ফয়সাল হাসান

গত গ্রীষ্মে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সিরিয়ার ফার্স্ট লেডির একটি ছবি। সে সময় সিরীয় সামরিক বাহিনী ব্যস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী দমনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যায়, সেনা সুরক্ষা বলয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন আসমা আসাদ ও তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আসাদের প্রশান্তির পেছনের গল্পটা বিভ্রান্তিকর। দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের ১০ বছর পর এসেও ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিরিয়ার শাসক গোষ্ঠী। এ জন্য সিরীয়দের দিতে হয়েছে ভয়াবহ মূল্য।
গণতন্ত্র, মুক্তি ও সমৃদ্ধির আশায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরের শেষ ভাগে তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূচনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলায় সিরিয়ায় আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেছিলেন দেশটির নেতারা। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সিরিয়ায়ও ছোট পরিসরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ গিয়ে তা বড় আকার ধারণ করে। এই দিনকেই সিরিয়ায় গণ-আন্দোলনের শুরুর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর পর থেকে দেশটির সরকারি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে হাজার হাজার সিরীয়। নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে। সেখানকার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। সিরিয়ার মাটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করে আসছে ইরান, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়া ও ইরান বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বিভিন্ন মিত্র দেশ। আরব বিশ্বজুড়ে এক দশক আগের সব আশা ও স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেলেও সিরিয়ার চেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কোথাও ঘটেনি।
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন বাশারের স্ত্রী আসমা আসাদ। বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের ওপর তাঁর আধিপত্যের যাত্রা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও।
লন্ডন থেকে সিরিয়ার প্রাসাদে
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে স্নাতক শেষ করার পর জেপি মরগ্যান ব্যাংকে কাজ শুরু করেন আসমা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাশার আল-আসাদের। ২০০০ সালে দুজনের বিয়ে হয়। সেই বছরই ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। রাতারাতি সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি বনে যান আসমা।
আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ এখন আর সিরিয়া পর্যবেক্ষকদের জন্য গালগল্পের বিষয় নয়। গত বছর আসমাকে সিরিয়ার ‘সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন সরকার। তিনি একদিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর স্বামীর উত্তরাধিকারী হতে পারেন বলেও মনে করেন অনেকে। লন্ডনে বেড়ে ওঠা আসমা আসাদ নিজের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেক দূর। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বৈরশাসকের স্ত্রী হিসেবে এটি কেবল তাঁর যাত্রার শুরু।
১৯৭৫ সালে পশ্চিম লন্ডনের ছোট শহর অ্যাকটনে জন্ম হয় আসমা আখ্রাসের। বাশার আল–আসাদের সঙ্গে বিয়ের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। সিরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকের মতো তাঁর মা–বাবাও সুন্নি মুসলিম। একটি ছোট প্রান্তিক সম্প্রদায় অভ্যুত্থান ঘটানোর আগে ১৯৬০–এর দশক পর্যন্ত যারা ছিল সিরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দল।
উন্নত জীবনের আশায় ১৯৭০–এর দশকে লন্ডনে আসেন আসমার মা–বাবা। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আসমার পরিবারকে সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। ইংল্যান্ডের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসমা পরিচিত ছিলেন এমা নামে।
লন্ডনের সম্ভ্রান্ত অভিজাতদের মতোই জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন আসমা। ব্রিটেনের প্রাচীনতম বেসরকারি গার্লস স্কুলে ভর্তি হন, পড়েছেন কুইন্স কলেজেও। এর পর কিংস কলেজ লন্ডনে কম্পিউটার বিজ্ঞানে একটি ডিগ্রি নেন, যেখানে আসমার বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করেন চতুর ও পরিশ্রমী হিসেবে।
সম্পর্ক সূত্রে ক্ষমতার স্বাদ
আসমার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না বলেও জানান তাঁর বন্ধুরা। মা–বাবার সঙ্গে দামেস্কে বেড়াতে গেলে তিনি বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হোটেলে। আসমার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ছিল তাঁর মা সাহারের। আসমার চাচা বাশারের বাবা হাফেজ আসাদকে ১৯৭০ সালে ক্ষমতা দখল করতে সহায়তা করেছিলেন। পরে লন্ডনে সিরিয়ার দূতাবাসে চাকরি পেতে এই সম্পর্ক ব্যবহার করেছিলেন সাহার।
‘আসাদ অর উই বার্ন দ্য কান্ট্রি’ বইয়ের লেখক স্যাম দাঘেরের মতে, আসমা ও বাশারের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন সাহার। নব্বইয়ের দশকে বাশার লন্ডনে মেডিকেল ছাত্র থাকাকালে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল দুজনের।
ওয়াফিক সাঈদ নামে সিরিয়ার এক ধনী প্রবাসী জানান, বাশারের বড় ভাই বাসিল সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল বেপরোয়া। এর বিপরীতে বাশার ছিলেন ‘কঠোর পরিশ্রমী ও সময়নিষ্ঠ।’
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাসিলের মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই আসাদ রাজবংশের ভাগ্য বাশারের কাঁধে পড়ে। আসমা দামেস্কে যাওয়ার আগেই ২০০০ সালের জুনে মৃত্যু হয় বাশারের বাবা হাফিজের। অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য তাঁর সমর্থন সিরিয়াকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পুনরায় সম্পর্কোন্নয়নের একটি সুযোগ ছিল বাশারের সামনে।
ক্ষমতা গ্রহণর পর উদ্বোধনী ভাষণে বাশার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রকৃত বহু-দলীয় নির্বাচনের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন দেশের অন্যতম বড় কারাগারও। এসবের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আসমার।
আশা ছিল অন্য রকম
নতুন সিরীয় নেতাদের জন্য আসমা আসাদকে মনে করা হচ্ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন ফার্স্ট লেডি। বাশার-আসমা দম্পতির বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এই দুজনের সংমিশ্রণ সিরিয়াকে স্বর্গে পরিণত করবে।’
তবে আসমাকে নিয়ে বিবাদ ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বাশারের মা আনিসা চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে নিজ জাতির মধ্যেই বিয়ে করবে, যাতে তাঁরা আরবের সৌদদের মতো দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ তৈরি করতে পারে।
কিন্তু বিয়ে ঠেকানো যায়নি। বিয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বাশারের মা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি তাঁদের বিয়ের খবর নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে কোনো সংবাদও প্রচার হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি আনুষ্ঠানিক ছবিও। আসমাকে বারবার বলা হয়েছিল, তাঁর কাজ ওয়ারিশ তৈরি করা এবং খবর থেকে দূরে থাকা।
আইমান আবদেল নূর নামে বাশারের এক সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আসমার গৃহজীবন ছিল দুর্বিষহ। তারা (আসাদের পরিবার) তাঁকে ঘৃণা করত। বছরের পর বছর তাঁকে বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। আসমা তখন আরবি ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন না।’
ক্ষমতাসীন উচ্চবিত্ত শ্রেণিও বন্ধুসুলভ ছিলেন না। বাশারের সংস্কারগুলোও নানা বাধার মুখে পড়ে, বিশেষত তাঁর বাবার সাবেক সহযোগীদের কাছ থেকে।
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাশারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল যুক্তিহীন, যা তিনি কেবল নিজের পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে ব্যবহার করেছিলেন।
ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আপনি যা শুনতে চান, বাশার আপনাকে ঠিক তাই বলবে এবং এর পর কিছুই করবে না।’ শিক্ষাবিদদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। জনসমাগমের ক্ষেত্রে এতটাই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যে, হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও নিতে হয়েছে সরকারি অনুমতি।
আধিপত্যের যাত্রা শুরু
২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন লেবাননের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ রফিক হারিরি। এরপরই সিরিয়া তার ছোট, অকার্যকর প্রতিবেশীকে কোণঠাসা করে ফেলে। বাশার আল–আসাদই হারিরিকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং লেবাননের বিশাল বিক্ষোভের মুখে একসময় পিছু হটেন আসাদ। সিরিয়ার কট্টরপন্থীদের দাবি উপেক্ষা করে প্রায় ৩০ বছর ধরে দখলদারির পর লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় সিরিয়া।
বাশার আল-আসাদের কাছে তাঁর দেশি মিত্রদের প্রয়োজনীয়তাও কমে এসেছিল। কারণ, তাঁর ব্রিটিশ স্ত্রী সম্ভবত পশ্চিমা সরকারের সমর্থন পেতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আসমাকে সিরিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে মনোনীত করার প্রতিশ্রুতি দেন আসাদ। এর মধ্য দিয়ে অবশেষে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজের আসন অর্জন করে নেন আসমা।
হারিরি হত্যার দু মাস পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আসমা। ওই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবিতে তাঁকে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও।
এটি ছিল এই দম্পতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ, এরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাশারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকায় নামেন আসমা। বাশারের সাবেক উপদেষ্টা আবদেল নূর বলেন, ‘তিনি (আসাদ) যেসব দেশের সঙ্গে মিশতে পারতেন না, সেসব দেশে তাঁর মুখপাত্র হয়ে কাজ করতেন আসমা।’
এই জুটির জন্য ইউরোপে একটি সফর আয়োজন করা প্রবাসী এক সিরীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আমি মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম। আপনি আসমার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তেই তাঁর প্রেমে পড়বেন। আর আসাদ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকের চেয়ে আলাদা। তিনি দেখতে আধুনিক ও পরিশীলিত। এটিই তাঁকে এত বিপজ্জনক করে তুলেছে।’
আসমার পরবর্তী প্রকল্প ছিল সিরিয়া নিয়েই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সিরিয়াকে তিনি চাঙা করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাংকিং খাত উন্মুক্ত করে দিতে আসাদকে পরামর্শ দেন আসমা। সিরিয়ার এক অর্থনীতিবিদের মতে, ‘আসমা দামেস্ককে করমুক্ত একটি আঞ্চলিক দুবাইতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।’
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অর্থনৈতিক এই সংস্কার হুমকির মধ্যে ফেলে সিরিয়ার বেশির ভাগ ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বার্থকে। সিরিয়ার প্রচলিত ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন আনতে আসাদ পরিবারের সদস্য রামি মাখলুফের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আসমার। কারণ অনুমান করা হয়, সে সময় মাখলুফের সংস্থাগুলো সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৭ সালে নিজস্ব হোল্ডিং সংস্থা তৈরি করে মাখলুফের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন আসমা। তবে দেশের বেশির ভাগ বড় ব্যবসায়ী মাখলুফের সঙ্গে থেকে যাওয়ায় ব্যর্থ হয় আসমা আসাদের প্রচেষ্টা। তাই সিরিয়ার অর্থনীতির জন্য তাঁর পরিকল্পনা থেকে যায় অপেক্ষমাণ।
আসমা দ্রুতই তাঁর প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি নতুন উপায় বের করেন। তিনি তাঁর বিয়ের প্রথম দিকে বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। এই প্রকল্পগুলো তিনি ‘দ্য সিরিয়া ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি সংস্থার মধ্যে একত্রীকরণের উদ্যোগ নেন। বিদেশে বসবাসকারী সিরীয় নাগরিক, জাতিসংঘে দেশটির সাবেক কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক দলের কৌশলবিদ, বোস্টনভিত্তিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শদাতা, এমনকি জার্মান এক কূটনীতিকের মেয়েকেও ওই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামেস্কে থাকা পশ্চিমা কূটনীতিকেরা আনন্দের সঙ্গে আসমার ট্রাস্টকে সমর্থন করেছিলেন। লক্ষ্য অর্জনে ওই ট্রাস্টে অর্থায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও কাতারের মনোযোগ আকর্ষণেও সক্ষম হন আসমা।
নিজের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জনসংযোগ সংস্থা নিয়োগ করেন আসমা। সংস্থাগুলো তাঁর ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রচার শুরু করে। ফলে দামেস্ক এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট, স্টিং ও ড্যামন অ্যালবার্নের মতো তারকারা।
এখানেই শেষ নয়। আসমা জায়গা করে নেন বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালের মার্চে মার্কিন জনসংযোগ সংস্থা ব্রাউন লয়েড জেমসের উদ্যোগে ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে আসেন আসমা। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘মরুভূমির গোলাপ (আ রোজ ইন দ্য ডেজার্ট) ’।
সিরিয়ার অনেক সরকারি কর্মচারী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন—আসমার ট্রাস্ট কেবল তাঁর নিজস্ব প্রচারের একটি বাহন কিনা। যদিও তাঁর সাবেক এক সহযোগী বলেছিলেন, আসমা সত্যিই সিরিয়ার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর ওপর অন্যদের আস্থার অভাব ছিল।
পরিবারে ক্ষমতার বিস্তৃতি
আসমার উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা উঠে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তাঁর বাবা ফওয়াজ আখ্রাস। আসমা-বাশারের বিয়ের পরপরই আখ্রাস লন্ডনে ব্রিটিশ-সিরিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিরিয়ার রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি সামাজিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আসমার সংগঠনের সমন্বয় করেছিলেন, যা ধনী সিরীয়দের আকৃষ্ট করে।
ক্ষমতার নৈকট্য পাওয়ার বিষয়ে আখ্রাস ছিলেন স্পষ্টভাষী। বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি প্রায়ই ‘প্রেসিডেন্টের শ্বশুর হিসেবে...’ কথাটি উচ্চারণ করতেন। এমনকি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বাশার আল-আসাদের কাছে কোনো বার্তা পাঠানোর জন্য আসমার বাবার শরণাপন্ন হতেন বলে জানান সরকারি অনেক কর্মকর্তা।
আসমা আসাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নতি হয় সিরিয়ার ভাবমূর্তিরও। মার্কিন কর্মকর্তারা ফের দামেস্কে যেতে শুরু করেন। বিশেষত ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এমন সফর বাড়তে থাকে।

আরব বসন্ত এবং...
আসমার পরোক্ষ এ ক্ষমতা আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২০১১ সালের প্রথম দুই মাসে অশান্ত হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। কয়েক দশকের স্থবিরতা ও নিপীড়নের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া, আলজেরিয়া থেকে বাহরাইন, জর্ডান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। কায়রোতে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারাক। প্রতিবাদের জোয়ার হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।
বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছিল সিরিয়াতেও, কিন্তু ভয়ে রাস্তায় নেমে আসা থেকে বিরত ছিল বেশির ভাগ মানুষ। এর পর ফেব্রুয়ারির এক রাতে দামেস্কের দক্ষিণের ডেরা নামক শহরে, একদল স্কুলছাত্র একটি প্রাচীরে গ্রাফিতি তৈরি করে যেখানে লেখা ছিল ‘এবার আপনাদের পালা’।
স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বাশারের এক দূর সম্পর্কের ভাই। তাঁর লোকেরা গ্রাফিতি তৈরি করা স্কুলছাত্রদের আটক করে নির্যাতন শুরু করে। এ ঘটনার পর নাগরিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার দাবিতে ডেরার মসজিদের বাইরে সমবেত হয় সাধারণ জনগণ। কিন্তু সেখানে নির্বিচারে গুলি চালায় সেনারা।
এ ঘটনায় আসমা ও বাশার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়টি প্রথমে পরিষ্কার ছিল না। আসাদের একজন জেনারেল তাঁকে স্থানীয় নিরাপত্তা প্রধানকে কারাবন্দী করার এবং ডেরায় রক্তপাতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সিরিয়ার বড় শহরগুলো তখনো শান্ত থাকায় জনসাধারণের সংকট ও পরিবর্তনের নতুন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল।
কিন্তু একই বছরের ৩০ মার্চ সংসদে দেওয়া এক ভাষণে বাশার ঘোষণা দেন, ‘সিরিয়া একটি বড় ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি।’ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনার একটি ফুটেজকে তিনি ‘জাল তথ্য’ বলে আখ্যা দেন এবং সংস্কারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
বাশারের এ ভাষণের পর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় প্রতিবাদ ও সহিংসতার একটি ক্রমবর্ধমান চক্র। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ওপরও চড়াও হয়ে ওঠে সরকারি বাহিনী। এ সময় দামেস্কে থাকা সাবেক এক ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, বাশার প্রায়ই বলতেন, ‘আমার বাবাই ঠিক ছিলেন। হামায় হাজার হাজার মৃত্যু আমাদের তিন দশকের স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।’ এদিকে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছিল আসমার লক্ষ্যগুলোও।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের ছোট ভাই মাহেরের নেতৃত্বে পশ্চিম সিরিয়ার হোমসে সেনাদের আর্টিলারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেনারা বিদ্রোহী দমন শুরুর পর তখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ। আসমা তখন কী করছিলেন? তিনি কি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন, নাকি তিনি তাঁর স্বামীর পদক্ষেপকে সমর্থন করছিলেন—এমন প্রশ্ন তখন ছিল সবার মধ্যেই।
আসমা আসাদ সে সময় তাঁর এক সহযোগীকে বলেছিলেন, ‘এটি সব সময়ই মিথ্যা ছিল (সিরিয়া সংস্কারের প্রতিশ্রুতি)। আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
সূত্র অনুসারে, আসমা লন্ডনেও ফিরে যেতে পারতেন। উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর সহায়তায় নিরাপদে সিরিয়া ছাড়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। ব্রিটিশ সরকার বারবার বলে আসছিল—একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আসমাকে তারা দেশে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। তবে লন্ডনের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অ্যাকটনে আসমার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানায় প্রতিবাদকারীরা। এমনকি সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে আসমা আসাদের নাম সরিয়ে দেয় কুইন্স কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন বাশার ও আসমা। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনারা যখন হোমস শহরে ট্যাংক হামলা চালায়, আসমা তখন বাশারকে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে এই সমস্যা আমরা একসঙ্গে কাটিয়ে উঠব...আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তবে তাঁদের যে সমস্যাগুলো ‘কাটিয়ে ওঠার’ দরকার ছিল, তা সিরিয়ার নাকি পারিবারিক, সেটি স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ ও ক্ষমতা
বিদ্রোহ শুরুর পর আসমা তাঁর প্রথম সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল—‘বাশার আল-আসাদ পুরো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, সিরীয়দের একটি দলের প্রধান নন এবং এই ভূমিকায় ফার্স্ট লেডি তাঁকে সমর্থন করেন।’ এই বিবৃতির মধ্য দিয়ে আসাদের পাশে দাঁড়ান আসমা।
বাশারের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে আসমা তাঁর বাবার সহায়তায় জনসম্মুখে ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা করেন। ২০১২ সালে বোমা বিস্ফোরণে স্বামী নিহত হওয়ার পর দুবাই পালিয়ে যান বাশারের বোন বুশরা। বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও এটি সরকারি মদদে হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করতেন অনেকে। কারণ, আসাদ পরিবারের মধ্যে আসমাবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন বুশরা ও তাঁর স্বামী।
পরের বছরগুলোতে বাশারের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়। হোমস শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী দমনে সফল হয়ে ওঠেন তিনি। সরকারবিরোধী বাহিনী দামেস্কের কিছু শহর নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি তারা।
যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও নির্মম হয়ে ওঠেন বাশার। সহিংসতার মাত্রা ধীর গতিতে বেড়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করে পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানান, বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে প্রথমে কামান এবং এর পর বিমান ও ব্যারেল বোমা হামলা চালানো শুরু করে সরকারি বাহিনী।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট নতুন এক ফুটেজে দেখা যায়, দামেস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এক বিধ্বস্ত শহরের ছবি, যেখানে সরকারি বাহিনীর হামলায় মৃত্যু হয় শত শত বেসামরিক মানুষের। পরে এক তদন্তে জাতিসংঘ নিশ্চিত করে—সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সেরিন’ নামে বিষাক্ত এক স্নায়ু গ্যাস। ১৯৮৮ সালের পর যা ছিল সর্বকালের ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র হামলা। পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই হামলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এ নিয়ে অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিল আসমা-বাশার দম্পতি।
এর পরের বছরগুলোতে সিরিয়ায় ধ্বংসের মাত্রা গণনা করা কঠিন। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে বিস্তৃত একটি তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এর সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাশার বাহিনীকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছিল; কিন্তু দুর্বল করেছিল তাঁর বিরোধী পক্ষের সমর্থনও।
বাশার সিরিয়ার বড় শহরগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুনরায় আলেপ্পো দখল করলেও তিনি বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক শহর। এই সময়ের মধ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় প্রায় পাঁচ লাখে, শরণার্থী হন সিরিয়ার ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
সিরিয়ার নতুন বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল নতুন এক আসমার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর পর আসমা তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারান। যদিও তাঁর বড় পরীক্ষা ছিল নিজের ব্যক্তিগত পরিবর্তন।
২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে অসুস্থতাকে জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তিনি। চিকিৎসার জন্য যে তিনি সিরিয়াতেই রয়েছেন, সেটিও দেশের সাধারণ মানুষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসমা। তাঁর সংগ্রামের বিবরণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশদভাবে প্রচার করা হয়।
চিকিৎসা চলাকালে যখন চুল পড়া শুরু হলো, তখন মাথায় স্কার্ফ পরা ছবিতে দুর্বলতা এবং শক্তি উভয়ই তুলে ধরেছিলেন আসমা, যা ছিল তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহী দমনের বিপরীতে এক অপ্রতিরোধ্য রূপক। এমনকি তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই সরকার সমর্থক মিডিয়া সিরিয়ার দুঃসময়ে আসমার বিভিন্ন ভূমিকার কথা প্রচার করা শুরু করে।
আসমা সচেতনভাবে চেষ্টা করতে থাকেন নিজের ব্রিটিশ পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার। তিনি আরবি ভাষা নিয়ে এত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন যে, সিরীয়রাও আর তাঁর কোনো ইংরেজি উচ্চারণ শনাক্ত করতে পারেনি।
কেবলমাত্র রাশিয়া এবং স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম ছাড়া পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর সাক্ষাৎকারের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন আসমা। পশ্চিমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
তবে ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর তাঁর দাতব্য সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্টের আয় কমে আসে। অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরীয়দের জন্য বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা। আর সেই অর্থের বেশির ভাগই আসা শুরু করে আসমা আসাদের হাত ধরে। সিরিয়া ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে ধনসম্পদের চেয়েও অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন আসমা। পৃষ্ঠপোষকদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল সিরিয়ার যুদ্ধবাজরাও।
যুদ্ধই যখন পুঁজি
যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাশার তাঁর স্ত্রীর আর্থিক সাফল্যে সন্তুষ্ট এবং তাঁর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন। এক দশক দীর্ঘ যুদ্ধের পর বাশার ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং অর্থনীতি নিয়ে তিনি কখনো চিন্তিত ছিলেন না। ইউরোপে আসাদের এক লবিস্টের মতে, আসমা ছিলেন তাঁর ‘প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা’।
ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৯ সালে বাশারকে চাপ দিতে শুরু করে রাশিয়া এবং আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সিরিয়া সরকারের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্য হয়ে ওঠেন দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবের এবং বাশারের নিকটাত্মীয় রামি মাখলুফ।
তবে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক হারান মাখলুফ। সেই সুযোগে মাখলুফের দাতব্য সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে নেয় আসমার অধীনস্থ সিরিয়া ট্রাস্ট। সেই সঙ্গে মাখলুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। সিরিয়ায় অর্থনৈতিক এ দোলাচলের মধ্যে আসমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন মাখলুফ।
জবাবে আসমাকে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন মাখলুফ। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের ‘শীর্ষে থাকা একটি দল’ ষড়যন্ত্র করছে। একই সঙ্গে আরব সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন রুশ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়—সিরিয়ার আর্থিক সংকটের মধ্যেই বাশার তাঁর স্ত্রীর জন্য ডেভিড হকনির একটি পেইন্টিং কিনতে ৩ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এ ঘটনায় খুব বেশি উপকার হয়নি মাখলুফের। কারণ, গল্পটি মিথ্যা ছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে এ ঘটনার পর আংশিক গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। গুঞ্জন ছিল—মাখলুফকে জীবিত রাখা হয়েছিল কারণ, তাঁর কাছে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিদেশি সম্পদের পাসওয়ার্ড এবং দলিল ছিল।

লেডি অব জেসমিন
মাখলুফকে কোণঠাসা করার মধ্য দিয়ে অব্যাহত ছিল আসমার আধিপত্য এবং অধিগ্রহণের ক্ষমতা। আসমা আসাদকে ‘লেডি অব জেসমিন’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রচারও বৃদ্ধি পায় সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। দেশটির মন্ত্রীরা তাঁদের অফিসে আসাদের পাশাপাশি ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করেন ফার্স্ট লেডি আসমার ছবিও।
মাখলুফকে দমন, বাশারের বোনের দেশত্যাগ এবং তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আসমার আর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তাঁর নিকটতম উপদেষ্টাদের অনেকেই অধিষ্ঠিত হন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শীর্ষ পদে।
দামেস্ক ও ইউরোপে ভ্রমণকারী এক ব্যবসায়ীর মতে, ‘আসমা আসাদ প্রাসাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তিনি যাকে খুশি তাঁকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন।’
শেষ কথা
সিরীয়দের অনুমান, দেশের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে ওঠার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে আসমার। বাশারের অবস্থান যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আসমা কি দেশের সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন? গুজব রয়েছে—আসাদ পরিবারের একজন সদস্য সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন।
সিরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, ‘বাশার ও আসমা দুজনেই এ নিয়ে ভাবছেন। আসমা প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং উভয়েই এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বিপ্লবী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দেশটির কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই আসমার। এ ছাড়া বর্তমানে তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেন বাশারের ছোট ভাই মাহের, যিনি এখনো সিরীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ আর্মর্ড ডিভিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
দুবাইয়ের এক সিরীয় ব্যবসায়ীর মতে, ‘সামরিক বাহিনী এবং কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদেরা আসমার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’
আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হলেও আসমা এখন বেশ অরক্ষিতও। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষী কথাও আসমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও বহু আগেই আসমার অনেক বন্ধু তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, তবে আসমার সুরক্ষার বিষয়ে তাঁরা এখনো উদ্বিগ্ন। বৃহত্তম পুরস্কারের লক্ষ্যে পশ্চিম লন্ডনের মেয়েটি শেষ পর্যন্ত পলাতকও হতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আসমা আসাদ হয়তো অনেক আগেই বুঝে গেছেন—যেখানে পৌঁছেছেন তিনি, সেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ নেই।

গত গ্রীষ্মে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সিরিয়ার ফার্স্ট লেডির একটি ছবি। সে সময় সিরীয় সামরিক বাহিনী ব্যস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী দমনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যায়, সেনা সুরক্ষা বলয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন আসমা আসাদ ও তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আসাদের প্রশান্তির পেছনের গল্পটা বিভ্রান্তিকর। দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের ১০ বছর পর এসেও ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিরিয়ার শাসক গোষ্ঠী। এ জন্য সিরীয়দের দিতে হয়েছে ভয়াবহ মূল্য।
গণতন্ত্র, মুক্তি ও সমৃদ্ধির আশায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরের শেষ ভাগে তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূচনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলায় সিরিয়ায় আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেছিলেন দেশটির নেতারা। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সিরিয়ায়ও ছোট পরিসরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ গিয়ে তা বড় আকার ধারণ করে। এই দিনকেই সিরিয়ায় গণ-আন্দোলনের শুরুর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর পর থেকে দেশটির সরকারি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে হাজার হাজার সিরীয়। নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে। সেখানকার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। সিরিয়ার মাটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করে আসছে ইরান, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়া ও ইরান বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বিভিন্ন মিত্র দেশ। আরব বিশ্বজুড়ে এক দশক আগের সব আশা ও স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেলেও সিরিয়ার চেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কোথাও ঘটেনি।
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন বাশারের স্ত্রী আসমা আসাদ। বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের ওপর তাঁর আধিপত্যের যাত্রা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও।
লন্ডন থেকে সিরিয়ার প্রাসাদে
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে স্নাতক শেষ করার পর জেপি মরগ্যান ব্যাংকে কাজ শুরু করেন আসমা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাশার আল-আসাদের। ২০০০ সালে দুজনের বিয়ে হয়। সেই বছরই ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। রাতারাতি সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি বনে যান আসমা।
আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ এখন আর সিরিয়া পর্যবেক্ষকদের জন্য গালগল্পের বিষয় নয়। গত বছর আসমাকে সিরিয়ার ‘সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন সরকার। তিনি একদিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর স্বামীর উত্তরাধিকারী হতে পারেন বলেও মনে করেন অনেকে। লন্ডনে বেড়ে ওঠা আসমা আসাদ নিজের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেক দূর। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বৈরশাসকের স্ত্রী হিসেবে এটি কেবল তাঁর যাত্রার শুরু।
১৯৭৫ সালে পশ্চিম লন্ডনের ছোট শহর অ্যাকটনে জন্ম হয় আসমা আখ্রাসের। বাশার আল–আসাদের সঙ্গে বিয়ের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। সিরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকের মতো তাঁর মা–বাবাও সুন্নি মুসলিম। একটি ছোট প্রান্তিক সম্প্রদায় অভ্যুত্থান ঘটানোর আগে ১৯৬০–এর দশক পর্যন্ত যারা ছিল সিরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দল।
উন্নত জীবনের আশায় ১৯৭০–এর দশকে লন্ডনে আসেন আসমার মা–বাবা। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আসমার পরিবারকে সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। ইংল্যান্ডের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসমা পরিচিত ছিলেন এমা নামে।
লন্ডনের সম্ভ্রান্ত অভিজাতদের মতোই জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন আসমা। ব্রিটেনের প্রাচীনতম বেসরকারি গার্লস স্কুলে ভর্তি হন, পড়েছেন কুইন্স কলেজেও। এর পর কিংস কলেজ লন্ডনে কম্পিউটার বিজ্ঞানে একটি ডিগ্রি নেন, যেখানে আসমার বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করেন চতুর ও পরিশ্রমী হিসেবে।
সম্পর্ক সূত্রে ক্ষমতার স্বাদ
আসমার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না বলেও জানান তাঁর বন্ধুরা। মা–বাবার সঙ্গে দামেস্কে বেড়াতে গেলে তিনি বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হোটেলে। আসমার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ছিল তাঁর মা সাহারের। আসমার চাচা বাশারের বাবা হাফেজ আসাদকে ১৯৭০ সালে ক্ষমতা দখল করতে সহায়তা করেছিলেন। পরে লন্ডনে সিরিয়ার দূতাবাসে চাকরি পেতে এই সম্পর্ক ব্যবহার করেছিলেন সাহার।
‘আসাদ অর উই বার্ন দ্য কান্ট্রি’ বইয়ের লেখক স্যাম দাঘেরের মতে, আসমা ও বাশারের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন সাহার। নব্বইয়ের দশকে বাশার লন্ডনে মেডিকেল ছাত্র থাকাকালে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল দুজনের।
ওয়াফিক সাঈদ নামে সিরিয়ার এক ধনী প্রবাসী জানান, বাশারের বড় ভাই বাসিল সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল বেপরোয়া। এর বিপরীতে বাশার ছিলেন ‘কঠোর পরিশ্রমী ও সময়নিষ্ঠ।’
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাসিলের মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই আসাদ রাজবংশের ভাগ্য বাশারের কাঁধে পড়ে। আসমা দামেস্কে যাওয়ার আগেই ২০০০ সালের জুনে মৃত্যু হয় বাশারের বাবা হাফিজের। অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য তাঁর সমর্থন সিরিয়াকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পুনরায় সম্পর্কোন্নয়নের একটি সুযোগ ছিল বাশারের সামনে।
ক্ষমতা গ্রহণর পর উদ্বোধনী ভাষণে বাশার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রকৃত বহু-দলীয় নির্বাচনের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন দেশের অন্যতম বড় কারাগারও। এসবের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আসমার।
আশা ছিল অন্য রকম
নতুন সিরীয় নেতাদের জন্য আসমা আসাদকে মনে করা হচ্ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন ফার্স্ট লেডি। বাশার-আসমা দম্পতির বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এই দুজনের সংমিশ্রণ সিরিয়াকে স্বর্গে পরিণত করবে।’
তবে আসমাকে নিয়ে বিবাদ ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বাশারের মা আনিসা চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে নিজ জাতির মধ্যেই বিয়ে করবে, যাতে তাঁরা আরবের সৌদদের মতো দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ তৈরি করতে পারে।
কিন্তু বিয়ে ঠেকানো যায়নি। বিয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বাশারের মা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি তাঁদের বিয়ের খবর নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে কোনো সংবাদও প্রচার হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি আনুষ্ঠানিক ছবিও। আসমাকে বারবার বলা হয়েছিল, তাঁর কাজ ওয়ারিশ তৈরি করা এবং খবর থেকে দূরে থাকা।
