস্মিথস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেস ফ্রিডম্যান মনে করেন, বিলিয়নিয়ারেরা পুরো মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম কিনে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ তাঁদের স্বার্থেই নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন—বেজোস বা ইলন মাস্কের গণমাধ্যম মালিকানা এই অঙ্গনের স্বাধীনতাকে দীর্ঘমেয়াদে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই বিলিয়নিয়ার প্রভাব সীমিত হলে তথ্যের উৎসও আরও স্বাধীন হতে পারে।

চরম সম্পদ কি সত্যিই বিলোপ করা সম্ভব

বিশ্ব ইনইক্যুয়ালিটি ল্যাবের লুকাস শ্যানসেলের মতে, ইতিহাসে এর নজির আছে। উদাহরণস্বরূপ—রকেফেলারের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়া, কিংবা রুজভেল্টের সময় সর্বোচ্চ করহার ৯৪ শতাংশে উন্নীত করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারসের মতো ফাঁস যেমন দুর্দান্ত স্বচ্ছতা তৈরি করেছে, তেমনি তা পরিবর্তনের সুযোগও তৈরি করছে। তিনি মনে করেন, ধনীদের ওপর কর আরোপের মতো ধারণা এখন আর ‘যদি’ নয়, বরং ‘কখন’ করা হবে—এ প্রশ্নে এসে দাঁড়িয়েছে।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের ‘লৌহমানবী’ কি দেশকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২০
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ছবি: সংগৃহীত

জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সানায়ে তাকাইচি। এরপরই তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হন জাপানের নতুন ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী’ হিসেবে। এই পরিচয়টিকে তাকাইচি নিজেও গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের অনুরাগী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই শক্ত অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।

তাকাইচির রাজনৈতিক পরিচয়ের মূল কেন্দ্রে রয়েছে ‘নিপ্পন কেইগি’ নামে জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। এই সংগঠন জাপানের সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে। পূর্বসুরী শিনজো আবের মতো তাই তাকাইচিও জাপানকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে গোয়েন্দা সংস্থা, আধুনিক সেনাবাহিনী এবং কঠোর নিরাপত্তা আইন থাকবে।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির পক্ষে। একই সঙ্গে কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধের প্রচারও তাঁকে ডানপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় করেছে। তবে এই অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গে গেঁথে গেছে—বিশেষ করে, তাইওয়ান ইস্যুতে তাঁর অবস্থানের কারণে।

তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন। বেইজিংকে তিনি কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখেন এবং প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন সোনালি যুগে প্রবেশ করানোর আভাস দেয়। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র বিরল ধাতুর সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ অর্থনৈতিক সহায়তার ঘোষণা দেয়।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাকাইচির ঘনিষ্ঠতা। তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, যা চীনের কাছে স্পষ্ট উত্তেজনাকর পদক্ষেপ হিসেবে ধরা পড়েছে। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয় যখন তাকাইচি প্রকাশ্যে বলেন, তাইওয়ানের নিরাপত্তা জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এমনকি তাইওয়ানে চীনা হামলার ক্ষেত্রে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতিক্রিয়াও ছিল কঠোর ও দ্রুত। তারা তাকাইচির বিরুদ্ধে ‘পুরোনো সামরিকতাবাদকে পুনরুজ্জীবিত করার’ অভিযোগ তোলে, রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এবং জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠায়। পাশাপাশি সামুদ্রিক এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ায় চীন, জাপানি সামুদ্রিক পণ্যে সীমাবদ্ধতা আরোপের হুমকি দেয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ নানা বিবৃতি দেয়।

এদিকে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই দ্বীপে সামরিক অবকাঠামো শক্তিশালী করছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশকে হয় পুনরুত্থানের পথে নেবে—নয়তো চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তিনি কোন পথে হাঁটবেন তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিন-মোদির আসন্ন বৈঠকের মূলে কী আছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠককে ঘিরে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক প্রস্তুতি। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মধ্যেই এই শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি—এই তিনটি খাত আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে দুই দেশই নিশ্চিত করেছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারতে পৌঁছে পরদিন শুক্রবার মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পুতিন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও নতুন কয়েকটি আন্তদপ্তর ও বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব ধরে রাখতে ভারতের নীতির জন্য এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাশিয়া থেকে ডিসকাউন্টে ভারতের তেল কেনা দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াশিংটনকে অসন্তুষ্ট করে আসছে। এই অসন্তুষ্টি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শুল্ককে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। তবে ভারত বলছে, তারা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিরোধী নয়, কিন্তু ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি চাহিদা মেটাতেই বাধ্য হয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ‘রসনেফত’ ও ‘লুকওইল’ এর মতো রাশিয়ার কিছু কোম্পানি থেকে ভারত তেল কিনবে না বলে জানিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞামুক্ত রুশ সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য চালু থাকবে।

পুতিনের এই সফরে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। ভারত রাশিয়ায় ওষুধ, কৃষিপণ্য ও টেক্সটাইল রপ্তানি বাড়াতে চায় এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাবে। এ ছাড়া সার সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি এবং রাশিয়ায় ভারতীয় দক্ষ জনশক্তির নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, সমুদ্র পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যম সহযোগিতা বিষয়ক নথিপত্র চূড়ান্তের কাজও চলছে।

বুধবার এই বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্টের এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, জ্বালানি সহযোগিতাই পুতিন-মোদি আলোচনার বড় অংশ দখল করবে। ভারতের ফার ইস্টে বিনিয়োগ, রাশিয়ার সঙ্গে বেসামরিক পারমাণবিক প্রকল্প এবং কুদানকুলাম প্রকল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হবে। স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হবে।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২০১৮ সালের ৫.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় ভারতের হাতে ইতিমধ্যে রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ স্কোয়াড্রন এসেছে। যুদ্ধজনিত কারণে বাকিগুলোর সরবরাহে যুদ্ধজনিত বিলম্ব হচ্ছে। ভারত এই সরবরাহ দ্রুত নিশ্চিত করতে চাপ দেবে। পাশাপাশি আরও এস-৪০০ কেনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি, যদিও বৈঠক থেকে কোনো ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা কম। রুশ নির্মিত এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান আপগ্রেড, অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় সমন্বয় জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত বহুজাতিক অস্ত্র সরবরাহকারীদের দিকে নজর বাড়ালেও রাশিয়া এখনো তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা অংশীদার। পুতিনের সফরকে সেই সম্পর্কটি আরও দৃঢ় করার বড় সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত