ফয়সাল হাসান

গত গ্রীষ্মে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সিরিয়ার ফার্স্ট লেডির একটি ছবি। সে সময় সিরীয় সামরিক বাহিনী ব্যস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী দমনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যায়, সেনা সুরক্ষা বলয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন আসমা আসাদ ও তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আসাদের প্রশান্তির পেছনের গল্পটা বিভ্রান্তিকর। দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের ১০ বছর পর এসেও ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিরিয়ার শাসক গোষ্ঠী। এ জন্য সিরীয়দের দিতে হয়েছে ভয়াবহ মূল্য।
গণতন্ত্র, মুক্তি ও সমৃদ্ধির আশায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরের শেষ ভাগে তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূচনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলায় সিরিয়ায় আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেছিলেন দেশটির নেতারা। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সিরিয়ায়ও ছোট পরিসরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ গিয়ে তা বড় আকার ধারণ করে। এই দিনকেই সিরিয়ায় গণ-আন্দোলনের শুরুর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর পর থেকে দেশটির সরকারি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে হাজার হাজার সিরীয়। নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে। সেখানকার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। সিরিয়ার মাটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করে আসছে ইরান, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়া ও ইরান বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বিভিন্ন মিত্র দেশ। আরব বিশ্বজুড়ে এক দশক আগের সব আশা ও স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেলেও সিরিয়ার চেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কোথাও ঘটেনি।
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন বাশারের স্ত্রী আসমা আসাদ। বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের ওপর তাঁর আধিপত্যের যাত্রা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও।
লন্ডন থেকে সিরিয়ার প্রাসাদে
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে স্নাতক শেষ করার পর জেপি মরগ্যান ব্যাংকে কাজ শুরু করেন আসমা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাশার আল-আসাদের। ২০০০ সালে দুজনের বিয়ে হয়। সেই বছরই ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। রাতারাতি সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি বনে যান আসমা।
আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ এখন আর সিরিয়া পর্যবেক্ষকদের জন্য গালগল্পের বিষয় নয়। গত বছর আসমাকে সিরিয়ার ‘সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন সরকার। তিনি একদিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর স্বামীর উত্তরাধিকারী হতে পারেন বলেও মনে করেন অনেকে। লন্ডনে বেড়ে ওঠা আসমা আসাদ নিজের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেক দূর। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বৈরশাসকের স্ত্রী হিসেবে এটি কেবল তাঁর যাত্রার শুরু।
১৯৭৫ সালে পশ্চিম লন্ডনের ছোট শহর অ্যাকটনে জন্ম হয় আসমা আখ্রাসের। বাশার আল–আসাদের সঙ্গে বিয়ের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। সিরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকের মতো তাঁর মা–বাবাও সুন্নি মুসলিম। একটি ছোট প্রান্তিক সম্প্রদায় অভ্যুত্থান ঘটানোর আগে ১৯৬০–এর দশক পর্যন্ত যারা ছিল সিরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দল।
উন্নত জীবনের আশায় ১৯৭০–এর দশকে লন্ডনে আসেন আসমার মা–বাবা। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আসমার পরিবারকে সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। ইংল্যান্ডের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসমা পরিচিত ছিলেন এমা নামে।
লন্ডনের সম্ভ্রান্ত অভিজাতদের মতোই জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন আসমা। ব্রিটেনের প্রাচীনতম বেসরকারি গার্লস স্কুলে ভর্তি হন, পড়েছেন কুইন্স কলেজেও। এর পর কিংস কলেজ লন্ডনে কম্পিউটার বিজ্ঞানে একটি ডিগ্রি নেন, যেখানে আসমার বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করেন চতুর ও পরিশ্রমী হিসেবে।
সম্পর্ক সূত্রে ক্ষমতার স্বাদ
আসমার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না বলেও জানান তাঁর বন্ধুরা। মা–বাবার সঙ্গে দামেস্কে বেড়াতে গেলে তিনি বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হোটেলে। আসমার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ছিল তাঁর মা সাহারের। আসমার চাচা বাশারের বাবা হাফেজ আসাদকে ১৯৭০ সালে ক্ষমতা দখল করতে সহায়তা করেছিলেন। পরে লন্ডনে সিরিয়ার দূতাবাসে চাকরি পেতে এই সম্পর্ক ব্যবহার করেছিলেন সাহার।
‘আসাদ অর উই বার্ন দ্য কান্ট্রি’ বইয়ের লেখক স্যাম দাঘেরের মতে, আসমা ও বাশারের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন সাহার। নব্বইয়ের দশকে বাশার লন্ডনে মেডিকেল ছাত্র থাকাকালে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল দুজনের।
ওয়াফিক সাঈদ নামে সিরিয়ার এক ধনী প্রবাসী জানান, বাশারের বড় ভাই বাসিল সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল বেপরোয়া। এর বিপরীতে বাশার ছিলেন ‘কঠোর পরিশ্রমী ও সময়নিষ্ঠ।’
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাসিলের মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই আসাদ রাজবংশের ভাগ্য বাশারের কাঁধে পড়ে। আসমা দামেস্কে যাওয়ার আগেই ২০০০ সালের জুনে মৃত্যু হয় বাশারের বাবা হাফিজের। অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য তাঁর সমর্থন সিরিয়াকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পুনরায় সম্পর্কোন্নয়নের একটি সুযোগ ছিল বাশারের সামনে।
ক্ষমতা গ্রহণর পর উদ্বোধনী ভাষণে বাশার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রকৃত বহু-দলীয় নির্বাচনের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন দেশের অন্যতম বড় কারাগারও। এসবের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আসমার।
আশা ছিল অন্য রকম
নতুন সিরীয় নেতাদের জন্য আসমা আসাদকে মনে করা হচ্ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন ফার্স্ট লেডি। বাশার-আসমা দম্পতির বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এই দুজনের সংমিশ্রণ সিরিয়াকে স্বর্গে পরিণত করবে।’
তবে আসমাকে নিয়ে বিবাদ ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বাশারের মা আনিসা চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে নিজ জাতির মধ্যেই বিয়ে করবে, যাতে তাঁরা আরবের সৌদদের মতো দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ তৈরি করতে পারে।
কিন্তু বিয়ে ঠেকানো যায়নি। বিয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বাশারের মা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি তাঁদের বিয়ের খবর নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে কোনো সংবাদও প্রচার হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি আনুষ্ঠানিক ছবিও। আসমাকে বারবার বলা হয়েছিল, তাঁর কাজ ওয়ারিশ তৈরি করা এবং খবর থেকে দূরে থাকা।
আইমান আবদেল নূর নামে বাশারের এক সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আসমার গৃহজীবন ছিল দুর্বিষহ। তারা (আসাদের পরিবার) তাঁকে ঘৃণা করত। বছরের পর বছর তাঁকে বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। আসমা তখন আরবি ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন না।’
ক্ষমতাসীন উচ্চবিত্ত শ্রেণিও বন্ধুসুলভ ছিলেন না। বাশারের সংস্কারগুলোও নানা বাধার মুখে পড়ে, বিশেষত তাঁর বাবার সাবেক সহযোগীদের কাছ থেকে।
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাশারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল যুক্তিহীন, যা তিনি কেবল নিজের পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে ব্যবহার করেছিলেন।
ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আপনি যা শুনতে চান, বাশার আপনাকে ঠিক তাই বলবে এবং এর পর কিছুই করবে না।’ শিক্ষাবিদদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। জনসমাগমের ক্ষেত্রে এতটাই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যে, হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও নিতে হয়েছে সরকারি অনুমতি।
আধিপত্যের যাত্রা শুরু
২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন লেবাননের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ রফিক হারিরি। এরপরই সিরিয়া তার ছোট, অকার্যকর প্রতিবেশীকে কোণঠাসা করে ফেলে। বাশার আল–আসাদই হারিরিকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং লেবাননের বিশাল বিক্ষোভের মুখে একসময় পিছু হটেন আসাদ। সিরিয়ার কট্টরপন্থীদের দাবি উপেক্ষা করে প্রায় ৩০ বছর ধরে দখলদারির পর লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় সিরিয়া।
বাশার আল-আসাদের কাছে তাঁর দেশি মিত্রদের প্রয়োজনীয়তাও কমে এসেছিল। কারণ, তাঁর ব্রিটিশ স্ত্রী সম্ভবত পশ্চিমা সরকারের সমর্থন পেতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আসমাকে সিরিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে মনোনীত করার প্রতিশ্রুতি দেন আসাদ। এর মধ্য দিয়ে অবশেষে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজের আসন অর্জন করে নেন আসমা।
হারিরি হত্যার দু মাস পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আসমা। ওই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবিতে তাঁকে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও।
এটি ছিল এই দম্পতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ, এরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাশারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকায় নামেন আসমা। বাশারের সাবেক উপদেষ্টা আবদেল নূর বলেন, ‘তিনি (আসাদ) যেসব দেশের সঙ্গে মিশতে পারতেন না, সেসব দেশে তাঁর মুখপাত্র হয়ে কাজ করতেন আসমা।’
এই জুটির জন্য ইউরোপে একটি সফর আয়োজন করা প্রবাসী এক সিরীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আমি মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম। আপনি আসমার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তেই তাঁর প্রেমে পড়বেন। আর আসাদ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকের চেয়ে আলাদা। তিনি দেখতে আধুনিক ও পরিশীলিত। এটিই তাঁকে এত বিপজ্জনক করে তুলেছে।’
আসমার পরবর্তী প্রকল্প ছিল সিরিয়া নিয়েই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সিরিয়াকে তিনি চাঙা করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাংকিং খাত উন্মুক্ত করে দিতে আসাদকে পরামর্শ দেন আসমা। সিরিয়ার এক অর্থনীতিবিদের মতে, ‘আসমা দামেস্ককে করমুক্ত একটি আঞ্চলিক দুবাইতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।’
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অর্থনৈতিক এই সংস্কার হুমকির মধ্যে ফেলে সিরিয়ার বেশির ভাগ ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বার্থকে। সিরিয়ার প্রচলিত ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন আনতে আসাদ পরিবারের সদস্য রামি মাখলুফের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আসমার। কারণ অনুমান করা হয়, সে সময় মাখলুফের সংস্থাগুলো সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৭ সালে নিজস্ব হোল্ডিং সংস্থা তৈরি করে মাখলুফের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন আসমা। তবে দেশের বেশির ভাগ বড় ব্যবসায়ী মাখলুফের সঙ্গে থেকে যাওয়ায় ব্যর্থ হয় আসমা আসাদের প্রচেষ্টা। তাই সিরিয়ার অর্থনীতির জন্য তাঁর পরিকল্পনা থেকে যায় অপেক্ষমাণ।
আসমা দ্রুতই তাঁর প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি নতুন উপায় বের করেন। তিনি তাঁর বিয়ের প্রথম দিকে বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। এই প্রকল্পগুলো তিনি ‘দ্য সিরিয়া ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি সংস্থার মধ্যে একত্রীকরণের উদ্যোগ নেন। বিদেশে বসবাসকারী সিরীয় নাগরিক, জাতিসংঘে দেশটির সাবেক কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক দলের কৌশলবিদ, বোস্টনভিত্তিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শদাতা, এমনকি জার্মান এক কূটনীতিকের মেয়েকেও ওই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামেস্কে থাকা পশ্চিমা কূটনীতিকেরা আনন্দের সঙ্গে আসমার ট্রাস্টকে সমর্থন করেছিলেন। লক্ষ্য অর্জনে ওই ট্রাস্টে অর্থায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও কাতারের মনোযোগ আকর্ষণেও সক্ষম হন আসমা।
নিজের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জনসংযোগ সংস্থা নিয়োগ করেন আসমা। সংস্থাগুলো তাঁর ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রচার শুরু করে। ফলে দামেস্ক এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট, স্টিং ও ড্যামন অ্যালবার্নের মতো তারকারা।
এখানেই শেষ নয়। আসমা জায়গা করে নেন বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালের মার্চে মার্কিন জনসংযোগ সংস্থা ব্রাউন লয়েড জেমসের উদ্যোগে ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে আসেন আসমা। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘মরুভূমির গোলাপ (আ রোজ ইন দ্য ডেজার্ট) ’।
সিরিয়ার অনেক সরকারি কর্মচারী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন—আসমার ট্রাস্ট কেবল তাঁর নিজস্ব প্রচারের একটি বাহন কিনা। যদিও তাঁর সাবেক এক সহযোগী বলেছিলেন, আসমা সত্যিই সিরিয়ার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর ওপর অন্যদের আস্থার অভাব ছিল।
পরিবারে ক্ষমতার বিস্তৃতি
আসমার উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা উঠে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তাঁর বাবা ফওয়াজ আখ্রাস। আসমা-বাশারের বিয়ের পরপরই আখ্রাস লন্ডনে ব্রিটিশ-সিরিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিরিয়ার রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি সামাজিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আসমার সংগঠনের সমন্বয় করেছিলেন, যা ধনী সিরীয়দের আকৃষ্ট করে।
ক্ষমতার নৈকট্য পাওয়ার বিষয়ে আখ্রাস ছিলেন স্পষ্টভাষী। বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি প্রায়ই ‘প্রেসিডেন্টের শ্বশুর হিসেবে...’ কথাটি উচ্চারণ করতেন। এমনকি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বাশার আল-আসাদের কাছে কোনো বার্তা পাঠানোর জন্য আসমার বাবার শরণাপন্ন হতেন বলে জানান সরকারি অনেক কর্মকর্তা।
আসমা আসাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নতি হয় সিরিয়ার ভাবমূর্তিরও। মার্কিন কর্মকর্তারা ফের দামেস্কে যেতে শুরু করেন। বিশেষত ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এমন সফর বাড়তে থাকে।

আরব বসন্ত এবং...
আসমার পরোক্ষ এ ক্ষমতা আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২০১১ সালের প্রথম দুই মাসে অশান্ত হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। কয়েক দশকের স্থবিরতা ও নিপীড়নের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া, আলজেরিয়া থেকে বাহরাইন, জর্ডান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। কায়রোতে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারাক। প্রতিবাদের জোয়ার হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।
বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছিল সিরিয়াতেও, কিন্তু ভয়ে রাস্তায় নেমে আসা থেকে বিরত ছিল বেশির ভাগ মানুষ। এর পর ফেব্রুয়ারির এক রাতে দামেস্কের দক্ষিণের ডেরা নামক শহরে, একদল স্কুলছাত্র একটি প্রাচীরে গ্রাফিতি তৈরি করে যেখানে লেখা ছিল ‘এবার আপনাদের পালা’।
স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বাশারের এক দূর সম্পর্কের ভাই। তাঁর লোকেরা গ্রাফিতি তৈরি করা স্কুলছাত্রদের আটক করে নির্যাতন শুরু করে। এ ঘটনার পর নাগরিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার দাবিতে ডেরার মসজিদের বাইরে সমবেত হয় সাধারণ জনগণ। কিন্তু সেখানে নির্বিচারে গুলি চালায় সেনারা।
এ ঘটনায় আসমা ও বাশার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়টি প্রথমে পরিষ্কার ছিল না। আসাদের একজন জেনারেল তাঁকে স্থানীয় নিরাপত্তা প্রধানকে কারাবন্দী করার এবং ডেরায় রক্তপাতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সিরিয়ার বড় শহরগুলো তখনো শান্ত থাকায় জনসাধারণের সংকট ও পরিবর্তনের নতুন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল।
কিন্তু একই বছরের ৩০ মার্চ সংসদে দেওয়া এক ভাষণে বাশার ঘোষণা দেন, ‘সিরিয়া একটি বড় ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি।’ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনার একটি ফুটেজকে তিনি ‘জাল তথ্য’ বলে আখ্যা দেন এবং সংস্কারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
বাশারের এ ভাষণের পর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় প্রতিবাদ ও সহিংসতার একটি ক্রমবর্ধমান চক্র। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ওপরও চড়াও হয়ে ওঠে সরকারি বাহিনী। এ সময় দামেস্কে থাকা সাবেক এক ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, বাশার প্রায়ই বলতেন, ‘আমার বাবাই ঠিক ছিলেন। হামায় হাজার হাজার মৃত্যু আমাদের তিন দশকের স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।’ এদিকে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছিল আসমার লক্ষ্যগুলোও।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের ছোট ভাই মাহেরের নেতৃত্বে পশ্চিম সিরিয়ার হোমসে সেনাদের আর্টিলারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেনারা বিদ্রোহী দমন শুরুর পর তখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ। আসমা তখন কী করছিলেন? তিনি কি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন, নাকি তিনি তাঁর স্বামীর পদক্ষেপকে সমর্থন করছিলেন—এমন প্রশ্ন তখন ছিল সবার মধ্যেই।
আসমা আসাদ সে সময় তাঁর এক সহযোগীকে বলেছিলেন, ‘এটি সব সময়ই মিথ্যা ছিল (সিরিয়া সংস্কারের প্রতিশ্রুতি)। আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
সূত্র অনুসারে, আসমা লন্ডনেও ফিরে যেতে পারতেন। উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর সহায়তায় নিরাপদে সিরিয়া ছাড়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। ব্রিটিশ সরকার বারবার বলে আসছিল—একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আসমাকে তারা দেশে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। তবে লন্ডনের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অ্যাকটনে আসমার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানায় প্রতিবাদকারীরা। এমনকি সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে আসমা আসাদের নাম সরিয়ে দেয় কুইন্স কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন বাশার ও আসমা। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনারা যখন হোমস শহরে ট্যাংক হামলা চালায়, আসমা তখন বাশারকে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে এই সমস্যা আমরা একসঙ্গে কাটিয়ে উঠব...আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তবে তাঁদের যে সমস্যাগুলো ‘কাটিয়ে ওঠার’ দরকার ছিল, তা সিরিয়ার নাকি পারিবারিক, সেটি স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ ও ক্ষমতা
বিদ্রোহ শুরুর পর আসমা তাঁর প্রথম সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল—‘বাশার আল-আসাদ পুরো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, সিরীয়দের একটি দলের প্রধান নন এবং এই ভূমিকায় ফার্স্ট লেডি তাঁকে সমর্থন করেন।’ এই বিবৃতির মধ্য দিয়ে আসাদের পাশে দাঁড়ান আসমা।
বাশারের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে আসমা তাঁর বাবার সহায়তায় জনসম্মুখে ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা করেন। ২০১২ সালে বোমা বিস্ফোরণে স্বামী নিহত হওয়ার পর দুবাই পালিয়ে যান বাশারের বোন বুশরা। বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও এটি সরকারি মদদে হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করতেন অনেকে। কারণ, আসাদ পরিবারের মধ্যে আসমাবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন বুশরা ও তাঁর স্বামী।
পরের বছরগুলোতে বাশারের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়। হোমস শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী দমনে সফল হয়ে ওঠেন তিনি। সরকারবিরোধী বাহিনী দামেস্কের কিছু শহর নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি তারা।
যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও নির্মম হয়ে ওঠেন বাশার। সহিংসতার মাত্রা ধীর গতিতে বেড়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করে পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানান, বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে প্রথমে কামান এবং এর পর বিমান ও ব্যারেল বোমা হামলা চালানো শুরু করে সরকারি বাহিনী।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট নতুন এক ফুটেজে দেখা যায়, দামেস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এক বিধ্বস্ত শহরের ছবি, যেখানে সরকারি বাহিনীর হামলায় মৃত্যু হয় শত শত বেসামরিক মানুষের। পরে এক তদন্তে জাতিসংঘ নিশ্চিত করে—সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সেরিন’ নামে বিষাক্ত এক স্নায়ু গ্যাস। ১৯৮৮ সালের পর যা ছিল সর্বকালের ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র হামলা। পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই হামলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এ নিয়ে অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিল আসমা-বাশার দম্পতি।
এর পরের বছরগুলোতে সিরিয়ায় ধ্বংসের মাত্রা গণনা করা কঠিন। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে বিস্তৃত একটি তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এর সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাশার বাহিনীকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছিল; কিন্তু দুর্বল করেছিল তাঁর বিরোধী পক্ষের সমর্থনও।
বাশার সিরিয়ার বড় শহরগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুনরায় আলেপ্পো দখল করলেও তিনি বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক শহর। এই সময়ের মধ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় প্রায় পাঁচ লাখে, শরণার্থী হন সিরিয়ার ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
সিরিয়ার নতুন বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল নতুন এক আসমার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর পর আসমা তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারান। যদিও তাঁর বড় পরীক্ষা ছিল নিজের ব্যক্তিগত পরিবর্তন।
২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে অসুস্থতাকে জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তিনি। চিকিৎসার জন্য যে তিনি সিরিয়াতেই রয়েছেন, সেটিও দেশের সাধারণ মানুষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসমা। তাঁর সংগ্রামের বিবরণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশদভাবে প্রচার করা হয়।
চিকিৎসা চলাকালে যখন চুল পড়া শুরু হলো, তখন মাথায় স্কার্ফ পরা ছবিতে দুর্বলতা এবং শক্তি উভয়ই তুলে ধরেছিলেন আসমা, যা ছিল তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহী দমনের বিপরীতে এক অপ্রতিরোধ্য রূপক। এমনকি তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই সরকার সমর্থক মিডিয়া সিরিয়ার দুঃসময়ে আসমার বিভিন্ন ভূমিকার কথা প্রচার করা শুরু করে।
আসমা সচেতনভাবে চেষ্টা করতে থাকেন নিজের ব্রিটিশ পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার। তিনি আরবি ভাষা নিয়ে এত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন যে, সিরীয়রাও আর তাঁর কোনো ইংরেজি উচ্চারণ শনাক্ত করতে পারেনি।
কেবলমাত্র রাশিয়া এবং স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম ছাড়া পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর সাক্ষাৎকারের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন আসমা। পশ্চিমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
তবে ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর তাঁর দাতব্য সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্টের আয় কমে আসে। অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরীয়দের জন্য বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা। আর সেই অর্থের বেশির ভাগই আসা শুরু করে আসমা আসাদের হাত ধরে। সিরিয়া ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে ধনসম্পদের চেয়েও অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন আসমা। পৃষ্ঠপোষকদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল সিরিয়ার যুদ্ধবাজরাও।
যুদ্ধই যখন পুঁজি
যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাশার তাঁর স্ত্রীর আর্থিক সাফল্যে সন্তুষ্ট এবং তাঁর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন। এক দশক দীর্ঘ যুদ্ধের পর বাশার ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং অর্থনীতি নিয়ে তিনি কখনো চিন্তিত ছিলেন না। ইউরোপে আসাদের এক লবিস্টের মতে, আসমা ছিলেন তাঁর ‘প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা’।
ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৯ সালে বাশারকে চাপ দিতে শুরু করে রাশিয়া এবং আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সিরিয়া সরকারের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্য হয়ে ওঠেন দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবের এবং বাশারের নিকটাত্মীয় রামি মাখলুফ।
তবে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক হারান মাখলুফ। সেই সুযোগে মাখলুফের দাতব্য সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে নেয় আসমার অধীনস্থ সিরিয়া ট্রাস্ট। সেই সঙ্গে মাখলুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। সিরিয়ায় অর্থনৈতিক এ দোলাচলের মধ্যে আসমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন মাখলুফ।
জবাবে আসমাকে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন মাখলুফ। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের ‘শীর্ষে থাকা একটি দল’ ষড়যন্ত্র করছে। একই সঙ্গে আরব সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন রুশ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়—সিরিয়ার আর্থিক সংকটের মধ্যেই বাশার তাঁর স্ত্রীর জন্য ডেভিড হকনির একটি পেইন্টিং কিনতে ৩ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এ ঘটনায় খুব বেশি উপকার হয়নি মাখলুফের। কারণ, গল্পটি মিথ্যা ছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে এ ঘটনার পর আংশিক গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। গুঞ্জন ছিল—মাখলুফকে জীবিত রাখা হয়েছিল কারণ, তাঁর কাছে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিদেশি সম্পদের পাসওয়ার্ড এবং দলিল ছিল।

লেডি অব জেসমিন
মাখলুফকে কোণঠাসা করার মধ্য দিয়ে অব্যাহত ছিল আসমার আধিপত্য এবং অধিগ্রহণের ক্ষমতা। আসমা আসাদকে ‘লেডি অব জেসমিন’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রচারও বৃদ্ধি পায় সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। দেশটির মন্ত্রীরা তাঁদের অফিসে আসাদের পাশাপাশি ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করেন ফার্স্ট লেডি আসমার ছবিও।
মাখলুফকে দমন, বাশারের বোনের দেশত্যাগ এবং তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আসমার আর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তাঁর নিকটতম উপদেষ্টাদের অনেকেই অধিষ্ঠিত হন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শীর্ষ পদে।
দামেস্ক ও ইউরোপে ভ্রমণকারী এক ব্যবসায়ীর মতে, ‘আসমা আসাদ প্রাসাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তিনি যাকে খুশি তাঁকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন।’
শেষ কথা
সিরীয়দের অনুমান, দেশের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে ওঠার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে আসমার। বাশারের অবস্থান যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আসমা কি দেশের সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন? গুজব রয়েছে—আসাদ পরিবারের একজন সদস্য সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন।
সিরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, ‘বাশার ও আসমা দুজনেই এ নিয়ে ভাবছেন। আসমা প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং উভয়েই এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বিপ্লবী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দেশটির কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই আসমার। এ ছাড়া বর্তমানে তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেন বাশারের ছোট ভাই মাহের, যিনি এখনো সিরীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ আর্মর্ড ডিভিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
দুবাইয়ের এক সিরীয় ব্যবসায়ীর মতে, ‘সামরিক বাহিনী এবং কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদেরা আসমার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’
আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হলেও আসমা এখন বেশ অরক্ষিতও। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষী কথাও আসমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও বহু আগেই আসমার অনেক বন্ধু তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, তবে আসমার সুরক্ষার বিষয়ে তাঁরা এখনো উদ্বিগ্ন। বৃহত্তম পুরস্কারের লক্ষ্যে পশ্চিম লন্ডনের মেয়েটি শেষ পর্যন্ত পলাতকও হতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আসমা আসাদ হয়তো অনেক আগেই বুঝে গেছেন—যেখানে পৌঁছেছেন তিনি, সেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ নেই।