আইমান আবদেল নূর নামে বাশারের এক সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আসমার গৃহজীবন ছিল দুর্বিষহ। তারা (আসাদের পরিবার) তাঁকে ঘৃণা করত। বছরের পর বছর তাঁকে বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। আসমা তখন আরবি ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন না।’
ক্ষমতাসীন উচ্চবিত্ত শ্রেণিও বন্ধুসুলভ ছিলেন না। বাশারের সংস্কারগুলোও নানা বাধার মুখে পড়ে, বিশেষত তাঁর বাবার সাবেক সহযোগীদের কাছ থেকে।
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাশারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল যুক্তিহীন, যা তিনি কেবল নিজের পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে ব্যবহার করেছিলেন।
ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আপনি যা শুনতে চান, বাশার আপনাকে ঠিক তাই বলবে এবং এর পর কিছুই করবে না।’ শিক্ষাবিদদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। জনসমাগমের ক্ষেত্রে এতটাই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যে, হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও নিতে হয়েছে সরকারি অনুমতি।
আধিপত্যের যাত্রা শুরু
২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন লেবাননের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ রফিক হারিরি। এরপরই সিরিয়া তার ছোট, অকার্যকর প্রতিবেশীকে কোণঠাসা করে ফেলে। বাশার আল–আসাদই হারিরিকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং লেবাননের বিশাল বিক্ষোভের মুখে একসময় পিছু হটেন আসাদ। সিরিয়ার কট্টরপন্থীদের দাবি উপেক্ষা করে প্রায় ৩০ বছর ধরে দখলদারির পর লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় সিরিয়া।
বাশার আল-আসাদের কাছে তাঁর দেশি মিত্রদের প্রয়োজনীয়তাও কমে এসেছিল। কারণ, তাঁর ব্রিটিশ স্ত্রী সম্ভবত পশ্চিমা সরকারের সমর্থন পেতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আসমাকে সিরিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে মনোনীত করার প্রতিশ্রুতি দেন আসাদ। এর মধ্য দিয়ে অবশেষে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজের আসন অর্জন করে নেন আসমা।
হারিরি হত্যার দু মাস পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আসমা। ওই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবিতে তাঁকে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও।
এটি ছিল এই দম্পতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ, এরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাশারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকায় নামেন আসমা। বাশারের সাবেক উপদেষ্টা আবদেল নূর বলেন, ‘তিনি (আসাদ) যেসব দেশের সঙ্গে মিশতে পারতেন না, সেসব দেশে তাঁর মুখপাত্র হয়ে কাজ করতেন আসমা।’
এই জুটির জন্য ইউরোপে একটি সফর আয়োজন করা প্রবাসী এক সিরীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আমি মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম। আপনি আসমার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তেই তাঁর প্রেমে পড়বেন। আর আসাদ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকের চেয়ে আলাদা। তিনি দেখতে আধুনিক ও পরিশীলিত। এটিই তাঁকে এত বিপজ্জনক করে তুলেছে।’
আসমার পরবর্তী প্রকল্প ছিল সিরিয়া নিয়েই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সিরিয়াকে তিনি চাঙা করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাংকিং খাত উন্মুক্ত করে দিতে আসাদকে পরামর্শ দেন আসমা। সিরিয়ার এক অর্থনীতিবিদের মতে, ‘আসমা দামেস্ককে করমুক্ত একটি আঞ্চলিক দুবাইতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।’
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অর্থনৈতিক এই সংস্কার হুমকির মধ্যে ফেলে সিরিয়ার বেশির ভাগ ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বার্থকে। সিরিয়ার প্রচলিত ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন আনতে আসাদ পরিবারের সদস্য রামি মাখলুফের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আসমার। কারণ অনুমান করা হয়, সে সময় মাখলুফের সংস্থাগুলো সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৭ সালে নিজস্ব হোল্ডিং সংস্থা তৈরি করে মাখলুফের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন আসমা। তবে দেশের বেশির ভাগ বড় ব্যবসায়ী মাখলুফের সঙ্গে থেকে যাওয়ায় ব্যর্থ হয় আসমা আসাদের প্রচেষ্টা। তাই সিরিয়ার অর্থনীতির জন্য তাঁর পরিকল্পনা থেকে যায় অপেক্ষমাণ।
আসমা দ্রুতই তাঁর প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি নতুন উপায় বের করেন। তিনি তাঁর বিয়ের প্রথম দিকে বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। এই প্রকল্পগুলো তিনি ‘দ্য সিরিয়া ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি সংস্থার মধ্যে একত্রীকরণের উদ্যোগ নেন। বিদেশে বসবাসকারী সিরীয় নাগরিক, জাতিসংঘে দেশটির সাবেক কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক দলের কৌশলবিদ, বোস্টনভিত্তিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শদাতা, এমনকি জার্মান এক কূটনীতিকের মেয়েকেও ওই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামেস্কে থাকা পশ্চিমা কূটনীতিকেরা আনন্দের সঙ্গে আসমার ট্রাস্টকে সমর্থন করেছিলেন। লক্ষ্য অর্জনে ওই ট্রাস্টে অর্থায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও কাতারের মনোযোগ আকর্ষণেও সক্ষম হন আসমা।
নিজের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জনসংযোগ সংস্থা নিয়োগ করেন আসমা। সংস্থাগুলো তাঁর ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রচার শুরু করে। ফলে দামেস্ক এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট, স্টিং ও ড্যামন অ্যালবার্নের মতো তারকারা।
এখানেই শেষ নয়। আসমা জায়গা করে নেন বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালের মার্চে মার্কিন জনসংযোগ সংস্থা ব্রাউন লয়েড জেমসের উদ্যোগে ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে আসেন আসমা। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘মরুভূমির গোলাপ (আ রোজ ইন দ্য ডেজার্ট) ’।
সিরিয়ার অনেক সরকারি কর্মচারী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন—আসমার ট্রাস্ট কেবল তাঁর নিজস্ব প্রচারের একটি বাহন কিনা। যদিও তাঁর সাবেক এক সহযোগী বলেছিলেন, আসমা সত্যিই সিরিয়ার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর ওপর অন্যদের আস্থার অভাব ছিল।
পরিবারে ক্ষমতার বিস্তৃতি
আসমার উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা উঠে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তাঁর বাবা ফওয়াজ আখ্রাস। আসমা-বাশারের বিয়ের পরপরই আখ্রাস লন্ডনে ব্রিটিশ-সিরিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিরিয়ার রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি সামাজিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আসমার সংগঠনের সমন্বয় করেছিলেন, যা ধনী সিরীয়দের আকৃষ্ট করে।
ক্ষমতার নৈকট্য পাওয়ার বিষয়ে আখ্রাস ছিলেন স্পষ্টভাষী। বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি প্রায়ই ‘প্রেসিডেন্টের শ্বশুর হিসেবে...’ কথাটি উচ্চারণ করতেন। এমনকি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বাশার আল-আসাদের কাছে কোনো বার্তা পাঠানোর জন্য আসমার বাবার শরণাপন্ন হতেন বলে জানান সরকারি অনেক কর্মকর্তা।
আসমা আসাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নতি হয় সিরিয়ার ভাবমূর্তিরও। মার্কিন কর্মকর্তারা ফের দামেস্কে যেতে শুরু করেন। বিশেষত ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এমন সফর বাড়তে থাকে।

আরব বসন্ত এবং...
