আজকের পত্রিকা ডেস্ক

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
এটি স্পষ্টতই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে ‘শুল্করাজ’ বলে কটাক্ষ করে আসছেন। তাঁর মতে, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপ করে থাকে।
ভারতের এই উদ্যোগ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ।
এই নতি স্বীকারের সবচেয়ে প্রকট উদাহরণ প্রতিরক্ষা খাত। এই বিষয়টি ভারতের সামরিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকের কাছে, সরকারের এই মার্কিন তোষণ নীতি বিস্ময়কর মনে হতে পারে। বিশেষ করে, যখন বর্তমান বিজেপি সরকার নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে উপস্থাপন করে! তবে এর মূল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই নীতির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের আদর্শগত অবস্থানের যথেষ্ট সামঞ্জস্য আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারতনীতিকে ব্যাপকভাবে কয়েকটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী প্রাথমিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল সজাগ কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত। ভারতের জোট নিরপেক্ষ নীতি, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক মডেল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দিল্লিকে সন্দেহের চোখে দেখত, আবার কৌশলগত দিক থেকে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা, কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখত। সোভিয়েতের পতনের পর স্নায়ু যুদ্ধোত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে উদীয়মান গণতান্ত্রিক শক্তি এবং চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য শক্তির ভারসাম্য হিসেবে দেখতে শুরু করে। এ সময় ধীরে ধীরে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার বিস্তৃত কৌশলগত কাঠামোর অংশ হিসেবে একীভূত করতে চেয়েছে। ২০০৮ সালের পরমাণু চুক্তির মতো উদ্যোগ দুই দেশের সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ভারত–যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারত্বের যুগে (২০০০–১৬) চীনের উত্থান এবং বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিল্লি ক্রমশ ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান অংশীদার হয়ে ওঠে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। বুশ থেকে শুরু করে ওবামা প্রশাসনের অধীনে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর হয়ে ওঠে আনুষ্ঠানিক চুক্তি, কৌশলগত আলোচনা এবং প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে। মূলত এসবের মাধ্যমে এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে দুই দেশের এক অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের (২০১৭–২১) সময় যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি বিনিময় মূলক ও সংরক্ষণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। যদিও চীনের বিপরীতে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় ভারতকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তবে ট্রাম্পের নীতির অন্যতম দিক ছিল একতরফা ব্যবসায়িক স্বার্থ ব্যবস্থা ও শুল্ক চাপ। তিনি ভারতের উচ্চ শুল্কের প্রায়ই সমালোচনা করেছেন এবং শুল্ক সংস্কারে চাপ দিয়েছেন। দুই দেশের সম্পর্কের এই পর্যায় পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এক ব্যাপক পরিবর্তনকেই প্রতিফলিত করে। ট্রাম্পের আমলে কৌশলগত ও আদর্শগত ভিত্তির পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরাসরি জোরালো বাণিজ্য আলোচনার কৌশল বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থনৈতিক সমন্বয়ের পাশাপাশি, ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে দেখেছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকাকে নমনীয় করে রাখতে চেয়েছিল। তবে, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আক্রমণ করে বলছে, দিল্লি এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব কার্যকরভাবে সীমিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার পরিবর্তে, ভারত এখন আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার মোতাবেক তার নীতি সাজানোর প্রবণতা দেখাচ্ছে। এমনকি, ভারত এর ফলে দীর্ঘদিনের বন্ধু রাশিয়াকে হারানোর মতো অবস্থানে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকি জেনেও এই কাজ করছে। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এক সময়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা সহযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাশিয়া থেকে ভারতের ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়া এই পরিবর্তনেরই নিদর্শন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা গ্রহণের ফলে নিজের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি মার্কিন দাবির বিপরীতে কম ভূরাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার শর্তে দিল্লির অবস্থান আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের কৌশলগত অবস্থানের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বহু-মেরু এশিয়ায় স্বাধীনভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা, যেখানে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে জাতীয় স্বার্থ হাসিল করা হবে। তবে, শুল্ক সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ এবং রাশিয়া থেকে কার্যত দূরত্ব সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ভারতের স্বাধীন কৌশলগত হিসাব-নিকাশকে মার্কিন স্বার্থের প্রতি আনুগত্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল শুল্কের জন্যই চাপ সৃষ্টি করেনি বরং ভারতকে একটি বৈরী ভূমিকায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যার ফলে, দেশটিকে এখন থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কগুলো থেকে দূরে সরে আসতে হবে।
