আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ।
আজ শনিবার (১০ মে) ভোরে পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তারা ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হেনেছে। এ ঘটনা দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ওই হামলায় ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় গাইড নিহত হন। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে তারা অস্বীকার করে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে; ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এরপর থেকে দেশ দুটি একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। প্রথমে এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে থাকলেও দ্রুত সামরিক সংঘাতের দিকে মোড় নেয়।
উভয় পক্ষই গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অভূতপূর্ব বাস্তবতা শুধু ভারত ও পাকিস্তানের ১৬০ কোটি মানুষের জন্য নয়, বিশ্ববাসীকেও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। তাদের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে এটি হবে দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ আল জাজিরাকে বলেন, ‘উভয় পক্ষেরই একে অপরের ওপর পারমাণবিক হামলা চালানো বোকামি হবে...পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা কম, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
পরিস্থিতি এই পর্যায়ে কীভাবে পৌঁছাল? ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগার কতটা সমৃদ্ধ? কখন–তাদের ভাষ্য অনুযায়ী–পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে? সেসব নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে:
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরে অস্থিরতার জন্য দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে (টিআরএফ) দায়ী করে আসছে। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি প্রথমে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করলেও পরে বলে, তাদের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, টিআরএফ পাকিস্তান-ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি ছায়া সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়েবা বারবার ভারতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা উল্লেখযোগ্য। ওই হামলায় ১৬০ জনেরও বেশি নিহত হয়।
নয়াদিল্লি পেহেলগামে হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে। পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ভারত পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করে এবং উভয় পক্ষই কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে। একে অপরের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। জবাবে পাকিস্তান ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকেও বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এই চুক্তিটি বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে দুই প্রতিবেশীকে সম্মত করেছিল।
কিন্তু গত ৭ মে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারত দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, এই হামলায় অন্তত দুজন শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
৮ মে পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতীয় ড্রোন প্রবেশ করে, দেশটির প্রধান শহরগুলো পর্যন্ত পৌঁছেছিল সেগুলো। ভারতের দাবি, এটি ছিল তাদের প্রতিশোধ। পাকিস্তান তাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল বলেও অভিযোগ করে ভারত। এরপর টানা দুই রাতে ভারত ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শহরগুলোতে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। নয়াদিল্লির দাবি, এগুলো ছিল পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ৮ ও ৯ মে ভারতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করে। কিন্তু আজ শনিবার (১০ মে) ভোরের দিকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পাকিস্তান প্রথমে দাবি করে, ভারত তাদের তিনটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তান অন্তত সাতটি ভারতীয় ঘাঁটিতে হামলার দাবি করে। পাকিস্তান তাদের সামরিক স্থাপনায় ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে।
পাকিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তান ভারতের উধমপুর শহরের বিমানঘাঁটি এবং পাঠানকোটে একটি এয়ার ফিল্ডকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, উভয়ই ‘ধ্বংস’ হয়েছে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিয়াসে একটি ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের গুদামেও আঘাত হানা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ভারত ও পাকিস্তানের কাছে কতগুলো পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে?
ভারত প্রথম ১৯৭৪ সালের মে মাসে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে আরও কয়েক দফা পরীক্ষা করে। এরপর তারা নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তান ছয়টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এরপর থেকে উভয় পক্ষই অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র অর্জন ও পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নামে। উন্নয়নশীল এ দুই প্রতিবেশী দেশ এই প্রতিযোগিতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
বর্তমানে ভারতের কাছে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে বলে অনুমান করা হয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) মতে, ভারত দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং সেগুলো বহনযোগ্য স্থলভিত্তিক (ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য) ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। জাহাজ ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য রাশিয়ার সঙ্গেও কাজ করছে ভারত।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে ১৭০টির বেশি ওয়্যারহেড রয়েছে। দেশটি তার আঞ্চলিক মিত্র চীনের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পায়। পাকিস্তানের অস্ত্রের মজুতে মূলত বহনযোগ্য স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের লক্ষ্য মূলত ভারতীয় ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্রের মজুত বাড়ানো।
ভারতের পারমাণবিক নীতি কী?
প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সরকার প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে নেহরু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আঞ্চলিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিহত করতে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা সুসংহত করেছে ভারত।
নয়াদিল্লির প্রথম এবং একমাত্র পরমাণু নীতি (ডকট্রিন) ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা আর কখনো সংশোধন করা হয়নি। সেই নীতির স্থপতি, প্রয়াত স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিস্ট কে সুব্রাহ্মণ্যম। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বাবা।
পারমাণবিক কমান্ড কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে কেবল প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পরমাণু ডকট্রিন চারটি নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি:
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি কী?
স্থানিক প্রান্তসীমা: পাকিস্তানের ভূখণ্ডের বড় অংশ হারালে তার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করতে পারে। এটি ভারতের সঙ্গে তাদের সংঘাতের মূল কারণও বটে।
সামরিক প্রান্তসীমা: তাদের বিমান বা স্থলবাহিনীর একটি বড় অংশ ধ্বংস বা লক্ষ্যবস্তু হলে।
অর্থনৈতিক প্রান্তসীমা: আগ্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ড যা পাকিস্তানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রান্তসীমা: এমন কর্মকাণ্ড যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
তবে, পাকিস্তান কখনোই স্পষ্টভাবে জানায়নি যে, এই ট্রিগারগুলো সক্রিয় হওয়ার জন্য তাদের ভূখণ্ড বা সশস্ত্র বাহিনীর ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ভারতের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
যদিও ভারতের আনুষ্ঠানিক ডকট্রিন একই রয়ে গেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রথম আঘাত না করার নীতি নিয়ে আরও অস্পষ্ট অবস্থান তৈরি হতে পারে। সম্ভবত পাকিস্তানের অবস্থানের সঙ্গে তারা সংগতি রেখে নীতি পরিবর্তন করেছে বা করবে।
২০১৬ সালে, তৎকালীন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতকে এই নীতিতে আবদ্ধ রাখা উচিত কিনা। ২০১৯ সালে, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ভারত এত দিন কঠোরভাবে প্রথম আঘাত না করার নীতি মেনে চলেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর পরিবর্তন হতে পারে।
রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
ভারতের এই কৌশল গ্রহণকে পাকিস্তানের সঙ্গে আনুপাতিক হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, কৌশলগত অস্পষ্টতা একটি দুইধারী তলোয়ার।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লোরা স্যালমান বলেন, ‘প্রতিপক্ষের রেড লাইন সম্পর্কে ধারণার অভাব অজান্তেই সেই রেখা অতিক্রম করার দিকে ধাবিত করতে পারে। তবে এটি কোনো দেশকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়া থেকে বিরতও রাখতে পারে।’
পাকিস্তানের পারমাণবিক অবস্থানে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে?
পাকিস্তান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি অস্পষ্ট নীতি থেকে সরে এসে ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করার দিকে ঝুঁকেছে। ২০২৪ সালের মে মাসে, পারমাণবিক কমান্ড সংস্থার উপদেষ্টা কিদওয়াই একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ইসলামাবাদের ‘প্রথম আঘাত না করার নীতি নেই’।
পাকিস্তান ২০১১ সাল থেকে তথাকথিত ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র’ তৈরি করেছে। এটি হলো স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র, যা সীমিত হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ না ঘটিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এ ধরনের অস্ত্র বানানো হয়।
২০১৫ সালে, তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ইজাজ চৌধুরী নিশ্চিত করেছিলেন, ভবিষ্যতের সংঘাতে ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ওয়্যারহেডগুলোর বিস্ফোরক ক্ষমতা ৩০০ কিলো টন পর্যন্ত হতে পারে। এটি হিরোশিমায় বিস্ফোরিত বোমার চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এই ধরনের বিস্ফোরণ কেবল বিপর্যয়করই নয়, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পাকিস্তানের নিজস্ব সীমান্ত অঞ্চলের জনসংখ্যার ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৭ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৭ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৭ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
১০ মে ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৭ ঘণ্টা আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
১ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
২ দিন আগে