আসমার পরোক্ষ এ ক্ষমতা আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২০১১ সালের প্রথম দুই মাসে অশান্ত হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। কয়েক দশকের স্থবিরতা ও নিপীড়নের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া, আলজেরিয়া থেকে বাহরাইন, জর্ডান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। কায়রোতে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারাক। প্রতিবাদের জোয়ার হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।
বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছিল সিরিয়াতেও, কিন্তু ভয়ে রাস্তায় নেমে আসা থেকে বিরত ছিল বেশির ভাগ মানুষ। এর পর ফেব্রুয়ারির এক রাতে দামেস্কের দক্ষিণের ডেরা নামক শহরে, একদল স্কুলছাত্র একটি প্রাচীরে গ্রাফিতি তৈরি করে যেখানে লেখা ছিল ‘এবার আপনাদের পালা’।
স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বাশারের এক দূর সম্পর্কের ভাই। তাঁর লোকেরা গ্রাফিতি তৈরি করা স্কুলছাত্রদের আটক করে নির্যাতন শুরু করে। এ ঘটনার পর নাগরিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার দাবিতে ডেরার মসজিদের বাইরে সমবেত হয় সাধারণ জনগণ। কিন্তু সেখানে নির্বিচারে গুলি চালায় সেনারা।
এ ঘটনায় আসমা ও বাশার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়টি প্রথমে পরিষ্কার ছিল না। আসাদের একজন জেনারেল তাঁকে স্থানীয় নিরাপত্তা প্রধানকে কারাবন্দী করার এবং ডেরায় রক্তপাতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সিরিয়ার বড় শহরগুলো তখনো শান্ত থাকায় জনসাধারণের সংকট ও পরিবর্তনের নতুন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল।
কিন্তু একই বছরের ৩০ মার্চ সংসদে দেওয়া এক ভাষণে বাশার ঘোষণা দেন, ‘সিরিয়া একটি বড় ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি।’ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনার একটি ফুটেজকে তিনি ‘জাল তথ্য’ বলে আখ্যা দেন এবং সংস্কারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
বাশারের এ ভাষণের পর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় প্রতিবাদ ও সহিংসতার একটি ক্রমবর্ধমান চক্র। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ওপরও চড়াও হয়ে ওঠে সরকারি বাহিনী। এ সময় দামেস্কে থাকা সাবেক এক ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, বাশার প্রায়ই বলতেন, ‘আমার বাবাই ঠিক ছিলেন। হামায় হাজার হাজার মৃত্যু আমাদের তিন দশকের স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।’ এদিকে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছিল আসমার লক্ষ্যগুলোও।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের ছোট ভাই মাহেরের নেতৃত্বে পশ্চিম সিরিয়ার হোমসে সেনাদের আর্টিলারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেনারা বিদ্রোহী দমন শুরুর পর তখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ। আসমা তখন কী করছিলেন? তিনি কি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন, নাকি তিনি তাঁর স্বামীর পদক্ষেপকে সমর্থন করছিলেন—এমন প্রশ্ন তখন ছিল সবার মধ্যেই।
আসমা আসাদ সে সময় তাঁর এক সহযোগীকে বলেছিলেন, ‘এটি সব সময়ই মিথ্যা ছিল (সিরিয়া সংস্কারের প্রতিশ্রুতি)। আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
সূত্র অনুসারে, আসমা লন্ডনেও ফিরে যেতে পারতেন। উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর সহায়তায় নিরাপদে সিরিয়া ছাড়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। ব্রিটিশ সরকার বারবার বলে আসছিল—একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আসমাকে তারা দেশে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। তবে লন্ডনের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অ্যাকটনে আসমার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানায় প্রতিবাদকারীরা। এমনকি সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে আসমা আসাদের নাম সরিয়ে দেয় কুইন্স কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন বাশার ও আসমা। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনারা যখন হোমস শহরে ট্যাংক হামলা চালায়, আসমা তখন বাশারকে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে এই সমস্যা আমরা একসঙ্গে কাটিয়ে উঠব...আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তবে তাঁদের যে সমস্যাগুলো ‘কাটিয়ে ওঠার’ দরকার ছিল, তা সিরিয়ার নাকি পারিবারিক, সেটি স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ ও ক্ষমতা
বিদ্রোহ শুরুর পর আসমা তাঁর প্রথম সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল—‘বাশার আল-আসাদ পুরো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, সিরীয়দের একটি দলের প্রধান নন এবং এই ভূমিকায় ফার্স্ট লেডি তাঁকে সমর্থন করেন।’ এই বিবৃতির মধ্য দিয়ে আসাদের পাশে দাঁড়ান আসমা।
বাশারের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে আসমা তাঁর বাবার সহায়তায় জনসম্মুখে ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা করেন। ২০১২ সালে বোমা বিস্ফোরণে স্বামী নিহত হওয়ার পর দুবাই পালিয়ে যান বাশারের বোন বুশরা। বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও এটি সরকারি মদদে হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করতেন অনেকে। কারণ, আসাদ পরিবারের মধ্যে আসমাবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন বুশরা ও তাঁর স্বামী।
পরের বছরগুলোতে বাশারের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়। হোমস শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী দমনে সফল হয়ে ওঠেন তিনি। সরকারবিরোধী বাহিনী দামেস্কের কিছু শহর নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি তারা।
যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও নির্মম হয়ে ওঠেন বাশার। সহিংসতার মাত্রা ধীর গতিতে বেড়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করে পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানান, বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে প্রথমে কামান এবং এর পর বিমান ও ব্যারেল বোমা হামলা চালানো শুরু করে সরকারি বাহিনী।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট নতুন এক ফুটেজে দেখা যায়, দামেস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এক বিধ্বস্ত শহরের ছবি, যেখানে সরকারি বাহিনীর হামলায় মৃত্যু হয় শত শত বেসামরিক মানুষের। পরে এক তদন্তে জাতিসংঘ নিশ্চিত করে—সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সেরিন’ নামে বিষাক্ত এক স্নায়ু গ্যাস। ১৯৮৮ সালের পর যা ছিল সর্বকালের ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র হামলা। পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই হামলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এ নিয়ে অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিল আসমা-বাশার দম্পতি।
এর পরের বছরগুলোতে সিরিয়ায় ধ্বংসের মাত্রা গণনা করা কঠিন। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে বিস্তৃত একটি তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এর সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাশার বাহিনীকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছিল; কিন্তু দুর্বল করেছিল তাঁর বিরোধী পক্ষের সমর্থনও।
বাশার সিরিয়ার বড় শহরগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুনরায় আলেপ্পো দখল করলেও তিনি বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক শহর। এই সময়ের মধ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় প্রায় পাঁচ লাখে, শরণার্থী হন সিরিয়ার ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
