আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৪ দিন আগে