বিজেপি সরকারের নীতি পরিবর্তন, বিশেষ করে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং রাশিয়া থেকে সরে আসা ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি ব্যাপক আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদিও এসব পদক্ষেপ বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে, তবুও এগুলো ভারতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। যার ফলে ভারত আমেরিকা–নিয়ন্ত্রিত কৌশলগত কাঠামোর মধ্যে এক ‘অধীন অংশীদার’ হিসেবে পরিণত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর কেবল ভারতের কৌশলগত পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় থাকতে চাইছে না, বরং ওয়াশিংটন তার স্বার্থের সঙ্গে আরও নিঃশর্তভাবে দিল্লির সংহতি দাবি করছে। এই অবস্থায় ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—দেশটি কঠোরভাবে নিজের অর্জিত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করবে, নাকি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার যুগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আদেশে’ আরও বেশি একমত হবে।
ভারত সরকার ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ট্রাম্পের উদ্বেগ সমাধান ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আমদানি করা মোটরসাইকেলের ওপর মৌলিক শুল্কে গুরুত্বপূর্ণ ছাড়। বিশেষ করে, হার্লে–ডেভিডসনের মতো ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প বিশেষভাবে এসব ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিলাসবহুল গাড়ির আমদানি শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে, কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন শুল্ক (এআইডিসি) ৪০ শতাংশ আরোপের পর কার্যকর শুল্ক হবে ১১০ শতাংশ।
এ ছাড়া, সরকার ৩০টিরও বেশি আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে। যার মধ্যে আছে—বিলাসবহুল গাড়ি, সোলার প্যানেল এবং রাসায়নিক। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো—সম্ভবত আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় বাড়ানো, যা ভারতের ন্যায্য বাণিজ্যনীতি অনুসরণের ইঙ্গিত।
সাবেক অর্থসচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান এড়িয়ে চলার ইচ্ছার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেক পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর মাধ্যমে ভারত সরকারের এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। এই নীতি খোলামেলা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করার জন্য নেওয়া হয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। এ ছাড়া, ভারত বিভিন্ন আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও বেশি মার্কিন জ্বালানি পণ্য কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ভারত সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এর জন্য বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তবে, ভারত যখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ ভারতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ভারতের গড় শুল্ক হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বিশেষ করে কৃষি ও পরিবহন সরঞ্জাম খাতে। এই শুল্ক বৈষম্য ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হলেও নতুন বাণিজ্য নীতিগুলো এই গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকারের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক নীতিমালা ক্রমেই পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে, যা ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ এবং স্বনির্ভর অবস্থানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সমালোচকদের দাবি, প্রতিরক্ষা চুক্তি ও বাণিজ্য চুক্তির সন্ধানে সরকার জাতীয়তাবাদী মৌলিক স্বার্থের প্রতি আপস করেছে। উন্নতমানের যুদ্ধবিমান, যেমন এফ-৩৫ কেনার বিষয়ে চলমান আলোচনা এই পরিবর্তনেরই উদাহরণ। জোট নিরপেক্ষতা এবং দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ঐতিহ্য রক্ষার পরিবর্তে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। অনেকেই এই প্রবণতাকে পশ্চিমা ‘বিতর্কিত’ স্বার্থের প্রতি ভারতের একপ্রকার আত্মসমর্পণ বলে মনে করছেন।
ভারতের অবস্থানের এই পরিবর্তন এক ধরনের স্ববিরোধিতাও সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে যে, কোনো দেশ যেন একসঙ্গে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ ব্যবহার না করে। কারণ, দেশটির মতে, এস-৪০০–এর রাডারগুলো এফ-৩৫–এর স্টিলথ ফিচার (ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের সক্ষমতা) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি ভারতকে এক কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। এখানে দেশটিকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা কৌশলগত সম্পর্কের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধি পাওয়া হুমকির বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর বর্তমানে ৩০ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান আছে, যা অনুমোদিত ৪২ দশমিক ৫ স্কোয়াড্রনের তুলনায় অনেক কম। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হাল) এখনো চতুর্থ প্রজন্মের তেজস যুদ্ধবিমান উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত গতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ। ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্প—অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএসসিএ)—উৎপাদন শুরু হতে এখনো কমপক্ষে ১০–১২ বছর সময় লাগবে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় বিমানবাহিনী অন্তর্বর্তী সমাধান হিসেবে ২ থেকে ৩ স্কোয়াড্রন (৩৬ থেকে ৫৪টি বিমান) এফ–৩৫ কেনার ব্যাপারে আগ্রহী। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধ প্রতিরোধের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হলে অত্যাধুনিক সামরিক সক্ষমতা থাকা জরুরি।’
বর্তমানে বিশ্বের কার্যকর পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে— মার্কিন এফ-৩৫ লাইটনিং-২ এবং এফ/এ-২২ র্যাপ্টর, চীনের চেংদু জে-২০ এবং রাশিয়ার সুখোই-৫৭। চীন এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তের কাছে জে-২০০ মোতায়েন করেছে এবং শিগগিরই পাকিস্তানকে এটির একটি সংস্করণ সরবরাহ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বেইজিং সম্প্রতি দুটি নতুন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রোটোটাইপের পরীক্ষা চালিয়েছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যদি ভারত এফ–৩৫ কেনার চুক্তির দিকে যায়, তবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। যার মধ্যে ব্যয়, প্রযুক্তিগত প্রবেশাধিকার, দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাব। পাশাপাশি, ভারতের এএমসিএ প্রকল্পেও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর সরকার এর উন্নয়নের জন্য ১৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছিল। দেশে উৎপাদনে বিলম্ব হলে ভারতের বিদেশি প্রতিরক্ষা সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা আরও গভীর হবে, যা কৌশলগত স্বনির্ভরতা অর্জনের দীর্ঘদিনের লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকার ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করে ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে আসে, যার ফলে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো যেখানে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল, বিজেপি সরকার সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করেছে, বিশেষ করে চীনের মোকাবিলায়। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা খাতে বেসরকারিকরণের প্রতি বিজেপির জোরালো মনোযোগ সামরিক জাতীয়তাবাদকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা একদিকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং অন্যদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যকে উসকে দেয়। এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সেই আদর্শিক ধারাই বহন করে, যা একটি ‘সামরিক দিক থেকে বলীয়ান হিন্দু রাষ্ট্রের’ স্বপ্ন দেখে।
আরএসএস নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী হিসেবে উপস্থাপন করলেও, এর ইতিহাস স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদপন্থী। এর আদর্শিক পথপ্রদর্শক—সাভারকর, হেডগেওয়ার ও গোলওয়ালকর—কখনোই ব্রিটিশ শাসনের সক্রিয় বিরোধিতা করেননি। বরং, তাঁরা উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের চেয়ে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের লক্ষ্যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সাভারকর প্রাথমিক পর্যায়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলেও পরে ব্রিটিশ স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাম্প্রদায়িক বিষয়ে মনোযোগ দেন। হেডগেওয়ার স্বল্প সময়ের জন্য বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে পরে তিনি আরএসএসকে উপনিবেশবিরোধী কার্যকলাপ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। গোলওয়ালকর তো ব্রিটিশ বিরোধিতাকেই প্রতিক্রিয়াশীল বলে খারিজ করে দেন এবং যুক্তি দেন যে ‘হিন্দু ভারতের’ প্রকৃত শত্রু হলো মুসলিম, খ্রিষ্টান ও কমিউনিস্টরা—সাম্রাজ্যবাদ নয়।
আরএসএস-এর ঐতিহাসিক ভূমিকা উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নয়, বরং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের সহায়ক হয়ে ওঠার—যা বিভাজন ও শাসনের ঔপনিবেশিক কৌশলের সঙ্গে একেবারে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গত এক দশকে ভারত ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। ট্রাম্পের দাবির মুখে শুল্ক হ্রাসের ফলে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলে অনুমান করেছে গোল্ডম্যান স্যাকস, যা আরও অর্থনৈতিক চাপের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আউটলুকে প্রকাশিত নিবন্ধ
লেখক: ভারতীয় সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও লেখক আনন্দ তেলতুম্বদে
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
এটি স্পষ্টতই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে ‘শুল্করাজ’ বলে কটাক্ষ করে আসছেন। তাঁর মতে, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপ করে থাকে।
ভারতের এই উদ্যোগ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ।
এই নতি স্বীকারের সবচেয়ে প্রকট উদাহরণ প্রতিরক্ষা খাত। এই বিষয়টি ভারতের সামরিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকের কাছে, সরকারের এই মার্কিন তোষণ নীতি বিস্ময়কর মনে হতে পারে। বিশেষ করে, যখন বর্তমান বিজেপি সরকার নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে উপস্থাপন করে! তবে এর মূল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই নীতির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের আদর্শগত অবস্থানের যথেষ্ট সামঞ্জস্য আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারতনীতিকে ব্যাপকভাবে কয়েকটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী প্রাথমিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল সজাগ কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত। ভারতের জোট নিরপেক্ষ নীতি, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক মডেল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দিল্লিকে সন্দেহের চোখে দেখত, আবার কৌশলগত দিক থেকে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা, কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখত। সোভিয়েতের পতনের পর স্নায়ু যুদ্ধোত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে উদীয়মান গণতান্ত্রিক শক্তি এবং চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য শক্তির ভারসাম্য হিসেবে দেখতে শুরু করে। এ সময় ধীরে ধীরে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার বিস্তৃত কৌশলগত কাঠামোর অংশ হিসেবে একীভূত করতে চেয়েছে। ২০০৮ সালের পরমাণু চুক্তির মতো উদ্যোগ দুই দেশের সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ভারত–যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারত্বের যুগে (২০০০–১৬) চীনের উত্থান এবং বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিল্লি ক্রমশ ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান অংশীদার হয়ে ওঠে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। বুশ থেকে শুরু করে ওবামা প্রশাসনের অধীনে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর হয়ে ওঠে আনুষ্ঠানিক চুক্তি, কৌশলগত আলোচনা এবং প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে। মূলত এসবের মাধ্যমে এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে দুই দেশের এক অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের (২০১৭–২১) সময় যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি বিনিময় মূলক ও সংরক্ষণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। যদিও চীনের বিপরীতে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় ভারতকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তবে ট্রাম্পের নীতির অন্যতম দিক ছিল একতরফা ব্যবসায়িক স্বার্থ ব্যবস্থা ও শুল্ক চাপ। তিনি ভারতের উচ্চ শুল্কের প্রায়ই সমালোচনা করেছেন এবং শুল্ক সংস্কারে চাপ দিয়েছেন। দুই দেশের সম্পর্কের এই পর্যায় পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এক ব্যাপক পরিবর্তনকেই প্রতিফলিত করে। ট্রাম্পের আমলে কৌশলগত ও আদর্শগত ভিত্তির পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরাসরি জোরালো বাণিজ্য আলোচনার কৌশল বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থনৈতিক সমন্বয়ের পাশাপাশি, ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে দেখেছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকাকে নমনীয় করে রাখতে চেয়েছিল। তবে, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আক্রমণ করে বলছে, দিল্লি এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব কার্যকরভাবে সীমিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার পরিবর্তে, ভারত এখন আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার মোতাবেক তার নীতি সাজানোর প্রবণতা দেখাচ্ছে। এমনকি, ভারত এর ফলে দীর্ঘদিনের বন্ধু রাশিয়াকে হারানোর মতো অবস্থানে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকি জেনেও এই কাজ করছে। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এক সময়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা সহযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাশিয়া থেকে ভারতের ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়া এই পরিবর্তনেরই নিদর্শন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা গ্রহণের ফলে নিজের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি মার্কিন দাবির বিপরীতে কম ভূরাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার শর্তে দিল্লির অবস্থান আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের কৌশলগত অবস্থানের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বহু-মেরু এশিয়ায় স্বাধীনভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা, যেখানে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে জাতীয় স্বার্থ হাসিল করা হবে। তবে, শুল্ক সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ এবং রাশিয়া থেকে কার্যত দূরত্ব সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ভারতের স্বাধীন কৌশলগত হিসাব-নিকাশকে মার্কিন স্বার্থের প্রতি আনুগত্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল শুল্কের জন্যই চাপ সৃষ্টি করেনি বরং ভারতকে একটি বৈরী ভূমিকায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যার ফলে, দেশটিকে এখন থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কগুলো থেকে দূরে সরে আসতে হবে।
বিজেপি সরকারের নীতি পরিবর্তন, বিশেষ করে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং রাশিয়া থেকে সরে আসা ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি ব্যাপক আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদিও এসব পদক্ষেপ বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে, তবুও এগুলো ভারতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। যার ফলে ভারত আমেরিকা–নিয়ন্ত্রিত কৌশলগত কাঠামোর মধ্যে এক ‘অধীন অংশীদার’ হিসেবে পরিণত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর কেবল ভারতের কৌশলগত পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় থাকতে চাইছে না, বরং ওয়াশিংটন তার স্বার্থের সঙ্গে আরও নিঃশর্তভাবে দিল্লির সংহতি দাবি করছে। এই অবস্থায় ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—দেশটি কঠোরভাবে নিজের অর্জিত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করবে, নাকি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার যুগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আদেশে’ আরও বেশি একমত হবে।
ভারত সরকার ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ট্রাম্পের উদ্বেগ সমাধান ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আমদানি করা মোটরসাইকেলের ওপর মৌলিক শুল্কে গুরুত্বপূর্ণ ছাড়। বিশেষ করে, হার্লে–ডেভিডসনের মতো ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প বিশেষভাবে এসব ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিলাসবহুল গাড়ির আমদানি শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে, কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন শুল্ক (এআইডিসি) ৪০ শতাংশ আরোপের পর কার্যকর শুল্ক হবে ১১০ শতাংশ।
এ ছাড়া, সরকার ৩০টিরও বেশি আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে। যার মধ্যে আছে—বিলাসবহুল গাড়ি, সোলার প্যানেল এবং রাসায়নিক। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো—সম্ভবত আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় বাড়ানো, যা ভারতের ন্যায্য বাণিজ্যনীতি অনুসরণের ইঙ্গিত।
সাবেক অর্থসচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান এড়িয়ে চলার ইচ্ছার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেক পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর মাধ্যমে ভারত সরকারের এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। এই নীতি খোলামেলা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করার জন্য নেওয়া হয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। এ ছাড়া, ভারত বিভিন্ন আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও বেশি মার্কিন জ্বালানি পণ্য কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ভারত সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এর জন্য বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তবে, ভারত যখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ ভারতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ভারতের গড় শুল্ক হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বিশেষ করে কৃষি ও পরিবহন সরঞ্জাম খাতে। এই শুল্ক বৈষম্য ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হলেও নতুন বাণিজ্য নীতিগুলো এই গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকারের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক নীতিমালা ক্রমেই পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে, যা ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ এবং স্বনির্ভর অবস্থানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সমালোচকদের দাবি, প্রতিরক্ষা চুক্তি ও বাণিজ্য চুক্তির সন্ধানে সরকার জাতীয়তাবাদী মৌলিক স্বার্থের প্রতি আপস করেছে। উন্নতমানের যুদ্ধবিমান, যেমন এফ-৩৫ কেনার বিষয়ে চলমান আলোচনা এই পরিবর্তনেরই উদাহরণ। জোট নিরপেক্ষতা এবং দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ঐতিহ্য রক্ষার পরিবর্তে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। অনেকেই এই প্রবণতাকে পশ্চিমা ‘বিতর্কিত’ স্বার্থের প্রতি ভারতের একপ্রকার আত্মসমর্পণ বলে মনে করছেন।
ভারতের অবস্থানের এই পরিবর্তন এক ধরনের স্ববিরোধিতাও সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে যে, কোনো দেশ যেন একসঙ্গে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ ব্যবহার না করে। কারণ, দেশটির মতে, এস-৪০০–এর রাডারগুলো এফ-৩৫–এর স্টিলথ ফিচার (ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের সক্ষমতা) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি ভারতকে এক কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। এখানে দেশটিকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা কৌশলগত সম্পর্কের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধি পাওয়া হুমকির বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর বর্তমানে ৩০ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান আছে, যা অনুমোদিত ৪২ দশমিক ৫ স্কোয়াড্রনের তুলনায় অনেক কম। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হাল) এখনো চতুর্থ প্রজন্মের তেজস যুদ্ধবিমান উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত গতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ। ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্প—অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএসসিএ)—উৎপাদন শুরু হতে এখনো কমপক্ষে ১০–১২ বছর সময় লাগবে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় বিমানবাহিনী অন্তর্বর্তী সমাধান হিসেবে ২ থেকে ৩ স্কোয়াড্রন (৩৬ থেকে ৫৪টি বিমান) এফ–৩৫ কেনার ব্যাপারে আগ্রহী। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধ প্রতিরোধের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হলে অত্যাধুনিক সামরিক সক্ষমতা থাকা জরুরি।’
বর্তমানে বিশ্বের কার্যকর পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে— মার্কিন এফ-৩৫ লাইটনিং-২ এবং এফ/এ-২২ র্যাপ্টর, চীনের চেংদু জে-২০ এবং রাশিয়ার সুখোই-৫৭। চীন এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তের কাছে জে-২০০ মোতায়েন করেছে এবং শিগগিরই পাকিস্তানকে এটির একটি সংস্করণ সরবরাহ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বেইজিং সম্প্রতি দুটি নতুন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রোটোটাইপের পরীক্ষা চালিয়েছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যদি ভারত এফ–৩৫ কেনার চুক্তির দিকে যায়, তবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। যার মধ্যে ব্যয়, প্রযুক্তিগত প্রবেশাধিকার, দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাব। পাশাপাশি, ভারতের এএমসিএ প্রকল্পেও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর সরকার এর উন্নয়নের জন্য ১৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছিল। দেশে উৎপাদনে বিলম্ব হলে ভারতের বিদেশি প্রতিরক্ষা সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা আরও গভীর হবে, যা কৌশলগত স্বনির্ভরতা অর্জনের দীর্ঘদিনের লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকার ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করে ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে আসে, যার ফলে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো যেখানে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল, বিজেপি সরকার সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করেছে, বিশেষ করে চীনের মোকাবিলায়। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা খাতে বেসরকারিকরণের প্রতি বিজেপির জোরালো মনোযোগ সামরিক জাতীয়তাবাদকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা একদিকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং অন্যদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যকে উসকে দেয়। এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সেই আদর্শিক ধারাই বহন করে, যা একটি ‘সামরিক দিক থেকে বলীয়ান হিন্দু রাষ্ট্রের’ স্বপ্ন দেখে।
আরএসএস নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী হিসেবে উপস্থাপন করলেও, এর ইতিহাস স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদপন্থী। এর আদর্শিক পথপ্রদর্শক—সাভারকর, হেডগেওয়ার ও গোলওয়ালকর—কখনোই ব্রিটিশ শাসনের সক্রিয় বিরোধিতা করেননি। বরং, তাঁরা উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের চেয়ে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের লক্ষ্যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সাভারকর প্রাথমিক পর্যায়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলেও পরে ব্রিটিশ স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাম্প্রদায়িক বিষয়ে মনোযোগ দেন। হেডগেওয়ার স্বল্প সময়ের জন্য বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে পরে তিনি আরএসএসকে উপনিবেশবিরোধী কার্যকলাপ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। গোলওয়ালকর তো ব্রিটিশ বিরোধিতাকেই প্রতিক্রিয়াশীল বলে খারিজ করে দেন এবং যুক্তি দেন যে ‘হিন্দু ভারতের’ প্রকৃত শত্রু হলো মুসলিম, খ্রিষ্টান ও কমিউনিস্টরা—সাম্রাজ্যবাদ নয়।
আরএসএস-এর ঐতিহাসিক ভূমিকা উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নয়, বরং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের সহায়ক হয়ে ওঠার—যা বিভাজন ও শাসনের ঔপনিবেশিক কৌশলের সঙ্গে একেবারে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গত এক দশকে ভারত ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। ট্রাম্পের দাবির মুখে শুল্ক হ্রাসের ফলে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলে অনুমান করেছে গোল্ডম্যান স্যাকস, যা আরও অর্থনৈতিক চাপের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আউটলুকে প্রকাশিত নিবন্ধ
লেখক: ভারতীয় সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও লেখক আনন্দ তেলতুম্বদে
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
১২ মার্চ ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
১২ মার্চ ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
১২ মার্চ ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১০ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
১২ মার্চ ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৩ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৬ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৬ দিন আগে