গত গ্রীষ্মে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সিরিয়ার ফার্স্ট লেডির একটি ছবি। সে সময় সিরীয় সামরিক বাহিনী ব্যস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী দমনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যায়, সেনা সুরক্ষা বলয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন আসমা আসাদ ও তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আসাদের প্রশান্তির পেছনের গল্পটা বিভ্রান্তিকর। দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের ১০ বছর পর এসেও ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিরিয়ার শাসক গোষ্ঠী। এ জন্য সিরীয়দের দিতে হয়েছে ভয়াবহ মূল্য।
গণতন্ত্র, মুক্তি ও সমৃদ্ধির আশায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরের শেষ ভাগে তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূচনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলায় সিরিয়ায় আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেছিলেন দেশটির নেতারা। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সিরিয়ায়ও ছোট পরিসরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ গিয়ে তা বড় আকার ধারণ করে। এই দিনকেই সিরিয়ায় গণ-আন্দোলনের শুরুর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর পর থেকে দেশটির সরকারি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে হাজার হাজার সিরীয়। নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে। সেখানকার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। সিরিয়ার মাটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করে আসছে ইরান, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়া ও ইরান বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বিভিন্ন মিত্র দেশ। আরব বিশ্বজুড়ে এক দশক আগের সব আশা ও স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেলেও সিরিয়ার চেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কোথাও ঘটেনি।
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন বাশারের স্ত্রী আসমা আসাদ। বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের ওপর তাঁর আধিপত্যের যাত্রা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও।
লন্ডন থেকে সিরিয়ার প্রাসাদে
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে স্নাতক শেষ করার পর জেপি মরগ্যান ব্যাংকে কাজ শুরু করেন আসমা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাশার আল-আসাদের। ২০০০ সালে দুজনের বিয়ে হয়। সেই বছরই ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। রাতারাতি সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি বনে যান আসমা।
আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ এখন আর সিরিয়া পর্যবেক্ষকদের জন্য গালগল্পের বিষয় নয়। গত বছর আসমাকে সিরিয়ার ‘সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন সরকার। তিনি একদিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর স্বামীর উত্তরাধিকারী হতে পারেন বলেও মনে করেন অনেকে। লন্ডনে বেড়ে ওঠা আসমা আসাদ নিজের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেক দূর। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বৈরশাসকের স্ত্রী হিসেবে এটি কেবল তাঁর যাত্রার শুরু।
১৯৭৫ সালে পশ্চিম লন্ডনের ছোট শহর অ্যাকটনে জন্ম হয় আসমা আখ্রাসের। বাশার আল–আসাদের সঙ্গে বিয়ের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। সিরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকের মতো তাঁর মা–বাবাও সুন্নি মুসলিম। একটি ছোট প্রান্তিক সম্প্রদায় অভ্যুত্থান ঘটানোর আগে ১৯৬০–এর দশক পর্যন্ত যারা ছিল সিরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দল।
উন্নত জীবনের আশায় ১৯৭০–এর দশকে লন্ডনে আসেন আসমার মা–বাবা। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আসমার পরিবারকে সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। ইংল্যান্ডের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসমা পরিচিত ছিলেন এমা নামে।
লন্ডনের সম্ভ্রান্ত অভিজাতদের মতোই জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন আসমা। ব্রিটেনের প্রাচীনতম বেসরকারি গার্লস স্কুলে ভর্তি হন, পড়েছেন কুইন্স কলেজেও। এর পর কিংস কলেজ লন্ডনে কম্পিউটার বিজ্ঞানে একটি ডিগ্রি নেন, যেখানে আসমার বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করেন চতুর ও পরিশ্রমী হিসেবে।
সম্পর্ক সূত্রে ক্ষমতার স্বাদ
আসমার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না বলেও জানান তাঁর বন্ধুরা। মা–বাবার সঙ্গে দামেস্কে বেড়াতে গেলে তিনি বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হোটেলে। আসমার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ছিল তাঁর মা সাহারের। আসমার চাচা বাশারের বাবা হাফেজ আসাদকে ১৯৭০ সালে ক্ষমতা দখল করতে সহায়তা করেছিলেন। পরে লন্ডনে সিরিয়ার দূতাবাসে চাকরি পেতে এই সম্পর্ক ব্যবহার করেছিলেন সাহার।
‘আসাদ অর উই বার্ন দ্য কান্ট্রি’ বইয়ের লেখক স্যাম দাঘেরের মতে, আসমা ও বাশারের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন সাহার। নব্বইয়ের দশকে বাশার লন্ডনে মেডিকেল ছাত্র থাকাকালে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল দুজনের।
ওয়াফিক সাঈদ নামে সিরিয়ার এক ধনী প্রবাসী জানান, বাশারের বড় ভাই বাসিল সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল বেপরোয়া। এর বিপরীতে বাশার ছিলেন ‘কঠোর পরিশ্রমী ও সময়নিষ্ঠ।’
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাসিলের মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই আসাদ রাজবংশের ভাগ্য বাশারের কাঁধে পড়ে। আসমা দামেস্কে যাওয়ার আগেই ২০০০ সালের জুনে মৃত্যু হয় বাশারের বাবা হাফিজের। অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য তাঁর সমর্থন সিরিয়াকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পুনরায় সম্পর্কোন্নয়নের একটি সুযোগ ছিল বাশারের সামনে।
ক্ষমতা গ্রহণর পর উদ্বোধনী ভাষণে বাশার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রকৃত বহু-দলীয় নির্বাচনের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন দেশের অন্যতম বড় কারাগারও। এসবের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আসমার।
আশা ছিল অন্য রকম
নতুন সিরীয় নেতাদের জন্য আসমা আসাদকে মনে করা হচ্ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন ফার্স্ট লেডি। বাশার-আসমা দম্পতির বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এই দুজনের সংমিশ্রণ সিরিয়াকে স্বর্গে পরিণত করবে।’
তবে আসমাকে নিয়ে বিবাদ ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বাশারের মা আনিসা চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে নিজ জাতির মধ্যেই বিয়ে করবে, যাতে তাঁরা আরবের সৌদদের মতো দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ তৈরি করতে পারে।
কিন্তু বিয়ে ঠেকানো যায়নি। বিয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বাশারের মা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি তাঁদের বিয়ের খবর নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে কোনো সংবাদও প্রচার হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি আনুষ্ঠানিক ছবিও। আসমাকে বারবার বলা হয়েছিল, তাঁর কাজ ওয়ারিশ তৈরি করা এবং খবর থেকে দূরে থাকা।
আইমান আবদেল নূর নামে বাশারের এক সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আসমার গৃহজীবন ছিল দুর্বিষহ। তারা (আসাদের পরিবার) তাঁকে ঘৃণা করত। বছরের পর বছর তাঁকে বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। আসমা তখন আরবি ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন না।’
ক্ষমতাসীন উচ্চবিত্ত শ্রেণিও বন্ধুসুলভ ছিলেন না। বাশারের সংস্কারগুলোও নানা বাধার মুখে পড়ে, বিশেষত তাঁর বাবার সাবেক সহযোগীদের কাছ থেকে।
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাশারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল যুক্তিহীন, যা তিনি কেবল নিজের পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে ব্যবহার করেছিলেন।
ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আপনি যা শুনতে চান, বাশার আপনাকে ঠিক তাই বলবে এবং এর পর কিছুই করবে না।’ শিক্ষাবিদদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। জনসমাগমের ক্ষেত্রে এতটাই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যে, হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও নিতে হয়েছে সরকারি অনুমতি।
আধিপত্যের যাত্রা শুরু
২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন লেবাননের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ রফিক হারিরি। এরপরই সিরিয়া তার ছোট, অকার্যকর প্রতিবেশীকে কোণঠাসা করে ফেলে। বাশার আল–আসাদই হারিরিকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং লেবাননের বিশাল বিক্ষোভের মুখে একসময় পিছু হটেন আসাদ। সিরিয়ার কট্টরপন্থীদের দাবি উপেক্ষা করে প্রায় ৩০ বছর ধরে দখলদারির পর লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় সিরিয়া।
বাশার আল-আসাদের কাছে তাঁর দেশি মিত্রদের প্রয়োজনীয়তাও কমে এসেছিল। কারণ, তাঁর ব্রিটিশ স্ত্রী সম্ভবত পশ্চিমা সরকারের সমর্থন পেতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আসমাকে সিরিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে মনোনীত করার প্রতিশ্রুতি দেন আসাদ। এর মধ্য দিয়ে অবশেষে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজের আসন অর্জন করে নেন আসমা।
হারিরি হত্যার দু মাস পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আসমা। ওই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবিতে তাঁকে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও।
এটি ছিল এই দম্পতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ, এরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাশারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকায় নামেন আসমা। বাশারের সাবেক উপদেষ্টা আবদেল নূর বলেন, ‘তিনি (আসাদ) যেসব দেশের সঙ্গে মিশতে পারতেন না, সেসব দেশে তাঁর মুখপাত্র হয়ে কাজ করতেন আসমা।’
এই জুটির জন্য ইউরোপে একটি সফর আয়োজন করা প্রবাসী এক সিরীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আমি মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম। আপনি আসমার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তেই তাঁর প্রেমে পড়বেন। আর আসাদ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকের চেয়ে আলাদা। তিনি দেখতে আধুনিক ও পরিশীলিত। এটিই তাঁকে এত বিপজ্জনক করে তুলেছে।’
আসমার পরবর্তী প্রকল্প ছিল সিরিয়া নিয়েই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সিরিয়াকে তিনি চাঙা করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাংকিং খাত উন্মুক্ত করে দিতে আসাদকে পরামর্শ দেন আসমা। সিরিয়ার এক অর্থনীতিবিদের মতে, ‘আসমা দামেস্ককে করমুক্ত একটি আঞ্চলিক দুবাইতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।’
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অর্থনৈতিক এই সংস্কার হুমকির মধ্যে ফেলে সিরিয়ার বেশির ভাগ ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বার্থকে। সিরিয়ার প্রচলিত ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন আনতে আসাদ পরিবারের সদস্য রামি মাখলুফের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আসমার। কারণ অনুমান করা হয়, সে সময় মাখলুফের সংস্থাগুলো সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৭ সালে নিজস্ব হোল্ডিং সংস্থা তৈরি করে মাখলুফের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন আসমা। তবে দেশের বেশির ভাগ বড় ব্যবসায়ী মাখলুফের সঙ্গে থেকে যাওয়ায় ব্যর্থ হয় আসমা আসাদের প্রচেষ্টা। তাই সিরিয়ার অর্থনীতির জন্য তাঁর পরিকল্পনা থেকে যায় অপেক্ষমাণ।
আসমা দ্রুতই তাঁর প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি নতুন উপায় বের করেন। তিনি তাঁর বিয়ের প্রথম দিকে বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। এই প্রকল্পগুলো তিনি ‘দ্য সিরিয়া ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি সংস্থার মধ্যে একত্রীকরণের উদ্যোগ নেন। বিদেশে বসবাসকারী সিরীয় নাগরিক, জাতিসংঘে দেশটির সাবেক কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক দলের কৌশলবিদ, বোস্টনভিত্তিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শদাতা, এমনকি জার্মান এক কূটনীতিকের মেয়েকেও ওই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামেস্কে থাকা পশ্চিমা কূটনীতিকেরা আনন্দের সঙ্গে আসমার ট্রাস্টকে সমর্থন করেছিলেন। লক্ষ্য অর্জনে ওই ট্রাস্টে অর্থায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও কাতারের মনোযোগ আকর্ষণেও সক্ষম হন আসমা।
নিজের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জনসংযোগ সংস্থা নিয়োগ করেন আসমা। সংস্থাগুলো তাঁর ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রচার শুরু করে। ফলে দামেস্ক এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট, স্টিং ও ড্যামন অ্যালবার্নের মতো তারকারা।
এখানেই শেষ নয়। আসমা জায়গা করে নেন বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালের মার্চে মার্কিন জনসংযোগ সংস্থা ব্রাউন লয়েড জেমসের উদ্যোগে ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে আসেন আসমা। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘মরুভূমির গোলাপ (আ রোজ ইন দ্য ডেজার্ট) ’।
সিরিয়ার অনেক সরকারি কর্মচারী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন—আসমার ট্রাস্ট কেবল তাঁর নিজস্ব প্রচারের একটি বাহন কিনা। যদিও তাঁর সাবেক এক সহযোগী বলেছিলেন, আসমা সত্যিই সিরিয়ার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর ওপর অন্যদের আস্থার অভাব ছিল।
পরিবারে ক্ষমতার বিস্তৃতি
আসমার উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা উঠে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তাঁর বাবা ফওয়াজ আখ্রাস। আসমা-বাশারের বিয়ের পরপরই আখ্রাস লন্ডনে ব্রিটিশ-সিরিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিরিয়ার রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি সামাজিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আসমার সংগঠনের সমন্বয় করেছিলেন, যা ধনী সিরীয়দের আকৃষ্ট করে।
ক্ষমতার নৈকট্য পাওয়ার বিষয়ে আখ্রাস ছিলেন স্পষ্টভাষী। বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি প্রায়ই ‘প্রেসিডেন্টের শ্বশুর হিসেবে...’ কথাটি উচ্চারণ করতেন। এমনকি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বাশার আল-আসাদের কাছে কোনো বার্তা পাঠানোর জন্য আসমার বাবার শরণাপন্ন হতেন বলে জানান সরকারি অনেক কর্মকর্তা।
আসমা আসাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নতি হয় সিরিয়ার ভাবমূর্তিরও। মার্কিন কর্মকর্তারা ফের দামেস্কে যেতে শুরু করেন। বিশেষত ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এমন সফর বাড়তে থাকে।

আরব বসন্ত এবং...
আসমার পরোক্ষ এ ক্ষমতা আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২০১১ সালের প্রথম দুই মাসে অশান্ত হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। কয়েক দশকের স্থবিরতা ও নিপীড়নের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া, আলজেরিয়া থেকে বাহরাইন, জর্ডান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। কায়রোতে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারাক। প্রতিবাদের জোয়ার হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।
বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছিল সিরিয়াতেও, কিন্তু ভয়ে রাস্তায় নেমে আসা থেকে বিরত ছিল বেশির ভাগ মানুষ। এর পর ফেব্রুয়ারির এক রাতে দামেস্কের দক্ষিণের ডেরা নামক শহরে, একদল স্কুলছাত্র একটি প্রাচীরে গ্রাফিতি তৈরি করে যেখানে লেখা ছিল ‘এবার আপনাদের পালা’।
স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বাশারের এক দূর সম্পর্কের ভাই। তাঁর লোকেরা গ্রাফিতি তৈরি করা স্কুলছাত্রদের আটক করে নির্যাতন শুরু করে। এ ঘটনার পর নাগরিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার দাবিতে ডেরার মসজিদের বাইরে সমবেত হয় সাধারণ জনগণ। কিন্তু সেখানে নির্বিচারে গুলি চালায় সেনারা।
এ ঘটনায় আসমা ও বাশার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়টি প্রথমে পরিষ্কার ছিল না। আসাদের একজন জেনারেল তাঁকে স্থানীয় নিরাপত্তা প্রধানকে কারাবন্দী করার এবং ডেরায় রক্তপাতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সিরিয়ার বড় শহরগুলো তখনো শান্ত থাকায় জনসাধারণের সংকট ও পরিবর্তনের নতুন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল।
কিন্তু একই বছরের ৩০ মার্চ সংসদে দেওয়া এক ভাষণে বাশার ঘোষণা দেন, ‘সিরিয়া একটি বড় ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি।’ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনার একটি ফুটেজকে তিনি ‘জাল তথ্য’ বলে আখ্যা দেন এবং সংস্কারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
বাশারের এ ভাষণের পর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় প্রতিবাদ ও সহিংসতার একটি ক্রমবর্ধমান চক্র। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ওপরও চড়াও হয়ে ওঠে সরকারি বাহিনী। এ সময় দামেস্কে থাকা সাবেক এক ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, বাশার প্রায়ই বলতেন, ‘আমার বাবাই ঠিক ছিলেন। হামায় হাজার হাজার মৃত্যু আমাদের তিন দশকের স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।’ এদিকে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছিল আসমার লক্ষ্যগুলোও।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের ছোট ভাই মাহেরের নেতৃত্বে পশ্চিম সিরিয়ার হোমসে সেনাদের আর্টিলারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেনারা বিদ্রোহী দমন শুরুর পর তখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ। আসমা তখন কী করছিলেন? তিনি কি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন, নাকি তিনি তাঁর স্বামীর পদক্ষেপকে সমর্থন করছিলেন—এমন প্রশ্ন তখন ছিল সবার মধ্যেই।
আসমা আসাদ সে সময় তাঁর এক সহযোগীকে বলেছিলেন, ‘এটি সব সময়ই মিথ্যা ছিল (সিরিয়া সংস্কারের প্রতিশ্রুতি)। আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
সূত্র অনুসারে, আসমা লন্ডনেও ফিরে যেতে পারতেন। উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর সহায়তায় নিরাপদে সিরিয়া ছাড়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। ব্রিটিশ সরকার বারবার বলে আসছিল—একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আসমাকে তারা দেশে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। তবে লন্ডনের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অ্যাকটনে আসমার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানায় প্রতিবাদকারীরা। এমনকি সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে আসমা আসাদের নাম সরিয়ে দেয় কুইন্স কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন বাশার ও আসমা। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনারা যখন হোমস শহরে ট্যাংক হামলা চালায়, আসমা তখন বাশারকে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে এই সমস্যা আমরা একসঙ্গে কাটিয়ে উঠব...আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তবে তাঁদের যে সমস্যাগুলো ‘কাটিয়ে ওঠার’ দরকার ছিল, তা সিরিয়ার নাকি পারিবারিক, সেটি স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ ও ক্ষমতা
বিদ্রোহ শুরুর পর আসমা তাঁর প্রথম সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল—‘বাশার আল-আসাদ পুরো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, সিরীয়দের একটি দলের প্রধান নন এবং এই ভূমিকায় ফার্স্ট লেডি তাঁকে সমর্থন করেন।’ এই বিবৃতির মধ্য দিয়ে আসাদের পাশে দাঁড়ান আসমা।
বাশারের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে আসমা তাঁর বাবার সহায়তায় জনসম্মুখে ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা করেন। ২০১২ সালে বোমা বিস্ফোরণে স্বামী নিহত হওয়ার পর দুবাই পালিয়ে যান বাশারের বোন বুশরা। বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও এটি সরকারি মদদে হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করতেন অনেকে। কারণ, আসাদ পরিবারের মধ্যে আসমাবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন বুশরা ও তাঁর স্বামী।
পরের বছরগুলোতে বাশারের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়। হোমস শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী দমনে সফল হয়ে ওঠেন তিনি। সরকারবিরোধী বাহিনী দামেস্কের কিছু শহর নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি তারা।
যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও নির্মম হয়ে ওঠেন বাশার। সহিংসতার মাত্রা ধীর গতিতে বেড়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করে পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানান, বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে প্রথমে কামান এবং এর পর বিমান ও ব্যারেল বোমা হামলা চালানো শুরু করে সরকারি বাহিনী।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট নতুন এক ফুটেজে দেখা যায়, দামেস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এক বিধ্বস্ত শহরের ছবি, যেখানে সরকারি বাহিনীর হামলায় মৃত্যু হয় শত শত বেসামরিক মানুষের। পরে এক তদন্তে জাতিসংঘ নিশ্চিত করে—সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সেরিন’ নামে বিষাক্ত এক স্নায়ু গ্যাস। ১৯৮৮ সালের পর যা ছিল সর্বকালের ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র হামলা। পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই হামলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এ নিয়ে অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিল আসমা-বাশার দম্পতি।
এর পরের বছরগুলোতে সিরিয়ায় ধ্বংসের মাত্রা গণনা করা কঠিন। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে বিস্তৃত একটি তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এর সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাশার বাহিনীকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছিল; কিন্তু দুর্বল করেছিল তাঁর বিরোধী পক্ষের সমর্থনও।
বাশার সিরিয়ার বড় শহরগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুনরায় আলেপ্পো দখল করলেও তিনি বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক শহর। এই সময়ের মধ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় প্রায় পাঁচ লাখে, শরণার্থী হন সিরিয়ার ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
সিরিয়ার নতুন বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল নতুন এক আসমার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর পর আসমা তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারান। যদিও তাঁর বড় পরীক্ষা ছিল নিজের ব্যক্তিগত পরিবর্তন।
২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে অসুস্থতাকে জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তিনি। চিকিৎসার জন্য যে তিনি সিরিয়াতেই রয়েছেন, সেটিও দেশের সাধারণ মানুষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসমা। তাঁর সংগ্রামের বিবরণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশদভাবে প্রচার করা হয়।
চিকিৎসা চলাকালে যখন চুল পড়া শুরু হলো, তখন মাথায় স্কার্ফ পরা ছবিতে দুর্বলতা এবং শক্তি উভয়ই তুলে ধরেছিলেন আসমা, যা ছিল তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহী দমনের বিপরীতে এক অপ্রতিরোধ্য রূপক। এমনকি তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই সরকার সমর্থক মিডিয়া সিরিয়ার দুঃসময়ে আসমার বিভিন্ন ভূমিকার কথা প্রচার করা শুরু করে।
আসমা সচেতনভাবে চেষ্টা করতে থাকেন নিজের ব্রিটিশ পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার। তিনি আরবি ভাষা নিয়ে এত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন যে, সিরীয়রাও আর তাঁর কোনো ইংরেজি উচ্চারণ শনাক্ত করতে পারেনি।
কেবলমাত্র রাশিয়া এবং স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম ছাড়া পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর সাক্ষাৎকারের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন আসমা। পশ্চিমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
তবে ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর তাঁর দাতব্য সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্টের আয় কমে আসে। অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরীয়দের জন্য বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা। আর সেই অর্থের বেশির ভাগই আসা শুরু করে আসমা আসাদের হাত ধরে। সিরিয়া ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে ধনসম্পদের চেয়েও অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন আসমা। পৃষ্ঠপোষকদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল সিরিয়ার যুদ্ধবাজরাও।
যুদ্ধই যখন পুঁজি
যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাশার তাঁর স্ত্রীর আর্থিক সাফল্যে সন্তুষ্ট এবং তাঁর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন। এক দশক দীর্ঘ যুদ্ধের পর বাশার ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং অর্থনীতি নিয়ে তিনি কখনো চিন্তিত ছিলেন না। ইউরোপে আসাদের এক লবিস্টের মতে, আসমা ছিলেন তাঁর ‘প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা’।
ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৯ সালে বাশারকে চাপ দিতে শুরু করে রাশিয়া এবং আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সিরিয়া সরকারের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্য হয়ে ওঠেন দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবের এবং বাশারের নিকটাত্মীয় রামি মাখলুফ।
তবে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক হারান মাখলুফ। সেই সুযোগে মাখলুফের দাতব্য সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে নেয় আসমার অধীনস্থ সিরিয়া ট্রাস্ট। সেই সঙ্গে মাখলুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। সিরিয়ায় অর্থনৈতিক এ দোলাচলের মধ্যে আসমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন মাখলুফ।
জবাবে আসমাকে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন মাখলুফ। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের ‘শীর্ষে থাকা একটি দল’ ষড়যন্ত্র করছে। একই সঙ্গে আরব সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন রুশ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়—সিরিয়ার আর্থিক সংকটের মধ্যেই বাশার তাঁর স্ত্রীর জন্য ডেভিড হকনির একটি পেইন্টিং কিনতে ৩ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এ ঘটনায় খুব বেশি উপকার হয়নি মাখলুফের। কারণ, গল্পটি মিথ্যা ছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে এ ঘটনার পর আংশিক গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। গুঞ্জন ছিল—মাখলুফকে জীবিত রাখা হয়েছিল কারণ, তাঁর কাছে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিদেশি সম্পদের পাসওয়ার্ড এবং দলিল ছিল।

লেডি অব জেসমিন
মাখলুফকে কোণঠাসা করার মধ্য দিয়ে অব্যাহত ছিল আসমার আধিপত্য এবং অধিগ্রহণের ক্ষমতা। আসমা আসাদকে ‘লেডি অব জেসমিন’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রচারও বৃদ্ধি পায় সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। দেশটির মন্ত্রীরা তাঁদের অফিসে আসাদের পাশাপাশি ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করেন ফার্স্ট লেডি আসমার ছবিও।
মাখলুফকে দমন, বাশারের বোনের দেশত্যাগ এবং তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আসমার আর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তাঁর নিকটতম উপদেষ্টাদের অনেকেই অধিষ্ঠিত হন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শীর্ষ পদে।
দামেস্ক ও ইউরোপে ভ্রমণকারী এক ব্যবসায়ীর মতে, ‘আসমা আসাদ প্রাসাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তিনি যাকে খুশি তাঁকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন।’
শেষ কথা
সিরীয়দের অনুমান, দেশের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে ওঠার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে আসমার। বাশারের অবস্থান যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আসমা কি দেশের সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন? গুজব রয়েছে—আসাদ পরিবারের একজন সদস্য সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন।
সিরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, ‘বাশার ও আসমা দুজনেই এ নিয়ে ভাবছেন। আসমা প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং উভয়েই এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বিপ্লবী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দেশটির কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই আসমার। এ ছাড়া বর্তমানে তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেন বাশারের ছোট ভাই মাহের, যিনি এখনো সিরীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ আর্মর্ড ডিভিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
দুবাইয়ের এক সিরীয় ব্যবসায়ীর মতে, ‘সামরিক বাহিনী এবং কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদেরা আসমার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’
আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হলেও আসমা এখন বেশ অরক্ষিতও। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষী কথাও আসমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও বহু আগেই আসমার অনেক বন্ধু তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, তবে আসমার সুরক্ষার বিষয়ে তাঁরা এখনো উদ্বিগ্ন। বৃহত্তম পুরস্কারের লক্ষ্যে পশ্চিম লন্ডনের মেয়েটি শেষ পর্যন্ত পলাতকও হতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আসমা আসাদ হয়তো অনেক আগেই বুঝে গেছেন—যেখানে পৌঁছেছেন তিনি, সেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ নেই।

মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৫ দিন আগে