সিরিয়ার নতুন বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল নতুন এক আসমার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর পর আসমা তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারান। যদিও তাঁর বড় পরীক্ষা ছিল নিজের ব্যক্তিগত পরিবর্তন।
২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে অসুস্থতাকে জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তিনি। চিকিৎসার জন্য যে তিনি সিরিয়াতেই রয়েছেন, সেটিও দেশের সাধারণ মানুষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসমা। তাঁর সংগ্রামের বিবরণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশদভাবে প্রচার করা হয়।
চিকিৎসা চলাকালে যখন চুল পড়া শুরু হলো, তখন মাথায় স্কার্ফ পরা ছবিতে দুর্বলতা এবং শক্তি উভয়ই তুলে ধরেছিলেন আসমা, যা ছিল তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহী দমনের বিপরীতে এক অপ্রতিরোধ্য রূপক। এমনকি তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই সরকার সমর্থক মিডিয়া সিরিয়ার দুঃসময়ে আসমার বিভিন্ন ভূমিকার কথা প্রচার করা শুরু করে।
আসমা সচেতনভাবে চেষ্টা করতে থাকেন নিজের ব্রিটিশ পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার। তিনি আরবি ভাষা নিয়ে এত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন যে, সিরীয়রাও আর তাঁর কোনো ইংরেজি উচ্চারণ শনাক্ত করতে পারেনি।
কেবলমাত্র রাশিয়া এবং স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম ছাড়া পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর সাক্ষাৎকারের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন আসমা। পশ্চিমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
তবে ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর তাঁর দাতব্য সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্টের আয় কমে আসে। অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরীয়দের জন্য বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা। আর সেই অর্থের বেশির ভাগই আসা শুরু করে আসমা আসাদের হাত ধরে। সিরিয়া ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে ধনসম্পদের চেয়েও অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন আসমা। পৃষ্ঠপোষকদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল সিরিয়ার যুদ্ধবাজরাও।
যুদ্ধই যখন পুঁজি
যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাশার তাঁর স্ত্রীর আর্থিক সাফল্যে সন্তুষ্ট এবং তাঁর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন। এক দশক দীর্ঘ যুদ্ধের পর বাশার ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং অর্থনীতি নিয়ে তিনি কখনো চিন্তিত ছিলেন না। ইউরোপে আসাদের এক লবিস্টের মতে, আসমা ছিলেন তাঁর ‘প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা’।
ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৯ সালে বাশারকে চাপ দিতে শুরু করে রাশিয়া এবং আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সিরিয়া সরকারের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্য হয়ে ওঠেন দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবের এবং বাশারের নিকটাত্মীয় রামি মাখলুফ।
তবে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক হারান মাখলুফ। সেই সুযোগে মাখলুফের দাতব্য সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে নেয় আসমার অধীনস্থ সিরিয়া ট্রাস্ট। সেই সঙ্গে মাখলুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। সিরিয়ায় অর্থনৈতিক এ দোলাচলের মধ্যে আসমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন মাখলুফ।
জবাবে আসমাকে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন মাখলুফ। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের ‘শীর্ষে থাকা একটি দল’ ষড়যন্ত্র করছে। একই সঙ্গে আরব সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন রুশ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়—সিরিয়ার আর্থিক সংকটের মধ্যেই বাশার তাঁর স্ত্রীর জন্য ডেভিড হকনির একটি পেইন্টিং কিনতে ৩ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এ ঘটনায় খুব বেশি উপকার হয়নি মাখলুফের। কারণ, গল্পটি মিথ্যা ছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে এ ঘটনার পর আংশিক গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। গুঞ্জন ছিল—মাখলুফকে জীবিত রাখা হয়েছিল কারণ, তাঁর কাছে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিদেশি সম্পদের পাসওয়ার্ড এবং দলিল ছিল।

লেডি অব জেসমিন
মাখলুফকে কোণঠাসা করার মধ্য দিয়ে অব্যাহত ছিল আসমার আধিপত্য এবং অধিগ্রহণের ক্ষমতা। আসমা আসাদকে ‘লেডি অব জেসমিন’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রচারও বৃদ্ধি পায় সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। দেশটির মন্ত্রীরা তাঁদের অফিসে আসাদের পাশাপাশি ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করেন ফার্স্ট লেডি আসমার ছবিও।
মাখলুফকে দমন, বাশারের বোনের দেশত্যাগ এবং তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আসমার আর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তাঁর নিকটতম উপদেষ্টাদের অনেকেই অধিষ্ঠিত হন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শীর্ষ পদে।
দামেস্ক ও ইউরোপে ভ্রমণকারী এক ব্যবসায়ীর মতে, ‘আসমা আসাদ প্রাসাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তিনি যাকে খুশি তাঁকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন।’
শেষ কথা
সিরীয়দের অনুমান, দেশের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে ওঠার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে আসমার। বাশারের অবস্থান যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আসমা কি দেশের সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন? গুজব রয়েছে—আসাদ পরিবারের একজন সদস্য সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন।
সিরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, ‘বাশার ও আসমা দুজনেই এ নিয়ে ভাবছেন। আসমা প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং উভয়েই এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বিপ্লবী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দেশটির কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই আসমার। এ ছাড়া বর্তমানে তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেন বাশারের ছোট ভাই মাহের, যিনি এখনো সিরীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ আর্মর্ড ডিভিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
দুবাইয়ের এক সিরীয় ব্যবসায়ীর মতে, ‘সামরিক বাহিনী এবং কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদেরা আসমার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’
আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হলেও আসমা এখন বেশ অরক্ষিতও। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষী কথাও আসমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও বহু আগেই আসমার অনেক বন্ধু তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, তবে আসমার সুরক্ষার বিষয়ে তাঁরা এখনো উদ্বিগ্ন। বৃহত্তম পুরস্কারের লক্ষ্যে পশ্চিম লন্ডনের মেয়েটি শেষ পর্যন্ত পলাতকও হতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আসমা আসাদ হয়তো অনেক আগেই বুঝে গেছেন—যেখানে পৌঁছেছেন তিনি, সেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ নেই।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে